Ajker Patrika

অটোরিকশায় ১৯ ঘণ্টার ভ্রমণ: ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মোস্তাকিম ফারুকী, ঢাকা
অটোরিকশায় ১৯ ঘণ্টার ভ্রমণ: ঢাকা টু ব্রাহ্মণবাড়িয়া

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। ঈদের ছুটি। পরিচিতদের অনেকেই ছুটছে গ্রামের উদ্দেশ্যে। নিজের মনেও দিল পাখির উড়াল। কিন্তু উপায় কী। ঢাকা থেকে খুব কাছের দূরত্বও যে দুর্লঙ্ঘ হয়ে গেছে শুধু টিকিটের কারণে। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের মিরাশানী গ্রামে। সেখানে যেতে আইঢাই মন নিয়ে বাস ও ট্রেনের টিকিট কত না খুঁজেছি। পাওয়া হলো কই।

কোথাও কোনো টিকিট নেই। তাই ১৯ ঘণ্টা রিকশা ভ্রমণ করে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছাই। ঘটনা শুরু থেকে বলা যাক।

গত ২৮ এপ্রিল (বুধবার) দুপুর ২টায় ওয়ারির বাসা থেকে বের হয়েছি কাঁটাবনের দিকে একটা ইফতারের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে পরিবারের সবাই একত্রিত হবে, শবে কদরকে কেন্দ্র করে বাড়িতে একটা উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হবে। সে আয়োজনে আমাকে অবশ্যই থাকতে হবে বলে তাড়া দিচ্ছিল বাড়ি থেকে। কমলাপুরে কয়েকবার সন্ধান করেছি, ট্রেনের কোনো টিকিট নেই। ২৭ রমজান বাড়িতে যেতে পারব না বলে হাল ছেড়ে দিয়েছি, ঢাকার কাজেই মনোযোগ দিয়েছি। কাঁটাবনে ইফতার শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। পরিচিতদের সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটাচ্ছিলাম। রাত ১২টার দিকে ভর্তা বাড়িতে ইমরান ভাইয়ের সৌজন্যে একটা খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হয়।

খাওয়াদাওয়া শেষে সৈকত ভাইয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে আবারও আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলে। হঠাৎ মোবারক ভাই বলেন, ‘রাত অনেক হয়েছে বাসার দিকে চলে যা।’ সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ওয়ারির উদ্দেশ্যে রিকশায় উঠলাম। কথায় কথায় জানা গেল, রিকশাওয়ালা ভদ্রলোকের বাড়িও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। টিএসসি থেকে উদ্দেশ্য ছিল ওয়ারি যাব। তখন তিনি গলা ছেড়ে মনের সুখে গান গাইছিলেন, ‘অ ছখিনা, গেচছ কি না ভুইল্ল্যা আমারে। আমি অহন রিসকা চালাই ঢাহা শহরে।’ গান শুনে আমি রসিকতা করে উত্তর দিলাম, ‘আপনার ছখিনে আপনারে ভুলে নাই।’ বেচারা আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন, থামিয়ে দিলেন গান। স্তব্ধ হয়ে পড়লেন কিছু সময়ের জন্য। তারপর করুণ কণ্ঠে বলতে লাগলেন, ‘মামা ৪ মাস যাবৎ বাড়িতে যাই না, বাড়ির কাউরে দেখি না।’

প্রস্তাব করলাম, ‘চলেন আজই বাড়িতে, যেহেতু নিজের গাড়ি। বউ-বাচ্চার সঙ্গে ঈদ করবেন।’ রিকশা নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবেন—এমন কথা শুনে প্রথমে তিনি বিচলিত হয়েছিলেন। বললাম, ‘আরে মিয়া চলেন, গাড়ি চালাইয়াই তো যাবেন। এটা কোনো ব্যাপার হইল! টাকা-পয়সা নিয়ে চিন্তা করবেন না, সারা দিনে আপনার যা ইনকাম হয় পুষিয়ে দিব।’ যেই কথা, সেই কাজ! বেচারা রাজি।

আধ ঘণ্টার ব্যবধানে আমি আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস বাসা থেকে সংগ্রহ করি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। যাত্রাবাড়ীতে রিকশাচালকের বাসা। পথিমধ্যে তিনিও তাঁর বাসা থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে আসেন। যাত্রাপথে ব্যাটারি চালিত এই রিকশার চার্জ শেষ হয়ে যাবে—এটা নিশ্চিত। তবে চার্জ শেষ হলে প্যাডেল দিয়ে চলবে এমন ব্যবস্থাও আছে। রিকশায় চার্জ দেওয়ার জন্য তিনটি যাত্রাবিরতি হতে পারে বলে সিদ্ধান্ত হলো। প্রথমটি নরসিংদী, দ্বিতীয়টি ভৈরব এবং তৃতীয়টি বিশ্বরোড। এই তিনটি জায়গার রিকশা গ্যারেজে চার্জ দিয়ে আবার ছুটে চলা হবে গন্তব্যে—এমনই সিদ্ধান্ত। গাড়ি চার্জে লাগিয়ে সে এলাকায় পরিচিত কাউকে পেলে, তাদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানো যাবে।

মদনপুর দিয়ে রিকশা ঢুকল। সে রাস্তায় শুধু ট্রাক আর ট্রাক! গাজীপুরের সব ফ্যাক্টরির মালামাল সে রাস্তা দিয়েই চট্টগ্রাম বন্দরে যায়। রাস্তায় জ্যামের কারণে সারিবদ্ধ হয়ে ট্রাকের পর ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। তবে পাশ দিয়ে রিকশা চলার মতো যথেষ্ট ফাঁকা ছিল। তাই অল্প সময়ে পৌঁছে গেলাম গাউছিয়া। রাত ৩টা ১০ মিনিটে মায়ের দোয়া নামের একটা হোটেলে সাহরি খেতে ঢুকলাম।

হোটেল মালিক মো. রাকিব খুব আন্তরিকতার সঙ্গে খাবার পরিবেশন করলেন এবং আমাদের দীর্ঘ যাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলেন। খাবার শেষে রিকশাচালক শুক্কর মিয়া চা পান করলেন। চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ার কিঞ্চিৎ আশঙ্কা ছিল। তাই প্যাডেলে চেপে রিকশা চালালেন কিছুক্ষণ। হাইওয়েতে বড় বড় গাড়ি দেখে দড়িপাড়ার রোড দিয়ে গ্রামের ভেতরে চলে গেলাম আমরা রিকশা নিয়ে। সেখানে একটি মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে আবার যাত্রা শুরু।

চলতে চলতে সকাল ৯টায় মাধবদী পৌঁছালাম আমরা। সকালবেলা রাস্তা খুব নীরব। বৈশাখী সূর্যের প্রখরতা তেমন নেই। ভাটিয়ালি গান চলছিল রিকশাওয়ালার ফোনে। তখন নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। ইটাখোলা, চান্দিনা অতিক্রম করেছি বেলা ১২টায়। সেই মুহূর্তটা ভ্রমণের মধ্যে সবচেয়ে ক্লান্তিকর ছিল। প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল; কিন্তু রিকশায় ঘুমানোর কোনো সুযোগ নেই। নরসিংদী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে একটা অটো গ্যারেজে ৩০ মিনিট ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হলো প্রথমবারের মতো।

অটোরিকশাচালক শুক্কর মিয়ার সঙ্গে মোস্তাকিম ফারুকীআশপাশে ঘোরাঘুরি করলাম। কিন্তু কোথাও বসব, সে সুযোগ হচ্ছিল না। যেহেতু রোজা আছি, তাই অহেতুক অপরিচিত হোটেলে বসে থাকাটাও অস্বস্তিকর ছিল। হাঁটতে হাঁটতে আবার রিকশার কাছে যাই। দুপুর ২টায় রায়পুরা জামে মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই আমরা। তারপর গ্রামের ভেতরের রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে রামনগর দিয়ে ভৈরব চলে আসি। ভৈরব বাজারে প্রবেশের সময় আমার সার্জেন্ট পুলিশের সঙ্গে কিছুক্ষণ আলাপচারিতা হয়। ভৈরব চৌরাস্তায় আবার অটো গ্যারেজে রিকশা রেখে চালককে নিয়ে আশপাশে হাঁটছিলাম।

খাবার খাওয়া ছাড়া কোনো হোটেলে বসাটা অস্বস্তিকর ছিল। তাই রিকশার ড্রাইভারকে কিছু খাওয়ার প্রস্তাব করলাম। কিন্তু তিনি রোজা ভাঙতে নারাজ। আমরা তখন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থিত ভৈরব ব্রিজের পাশে দাঁড়ালাম। খেয়াল করলাম, সেখানে রিকশা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

স্থানীয় এক ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলাম এবং তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা করতে এলেন। খানিকক্ষণ আগে একজন পুলিশের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ করলাম। ততক্ষণে ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে বলে রাস্তায় গাড়ির চাপ কম। সেই বড় ভাই আর পুলিশ সদস্যটির সহযোগিতায় ব্রিজ পার হওয়া সম্ভব হলো। এর মধ্যে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল।

একটা পানির বোতল আর কিছু শুকনো খাবার দিয়ে ইফতার সেরে ফেললাম আমরা। ভালো কোথাও বসে ইফতার করার প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না ড্রাইভার সাহেব। কারণ, এ সময় রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল এবং খুব দ্রুতই আমরা বিশ্বরোড চলে এলাম। সেখানে আমরা একটা ছোট খাবারের দোকানে বসে কিছু খেয়ে নিলাম। দোকানে মোবাইল চার্জে লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে ছোট ভাই রিফাতের ফোন এল। তাকে কোথায় আছি জানালাম। সে দ্রুতই দুই প্যাকেট বিরিয়ানি আর দোকানের কেনা জুস নিয়ে হাজির হলো। আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম। এবার রিকশায় সঙ্গী হলো রিফাত।

ভরা পেটে আমাদের যাত্রা আবার শুরু হলো। শুক্কর মিয়ার গানের সুরও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। শুক্কর মিয়া লোক ভালো, রসিক মানুষ। উচ্চ শব্দযুক্ত মোবাইল আছে তাঁর। মাঝেমধ্যেই গান, গজল বাজাচ্ছেন। আবার নিজেও গলা ছেড়ে গাইছেন। আমি রিকশাওয়ালাকে সম্বোধন করছিলাম ড্রাইভার সাহেব বলে। যতবারই এভাবে ডাকি, ততবারই ফিক করে একটা হাসি দেন তিনি। জিজ্ঞেস করলাম, ‘মামা হাসেন কেন?’ তিনি চাপা আনন্দে হেসে উত্তর দিলেন, ‘আমি আবার সাহেব নাকি!’

সারা দিনব্যাপী তাঁর কর্মকাণ্ড খেয়াল করলাম। আসলে প্রতিটি মানুষই তার পরিবারের কাছে একজন হিরো। প্রত্যেকেই যার যার আত্মসম্মানে বলিষ্ঠ। প্রতিদিন রিকশা নিয়ে বের হলে তিনি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা উপার্জন করতে পারেন। এর মধ্যে কিছু রাস্তায় ব্যয় হয়, কিছু গ্যারেজে। সবকিছু বাদ দিয়েও এক থেকে দেড় হাজার টাকা তাঁর থেকে যায়। বিষয়টা নিয়ে ভাবলাম অনেকক্ষণ। অনার্স, মাস্টার্স সম্পন্ন করা আমার পরিচিত খুব কম মানুষের বেতনই ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার ওপরে। অথচ যাদের আমরা দরিদ্র রিকশাওয়ালা হিসেবে চিনি, তাঁরা প্রতিদিন যা উপার্জন করেন, তার পরিমাণ এক মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজারের বেশি। অথচ দুই শ্রেণির মানুষের জীবনযাপনে কত পার্থক্য! আমার কাছে বিষয়টা স্পষ্ট, কীভাবে শুধু পড়াশোনা মানুষে মানুষে পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে।

রাত ৯টা। গ্রামে প্রবেশ করলাম। দীর্ঘ প্রায় ১৯ ঘণ্টা ভ্রমণ শেষে দূর থেকে নিজের বাড়ি যখন দেখতে পাচ্ছিলাম, তখনকার অনুভূতি বলে প্রকাশ করার মতো নয়। সারা দিন কত কত বাড়ি ছেড়ে আসলাম, শত শত দোকানের সামনে দিয়ে গেলাম, রাস্তায় জীবনের সবচেয়ে ক্লান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তাতে। কিন্তু কোথাও বসে যে একদণ্ড বিশ্রাম নেব, সেই আন্তরিক অনুভূতি ভেতরে তৈরি হয়নি। মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, কখন বাড়ি পৌঁছাব। সকল জল্পনা-কল্পনা শেষে যখন বাড়ির লাইট দেখা যাচ্ছিল দূর থেকে, তখন মন আনন্দে নেচে উঠছিল।

রিকশা কাছে আসতেই দেখি আম্মাসহ আশপাশের সবাই দাঁড়িয়ে বাড়ির সামনে। ১৯ ঘণ্টার দীর্ঘ রিকশাযাত্রা শেষ করে বাসায় উপস্থিত হলাম। কীভাবে ছিলি এতক্ষণ রিকশায়, ঠিকঠাক আছিস তো? সবার মনে কত প্রশ্ন। আর আমার ভাবনায় তখন একটাই কথা, বাড়ি পৌঁছে গেছি।

রিকশা ড্রাইভার শুক্কর মিয়াকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো খাওয়াদাওয়ার জন্য। কিন্তু তিনিও চলে যেতে অস্থির। বুঝতে পারলাম, আমার মতো তাঁর মধ্যেও অস্থিরতা কাজ করছে, কখন বাড়ি যাবেন। বাড়িতে শুক্কর মিয়ার পরিবার অপেক্ষায় আছে।

লেখক: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সম্মান চতুর্থ বর্ষের ছাত্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেশবপুরে অস্ত্র-মাদকসহ স্বেচ্ছাসেবক ও যুবদলের চার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি 
কেশবপুরে পিস্তল, গুলি, রামদা, চাকু, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত সরঞ্জামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
কেশবপুরে পিস্তল, গুলি, রামদা, চাকু, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত সরঞ্জামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরের কেশবপুরে যৌথ বাহিনীর অভিযানে পিস্তল, গুলি, রামদা, চাকু, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত সরঞ্জামসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের যশোর আদালতে সোপর্দ করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক মামলা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, উপজেলার ভোগতী ও আলতাপোল এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে যৌথ বাহিনীর পৃথক অভিযানে পৌরসভার ভোগতী এলাকার আলমগীর হোসেনের (৪০) কাছ থেকে একটি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, একটি ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন অপরাধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ভোগতী এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ (৩৫) ও মূলগ্রামের রাসেলের (২৩) কাছ থেকে ৩০ পিস ইয়াবা, একটি রামদা, একটি চাকু, একটি চায়নিজ কুড়াল, একটি বার্মিজ চাকু, দুটি ইলেকট্রিক শক মেশিন ও একটি চাপাতি এবং আলতাপোল এলাকার উজ্জ্বল বিশ্বাসের (৩৯) কাছ থেকে একটি রামদা, তিনটি হাঁসুয়া ও একটি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর হোসেন পলাশ পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এবং আলমগীর হোসেন ও উজ্জ্বল বিশ্বাস পৌর যুবদল থেকে বহিষ্কৃত।

কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উজ্জামান বলেন, গ্রেপ্তার ওই চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আলাদা দুটি মামলা হয়। আজ সন্ধ্যায় তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অভ্যন্তরীণ কোন্দল: যুবদল নেতাকে অপর যুবদল নেতার ছুরিকাঘাত

বগুড়া প্রতিনিধি
আহত যুবদল নেতা জিয়াউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত যুবদল নেতা জিয়াউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন যুবদল নেতা জিয়াউর রহমান (৩৮)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া শহরতলির সাবগ্রাম হাট এলাকায় ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। আহত জিয়াউর রহমান বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

জানা গেছে, জিয়াউর রহমান বগুড়া সদরের সাবগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। অভিযুক্ত যুবদল নেতা সজীব সাবগ্রাম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিয়াউর রহমান বলেন, ‘সাবগ্রাম হাট এলাকায় কথা-কাটাকাটির জেরে সজীব আমাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে।’

স্থানীয়রা জানান, এক মাস আগে সাবগ্রামে ছাত্রদল নেতাকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার জেরে সজীবের সঙ্গে জিয়াউরের বিরোধ দেখা দেয়। এর জেরে গতকাল রাতে জিয়াউরকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।

জানতে চাইলে বগুড়া সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক অতুল চন্দ্র দাস বলেন, ‘জিয়াউরকে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাহত করেছে বলে শুনেছি।’ ঘটনার পর থেকে যুবদল নেতা সজীব মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বগুড়া শহরের নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাসুদ রানা বলেন, রাতে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, দলীয় কোন্দলের জের ধরে জিয়াউরকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জিয়াউর রহমানের খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। থানায় অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বরিশাল বিসিক শিল্পনগরীতে সুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ব‌রিশাল
আজ দুপু‌রে খান সন্স গ্রুপের একটি সুতার কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ দুপু‌রে খান সন্স গ্রুপের একটি সুতার কারখানায় আগুন ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালের বিসিক শিল্পনগরীর খান সন্স গ্রুপের একটি সুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আজ শুক্রবার দুপু‌রে আকস্মিকভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়লে কারখানায় থাকা শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। তবে এতে কারখানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; যদিও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটির অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র অচল থাকায় আগুন নেভাতে প্রথম দিকে বেগ পেতে হয় বলে জানা গে‌ছে।

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, সুতার কারখানা হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থায় ঘাটতি থাকায় শুরুতে শ্রমিকেরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হন। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।

কারখানার সিনিয়র ফিটার মো. নাদিম বলেন, হঠাৎ করে আগুন লাগায় শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়েই দেড় শতাধিক শ্রমিককে দ্রুত বাইরে বের করে আনা হয়। ফলে প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

আরও এক সিনিয়র ফিটার রুবেল হোসেন বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত। আগুনে সুতার রিলসহ কারখানার গুরুত্বপূর্ণ অংশ পুড়ে গেছে। অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডারগুলোর বেশির ভাগেই গ্যাস না থাকায় আমরা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হই।’

খান সন্স গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার যতীন্দ্রনাথ মিস্ত্রি জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শ্রমিকদের কোনো ক্ষতি না হলেও কারখানার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে নির্ধারণ করা যাবে। অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থায় কিছু ঘাটতি থাকতে পারে।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ফারুক হোসেন শিকদার বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে। আমাদের দুটি ইউনিট দীর্ঘ সময় চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় খাঁচা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল ‘ডেইজি’ নামের একটি সিংহী। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সিংহীটি খাঁচা থেকে বের হয়ে আসে। প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টার পর চেতনানাশক প্রয়োগ করে তাকে পুনরায় খাঁচায় ফিরিয়ে আনা হয়।

চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার আজকের পত্রিকাকে জানান, সিংহীটি খাঁচা থেকে বের হলেও চিড়িয়াখানার ছয় ফুট উঁচু নিরাপত্তা নেটের ভেতরেই ছিল। দর্শনার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে চেতনানাশক প্রয়োগের পর তাকে খাঁচায় ফেরানো হয়েছে।

রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, ডেইজিকে অচেতন করতে প্রায় ১৫ মিনিট সময় লাগে। অচেতন হওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় তাকে আবার খাঁচায় নেওয়া হয়।

চিড়িয়াখানার পরিচালক আরও বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু ছিল না। পুরো ঘটনাটি নিরাপত্তার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।’

সিংহীটি খাঁচা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, ‘আমরা মনে করছি, খাঁচার দরজায় তালা না লাগানোর কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে। তা ছাড়া খাঁচার কোথাও ভাঙা পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আতিকুর রহমান জানান, বেরিয়ে যাওয়ার পর সিংহীটিকে শান্ত রাখতে গরুর মাংস দেওয়া হয়। এরপর বন্দুকের মাধ্যমে চেতনানাশক ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়। সম্পূর্ণ অচেতন হওয়ার পর তাকে খাঁচায় আনা হয়।

কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, ঘটনার পর বিকেলেই চিড়িয়াখানায় থাকা সব দর্শনার্থীকে নিরাপদে বের করে দেওয়া হয় এবং কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় মোট পাঁচটি সিংহ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত