Ajker Patrika

পানি না পেয়ে বিষপান, অভিনাথ-রবির পর এবার মুকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
পানি না পেয়ে বিষপান, অভিনাথ-রবির পর এবার মুকুল

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের খেতে পানি না পেয়ে আবারও এক সাঁওতাল কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এই কৃষকের নাম মুকুল সরেন (৩৫)। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম গোপাল সরেন। বর্ষাপাড়া গ্রামের পাশের গ্রামটি নিমঘটু। গত বছরের মার্চে বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে এই নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। 

অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের কৃষক মুকুল সরেন। অভিনাথ ও রবির মৃত্যুর পর বিভিন্ন পক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে মুকুল বিষপানের একদিন পর আজ সোমবার থেকে কথা বলতে পারছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি জানিয়েছেন, বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না দেওয়ার কারণেই তিনি বিষপান করেছেন। 

মুকুল সরেন জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাঁকে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাঁকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষই খেয়ে নেবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি এই বিষ পান করেন। 

মুকুলের অভিযোগ, সম্প্রতি বৃষ্টির পর গভীর নলকূপ থেকে অন্য সব কৃষকের একাধিকবার পানি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসেম আলী তাঁকেই শুধু পানি দিচ্ছিলেন না। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পাকস্থলী ধুয়ে বিষ বের করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। 

বিষপানে মারা যাওয়া কৃষক অভিনাথ ও রবির জমি দুই পাশে রেখে সরু একটা রাস্তা চলে গেছে বর্ষাপাড়া গ্রামে। সোমবার দুপুরে বর্ষাপাড়ায় মুকুলের বাড়ি গিয়ে কথা হয় তাঁর বাবা গোপাল সরেনের সঙ্গে। তিনি জানান, পানির জন্য তিনি নিজেও একবার গিয়েছিলেন নলকূপ অপারেটর হাসেম আলীর কাছে। কিন্তু হাসেম তাঁকেও পানি দেননি। রোববার দুপুরে খবর পান, বিষ খেয়ে তাঁর ছেলে রাস্তার মোড়ে পড়ে আছে। তারপর তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুনেছেন, পানি না পাওয়ার কারণে তাঁর ছেলে বিষপান করেন। 

বর্ষাপাড়া থেকে অল্প একটু দূরে ঈশ্বরীপুর গ্রামে দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়। ইউপি কার্যালয়ের সামনেই বিএমডিএর গভীর নলকূপ। ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল জানান, তিনি শুনেছেন যে রোববার দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তারপর আসলেই বিষপান করেছেন কিনা তা তিনি জানেন না। 

চেয়ারম্যান জানান, এবার বোরো চাষ করে মুকুল দুই দিন তাঁর কাছে গিয়েছেন। তিনি পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। একবার ইউপির একজন সদস্যকে তাঁর জমি দেখতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি দেখে এসে বলেছেন যে, জমিতে কয়েক দিন পরে পানি দিলেও চলবে। 

মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, ‘এই নলকূপের অধীনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক আছে। অনেক সময় তারা দেশীয় মদ পান করে জমিতে সেচ দিতে আসেন। মদ্যপ অবস্থায় পানি দিতে গেলে চেম্বারে উঠে তার পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে। পড়ে মারা গেলে এর দায়ও নিতে হবে। তাই নলকূপ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কোনো কৃষক মদ্যপ অবস্থায় গেলে তাকে পানি দেওয়া যাবে না। এ জন্য মদপান করে আসার কারণে মুকুলকেও দুই দিন পানি দেওয়া হয়নি।’ 

হাসেম আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন সবাই এসেছে এক সঙ্গে। আমার ডিপের মুখ একটা, সবাইকে তো এক সঙ্গে দিতে পারব না। গতকাল মুকুল মনে হয় চুয়ানি আর গাঁজা খেয়ে এসেছিল। এসে বলছে, ‘‘পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাব।’ ’ তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নিল। আমি বললাম, পানি দিচ্ছি, তুই জমিতে যা। কিন্তু সে বলছে, ‘‘তুই আমার জমিতে গিয়ে দে।’ ’ তারপর সে চলে গেল। বিষ খেয়েছে কিনা জানি না।’ 

এই গভীর নলকূপটি সব সময় চললে ২৫০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে পারে। গত বছর চাষ হয়েছিল এর চেয়েও বেশি জমি। গত বছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত লম্বা সময় কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ। এবার তিনি ২৫০ বিঘা জমিকে চাষের আওতায় এনেছেন বলে জানিয়েছেন। তারপরও পানির জন্য কৃষকের বিষপানের ঘটনা ঘটল। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘বিষ এত সস্তা নাকি? আবার বিষ খেয়েছে কেন? গত বছরের ঘটনার পর তো ওই ডিপের অপারেটরকে বাদ দিলাম। নতুন অপারেটর নিয়োগ দিলাম। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল? আমি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কৃষক মুকুল সরেনের সঙ্গে কথা বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুলিশের ভয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে ময়মনসিংহে আ.লীগ নেতার মৃত্যু

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
কাজী মঞ্জুর মোর্শেদ রাজু। ছবি: সংগৃহীত
কাজী মঞ্জুর মোর্শেদ রাজু। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে ময়মনসিংহ নগরীর নিজ বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে এক আওয়ামী লীগ নেতা মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বাঘমারা ওই আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় পুলিশ অভিযান চালাতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম কাজী মঞ্জুর মোর্শেদ রাজু। তিনি ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

নিহতের ভাই কাজী শিপলু বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ আমার ভাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। পুলিশ আমাদের বাসার এসে গেট খুলতে বলে। পরে আমার ভাই রাজু বিষয়টি টের পেয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে দোতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দেওয়ার সময় বেলকনির সঙ্গে মাথায় আঘাত লাগে।

‘এতে রাজু গুরুতর আহত হন। পুলিশ চলে গেলে আশপাশের লোকজন রাজুকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পরিবারের লোকজনকে খবর দেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

‘সেখান থেকে পরিবারের লোকজন স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা রাজুকে আইসিইউতে রাখেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার বেলা ৩টায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।’

রাজুর স্ত্রী সাথী জানান, ৮-১০ বছর ধরে রাজু রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তিনি রাজনীতি থেকে সরে আসেন। তাঁর নামে কোনো মামলাও নেই। বিগত ৫ আগস্টের পর তিনি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পুলিশের নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে কাজী মঞ্জুর মোর্শেদ রাজুর বাসায় অভিযান পরিচালনা করে। ওই বাসার কলাপসিবল গেটে পুলিশ নক করে। তবে, কেউ গেট না খোলায় পুলিশ ফিরে আসে। পরে সেখানে কী হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাটি কাটা নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এসআইসহ ৬ জন টেঁটাবিদ্ধ, বাড়িঘরে আগুন

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সংঘর্ষের সময় কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এসআইসহ অন্তত ছয়জন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় অন্তত চারটি বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের কংশপুরা গ্রামে মো. জহির ও খলিলুর রহমানের লোকজনের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

টেঁটাবিদ্ধ সিরাজদিখান থানার এসআই হাফিজুর রহমানকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকি আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মাটি কাটা নিয়ে কংশপুরা গ্রামের খলিলুর রহমান ও পূর্ব রামকৃষ্ণদি গ্রামের মো. জহিরের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কংশপুরা গ্রামে দুই পক্ষের লোকজন টেঁটাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় উভয় পক্ষের কয়েকটি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। সংঘর্ষ থামাতে সিরাজদিখান থানা-পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে এসআই হাফিজুর হাতে টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়।

সিরাজদিখান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জাহানারা আক্তার বলেন, পুলিশের এসআইয়ের ডান হাতে টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন। তাঁকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেকে পাঠানো হয়েছে।

জানতে চাইলে খলিলুর রহমান বলেন, ‘জহিরের অবৈধ মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়ায় লোকজন নিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও স্বর্ণালংকার লুটপাট করা হয়েছে। আমার কয়েকজন লোক টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।’

এদিকে মো. জহির বলেন, ‘খলিলের সঙ্গে আমার বিরোধ অনেক আগের। আজকের ঘটনায় আমি জড়িত নই।’

লতব্দী ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. শামসুদ্দীন খান খোকন বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে মাটি কাটা ও ভরাটকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলছিল। আজকের ঘটনায় কয়েকজন টেঁটাবিদ্ধ হয়েছেন।

সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, ঘটনার পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে মামলা দায়ের করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যশোরে নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ ২২ দিন পর পঞ্চগড়ে উদ্ধার

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি 
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত
আক্তারুজ্জামান। ছবি: সংগৃহীত

যশোরের চৌগাছায় নিখোঁজের ২২ দিন পর আক্তারুজ্জামান (৪৬) নামের এক পুলিশ সদস্যের অর্ধগলিত লাশ পঞ্চগড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদরের ৬ নম্বর সাতমোড়া ইউনিয়নের নয়মাইল এলাকার একটি আখখেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। আজ শুক্রবার নিহত আক্তারুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়।

চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (শুক্রবার রাত ৬টা ১৫ মিনিট) পরিবারের সদস্যদের পঞ্চগড়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা জানান নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীর ভাই মামুনুর রশীদ মামুন। মোবাইল ফোনে তিনি জানান, পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতা দেখে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন লাশটি তাঁর বোনের স্বামীর।

জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, লাশটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা থানায় পৌঁছালে সেটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হবে। এরপর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

আক্তারুজ্জামান চৌগাছা উপজেলার সিংহঝুলি ইউনিয়নের জামলতা গ্রামের মৃত আনিচুর বিশ্বাসের ছেলে। তিনি খুলনা রেঞ্জের বাগেরহাট জেলার রামপাল থানায় কর্মরত ছিলেন।

জানা গেছে, লাশটির দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। তবে লাশটির কোনো তথ্য না থাকায় জানার জন্য চেষ্টা করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা। ক্লুলেস লাশটির পরিচয় শনাক্তে একমাত্র সূত্র হয় উদ্ধার করা লাশের আন্ডারওয়্যার।

যা ছিল পুলিশের লোগো-সংবলিত। পরে সেটি একজন পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হলে তাঁর পরনের প্যান্ট, শার্ট ও জুতার ছবি নিহত আক্তারুজ্জামানের স্ত্রীকে নিয়ে দেখালে তিনি তাঁর স্বামীর পোশাক বলে শনাক্ত করেন।

এর আগে গত ৩০ নভেম্বর নিহত পুলিশ সদস্যের স্ত্রী শাহিনা আক্তার শিমা চৌগাছা থানায় নিখোঁজের বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডি ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, স্ত্রী-সন্তানসহ চৌগাছা শহরের ইছাপুর গ্রামের বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আক্তারুজ্জামান। গত ২৬ নভেম্বর পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে তিনি বাড়িতে আসেন। পরদিন ২৭ নভেম্বর সকালে মহেশপুর যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান।

এর পর থেকে তাঁর আর খোঁজ মেলেনি।

জিডিতে শাহিনা আক্তার শিমা বলেন, ‘তিন দিন ধরে কোথাও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।’ তিনি জানান, আক্তারুজ্জামান তাঁর ব্যবহৃত দুটি ফোন বাসায় রেখে গিয়েছেন। ফলে কোনোভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সীমান্তে বাঘ আতঙ্ক, বিজিবির সতর্কতা জারি

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ০২
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে ভারত থেকে বাঘ আসার খবরে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলেছে বিজিবি।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের প্রধান পিলার ৮৬৮ নম্বরের ৩ নম্বর উপপিলারের একপাশে ভারতীয় কোচবিহার রাজ্যের মাথাভাঙ্গা থানার বালারহাট এলাকা এবং অন্যপাশে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জগৎবেড় ও জোংড়া ইউনিয়ন সীমান্তের মোহাম্মদপুর ককোয়াবাড়ী এলাকা। কাঁটাতারবিহীন ওই সীমান্ত এলাকার ভারতের প্রায় ৪০০ গজ অভ্যন্তরে বালারহাট এলাকায় পার্শ্ববর্তী বন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে একটি বাঘ লোকালয়ে চলে আসে। এ সময় ভারতের স্থানীয় এলাকার বাসিন্দারা বাঘটিকে ধাওয়া দিলে বাঘটি পালিয়ে যায়। সীমান্তে বাঘ আসায় এই শোরগোলের খবর ভারতের ১৫৬ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের শ্রীমুখ ক্যাম্পের বিএসএফের টহল দলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের (তিস্তা-২) নাজিরগোমানী ক্যাম্পের টহল দল জানতে পারে। এ ঘটনায় রাতে হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে সীমান্তবাসীদের সতর্ক থাকতে বলে বিজিবি।

এক সপ্তাহ আগেও ভারতের ওই গ্রামে দুটি বাঘ এসেছিল। স্থানীয় বন বিভাগের লোকজনের সহায়তায় একটি বাঘ আটক করা হয় এবং অপর বাঘটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ককোয়াবাড়ী এলাকার আবেদা বেগম (৫৫) বলেন, ‘বিজিবি মাইকে বলেছে এটা শুনেছি। বাঘ দেখিনি, তবে এতে ভয় লাগে।’

একই এলাকার ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘রাতের বেলা ভারতে চিল্লাচিল্লিতে আমরা খবর পাই বাঘ নাকি বের হয়েছে, পিটাপিটি (ধাওয়া) করেছে। ওই সময় শুনি বাঘ বাংলাদেশেও ঢুকতে পাড়ে। এতে এলাকাবাসী ভয় পেয়ে সতর্ক হয়।’

এ ব্যাপারে নাজিরগোমানী বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) মোবাইল নম্বরে কল দিলে কোনো সাড়া মেলেনি। তবে বিজিবির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, ‘বাঘ তো বাংলাদেশে আসেনি। কেউ দেখেওনি। সীমান্তে এ ব্যাপারে জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ঘটনাটি তিলকে তাল বানানো হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত