হাবিবুল্লাহ রাসেল

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়।
‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আখ্যান তুলে ধরেছেন। দিনের পর দিন এই মানুষগুলো শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হতে জর্জর। ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারপাশে থেকে তাদের ভূমি দখল করে নেয়; আছে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী আর বিপ্লবী দলের নাম ভাঙিয়ে চরমপন্থীদের উৎপাত—খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি-চাঁদাবাজি; আবার ইসলামের নাম করে বঙ্গ ভাইয়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন-হত্যা; আছে পুলিশের উৎপীড়ন। বিলবাসী মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না—কিছুই করার থাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে এসব অঞ্চল। তাই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বছরের একবার ধান ফলে। বছরে এই একবারই তাদের উপার্জন। সেই ধানই তাদের বছরজুড়ে ভাত দেয়, ধানের টাকায় পরিবারের সব জিনিস কেনা হয়, যাবতীয় খরচ চলে এই ধানের টাকায়।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে হয় অর্পিত সম্পত্তি আইন। ‘পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৬৫-এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যেসব নাগরিক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ওই তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত ভারতে গমন করেছিলেন, তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং উহার ব্যবস্থাপনা উপ-তত্ত্বাবধায়কের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়।’
এই কালো আইনে সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল তৈরি করে আদালতের মামলা-মোকদ্দমা রুজু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় এ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, যাদের সম্পত্তি এই কালো আইনের আওতায়ও আসে না। লেখক উপন্যাসে গৌরাঙ্গ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়টিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। গৌরাঙ্গ সৎ কৃষক। হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই তিনি প্রিয়। যদিও গৌরাঙ্গর জমি ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ নামক কালো আইনের আওতায় আসে না, তবুও এই আইনের আওতায় ফেলে ক্ষমতা ও কৌশলে সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বার তার পৈতৃক জমি দখল করে নেয়। এই জমিই গৌরাঙ্গের পরিবারের অন্ন জোগায়, এই জমিই তার সব। সম্পত্তি হারিয়ে গৌরাঙ্গ একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। অফিসে অফিসে ধরনা দিয়েও যখন কোনো অগ্রগতি হয় না, একদম ভেঙে পড়েন তিনি। খাবার জোটে না পরিবারের। মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে পাগলাগারদে কাটায় কিছুদিন। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু গৌরাঙ্গকে আর চেনা যায় না। শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর আর শক্তি থাকে না তার। বারুহাসের মেলা থেকে গৌরাঙ্গের অসহায় মেয়েদের খাবার, চুড়ি-ফিতা আর খেলনা কিনে দেয় কদম আর আবদুর রহিম। মেয়েরা বাবাকে দেখায় খেলনাগুলো। গৌরাঙ্গের কেবল চোখ পড়ে খেলনার লাঙলটির ওপর। লেখকের ভাষায়, ‘হাতে নেয় ছোট্ট লাঙলটা। হাতে তুলে নিয়ে একেবারে চোখের কাছে ধরে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। হাত দুটো তার এখন আরও বেশি বেশি কাঁপছে অজানা উত্তেজনায়। হঠাৎ সে বারান্দা ছেড়ে উঠোনের মাটিতে নেমে আসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। হাতের খেলনা লাঙলটা মাটিতে ছোঁয়ায় তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে মাটির ওপর দিয়ে খেলনা লাঙলটি ঠেলতে থাকে অবিকল জমিচষার ভঙ্গিতে। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে ঘুরতে থাকে লাঙলের সঙ্গে। মুখে শব্দ—হেট্! হেট্!’
এই ‘হেট্! হেট!’ শব্দ আমাদের মস্তিস্কজুড়ে ঘুরপাক খায়, আর লাঙলের ফলার মতো জ্বলজ্বল করে দেখিয়ে দেয়—দেখো বাংলার কৃষক দেখো, যে তোমার খাদ্য জোগায়, আমৃত্যু যে লাঙল-জোয়াল, মাঠ আর ফসলের স্বপ্ন দেখে। দেখো প্রকৃত স্বদেশ দেখো।
গাঁয়ের ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে থাকে কদম আর আবদুর রহিম। আবদুর রহিম দেখে দেখে পড়তে পারলেও কদম একদমই লেখাপড়া জানে না। তবু গাঁয়ের এই নিম্নস্তরের মানুষের অন্তরে রয়েছে মানবিকতা বোধ। যেমনটি রয়েছে তিসিখালি মাজারের খাদেম ও তার পরিবারের। অপরিচিত, অসহায় বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজতবাস করেও খাদেম যখন কদম আর আবদুর রহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়্যাডারে তোরা সামলায়া রাখিস। বেচারি অনেক কষ্ট পাইছে। আর য্যান সর্বহারা কিংবা পুলিশের হাতে না পড়ে। তাহলে যে কী ঘটাব মিয়্যাডার কপালে তা অল্লামালিকই জানে।’ তখন মানবতার এক উজ্জ্বল মূর্ত প্রতীক দেখতে পাই। পুলিশ খাদেম সাহেবকে মারধর করেছে কি না, কদম জানতে চাইলে খাদেম যখন বলেন, ‘নমরুদের জেলখানায় মুছা নবীর ওপর যত অত্যাচার হইছিল, আমার ওপর তত অত্যাচার হয়নি। মুছা নবীর যত কষ্ট হইছিল, ততটা কষ্ট আমার হয়নি।’ কদম-রহিমের সাথে তখন পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে।
কদম আর খাদেম সাহেবের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা কিশোরীকে ঘিরে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়, কমরেড বিজয় ও কমরেড তপন কর্তৃক এন্তাজ ও তার চার প্রধান সহযোগীর হত্যার মাধ্যমে সে রহস্যের জট খুলে।
লেখক এ উপন্যাসে একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ধনী, গরিবের বৈষম্য থাকবে না; যেখানে কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও অন্যের দখলে থাকবে না। উপন্যাসে বিপ্লবী দলের চোখে সেই স্বপ্ন ফুটে ওঠে— ‘আমাদের পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক পথে সমাজতন্ত্র এ দেশে আসবেই।... মিশে যেতে হবে কৃষকদের সঙ্গে, খেতমজুরদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের নিয়েই গড়ে তুলতে হবে কৃষক ও খেতমজুরদের খণ্ড খণ্ড বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী। এই বাহিনী শ্রেণিশত্রু খতমের পাশাপাশি খাসজমি দখল, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনসহ সামাজিক সুশাসনের মডেল স্থাপন করবে একেকটি মুক্তাঞ্চলে।’
এই বিপ্লবী দলের নের্তৃত্বেই গৌরাঙ্গ তার হারানো জমি ফিরে পায়। হারানো জমি পেয়ে গৌরাঙ্গ যেন সুস্থ হয়ে যায়। সে আবার লাঙল ধরে, চারা লাগায়, যত্নে যত্নে সেই চারা বড় হয়, ধানে শিষ আসে, তারপর পাকাধানে মাঠ সোনালি হয়ে যায় একদিন। মনে হয় সত্যিকারের বিপ্লব এসেছে, অসহায় মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু না! একটা বল্লম পেছন থেকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। উবু হয়ে বসে ছিল গৌরাঙ্গ। এবার প্রণামের ভঙ্গিতে কপালটা ঠেকে যায় ধানের গোড়ার মাটিতে। কদমের মাথাটাও দু-ফাঁক হয়ে যায় ভূমিদস্যু সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বারের ভাড়াটে লাঠিয়ালের নিখুঁত লাঠির ঘায়ে।
তখন বিপ্লবের মশালটা নিবু নিবু হয়ে আসে। আর যখন আবদুর রহিম দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বললেও এক পা-ও নড়ে না পুলিশ, তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার থাকতে নেই। তখন বাতাসে বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় গৌরাঙ্গের পাগলকালীন প্রলাপ, ‘ঠাকুরেরে দীক্ষা দিয়্যা কিছু হয় না। কাম হয় ডিসিরি দিয়্যা, এমপিরে দিয়্যা। ঠাকুর শালার কোনো ক্ষমতাই নাই।’
কিংবা ধর্মপ্রাণ আবদুর রহিমের চিন্তাটাই তখন জ্বলে ওঠে, ‘আল্লা নাকি বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেয় বান্দার।...আচ্ছা সব পরীক্ষা কি খালি গরিব মানুষদেরই দিতে হয়!’
উপন্যাসজুড়ে আব্দুর রহিম একটি ব্যতিক্রম চরিত্র। সে চলনবিলের কাউয়াটিকরি গ্রামের ধর্মপ্রাণ একজন নবীন যুবক। চার শ বছর ধরে জনশ্রুত লোককাহিনিকে ভিত্তি ধরে একটি কুদরতি তাবিজ খুঁজে বেড়ায় সে। তার ধারনা, এই চলনবিলের কোথাও না কোথাও লুকানো আছে সেই তাবিজটি। মোটা কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে চোখ মেললে যেমন অন্ধকার, সে রকম অন্ধকারে, দু-একটা হারিকেনের আলো ছাড়া কোথাও যখন অস্তিত্ব থাকে না কোনো আলোর, তখন কলবে জিকির নিয়ে অন্ধকারের সঙ্গে আরেক অন্ধকারের ছায়া হয়ে তিসিখালি মাজারের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে বেড়ায় আবদুর রহিম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমল করে গেলে একদিন তাবিজের সন্ধান পাবেই। সেই তাবিজের গুণেই চলনবিলবাসী মানুষ রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থেকে আরোগ্য পাবে। তাবিজের সন্ধ্যান না পেলেও যেখানে মানুষ বিপদে পড়ে, সেখানেই ছুটে যায় আব্দুর রহিম। কাসাসোল আম্বিয়া পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে, নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে সে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিদান বের করে। সম্পূর্ণ ধর্মপ্রাণ হয়েও একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আব্দুর রহিম। কদম অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মপ্রাণ নয়। সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে অবাক করবে। অচেনা বোবা মেয়ের বিপদে যেমন, তেমনি গৌরাঙ্গের বিপদেও সে কদমের সাথে ছুটে যায়, গৌরাঙ্গ ও তার পরিবারের জন্য তার প্রাণ কাঁদে, রাত জেগে নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে আরোগ্যের দোয়া খুঁজে। ধর্ম নয় তার কাছে মানুষই বড় হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহিম শুধু ধর্মপ্রাণ নয়, বিপ্লবীও। ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে গৌরাঙ্গের জমি দখল নেয়ার জন্য যখন একসময়ের বিপ্লবী আলাউদ্দিন মাস্টার ভীতি নিয়ে রাজি হন না, ঠিক তখনই সকলকে বিস্মিত করে কদমের সাথে আব্দুর রহিমও বিপ্লবীদের সাথে মত দেয় এবং জমি দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আব্দুর রহিম অসীম সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। চলনবিলে বঙ্গভাইর আগমন ঘটে। তাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয় মন্ত্রী, থানা-পুলিশ। তার বাহিনী এলাকাজুড়ে চালায় তাণ্ডবলীলা—একের পর এক হত্যা। কথা বলার সাহস তো দূরের কথা, দারুণ ভয়ে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিনযাপন করে। তবু একদিন যাবতীয় ভয় দূরে ঠেলে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বঙ্গভাইয়ের সামনে দাঁড়ায় আব্দুর রহিম, জীবনে প্রথম কারও প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে, ‘এই মসজিদ আমার। দিনরাত খাটাখাটনি করি আমি এই মসজিদের জন্যে টাকা তুলি। মানুষের কাছে হাত পাতি। এই মসজিদ আমার। তুমি একটা শয়তান, নমরুদ-ফেরাউন। জোর কইর্যা দখল নিছো এই মসজিদের। তুমি চইল্যা যাও এক্ষুনি।’ আবদুর রহিম নির্যাতিত হয়। আর বাস্তবে বঙ্গভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে তা আমাদের জানা হলেও উপন্যাসের বঙ্গ ভাইয়ের পরিণতি কী হয় তা আমাদের জানা হয় না।
উপন্যাসটি পাঠ করলে আবদুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে ভাবাবে বারবার। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যে মসজিদের আজান দেয়, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলে, একটি তাবিজই যার ধ্যান-জ্ঞান, যে কলবে জিকির তোলে আর নেয়ামুল কোরআন থেকে আরোগ্য খোঁজে, সে মানুষের মধ্যে এত মানবতাবোধ, এত অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী চেতনা কোথা থেকে আসে!
সোলেমান-জব্বারের লাঠিয়াল কর্তৃক গৌরাঙ্গের খুন আর কদম আহত হওয়ার পর আব্দুর রহিম তিন দিন লুকিয়ে থাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিদায় নেয়, মনে মনে বলে, আমি পালাচ্ছি না কদম! আমি পালাচ্ছি না গোরাদা! আমি তাবিজের খোঁজে বের হচ্ছি। তাবিজ না নিয়ে আমি আর ঘরে ফিরব না।’ তখন মনে হয়, দরিদ্র মানুষের মুক্তি আরও বহু দূর, হাঁটতে হবে এখনো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’-এ একটি তাবিজ যেন হয়ে ওঠে মুক্তির প্রতীক।
হাঁটতে থাকা মানুষের গান। জাকির তালুকদার। প্রচ্ছদ: রেহনুমা প্রসূন। প্রকাশক: আদর্শ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০। মূল্য: ৩৪০ টাকা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়।
‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আখ্যান তুলে ধরেছেন। দিনের পর দিন এই মানুষগুলো শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হতে জর্জর। ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারপাশে থেকে তাদের ভূমি দখল করে নেয়; আছে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী আর বিপ্লবী দলের নাম ভাঙিয়ে চরমপন্থীদের উৎপাত—খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি-চাঁদাবাজি; আবার ইসলামের নাম করে বঙ্গ ভাইয়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন-হত্যা; আছে পুলিশের উৎপীড়ন। বিলবাসী মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না—কিছুই করার থাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে এসব অঞ্চল। তাই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বছরের একবার ধান ফলে। বছরে এই একবারই তাদের উপার্জন। সেই ধানই তাদের বছরজুড়ে ভাত দেয়, ধানের টাকায় পরিবারের সব জিনিস কেনা হয়, যাবতীয় খরচ চলে এই ধানের টাকায়।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে হয় অর্পিত সম্পত্তি আইন। ‘পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৬৫-এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যেসব নাগরিক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ওই তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত ভারতে গমন করেছিলেন, তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং উহার ব্যবস্থাপনা উপ-তত্ত্বাবধায়কের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়।’
এই কালো আইনে সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল তৈরি করে আদালতের মামলা-মোকদ্দমা রুজু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় এ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, যাদের সম্পত্তি এই কালো আইনের আওতায়ও আসে না। লেখক উপন্যাসে গৌরাঙ্গ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়টিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। গৌরাঙ্গ সৎ কৃষক। হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই তিনি প্রিয়। যদিও গৌরাঙ্গর জমি ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ নামক কালো আইনের আওতায় আসে না, তবুও এই আইনের আওতায় ফেলে ক্ষমতা ও কৌশলে সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বার তার পৈতৃক জমি দখল করে নেয়। এই জমিই গৌরাঙ্গের পরিবারের অন্ন জোগায়, এই জমিই তার সব। সম্পত্তি হারিয়ে গৌরাঙ্গ একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। অফিসে অফিসে ধরনা দিয়েও যখন কোনো অগ্রগতি হয় না, একদম ভেঙে পড়েন তিনি। খাবার জোটে না পরিবারের। মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে পাগলাগারদে কাটায় কিছুদিন। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু গৌরাঙ্গকে আর চেনা যায় না। শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর আর শক্তি থাকে না তার। বারুহাসের মেলা থেকে গৌরাঙ্গের অসহায় মেয়েদের খাবার, চুড়ি-ফিতা আর খেলনা কিনে দেয় কদম আর আবদুর রহিম। মেয়েরা বাবাকে দেখায় খেলনাগুলো। গৌরাঙ্গের কেবল চোখ পড়ে খেলনার লাঙলটির ওপর। লেখকের ভাষায়, ‘হাতে নেয় ছোট্ট লাঙলটা। হাতে তুলে নিয়ে একেবারে চোখের কাছে ধরে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। হাত দুটো তার এখন আরও বেশি বেশি কাঁপছে অজানা উত্তেজনায়। হঠাৎ সে বারান্দা ছেড়ে উঠোনের মাটিতে নেমে আসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। হাতের খেলনা লাঙলটা মাটিতে ছোঁয়ায় তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে মাটির ওপর দিয়ে খেলনা লাঙলটি ঠেলতে থাকে অবিকল জমিচষার ভঙ্গিতে। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে ঘুরতে থাকে লাঙলের সঙ্গে। মুখে শব্দ—হেট্! হেট্!’
এই ‘হেট্! হেট!’ শব্দ আমাদের মস্তিস্কজুড়ে ঘুরপাক খায়, আর লাঙলের ফলার মতো জ্বলজ্বল করে দেখিয়ে দেয়—দেখো বাংলার কৃষক দেখো, যে তোমার খাদ্য জোগায়, আমৃত্যু যে লাঙল-জোয়াল, মাঠ আর ফসলের স্বপ্ন দেখে। দেখো প্রকৃত স্বদেশ দেখো।
গাঁয়ের ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে থাকে কদম আর আবদুর রহিম। আবদুর রহিম দেখে দেখে পড়তে পারলেও কদম একদমই লেখাপড়া জানে না। তবু গাঁয়ের এই নিম্নস্তরের মানুষের অন্তরে রয়েছে মানবিকতা বোধ। যেমনটি রয়েছে তিসিখালি মাজারের খাদেম ও তার পরিবারের। অপরিচিত, অসহায় বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজতবাস করেও খাদেম যখন কদম আর আবদুর রহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়্যাডারে তোরা সামলায়া রাখিস। বেচারি অনেক কষ্ট পাইছে। আর য্যান সর্বহারা কিংবা পুলিশের হাতে না পড়ে। তাহলে যে কী ঘটাব মিয়্যাডার কপালে তা অল্লামালিকই জানে।’ তখন মানবতার এক উজ্জ্বল মূর্ত প্রতীক দেখতে পাই। পুলিশ খাদেম সাহেবকে মারধর করেছে কি না, কদম জানতে চাইলে খাদেম যখন বলেন, ‘নমরুদের জেলখানায় মুছা নবীর ওপর যত অত্যাচার হইছিল, আমার ওপর তত অত্যাচার হয়নি। মুছা নবীর যত কষ্ট হইছিল, ততটা কষ্ট আমার হয়নি।’ কদম-রহিমের সাথে তখন পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে।
কদম আর খাদেম সাহেবের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা কিশোরীকে ঘিরে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়, কমরেড বিজয় ও কমরেড তপন কর্তৃক এন্তাজ ও তার চার প্রধান সহযোগীর হত্যার মাধ্যমে সে রহস্যের জট খুলে।
লেখক এ উপন্যাসে একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ধনী, গরিবের বৈষম্য থাকবে না; যেখানে কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও অন্যের দখলে থাকবে না। উপন্যাসে বিপ্লবী দলের চোখে সেই স্বপ্ন ফুটে ওঠে— ‘আমাদের পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক পথে সমাজতন্ত্র এ দেশে আসবেই।... মিশে যেতে হবে কৃষকদের সঙ্গে, খেতমজুরদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের নিয়েই গড়ে তুলতে হবে কৃষক ও খেতমজুরদের খণ্ড খণ্ড বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী। এই বাহিনী শ্রেণিশত্রু খতমের পাশাপাশি খাসজমি দখল, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনসহ সামাজিক সুশাসনের মডেল স্থাপন করবে একেকটি মুক্তাঞ্চলে।’
এই বিপ্লবী দলের নের্তৃত্বেই গৌরাঙ্গ তার হারানো জমি ফিরে পায়। হারানো জমি পেয়ে গৌরাঙ্গ যেন সুস্থ হয়ে যায়। সে আবার লাঙল ধরে, চারা লাগায়, যত্নে যত্নে সেই চারা বড় হয়, ধানে শিষ আসে, তারপর পাকাধানে মাঠ সোনালি হয়ে যায় একদিন। মনে হয় সত্যিকারের বিপ্লব এসেছে, অসহায় মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু না! একটা বল্লম পেছন থেকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। উবু হয়ে বসে ছিল গৌরাঙ্গ। এবার প্রণামের ভঙ্গিতে কপালটা ঠেকে যায় ধানের গোড়ার মাটিতে। কদমের মাথাটাও দু-ফাঁক হয়ে যায় ভূমিদস্যু সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বারের ভাড়াটে লাঠিয়ালের নিখুঁত লাঠির ঘায়ে।
তখন বিপ্লবের মশালটা নিবু নিবু হয়ে আসে। আর যখন আবদুর রহিম দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বললেও এক পা-ও নড়ে না পুলিশ, তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার থাকতে নেই। তখন বাতাসে বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় গৌরাঙ্গের পাগলকালীন প্রলাপ, ‘ঠাকুরেরে দীক্ষা দিয়্যা কিছু হয় না। কাম হয় ডিসিরি দিয়্যা, এমপিরে দিয়্যা। ঠাকুর শালার কোনো ক্ষমতাই নাই।’
কিংবা ধর্মপ্রাণ আবদুর রহিমের চিন্তাটাই তখন জ্বলে ওঠে, ‘আল্লা নাকি বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেয় বান্দার।...আচ্ছা সব পরীক্ষা কি খালি গরিব মানুষদেরই দিতে হয়!’
উপন্যাসজুড়ে আব্দুর রহিম একটি ব্যতিক্রম চরিত্র। সে চলনবিলের কাউয়াটিকরি গ্রামের ধর্মপ্রাণ একজন নবীন যুবক। চার শ বছর ধরে জনশ্রুত লোককাহিনিকে ভিত্তি ধরে একটি কুদরতি তাবিজ খুঁজে বেড়ায় সে। তার ধারনা, এই চলনবিলের কোথাও না কোথাও লুকানো আছে সেই তাবিজটি। মোটা কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে চোখ মেললে যেমন অন্ধকার, সে রকম অন্ধকারে, দু-একটা হারিকেনের আলো ছাড়া কোথাও যখন অস্তিত্ব থাকে না কোনো আলোর, তখন কলবে জিকির নিয়ে অন্ধকারের সঙ্গে আরেক অন্ধকারের ছায়া হয়ে তিসিখালি মাজারের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে বেড়ায় আবদুর রহিম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমল করে গেলে একদিন তাবিজের সন্ধান পাবেই। সেই তাবিজের গুণেই চলনবিলবাসী মানুষ রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থেকে আরোগ্য পাবে। তাবিজের সন্ধ্যান না পেলেও যেখানে মানুষ বিপদে পড়ে, সেখানেই ছুটে যায় আব্দুর রহিম। কাসাসোল আম্বিয়া পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে, নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে সে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিদান বের করে। সম্পূর্ণ ধর্মপ্রাণ হয়েও একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আব্দুর রহিম। কদম অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মপ্রাণ নয়। সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে অবাক করবে। অচেনা বোবা মেয়ের বিপদে যেমন, তেমনি গৌরাঙ্গের বিপদেও সে কদমের সাথে ছুটে যায়, গৌরাঙ্গ ও তার পরিবারের জন্য তার প্রাণ কাঁদে, রাত জেগে নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে আরোগ্যের দোয়া খুঁজে। ধর্ম নয় তার কাছে মানুষই বড় হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহিম শুধু ধর্মপ্রাণ নয়, বিপ্লবীও। ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে গৌরাঙ্গের জমি দখল নেয়ার জন্য যখন একসময়ের বিপ্লবী আলাউদ্দিন মাস্টার ভীতি নিয়ে রাজি হন না, ঠিক তখনই সকলকে বিস্মিত করে কদমের সাথে আব্দুর রহিমও বিপ্লবীদের সাথে মত দেয় এবং জমি দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আব্দুর রহিম অসীম সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। চলনবিলে বঙ্গভাইর আগমন ঘটে। তাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয় মন্ত্রী, থানা-পুলিশ। তার বাহিনী এলাকাজুড়ে চালায় তাণ্ডবলীলা—একের পর এক হত্যা। কথা বলার সাহস তো দূরের কথা, দারুণ ভয়ে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিনযাপন করে। তবু একদিন যাবতীয় ভয় দূরে ঠেলে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বঙ্গভাইয়ের সামনে দাঁড়ায় আব্দুর রহিম, জীবনে প্রথম কারও প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে, ‘এই মসজিদ আমার। দিনরাত খাটাখাটনি করি আমি এই মসজিদের জন্যে টাকা তুলি। মানুষের কাছে হাত পাতি। এই মসজিদ আমার। তুমি একটা শয়তান, নমরুদ-ফেরাউন। জোর কইর্যা দখল নিছো এই মসজিদের। তুমি চইল্যা যাও এক্ষুনি।’ আবদুর রহিম নির্যাতিত হয়। আর বাস্তবে বঙ্গভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে তা আমাদের জানা হলেও উপন্যাসের বঙ্গ ভাইয়ের পরিণতি কী হয় তা আমাদের জানা হয় না।
উপন্যাসটি পাঠ করলে আবদুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে ভাবাবে বারবার। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যে মসজিদের আজান দেয়, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলে, একটি তাবিজই যার ধ্যান-জ্ঞান, যে কলবে জিকির তোলে আর নেয়ামুল কোরআন থেকে আরোগ্য খোঁজে, সে মানুষের মধ্যে এত মানবতাবোধ, এত অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী চেতনা কোথা থেকে আসে!
সোলেমান-জব্বারের লাঠিয়াল কর্তৃক গৌরাঙ্গের খুন আর কদম আহত হওয়ার পর আব্দুর রহিম তিন দিন লুকিয়ে থাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিদায় নেয়, মনে মনে বলে, আমি পালাচ্ছি না কদম! আমি পালাচ্ছি না গোরাদা! আমি তাবিজের খোঁজে বের হচ্ছি। তাবিজ না নিয়ে আমি আর ঘরে ফিরব না।’ তখন মনে হয়, দরিদ্র মানুষের মুক্তি আরও বহু দূর, হাঁটতে হবে এখনো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’-এ একটি তাবিজ যেন হয়ে ওঠে মুক্তির প্রতীক।
হাঁটতে থাকা মানুষের গান। জাকির তালুকদার। প্রচ্ছদ: রেহনুমা প্রসূন। প্রকাশক: আদর্শ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০। মূল্য: ৩৪০ টাকা।
হাবিবুল্লাহ রাসেল

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়।
‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আখ্যান তুলে ধরেছেন। দিনের পর দিন এই মানুষগুলো শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হতে জর্জর। ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারপাশে থেকে তাদের ভূমি দখল করে নেয়; আছে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী আর বিপ্লবী দলের নাম ভাঙিয়ে চরমপন্থীদের উৎপাত—খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি-চাঁদাবাজি; আবার ইসলামের নাম করে বঙ্গ ভাইয়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন-হত্যা; আছে পুলিশের উৎপীড়ন। বিলবাসী মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না—কিছুই করার থাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে এসব অঞ্চল। তাই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বছরের একবার ধান ফলে। বছরে এই একবারই তাদের উপার্জন। সেই ধানই তাদের বছরজুড়ে ভাত দেয়, ধানের টাকায় পরিবারের সব জিনিস কেনা হয়, যাবতীয় খরচ চলে এই ধানের টাকায়।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে হয় অর্পিত সম্পত্তি আইন। ‘পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৬৫-এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যেসব নাগরিক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ওই তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত ভারতে গমন করেছিলেন, তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং উহার ব্যবস্থাপনা উপ-তত্ত্বাবধায়কের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়।’
এই কালো আইনে সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল তৈরি করে আদালতের মামলা-মোকদ্দমা রুজু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় এ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, যাদের সম্পত্তি এই কালো আইনের আওতায়ও আসে না। লেখক উপন্যাসে গৌরাঙ্গ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়টিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। গৌরাঙ্গ সৎ কৃষক। হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই তিনি প্রিয়। যদিও গৌরাঙ্গর জমি ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ নামক কালো আইনের আওতায় আসে না, তবুও এই আইনের আওতায় ফেলে ক্ষমতা ও কৌশলে সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বার তার পৈতৃক জমি দখল করে নেয়। এই জমিই গৌরাঙ্গের পরিবারের অন্ন জোগায়, এই জমিই তার সব। সম্পত্তি হারিয়ে গৌরাঙ্গ একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। অফিসে অফিসে ধরনা দিয়েও যখন কোনো অগ্রগতি হয় না, একদম ভেঙে পড়েন তিনি। খাবার জোটে না পরিবারের। মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে পাগলাগারদে কাটায় কিছুদিন। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু গৌরাঙ্গকে আর চেনা যায় না। শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর আর শক্তি থাকে না তার। বারুহাসের মেলা থেকে গৌরাঙ্গের অসহায় মেয়েদের খাবার, চুড়ি-ফিতা আর খেলনা কিনে দেয় কদম আর আবদুর রহিম। মেয়েরা বাবাকে দেখায় খেলনাগুলো। গৌরাঙ্গের কেবল চোখ পড়ে খেলনার লাঙলটির ওপর। লেখকের ভাষায়, ‘হাতে নেয় ছোট্ট লাঙলটা। হাতে তুলে নিয়ে একেবারে চোখের কাছে ধরে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। হাত দুটো তার এখন আরও বেশি বেশি কাঁপছে অজানা উত্তেজনায়। হঠাৎ সে বারান্দা ছেড়ে উঠোনের মাটিতে নেমে আসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। হাতের খেলনা লাঙলটা মাটিতে ছোঁয়ায় তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে মাটির ওপর দিয়ে খেলনা লাঙলটি ঠেলতে থাকে অবিকল জমিচষার ভঙ্গিতে। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে ঘুরতে থাকে লাঙলের সঙ্গে। মুখে শব্দ—হেট্! হেট্!’
এই ‘হেট্! হেট!’ শব্দ আমাদের মস্তিস্কজুড়ে ঘুরপাক খায়, আর লাঙলের ফলার মতো জ্বলজ্বল করে দেখিয়ে দেয়—দেখো বাংলার কৃষক দেখো, যে তোমার খাদ্য জোগায়, আমৃত্যু যে লাঙল-জোয়াল, মাঠ আর ফসলের স্বপ্ন দেখে। দেখো প্রকৃত স্বদেশ দেখো।
গাঁয়ের ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে থাকে কদম আর আবদুর রহিম। আবদুর রহিম দেখে দেখে পড়তে পারলেও কদম একদমই লেখাপড়া জানে না। তবু গাঁয়ের এই নিম্নস্তরের মানুষের অন্তরে রয়েছে মানবিকতা বোধ। যেমনটি রয়েছে তিসিখালি মাজারের খাদেম ও তার পরিবারের। অপরিচিত, অসহায় বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজতবাস করেও খাদেম যখন কদম আর আবদুর রহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়্যাডারে তোরা সামলায়া রাখিস। বেচারি অনেক কষ্ট পাইছে। আর য্যান সর্বহারা কিংবা পুলিশের হাতে না পড়ে। তাহলে যে কী ঘটাব মিয়্যাডার কপালে তা অল্লামালিকই জানে।’ তখন মানবতার এক উজ্জ্বল মূর্ত প্রতীক দেখতে পাই। পুলিশ খাদেম সাহেবকে মারধর করেছে কি না, কদম জানতে চাইলে খাদেম যখন বলেন, ‘নমরুদের জেলখানায় মুছা নবীর ওপর যত অত্যাচার হইছিল, আমার ওপর তত অত্যাচার হয়নি। মুছা নবীর যত কষ্ট হইছিল, ততটা কষ্ট আমার হয়নি।’ কদম-রহিমের সাথে তখন পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে।
কদম আর খাদেম সাহেবের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা কিশোরীকে ঘিরে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়, কমরেড বিজয় ও কমরেড তপন কর্তৃক এন্তাজ ও তার চার প্রধান সহযোগীর হত্যার মাধ্যমে সে রহস্যের জট খুলে।
লেখক এ উপন্যাসে একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ধনী, গরিবের বৈষম্য থাকবে না; যেখানে কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও অন্যের দখলে থাকবে না। উপন্যাসে বিপ্লবী দলের চোখে সেই স্বপ্ন ফুটে ওঠে— ‘আমাদের পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক পথে সমাজতন্ত্র এ দেশে আসবেই।... মিশে যেতে হবে কৃষকদের সঙ্গে, খেতমজুরদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের নিয়েই গড়ে তুলতে হবে কৃষক ও খেতমজুরদের খণ্ড খণ্ড বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী। এই বাহিনী শ্রেণিশত্রু খতমের পাশাপাশি খাসজমি দখল, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনসহ সামাজিক সুশাসনের মডেল স্থাপন করবে একেকটি মুক্তাঞ্চলে।’
এই বিপ্লবী দলের নের্তৃত্বেই গৌরাঙ্গ তার হারানো জমি ফিরে পায়। হারানো জমি পেয়ে গৌরাঙ্গ যেন সুস্থ হয়ে যায়। সে আবার লাঙল ধরে, চারা লাগায়, যত্নে যত্নে সেই চারা বড় হয়, ধানে শিষ আসে, তারপর পাকাধানে মাঠ সোনালি হয়ে যায় একদিন। মনে হয় সত্যিকারের বিপ্লব এসেছে, অসহায় মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু না! একটা বল্লম পেছন থেকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। উবু হয়ে বসে ছিল গৌরাঙ্গ। এবার প্রণামের ভঙ্গিতে কপালটা ঠেকে যায় ধানের গোড়ার মাটিতে। কদমের মাথাটাও দু-ফাঁক হয়ে যায় ভূমিদস্যু সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বারের ভাড়াটে লাঠিয়ালের নিখুঁত লাঠির ঘায়ে।
তখন বিপ্লবের মশালটা নিবু নিবু হয়ে আসে। আর যখন আবদুর রহিম দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বললেও এক পা-ও নড়ে না পুলিশ, তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার থাকতে নেই। তখন বাতাসে বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় গৌরাঙ্গের পাগলকালীন প্রলাপ, ‘ঠাকুরেরে দীক্ষা দিয়্যা কিছু হয় না। কাম হয় ডিসিরি দিয়্যা, এমপিরে দিয়্যা। ঠাকুর শালার কোনো ক্ষমতাই নাই।’
কিংবা ধর্মপ্রাণ আবদুর রহিমের চিন্তাটাই তখন জ্বলে ওঠে, ‘আল্লা নাকি বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেয় বান্দার।...আচ্ছা সব পরীক্ষা কি খালি গরিব মানুষদেরই দিতে হয়!’
উপন্যাসজুড়ে আব্দুর রহিম একটি ব্যতিক্রম চরিত্র। সে চলনবিলের কাউয়াটিকরি গ্রামের ধর্মপ্রাণ একজন নবীন যুবক। চার শ বছর ধরে জনশ্রুত লোককাহিনিকে ভিত্তি ধরে একটি কুদরতি তাবিজ খুঁজে বেড়ায় সে। তার ধারনা, এই চলনবিলের কোথাও না কোথাও লুকানো আছে সেই তাবিজটি। মোটা কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে চোখ মেললে যেমন অন্ধকার, সে রকম অন্ধকারে, দু-একটা হারিকেনের আলো ছাড়া কোথাও যখন অস্তিত্ব থাকে না কোনো আলোর, তখন কলবে জিকির নিয়ে অন্ধকারের সঙ্গে আরেক অন্ধকারের ছায়া হয়ে তিসিখালি মাজারের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে বেড়ায় আবদুর রহিম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমল করে গেলে একদিন তাবিজের সন্ধান পাবেই। সেই তাবিজের গুণেই চলনবিলবাসী মানুষ রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থেকে আরোগ্য পাবে। তাবিজের সন্ধ্যান না পেলেও যেখানে মানুষ বিপদে পড়ে, সেখানেই ছুটে যায় আব্দুর রহিম। কাসাসোল আম্বিয়া পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে, নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে সে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিদান বের করে। সম্পূর্ণ ধর্মপ্রাণ হয়েও একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আব্দুর রহিম। কদম অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মপ্রাণ নয়। সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে অবাক করবে। অচেনা বোবা মেয়ের বিপদে যেমন, তেমনি গৌরাঙ্গের বিপদেও সে কদমের সাথে ছুটে যায়, গৌরাঙ্গ ও তার পরিবারের জন্য তার প্রাণ কাঁদে, রাত জেগে নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে আরোগ্যের দোয়া খুঁজে। ধর্ম নয় তার কাছে মানুষই বড় হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহিম শুধু ধর্মপ্রাণ নয়, বিপ্লবীও। ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে গৌরাঙ্গের জমি দখল নেয়ার জন্য যখন একসময়ের বিপ্লবী আলাউদ্দিন মাস্টার ভীতি নিয়ে রাজি হন না, ঠিক তখনই সকলকে বিস্মিত করে কদমের সাথে আব্দুর রহিমও বিপ্লবীদের সাথে মত দেয় এবং জমি দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আব্দুর রহিম অসীম সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। চলনবিলে বঙ্গভাইর আগমন ঘটে। তাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয় মন্ত্রী, থানা-পুলিশ। তার বাহিনী এলাকাজুড়ে চালায় তাণ্ডবলীলা—একের পর এক হত্যা। কথা বলার সাহস তো দূরের কথা, দারুণ ভয়ে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিনযাপন করে। তবু একদিন যাবতীয় ভয় দূরে ঠেলে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বঙ্গভাইয়ের সামনে দাঁড়ায় আব্দুর রহিম, জীবনে প্রথম কারও প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে, ‘এই মসজিদ আমার। দিনরাত খাটাখাটনি করি আমি এই মসজিদের জন্যে টাকা তুলি। মানুষের কাছে হাত পাতি। এই মসজিদ আমার। তুমি একটা শয়তান, নমরুদ-ফেরাউন। জোর কইর্যা দখল নিছো এই মসজিদের। তুমি চইল্যা যাও এক্ষুনি।’ আবদুর রহিম নির্যাতিত হয়। আর বাস্তবে বঙ্গভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে তা আমাদের জানা হলেও উপন্যাসের বঙ্গ ভাইয়ের পরিণতি কী হয় তা আমাদের জানা হয় না।
উপন্যাসটি পাঠ করলে আবদুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে ভাবাবে বারবার। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যে মসজিদের আজান দেয়, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলে, একটি তাবিজই যার ধ্যান-জ্ঞান, যে কলবে জিকির তোলে আর নেয়ামুল কোরআন থেকে আরোগ্য খোঁজে, সে মানুষের মধ্যে এত মানবতাবোধ, এত অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী চেতনা কোথা থেকে আসে!
সোলেমান-জব্বারের লাঠিয়াল কর্তৃক গৌরাঙ্গের খুন আর কদম আহত হওয়ার পর আব্দুর রহিম তিন দিন লুকিয়ে থাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিদায় নেয়, মনে মনে বলে, আমি পালাচ্ছি না কদম! আমি পালাচ্ছি না গোরাদা! আমি তাবিজের খোঁজে বের হচ্ছি। তাবিজ না নিয়ে আমি আর ঘরে ফিরব না।’ তখন মনে হয়, দরিদ্র মানুষের মুক্তি আরও বহু দূর, হাঁটতে হবে এখনো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’-এ একটি তাবিজ যেন হয়ে ওঠে মুক্তির প্রতীক।
হাঁটতে থাকা মানুষের গান। জাকির তালুকদার। প্রচ্ছদ: রেহনুমা প্রসূন। প্রকাশক: আদর্শ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০। মূল্য: ৩৪০ টাকা।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়।
‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আখ্যান তুলে ধরেছেন। দিনের পর দিন এই মানুষগুলো শোষণ-বঞ্চনার শিকার হতে হতে জর্জর। ভূমিদস্যুরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চারপাশে থেকে তাদের ভূমি দখল করে নেয়; আছে সরকারি দলের ক্যাডার বাহিনী আর বিপ্লবী দলের নাম ভাঙিয়ে চরমপন্থীদের উৎপাত—খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি-চাঁদাবাজি; আবার ইসলামের নাম করে বঙ্গ ভাইয়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন-হত্যা; আছে পুলিশের উৎপীড়ন। বিলবাসী মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা থাকে না—কিছুই করার থাকে না। বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকে এসব অঞ্চল। তাই দুর্ভোগের সীমা থাকে না। বছরের একবার ধান ফলে। বছরে এই একবারই তাদের উপার্জন। সেই ধানই তাদের বছরজুড়ে ভাত দেয়, ধানের টাকায় পরিবারের সব জিনিস কেনা হয়, যাবতীয় খরচ চলে এই ধানের টাকায়।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ স্বাধীনতার পরে নাম পাল্টে হয় অর্পিত সম্পত্তি আইন। ‘পাকিস্তান প্রতিরক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৬৫-এর ১৮২ বিধি মোতাবেক তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এলাকার যেসব নাগরিক ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫ তারিখে ভারতে অবস্থানরত ছিলেন বা ওই তারিখ হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ পর্যন্ত ভারতে গমন করেছিলেন, তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তি বলে গণ্য হয় এবং উহার ব্যবস্থাপনা উপ-তত্ত্বাবধায়কের ওপর ন্যস্ত করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আইনের কিছুটা সংশোধনী আনা হয়।’
এই কালো আইনে সরকার বিভিন্ন সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি দখলে নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও ভূমিদস্যুরা জাল দলিল তৈরি করে আদালতের মামলা-মোকদ্দমা রুজু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ছত্রচ্ছায়ায় এ সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে, যাদের সম্পত্তি এই কালো আইনের আওতায়ও আসে না। লেখক উপন্যাসে গৌরাঙ্গ চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে বিষয়টিকে গভীরভাবে তুলে ধরেছেন। গৌরাঙ্গ সৎ কৃষক। হিন্দু-মুসলিম সবার কাছেই তিনি প্রিয়। যদিও গৌরাঙ্গর জমি ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ নামক কালো আইনের আওতায় আসে না, তবুও এই আইনের আওতায় ফেলে ক্ষমতা ও কৌশলে সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বার তার পৈতৃক জমি দখল করে নেয়। এই জমিই গৌরাঙ্গের পরিবারের অন্ন জোগায়, এই জমিই তার সব। সম্পত্তি হারিয়ে গৌরাঙ্গ একদম নিঃস্ব হয়ে যায়। অফিসে অফিসে ধরনা দিয়েও যখন কোনো অগ্রগতি হয় না, একদম ভেঙে পড়েন তিনি। খাবার জোটে না পরিবারের। মস্তিস্ক বিকৃত হয়ে পাগলাগারদে কাটায় কিছুদিন। কিছুটা উন্নতি হলে তাকে বাড়ি আনা হয়। কিন্তু গৌরাঙ্গকে আর চেনা যায় না। শুকিয়ে হাড্ডিসার হয়ে যায়। উঠে দাঁড়ানোর আর শক্তি থাকে না তার। বারুহাসের মেলা থেকে গৌরাঙ্গের অসহায় মেয়েদের খাবার, চুড়ি-ফিতা আর খেলনা কিনে দেয় কদম আর আবদুর রহিম। মেয়েরা বাবাকে দেখায় খেলনাগুলো। গৌরাঙ্গের কেবল চোখ পড়ে খেলনার লাঙলটির ওপর। লেখকের ভাষায়, ‘হাতে নেয় ছোট্ট লাঙলটা। হাতে তুলে নিয়ে একেবারে চোখের কাছে ধরে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে। হাত দুটো তার এখন আরও বেশি বেশি কাঁপছে অজানা উত্তেজনায়। হঠাৎ সে বারান্দা ছেড়ে উঠোনের মাটিতে নেমে আসে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। হাতের খেলনা লাঙলটা মাটিতে ছোঁয়ায় তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে সে মাটির ওপর দিয়ে খেলনা লাঙলটি ঠেলতে থাকে অবিকল জমিচষার ভঙ্গিতে। ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে ঘুরতে থাকে লাঙলের সঙ্গে। মুখে শব্দ—হেট্! হেট্!’
এই ‘হেট্! হেট!’ শব্দ আমাদের মস্তিস্কজুড়ে ঘুরপাক খায়, আর লাঙলের ফলার মতো জ্বলজ্বল করে দেখিয়ে দেয়—দেখো বাংলার কৃষক দেখো, যে তোমার খাদ্য জোগায়, আমৃত্যু যে লাঙল-জোয়াল, মাঠ আর ফসলের স্বপ্ন দেখে। দেখো প্রকৃত স্বদেশ দেখো।
গাঁয়ের ভালো-মন্দ সবকিছুর সাথেই জড়িয়ে থাকে কদম আর আবদুর রহিম। আবদুর রহিম দেখে দেখে পড়তে পারলেও কদম একদমই লেখাপড়া জানে না। তবু গাঁয়ের এই নিম্নস্তরের মানুষের অন্তরে রয়েছে মানবিকতা বোধ। যেমনটি রয়েছে তিসিখালি মাজারের খাদেম ও তার পরিবারের। অপরিচিত, অসহায় বোবা মেয়েটিকে আশ্রয় দিতে গিয়ে হাজতবাস করেও খাদেম যখন কদম আর আবদুর রহিমের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়্যাডারে তোরা সামলায়া রাখিস। বেচারি অনেক কষ্ট পাইছে। আর য্যান সর্বহারা কিংবা পুলিশের হাতে না পড়ে। তাহলে যে কী ঘটাব মিয়্যাডার কপালে তা অল্লামালিকই জানে।’ তখন মানবতার এক উজ্জ্বল মূর্ত প্রতীক দেখতে পাই। পুলিশ খাদেম সাহেবকে মারধর করেছে কি না, কদম জানতে চাইলে খাদেম যখন বলেন, ‘নমরুদের জেলখানায় মুছা নবীর ওপর যত অত্যাচার হইছিল, আমার ওপর তত অত্যাচার হয়নি। মুছা নবীর যত কষ্ট হইছিল, ততটা কষ্ট আমার হয়নি।’ কদম-রহিমের সাথে তখন পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে।
কদম আর খাদেম সাহেবের পানিতে কুড়িয়ে পাওয়া বোবা কিশোরীকে ঘিরে যে রহস্যের সৃষ্টি হয়, কমরেড বিজয় ও কমরেড তপন কর্তৃক এন্তাজ ও তার চার প্রধান সহযোগীর হত্যার মাধ্যমে সে রহস্যের জট খুলে।
লেখক এ উপন্যাসে একটি শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্ন দেখেন। যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ধনী, গরিবের বৈষম্য থাকবে না; যেখানে কৃষকের এক ইঞ্চি জমিও অন্যের দখলে থাকবে না। উপন্যাসে বিপ্লবী দলের চোখে সেই স্বপ্ন ফুটে ওঠে— ‘আমাদের পার্টির চূড়ান্ত লক্ষ্য মার্ক্সবাদ, লেলিনবাদ ও মাও জে দংয়ের চিন্তাধারার ভিত্তিতে সর্বহারা শ্রমিক কৃষকের নের্তৃত্বে বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করা। আমরা চাই বা না চাই, ইতিহাসের দ্বান্দ্বিক পথে সমাজতন্ত্র এ দেশে আসবেই।... মিশে যেতে হবে কৃষকদের সঙ্গে, খেতমজুরদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের নিয়েই গড়ে তুলতে হবে কৃষক ও খেতমজুরদের খণ্ড খণ্ড বিপ্লবী গেরিলা বাহিনী। এই বাহিনী শ্রেণিশত্রু খতমের পাশাপাশি খাসজমি দখল, ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনসহ সামাজিক সুশাসনের মডেল স্থাপন করবে একেকটি মুক্তাঞ্চলে।’
এই বিপ্লবী দলের নের্তৃত্বেই গৌরাঙ্গ তার হারানো জমি ফিরে পায়। হারানো জমি পেয়ে গৌরাঙ্গ যেন সুস্থ হয়ে যায়। সে আবার লাঙল ধরে, চারা লাগায়, যত্নে যত্নে সেই চারা বড় হয়, ধানে শিষ আসে, তারপর পাকাধানে মাঠ সোনালি হয়ে যায় একদিন। মনে হয় সত্যিকারের বিপ্লব এসেছে, অসহায় মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছে। কিন্তু না! একটা বল্লম পেছন থেকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়। উবু হয়ে বসে ছিল গৌরাঙ্গ। এবার প্রণামের ভঙ্গিতে কপালটা ঠেকে যায় ধানের গোড়ার মাটিতে। কদমের মাথাটাও দু-ফাঁক হয়ে যায় ভূমিদস্যু সোলেমান আলি আর আবদুল জব্বারের ভাড়াটে লাঠিয়ালের নিখুঁত লাঠির ঘায়ে।
তখন বিপ্লবের মশালটা নিবু নিবু হয়ে আসে। আর যখন আবদুর রহিম দৌড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে পুলিশের কাছে বললেও এক পা-ও নড়ে না পুলিশ, তখন বোঝা যায় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার থাকতে নেই। তখন বাতাসে বাতাসে যেন ভেসে বেড়ায় গৌরাঙ্গের পাগলকালীন প্রলাপ, ‘ঠাকুরেরে দীক্ষা দিয়্যা কিছু হয় না। কাম হয় ডিসিরি দিয়্যা, এমপিরে দিয়্যা। ঠাকুর শালার কোনো ক্ষমতাই নাই।’
কিংবা ধর্মপ্রাণ আবদুর রহিমের চিন্তাটাই তখন জ্বলে ওঠে, ‘আল্লা নাকি বিপদে ফেলে পরীক্ষা নেয় বান্দার।...আচ্ছা সব পরীক্ষা কি খালি গরিব মানুষদেরই দিতে হয়!’
উপন্যাসজুড়ে আব্দুর রহিম একটি ব্যতিক্রম চরিত্র। সে চলনবিলের কাউয়াটিকরি গ্রামের ধর্মপ্রাণ একজন নবীন যুবক। চার শ বছর ধরে জনশ্রুত লোককাহিনিকে ভিত্তি ধরে একটি কুদরতি তাবিজ খুঁজে বেড়ায় সে। তার ধারনা, এই চলনবিলের কোথাও না কোথাও লুকানো আছে সেই তাবিজটি। মোটা কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে চোখ মেললে যেমন অন্ধকার, সে রকম অন্ধকারে, দু-একটা হারিকেনের আলো ছাড়া কোথাও যখন অস্তিত্ব থাকে না কোনো আলোর, তখন কলবে জিকির নিয়ে অন্ধকারের সঙ্গে আরেক অন্ধকারের ছায়া হয়ে তিসিখালি মাজারের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে বেড়ায় আবদুর রহিম। তার দৃঢ় বিশ্বাস আমল করে গেলে একদিন তাবিজের সন্ধান পাবেই। সেই তাবিজের গুণেই চলনবিলবাসী মানুষ রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থেকে আরোগ্য পাবে। তাবিজের সন্ধ্যান না পেলেও যেখানে মানুষ বিপদে পড়ে, সেখানেই ছুটে যায় আব্দুর রহিম। কাসাসোল আম্বিয়া পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে, নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে সে বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য নিদান বের করে। সম্পূর্ণ ধর্মপ্রাণ হয়েও একটি অসাম্প্রদায়িক চরিত্র আব্দুর রহিম। কদম অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মপ্রাণ নয়। সে ক্ষেত্রে আব্দুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে অবাক করবে। অচেনা বোবা মেয়ের বিপদে যেমন, তেমনি গৌরাঙ্গের বিপদেও সে কদমের সাথে ছুটে যায়, গৌরাঙ্গ ও তার পরিবারের জন্য তার প্রাণ কাঁদে, রাত জেগে নেয়ামুল কোরআন ঘেঁটে আরোগ্যের দোয়া খুঁজে। ধর্ম নয় তার কাছে মানুষই বড় হয়ে ওঠে।
আব্দুর রহিম শুধু ধর্মপ্রাণ নয়, বিপ্লবীও। ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে গৌরাঙ্গের জমি দখল নেয়ার জন্য যখন একসময়ের বিপ্লবী আলাউদ্দিন মাস্টার ভীতি নিয়ে রাজি হন না, ঠিক তখনই সকলকে বিস্মিত করে কদমের সাথে আব্দুর রহিমও বিপ্লবীদের সাথে মত দেয় এবং জমি দখলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আব্দুর রহিম অসীম সাহসিকতার মূর্ত প্রতীক। চলনবিলে বঙ্গভাইর আগমন ঘটে। তাকে প্রত্যক্ষ সহায়তা দেয় মন্ত্রী, থানা-পুলিশ। তার বাহিনী এলাকাজুড়ে চালায় তাণ্ডবলীলা—একের পর এক হত্যা। কথা বলার সাহস তো দূরের কথা, দারুণ ভয়ে মানুষ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে দিনযাপন করে। তবু একদিন যাবতীয় ভয় দূরে ঠেলে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বঙ্গভাইয়ের সামনে দাঁড়ায় আব্দুর রহিম, জীবনে প্রথম কারও প্রতি ক্রোধান্বিত হয়ে বলে, ‘এই মসজিদ আমার। দিনরাত খাটাখাটনি করি আমি এই মসজিদের জন্যে টাকা তুলি। মানুষের কাছে হাত পাতি। এই মসজিদ আমার। তুমি একটা শয়তান, নমরুদ-ফেরাউন। জোর কইর্যা দখল নিছো এই মসজিদের। তুমি চইল্যা যাও এক্ষুনি।’ আবদুর রহিম নির্যাতিত হয়। আর বাস্তবে বঙ্গভাইয়ের পরিণতি কী হয়েছে তা আমাদের জানা হলেও উপন্যাসের বঙ্গ ভাইয়ের পরিণতি কী হয় তা আমাদের জানা হয় না।
উপন্যাসটি পাঠ করলে আবদুর রহিম চরিত্রটি পাঠককে ভাবাবে বারবার। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ, যে মসজিদের আজান দেয়, ঘুরে ঘুরে চাঁদা তোলে, একটি তাবিজই যার ধ্যান-জ্ঞান, যে কলবে জিকির তোলে আর নেয়ামুল কোরআন থেকে আরোগ্য খোঁজে, সে মানুষের মধ্যে এত মানবতাবোধ, এত অসাম্প্রদায়িক ও বিপ্লবী চেতনা কোথা থেকে আসে!
সোলেমান-জব্বারের লাঠিয়াল কর্তৃক গৌরাঙ্গের খুন আর কদম আহত হওয়ার পর আব্দুর রহিম তিন দিন লুকিয়ে থাকে। তারপর বাড়ি থেকে বিদায় নেয়, মনে মনে বলে, আমি পালাচ্ছি না কদম! আমি পালাচ্ছি না গোরাদা! আমি তাবিজের খোঁজে বের হচ্ছি। তাবিজ না নিয়ে আমি আর ঘরে ফিরব না।’ তখন মনে হয়, দরিদ্র মানুষের মুক্তি আরও বহু দূর, হাঁটতে হবে এখনো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’-এ একটি তাবিজ যেন হয়ে ওঠে মুক্তির প্রতীক।
হাঁটতে থাকা মানুষের গান। জাকির তালুকদার। প্রচ্ছদ: রেহনুমা প্রসূন। প্রকাশক: আদর্শ। প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০২০। মূল্য: ৩৪০ টাকা।

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫তৌহিদুল হক

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

রক্ত লাল
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে
গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়
ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের
জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে
রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে
প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা
উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।
কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত
শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।
এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়
দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব
মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।
এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ
ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার
অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে
ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে
বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।
যত দেখি
যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে
জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা
শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।
যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।
হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।
যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।
ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত
করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!
সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।
জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ
আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।
তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে
অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই
কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার
প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।
এ যেন কেমন
গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে
চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে
একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির
মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে
এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ
কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা
আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।
সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে
নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার
অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।
জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?
চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার
যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।
চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?
যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!
চলে আসুন সবজি বাজারে
মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু
যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার
উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে
হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।
প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো
পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?
হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে
যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!
চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা
ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।
যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।
আহা! দেখার কেউ নেই!
এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।
কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ
কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?
কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।
চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।
ইতিহাস
আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই
নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব
ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।
আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---
আমি নই কারও!
সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম
ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে
অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ
ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু
এক মুখচ্ছবি।
আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে
হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার
কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।
কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।
দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!
আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না
হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে
ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে
সবকিছুর-ই সময় থাকে---
এরপর---ইতিহাস!

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের
০৭ আগস্ট ২০২২
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’
‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’
হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,
‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।
হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।
তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’
ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’
হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের
০৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।
হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।
নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের
০৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল।
২০ অক্টোবর ২০২৫আজকের পত্রিকা ডেস্ক

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।
কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’
গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।
ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’
মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’
মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিল। রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার অংশবিশেষ জুড়ে এর অবস্থান। এ বিল বিভিন্ন জলখাত দ্বারা পরস্পর সংযুক্ত ছোট-বড় অনেকগুলো বিলের সমষ্টি। বর্ষাকালে তা প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিমি বিস্তৃত একটি জলরাশিতে পরিণত হয়। ‘হাঁটতে থাকা মানুষের গান’ উপন্যাসজুড়ে ঔপন্যাসিক জাকির তালুকদার চলনবিলের
০৭ আগস্ট ২০২২
আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায় ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।
১২ দিন আগে
হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’
২২ দিন আগে
প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।
০৮ নভেম্বর ২০২৫