আজকের পত্রিকা ডেস্ক

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।
এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।
২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।
নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।
এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।
একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।
ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।
আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।
একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন, ধ্বংস এবং মুছে ফেলা।’ জবাবে ইরানও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং ওয়াশিংটনের সঙ্গে চলমান পারমাণবিক আলোচনা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
গত দেড় বছর ধরে ইরান-ইসরায়েলের পরোক্ষ সংঘাতে আরব দেশগুলো উদ্বিগ্ন ছিল যে, যুদ্ধ তাদের ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু লড়াই এখন যেভাবে ছড়াচ্ছে, আর ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ও ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যেভাবে পুরো উপসাগরীয় অঞ্চল পাড়ি দিচ্ছে, তাতে আশপাশের দেশগুলো এখন ভাবছে—সংঘাত ‘কবে’ তাদের ওপর ‘কবে’ নেমে আসবে।
এখনো সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়ানোর সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে। কিন্তু ওয়াশিংটন যখন কূটনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে, তখন এই দায়িত্ব এসে পড়ছে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর। কারণ, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক—দুই পক্ষই ইসরায়েল, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কার্যকর সম্পর্ক রাখে। এখন এদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ গড়ে তুলতে এবং মধ্যস্থতা করতে এদের নেতৃত্বেই একটি আঞ্চলিক কূটনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। ওয়াশিংটনকে কিছুটা অন্তর্ভুক্ত করলেও, পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আরব দেশগুলো এবং তুরস্ক যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে এই যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের পক্ষ থেকে এসব দেশের অবকাঠামোতে হামলা হতে পারে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা।
বছরের পর বছর ধরে আরব সরকারগুলো ইরান ও ইসরায়েল—দুই দেশকেই ‘সমস্যা’ হিসেবে দেখে এসেছে। ইরানের মতাদর্শিক সম্প্রসারণবাদ, পারমাণবিক কার্যক্রম এবং ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন ও সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের শাসনকে সমর্থন—এসব কিছুই প্রতিবেশীদের জন্য ইরানকে এক ‘স্থায়ী’ হুমকিতে পরিণত করেছে।
২০১৯ সালে, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের তদন্ত অনুসারে, ইরান সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। ইরান সেই অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রকাশ্যে হামলার প্রশংসাও করে। ২০২২ সালে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের দূরপাল্লার হামলায় আবুধাবির একটি নির্মাণ ও তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, আরব বিশ্ব আবার আতঙ্কিত হয়। হুতিরা স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী হলেও তেহরানের সহায়তায় তারা আঞ্চলিক হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
গত কয়েক বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু গাজায় দীর্ঘমেয়াদি ও নির্মম যুদ্ধ, পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি দমননীতি, বসতি সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধ পরবর্তী শান্তি বা নিরাপত্তা আলোচনা থেকে ইসরায়েলের অনীহা—এসব বিষয় আরব দুনিয়ায় ইসরায়েলকেও অস্থিতিশীলতার উৎস হিসেবে ভাবতে বাধ্য করেছে।
ইসরায়েল যেভাবে হামাস ও হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব ও অবকাঠামো দুর্বল করেছে, সিরিয়ায় ইরানি উপস্থিতিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং ইরানের অভ্যন্তরেও হামলা চালিয়েছে, তা উপসাগরীয় নিরাপত্তা মহলে ‘নিঃশব্দে প্রশংসিত’ হয়েছে। কিন্তু গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযান আরব জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াকে আরও বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার, যুদ্ধপীড়িত সিরিয়াকে ঘিরে ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে।
সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হলো—ইসরায়েল-ইরানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া। আরব দেশগুলো এই আশঙ্কাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বলছেন না যে, তারা সংঘাত আরও বিস্তৃত করতে চান, কিন্তু তেহরানের শাহর রে রিফাইনারি ও পারস্য উপসাগরে অবস্থিত সাউথ পার্স রিফাইনারির ওপর ইসরায়েলের হামলা দেখে মনে হচ্ছে, তারা ইরানকে উসকানি দিচ্ছে—যাতে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনায় হামলা চালায় কিংবা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেয়। ইরান যদি এমন কিছু করে, তাহলে আরব দেশগুলো বাধ্য হবে প্রকাশ্যে ইসরায়েলের পক্ষ নিতে—এটাই ইসরায়েলের চাওয়া।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও খুব শিগগিরই ইসরায়েলের পক্ষে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা হলে ইরানের পক্ষে আরব দেশগুলোর ওপর হামলার প্রলোভন আরও বেড়ে যাবে, কারণ এসব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সামরিক ঘাঁটি রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে উপসাগরীয় দেশগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হবে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোয় কিংবা হরমুজ প্রণালির জাহাজে হামলা চালায়। এতে শুধু তেল রপ্তানিই বিপন্ন হবে না, বিনিয়োগকারীদের আস্থাও ধ্বংস হবে। কার্বননির্ভর অর্থনীতি এবং সৌদি আরবের ভিশন-২০৩০—এর মতো অর্থনৈতিক প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে। এ ছাড়া ইয়েমেনে সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে, যেখানে হুতি বিদ্রোহীরা আবার লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা শুরু করতে পারে। এমনকি সরাসরি উপসাগরীয় দেশগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারে। সাধারণ আরব জনগণ খাদ্য সরবরাহ বিঘ্ন, পানির উৎস বিষাক্ত হওয়া কিংবা সাইবার হামলার মতো দুর্যোগের শিকার হবে। এই ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে খুব ভালোভাবে সচেতন বলেই এই দেশগুলো মরিয়া হয়ে উঠেছে, যুদ্ধ যেন আর না ছড়ায়।
নিজেদের নিরাপদ রাখতে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্টভাবে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রকাশ্য নিন্দা করেছে। জর্ডান শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ওমান ও কাতার ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে জোরালো ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, তারা শঙ্কিত যে—ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার পরমাণু চুক্তির প্রচেষ্টা ধ্বংস করে দিতে চাইছে। তুরস্কও কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেছেন, সংঘাত যেন আর বাড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তাঁর দেশ ‘যা কিছু দরকার’ তা করতে প্রস্তুত।
এরদোয়ান আসলে কী করতে চাইছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তবে আঞ্চলিক দেশগুলো এখন এমন এক অবস্থানে আছে, যেখানে তারা ইরান, ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্র—এই তিন পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোর তেহরান ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আছে। তারা মার্কিন ঘাঁটির স্বাগতিক দেশ, গোপন বৈঠকের মধ্যস্থতাকারী এবং উভয় পক্ষের নিরাপত্তা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পাশাপাশি, এখন তারা ইসরায়েলের সঙ্গেও প্রকাশ্যে বা গোপনে কথা বলার পথ তৈরি করে ফেলেছে। এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের এই সব কূটনৈতিক সম্পদ কাজে লাগাতে হবে—শুধু ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে নয় বরং যুদ্ধবিরতির পথ তৈরি করতে এবং পরমাণু ও বৃহত্তর আঞ্চলিক আলোচনার ধারায় ফেরার জন্য।
এর জন্য আঞ্চলিক দেশগুলোকে একটি কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে, যা হতে পারে আরব লিগের নেতৃত্বে কিংবা একটি ছোট আকারের, উপসাগরীয় জোটের নেতৃত্বে। এই উদ্যোগে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা ও কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে ইসরায়েল ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে পরোক্ষ সংলাপের পরিবেশ গড়ে তোলা যেতে পারে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা একটি ‘কুলিং-অফ’ সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারে, যার মধ্যে দুই দেশ একে অপরের ওপর বিশেষ করে বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা বন্ধ রাখবে।
একই সঙ্গে, আরব দেশগুলো এবং তুরস্কের উচিত একটি আলাদা কূটনৈতিক চ্যানেল খোলা, যার লক্ষ্য হবে জ্বালানি ও সামুদ্রিক অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হলে যে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত বিপর্যয় ঘটতে পারে তা ঠেকানো। এমন কোনো উদ্যোগ প্রকাশ্যে আসলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বুঝতে পারবেন যে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও আলোচনাই হলো সবচেয়ে ভালো পথ এবং সেটাই মধ্যপ্রাচ্য চায়। এভাবে একটি পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তির পথ তৈরি হতে পারে।
প্রথমে এটি ভাবা কঠিন মনে হতে পারে যে, ট্রাম্প কোনো বিদেশি সরকারের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে রাজি হবেন কি না। কিন্তু আরব উপসাগরীয় দেশগুলোই ছিল হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম সফরের গন্তব্য। এই সফরের মাধ্যমে উপসাগরীয় নেতারা আবারও নিশ্চিত হন যে, ওয়াশিংটন কেবল তাদের কথা শুনছে না বরং তাদের প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের দিকেও সক্রিয়ভাবে সাড়া দিচ্ছে।
ট্রাম্প অতীতের মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ এবং গণতন্ত্র প্রচারের নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ‘শান্তি ও অংশীদারত্বের’ এক নতুন যুগের ডাক দেন। তিনি উপসাগরীয় দেশগুলোর ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেন, তারা বিনিয়োগ করছে ‘বিশৃঙ্খলায় নয়, বাণিজ্যে; সন্ত্রাসে নয়, প্রযুক্তিতে।’ ট্রাম্প সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর দাবিকে সমর্থন জানান এবং দেশটির নতুন সরকারকে সহযোগিতা দেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোপন বৈঠকে ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলোর অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। তাঁর সফর দেখায় যে, তিনি কেবল তাদের কথা শুনতেই নয়, বরং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুত।
ইসরায়েল হয়তো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় হওয়া কোনো শান্তিচুক্তি গ্রহণে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বেশি অনিচ্ছুক। তবে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে। ইসরায়েল সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায় এবং ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে চললেই সে পথ আরও সহজ হবে। নেতানিয়াহু হয়তো সংঘাত বাড়াতে চাইবেন, কিন্তু ইসরায়েলের অন্য নেতারা বোঝেন, যুদ্ধ বিস্তৃত হলে তা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে—যার পরিণতি ইসরায়েলি নাগরিকদের ওপরই পড়বে।
অন্যদিকে, ইরানের জন্য উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় আসা এখন অত্যন্ত লাভজনক। ইসরায়েলের টানা ও নিরলস বোমাবর্ষণে বিপর্যস্ত তেহরানের শাসকগোষ্ঠী এখন মুখরক্ষা করে সরে আসার পথ খুঁজছে। দেশটির কর্মকর্তারা এতটাই চিন্তিত যে, তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে—যদি যুদ্ধবিরতির সুযোগ থাকে, তবে তারা আবার আলোচনায় বসবে। আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে কঠিন আলোচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ২০১৯ সালে উপসাগরে ইরানের হামলা এবং ২০২২ সালে হুতিদের আক্রমণ অঞ্চলজুড়ে আতঙ্ক ছড়ালেও শেষপর্যন্ত তা উত্তেজনা প্রশমনের পথ খুলে দেয়। ওই প্রেক্ষাপটে আমিরাত ২০২২ সালে আবার ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক চালু করে, সৌদি আরবও ২০২৩ সালে চীনের মধ্যস্থতায় একই পথে হাঁটে।
২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়, তখন আরব রাষ্ট্র ও তুরস্ক তীব্রভাবে এর বিরোধিতা করেছিল। তারা সতর্ক করেছিল, এই আগ্রাসন অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং চরমপন্থীদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবে। আজ আবারও তারা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানে একসুরে কথা বলছে। কারণ তারা জানে, আরেকটি অনিয়ন্ত্রিত যুদ্ধ এই অঞ্চলে আরও ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
তাদের জন্য ঝুঁকিটা অনেক বড়। যদি যুদ্ধ বন্ধ না হয়, তাহলে তারা জানে—এই অস্থিরতা থেকে নিজেদের রক্ষা করার ক্ষমতা তাদের নেই। সময় খুব কম, ঝুঁকি বাড়ছে। তাই এই মুহূর্তে সবার সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি—একটি বড় যুদ্ধ থামাতে।
আশা করা যায়, এই দেশগুলো ইরান ও ইসরায়েলকে যুদ্ধ থেকে সরে আসতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এতে না জড়াতে রাজি করাতে পারবে। তারা ইসরায়েলকে বলতে পারে, তার বর্তমান কার্যকলাপ সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের পথকে একঘরে হওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে, আর স্থিতিশীলতা নয়, বরং স্থায়ী সংঘাতের ঝুঁকি তৈরি করছে। তারা ইরানকে বোঝাতে পারে, পরমাণু কর্মসূচি, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও প্রক্সি কার্যক্রম আর সহ্য করা হবে না—এবং অঞ্চলভুক্তি চাইলে, তাদের আচরণ পরিবর্তন করতেই হবে।
একটি শান্তিচুক্তি অর্জন অত্যন্ত কঠিন কাজ। ইরান ও ইসরায়েল তাদের অবস্থানে দৃঢ়ভাবে অনড়। এই সংঘাত প্রশমনের বদলে আরও জোরালো রূপ নিচ্ছে। তবুও বিশ্ব এক জরুরি ও ধারাবাহিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় রয়েছে। সেই উদ্যোগে ইরান ও ইসরায়েলের অংশগ্রহণ যেমন জরুরি, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও প্রয়োজন। তবে এই নেতৃত্ব, বা অন্তত সূচনা, আসতে হবে—এই অঞ্চল থেকেই।
ফরেন অ্যাফেয়ার্স থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্যদেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হর্ন অব আফ্রিকার এই স্বঘোষিত স্বাধীন মুসলিমপ্রধান ভূখণ্ডটির প্রতি ইসরায়েলের এই গভীর আগ্রহ নিছক কোনো কূটনৈতিক সৌজন্য নয়; বরং এর পেছনে রয়েছে কয়েক দশকের সুদূরপ্রসারী কৌশলগত পরিকল্পনা, নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা।
সোমালিল্যান্ডের অবস্থান এডেন উপসাগরের তীরে, যা সরাসরি ইয়েমেনের উল্টো দিকে এবং বাব আল-মানদেব প্রণালির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জলপথের বাণিজ্য এই পথেই পরিচালিত হয়।
২০২৩ সাল থেকে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি সংশ্লিষ্ট জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা চালিয়ে আসছে। সোমালিল্যান্ডের উপকূলরেখা থেকে হুতিদের মূল ঘাঁটি হোদেইদাহর দূরত্ব ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি ‘ফরোয়ার্ড ডিফেন্স’ বা সম্মুখ প্রতিরক্ষা ঘাঁটি হিসেবে কাজ করবে।
ইসরায়েলি থিংকট্যাংক (আইএনএসএস)-এর মতে, সোমালিল্যান্ডে গোয়েন্দা ঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে ইরান থেকে ইয়েমেনে আসা অস্ত্র চোরাচালান এবং হুতিদের গতিবিধির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা সম্ভব হবে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে নির্মিত বারবেরা বন্দর ইসরায়েলি নৌ টহল বা ড্রোন অপারেশনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে।
হর্ন অব আফ্রিকায় ইসরায়েলের এই প্রবেশ মূলত তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের আধিপত্য কমানোর একটি পাল্টা কৌশল। তুরস্ক ইতিমধ্যে সোমালিয়ার মোগাদিশুতে বিশাল সামরিক ঘাঁটি এবং বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে, সোমালিল্যান্ডের সঙ্গে জোরালো মৈত্রী এই অঞ্চলে তুরস্কের একক আধিপত্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
এ ছাড়া ইসরায়েল সব সময় নিজের সীমানার বাইরে মিত্র দেশগুলোতে নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। সোমালিল্যান্ডের মতো একটি স্থিতিশীল এবং পশ্চিমাপন্থী প্রশাসনের সঙ্গে বন্ধুত্ব ইসরায়েলকে লোহিত সাগরের নিরাপত্তা বলয়ে একক কর্তৃত্ব দেবে।
অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডারও আগ্রহের মূলে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সোমালিল্যান্ড কেবল একটি কৌশলগত বন্দর নয়, বরং এটি সম্পদের একটি অব্যবহৃত খনি।
সোমালিল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ অপরিশোধিত তেল, গ্যাস এবং বিরল মৃত্তিকা খনিজ মজুত থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরায়েলের উচ্চ প্রযুক্তি এবং অস্ত্র তৈরির কারখানায় এই কাঁচামালগুলো অত্যন্ত জরুরি।
ইসরায়েল ইতিমধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে লবণাক্ত পানি পরিশোধন, উন্নত সেচব্যবস্থা এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সোমালিল্যান্ডের জন্য এই অংশীদারত্ব হবে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চাবিকাঠি।
তবে এতে কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইসরায়েলের এই স্বীকৃতি যেমন সোমালিল্যান্ডের জন্য বৈধতার দ্বার উন্মোচন করেছে, তেমনি এটি আঞ্চলিক উত্তেজনারও জন্ম দিয়েছে।
সোমালিয়া এই পদক্ষেপকে তাদের অখণ্ডতার ওপর ‘সরাসরি আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন (এইউ) এবং আরব লিগ এই স্বীকৃতির তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি আফ্রিকা মহাদেশে নতুন করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে।
পশ্চিমা বিশ্বও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপে দ্বিধাগ্রস্ত। মার্কিন সিনেটর টেড ক্রুজ সোমালিল্যান্ডকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে সমর্থন করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনই এই পথে হাঁটবে না, বরং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
সর্বোপরি ইসরায়েলের জন্য সোমালিল্যান্ড একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদি মিত্র, যারা সন্ত্রাসবাদ দমনে ইসরায়েলের সমমনা বলেই মনে করা হয়। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে ইসরায়েল লোহিত সাগরে নিজের নৌ-শক্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই পদক্ষেপ যদি ইথিওপিয়া বা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলোকে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিতে উৎসাহিত করবে। তবে এর ফলে হর্ন অব আফ্রিকার মানচিত্র এবং ভূরাজনীতি চিরতরে বদলে যেতে পারে। এটি যেমন একটি নতুন সামরিক ও অর্থনৈতিক অক্ষের সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, আল জাজিরা এবং আটলান্টিক কাউন্সিল।

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

বড়দিনের রাতে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলা বিশ্বজুড়ে নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ বা আইএসকে। মধ্যপ্রাচ্যে পরাজয়ের পর গোষ্ঠীটি এখন আফ্রিকায় তাদের জাল বিস্তার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের লক্ষ্য করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানোর কারণে তিনি এ হামলার নির্দেশ দিয়েছেন।
ইসলামিক স্টেট কী
ইসলামিক স্টেট (যাকে আইএসআইএস বা দায়েশ নামেও ডাকা হয়) একটি সুন্নি চরমপন্থী গোষ্ঠী। ইরাক ও সিরিয়ায় উত্থান ঘটিয়ে তারা একসময় ‘খিলাফত’ ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে ছিল। তখন তারা কঠোর শরিয়াহ আইন জারি করে এবং প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ ও নির্যাতনের মতো নৃশংসতা চালিয়ে বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেয়।
পরে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর ক্রমাগত অভিযানের মুখে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কায় তাদের পতন ঘটে। তবে সংগঠনটি পুরোপুরি নির্মূল না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে তারা কোথায় সক্রিয়
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ নামে তারা সক্রিয়। এ ছাড়া ফিলিপাইনের মিন্দানাও অঞ্চলেও তাদের অনুসারী রয়েছে। জাতিসংঘ মনে করে, বর্তমানে তাদের অন্তত ১০ হাজার সক্রিয় সদস্য রয়েছে।
লক্ষ্য ও বর্তমান কৌশল
আইএসের মূল লক্ষ্য তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। তবে সরাসরি যুদ্ধের বদলে তারা এখন কিছু নতুন কৌশল নিয়েছে। যেমন, অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক—নিজেরা সরাসরি যুক্ত না হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিজেদের ‘শাখা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রভাব বিস্তার করা। লোন উলফ অ্যাটাক—সংঘবদ্ধ হামলার পরিবর্তে একজন বা দুই ব্যক্তির সমন্বয়ে বড় ধরনের হামলা। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের এক অনুষ্ঠানে বন্দুক হামলার পেছনে আইএসের এই কৌশল ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অনলাইন প্রচারণা—টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ানো এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ করা।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, আইএসের বর্তমান বিশ্ব নেতা হলেন আবদুলকাদির মুমিন। তিনি বর্তমানে আইএসের সোমালিয়া শাখার প্রধান।
আইএসের সাম্প্রতিক কিছু বড় হামলা
কঙ্গোতে চলতি বছরের গত অক্টোবরে একটি গির্জায় নৈশকালীন প্রার্থনার সময় হামলায় ৪৩ জন নিহত হয়, যার দায় স্বীকার করে আইএস। গত ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালায় আইএস। চলতি মাসে সিরিয়ায় দুই মার্কিন সেনা ও একজন দোভাষী নিহত হন, যার নেপথ্যে আইএসের হাত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর চলতি সপ্তাহে সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী।
নাইজেরিয়ায় মার্কিন হামলা এটাই প্রমাণ করে যে, আইএস এখন আর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়। বিশেষ করে, সাহেল ও পশ্চিম আফ্রিকায় তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রয়টার্স থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

নাইজেরিয়ার সরকার খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন ঠেকাতে ব্যর্থ—এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার পর অবশেষে বড়দিনের রাতে (২৫ ডিসেম্বর) পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন বাহিনী। সরাসরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যে এ হামলা চালানো হয়।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন আইএস জঙ্গিদের একাধিক আস্তানা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালায়। হামলায় মার্কিন নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক মিসাইল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এসব হামলায় একাধিক আইএস জঙ্গি নিহত ও তাঁদের আস্তানা ধ্বংস হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তবে সঠিক সংখ্যা এখনো জানানো হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক বিদেশি সামরিক হস্তক্ষেপগুলোর সর্বশেষ উদাহরণ নাইজেরিয়ায় হামলা। অথচ ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই হামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল নাইজেরিয়ায় বসবাসরত খ্রিষ্টানদের ওপর চলমান হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করা। তাঁর মতে, আইএস জঙ্গিরা পরিকল্পিতভাবে খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে। হামলার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছিলেন, ‘আমি আগেই এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম, তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে, তবে তাদের চড়ম মূল্য দিতে হবে। আজ রাতে (বড়দিন) ঠিক তা-ই ঘটেছে।’
গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নাইজেরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ‘খ্রিষ্টান গণহত্যার’ শামিল বলে অভিহিত করেছিলেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এপিকে জানান, নাইজেরিয়া সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশটির সঙ্গে সমন্বয় করেই এসব হামলা চালানো হয়েছে। নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই সহযোগিতার মধ্যে গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও কৌশলগত সমন্বয় ছিল।
কেন নাইজেরিয়ায় হামলা চালাল ট্রাম্প প্রশাসন
অনেক আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থী রাজনীতিক গোষ্ঠীগুলো নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগ তুলছে। গত সেপ্টেম্বরে রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ কিছু নাইজেরীয় কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, যারা ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সহজতর করছে’, তাদের নিষিদ্ধ করা উচিত।
তবে বর্তমানে বিষয়টি মার্কিন ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টান মহলে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ডানপন্থী ও ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানরাই ট্রাম্পের বড় সমর্থক। বিশ্লেষকদের মতে, নিজের সমর্থকদের তুষ্ট করতে এবং বিশ্বজুড়ে ‘খ্রিষ্টানদের রক্ষাকর্তা’ হিসেবে নিজেকে জাহির করতেই ট্রাম্প এই ত্বরিত সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের আওতায় নাইজেরিয়াকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্প। বেশ কিছু মার্কিন আইনপ্রণেতা ও রক্ষণশীল খ্রিষ্টান গোষ্ঠীর লাগাতার লবিংয়ের পর এই সিদ্ধান্ত আসে। এর কিছুদিন পরই তিনি নাইজেরিয়ায় সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করতে পেন্টাগনকে নির্দেশ দেন। সে সময় ট্রাম্প বলেন, নাইজেরিয়া সরকার যদি খ্রিষ্টান হত্যাকাণ্ড বন্ধ না করে, তবে তিনি ‘গানস-এ-ব্লেজিং’ অর্থাৎ পূর্ণ শক্তি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন।
নাইজেরিয়ায় কি আসলেই খ্রিষ্টানদের ওপর নিপীড়ন চলছে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এর পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে, যাযাবর মুসলিম পশুপালক ও খ্রিষ্টান কৃষক সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মূলত চারণভূমি ও পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। তবে ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজন এটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আবার অনেক বিশ্লেষকের মতে, যাজকদের অপহরণের ঘটনা ধর্মীয় বিদ্বেষের চেয়ে অর্থনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যেই বেশি ঘটে, কারণ, তাঁরা প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং তাঁদের অনুসারী বা প্রতিষ্ঠান দ্রুত মুক্তিপণের টাকা জোগাড় করতে পারে।
নাইজেরিয়া সরকারের অবস্থান
ট্রাম্প প্রশাসনের হামলার পর নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইএস-নিধনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার প্রশংসা করেছে। কিন্তু খ্রিষ্টান নিপীড়নের বিষয়টির সঙ্গে মার্কিন অভিযানের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, এ বিষয়ে কিছু বলেনি।
এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, খ্রিষ্টান, মুসলমান কিংবা অন্য কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত সব ধরনের সহিংসতাই নাইজেরিয়ার মূল্যবোধ এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি অবমাননা।
নাইজেরিয়ার বাস্তবতাও আসলে এমন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি নিরাপত্তা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশটিতে হাজারো মানুষ নিহত এবং শত শত মানুষ অপহৃত হয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রভিন্স (আইএসডব্লিউএপি) বিদ্রোহ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে কয়েক দশক ধরে কয়েক হাজার মানুষ নিহত এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র অপরাধী চক্র, যাদের সাধারণত ‘ডাকাত’ বলা হয়, তারাও গণ-অপহরণ ও হামলা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মুসলমান ও খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই প্রভাবিত করছে।
এর আগে ট্রাম্পের অভিযোগের জবাবে নাইজেরিয়ার সরকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিল, দেশটিতে কেবল খ্রিষ্টান নয়—বিভিন্ন ধর্মের মানুষই চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর হাতে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
গত মাসে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু বলেন, নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিত্রিত করা বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সহনশীলতা আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ের একটি মূল ভিত্তি এবং এটি সব সময়ই থাকবে। নাইজেরিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে সংবিধান সব ধর্মের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।’
এদিকে, ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও নাইজেরিয়ায় ট্রাম্পের নতুন সামরিক হস্তক্ষেপ আফ্রিকার ভূরাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, ‘খ্রিষ্টান নিপীড়ন’ আসলে ট্রাম্পের অজুহাত; তাঁর লক্ষ্য নাইজেরিয়ার তেলের খনি।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জগতপতি বর্মা

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
৮ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট ধীরে ধীরে একটি আঞ্চলিক সমস্যা থেকে বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনায় রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কড়া অবস্থান এবং সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত এই সংকটকে আরও গভীর করেছে। এই প্রেক্ষাপটে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিয়ো লুলা দা সিলভা ভেনেজুয়েলায় মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন। তাঁর মতে, এই সতর্কতা শুধু ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে নয়—পুরো দক্ষিণ আমেরিকার ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার প্রশ্নও তুলে ধরছে।
ভেনেজুয়েলার সংকটের মূল কারণ দেশটির দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিতর্কিত নির্বাচন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী ও অগণতান্ত্রিক বলে মনে করে। এর জবাবে ওয়াশিংটন একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এসব নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানি, যা দেশটির আয়ের প্রধান উৎস।
ভেনেজুয়েলা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল মজুতের অধিকারী। ফলে তাদের তেল শুধু অর্থনীতি নয়, কূটনীতিরও কেন্দ্রে অবস্থান করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ভেনেজুয়েলার তেল বিক্রির পথ বন্ধ করতে পারলে মাদুরো সরকার দুর্বল হবে। এই লক্ষ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেল ট্যাংকারগুলোকে অবরোধের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে মার্কিন বাহিনী। তবে এই পদক্ষেপকে সরাসরি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন দক্ষিণ আমেরিকার অনেক নেতা।
ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মতো লাতিন শক্তিগুলো এই কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার ইতিহাস বহিঃশক্তির সামরিক হস্তক্ষেপের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভরা। ফকল্যান্ড যুদ্ধের চার দশক পর আবারও কোনো অন্য মহাদেশীয় শক্তির সামরিক উপস্থিতি এই মহাদেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে—এমন আশঙ্কাই তিনি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে রাশিয়া ও চীন ভেনেজুয়েলার সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলার কৌশল, আর চীনের জন্য এটি তেল ও ঋণনির্ভর অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রশ্ন। ফলে ভেনেজুয়েলা ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্র বনাম রাশিয়া–চীন প্রভাব বিস্তারের আরেকটি ময়দানে পরিণত হচ্ছে।
‘মার্কোসুর’ সম্মেলনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো যে যৌথ অবস্থান নিয়েছে, তা এই বাস্তবতাকেই প্রতিফলিত করে। তারা ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছে, তবে স্পষ্টভাবে সামরিক পথ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের মতে, সংকটের সমাধান হতে পারে কেবল সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ কূটনীতির মাধ্যমে।
সব মিলিয়ে ভেনেজুয়েলার সংকট এখন আর একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। তেল, আদর্শিক দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক ক্ষমতার লড়াই—সবকিছু মিলিয়ে এটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক স্পর্শকাতর সংঘাতক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য এক বিস্তৃত আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো এবং তেল-গ্যাসের ডিপোগুলোতে টানা বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ভাষায়, এই হামলার লক্ষ্য, ইরানের সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির হুমকি ‘দমন...
২০ জুন ২০২৫
গত ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম জাতিসংঘ সদস্য দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই সিদ্ধান্তকে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’-এর একটি সাহসী সম্প্রসারণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
২ দিন আগে
মধ্যপ্রাচ্যের মূল ভূখণ্ড হারানোর পর আইএস এখন মূলত স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন সেলের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, কঙ্গো এবং সাহেল অঞ্চলে আইএস অত্যন্ত শক্তিশালী। নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘আইএসডব্লিউএপি’ এবং উত্তর-পশ্চিমে বিভিন্ন অনুসারী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে।
৩ দিন আগে
নাইজেরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ মুসলমান, ৪৫ শতাংশ খ্রিষ্টান এবং অন্যরা আফ্রিকার ঐতিহ্যগত কিছু ধর্মে বিশ্বাসী। খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক মনোযোগ পেলেও বহু বিশ্লেষকের মতে, বিষয়টি কেবল ধর্মীয় নিপীড়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছন
৩ দিন আগে