Ajker Patrika

সোহাগ হত্যা: পুরান ঢাকার ভাঙারিপট্টিতে ভয়-আতঙ্ক

বরগুনা প্রতিনিধিনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১০: ২৩
ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যায় শুক্রবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আলমগীর ও মনির নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যায় শুক্রবার ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আলমগীর ও মনির নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে নৃশংসভাবে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৪৩) হত্যার ঘটনার পর স্থবির হয়ে পড়েছে সেখানকার ব্যবসায়িক কার্যক্রম। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাঙারিপট্টির ব্যবসায়ীরা।

কোটি টাকার ব্যবসার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সোহাগকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে। আসামিদের মধ্যে টিটন গাজীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ গিয়াস রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে এই মামলার আরেক আসামি তারেক রহমান রবিন অস্ত্র মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

দুপুরের পর দুই আসামিকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মনির হোসেন। তিনি টিটন গাজীর ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। অন্যদিকে রবিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করার আবেদন করেন।

শুনানি শেষে আসামি টিটন গাজীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে রবিনের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

গত বুধবার সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের সামনে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। নিহত সোহাগ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন এলাকায় বসবাস করতেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকা থেকে নিহত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের মরদেহ বরগুনায় নিয়ে আসেন স্বজনেরা। পরে সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুরের বান্দরগাছিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে মায়ের কবরের পাশে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

শনিবার বিকেলে মিটফোর্ট রোডের রজনী বোস লেনে ভাঙারিপট্টিতে গিয়ে দেখা যায়, গলিতে শতাধিক ভাঙারির দোকান। বেশ কিছু দোকান খুললেও নেই তেমন কর্মচাঞ্চল্য। দোকানি ও কর্মচারীরা অনেকে বসে আছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ী সোহাগ খুন হওয়ার পর ভাঙারিপট্টিতে আগের মতো কর্মচাঞ্চল্য নেই। আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটত ব্যবসায়ীদের। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর তিন দিন ধরে লোকজন কম আসছে। ব্যবসায়ীরাও কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।

নিহত সোহাগের সোহানা মেটালের পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘দুই দিন ধরে ব্যবসা কিছুটা স্থবির হয়ে আছে। বেচাকেনা কম। লোকজনও আসছে না। যাঁরা আসতেছেন, অধিকাংশই বিভিন্ন গণমাধ্যমের লোকজন; ঘটনা জানতে আসছেন।’

মার্কেটের আরেক অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা মালামাল বেচাকেনার বাইরে ভাত খাওয়ার সময় পেতাম না। কিন্তু এই ঘটনার পর এখন তেমন কাজ নেই। অল্প অল্প বেচাকেনা চলে। ঘটনার পর অনেকে আতঙ্কিত।’

স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, সোহাগ হত্যায় জড়িত মাহমুদাল হাসান মহিন চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। দু-তিন বছর ধরে তিনি যুবদলের রাজনীতি করছেন। গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিন ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তাঁর মা তাহমিনা মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মী। সরোয়ার হোসেন টিটু চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক সদস্য। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়নের অনুসারী। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবিউল কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

সাবাহ করিম লাকি ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। অপু দাস চকবাজার থানা ছাত্রদল দলের সদস্যসচিব। মহিন, অপু, টিটুরা একসঙ্গে চলতেন। তাঁরা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। কয়েক মাস আগে ব্যবসা নিয়ে তাঁদের মধ্যে সমস্যা দেখা দিলেও গত কোরবানির ঈদের আগে তা মীমাংসা হয়। তাঁরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন। এই নিয়ে ব্যবসায়ীরাও কিছুটা বিরক্ত ছিলেন। মহিন বিএনপির প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর স্ত্রী সাবেক কমিশনার নাসিমা আক্তার কল্পনা, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইসহাক সরকার ও হামিদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিত।

ব্যবসায়ী সূত্র জানান, সোহাগ ১০-১২ বছর ধরে ভাঙারি গলিতে ব্যবসা করতেন। ভাঙারির ব্যবসার আড়ালে এ দোকানে অ্যালুমিনিয়ামের চোরাই তার বেচাকেনা হতো। এতে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকার ব্যবসা হতো তার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলটির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যান। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই কোটি টাকার ব্যবসায় ভাগ বসাতেই তাঁর সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় মহিন, অপু ও টিটুর।

এ ছাড়া মিটফোর্ড হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট দেখভাল করতেন নান্নু। মহিনদের ছত্রচ্ছায়ায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন নান্নু। আর হত্যায় জড়িত বড় মনির এলাকায় পরোটা মনির নামেও পরিচিত বলে জানা যায়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকেলে সোহাগের দোকানে ৮-১০টি মোটরসাইকেলে করে লোক এসে তাঁকে মারধর শুরু করে। মারতে মারতে তাঁকে মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাহমুদুল হাসান মহিনের নেতৃত্বে সোহাগের ওপর হামলা চালানো হয়। সোহাগের গায়ে ইট ও পাথর মারেন লম্বা মনির ও আলমগীর। তাঁর শরীরের ওপর লাফালাফি করেন ছোট মনির।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার নিহত সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। হত্যায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‍্যাব। এই নিয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছে পুলিশ ও র‍্যাব। শনিবার মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, সেখানে একটি ভাঙারি দোকানে কারা ব্যবসা করবে, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন এবং যাঁরা হত্যার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাঁরা পরস্পর সম্পর্কিত। তাঁরা একসঙ্গে ব্যবসাটা কিছুদিন করেছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তাঁরা নিজেদের মতো ব্যবসা করার জন্য সোহাগের সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন এবং এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

পাঁচজনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার

এই হত্যাকাণ্ডে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নাম আসা পাঁচজনকে গত শুক্রবার নিজেদের সংগঠন থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অবশ্য গতকাল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্না অভিযোগ করেন, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। একই বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও প্রশ্ন তোলেন।

স্ত্রী-সন্তানের আহাজারি

গতকাল আহাজারি করতে করতে স্বামীর কবরের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছেন লাকী আক্তার। বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তিনি, আর প্রলাপ বকছিলেন। কান্নায় ভেঙে যাওয়া কণ্ঠে লাকী আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামীরে মারতাছে, আর হাজার হাজার লোক চেয়ে চেয়ে দেখল। কেউ এসে একবারও ওই উন্মাদ খুনিদের থামাইল না। সে পাঞ্জাবি পইরা বের হইছিল। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও ওরা আমার স্বামীর বুকের ওপর উঠে নৃত্য করেছে। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? দুইটা অবুঝ শিশু; ওদের কীভাবে মানুষ করব। এই নির্মমতার কি কোনো বিচার করবে এই দেশের মানুষ?

লাকী আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামীর দোকান থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল হত্যাকারীরা। আমার স্বামীর ব্যবসা তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তারা প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাইছিল। আমার স্বামী তা দিতে চায়নি। আর এ কারণেই নির্মমভাবে হত্যার শিকার হতে হয়েছে তাকে।’

শোকে যেন পাথর হয়ে গেছে সোহাগের দুই শিশুসন্তান। চোখে তীব্র ক্ষোভ ও বুকভরা সাহস নিয়ে তারা পিতৃহত্যার বিচার চেয়েছে দেশবাসীর কাছে।

নিহত সোহাগের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে সোহান (১১) আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ওরা এতিম বানাইয়া ফালাইছে। আমরা কোথায় থাকব? আমার বাবাকে কী নিষ্ঠুরভাবে পাথর দিয়া মারছে। এই হত্যার বিচার চাই আমরা।’ এটুকু বলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এ সময় সোহাগের বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোহানা (১৪) বলেন, ‘আমার বাবাকে ব্যবসার জন্য মেরে ফেলেছে। আমার বাবার কাছে হত্যাকারীরা টাকা চাইছে। আমার বাবা বলেছে, আমি কষ্ট করে রোজগার করি আমার সন্তানদের জন্য। তোদের কেন টাকা দিব। আর এ জন্যই আমার বাবাকে ওরা মেরে ফেলেছে। এই নরপিশাচদের ফাঁসি চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাঠে পড়ে ছিল মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথায় উৎপল সরকার (৩৫) নামের এক মাছ ব্যবসায়ীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গৌরদিয়া এলাকার কালীতলা ব্রিজ-সংলগ্ন মাঠ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় মাঠ-সংলগ্ন সেতু থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় থাকা ফিরোজ মোল্যা নামের এক ভ্যানচালককে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।

নিহত উৎপল ফরিদপুর জেলা সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের অজয় সরকারের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তান রয়েছে।

থানা-পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ ভোরে সড়কের পাশে ফাঁকা মাঠে রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। পাশেই একটি সেতুর সঙ্গে একই গ্রামের ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় বেঁধে রাখা হয়েছিল। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি খুলে বলেন তিনি।

ভ্যানচালকের বরাত দিয়ে রনকাইল গ্রামের বাসিন্দা ও প্রতিবেশী কাজী শাহীন বলেন, উৎপল সরকার ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে মাছ কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চার ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানচালক ফিরোজ মোল্যাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ব্রিজের রেলিংয়ে বেঁধে ফেলে। তারা উৎপলের সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা লুট করে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সালথা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কে এম মারুফ হাসান রাসেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই থেকে তিনজন দুর্বৃত্ত ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে এটাকে ডাকাতি বলা যায় না। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে মূল কারণ বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসার দরজা ভেঙে চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

চবি প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ওমর ফারুক সুমন নামের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকার একটি বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

ওমর ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানান, সুমন খুলশীতে তাঁর মামার বাসায় থাকতেন। তাঁর বড় ভাইও সেখানে থাকেন। দুই দিন আগে সুমনের মামা পুরো পরিবার নিয়ে তুরস্কে বেড়াতে যান। বাসায় সুমন ও তাঁর বড় ভাই ছিলেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন সুমন। ফোনে তাঁর বড় ভাই কখন বাসায় ফিরবেন জানতে চান সুমন। বড় ভাই জানান যে তাঁর আসতে একটু দেরি হবে। এর কিছুক্ষণ পর বড় ভাই সুমনকে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি। পরে বাড়ি থেকে সুমনের মা ফোন দিয়ে যোগাযোগ করতে না পেরে বিষয়টি বড় ভাইকে জানান। এতে উদ্বেগ দেখা দিলে বড় ভাই বিল্ডিংয়ের দারোয়ানকে দিয়ে বাসা চেক করান।

দারোয়ান কলিংবেল বাজিয়েও কোনো সাড়া না পেয়ে বড় ভাইকে জানালে তিনি দ্রুত বাসায় এসে সুমনকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে চিরকুট মিলেছে। এতে লেখা রয়েছে, ‘আমি সুমন, ওমর ফারুক সুমন। আমার কোনো আশা-আকাঙ্ক্ষা নেই। আর আমার কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সবাই ভালো থাকবেন।’ এর আগে ১ ডিসেম্বর লেখা আরেকটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল—‘আশাই জীবন, আশাই মরণ, ব্যর্থতা হতাশা-অন্ধকারে নিয়ে যায়।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর জামান বলেন, ‘সুমন ও তাঁর বড় ভাই একসঙ্গে মামার বাসায় থাকতেন। মামা ও মামি বর্তমানে বিদেশে আছেন। বড় ভাই সন্ধ্যায় বাইরে যান। সে সময় সুমন বাসায় একা ছিলেন। বড় ভাই বাসায় ফিরে এসে বারবার ডাকলেও ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকলে সুমনের মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও আমরা সব সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বদলি নিয়ে ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ শিক্ষক নেতার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। ছবি: সংগৃহীত ক্যাটা: সারা দেশ, ময়মনসিংহ

সহকর্মী এবং নিজের বদলি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, ‘আমাকে সাড়ে ৪০০ মাইল দূরে বদলি করা হয়েছে। এতে আমি বিচলিত নই।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে আবুল কাশেম বলেন, ‘আমার মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবি আদায়ের নেতৃত্ব দেওয়া শতাধিক শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী জেলা এবং বিভাগে। আরও অনেককে বদলি করা হতে পারে। এ নিয়ে কেউ বিচলিত হবেন না। প্রয়োজনে আইনি লড়াইয়ে যাব। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসব না। আপনাদের পাশে রয়েছি। অবিলম্বে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসবে। সে জন্য যদি জেলেও যেতে হয়, প্রস্তুত রয়েছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক আবুল কাশেমের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

৪ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) মাহফুজা খাতুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে বরিশাল সদরের চরবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত