Ajker Patrika

ছাত্ররাজনীতি: ঢাবির সিদ্ধান্তে বাড়ল উত্তাপ, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয়

  • ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ দাবির মুখে নিষেধাজ্ঞা বহাল
  • ষড়যন্ত্র বলছে ছাত্রদল, বিরোধিতা আরও সংগঠনের
  • হল সংসদগুলোর নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
  • তফসিল ঘোষিত সময়ে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সংশয়
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪৩
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। এই উত্তাপের মধ্যেই গতকাল ক্যাম্পাসে হাততালি দিয়ে মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।	ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে গত শুক্রবার রাতে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে। এই উত্তাপের মধ্যেই গতকাল ক্যাম্পাসে হাততালি দিয়ে মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। এই নির্বাচনের মাত্র এক মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখায় ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ আরও বেড়েছে। বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করলেও কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন এই সিদ্ধান্তকে সমর্থনও করেছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে হল সংসদে কী ছাত্রসংগঠনগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে, নাকি হলে নির্দলীয় প্রার্থী থাকবেন–এমন প্রশ্নও এসেছে সামনে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, হল পর্যায়ের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে তাদের আলাপ-আলোচনা চলছে। এ নিয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গতকাল শনিবার রাজশাহীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ছাত্রসংগঠনগুলো যদি নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করত, তাহলে তাদের মধ্যে মুখোমুখি বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি এবং হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত আসত না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগবিহীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সক্রিয় হয়ে ওঠে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরিতে মাঠে নামে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন এবং বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমর্থিত বলে পরিচিত।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়েছে। একে অন্যকে দোষারোপ করেছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু, ১১ সেপ্টেম্বর রাকসু ও ১৫ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন হওয়ার কথা। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হল সংসদের নির্বাচনও হয়।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ছাত্রসংগঠনগুলো আরও জোরেশোরে তৎপর হয়। নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে সংগঠনগুলো সভা-সমাবেশ, বিভিন্ন কর্মসূচিতে শক্তি প্রদর্শন করছে। এই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো সংগঠন প্রতিপক্ষকে বিষোদগারও করছে। এ অবস্থায় গত শুক্রবার রাতের ঘটনা পরিস্থিতিতে নতুন উত্তাপ যুক্ত করল। এ জন্য ছাত্রদল ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা বহাল হয়েছে শুক্রবার ঢাবির ১৮টি হলে ছাত্রদল আহ্বায়ক কমিটি দেওয়ার পর হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে রাতেই ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে বিক্ষোভের পর।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৮টি হলে ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার গভীর রাতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীর’ ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করে হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। একপর্যায়ে রোকেয়া হল ও শামসুন নাহার হলের ছাত্রীদের একাংশ হলের ফটকের তালা ভেঙে বের হয়ে এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। রাত ১টার দিকে তাঁরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

দেড় ঘণ্টা আলোচনার পর ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্য ও গুপ্ত ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন। এ সময় প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে। এ ঘোষণার পর সেখানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা হাততালি দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ঢাবি শাখা ছাত্রদল গতকাল বিকেলে ক্যাম্পাসে স্লোগান ছাড়া মিছিল করেছে। মিছিলটি ভিসি চত্বর থেকে শুরু হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো বলছে, শুক্রবার রাতের বিক্ষোভে ইন্ধন দিয়েছে ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক ছাত্রসংগঠন। এর মূল কারণ ক্যাম্পাসে ৫ আগস্ট-পরবর্তী আধিপত্য ধরে রাখা, গোপনে সংগঠনের বিস্তার, ডাকসু নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ এবং দেশের সামগ্রিক রাজনীতির কৌশল।

হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখাকে ছাত্রদল দেখছে ষড়যন্ত্র হিসেবে। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদলের জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা আব্দুল কাদের গতকাল এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, শৃঙ্খলা কমিটি কিংবা ব্যাচ প্রতিনিধির নামে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা হলগুলোতে ছায়া প্রশাসন জারি রেখেছেন। হলের শৃঙ্খলা কমিটির অধিকাংশই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ছাত্রশিবির হলভিত্তিক কোনো রাজনীতি করে না। তাঁদের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড টিএসসি, মধুর ক্যানটিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য এলাকায় পরিচালনা করা হয়। সেবামূলক যেসব কার্যক্রম রয়েছে সেগুলো পরিচালনা করতে হলে কার্যক্রম চালান। দলীয় বা রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি তাঁরা হল এলাকায় করেননি।

ঢাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি মেঘমল্লার বসুও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি যদি থাকে এবং বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি জেলা ইউনিট হয়, তবে এর অধীনে অন্যান্য শাখা ইউনিট থাকা স্বাভাবিক। রাজনীতি করাটাও একটা অধিকারের বিষয়। কারও যেমন রাজনীতি না করার অধিকার আছে, তেমনি রাজনীতি করারও অধিকার আছে।

তফসিল অনুযায়ী আগামী মাসে ডাকসু নির্বাচন থাকায় হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হল সংসদের নির্বাচনের প্রক্রিয়া কী হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মতো হল সংসদেও কী সংগঠনগুলো প্যানেল দিতে পারবে, নাকি প্রার্থীরা নির্দলীয়ভাবে প্রার্থী হবেন? কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি পরিষ্কার না করায় এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন পেছানোর এবং এই নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হওয়ার সংশয়ও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

জানতে চাইলে ঢাবির প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন পেছানোর সম্ভাবনা নেই, অবশ্যই নির্বাচন হবে। হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে তা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করছি। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইনি। আশা করি আমরা শিগগির একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশ্লেষকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দরকার কেন? বুদ্ধিটা আসলে কার? কেন? রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের কথা না ভেবে পুরোটা বন্ধ করার চেষ্টা যাঁরা করছেন, তাঁরা একটু কল্পনা করেন তো ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীরা রাজনীতি না করলে কী হতো?’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ’৭৩-এর আদেশে চলে। এ আদেশ অনুযায়ী এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কার এবং কী প্রক্রিয়ায় সেটা হতে হবে?’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি, লেজুড়বৃত্তিভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি, গুপ্ত রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমি মনে করি পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে এ বিষয়ে আমাদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

এদিকে ঢাবি হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ রাখার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল রাজশাহীতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর আরেকটু ম্যাচিউরড হওয়ার সুযোগ ছিল। এখন শিক্ষার্থীবান্ধব একটা রূপরেখা প্রণয়ন করে বোঝাপড়া হতে পারে এবং তার ভিত্তিতে আগামীতে চলতে পারে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমনের বাম্পার ফলনেও মুখে হাসি নেই কৃষকের, বাজারে ধানের দাম কমায় হতাশা

মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমির ধান কাটছেন কৃষকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফসল ঘরে তুলতে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকেরা। তবে বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। তাই ফলন ভালো হওয়ার পরও বাজারে ধানের যথার্থ মূল্য না পাওয়ায় লোকসানে পড়ছেন তাঁরা।

কৃষকেরা জানান, চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম অনেক কম। গত বছর বাজারে যেখানে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় প্রতি মণ ধান বিক্রি হয়েছে, এই বছর মাঝারি শুকনা ধান ৯০০ ও শুকনা ধান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বীজতলা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তোলার আগপর্যন্ত অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৯৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে। এর থেকে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৯০ টন ধান উৎপাদন হবে। আর এই ধান থেকে ২ লাখ ৯৫ হাজার ৫৩০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ৬৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আমন ধানের শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকেরা।

বাজারে আমন ধানের দাম কম হলেও সরকারিভাবে ভালো দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আমন ধান ৩৪ টাকা মূল্যে ৭৯০ টন, সেদ্ধ চাল ৫০ টাকা কেজি মূল্যে ২ হাজার ৬৭৭ টন ও আতপ চাল ৪৯ টাকা কেজি মূল্যে ৫ হাজার ৬৪৬ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

জেলার কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও সদর উপজেলার আমনখেত ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা পাকা আমন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত। অনেক এলাকায় দ্রুত সময়ে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ একসঙ্গে সেরে নিচ্ছেন কৃষকেরা। এতে সময়, খরচ ও কষ্ট কম করতে হচ্ছে। আবার কেউ কাজের লোক এনে ধান কেটে ফসলের মাঠেই মাড়াই করে সেদ্ধ দিচ্ছেন। অনেক কৃষক মাঠের মধ্যে রাত জেগে ধান সেদ্ধ করছেন। তবে সবকিছু ঠিক থাকলেও ধানের দাম কম থাকায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন কৃষকেরা।

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়ন কৃষক আনোয়ার খান বলেন, ‘গত বছর আমাদের ধান একেবারেই হয়নি। এ বছর অনেক ভালো ধান হয়েছে। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বাজারে ধানের দাম অনেক কম। প্রতি মণ ধান মাত্র ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে। সে তুলনায় ধানের দাম বাড়েনি।’

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মিলন কান্তি চাকমা বলেন, ‘আমাদের ধান-চাল সংগ্রহের কার্যক্রম ২০ নভেম্বর শুরু হয়েছে; চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সরকারিভাবে ধানের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ১ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। একটা সময় আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারতাম না; তবে এখন ধান-চালের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়। আশা করি, চলতি মৌসুমে আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে।’

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘জেলায় এ বছর খুব ভালো আমন ধান হয়েছে। কৃষকেরা অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে ধান ঘরে তুলছেন। আশা করি, আগামী সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও দিনের বেলা কুয়াশা না থাকায় সহজে কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও সেদ্ধ করতে পারছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।

গত কয়েক দিন পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩ ডিগ্রির ঘরে থাকছে। ফলে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। সুনসান নীরবতায় গরম কাপড় পরে প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়েছে লোকজন। কেউ কেউ মাঠে করছেন হালচাষ। এরই মধ্যে পূর্ব আকাশে সূর্য দেখা দিলেও নেই প্রখর রোদ।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, ‘সকাল-বিকেল খুব ঠান্ডা পড়ে। ঘর থেকে বের হলেই যেন বাতাসে শরীর কেঁপে ওঠে। বাচ্চাদের নিয়ে সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। ঠান্ডা লাগলে হাসপাতালে যেতে হয় বারবার।’

একই এলাকার দিনমজুর মিজানুর রহমান বলেন, ‘শীতে কাজ পাওয়া কষ্ট হয়ে গেছে। সকালে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, হাত-পা জমে থাকে। ঠান্ডায় শরীর ঠিকমতো সাড়া না দেওয়ায় কাজের গতি কমে গেছে।’

স্কুলছাত্রী তানজিলা আক্তার বলে, ‘সকালে কলেজ ও প্রাইভেটে যেতে খুব সমস্যা হয়। ঠান্ডা এমন যে হাতে গ্লাভস ছাড়া সাইকেল চালানো যায় না। শীত যেমন বাড়ছে, তেমনি অসুস্থ হওয়ার ভয়ও বাড়ছে।’

জেলার আশপাশ এলাকায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগী। এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তনজনিত অ্যালার্জিতে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, দিন-রাতের তাপমাত্রার এই বড় পার্থক্য শরীরের ওপর চাপ ফেলে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ বেশি ঝুঁকিতে থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ চিকিৎসকের।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, শীত ধীরে ধীরে নামছে। আজ ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। সামনে শীত আরও তীব্র হতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত