Ajker Patrika

পানি না পেয়ে বিষপান, অভিনাথ-রবির পর এবার মুকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
পানি না পেয়ে বিষপান, অভিনাথ-রবির পর এবার মুকুল

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের খেতে পানি না পেয়ে আবারও এক সাঁওতাল কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এই কৃষকের নাম মুকুল সরেন (৩৫)। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম গোপাল সরেন। বর্ষাপাড়া গ্রামের পাশের গ্রামটি নিমঘটু। গত বছরের মার্চে বোরো ধানের জমিতে পানি না পেয়ে এই নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। 

অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের কৃষক মুকুল সরেন। অভিনাথ ও রবির মৃত্যুর পর বিভিন্ন পক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। তবে মুকুল বিষপানের একদিন পর আজ সোমবার থেকে কথা বলতে পারছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি জানিয়েছেন, বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না দেওয়ার কারণেই তিনি বিষপান করেছেন। 

মুকুল সরেন জানান, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে ঘুরছেন। কিন্তু নলকূপ অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাঁকে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার দুপুরে তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাঁকে এক বোতল বিষ দেন এবং এটা বাবুর জমিতেই দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই বিষই খেয়ে নেবেন। তারপরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি। তখন তিনি এই বিষ পান করেন। 

মুকুলের অভিযোগ, সম্প্রতি বৃষ্টির পর গভীর নলকূপ থেকে অন্য সব কৃষকের একাধিকবার পানি নেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাসেম আলী তাঁকেই শুধু পানি দিচ্ছিলেন না। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর পাকস্থলী ধুয়ে বিষ বের করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। 

বিষপানে মারা যাওয়া কৃষক অভিনাথ ও রবির জমি দুই পাশে রেখে সরু একটা রাস্তা চলে গেছে বর্ষাপাড়া গ্রামে। সোমবার দুপুরে বর্ষাপাড়ায় মুকুলের বাড়ি গিয়ে কথা হয় তাঁর বাবা গোপাল সরেনের সঙ্গে। তিনি জানান, পানির জন্য তিনি নিজেও একবার গিয়েছিলেন নলকূপ অপারেটর হাসেম আলীর কাছে। কিন্তু হাসেম তাঁকেও পানি দেননি। রোববার দুপুরে খবর পান, বিষ খেয়ে তাঁর ছেলে রাস্তার মোড়ে পড়ে আছে। তারপর তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। শুনেছেন, পানি না পাওয়ার কারণে তাঁর ছেলে বিষপান করেন। 

বর্ষাপাড়া থেকে অল্প একটু দূরে ঈশ্বরীপুর গ্রামে দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়। ইউপি কার্যালয়ের সামনেই বিএমডিএর গভীর নলকূপ। ইউপি চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল জানান, তিনি শুনেছেন যে রোববার দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আর আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তারপর আসলেই বিষপান করেছেন কিনা তা তিনি জানেন না। 

চেয়ারম্যান জানান, এবার বোরো চাষ করে মুকুল দুই দিন তাঁর কাছে গিয়েছেন। তিনি পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। একবার ইউপির একজন সদস্যকে তাঁর জমি দেখতে পাঠিয়েছিলেন। তিনি দেখে এসে বলেছেন যে, জমিতে কয়েক দিন পরে পানি দিলেও চলবে। 

মুকুলের বিষপানের বিষয়ে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, ‘এই নলকূপের অধীনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কৃষক আছে। অনেক সময় তারা দেশীয় মদ পান করে জমিতে সেচ দিতে আসেন। মদ্যপ অবস্থায় পানি দিতে গেলে চেম্বারে উঠে তার পড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা আছে। পড়ে মারা গেলে এর দায়ও নিতে হবে। তাই নলকূপ পরিচালনা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কোনো কৃষক মদ্যপ অবস্থায় গেলে তাকে পানি দেওয়া যাবে না। এ জন্য মদপান করে আসার কারণে মুকুলকেও দুই দিন পানি দেওয়া হয়নি।’ 

হাসেম আলী বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন সবাই এসেছে এক সঙ্গে। আমার ডিপের মুখ একটা, সবাইকে তো এক সঙ্গে দিতে পারব না। গতকাল মুকুল মনে হয় চুয়ানি আর গাঁজা খেয়ে এসেছিল। এসে বলছে, ‘‘পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাব।’ ’ তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নিল। আমি বললাম, পানি দিচ্ছি, তুই জমিতে যা। কিন্তু সে বলছে, ‘‘তুই আমার জমিতে গিয়ে দে।’ ’ তারপর সে চলে গেল। বিষ খেয়েছে কিনা জানি না।’ 

এই গভীর নলকূপটি সব সময় চললে ২৫০ বিঘা বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে পারে। গত বছর চাষ হয়েছিল এর চেয়েও বেশি জমি। গত বছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত লম্বা সময় কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ। এবার তিনি ২৫০ বিঘা জমিকে চাষের আওতায় এনেছেন বলে জানিয়েছেন। তারপরও পানির জন্য কৃষকের বিষপানের ঘটনা ঘটল। 

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, ‘বিষ এত সস্তা নাকি? আবার বিষ খেয়েছে কেন? গত বছরের ঘটনার পর তো ওই ডিপের অপারেটরকে বাদ দিলাম। নতুন অপারেটর নিয়োগ দিলাম। আবার কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল? আমি হাসপাতালে গিয়ে এ ব্যাপারে কৃষক মুকুল সরেনের সঙ্গে কথা বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠছে মরা মাছ, ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিবির পুকুরে ভাসছে মরা মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী বিবির পুকুরে ভেসে উঠেছে বিভিন্ন জাতের মরা মাছ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পুকুরটিতে এই মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, প্রায়ই পুকুরটিতে মাছ মরে ভেসে ওঠে। এতে চারপাশে পচা-গলা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। পুকুরপাড় দিয়ে নাক চেপে চলাচল করতে হয়। পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, বাণিজ্যিকভাবে পুকুরটিতে মাছ চাষ করায় বিভিন্ন সময় মাছ মরার ঘটনা ঘটছে। এতে পুকুরের পানিতে দূষণ ঘটছে। দুর্গন্ধে চারপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিবির পুকুরের সঙ্গে অতীতে কীর্তনখোলা নদীর সংযোগ ছিল। বর্তমানে নদী থেকে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকাসহ ময়লা ফেলার কারণে পানি নষ্ট হয়ে গেছে। নীল রং ধারণ করা পানিতে একধরনের স্তর পড়ে গেছে।

জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) তত্ত্বাবধানে থাকা বিবির পুকুরটি ইজারা নিয়ে মাছচাষিরা বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করেন। বিভিন্ন সময় সেই মাছ মরে পচে ভেসে উঠে। এতে দুর্গন্ধে পুকুরপাড়ে আসা বিনোদনপ্রেমী ও পথচারীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, পুকুরপাড়ে এসে মরা মাছের গন্ধে দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। দ্রুত মরা মাছ অপসারণ করে পুকুরটির পানিদূষণ রোধে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশালের সমন্বয়ক রফিকুল আলম বলেন, নগরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটে বিবির পুকুরটির অবস্থান। সেখানে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষ করায় নানা সময় মাছ মরে ভেসে উঠছে। এতে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। হয়তো পুকুরের পানির মান খারাপ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশনকে উচিত হবে, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশালের পরিদর্শক রকিব উদ্দিন বলেন, বিবির পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পানির মান দেখতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং নদীর পানির মানমাত্রা পরীক্ষা করেন। বিবির পুকুরের পরিস্থিতি পরিবেশ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন, মরা মাছ দ্রুত অপসারণের জন্য ইজারাদারকে বলা হচ্ছে। যদিও তাঁরা পুকুরের পানি দূষণ ঠেকাতে কিছু অংশ জাল দিয়ে আটকে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিবির পুকুর বরিশাল নগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়। উনিশ শতকে জনসাধারণের জলকষ্ট দূর করতে জিন্নাত বিবি নামে এক মুসলিম নারীর উদ্যোগে পুকুরটি খনন করা হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই পুকুরটি সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এবং এটি বরিশাল নগরের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এখন আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঋণমুক্তির স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন সিয়াম, নিভে গেলেন হাতবোমায়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত
মগবাজার ককটেল বিস্ফোরণে নিহত সিয়াম মজুমদার (২১)। ছবি: সংগৃহীত

পরিবারের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ছোটবেলা থেকেই চেষ্টা করেছেন সিয়াম মজুমদার (২১)। তাই চার বছর আগে ঋণগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে খুলনা থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। নিউ ইস্কাটনের একটি মোটরকার ডেকোরেশন দোকানে কাজ করে পরিবারকে সহায়তাও করতেন তিনি। ঋণ পরিশোধের পর দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।

কিন্তু গতকাল বুধবার সন্ধ্যার পর মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে ছোড়া ককটেলের বিস্ফোরণে সিয়ামের সেই স্বপ্ন থেমে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ককটেলটি ওপর থেকে এসে তাঁর মাথায় লাগে।

সিয়ামের পরিবার জানায়, ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করেন তাঁর বাবা আলী আকবর মজুমদার। মা সিজু বেগম বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ নেন। ছোট ভাই সেজান মজুমদারও ইস্কাটন এলাকায় একটি গাড়ি ডেকোরেশনের দোকানে কাজ করেন। পরিবারের সবাই মিলে চেষ্টা করছিলেন ঋণমুক্ত হওয়ার।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইস্কাটনের দুই হাজার গলির ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, শোকে ভেঙে পড়েছেন সিয়ামের মা সিজু বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ঢাকায় এসে তাঁদের সব শেষ হয়ে গেছে। ছেলের হত্যার সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

ছোট ভাই সেজান মজুমদার বলেন, পরিবারের আর্থিক সংকট কাটিয়ে ভাই বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ এই মৃত্যু পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ছেলের মরদেহ নিতে গিয়ে বাবা আলী আকবর মজুমদার বলেন, ভাগ্য বদলাতে ঢাকায় এসে ছেলেকে হারাতে হবে—এমনটা জানলে তিনি কখনোই ঢাকায় আসতেন না।

ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টা ১০ মিনিটে মগবাজার ফ্লাইওভার থেকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীদের ছোড়া বিস্ফোরকদ্রব্যের আঘাতে সিয়াম মজুমদার নিহত হন। ঘটনার সময় তিনি মগবাজার-নিউ ইস্কাটন সড়কে কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

ঘটনাস্থলের চা-দোকানি মো. ফারুক আজ বিকেলে বলেন, চা বানানোর সময় বিকট শব্দ হয়। পরে দেখা যায়, সিয়াম মাটিতে পড়ে আছেন, মাথা থেকে রক্ত ঝরছে।

এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা হাতিরঝিল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাস্টার্সের সনদ জাল: কলেজের সভাপতির পদ হারালেন সবুজ খাঁন

ভোলা প্রতিনিধি
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত
মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। ছবি: সংগৃহীত

‎মাস্টার্সের সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সবুজ খাঁনের সভাপতির পদ বাতিল করে নতুন সভাপতি মনোনয়নের নির্দেশ দিয়েছে।‎

‎মো. সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন দক্ষিণ আইচা থানাধীন চরমানিকা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. আলী মিয়ার ছেলে।‎

স্থানীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, সবুজ খাঁন চলতি বছরের ২০ এপ্রিল ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত মাস্টার্স ডিগ্রির সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দক্ষিণ আইচা কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব েনন। তবে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিলে গত ১ নভেম্বর জনৈক ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ সনদ যাচাই কার্যক্রম শুরু করে।‎

‎সূত্র আরও জানায়, যাচাই শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. এ কে এম শামসুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সবুজ খাঁনের দাখিল করা সনদে কোনো ক্রমিক নম্বর নেই, কোর্স কোডে অসংগতি রয়েছে এবং স্বাক্ষর ও তারিখেও গরমিল পাওয়া গেছে। এসব কারণে সনদ দুটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।‎

‎বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে তা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আসে। পরে গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে কলেজ পরিদর্শক মো. আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার স্বাক্ষরিত এক লিখিত নির্দেশনায় দক্ষিণ আইচা কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করা হয়। সেই নির্দেশনায় বলা হয়, মো. সিরাজুল ইসলামের মাস্টার্স সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর সভাপতির দায়িত্ব আর বৈধ নয়। ফলে শূন্য ঘোষিত পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য মাস্টার্স ডিগ্রিধারী যোগ্য তিনজন প্রার্থীর নাম শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।‎

‎এই আদেশ প্রকাশের পর কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।‎

‎কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতির পদ থেকে সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁনের অব্যাহতিপত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেইলে পাওয়ার কথা স্বীকার করে দক্ষিণ আইচা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কলেজের সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সবুজ খাঁন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন একটি কথা শুনেছি। এখনো অফিশিয়ালি কোনো চিঠি পাইনি। তবে আমি এর প্রতিবাদ করব। প্রয়োজনে আইনি লড়াই করব।’ তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলেও জানান সবুজ খাঁন।

সবুজ খাঁন নিজেকে থানা বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও দলের কোনো সাংগঠনিক পদে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেক ডিজঅনারের মামলা: ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কয়েদির মৃত্যু

ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফরিদপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক কয়েদি মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

ওই কয়েদির নাম বিমল কুমার দাস (৬২)। কয়েদি নম্বর ২৫২৫। তিনি মাদারীপুর সদর উপজেলার কদমতলী আমিরাবাদ গ্রামের গৌরাঙ্গ চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন।

ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে সুরতহাল করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুরের জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, একটি চেক ডিজঅনার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কারাগারে সাজা ভোগ করছিলেন। তিনি মাদারীপুর কারাগারে ছিলেন। ওই হাজতি ডায়াবেটিসসহ বয়সের বিভিন্ন রোগে  ভুগছিলেন। মাদারীপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ২৩ ডিসেম্বর তাঁকে মাদারীপুর কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে আনা হয়। ফরিদপুরে আসামাত্রই তাঁকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হয়।

জেল সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, আগামীকাল শুক্রবার (আজ) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত