Ajker Patrika

দখলে মৃতপ্রায় নদ-নদী, উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেই

  • জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৪৩। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি বেহাল।
  • দখলদার ১১৬ জন। দখল হয়েছে নদীর প্রায় ১৬ একর।
  • পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার হবে।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ০৭: ১১
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নরসুন্দা নদী দখল করে নির্মাণ করা বাগানবাড়ি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নরসুন্দা নদী দখল করে নির্মাণ করা বাগানবাড়ি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

ইজমা শোভা জর্দা কোম্পানি। দেশি এই জর্দা কোম্পানির মালিক মঞ্জু মিয়া। তিনি জেলার কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মঞ্জু মিয়া করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ও কাদির জঙ্গল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেতুর পশ্চিমে নরসুন্দা নদীর মূল গতিপথের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে প্রাচীর তুলে বাগানবাড়ি করেছেন। তিনি জলাধার নিয়ন্ত্রণ আইন এবং কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা মানববন্ধনও করেছেন। তারপরও মঞ্জু মিয়ার দাপটে প্রশাসন ছিল নির্বাক। দখলমুক্ত হয়নি নদী।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মঞ্জু মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি খরিদ করছি এই জায়গা। আমার জায়গায় বিল্ডিং করছি।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাহেদ মিয়া, রুমেজ আলী, মাইনুল ইসলাম, রমজান আলী, হাবিব মিয়া, রহম আলী, সজল মিয়া, দুলাল মিয়া, ইজ্জত আলীসহ মোট ৪১ জন নরসুন্দা নদীর পাড়ের প্রায় ৮২ শতাংশ জায়গা দখল করেছেন। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০০ জন হবে।

এদিকে কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া অডা শিমুহা নদী করগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ইজারা নিয়েছে জলমহাল হিসেবে। সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম সমিতি পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তিনি নদীটিতে বাঁধ দিয়ে সেচে মাছ শিকার করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেউই ভয়ে মুখ খুলছেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত আবদুস সালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করতাছে। মাটি কাটতাছে। আমি কিন্তু সেচার পক্ষে না। আমি সেচি নাই। আমি জাল দিয়ে মাছ ধরছি।’

কুলিয়ারচর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়সূতী ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া কালী নদীতে এখন পুরোদমে হয় ধান চাষ ৷ একেবারে বিলীন হয়ে গেছে নদীর অনেকাংশ। স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমান (৬২) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, এ নদীতে বড় বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করত। তখন প্রথাবনাথ বাজারই ছিল আশপাশের সবচেয়ে বড় বাজার। এখন এই নদীও নাই, বাজারও নাই। এখন এখানে ধান চাষ হয়।’

সরকারি সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৪৩। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি নদ-নদী বেহাল। এগুলোর দখলদার রয়েছে ১১৬ জন। নদ-নদী দখলের পরিমাণ প্রায় ১৬ একর। তবে পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, দখলদারের সরকারি হিসাব সঠিক নয়। নদ-নদীর দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার হবে। দিন দিন নদ-নদীর এমন বেহাল অবস্থা হতে থাকলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। তাদের কার্যক্রম খাতাপত্রেই সীমাবদ্ধ।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, অস্বীকার করার উপায় নেই, নদ-নদী অবৈধ দখলে প্রভাবশালীরা জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। নদীর অবৈধ দখল এবং এর স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করা ঠেকানোর আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা দখল করছে, তাদের দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, নদী ‘জীবন্ত সত্তা’—মহামান্য হাইকোর্টের এই ঘোষণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদ-নদীগুলো হত্যা করছে, দখল-দূষণ করছে এক শ্রেণির মানুষরূপী পশু। বিভিন্নভাবে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে, নদীশাসনের নামে নদ-নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক বলেন, শুকনো মৌসুমে এখন বেশির ভাগ নদীতে পানি নেই, ভরা মৌসুমে থাকে না প্রবাহ। নোংরা-ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে নদীগুলো এখন কিশোরগঞ্জবাসীর অভিশাপ হয়ে উঠেছে। এই নদীগুলো রক্ষা করার পথ একটাই—উৎসমুখের অপরিকল্পিত বাঁধ খুলে দেওয়া এবং নদী দখলবাজদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। এই হীন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের যারা জড়িত, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘সিএস মূলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে সঠিকভাবে পিলার স্থাপন করতে হবে এবং দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আংশিক নয়, সম্পূর্ণ নদী খনন করতে হবে। এর আগে নদী খননের কাজে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের ধারণা, নদী দখলদারের সংখ্যা হাজারখানেক। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা সঠিক নয়। সরেজমিনে তদন্ত করে দখলবাজদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।’

নদীবিষয়ক পত্রিকা রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানি, ২০১৮ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে কিশোরগঞ্জ জেলার নদ-নদীর অবৈধ দখলদারের তালিকা রয়েছে। কিন্তু সে মোতাবেক দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? আমাদের জানামতে হয়নি। নতুন করে দখলদারদের তালিকা তৈরি বা উচ্ছেদও করা হয়নি। আমরা চাই, জেলা নদী রক্ষা কমিটিকে দ্রুত সক্রিয় করে জেলার সব নদ-নদী রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার একটা পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা নরসুন্দা নদীকে সিলেক্ট (বাছাই) করছি। নদীটি সার্ভে করার পর কয়েকটা দূষণস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই দূষণস্থল থেকে আমরা স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা গবেষণাগারে পাঠিয়েছি। গবেষণাগার থেকে যখন রেজাল্ট আসবে, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিংয়ের (খনন) সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং স্থাপনা; যেগুলো নদীভাঙনের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলোতে কীভাবে আমরা প্রতিরক্ষার কাজ বাস্তবায়ন করব, তারও সমীক্ষা হচ্ছে। এই সমীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর এগুলো নিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া কনাই নদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে আবারও প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে উত্তরায় ডিএনসিসি আয়োজন করে ‘হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান’।

অনুষ্ঠানে ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা হারিয়ে যাওয়া কনাই নদ উদ্ধার করে দেখিয়ে দিয়েছি যে চাইলেই ঢাকার ভেতরে ওয়াটারওয়ে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’ তিনি বলেন, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে কনাই নদ উদ্ধার করে নৌচলাচল উপযোগী ৯ কিলোমিটার নদে প্রবাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগে ফিল্ড স্টাডি ও পরে উচ্ছেদ এবং পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

উত্তরাবাসীর পক্ষে বক্তব্যে কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস ডিএনসিসির প্রশাসকের এই উদ্যোগকে প্রশংসনীয় উল্লেখ করে হারিয়ে যাওয়া কনাই নদের প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

পাউবোর বোর্ড সদস্য আমিনুর রসুল বলেন, নতুন করে ৯ কিলোমিটার নৌপথ যুক্ত হলো। এখন এটি রক্ষার দায়িত্ব এলাকাবাসীর।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘আমরা থাইল্যান্ডে ফ্লোটিং মার্কেট দেখতে যাই, অথচ ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো উদ্ধার করে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুললে এর চেয়েও সুন্দর পর্যটন এলাকা তৈরি করা সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এ বি এম শামসুল আলমসহ ডিএনসিসির কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ঢাকা গ্যাজেটিয়ার এবং ১৯৬০ সালের ঢাকা ম্যাপে রাজধানীর ভেতরে কনাই, নড়াই, দেবদোলাই, জিরানি প্রভৃতি নদ-নদীর অস্তিত্বের উল্লেখ থাকলেও সময়ের ব্যবধানে এসব নদী হারিয়ে যায়। ডিএনসিসির উদ্যোগে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে বাউনিয়া খাল পর্যন্ত ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার নদ খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে মোট ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কনাই নদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের কাছে নদটি ‘খিদির খাল’ নামে পরিচিত। কনাই নদ আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ থেকে গড়ান চটবাড়ি হয়ে দ্বিগুণ খাল অতিক্রম করে তুরাগ নদে মিলিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির পানছড়ি: নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশায় তীব্র যানজট, ভোগান্তি

মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান অলি, পানছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে ভোগান্তি। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই মানেন না চালকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ির পানছড়ির বাজারে ঢুকলেই থেমে যায় যানবাহনের গতি। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ইজিবাইকের ভিড়ে যানজটে প্রতিদিনই অচল হয়ে পড়ছে সড়ক। অনুমোদনহীন যান, প্রশিক্ষণহীন চালক আর যত্রতত্র পার্কিংয়ে সীমান্তঘেঁষা এই মফস্বল শহরের বাজার এলাকা এখন স্থায়ী যানজটের ফাঁদে বন্দী। এতে শিক্ষার্থী থেকে রোগী, ব্যবসায়ী থেকে কর্মজীবী—সবাই ভোগান্তির শিকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পানছড়ি উপজেলায় এক হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। এর মধ্যে চারটি অটোরিকশা সমিতির আওতায় নিবন্ধিত রয়েছে সাত শতাধিক যান। বাকি অটোরিকশাগুলো নিয়মবহির্ভূতভাবে রাস্তায় চলাচল করায় নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

অটোরিকশাচালকদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের অভাবে তাঁরা এ পেশায় এসেছেন। চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘কাজ না থাকায় ইজিবাইক চালাতে বাধ্য হয়েছি। প্রশিক্ষণ না থাকায় অনেকেই নিয়ম না জেনে গাড়ি চালান।’

আরেক চালক তাজুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্স, নিবন্ধন ও নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থাকলে চালকদেরও সুবিধা হতো। সরকার যদি সহজভাবে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে, তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

বাজারের ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, দোকানে পণ্য আনা-নেওয়ায় মারাত্মক সমস্যা হয়। হাটের দিনগুলোতে বাজার এলাকায় চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। পানছড়ি বাজার উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমল বিকাশ চাকমা জানায়, মাত্র ১০ মিনিটের পথ অটোরিকশার ভিড়ে অনেক সময় আধা ঘণ্টা লেগে যায়। হাটের দিনে বাজার এলাকা দিয়ে যাতায়াত করা খুবই কষ্টকর।

স্থানীয়দের দাবি, অটোরিকশার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, চালকদের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, নিবন্ধন কার্যকর করা এবং বাজার এলাকায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঝুঁকি আরও বাড়বে।

জানতে চাইলে পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, অধিকাংশ চালকেরই কোনো প্রশিক্ষণ নেই এবং সড়ক আইন সম্পর্কে ধারণাও সীমিত। যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করানোসহ কোনো নিয়মই তাঁরা মানেন না। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অনুতোষ চাকমা বলেন, পানছড়িতে অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা সভায় বারবার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। কখনো কখনো জরুরি রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও যানজটে আটকে থাকে, অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়।

এ বিষয়ে পানছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, বাজার এলাকায় পুলিশ বক্স থেকে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নির্ধারণ এবং অটোরিকশা সমিতির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে সংসদ নির্বাচন: তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী নিয়ে উত্তেজনা

  • রাউজানে গিয়াস উদ্দিন কাদের ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে মনোনয়ন।
  • চন্দনাইশে আ.লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি জসিম উদ্দিনকে প্রার্থী।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে তিন আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এগুলোর মধ্যে ‘রক্তাক্ত জনপদ’ হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে দীর্ঘদিনের একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকার—দুজনকেই বিএনপির দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও এই সিদ্ধান্তকে দলীয় কৌশল হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী ও আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত জসিম উদ্দিন আহমেদকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সাবেক এই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে থাকারও অভিযোগ তুলেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। ফলে জসিম উদ্দিন আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির অনেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী। এ জন্য তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আসনটিতে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।

আসন তিনটিতে এই পাঁচজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। ফলে নির্বাচন ঘিরে দলীয় অন্তর্কোন্দলের শঙ্কা করছেন স্থানীয় ভোটাররা।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নের বর্তমান দৃশ্য দেখে মনে হয়, ফুটন্ত উনুন থেকে জ্বলন্ত কড়াইয়ে পড়েছি আমরা। বিপ্লবের পরও আগের একই চেহারা দেখা যাচ্ছে প্রার্থী মনোনয়নে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ মাসে রাউজান উপজেলায় ১৮ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ১৩টি। যাঁরা খুন হয়েছেন, তাঁরা বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অথবা দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তার এবং বালুমহাল ও পাহাড় কাটার মাটি নিয়ে দ্বন্দ্বে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া গত ১৬ মাসে গুলিবিনিময়ের ৩২টি ঘটনায় অর্ধশত লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

আসনটিতে প্রথম দফায় বিএনপির কোনো প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪ ডিসেম্বর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২৮ ডিসেম্বর মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে গোলাম আকবর খোন্দকারকেও।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘রাউজানে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া কিংবা আমাকে বাদ দেওয়াসংক্রান্ত দলীয় নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আমাকে জানানো হয়নি। আমার জানামতে, আমিই রাউজানে বিএনপির প্রার্থী।’

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘রাউজানে দুজনকেই মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। আপাতত উভয়ে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে থাকবেন। প্রত্যাহারের সময় একজনকে রেখে আরেকজনকে প্রত্যাহার করতে বলা হবে।’

এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের প্রার্থী লেয়াকত আলী বলেন, ‘দলের দুঃসময়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছিলাম। মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অধিকাংশ ভোটার আমাকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার পর সমালোচনার মুখে পড়া চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের প্রার্থী জসিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি একজন ব্যবসায়ী। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে আমার ছবি থাকতেই পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পেট্রোলিয়াম করপোরেশন: দেড় বছরেও চালু হয়নি ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

  • ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে আছে প্রকল্প।
  • দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা।
  • চালু হলে বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বড় জাহাজ থেকে সরাসরি জ্বালানি তেল খালাস করে সময় ও ব্যয় কমাতে নেওয়া হয়েছে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইদ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প। ৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে। কিন্তু পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় অলস পড়ে আছে বৃহৎ এই জ্বালানি অবকাঠামো প্রকল্প।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উদ্যোগে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়িত প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০২৪ সালের আগস্টে। এর পর থেকে এটি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় যন্ত্রাংশের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের (পরিকল্পনা-২) উপসচিব আসমা আরা বেগম বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট আগে নির্মাণ করা হলে এসপিএম প্রকল্পটি দ্রুত কাজে লাগানো যেত। শোধনাগার সম্প্রসারণের কাজ আগে হলে এখন আর এটি বসিয়ে রাখতে হতো না।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালীর দক্ষিণ-পশ্চিমে গভীর সাগরে একটি ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। একটিতে অপরিশোধিত, অন্যটিতে পরিশোধিত তেল পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি পাম্পিং স্টেশন, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর ও একাধিক স্টোরেজ ট্যাংকও নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এখনো সনাতন পদ্ধতিতে সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। বর্তমানে বড় ট্যাংকার থেকে প্রথমে ছোট ট্যাংকারে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর সেগুলো জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে খালাস করা হয়। এতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসপিএম চালু হলে এক লাখ টন জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তেল খালাস করা সম্ভব হতো। সনাতন পদ্ধতিতে সেখানে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ দিন। ইতিপূর্বে এই পদ্ধতিতে তেল খালাস করতে গিয়ে ট্যাংকারে বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

বিপিসির পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। তবে এটি এখনো পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (পিটিপিএলসি) কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। ফলে পরিচালনার দায় নিতে রাজি নয় প্রতিষ্ঠানটি। পিটিপিএলসির উপমহাব্যবস্থাপক তৌফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি এখনো তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

প্রকল্পের নির্মাণকাজের ঠিকাদার ছিল চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি)। অপারেশন ও মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বও তাদের দেওয়ার কথা ছিল। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের পর উদ্ভূত বাস্তবতায় সেই প্রক্রিয়া থেমে যায়। দরপত্রের মাধ্যমে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয় বিপিসি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসানের সঙ্গে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর সাড়া মেলেনি। প্রকল্প পরিচালক ও ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ হাসনাতকেও ফোনে পাওয়া যায়নি।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের (পরিকল্পনা) অতিরিক্ত সচিব মো. এরফানুল হক বলেন, প্রকল্পটি অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স ঠিকাদার নিয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকাদার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে প্রায় ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়, যা ইস্টার্ন রিফাইনারিতে পরিশোধন করা হয়। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের মতে, অপরিশোধিত তেল আমদানি ও মজুত সক্ষমতা না বাড়ালে এসপিএম প্রকল্প পূর্ণ সক্ষমতায় ব্যবহার করা সম্ভব হবে না।

প্রকল্পটি পুরোপুরি চালু হলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার কথা। পরিবহন, তেল খালাসের খরচ ও নানা অপচয় কমে এ অর্থ সাশ্রয় হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত