Ajker Patrika

বিজিবি স্কুলে মিয়ানমারের ১৭৯ সেনা সদস্যের আশ্রয়, ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত

মাঈনুদ্দিন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান)
বিজিবি স্কুলে মিয়ানমারের ১৭৯ সেনা সদস্যের আশ্রয়, ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান অনিশ্চিত

রাখাইনের মন্ডু জেলা শহর থেকে টহলে বের হওয়া জান্তা বাহিনীর ২ শতাধিক সদস্যের ওপর কমান্ডো হামলার পর পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ১৭৯ সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরস্থ ১১ বিজিবির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে তাঁদের সব ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ স্কুলে অবস্থানের কারণে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল আজ মঙ্গলবার। আশ্রিত স্থানান্তরে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পাঠদান নিয়েই এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। স্কুলটিতে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। 

এদিকে সোমবার বিকেলে মিয়ানমার অংশ থেকে বাংলাদেশের অত্যন্তরে ছুটে আসা গুলিতে আহত ইউপি সদস্য সাবের আহমদের কোমরের পেছনের অংশ থেকে একটি বুলেট অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। বিষয়টি আজ সন্ধ্যায় নিশ্চিত করেন ভুক্তভোগী নিজেই। ইউপি সদস্য সাবের আহমদ বলেন, বুলেটটি বের করার পর প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। অর্থ সংকটে ওষুধও কিনতে পারছেন না। 

জামছড়ি সীমান্তের অধিবাসী আবদুচ্ছবি, জহির আলম ও কালাম বকসু আজ বিকেলে এ প্রতিবেদককে বলেন, সকালেও জামছড়ি ও আশারতলী গ্রাম থেকে ওপারের রানী এলাকায় গোলাগুলির ব্যাপক আওয়াজ পাওয়া গেছে। তাঁরা কাঠ কাটতে যাওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে গুলির আওয়াজ পান। পরে ভয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। 

পালিয়ে আসা জান্তা সদস্য টুয়ো মং (৪২) সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা ২ শতাধিক সেনা সদস্য বিদ্রোহী দমনে টহলে বের হন গত ১০ মার্চ বিকেলে। বলিবাজার সেনা ব্যাটালিয়নে ১১ মার্চ রাত্রিযাপন করার কথা ছিল। কিন্তু পথিমধ্যে আরকান আর্মির কমান্ডোরা অতর্কিত হামলা করে। রানী ও অংচাপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ–পশ্চিমে ২০ কিলোমিটার গহিন বনে তাঁরা আক্রমণের শিকার হন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানালে ওপরের নির্দেশে তাঁরা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। ২০০ সদস্যের ১৭৯ জন বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। বাকি ২১ সদস্য সীমান্ত এলাকায় লুকিয়ে আছেন বলে জানান তিনি। 

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের ১৭৯ সেনা সদস্যকে ১১ বর্ডার গার্ড বিজিবির ব্যাটালিয়ন সংলগ্ন বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে তাঁদের বিদ্যালয়ে আনা হয়। বেঞ্চ সরিয়ে বিছানা পেতে তাঁদের রাখা হয়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একটি সূত্র জানায়, আজ দুপুরে তাঁদের বিরিয়ানি ও মুরগি মাংস খাওয়ানো হয়েছে। 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিয়ানমার বাহিনীর ১৭৯ সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশারতলী গ্রামের জারুলিয়াছড়ির আগা ও জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে তিন দফায় বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। পরে তাঁদের নিরস্ত্র করে বিকেলে ২৯ জনকে এবং রাতে ১৫০ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বিজিবি স্কুলে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের মধ্যে আহত চারজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

এদিকে সীমান্তের ওপারে আটকে পড়েছেন ২১ সদস্য। রাখাইনের উত্তরাংশের রানী অংচেপ্রে নামক স্থানের দক্ষিণ–পশ্চিমে ডেইংগ্যার পাহাড় নামক জান্তার পরিত্যক্ত ঘাঁটি ঘিরে রেখেছে আরকান আর্মি কমান্ডোরা। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল বলে সূত্রে জানা গেছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মুজাহিদ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মিয়ানমার বাহিনীর ১৭৯ সদস্যকে নাইক্ষ্যংছড়ির বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। তাঁদের বিষয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চালানো হবে। 

প্রশাসনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, সম্প্রতি রমজানে স্কুল বন্ধ রাখা নিয়ে রিটের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্কুল খোলার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় রমজানের প্রথম ১০ দিন খোলা থাকবে। 

ওই কর্মকর্তা বলেন, বিজিবি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মিয়ানমারের ১৭৯ সেনাকে অন্যত্র সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে সরকার। তা না হলে স্কুলের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে। 

এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতণ চাকমা বলেন, ‘১১ বিজিবি অধিনায়কের প্রস্তাবেই তাঁদের (সেনা সদস্য) বর্ডার গার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। কারণে আজ স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তাঁরা এখানে যে কয়দিন তাঁরা থাকবেন সে পর্যন্ত হয়তো এভাবেই থাকবে। আগামী ১০ রমজানের পর স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে।’ 

উল্লেখ্য, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্যসহ ৩৩০ জন সেনা। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার উখিয়ার ইনানী নৌ–বাহিনীর জেটিঘাট দিয়ে তাঁদের মিয়ানমারে পাঠানো হয়। আর ১১ মার্চ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন আরও ১৭৯ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মিরপুরে খাঁচা থেকে বেরিয়ে এল সিংহী, আর চিড়িয়াখানা থেকে দর্শনার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় থেকে একটি সিংহী খাঁচা থেকে বের হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সিংহীটি খাঁচা থেকে বের হয়ে এর পাশেই অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটি সিংহী বিকেলে খাঁচা থেকে বের হয়ে গেছে। সিংহীর চারপাশে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এটিকে খাঁচায় নিয়ে আসতে।’

এটিকে ধরার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অবশ করতে অবশ করার গান প্রস্তুত করে রেখেছি। নিরাপত্তা বজায় রেখে অবশ করে খাঁচায় নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।’

জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সিংহীটি খাঁচা থেকে বের হয়েছে। কীভাবে বের হয়েছে, সেটি আমরা এখনো জানতে পারিনি।’

চিড়িয়াখানার এই কিউরেটর বলেন, সিংহীটিকে শান্ত রাখতে তাকে গরুর মাংস দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাকে বন্দুকের মাধ্যমে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়েছে। পুরোপুরি অচেতন হয়ে গেলে খাঁচায় ভেতরে নেওয়া হবে।

এদিকে, চিড়িয়াখানা থেকে সাধারণ দর্শনার্থীদের নিরাপদে বের করে আনা হয়েছে। এর মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি বলেও জানিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পীরগাছায় দিনের বেলায় কেটে রাখা জমির ধান লুটের অভিযোগ

পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
জমিতে বিছিয়ে রাখা এই ধানগুলোই রাতে লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
জমিতে বিছিয়ে রাখা এই ধানগুলোই রাতে লুট করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের পীরগাছায় দিনের বেলায় কেটে রাখা এক কৃষকের ধান লুটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার কিসামত ঝিনিয়া ডাক্তারপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে পীরগাছা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে লুটকারীরা সটকে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতেই এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।

ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, তিনি ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে ৩০ বছর ধরে ৩৫ শতক জমি ভোগদখল করে আসছেন। চলতি মৌসুমে সেই জমিতে তিনি আমন ধান চাষ করেছিলেন। কিছুদিন আগে পাকা ধান কেটে খড়সহ জমিতে বিছিয়ে রেখে শুকাচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর প্রতিবেশী আব্দুস সোবহান সেই জমি নিজের বলে দাবি করে তাঁর সঙ্গে অহেতুক বিরোধে জড়ান। সেই বিরোধের জেরে বৃহস্পতিবার দুপুরে আব্দুস সোবহান তাঁর ছেলেদেরকে সঙ্গে নিয়ে জমির ধান লুট করে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। ঘটনার সময় ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল মান্নান বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আব্দুস সোবহান তাঁর লোকজনসহ তাঁকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দৌড়ে নিজ বাড়িতে ঢুকে রক্ষা পান। পরে তিনি জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এই জমি আমার। তাই আমার জমির ধান আমি বাড়িতে নিয়ে গিয়েছি।’

তবে স্থানীয়রা জানান, ওই জমি আব্দুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন। ওই জমিতে ধান আব্দুল মান্নানই চাষ করেছিলেন।

পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোমেল বড়ুয়া জানান, এ ব্যাপারে তিনি একটি এজাহার পেয়েছেন। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় এনসিপির আহ্বায়ক হলেন জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা জেলা এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া খাদেমুল ইসলাম খুদি। ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধা জেলা এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া খাদেমুল ইসলাম খুদি। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধা জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটিতে জাসদের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক খাদেমুল ইসলাম খুদিকে গাইবান্ধা জেলা এনসিপির আহ্বায়ক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

ফেসবুকে অনেকেই কমিটি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন। জেলাজুড়ে বিষয়টি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া অতীতে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্য—বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে করা মন্তব্যগুলো ফের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক পোস্ট ও ভিডিওতে খাদেমুল ইসলাম খুদিকে ইনুর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা যায়। এর আগে গত বুধবার এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম স্বাক্ষরিত ৫২ সদস্যের এই কমিটি প্রকাশ করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, খাদেমুল ইসলাম খুদি দীর্ঘদিন ধরে হাসানুল হক ইনুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গত অক্টোবর মাসে সাদুল্যাপুর উপজেলায় ‘সুধী সমাবেশ’ করার নামে খাদেমুল ইসলাম খুদি একটি রাজনৈতিক বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। প্রশাসন বিষয়টি জানতে পারলে খুদি সমাবেশ শুরুর আগেই ব্যানার সরিয়ে সরে পড়েন। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তন হওয়ার পরপরই তিনি বিভিন্ন কৌশলে দলবদল করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত জুলাই আন্দোলন-নেতৃত্বকারী এ দলের জেলায় শীর্ষ পদটি পেয়ে যান। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর ঘনিষ্ঠতার সুযোগে খুদি মোটা অঙ্কের বিনিময়ে গাইবান্ধা জেলা এনসিপিতে শীর্ষ পদটি নিশ্চিত করেছেন।

ফেসবুকে এস এম এনামুল হক নামে একজন লিখেছেন, ‘যারা সারা জীবন আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছে, তারা কীভাবে এনসিপির আহ্বায়ক হন? টাকার বিনিময়ে কি শহীদদের রক্ত বিক্রি করা হচ্ছে?’ মামুন সরকার নামে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আওয়ামী লীগের আরেক নাম এনসিপি।’ রফিক খন্দকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার জন্যই এ কমিটি।’

নাম না প্রকাশের শর্তে খাদেমুল ইসলাম খুদির এক বাল্যবন্ধু বলেন, খুদি ছাত্রজীবন থেকেই ক্ষমতা ও পদ-পদবির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। যদিও তিনি জাসদের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত ছিলেন, পরে তিনি প্রায়ই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন।

এদিকে নতুন কমিটির বিরোধিতা করে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এনসিপির জেলা কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দেন। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল। নেতা-কর্মীদের কাউকে দেখা যায়নি। ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম মনিরুজ্জামান সবুজ পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, ‘নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে স্বৈরাচারের দোসরকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শহীদদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে।’

জানতে চাইলে গাইবান্ধা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব বায়োজিদ বোস্তামী জীম বলেন, ‘আওয়ামী লীগপন্থী প্রভাবশালী মহলের দোসর, সুবিধাবাদী চরিত্র ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের অযৌক্তিকভাবে পদ দেওয়া হয়েছে। এতে ত্যাগী ও প্রকৃত কর্মীরা বঞ্চিত হয়েছেন।’ তিনি দ্রুত কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলমের মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জ-৩: প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সেতু অবরোধ

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আজ বিকেলে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বিকেলে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি ঘোষিত মো. কামরুজ্জামান রতনের প্রার্থিতা বাতিলের দাবিতে ঢাকা–মুন্সিগঞ্জ সড়কে ষষ্ঠ বাংলাদেশ–চীন মৈত্রী সেতু ব্লকেড করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা। আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তারপুর এলাকায় সেতুর ওপর টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

বিকেল ৫টার দিকেও (এই প্রতিবেদন লেখার সময়) অবরোধ চলছিল। অবরোধের কারণে ঢাকা–মুন্সিগঞ্জ সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ছোট ভাই মো. মহিউদ্দিন-সমর্থিত নেতা-কর্মীরা।

প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে দলের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান রতনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। এর প্রতিবাদে রাতেই জেলা শহরে মির্জা ফখরুল ও রতনের কুশপুত্তলিকা দাহ ও মুক্তারপুর এলাকায় মশালমিছিল করেন মহিউদ্দিনপন্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় আজ দিনভর এ ব্লকেড কর্মসূচি চলে।

অবরোধ চলাকালে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্য সাইদুর রহমান ফকির, শাহাদাত হোসেন সরকার, শহর বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাহবুব-উল-আলম স্বপন, পঞ্চসার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, জেলা যুবদলের সাবেক সদস্যসচিব মু. মাসুদ রানা, জেলা ছাত্রদল সভাপতি মো. আবুল হাসেমসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত