Ajker Patrika

যানবাহনশূন্য বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট

মাদারীপুর ও গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৭ জুন ২০২২, ২০: ০০
যানবাহনশূন্য বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় যানবাহনশূন্য হয়ে পড়েছে বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। এর আগে গত ২৬ মে থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে বাংলাবাজার ফেরিঘাট বন্ধ রাখে বিআইডব্লিউটিসি। গত দুই দিনে এই নৌরুটে গুটিকয়েক লঞ্চ ও স্পিডবোট চলেছে। অপরদিকে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় প্রায় যানবাহনশূন্য হয়ে পড়েছে দৌলতদিয়া ঘাট।

বরিশাল থেকে বাংলাবাজার ঘাটে আসা মোটরসাইকেল আরোহী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের টাকায় আমাদের সেতু হলেও তার সুফল পাচ্ছি না। সকাল ৬টায় জাজিরা টোল প্লাজায় এসে ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে দৌলতদিয়া হয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা পেতে কঠোর নিয়মনীতি মেনে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেলসহ যাবতীয় যানবাহন চালানোর অনুরোধ রইল।’

বাংলাবাজার ঘাটের স্পিডবোট মালিক সমিতির পরিচালক রাসেল মিয়া বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর আমাদের সি-বোট বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। কেউ ঘাটে আসছে না। গেল দুই দিনে ১৫ থেকে ২০টি সি-বোট চলাচল করেছে। এতে তেলের টাকাও উঠছে না। ফলে সি-বোট চালু রাখার কথা বললেও কার্যত আমাদের বন্ধ রাখতে হবে। কারণ, মানুষ না হলে আমরা কীভাবে চালাব? সরকারিভাবে চালানোর কথা থাকলেও আমরা বন্ধ করে রাখতে বাধ্য থাকব।’ 

বাংলাবাজার-শিমুলিয়া ঘাটের লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাহার ব্যাপারী বলেন, ‘আমাদের দিকে আর কেউ তাকায় না। সেতু চালু হয়েছে, এতে আমরা খুশি। কিন্তু যাত্রী না এলে লঞ্চ কীভাবে চলবে। দুই দিন কোনো যাত্রীই ছিল না। ৫ থেকে ৭টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করলেও তেলের টাকাই উঠবে না। তাই বাধ্য হয়েই লঞ্চ বন্ধ রাখতে হবে। এ রুটে প্রায় ৮৭টি লঞ্চ রয়েছে। এভাবে লঞ্চ বন্ধ থাকলে আমাদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়ে যাবে।’ 

যানবাহন শূন্য অবস্থায় রয়েছে বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন বলেন, ‘গত ২৬ মের পর থেকে বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। তবে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাটে দুটি ফেরি চালু করা হয়। এ ছাড়া সব ঘাটেই লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল করছে। মাঝিরকান্দি ঘাট দিয়ে মোটরসাইকেল পারাপার হচ্ছে। তবে দুটো ফেরি চালু থাকায় কিছুটা সময় লাগছে।’ 

ঘাটের ব্যবস্থাপক আরও বলেন, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে আগে ৮৭টি লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিডবোট ও ১৭টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করত। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে এক মাস ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বিকল্প রুট হিসেবে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ঘাট দিয়ে ৩ থেকে ৫টি ফেরি চলাচল করত। 

অপরদিকে বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে এক দিনে ৫ থেকে ৬ হাজার যানবাহন পারাপার করত। ওই সব যানবাহন পারাপারে ব্যবহৃত হতো ছোট-বড় ১৭ থেকে ১৯টি ফেরি। তবে পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলাচল শুরু হওয়ার পর অর্ধেকে নেমে এসেছে এ ঘাট ব্যবহার করা যানবাহনের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাটে ১৮টি ফেরিতে প্রায় ২০০ ট্রিপের মাধ্যমে ৪৫২টি বাস, পণ্যবাহী বড় ট্রাক ১ হাজার ১২৯টি ও পণ্যবাহী ছোট ট্রাক ১ হাজার ১৩০টিসহ মোট ২ হাজার ৭০০ যানবাহন পারাপার হয়েছে। 

জানা যায়, পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ায় দৌলতদিয়া ঘাটে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার গণপরিবহন যা আসছে, তা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকেই পছন্দমতো ঘাটে গিয়ে ফেরিতে উঠতে পারছে। প্রতিটি ঘাটেই একাধিক ফেরি যানবাহন নিতে অপেক্ষায় থাকছে। অনেক সময় ফেরি ফাঁকা রেখেই পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।

পাটুরিয়া থেকে আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে ইউটিলিটি ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ঘাটে এসে ভেড়ে। একই ঘাটে এর আগে আরও দুটি ফেরি আসায় রজনীগন্ধাকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর অর্ধেকের বেশি জায়গা খালি রেখে ফেরিটি পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। 

যানবাহন শূন্য অবস্থায় রয়েছে বাংলাবাজার ও দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। গ্রিন লাইন পরিবহনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক নুরুজ্জামান মিয়া জানান, এই রুটে তাঁদের কোম্পানির বাসের সংখ্যা এমনিতেই কম। এরপরও সরাসরি যাতায়াতের সুবিধার্থে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তাঁর মতো অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছেন। 

সোহাগ পরিবহনে কর্মরত দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক সুজন আহম্মেদ বলেন, ‘আমাদের এই ঘাট দিয়ে গাড়ির সংখ্যা অর্ধেকের বেশি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। খুলনা থেকে ঢাকায় যেতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হতে সময় লাগত ৬ থেকে ১০ ঘণ্টা। আর যানজট থাকলে সময় আরও বেড়ে যেত। বর্তমানে পরিবহনের ট্রিপ কমে যাওয়ায় ঘাট এখন যানবাহনশূন্য।’ 

গোপালগঞ্জ থেকে আসা যাত্রীবাহী পরিবহন কমফোর্টের চালক মিজানুর রহমান জানান, তাঁদের পদ্মা সেতু দিয়ে যাওয়ার জন্য এখনো কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া এই পরিবহনের অনেক যাত্রী সাভার বা নবীনগর এলাকার। একটু সময় বেশি লাগলেও আপাতত এ রুট দিয়েই তাঁদের যাতায়াত করতে হবে। 

বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা ইসলাম পরিবহনের চালক বলেন, ‘আমাদের গাড়িগুলো রুট পারমিট পেলে পদ্মা সেতু দিয়েই বেশি চলাচল করবে। তবে ৪ থেকে ৫টি ট্রিপ এ ঘাট দিয়েও চলাচল করতে পারে। কারণ, সাভার, নবীনগরের যাত্রীদের জন্য এখান দিয়ে কিছু গাড়ি চলবে। অপরদিকে, আগে ঘাটে এসে ৩ থেকে ১০ ঘণ্টা দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে থাকতে হতো। কিন্তু আজ একেবারেই গাড়ির কোনো লাইন নেই। ঘাটে আসামাত্রই সরাসরি ফেরিতে গিয়ে উঠতে পারছি। এমন থাকলে দূরপাল্লার গণপরিবহন এ ঘাট দিয়েও পারাপার হবে, এতে যাত্রীদের ভোগান্তিও থাকবে না।’ 

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখনো কিছু দূরপাল্লার বাসের রুট পারমিট হয়নি। ফলে এখনো দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে রুট পারমিট পেলে বাসের সংখ্যা আরও অর্ধেকে নেমে যাবে। আরও এক সপ্তাহ পর পদ্মা সেতুর প্রভাবের চিত্রটি পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। বর্তমানে দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯টি ফেরি চলাচল করছে।’

ফেরিঘাট সম্পর্কিত পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে ফুলের চারা উৎপাদনে ব্যস্ত নেছারাবাদের নদীতীরের গ্রামগুলো

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি 
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক নার্সারি। ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুলচাষিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেছারাবাদ উপজেলার সন্ধ্যা নদীতীরবর্তী অলংকারকাঠি গ্রামে শীতের আগমন মানেই ভিন্ন এক কর্মচাঞ্চল্য। ভোরের ঘন কুয়াশার মধ্যেই নারী-পুরুষ সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন নার্সারির কাজে। কারও হাতে কাস্তে, কারও হাতে পানির পাইপ, কেউ আবার মাথায় তুলে নেন বড় ঝুড়ি। এভাবেই ফুলের চারা উৎপাদনের কর্মকাণ্ড জমে ওঠে অলংকারকাঠি, পানাউল্লাহপুর, আকলম, মাহমুদকাঠিসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে।

উপজেলায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় নার্সারি। বিশেষ করে স্বরূপকাঠি-বরিশাল সড়কের অলংকারকাঠি এলাকায় সড়কের দুই পাশে সারি সারি নার্সারি চোখে পড়ে। শীত মৌসুমকে ঘিরে এসব নার্সারিতে শুরু হয়েছে ফুলের চারা উৎপাদনের ব্যাপক প্রস্তুতি। উপজেলা কৃষি অফিস ও উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা, চলতি মৌসুমে ফুলের চারা বিক্রিতে দেড় থেকে দুই কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে।

নার্সারিগুলোতে ইতিমধ্যে ফুটতে শুরু করেছে বাহারি ফুল। অল্প সময়ের মধ্যেই লাল, নীল, হলুদ, গোলাপি ও বেগুনি রঙের ফুলে মাঠ ঢেকে যাবে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন ফুলের গালিচা। এই চারা উৎপাদন শুধু সৌন্দর্যই ছড়াচ্ছে না, নীরবে সৃষ্টি করছে এক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। পাশাপাশি দরিদ্র নারী-পুরুষের জন্য তৈরি হচ্ছে টেকসই কর্মসংস্থান।

নেছারাবাদ উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ১ কোটি ফুলের চারা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি। নার্সারির মালিকেরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি জমিতে চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। যদিও সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অলংকারকাঠি, কুনিয়ারী, মাহমুদকাঠি, সুলতানপুরসহ অন্তত ২০টি গ্রামে ফুলের চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধা, গোলাপ, টিউলিপ, কসমস, বেলি, সূর্যমুখী, অর্কিড, সিলভিয়া, মর্নিং ফ্লাওয়ার, ক্যালেন্ডুলাসসহ শতাধিক প্রজাতির দেশি ও বিদেশি ফুলের চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

নার্সারির মালিক মো. আদনান শেখ বলেন, নেছারাবাদে বর্তমানে ২ হাজারের বেশি নার্সারি রয়েছে। মালিক ও শ্রমিক মিলিয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই খাতে জড়িত। শীত মৌসুমে এই নার্সারিগুলো ফুলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। উৎপাদন খরচ বাড়লেও চলতি মৌসুম নিয়ে তিনি আশাবাদী।

নার্সারির নারী শ্রমিক ঝুমা আক্তার বলেন, আগে সংসারে অভাব ছিল। স্বামীর একার আয়ে কষ্ট করে চলতে হতো। এখন নার্সারিতে কাজ করে সংসারের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের মুখে হাসি ফুটেছে। তিনি জানান, ফুলের চারার দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বনসাই ও বিদেশি জাতের চারার দাম সবচেয়ে বেশি।

দেখা গেছে, এসব নার্সারিতে শ্রমিকদের বড় অংশই নারী। পাশাপাশি পুরুষ শ্রমিকেরাও কাজ করছেন। নার্সারির কাজে তুলনামূলক কম মজুরির কারণে নারী শ্রমিক সহজলভ্য বলে জানান উদ্যোক্তারা। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মজুরি পেয়ে তাঁরা সংসারের খরচ সামাল দিচ্ছেন।

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহফুজুর রহমান জানান, নেছারাবাদে প্রায় ৪০ হেক্টর জমিতে ফুলের চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ব্যবসায়ীরা দেড় থেকে দুই কোটি টাকার বেচাকেনা করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ফুলের চারা উৎপাদনের এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে নেছারাবাদের নদীতীরবর্তী গ্রামগুলো আগামী দিনে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুল উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

মো. আজিমুশ শানুল হক দস্তগীর চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম)
মহাসড়কে দোকান যানজটে ভোগান্তি

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশের দোহাজারী অংশটি এখন শুধু যাতায়াতের পথ নয়, ক্রমেই মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। দোহাজারী বাজার এলাকায় ৬ লেনের প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ হলেও যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরেনি। একদিকে সড়কের ডিভাইডার দখল করে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকান ও কাঁচাবাজার, অন্যদিকে মূল সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের এই ব্যস্ত এলাকায় বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দোহাজারী পৌর সদরের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় সড়কের বিভাজকে (ডিভাইডার) খুঁটি গেড়ে অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। কোথাও সবজি, কোথাও ফল, আবার কোথাও চায়ের দোকান। নিয়ম অনুযায়ী মহাসড়কের ওপর কোনো ধরনের স্থাপনা থাকার কথা না থাকলেও এখানে ডিভাইডারই যেন বাজারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

৬ লেনের এই মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য দ্রুতগতির লেন থাকলেও দোহাজারী অংশে তা কার্যত অকার্যকর। সড়কের দুই পাশে শত শত সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা এলোমেলোভাবে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছে। নির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় মূল লেনেই যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। ফলে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে আসা দ্রুতগতির বাস ও ট্রাককে দোহাজারী সদরে এসে হঠাৎ ব্রেক কষতে হচ্ছে। এতে পেছনে থাকা যানবাহন দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে পড়ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন মাঝে মাঝে উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তা স্থায়ী হয় না। সকালে উচ্ছেদ হলেও বিকেলেই আবার দোকান বসে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ও বাজার ইজারাদারেরা প্রতিদিন এসব ভাসমান দোকান থেকে চাঁদা আদায় করে। এতে সড়ক দখলমুক্ত করার উদ্যোগ বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর উদ্দিন বলেন, ‘৬ লেনের সড়ক হওয়ায় যাতায়াত সহজ হবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু এখন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলো ২০-৩০ মিনিটের যানজটে আটকে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দোহাজারী পৌর প্রশাসক ঝন্টু বিকাশ চাকমা জানান, তিনি সদ্য কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। দোহাজারীতে সড়ক দখল করে ভাসমান দোকান ও বাজার বসার বিষয়টি সম্প্রতি তাঁর নজরে এসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শিগগির অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও সিএনজির বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। প্রতিদিনই মামলা হচ্ছে। তবে স্থানীয় তদবিরের কারণে অনেক সময় দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি হয় বলে তিনি দাবি করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দিলে, সেই কমিটির নেতৃত্বেই নির্বাচনী কমিটি গঠন করুন।’

দশমিনা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৪
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা–গলাচিপা) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতার অংশ হিসেবে ওই আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এই ঘোষণার পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন হাসান মামুন। তিনি নুরুল হক নুরের বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতির জন্য পদত্যাগপত্র জমা দেন।

এদিকে গতকাল বুধবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগে হাসান মামুনকে নির্বাহী কমিটির সদস্যপদসহ প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কারের খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর হাসান মামুন তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একাধিক পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে তিনি নেতা-কর্মী ও ভোটারদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

বুধবার রাত ৮টার দিকে এক পোস্টে তিনি লেখেন, বিএনপির সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত ছিল এবং তিনি আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একই পোস্টে নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে আরেক পোস্টে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে লেখেন, মজলুম নেত্রীর ইন্তেকালের দিনে তৃণমূলের মজলুম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? একই সঙ্গে অতীতের একটি বহিষ্কার ও পরবর্তী সময়ে তা প্রত্যাহারের উদাহরণ তুলে ধরেন।

রাত ১১টার দিকে দেওয়া আরেক পোস্টে হাসান মামুন লেখেন, ৩৭ বছরের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত কর্মীদের চেয়ে দুই দিনের অবিশ্বস্ত ও ফ্রন্ট মিত্রদের সঙ্গে চলা বিষধর সাপের সঙ্গে বসবাসের চেয়েও ঝুঁকিপূর্ণ।

সর্বশেষ পোস্টে তিনি লেখেন, সবাইকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সাংগঠনিক কমিটি ভেঙে দেওয়া হলে সেই কমিটির নেতৃত্বেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করার আহ্বান জানান তিনি। তার ভাষায়, নেতা-কর্মী ও ভোটাররাই তাদের মূল শক্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুয়ারেই বিষাক্ত ধোঁয়া দম বন্ধ পড়াশোনা

জিল্লুর রহমান, মান্দা (নওগাঁ)
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৮
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদ্যালয়ের আঙিনায় ভাসছে বিষাক্ত ধোঁয়া। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে দীর্ঘদিন ধরে একটি ইটভাটা পরিচালিত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে কোমলমতি পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। ইটভাটার লাগাতার কার্যক্রমে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও অসুস্থতায় ভুগেও ক্লাসে বসতে হচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে। নিরাপদ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের বদলে কালো ধোঁয়ার নিচে বড় হচ্ছে তাদের শৈশব—যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে উপজেলার সাবাইহাট এলাকার ঝাঁঝরের মোড়ে ‘যমুনা ব্রিকস’ নামে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। ভাটার মাত্র ২৫০ মিটার দূরে রয়েছে একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চবিদ্যালয়। আশপাশে রয়েছে আবাসিক এলাকা ও দুটি আমবাগান। গোসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি ভাটাটি পরিচালনা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ফিক্সড চিমনির মাধ্যমে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কয়লার পাশাপাশি কাঠের খড়ি ব্যবহার করায় ধোঁয়ার মাত্রা আরও বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে বসে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১৩ সালের সংশোধনী) অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা ও বাগানের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা নিষিদ্ধ। তবে এই আইন অমান্য করেই প্রায় ২০ বছর ভাটাটি পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, গত বছর ভাটা চালু হওয়ার পর তার এক সহপাঠী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা নিতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে ভোগে বলেও জানায় সে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুল বলেন, ইটভাটাটি নিয়ে তেমন কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কিছুদিন আগে ভাটামালিক ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন।

জানতে চাইলে ভাটামালিক কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আগামী বছর থেকে আর ব্যবসা করব না।’

এ বিষয়ে ইউএনও আখতার জাহান সাথী বলেন, যমুনা ব্রিকসের পরিবেশ ছাড়পত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত