গুঞ্জন রহমান

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।
গুঞ্জন রহমান

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

১৯৯৭ সালের কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়া দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও। হঠাৎ দেখি লুঙ্গি ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরিহিত বাবার বয়সী এক ভদ্রলোক এক হাতে হাঁসুয়া বা কাস্তে, অন্য হাতে ঘাসভর্তি বড়সড় একটা ছালার বস্তা নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে হেঁটে আসছেন। ঘাস কাটা এবং তা নিয়ে অত জোরে হেঁটে আসার পরিশ্রমে শরীর ঘর্মাক্ত, খানিকটা হাঁপাচ্ছেনও তিনি। আমি ঝট করে সাইকেল থকে নেমে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘ফাস্ট ইয়ার?’
আমি লাজুক ভঙ্গিতে বললাম, ‘জি স্যার।’
‘বুঝতে পারছি। ফাস্ট ইয়ার এবং গ্রাম থকে এসেছ। এজন্য এই সব নর্ম এখনো ধরে রেখেছ। আজকাল মুরব্বিদের দেখলে কেউ সাইকেল থেকে নামা তো দূররে কথা, সালামই দেয় না!’
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না। তিনি নিজে থেকেই বললেন, ‘শিক্ষকতা করে বড়জোর নিজের আর স্ত্রী-পুত্র পরিবারের পেট চলে হে ছোকরা। আর সাহিত্য করে তো গরুর রাখালের মজুরিটুকুও জোটে না। এই জন্য নিজেই ঘাস কাটতে যাই রোজ, বুঝলে?’
আমি জড়সড় হয়ে বললাম, ‘স্যার, বস্তাটা আমাকে দিন, আমি সাইকেলে করে আপনার বাসায় পৌঁছে দিই।’
‘অ! তুমি দেবে? রোজ দেবে? মানে, রোজ এই সময়ে এসে আমার ঘাসের বস্তা গোয়ালে পৌঁছে দিতে পারবে? নাকি ঘাসও কটে দেবে?’
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বলার মতো কিছু খুঁজে পেলাম না। স্যার হাসলেন। প্রশ্রয়ের হাসি। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘যার যেটা কাজ, তাকে সেটা করতে দিতে হয়। আমার গরুর ঘাস আমাকেই কাটতে হবে, আমাকেই গোয়ালে নিতে হবে। ওসব পোশাকি ভদ্রতা করার মানে হয় না। তোমার ইনটেনশন ভালো সেটা বুঝতে পারছি, কিন্তু যার যার লড়াই তার তার লড়ে যাওয়াই উচিত। যাও যাও। সাইকেলে উঠে কেটে পড়ো।’
এই হলো উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের হুবহু বর্ণনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথম বছর থেকেই আমি থিয়েটার করতে শুরু করি। তীর্থক নামক থিয়েটার দলের কর্মী হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার পদচারণা শুরু। এর আগ বাবার কর্মসূত্রে আমার নিবাস ছিল গাইবান্ধা জেলার এক পাড়াগাঁয়ের মতো জায়গায়, যার নাম মহিমাগঞ্জ। চিনিকলের কলোনিতে থাকতাম, কাছাকাছি বড় শহর বগুড়ায় যেতাম কেনাকাটা করতে। সে সময় বইপত্র যা পড়তাম, তার মধ্যে সেবা প্রকাশনী আর কিছু ক্ল্যাসিক সাহিত্যের বাইরে সমকালীন লেখক হিসেবে হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল—এই তিন নামই আমাদের কিশোরমহলে বেশ পরিচিত ছিল।
কবিতায় শামসুর রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা—এঁদের বাইরে কবি-সাহিত্যিক খুব বেশি চেনা ছিল না। তেমনই একটা সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রেখেই জানতে পারলাম, বাংলাদেশের তথা বাংলা ভাষারই অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হাসান আজিজুল হক এই অঙ্গনের একেবারে ঘরের মানুষ। ঠিক মুরব্বি হিসেবে দেখলেও তাঁকে কিছুটা দূরের মনে হতে পারে, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গন তথা সবকিছুতেই তিনি এত বেশি কাছের মানুষ ছিলেন যে সামান্যতম দূরত্ব বোঝা যায় এমন কোনো বিশেষণই তাঁর জন্য প্রযোজ্য হয় না। আগেও হয়নি কোনো দিন, পরেও কখনো না। ওই যে বললাম, আটপৌরে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে ঘাস কাটা রাখালের বেশে তাঁকে আমার প্রথম দেখা; বরাবর তিনি ছিলেন এমনই একজন ঘরের মানুষ, যাঁকে দেখে শিক্ষকসুলভ সমীহ তো জাগেই, কিন্তু গুরুজনসুলভ ভীতি জাগে না। যাঁকে দেখে বাবা-চাচা-মামাদের মতো আপনজন মনে হয়, কিন্তু মাস্টারমশাইসুলভ দূরত্ব ধোপে টেকে না। সে জন্যই বুঝি ওই প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকাকালীনই যখন আমাদের পরিবার দিনাজপুর জেলা শহরে স্থায়ী হলো, ছুটিছাঁটায় দিনাজপুরে গিয়ে সেখানকার শিল্পসাহিত্যের মানুষদের কাছে আমি রীতিমতো ঈর্ষার পাত্রে পরিণত হতাম। সেটা এই কারণে যে হাসান আজিজুল হকের মতো মহীরুহের সঙ্গে এই ছেলে চাইলে রোজ দেখা করতে পারে, কথা বলতে পারে, কোনো কারণ ছাড়াই তাঁর বাসায় পর্যন্ত চলে যেতে পারে!
ঠিক এই জায়গাতেই আপত্তি করেছিলেন তাঁর গুণমুগ্ধ সহকর্মী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম স্যার। তিনি আমাদের সুযোগ পেলেই মনে করিয়ে দিতেন, ‘বাতাসের ভেতরে থেকে তো বাতাসের অস্তিত্ব বোঝা যায় না; তাই তোমরা বুঝতে চাও না, তিনি কত বড় মানুষ। কত বড় একজন চিন্তাশীল মানুষ, সৃজনশীল মানুষ। তাঁর জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এই যে তোমরা যখন-তখন হুট করে চলে যাও তাঁর কাছে, তিনি তখন হয় কিছু লিখছেন, নয়তো লেখার কথা ভাবছেন। তোমার কারণে সেই লেখার অপমৃত্যু হলো—এটা কি তুমি বোঝো? তাঁর সঙ্গে তোমার এক ঘণ্টা আড্ডায় তুমি সমৃদ্ধ হবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু বঞ্চিত হবে বাংলা সাহিত্য। তিনি ভীষণ সঙ্গপ্রিয় মানুষ, তিনি তোমাদের ভালোবাসেন, প্রশ্রয় দেন—এটা তাঁর মহানুভবতা। কিন্তু তাঁকে তাঁর মতো লিখতে দিতে হবে, নিরিবিলি সময় করে দিতে হবে—এটা তোমাদের দায়িত্ব।’
শহীদুল ইসলাম স্যারের এ কথায় কেউ তেমন কান দেয়নি, সবাই স্যারকে ঘিরে থেকেছে সব সময়, কিন্তু আমি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে চেষ্টা করতাম। পারতপক্ষে তাঁর কাছে ঘেঁষতাম না, একা একা তো কিছুতেই না। এমনিতেই প্রায় প্রতিদিন কোনো না কোনোভাবে তাঁকে দেখতে পেতাম, আলাদা করে একান্তে মিলিত হওয়ার দরকারই বা কী? আর আমি এত ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যে তাঁর সঙ্গে দুদণ্ড কথা বলার যোগ্যতাও আমার নেই! শুধুই শুনে যাব বলে তাঁকে তাঁর সৃষ্টিকর্ম থেকে সরিয়ে রাখার কোনো অধিকার কি আমার আছে?
রাবির ছাত্র হিসেবে অন্য সবার চেয়ে একটু হলেও আলাদা করে স্যারকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। আমার মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ সালের কথা। সেবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থকে সংবর্ধনা দেওয়া হলো মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এক বীর যোদ্ধা, যিনি বন্দুক হাতে না নিয়েই এক অসম যুদ্ধ করেছিলেন মহাপরাক্রমশালী পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং জয়ী হয়েছিলেন সেই যুদ্ধে—তিনি মজিবর রহমান দেবদাস স্যার। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ছাউনি করার এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে নির্বিচারে গণহত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এই অসীম সাহসী শিক্ষক। পাকিস্তান আর্মির কমান্ডার যখন যুক্তি দিয়েছিলেন—এরা বিধর্মী কাফের, তাই এদের মেরে ফেলায় অন্যায় নেই, তখন এর প্রতিবাদে তিনি নিজের মজিবর রহমান নাম পরিবর্তন করে দেবদাস রেখেছিলেন। পাকিস্তানি আর্মি তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করে, যার কারণে তিনি একটা সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরিটি হারান এই অজুহাতে যে চাকরিতে বহাল থাকার মতো তাঁর মানসিক ভারসাম্য নেই। বঞ্চিত করা হয় তাঁর সারা জীবনের চাকরি থকে অর্জিত অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে। প্রকৃতপক্ষে এ সবই ছিল স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের যোগসাজশ।
১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরলে স্যারকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান ও চাকরিজীবনের আর্থিক অর্জন ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়, যার প্রথম পদক্ষেপ ছিল সেই সংবর্ধনা। সেই অনুষ্ঠানে অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার স্যারের নামটি ভুল বললেও আবার সংশোধন করে নিচ্ছিলেন বক্তারা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উচ্চপদে আসীন ব্যক্তিরা দেবদাস স্যারকে “আর্থিক সহায়তার আশ্বাস” দিচ্ছিলেন। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে মঞ্চে উঠে হাসান স্যার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তীব্র ভাষায় তিনি এসব ধৃষ্টতার প্রতিবাদ করলেন। চিৎকার করে বললেন, ‘কাকে আপনারা সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন? তাঁর নিজের পাওনা টাকা তাঁকে বুঝিয়ে দিন! সেই টাকা আজকের বাজারদরে কত হয় হিসাব করুন। কে তাঁকে করুণা করে? কার এত বড় সাহস? করুণা পরে করবেন, আগে তো তাঁকে সম্মান দিন! তিনি নিজে তাঁর নাম রেখেছেন দেবদাস, যে নামটি প্রথম সুযোগে আপনাদের মুখে আসছে না, সংশোধন করে বলতে হচ্ছে বারবার! আপনারা কি তাঁকে সম্মান দিতে ডেকেছেন, নাকি আবারও অসম্মান করতে?.... আপনাদের প্রতি আমার আসলেই কোনো আশা নেই। আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বলছি। বাবা-মায়েরা, তোমরা এই লোকটিকে দেখো। এই যে ছোটখাটো মানুষটি এখানে বসে আছেন, এঁকে দেখো। কারণ হিমালয় দেখতে যাওয়ার সুযোগ তোমাদের অনেকের হবে না, আজ এই সুযোগে তোমরা স্পর্ধার হিমালয় দেখে নাও। দেখে নাও দেশপ্রেমের আটলান্টিক মহাসাগর। দেখে নাও বিদ্রোহের সাহারা মরুভূমি। দেখে নাও স্বাধীনতার ধ্রুবতারাকে। আর আমাকে একটা কথা দাও। আপস করতে হলে সব বিষয়ে আপস কোরো, কিন্তু মা আর মাতৃভূমির সঙ্গে কোরো না। ভেজাল দিতে হলে সবকিছুতে দিয়ো, কিন্তু স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে ভেজাল দিয়ো না। ভুলতে হলে সবাইকে ভুলে যেয়ো, কিন্তু এই মাটির প্রকৃত বীর এই মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো দিন ভুলে যেয়ো না।’
আজ, মাত্রই কিছুক্ষণ আগে অনুজপ্রতিম বন্ধুর কাছ থকে জানতে পারলাম, হাসান আজিজুল হক স্যার আর নেই। বাংলা সাহিত্য কাকে হারাল, সে বাংলা সাহিত্যের পাঠক আর সাহিত্যিকেরা জানেন। আমি বড়জোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে, তাঁকে কাছে থেকে দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যবানদের একজন হিসেবে এটুকু বলতে পারি—আপস না করা, ভেজাল না দেওয়া, শেকড়কে কিছুতেই না ভোলা এক অদম্য চেতনা আজ দেহ ত্যাগ করে অনন্তে মিলে গেলেন। এক জীবন্ত কিংবদন্তি আজ শাব্দিক অর্থেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।
... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।
সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়েছে।
অক্সফোর্ড জানিয়েছে, চলতি বছর ‘রেজ বেইট’ শব্দের ব্যবহার তিন গুণ বেড়েছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মানুষ এখন আগের চেয়ে দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যালগরিদম প্রভাবিত বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে। ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ও মুহূর্তের মধ্যে রাগ, ক্ষোভ ও বিভাজন তৈরি করছে—যা মূলত এনগেজমেন্ট বাড়ানোর কৌশল।
‘রেজ বেইট’ সব সময় যে বিপজ্জনক হবে, এমন নয়। কখনো এটি হতে পারে অদ্ভুত কোনো রেসিপি বা এমন ভিডিও যেখানে কেউ নিজের পোষা প্রাণী বা পরিবারের সদস্যকে মজার ছলে বিরক্ত করছে। তবে রাজনীতি ও জনপরিসরেও এখন এটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কারণ প্ররোচিত ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার ঢেউ অনেক সময়ই রাজনৈতিক প্রচারণাকে আরও উসকে দেয়।
শুধু অক্সফোর্ড নয়, প্রায় সব বড় অভিধানই এবার ইন্টারনেট-সম্পর্কিত শব্দকেই ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এবার কলিন্স ডিকশনারির বেছে নেওয়া শব্দটি হলো ‘ভয়েস কোডিং’। যেখানে এআই ব্যবহার করে মানুষের ভাষাকে কম্পিউটার কোডে রূপান্তর করা হয়। অন্যদিকে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি বেছে নিয়েছে ‘প্যারাসোশ্যাল’ শব্দটি, যা অনলাইনে অপরিচিত কারও সঙ্গে গড়ে ওঠা একতরফা সম্পর্ককে নির্দেশ করে।
গত বছর (২০২৪) অক্সফোর্ড বেছে নিয়েছিল ‘ব্রেইন রট’ শব্দটি, যা ছিল মূলত অবিরাম স্ক্রলিংয়ে মানসিক ক্লান্তির রূপকার্থ। অক্সফোর্ড ল্যাংগুয়েজেসের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্র্যাথওহলের মতে, ‘রেজ বেইট’ এবং ‘ব্রেন রট’—দুটি শব্দই দেখায় কীভাবে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের চিন্তা ও আচরণকে বদলে দিচ্ছে। একটি প্ররোচিত রাগ বাড়ায়, অন্যটি সেই রাগের মধ্যেই মানুষকে আবিষ্ট রাখে।
এ বছর অক্সফোর্ড সাধারণ মানুষের ভোটে ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচন করেছে। সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল আরও দুটি শব্দ—‘অরা ফার্মিং’ ও ‘বায়োহ্যাক’। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করার কৌশলকে বোঝাতে ‘অরা ফার্মিং’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়, আর শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা বাড়াতে জীবনযাপনে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন আনার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘বায়োহ্যাক’।
শেষ পর্যন্ত ‘রেজ বেইট’ শব্দটিই জিতেছে—যে শব্দের মধ্য দিয়ে আজকের অনলাইন জীবনের রাগ, প্রতিক্রিয়া এবং ক্লান্তির বাস্তবতা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান। সেই মর্মান্তিক ঘটনা, গারফিল্ডের জীবন ও তাঁর উত্তরাধিকার নিয়ে এবার নেটফ্লিক্স-এ আসছে চার পর্বের ড্রামা সিরিজ, ‘ডেথ বাই লাইটনিং’।
প্রেসিডেন্টের উত্থান ও প্রগতিশীল এজেন্ডা
১৮৮০ সালে আমেরিকা এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছিল। সদ্য দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর আফ্রিকান-আমেরিকানরা কি নাগরিক হিসেবে পূর্ণ অধিকার পাবেন? নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারি চাকরি বণ্টনের সেই দীর্ঘদিনের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘পচে যাওয়ার ব্যবস্থা’ অব্যাহত থাকবে? রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে ওহাইও-এর জনপ্রিয় কংগ্রেসম্যান জেমস গারফিল্ড এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার আহ্বান জানান। দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা, গৃহযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব দেখানো এই কমান্ডার নভেম্বরে দেশের ২০ তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে গারফিল্ড উচ্চাভিলাষী এজেন্ডা নিয়ে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল: মার্কিন নৌবাহিনীর আধুনিকীকরণ, লাতিন আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো এবং বিশেষত নাগরিক অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করা। তিনি সাবেক ক্রীতদাস ফ্রেডরিক ডগলাসকে ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার রেকর্ডার অব ডিডস পদে নিযুক্ত করেন। একজন আফ্রিকান-আমেরিকানের জন্য প্রথম সারির একটি কেন্দ্রীয় পদ পাওয়ার বিরল ঘটনা ছিল এটি।
হত্যার নেপথ্যে
১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসি-র রেলওয়ে স্টেশনে চার্লস এল. গুইটো নামক এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি গারফিল্ডকে গুলি করে। গুইটো তার জীবনকাল ধরে একজন ব্যর্থ আইনজীবী, সাংবাদিক, ধর্মপ্রচারক এবং ফ্রি লাভ কমিউনের সদস্য হিসেবে এক ব্যর্থ অ্যাকটিভিস্ট ছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বর তাকে মহৎ উদ্দেশ্যের জন্য সৃষ্টি করেছেন। গারফিল্ডের মনোনয়নের পর তিনি তাঁর সমর্থনের বিনিময়ে প্যারিসে গুরুত্বপূর্ণ কনস্যুলার পদ দাবি করে হোয়াইট হাউসে ধরনা করতেন। প্রেসিডেন্ট ‘প্যাট্রোনেজ সিস্টেম’-এর ঘোর বিরোধী হওয়ায় তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরই গুইটো সিদ্ধান্ত নেন—গারফিল্ডকে হত্যা করে ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থারকে ক্ষমতায় আনার ‘ঈশ্বর প্রদত্ত নির্দেশ’ তাঁর ওপর বর্তেছে।
আসল খুনি কে?
লেখক ক্যান্ডিস মিলার্ড তাঁর বেস্ট সেলিং বই ডেসটিনি অব দ্য রিপাবলিক-এ তুলে ধরেছেন, গারফিল্ডের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল চিকিৎসার চরম অব্যবস্থা। ড. উইলফ্রেড ব্লিস নামক দাম্ভিক চিকিৎসক গারফিল্ডের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি ব্রিটিশ সার্জন জোসেফ লিস্টার কর্তৃক প্রবর্তিত আধুনিক অ্যান্টিসেপটিক পদ্ধতিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেন। ব্লিস জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্র এবং খালি হাত ব্যবহার করে প্রেসিডেন্টের মেরুদণ্ডের কাছে থাকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এর ফলে সংক্রমণ (সেপসিস) ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, গুলি খুঁজতে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল তাঁর সদ্য আবিষ্কৃত প্রারম্ভিক মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু ব্লিসের অসহযোগিতার কারণে সেটিও ব্যর্থ হয়। শট নেওয়ার প্রায় আশি দিন পর প্রেসিডেন্ট মারা যান এবং এই মৃত্যুর সম্পূর্ণ দায় ড. ব্লিসের ওপর বর্তায়।
রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও গারফিল্ডকে নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রিপাবলিকান সিনেটর রোসকো কনকলিং-এর বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হয়েছিল। কনকলিং প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক ছিলেন এবং গারফিল্ডের প্রগতিশীল ভাবধারা পছন্দ করতেন না। মাকোভস্কি বিবিসিকে জানান, এই সিরিজের মূল আকর্ষণ হলো ইতিহাসের সেই ‘যদি’ প্রশ্নটি—যদি প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি হয়তো আমেরিকার অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। মাকোভস্কির মতে, ‘গারফিল্ডের অসাধারণ মেধা ছিল। তাঁকে যে আজ ইতিহাসে একটি অস্পষ্ট পাদটীকা হিসেবে স্থান দেওয়া হয়, তা এক ট্র্যাজেডি।’
অভিনেতা মাইকেল শ্যানন গারফিল্ডের ‘ঐশ্বর্য ও মর্যাদা, বিশেষ করে তাঁর শালীনতা’ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন লেখক মিলার্ড।
গারফিল্ডের উত্তরাধিকার ও আইন সংস্কার
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে গারফিল্ডের মৃত্যু পুরো জাতিকে নাড়িয়ে দেয় এবং দেশজুড়ে সরকারি চাকরি সংস্কারের দাবি জোরালো হয়। জনগণের ক্ষোভের কারণেই ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ. আর্থার, যিনি একসময় প্যাট্রোনেজ সিস্টেমের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তিনিই ১৮৮৩ সালে ‘পেন্ডলটন অ্যাক্ট’-এ স্বাক্ষর করেন। এই আইনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘যোগ্যতা-ভিত্তিক’ নিয়োগের নীতি শুরু হয়, যা মার্কিন সরকারি আমলাতন্ত্রের পেশাদারি নিশ্চিত করার পথ দেখায়। এইভাবে, এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এক স্থায়ী প্রগতিশীল পরিবর্তন এনে দেয়।

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস।
৪ দিন আগেসম্পাদকীয়

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

ঢাকার মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের বধ্যভূমিটি ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি’ নামে পরিচিত। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও বিহারিরা এখানে বাঙালিদের ধরে এনে হত্যা করত। মিরপুর খালের পাশে এক নির্জন এলাকায় দুটি পয়োনিষ্কাশন ট্যাংকের ওপর ছিল একটি পরিত্যক্ত পাম্পহাউস। ঘাতকেরা এ জায়গাকে বেছে নিয়েছিল বধ্যভূমি হিসেবে।
স্বাধীনতার পরপরই এই বধ্যভূমির সন্ধান যখন পাওয়া যায়, তখন প্রত্যক্ষদর্শীরা সেখানে অসংখ্য বাঙালির কঙ্কাল দেখতে পান। স্থানীয় জনগণ জল্লাদখানার পাশে সে কঙ্কালগুলো দাফন করেন। এ পাম্পহাউসের ভেতরে উঁচু এক বেদিতে লেখা ছিল ‘জল্লাদখানা’। এখানে অনেক বাঙালিকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল।
তথ্য: সংগ্রামের নোটবুক

১৯৯৭ সালরে কথা। তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। এক বিকেলের কথা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা, ক্যাম্পাসরে পশ্চিম পাড়া দিয়ে আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম কোথাও।
১৬ নভেম্বর ২০২১
...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।
১০ ঘণ্টা আগে
ইন্টারনেটে স্ক্রল করতে করতে এমন কিছু কনটেন্ট হঠাৎই চোখে পড়ে, যা দেখে মনে হয়—ইচ্ছে করেই আপনাকে রাগীয়ে তুলতে চাইছে! এই ধরনের প্ররোচনামূলক উপাদানকেই বলা হয় ‘রেজ বেইট’। অনলাইন দুনিয়ায় এর ব্যাপক বিস্তার ও প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে অক্সফোর্ড ডিকশনারি ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে এই শব্দটিকেই বেছে নিয়
৪ দিন আগে
উনিশ শতকের শেষভাগে মার্কিন ইতিহাসে এক ট্র্যাজিক অধ্যায় রচনা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জেমস এ. গারফিল্ড। ১৮৮১ সালের মার্চ মাসে শপথ গ্রহণের মাত্র চার মাসের মাথায় তিনি আততায়ীর গুলিতে আহত হন। পরবর্তীকালে চিকিৎসকের চরম অবহেলা ও অজ্ঞতার শিকার হয়ে সেপসিসে (সংক্রমণ) ভুগে মারা যান।
৪ দিন আগে