Ajker Patrika

বাজেটে বিলাসপণ্যে বাড়তি কর, ওষুধে ব্যাপক ছাড়

  • শুল্ককাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা
  • শুল্কের স্তর ৬টি থেকে বাড়িয়ে ৭টি করা হচ্ছে
  • শুল্কমুক্ত তালিকায় স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের ৭৯টি নতুন পণ্য
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৩: ১০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ককাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শিল্প, চামড়া, যানবাহন, কাগজ, পরিবেশবান্ধব পণ্যসহ মোট ২০টির বেশি খাত ও উপখাতে শুল্কহারে পরিবর্তন এবং নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ এসেছে। বাজেটে বড় ধরনের ছাড় থাকছে ওষুধ খাতে। এতে চিকিৎসা ব্যয়ে মিলবে স্বস্তি। এ ছাড়া চিনি, যানবাহন, পরিবেশবান্ধব পণ্যে কমছে শুল্ক। তবে বিপরীতে খেলনা, প্রসাধনীর মতো পণ্যে বাড়ছে শুল্ক।

বাজেটে জনবান্ধব শুল্ককাঠামো থাকছে বলে দাবি করছেন বাজেট প্রণয়নে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ব্যবসা, বিনিয়োগ ও জনস্বার্থ বিবেচনায় হচ্ছে এবারের বাজেট। বাজেটে যেমন রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, পরিবেশবান্ধব খাতসহ উৎপাদন খাতকে উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টাও থাকছে। প্রস্তাবিত পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্যসহ বেশ কিছু খাতে স্বস্তি মিলবে।

শুল্ক ব্যবস্থাপনার এসব পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারকে কর আদায় করতেই হবে। সব জিনিসের ওপর থেকে তো আর তুলে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমার কাছে এগুলো যৌক্তিক মনে হচ্ছে। কারণ, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক সহজ করা হয়েছে। বিপরীতে প্লাস্টিক ও বিলাসপণ্যে বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’

শুল্ককাঠামোর রূপান্তর

দেশে প্রচলিত ৬টি স্তরের পরিবর্তে ৭টি শুল্ক স্তর করা হচ্ছে আগামী বাজেটে। শুল্ক স্তরগুলো হলো ০, ১, ৩, ৫, ১০, ১৫ এবং ২৫ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক (এসডি) স্তর ১২টি থেকে ১৩টি করা হচ্ছে। এগুলো হলো ১০, ২০, ৩০, ৪০, ৪৫, ৬০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৩৫০ এবং ৫০০ শতাংশ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নতুন সংযোজন। এ ছাড়া আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কহারের সব পণ্যে রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) ৩ শতাংশ বহাল রাখা হচ্ছে। তবে রেয়াতি সুবিধা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসডি প্রত্যাহার করা হতে পারে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সুপারিশ অনুযায়ী শুল্কহার পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের ৭৯টি নতুন পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩টি ক্যানসারের ওষুধ তৈরির কাঁচামাল, ৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি রোগের ওষুধের কাঁচামাল এবং ২০ ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। হাসপাতালে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি (সিডি) মওকুফ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া টোল ফর্মুলেশন সুবিধার (টিএফএফ) বাইরে আমদানি হওয়া ওষুধের কাঁচামালের শুল্কহার ৫ থেকে ২৫ শতাংশ ছিল। এখন থেকে টিএফএফ প্রক্রিয়ায় আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ১ শতাংশ হবে। ডায়ালাইসিস, ইনজেকশন, ইনফিউশন ইত্যাদি ব্যবস্থায় ব্যবহৃত মেডিকেল প্লাস্টিক টিউব বা অংশের জন্য ব্যবহৃত পণ্যের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে শুল্ক ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কানেক্টর, কাপলার, অ্যাডাপ্টর, সিলিন্ডার সংযোগ অংশের থার্মোপ্লাস্টিক ম্যাটারিয়ালে বন্ড সুবিধায় ব্যবহৃত কাঁচামালের সিডি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ হচ্ছে।

চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত স্টেরাইল কানেক্টরের কোনো এইচএস কোড নেই। ফলে এটি উচ্চ শুল্কহারযুক্ত জেনারেল ক্যাটাগরিতে আমদানির কারণে খরচ বেড়ে যায়। বাড়তি খরচ এড়াতে এটির জন্য আলাদা কোডের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে ক্যানসারের ওষুধ ও ইনসুলিন, ডায়ালাইসিস ও অপারেশন সরঞ্জামের দাম কমতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা আরও সাশ্রয়ী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চিনির শুল্কায়ন মূল্য প্রতি টনে ৫০০ টাকা কমানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আমদানি ব্যয় কমবে, এতে বাজারে চিনির দাম কমতে পারে।

শিশুর খেলনার শুল্কায়ন মূল্য প্রতি কেজিতে শূন্য দশমিক ৫০ ডলার বাড়িয়ে ৪ ডলার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে অধিকাংশ খেলনার দাম বাড়তে পারে।

যানবাহন খাতে ১৬ থেকে ৪০ সিটের বাস আমদানিতে সিডি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। হেলিকপ্টার আমদানিতে সিডি শূন্য থেকে ১০, ১৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ আগাম কর এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর নির্ধারণের সুপারিশ থাকছে।

প্রসাধন খাতের বিভিন্ন পণ্যে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানো হচ্ছে ১৫ শতাংশ। প্রসাধনীতে বর্তমানে ৩৫ শতাংশ এসডি থাকলেও তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে পারফিউম, বডি স্প্রে, বিলাসী ক্রিম ও মেকআপ সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে।

ফ্রুট জুসের পানীয়তে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে মোট করভার ২৮৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ২১২ দশমিক ২০ শতাংশে।

প্লাস্টিক ও পলিমারশিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল অ্যাডিটিভে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ৭৫০ ওয়াট বা তার কম ক্ষমতাসম্পন্ন ডিসি মোটরের সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১ শতাংশ করা হচ্ছে।

কাগজ দিয়ে তৈরি ছোট-বড় প্যাকেট, ব্যাগ, লিফলেট প্যাকেজিং—যেগুলো সাধারণত খাবার, খুচরা পণ্য বা অন্যান্য সামগ্রী সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক কমছে। আরেকা, শাল, সিয়ালি, পলাশপাতার পণ্যের জন্য নতুন এইচএস কোড চালু করা হচ্ছে। এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা তুলনামূলক কম। এতে প্লাস্টিকে বিকল্প পণ্য জনপ্রিয় হবে এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ইস্পাতের কাঁচামালে শুল্ক ২৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা এবং ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে রড, স্টিলের দাম কমবে; নির্মাণ খাতে খরচ হ্রাস পাবে।

নীতি সংস্কার

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্ক ফাঁকি রোধে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবার। একটি প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদন সক্ষমতার পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিটি ৩০ ইউনিট পণ্য উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা পাবে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের প্রকৃত মূল্য যাচাই করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রেফারেন্স ভ্যালু সিস্টেম চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কাস্টমস রুল সহজীকরণ, গেজেট হালনাগাদের সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এতে নীতিনির্ধারণ দ্রুত হবে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামি ১০ ও সরকারি ৬ ব্যাংক: ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

দেশের ব্যাংকিং খাতের ভেতরে জমে থাকা অনিয়ম, রাজনৈতিক আশ্রয় ও কৃত্রিম হিসাবের পর্দা চলতি বছর যেন একে একে সরে যেতে শুরু করেছে। আর তাতেই সামনে এসেছে এক ভয়াবহ বাস্তবতা। সরকারি ও শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের ভারে এখন কার্যত দিশেহারা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার দাঁড়িয়েছে ৪৯ দশমিক ৬৫ শতাংশে, আর ইসলামি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি—৫৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, এই দুটি খাতেই বিতরণ করা ঋণের অর্ধেকের বেশি অনাদায়ি হয়ে পড়েছে। যেখানে বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপির হার ৪১ দশমিক ৯৫ ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার মাত্র ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শরিয়াহভিত্তিক ১০টি ইসলামি ব্যাংক মোট ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা ঋণ বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা। হিসাব বলছে, প্রতি ১০ টাকার প্রায় ৬ টাকাই এখন আদায় অনিশ্চিত। সেই তুলনায় শরিয়াহসহ দেশীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪ লাখ ৬৩ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এই তুলনাতেই স্পষ্ট, খেলাপির বোঝা এককভাবে সবচেয়ে বেশি ইসলামি ব্যাংকগুলোর ঘাড়েই।

সরকারি ছয় ব্যাংকের অবস্থাও খুব একটা ভিন্ন নয়। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় অর্ধেকই সেখানে অনাদায়ি। ব্যাংকার ও বিশ্লেষকদের মতে, এই সংকট রাতারাতি তৈরি হয়নি। বছরের পর বছর ধরে দুর্বল তদারকি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপিকে আড়াল করার প্রবণতা ধীরে ধীরে ব্যাংকগুলোকে এই জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, খেলাপি ঋণের এত উচ্চ হার শুধু ব্যাংকিং খাতের ভেতরের সমস্যা নয়, এটি সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি। ব্যাংকগুলো নতুন ঋণ দিতে পারছে না, বিনিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে, শিল্প-কারখানার সম্প্রসারণ থেমে যাচ্ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে কর্মসংস্থানে। তাঁর মতে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং ঋণ আদায়ে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়।

ইসলামি ব্যাংকিং খাতে এস আলম, নাসা ও বেক্সিমকো গ্রুপের নাম বারবার আলোচনায় এসেছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন সরকারি মদদে এসব গ্রুপ বিপুল ঋণ নিয়ে খেলাপি হলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এখন সেই বাস্তবতা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতের চিত্র আরও উদ্বেগজনক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৮ লাখ ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর যে অপচেষ্টা ছিল, তা এখন ভেঙে পড়েছে। সঠিক হিসাব সামনে আসায় হার ৩৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা বাস্তবতারই প্রতিফলন। তিনি আবারও শীর্ষ ১০ খেলাপির জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনালের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, আগের সরকারের আমলে লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ প্রকাশ পাওয়ায় এই হার বেড়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ঋণ আদায়ে কঠোর নির্দেশনার কারণে আগের তুলনায় আদায় বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

জেপির মঞ্জুর পর নির্বাচন বর্জন করলেন রুহুল আমিন হাওলাদার ও ফিরোজ রশীদ

প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন তাসনিম জারা

এনসিপিতে আসিফ মাহমুদ, হলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত