Ajker Patrika

প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট

গবেষণার মোরগ বারবার চুরি

সাইফুল মাসুম, ঢাকা 
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৭: ৪১
গবেষণার মোরগ বারবার চুরি

সাভারে অবস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) গবেষণার জন্য রাখা ১৩টি মোরগ চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত এপ্রিল মাসে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের মেল শেড থেকে মোরগগুলো চুরি হয়।

এর আগে ২০২৩ সালে একই শেড থেকে ৩৮টি মোরগ চুরি হয়েছিল। অতীতে গবেষণার জন্য আনা ১৮টি উটপাখিও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের পেটে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মোরগ চুরির ঘটনায় ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মুরগি নিখোঁজের বিষয়টি উদ্‌ঘাটনে প্রতিষ্ঠানটির ভেড়া উৎপাদন গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জিল্লুর রহমানকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও চুরির সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনায় সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তি বা তদন্তপ্রক্রিয়ায় যুক্ত কেউই গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি।

চুরি হওয়া মোরগগুলোর শেডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের। এই বিভাগের প্রধান বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) শাকিলা ফারুক নিজেই। প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডিজি নিজের দায় এড়িয়ে অন্য একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে চুরির ঘটনায় কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘চুরির ঘটনাটা সাজানো নাটক। নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে আগে থেকে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও কর্তৃপক্ষ এত দিন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এখন এ ঘটনায় ডিজি ব্যক্তিগত বিরোধের ঝাল মেটাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিজি ড. শাকিলা ফারুক বলেন, ‘এগুলো নিয়ে কী আর বলব! এগুলো থাক এখন। মন্ত্রণালয়কে আমরা এ বিষয়ে অবহিত করেছি। সবকিছু ওকে (ঠিক) হয়ে গেছে।’

কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া কর্মকর্তা বলেন, ‘খুব চাপের মধ্যে আছি—তাই কথা বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত কমিটি করেছে। জানি না তাঁরা কী রিপোর্ট দেবেন।’

বিএলআরআইয়ের গবেষণাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার কারণেই বারবার চুরির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় নিরাপত্তাকর্মীদের যোগসাজশ রয়েছে।

বক্তব্য জানতে চাইলে বিএলআরআইয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব বলেন, মোরগ চুরির ঘটনায় তিনি নিজেই ২৮ এপ্রিল আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

এর আগে ২০২৩ সালে বিএলআরআই শেড থেকে গবেষণার ৩৮টি মোরগ চুরি হয়েছে বলে ইনস্টিটিউটে আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। সে বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হলেও তার প্রতিবেদন আর আলোতে আসেনি। চুরির সঙ্গে জড়িত কেউ শনাক্তও হননি। তবে অভিযোগ রয়েছে, মোরগগুলো জবাই করে খেয়ে ফেলা হয়। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ নিরাপত্তাকর্মীরা জড়িত।

কয়েক বছর আগে গবেষণার জন্য আনা ১৮টি উটপাখিও কর্মকর্তাদের পেটে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, গরু-খাসির বিকল্প মাংসের জোগান দিতে উটপাখি পালন সম্প্রসারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে একটি গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয় বিএলআরআই। ২০২০ সালে আফ্রিকা থেকে দুই ধাপে ২২টি উটপাখি আমদানি করা হয়। বিশাল আকারের পাখিগুলো রান্না করে খাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি উটপাখি মারা গেছে। আর বাকিগুলো ‘মাংসের গুণাগুণ পরীক্ষা করতে’ জবাই করা হয়েছে।

পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের শেড থেকে মোরগ চুরির নতুন ঘটনার বিষয়টি বিএলআরআই কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অবহিত করেছে। জানতে চাইলে সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘মোরগ চুরির ঘটনায় কারও গাফিলতি রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখব। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

সচিব জানান, এর আগে আরও কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিএলআরআইয়ে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত