Ajker Patrika

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই, হামলা সন্দেহের বশে

সৌগত বসু, ফরিদপুর থেকে
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ২৫
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুনে শ্রমিকদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই, হামলা সন্দেহের বশে

ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালী মন্দিরে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হলো তা এখনও নিশ্চিত জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই ঘটনায় উত্তেজিত এলাকাবাসীর মারধরে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় কয়েকজন মুসলিম ছিলেন কেবল ওই নির্মাণ শ্রমিকেরাই। সেই কারণে উত্তেজনার মধ্যে নিছক সন্দেহের বশে তাঁদের ওপর হামলা হয়েছে। 

আজকের পত্রিকার সরেজমিন অনুসন্ধান ও এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, মন্দিরটি সর্বজনীন। ডুমাইন ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রাম আর পঞ্চপল্লী এলাকা। এই এলাকাটি পাঁচটি গ্রাম নিয়ে। সবগুলো গ্রামই হিন্দু অধ্যুষিত। আশেপাশের এলাকাগুলোও হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। আগুন লাগার খবরে বেশি লোক জড়ো হয় আশেপাশের এলাকা থেকে।

গতকাল সন্ধ্যার পর মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০–১৫ মিনিটের মধ্যেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন পাশে শুধুমাত্র সাতজন নির্মাণ শ্রমিক সেখানে ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে আগুন দিতে কেউ দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য তাদের থাকতে পারে এমন- সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণও খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্কুলে বা তাঁর আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরাও নেই।

আজ শুক্রবার সকালে পঞ্চপল্লী এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক গজ পেছনে মন্দিরের অবস্থান। স্কুলের কক্ষ থেকে মন্দিরের সবকিছুই দেখা যায়। সেখানে চারটি মূর্তি রয়েছে। এর মধ্যে কালী ও শিব মূর্তি ছিল একসঙ্গে। আর ২ ফুট দূরে দুই পাশে অন্য দুটি মূর্তি। আগুনে পুড়েছে শুধুমাত্র কালী মূর্তি। এই মূর্তির পরনের শাড়ি ও হাতে থাকা শাড়ি পুড়ে গেছে। মূর্তির সামনে প্রায় দুই ফুট দূরত্বে দুটি প্রদীপ রয়েছে। 

এই বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক (বাথরুম ও হাত ধোয়ার জায়গা) তৈরির কাজ চলছে। সেখানকার যে কক্ষে শ্রমিকদের অবস্থান সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের সামনে থেকে কক্ষের পেছনের গ্রিলের জানালার অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। পুরো কক্ষে ইট ছড়িয়ে আছে। আর কক্ষের তিন জায়গায় রক্তের ছোপ দাগ। কক্ষে শ্রমিকদের কাপড় ও ব্যাগ রয়েছে। কক্ষে প্রবেশের দুটি দরজার একটি ভাঙা অবস্থায় আছে। 

ঘটনা শুরু যেভাবে 
পঞ্চপল্লী গ্রামে এই মন্দিরটির বয়স প্রায় ৬০ বছর। মন্দিরের পেছনেই বসতি রয়েছে। আর এর মধ্যে প্রভাষ কুমার মন্ডলের (৫০) পরিবার মন্দিরটিতে প্রতি সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান। প্রতিদিনের মতোই প্রভাষ কুমারের স্ত্রী তপতী রানী মন্ডল (৪০) সন্ধ্যায় সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। মন্দির থেকে তাঁর বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ গজের মতো। 

তপতি রানী আজকের পত্রিকাকে জানান, গতকাল সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালানোর সময় সাতজন নির্মাণ শ্রমিক স্কুলের মধ্যেই ছিলেন। প্রদীপ জ্বালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার কিছু সময় পর গোবরের জ্বালানি সংগ্রহ করতে তিনি আবারও মন্দিরের সামনে যান। তখন নির্মাণ শ্রমিকদের তিনি মন্দিরের সামনে দেখেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। 

তপতি বলেন, শ্রমিকেরা গালিগালাজ করলেও মন্দির ও হিন্দু নিয়ে কিছু বলেননি। এরপর তাঁরা পাশে রাখা একটি নসিমনের (ইঞ্জিনচালিত বড় ভ্যান) কাছে যান। এই নসিমনে স্কুলের নির্মাণসামগ্রী ছিল। এরপর তপতি রানী আবার বাড়ি ফিরে আসেন।

তপতি রানী আরও বলেন, নির্মাণশ্রমিকদের সঙ্গে কখনো তাঁদের ঝামেলা হয়নি। ঘটনার দিন সন্ধ্যাতেও তাঁদের সঙ্গে তাঁর কোনো কথা হয়নি। তবে দ্বিতীয়বার যাওয়ার সময় তিনি তাদেরকে গালিগালাজ করতে শোনেন। সেসময় তাঁরা মন্দিরের সামনেই ছিলেন।

তবে কী বিষয় নিয়ে শ্রমিকেরা গালিগালাজ করছিলেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তপতি রানী।

বিদ্যালয়ের গ্রিল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকাজানা যায়, তপতির স্বামী প্রভাষ কুমার মন্ডলের পরিবার শুরু থেকেই এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। প্রভাষ কুমারের মা মনমতি মন্ডল, এরপর তার পিসি (ফুফু) গোলাপী মন্ডল, এরপর তাঁর ভাইয়ের বউ সন্ধ্যা রানী মন্ডল এর আগে মন্দিরে সন্ধ্যাপ্রদীপ ও বাকি কাজ করতেন। তাঁরা সবাই এখন মৃত। এরপর থেকে মালতি রানী মন্দিরের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বালান।

প্রভাষ কুমার মন্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই আগুন আগুন চিৎকার শুনে তাঁরা মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখতে পান, কালী মূর্তির শাড়িতে আগুন, সেটা আস্তে আস্তে পাশে থাকা কাপড়ের জিনিসেও ছড়িয়ে যায়। এলাকায় পানির সংকট আছে। সেজন্য আগুন নেভাতে তাদের কিছু সময় লাগে। তবে মূর্তি ছাড়া অন্য কিছুতে আগুন লাগেনি। আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকেরা ওই স্থানেই ছিলেন। এর মধ্যেই আশপাশের মানুষের ভিড় বাড়তে থাকলে তারা স্কুলের মধ্যে তাদের কক্ষে চলে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীরা বলেন, আগুন নেভানোর সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা–কাটাকাটি হয়। আর এর জেরে স্থানীরা নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করে বেঁধে রাখেন কক্ষের মধ্যে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বলেন, শুরুতে মধুখালী থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ খুবই অল্প মানুষ ছিল। তাঁদেরও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। আর এই সময়েই স্কুলের ওই কক্ষ ভেঙে নির্মাণশ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। মন্দির সংশ্লিষ্ট এলাকার চেয়ে আশেপাশের অঞ্চলের মানুষই বেশি ছিল তখন। তাই তাদের থামানো যায়নি।

শ্রমিকদের যে কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে সে কক্ষের দরজা ভেঙে ফেলে উত্তেজিত জনতা। ছবি: আজকের পত্রিকাস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সীতা রানী বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্মাণ শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার কাজ করতে এসেছেন। তাঁরা স্কুলের মধ্যেই থাকেন। মাঝে মাঝে নির্মাণ সামগ্রী এলে সেগুলো আনতে বাইরে যান। 

স্কুলের আরেক শিক্ষক উত্তম কুমার বিশ্বাস বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় তাঁরা এই ঘটনা শুনতে পান। স্কুলে আসার পর দেখেন স্থানীয় প্রশাসন সেখানে উপস্থিত রয়েছে। তবে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যাচ্ছিল না। এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। কিন্তু আস্তে আস্তে আশেপাশের এলাকা থেকে শত শত মানুষ এখানে ভিড় করেন। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। 

স্কুলের শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, তিনি খবর পেয়ে যখন স্কুলে আসেন তখন নির্মাণশ্রমিকরা স্কুলের ভেতরের কক্ষে ছিলেন। এসময় মধুখালি থানার পুলিশ, ডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ওই কক্ষে তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। তবে তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। এসময় উত্তেজিত জনতা বাইরে থেকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। একটি ইট তাঁর শরীরেও লেগেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁরা গতকাল ঘটনা শোনার পরই এখানে এসেছেন। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করা যায়নি। 

আগুনে কালী প্রতিমার শাড়ি পুড়ে যায়। ছবি: আজকের পত্রিকাডুমাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন আজকের পত্রিকাকে বলেন, একজন ইউপি সদস্য তাঁকে ফোন করে কালী মন্দিরে আগুনের কথা জানান। তিনি আনুমানিক সাড়ে ৭টার সময় সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সেখানে যাওয়ার পর দেখতে পান নির্মাণ শ্রমিকদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ওই কক্ষে রাখা হয়েছিল। 

এ সময় নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তপন বলেন, তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তাঁরা আগুন দিয়েছে কিনা। নির্মাণ শ্রমিকরা তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা কেউ আগুন দেয়নি। সন্দেহ করে তাঁদেরকে এভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে। 

রাত ১১টার পর অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে থাকা মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজুল ইসলাম একই ধরনের বক্তব্য দেন। 

আগুন কে দিল
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, বাতাসের কারণে আগুন লাগতে পারে। আর পুরো এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত হওয়াতে একমাত্র ওই নির্মাণ শ্রমিকেরা মুসলিম ছিলেন। তাই তাঁদেরকেই সন্দেহ করা হয়। আগুন কে বা কারা লাগিয়েছে সেটা জানা না গেলেও আগুন লাগার পর তা ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছে। সেটির সঙ্গে স্কুলের প্রকল্পের বিষয় থাকতে পারে।

তবে স্থানীয়রা বলছেন, মূর্তির সামনে থাকা প্রদীপ থেকে মূর্তির দূরত্ব অনেক বেশি। আর মূর্তি মাটি থেকে উঁচু একটা জায়গায় রয়েছে। তাই বাতাসে আগুন লাগা সম্ভব নয়। আশেপাশে কাঠ আর টিনের তৈরি মন্দির এবং দুটি মূর্তি থাকলেও সেগুলো অক্ষত রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, সকালে স্থানীয়দের সঙ্গে নির্মাণ শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সন্ধ্যায় প্রতিমার গায়ে আগুন লাগলে সব সন্দেহ তাঁদের ওপর পড়ে।

অতিরিক্ত ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) মো. মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কোনো একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এই ঘটনায় একজন আটক আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 
এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মহাসড়ক ব্লকেড

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
হাদীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মহাসড়ক ব্লকেড। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাদীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মহাসড়ক ব্লকেড। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বিন হাদীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মহাসড়ক ব্লকেড করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীরা।

আজ শুক্রবার বরিশাল-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কলেজ মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে ও ব্যারিকেড দিয়ে এ অবরোধ সৃষ্টি করেন তাঁরা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা।

হাদীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মহাসড়ক ব্লকেড। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাদীর ওপর হামলার প্রতিবাদে ঝালকাঠিতে মহাসড়ক ব্লকেড। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঝালকাঠি জেলা আহ্বায়ক মাইনুল ইসলাম মান্না, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল তৌফিক লিখন, সদস্যসচিব রাইয়ান বিন কামাল, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম সাগর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

তাঁরা বলেন, শরীফ ওসমান বিন হাদীর ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, শরীফ ওসমান বিন হাদী ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার খাসমহল এলাকার বাসিন্দা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ হবে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে: বদিউল আলম মজুমদার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশ আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রসঙ্গে’ আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশ আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রসঙ্গে’ আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন হবে কি না সেই আশঙ্কা বহুলাংশে দূরীভূত হলেও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশ আসন্ন নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রসঙ্গে’ আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এ সভার আয়োজন করে।

সভায় আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমার মনে হয়, নির্বাচন হবে না—এই আশঙ্কাটা বহুলাংশে দূরীভূত হয়েছে। পুরোপুরি দূরীভূত হয় নাই। কিন্তু আমার এবং অনেকের মনে দুটো প্রশ্ন। একটা হলো—নির্বাচনটা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হবে কি না। আরেকটা প্রশ্ন হলো—গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটবে কি না।’

নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘নির্বাচন একটি প্রক্রিয়া এবং এর অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। ভোটার তালিকা থেকে ফলাফল ঘোষণা এবং নির্বাচনী বিরোধ মীমাংসা পর্যন্ত, এই পুরো প্রক্রিয়া কারসাজিমুক্ত, স্বচ্ছ, পক্ষপাতিত্বমুক্ত হবে কি না—এর ওপর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নির্ভর করবে।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য গভীর সংস্কার দরকার বলে জানান নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে সহিংসতায় লিপ্ত হলে নির্বাচন নিয়ে আবার অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। তাই নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য গভীর সংস্কার দরকার।’

গণভোটের ওপর গণতান্ত্রিক উত্তরণ নির্ভর করবে বলে মনে করেন ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘গণভোট পাশের ওপর নির্ভর করবে আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণ, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে কি না। গণতন্ত্রের যে সকল ঘাটতি এবং শাসন প্রক্রিয়ার যে সকল দুর্বলতা সেগুলো দূরীভূত হবে কি না তা বহুলাংশে নির্ভর করবে আমাদের এই গণভোটের ওপর।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমসহ প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৮ হাজার টাকা চুরি করতেই সস্ত্রীক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা: পুলিশ

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫০
পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আজ বেলা ১১টায় তারাগঞ্জের রহিমাপুর গ্রামে।  ছবি: আজকের পত্রিকা
পুকুর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত কুড়াল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আজ বেলা ১১টায় তারাগঞ্জের রহিমাপুর গ্রামে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে (৬০) হত্যার পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে দেনার টাকা শোধের চাপ। গ্রেপ্তার টাইলস মিস্ত্রি মোরছালিন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, দেনা পরিশোধের জন্য টাকা চুরির উদ্দেশ্যেই সে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় গত রোববার রাতে যোগেশ চন্দ্রের ছেলে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে মোরছালিনকে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বেলা ১১টায় তাঁকে যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যোগেশ চন্দ্রের বাড়ি থেকে একটি দা ও পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়ালের হাতল উদ্ধার করা হয়।

মোরছালিনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, খুনের আগে মোরছালিন যোগেশ চন্দ্রের বাড়িতে টাইলস মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে তিন দিন কাজ করেন। এ কারণে যোগেশ চন্দ্র ও তাঁর স্ত্রী বাড়িতে একা থাকার বিষয়টি জানতেন। তিনি আট হাজার টাকা ঋণী ছিলেন। তিনি যোগেশের বাড়িতে কাজ করার সময় তাঁর মনে হয়েছিল ওই বাড়িতে টাকাপয়সা আছে। ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি চাপে পড়েন। কোনো উপায় না পেয়ে তাঁর বাড়িতে থাকা কুড়াল নিয়ে রহিমাপুর গ্রামে যান এবং যোগেশ চন্দ্র ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেন। এরপর তাঁদের বাড়িতে থাকা একটি দা দিয়ে আলমারি ভাঙে। কিন্তু সেখানে টাকা না পেয়ে বাড়িতে থাকা আমগাছ বেয়ে বাথরুমের ছাদে উঠে নেমে পাশে থাকা পুকুরে হত্যায় ব্যবহৃত কুড়াল ফেলে দিয়ে চলে যায়। যোগেশ চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর কোনো শত্রুতা ছিল না।

সরেজমিন দেখা যায়, অস্ত্র উদ্ধারের খবরে এলাকায় উৎসুক মানুষের ভিড় জমেছে। মোরছালিন পুলিশকে দেখাচ্ছিল—কীভাবে তিনি হত্যার পর পালিয়ে যান।

যোগেশ চন্দ্রের বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমার বাবার খুনিকে ধরা হয়েছে। আমি তৃপ্তি ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি। আর যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। এটার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। আমার বাবার হত্যাকারীর ফাঁসি যেন কার্যকর হয়—এটাই আমার চাওয়া।’

রংপুরের পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর মোরছালিন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। সে একাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রথমে সুবর্ণা রায়কে, পরে মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্রকে হত্যা করে। এরপর তাদের বাড়িতে থাকা একটি দা দিয়ে স্টিলের আলমারি খুলে। সেখানে দেখে টাকা আছে কি না। তার ভাষ্যমতে সে টাকা পায়নি। বাড়ির ভেতরে থাকা আমগাছ দিয়ে উঠে পেছনে থাকা কাঁঠালগাছ দিয়ে নেমে পাশে থাকা পুকুরে কুড়াল ফেলে দিয়ে চলে যায়। পুকুর থেকে কুড়ালের হাতল উদ্ধার হয়েছে। সেখানে রক্ত লেগে আছে। লোহার অংশও উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। শ্যালো দিয়ে পুকুরের পানি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। অপরাধ করে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

এদিকে বেলা ৩টার দিকে আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত বালাপাড়া গ্রামে মোরছালিনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা-বাবাকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বোন রিমি আক্তার জানান, মোরছালিন কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।

উল্লেখ্য, গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রানীকে হত্যা করা হয়। পরদিন রোববার সকালে প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করে সাড়াশব্দ না পেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ওপর আক্রমণ নির্বাচনী পরিবেশ বানচালের নীলনকশা: বিএনপি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৩
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপি। তারা বলেছে, এই আক্রমণ সুদূরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। দেশের একটি চক্র এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ শুক্রবার দুপুরে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন।

রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় আজ দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা হাদিকে গুলি করা হয়। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন। হামলায় গুরুতর আহত এই নেতার জন্য ‘বি নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্তের দরকার বলে জানিয়েছেন তাঁর অনুসারীরা।

সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান, হাদির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। চিকিৎসকেরা ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত জোগাড় করতে বলেছেন।

জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থীর ওপর হামলার পরপরই বিবৃতি আসে বিএনপির পক্ষ থেকে।

এতে বলা হয়, হাদি (৩৩) আজ দুপুরে বিপথগামী দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই আক্রমণ সুদুরপ্রসারী অশুভ পরিকল্পনার অংশ। নিঃসন্দেহে এটি নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করার জন্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম বিস্তার করার নীলনকশা। দেশের একটি চক্র এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সমাজে ভয় আর আতঙ্ক ছড়িয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে হিংস্র সন্ত্রাসীরা পরিব্যাপ্ত রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গণতন্ত্রের বিজয়ের যাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই একটি কুচক্রী মহল দেশকে নৈরাজ্যের অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা সেই অপতৎপরতারই নির্মম বহিঃপ্রকাশ। নাশকতাকারীদের অন্তর্ঘাতমূলক কাজের বিষয়ে জনগণকে সদা সতর্ক থাকতে হবে। গণতন্ত্রের পথচলাকে রুদ্ধ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তাই এসব নাশকতাকারী সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমনের বিকল্প নেই। গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ দেশের মানুষের জানমাল রক্ষায় দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নইলে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠবে।

বিএনপি দুস্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানাচ্ছে এবং গুলিতে গুরুতর আহত শরিফ ওসমান হাদির আশু সুস্থতা কামনা করছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত