Ajker Patrika

বাজেটে বিলাসপণ্যে বাড়তি কর, ওষুধে ব্যাপক ছাড়

  • শুল্ককাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা
  • শুল্কের স্তর ৬টি থেকে বাড়িয়ে ৭টি করা হচ্ছে
  • শুল্কমুক্ত তালিকায় স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের ৭৯টি নতুন পণ্য
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৩: ১০
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ককাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শিল্প, চামড়া, যানবাহন, কাগজ, পরিবেশবান্ধব পণ্যসহ মোট ২০টির বেশি খাত ও উপখাতে শুল্কহারে পরিবর্তন এবং নীতিগত সংস্কারের সুপারিশ এসেছে। বাজেটে বড় ধরনের ছাড় থাকছে ওষুধ খাতে। এতে চিকিৎসা ব্যয়ে মিলবে স্বস্তি। এ ছাড়া চিনি, যানবাহন, পরিবেশবান্ধব পণ্যে কমছে শুল্ক। তবে বিপরীতে খেলনা, প্রসাধনীর মতো পণ্যে বাড়ছে শুল্ক।

বাজেটে জনবান্ধব শুল্ককাঠামো থাকছে বলে দাবি করছেন বাজেট প্রণয়নে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, ব্যবসা, বিনিয়োগ ও জনস্বার্থ বিবেচনায় হচ্ছে এবারের বাজেট। বাজেটে যেমন রাজস্ব বাড়ানোর কৌশল রয়েছে, তেমনি স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, পরিবেশবান্ধব খাতসহ উৎপাদন খাতকে উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টাও থাকছে। প্রস্তাবিত পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে স্বাস্থ্যসহ বেশ কিছু খাতে স্বস্তি মিলবে।

শুল্ক ব্যবস্থাপনার এসব পরিবর্তনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদেরা। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারকে কর আদায় করতেই হবে। সব জিনিসের ওপর থেকে তো আর তুলে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে আমার কাছে এগুলো যৌক্তিক মনে হচ্ছে। কারণ, ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক সহজ করা হয়েছে। বিপরীতে প্লাস্টিক ও বিলাসপণ্যে বাড়ানোর মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্যে ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।’

শুল্ককাঠামোর রূপান্তর

দেশে প্রচলিত ৬টি স্তরের পরিবর্তে ৭টি শুল্ক স্তর করা হচ্ছে আগামী বাজেটে। শুল্ক স্তরগুলো হলো ০, ১, ৩, ৫, ১০, ১৫ এবং ২৫ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক (এসডি) স্তর ১২টি থেকে ১৩টি করা হচ্ছে। এগুলো হলো ১০, ২০, ৩০, ৪০, ৪৫, ৬০, ১০০, ১৫০, ২০০, ২৫০, ৩০০, ৩৫০ এবং ৫০০ শতাংশ। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নতুন সংযোজন। এ ছাড়া আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্কহারের সব পণ্যে রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) ৩ শতাংশ বহাল রাখা হচ্ছে। তবে রেয়াতি সুবিধা পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এসডি প্রত্যাহার করা হতে পারে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সুপারিশ অনুযায়ী শুল্কহার পুনর্বিন্যাস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে আমদানি নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতের ৭৯টি নতুন পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৩টি ক্যানসারের ওষুধ তৈরির কাঁচামাল, ৩৬টি দীর্ঘমেয়াদি রোগের ওষুধের কাঁচামাল এবং ২০ ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। হাসপাতালে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি (সিডি) মওকুফ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া টোল ফর্মুলেশন সুবিধার (টিএফএফ) বাইরে আমদানি হওয়া ওষুধের কাঁচামালের শুল্কহার ৫ থেকে ২৫ শতাংশ ছিল। এখন থেকে টিএফএফ প্রক্রিয়ায় আমদানিতে কাস্টমস ডিউটি ১ শতাংশ হবে। ডায়ালাইসিস, ইনজেকশন, ইনফিউশন ইত্যাদি ব্যবস্থায় ব্যবহৃত মেডিকেল প্লাস্টিক টিউব বা অংশের জন্য ব্যবহৃত পণ্যের ২৫ শতাংশের পরিবর্তে শুল্ক ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কানেক্টর, কাপলার, অ্যাডাপ্টর, সিলিন্ডার সংযোগ অংশের থার্মোপ্লাস্টিক ম্যাটারিয়ালে বন্ড সুবিধায় ব্যবহৃত কাঁচামালের সিডি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ হচ্ছে।

চিকিৎসা খাতে ব্যবহৃত স্টেরাইল কানেক্টরের কোনো এইচএস কোড নেই। ফলে এটি উচ্চ শুল্কহারযুক্ত জেনারেল ক্যাটাগরিতে আমদানির কারণে খরচ বেড়ে যায়। বাড়তি খরচ এড়াতে এটির জন্য আলাদা কোডের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে ক্যানসারের ওষুধ ও ইনসুলিন, ডায়ালাইসিস ও অপারেশন সরঞ্জামের দাম কমতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা আরও সাশ্রয়ী হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চিনির শুল্কায়ন মূল্য প্রতি টনে ৫০০ টাকা কমানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আমদানি ব্যয় কমবে, এতে বাজারে চিনির দাম কমতে পারে।

শিশুর খেলনার শুল্কায়ন মূল্য প্রতি কেজিতে শূন্য দশমিক ৫০ ডলার বাড়িয়ে ৪ ডলার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে অধিকাংশ খেলনার দাম বাড়তে পারে।

যানবাহন খাতে ১৬ থেকে ৪০ সিটের বাস আমদানিতে সিডি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। হেলিকপ্টার আমদানিতে সিডি শূন্য থেকে ১০, ১৫ শতাংশ, ৫ শতাংশ আগাম কর এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর নির্ধারণের সুপারিশ থাকছে।

প্রসাধন খাতের বিভিন্ন পণ্যে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) বাড়ানো হচ্ছে ১৫ শতাংশ। প্রসাধনীতে বর্তমানে ৩৫ শতাংশ এসডি থাকলেও তা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হচ্ছে। এতে পারফিউম, বডি স্প্রে, বিলাসী ক্রিম ও মেকআপ সামগ্রীর দাম বাড়তে পারে।

ফ্রুট জুসের পানীয়তে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে মোট করভার ২৮৯ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ২১২ দশমিক ২০ শতাংশে।

প্লাস্টিক ও পলিমারশিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল অ্যাডিটিভে সম্পূরক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। ৭৫০ ওয়াট বা তার কম ক্ষমতাসম্পন্ন ডিসি মোটরের সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাত্র ১ শতাংশ করা হচ্ছে।

কাগজ দিয়ে তৈরি ছোট-বড় প্যাকেট, ব্যাগ, লিফলেট প্যাকেজিং—যেগুলো সাধারণত খাবার, খুচরা পণ্য বা অন্যান্য সামগ্রী সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর সিডি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক কমছে। আরেকা, শাল, সিয়ালি, পলাশপাতার পণ্যের জন্য নতুন এইচএস কোড চালু করা হচ্ছে। এসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা তুলনামূলক কম। এতে প্লাস্টিকে বিকল্প পণ্য জনপ্রিয় হবে এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ইস্পাতের কাঁচামালে শুল্ক ২৫ থেকে ১৫ শতাংশ করা এবং ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে রড, স্টিলের দাম কমবে; নির্মাণ খাতে খরচ হ্রাস পাবে।

নীতি সংস্কার

বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্ক ফাঁকি রোধে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবার। একটি প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদন সক্ষমতার পরিমাপ অনুযায়ী প্রতিটি ৩০ ইউনিট পণ্য উৎপাদনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা পাবে। এ ক্ষেত্রে পণ্যের প্রকৃত মূল্য যাচাই করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রেফারেন্স ভ্যালু সিস্টেম চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কাস্টমস রুল সহজীকরণ, গেজেট হালনাগাদের সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এতে নীতিনির্ধারণ দ্রুত হবে, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার মৃত্যু

বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বন্ধ সব পোশাক কারখানা, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে পোশাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। আজ মঙ্গলবার পোশাকমালিকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে জানাজার আগপর্যন্ত দেশের বিপণিবিতানগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি।

চিঠিতে বিজিএমইএ বলে, ‘দেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ও এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত পোষণ করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প কারখানায় আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) এক দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।’

পৃথক বিবৃতিতে বিজিএমইএ বলেছে, বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সব পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানে আগামীকাল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে সারা দেশের বিপণিবিতান ও দোকানপাট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানানো হয়।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিজিএমইএ ছাড়াও শোক জানিয়েছে দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), টেক্সটাইল মিলের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

এ ছাড়া শোক জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ), ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম (সিএমজেএফ), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসসহ (বেসিস) আরও অনেক সংগঠন।

সংগঠনগুলো পৃথক বার্তায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা খালেদা জিয়ার রুহের মাগফিরাত চেয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল: আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি তেল প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের (এসএওসিএল) প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সোমবার দুদকের উপপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. জাহাঙ্গীর আলম মামলাটি করেন।

মামলার আসামিরা হলেন এসএওসিএলের কর্মকর্তা (এইচআর) আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৭), উপব্যবস্থাপক (হিসাব) ও ডিপো ইনচার্জ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক (৪৫), গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন গিয়াস (৪৬), আজহার টেলিকমের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল রানা (৪৪) এবং মেসার্স মদিনা কোয়ালিটির স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ মিয়া (৫১)।

দুদক চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের হিসাব থেকে প্রায় ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বিভিন্নভাবে স্থানান্তর ও আত্মসাৎ করেন।

এজাহার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসএওসিএলের এলসি-সংক্রান্ত লেনদেনের নামে প্রকৃত সরবরাহকারীর পরিবর্তে ভুয়া ও সম্পর্কহীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে চেক ইস্যু করার বিষয় দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে। পরে এসব চেকের অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর কিংবা নগদে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো এলসি খোলা হয়নি এবং লেনদেনগুলো কোম্পানির জেভি-০৮ ও জেনারেল লেজারে অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাঁচটি চেকের মধ্যে তিনটির অর্থ গোল্ডেন সিফাত এন্টারপ্রাইজ, আজহার টেলিকম ও মদিনা কোয়ালিটির অ্যাকাউন্টে জমা হয় এবং বাকি দুটি চেকের অর্থ নগদে উত্তোলন করা হয়। চেক জমাদানকারী হিসেবে বারবার আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট পেমেন্ট ভাউচারে নিরীক্ষা বিভাগের স্বাক্ষর না থাকাও অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে উঠে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি
ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছবি: বিজ্ঞপ্তি

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুফতি ছাঈদ আহমাদ।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন এবং শরিয়াহ সুপারভাইজরি কাউন্সিলের সদস্যসচিব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ। এ ছাড়া কাউন্সিলের অন্য সদস্যবৃন্দ সভায় অংশগ্রহণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরের খেজুর রস: লক্ষ্য ১২০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদন

জাহিদ হাসান, যশোর
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রসের জন্য খেজুরগাছ কেটে প্রস্তুত করছেন গাছি। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই যশোরের গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় ব্যস্ততা। খেজুরগাছের নিচে হাজির হন গাছিরা। আগের বিকেলে কাটা গাছের ‘চোখ’ বেয়ে সারা রাত মাটির হাঁড়িতে জমেছে সুমিষ্ট খেজুর রস। ভোরে সেই রস নামিয়ে শুরু হয় আরেক কর্মযজ্ঞ; চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির কাজ। বাড়ির নারীরাই মূলত এই প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেন। কয়েক ঘণ্টা জ্বালানোর পর তৈরি হয় সুস্বাদু খেজুর গুড় ও পাটালি।

শীত মৌসুম এলেই এমন দৃশ্য দেখা যায় খেজুর গুড়ের জেলা খ্যাত যশোরের প্রায় প্রতিটি গ্রামে। সম্প্রতি যশোরের খেজুর গুড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এর ঐতিহ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও নতুন করে সামনে এসেছে।

উৎপাদন ও বাজারের চিত্র

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে যশোরে প্রায় ১২০ কোটি টাকার খেজুর রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উৎপাদন গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল করবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

বর্তমানে খেজুরের কাঁচা রস প্রতি মাটির হাঁড়ি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দানা গুড় প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা এবং পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর বাড়লেও গাছিরা বলছেন, শ্রম ও ঝুঁকির তুলনায় লাভ সীমিত।

গাছির সংকট বড় চ্যালেঞ্জ

যশোর সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের গাছি আজিবর প্রায় ৩৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটছেন। তিনি বলেন, ‘আগে দেড় শ গাছ কাটতাম, এখন বয়সের কারণে ৩৫-৪০টার বেশি পারি না। রস ও গুড়ের দাম বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কাটার মতো গাছ কমে গেছে। আবার গাছ থাকলেও দক্ষ গাছির অভাব। এবার বেশি শীত পড়ায় রসও ভালো নামছে, গুড়ের উৎপাদনও বেশি।’

গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাছ থেকে নামিয়ে আনা খেজুরের রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন এক নারী। গতকাল যশোরের চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রাম থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মনিরামপুর উপজেলার সরসকাটি গ্রামের গাছি অতিয়ারও প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তিনি বলেন, এবার ৫০টা গাছ কাটছি। প্রতিদিন ৮-১০ কেজি গুড় তৈরি হয়। কাজটা খুব কষ্টের। তবে শীত মৌসুমে এই আয়েই পুরো বছরের সংসার চলে।

ই-কমার্সে বাড়ছে চাহিদা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, যশোর জেলায় মোট খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫। এগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে রস আহরণের উপযোগী গাছ রয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি।

উৎপাদিত গুড় প্রথমে স্থানীয় হাটে বিক্রি হয়, পরে পাইকারদের মাধ্যমে তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। যশোরের খেজুর গুড় এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমভিত্তিক উদ্যোক্তাদের হাত ধরে গুড় ও পাটালি সরাসরি ভোক্তার ঘরে পৌঁছানো হচ্ছে। এতে বাজার যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান।

কৃষি বিভাগের উদ্যোগ

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, যশোরের খেজুর গুড়ের স্বাদ ও মানের কারণে চাহিদা সব সময় বেশি। এবার শীত বেশি হওয়ায় রসের পরিমাণ ও মান—দুটোই ভালো। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২০ কোটি টাকার রস ও গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিরাপদ খেজুর রস এবং গুড় উৎপাদনে কৃষকদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গাছিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত