Ajker Patrika

দুই কৃষকের আত্মহত্যা: তদন্ত কমিটির কাছে যা বললেন স্থানীয়রা

রাজশাহী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২২, ২২: ৪৫
দুই কৃষকের আত্মহত্যা: তদন্ত কমিটির কাছে যা বললেন স্থানীয়রা

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সরেজমিনে ঘটনা তদন্ত করেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তদন্ত কমিটির সদস্যরা গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর ও নিমঘুটু গ্রামে ছিলেন। গত রোববার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তাসনিম জেবিন বিনতে শেখ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে দেন। 

কমিটির আহ্বায়ক কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সার ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং) আবু জুবাইর হোসেন বাবলু। কমিটিতে সদস্য হিসেবে নাটোর বিএডিসির (ক্ষুদ্রসেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন আছেন। দুই কৃষকের আত্মহত্যার জন্য বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উঠলেও তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে বিএমডিএ’রই নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী সমশের আলীকে। 

এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমিটির সদস্যরা প্রথমে বিএমডিএ’র গভীর নলকূপটি পরিদর্শন করেন। পরে তাঁরা দেওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে বসে কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। ইউপি কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে অভিযুক্ত নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের দোতলা বাড়ি। এখানে আসার পর তদন্ত কমিটির কাছে সবাই ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষেই তদন্ত কমিটির কাছে সাফাই গান। 

এরপর তদন্ত কমিটির সদস্যরা মৃত কৃষক অভিনাথ মারান্ডি এবং তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডির জমি পরিদর্শনে যান। এ সময় সাখাওয়াতের চাচাতো ভাই শিহাব আলী তদন্ত কমিটিকে দুই কৃষকের জমি থেকে ঘাস তুলে দেখান। তিনি বলেন, অভিনাথ ও রবির জমির দিকে খেয়ালই ছিল না। তবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক কৃষক বললেন, জমিতে পানি না থাকলে ঘাস তোলা যায় না। পানি না দেওয়ার কারণে রবি ও অভিনাথ নিজেদের জমির আগাছা পরিষ্কার করতে পারেননি। 

পরে তদন্ত কমিটির সদস্যরা অভিনাথের বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁর স্ত্রী রোজিনা হেমব্রমকে ডাকেন। তিনি তদন্ত কমিটির সঙ্গে কোনো কথা বলতে চান না বলে প্রথমে জানান। আঁচলে মুখ ঢেকে তিনি কাঁদতে থাকেন। পরে বললেন, মৃত্যুর আগে তাঁর স্বামী তাঁকে বলেছেন যে পানি না পাওয়ার কারণে তিনি বিষপান করেছেন। 

ঘটনার বর্ণনা দিলেন অভিনাথের ভাবি পার্বতী সরেন। তিনি বলেন, সকালে বাড়ির নারীরা আলু তোলার কাজে বের হচ্ছিলেন। তখন রবি ও অভিনাথ তাদের জানান, ১০-১২ দিন ঘুরেও তাঁরা পানি পাচ্ছেন না। তবে আজ (২১ মার্চ) তাঁদের জমিতে পানি দেওয়ার কথা আছে। তাঁরা পানি দিতে যাবেন। বিকেলে তাঁরা যখন আলু তুলছিলেন তখন শোনেন যে পানি না দেওয়ার কারণে রবি ও অভিনাথ বিষপান করেছেন। অভিনাথের ভাবি বলেন, পানির জন্য অপারেটর ঘোরান। সে কারণে দুঃখে দুজন বিষ খান। 

স্থানীয় ভ্যানচালক বাপ্পী মারান্ডি তদন্ত কমিটির সামনে বললেন, ঘটনার দিন তিনি ভ্যান নিয়ে গভীর নলকূপের সামনে দিয়ে আসছিলেন। তখন অপারেটর সাখাওয়াত তাঁকে থামিয়ে বলেন, অভিনাথ বিষ খেয়েছে। তাঁকে বাড়ি নিতে হবে। তারপর দুজনে অভিনাথকে ভ্যানে তুলে বাড়ির সামনের রাস্তায় এনে নামিয়ে দেন। 

এরপর তিনি ফুলবাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথে দেখেন রবিকে অসুস্থ অবস্থায় ভ্যানে আনা হচ্ছে। রবির মা তাঁকে জানান, রবিও বিষ খেয়েছে। তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। ডাক্তার না থাকায় বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। পরে গ্রাম্য ওই চিকিৎসক বাড়িতে এসে রবির পাকস্থলী ওয়াশ করেন। এরপর অভিনাথের ওয়াশ শুরু হলে তিনি মারা যান। 

অভিনাথের চাচাতো ভাই মাইকেল মারান্ডি কমিটিকে জানান, তাঁরও দুই বিঘা বর্গা নেওয়া জমিতে ধান আছে। পানি পাওয়া যায় না। পানির অভাবে তার একটা খেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়েছিল। অপারেটর সাখাওয়াত সিরিয়ালের কথা বললেও সে অনুযায়ী পানি দিতেন না। এই পানির জন্যই অভিনাথ ও রবি বিষপান করেছেন। 

রবি ও অভিনাথের প্রতিবেশী মহেষন মুর্মু বললেন, তাঁর তিন বিঘা জমিতে ধান আছে। শেষবার পানি পেয়েছেন ১২ দিন পর। তিনি অভিযোগ করেন, পানি দিতে সাখাওয়াত স্বজনপ্রীতি করতেন। ওই মাঠের অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র জাতিসত্তার। তাঁদের পানি পরে দেওয়া হতো। 

মহেষন বলেন, ‘মাঠে তেলা মাথায় তেল দেওয়া হয়। টেলিফোনে কাজ হয়। বড় কেউ কারও জন্য ফোন করলে তাকে আগে পানি দেওয়া হতো।’ 

রবি মারান্ডির ভাই সুশীল মারান্ডি জানালেন, ঘটনার দিন তিনি নাটোরে কর্মক্ষেত্রে ছিলেন। মায়ের কাছে শুনেছেন যে, রবি বিষপান করে একাই বাড়ি আসেন। তারপর মাকে বলেন, ‘মা আমি পানি না পাওয়ার কারণে বিষ খেয়েছি। মা, আমি আর বাঁচব না।’ তারা পানির জন্য হাহাকারের কথা শোনালেও স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার নিজের লিখিত জবানবন্দিতে লিখেছেন, ‘জমিতে কীটনাশক দেওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। এখন আর পানিরও তেমন দরকার নেই।’ 

এর আগে ঈশ্বরীপুরে ইউপি কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে বসে যখন তদন্ত কমিটি জবানবন্দি নিচ্ছিল, তখন স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি দাবি করেন, পানি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কৃষকেরা দেশীয় মদ পান করেন। এ কারণেই হয়তো তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। সাখাওয়াতের দোকানের ভাড়াটিয়াকে এমন মন্তব্য করতে দেখা গেছে।   ঠিকমতো পানি না দেওয়ার কারণে সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে ২০২০ ও ২০২১ সালে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে কৃষকেরা লিখিত অভিযোগ করলেও দেওপাড়া ইউপির স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য সোহেল রানা ও সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য হাসমত আরাও জবানবন্দি দেন যে এলাকায় পানির কোনো  সমস্যা নেই। কোনো কৃষক তাঁদের কাছে অভিযোগ করেননি। 

তদন্ত কমিটির প্রধান আবু জুবাইর হোসেন বাবলু এই গভীর নলকূপের জমি চাষের সক্ষমতা জানতে চান। তখন বিএমডিএ’র স্থানীয় জোনের সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান জানান, সক্ষমতা ২০০ বিঘা। চাষ হয়েছে ১৫০ বিঘা। অথচ দুই কৃষকের মৃত্যুর পর বিএমডিএ’র গঠন করা তদন্ত কমিটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাজিরুল ইসলাম গত রোববার জানান, জমি চাষ হয়েছে ২৬০ বিঘা। 

নিমঘুটু থেকে ফেরার সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান আবু জুবাইর হোসেন বাবলু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আমার হাতে সাত দিন সময় আছে। দুজনের মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী হলে অবশ্যই সেটি আসবে।’

গত ২১ মার্চ রবি ও অভিনাথ বিষপান করেন। সেদিনই বাড়িতে অভিনাথের মৃত্যু হয়। দুদিন পর হাসপাতালে মারা যান রবি। মৃত্যুসনদে বলা হয়েছে বিষক্রিয়ায় রবির মৃত্যু হয়েছে। দুই কৃষকের মরদেহের ময়নাতদন্ত হলেও প্রতিবেদন এখনো প্রস্তুত হয়নি। তাদের মৃত্যুর জন্য গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতকে দায়ী করে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দুটি আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়েছে। প্রথম মামলাটি হওয়ার পরই সাখাওয়াত পালিয়েছেন। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে চোর ধরতে গিয়ে পরিত্যক্ত ঘরে মিলল নিখোঁজ ব্যবসায়ীর লাশ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি  
লাশ উদ্ধারের পর নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: আজকের পত্রিকা
লাশ উদ্ধারের পর নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে নিখোঁজের আড়াই মাস পর একটি পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর থেকে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের পারুলী নদীর ওপর নির্মিত পরিত্যক্ত বেইলি ব্রিজের নিচে থাকা ওই ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

নিহত ব্যবসায়ীর নাম মো. আসাদুজ্জামান সরকার ওরফে আসাদ (৫০)। তিনি রাজাবাড়ি ইউনিয়নের মিটালু গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং রাজাবাড়ি বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকান পরিচালনা করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরের দিকে রাজাবাড়ি বাজারে চোর প্রবেশ করেছে—এমন খবরে বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন চোরকে ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে ব্রিজের নিচে পরিত্যক্ত টিনশেড ঘরে চোর খুঁজতে গিয়ে একটি মরদেহ দেখতে পান তাঁরা। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

নিহতের ছেলে জনি সরকার জানান, চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাঁর বাবা বাড়ি থেকে দোকানের উদ্দেশে বের হন। রাতে বাড়ি না ফেরায় পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এরপর ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ করা হলেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

জনি সরকার বলেন, ‘আজ দুপুরে জানতে পারি বাজারের পাশে একটি পরিত্যক্ত ঘরে মরদেহ পড়ে আছে। এসে বাবার পরনের গেঞ্জি, লুঙ্গি ও দাঁড়ি দেখে মরদেহ শনাক্ত করি। কীভাবে বাবার মৃত্যু হয়েছে বা কে জড়িত—কিছুই বুঝতে পারছি না।’

রাজাবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাজারে চোর ঢুকেছে বলে নিরাপত্তা প্রহরীরা চিৎকার দেন। তখন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজন ধাওয়া দিয়ে পরিত্যক্ত ঘরে ঢুকে মরদেহ দেখতে পান।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সঞ্জয় সাহা বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে ভারতীয় হাইকমিশন ও মিডিয়া ভবনে নিরাপত্তা জোরদার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর জাকির হোসেন সড়কের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান, নিরাপত্তাচৌকি। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রাম নগরীর জাকির হোসেন সড়কের ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান, নিরাপত্তাচৌকি। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল রাতে চট্টগ্রামে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার পর এলাকাটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সেখানে সেনাবাহিনীর সাতটি গাড়ি ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। একই সঙ্গে মিডিয়াপাড়া হিসেবে পরিচিত নগরের কাজীর দেউড়িতে একটি ভবনসহ প্রেসক্লাবের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে খুলশীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অফিস ও নগরের কাজীর দেউড়ি, জামালখানসহ আশপাশে এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ভারতীয় হাইকমিশন ও বাসভবনের সামনের এক অংশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে সামান্য দূরে পুলিশের একটি দল সন্দেহজনক গাড়িগুলোকে থামিয়ে তল্লাশি করছে।

এদিকে মিডিয়া ভবনখ্যাত নগরের কাজীর দেউড়িতে অবস্থিত কর্ণফুলী টাওয়ারের সামনেসহ আশপাশে সকাল থেকে পুলিশকে নিরাপত্তা দিতে দেখা গেছে। ওই ভবনে ডেইলি স্টার, আজকের পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টিভি চ্যানেল রয়েছে। ঢাকায় ভাঙচুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার সাংবাদিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা গেছে।

এর আগ বৃহস্পতিবার রাতে ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ চলাকালে খুলশীতে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন কার্যালয় লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ওই ঘটনায় ১২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, একটি পক্ষ বিক্ষোভ শেষ করে চলে যাওয়ার প্রায় পাঁচ মিনিট পর হঠাৎ ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল মিছিল নিয়ে আবার ওই কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর তারা কার্যালয় লক্ষ্য করে বাইরে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে কার্যালয়ের ভেতরে দায়িত্বে থাকা তিন পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘কোম্পানির লোকেরাই আমার ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
হত্যার শিকার দিপু চন্দ্র দাসের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
হত্যার শিকার দিপু চন্দ্র দাসের স্বজনেরা আহাজারি করছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার শিকার দিপু চন্দ্র দাসের (২৮) পরিবার দাবি করেছে, কোম্পানির লোকজনই তাঁকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।

নিহত দিপু চন্দ্র দাসের বোন চম্পা দাস বিলাপ করে বলেন, ‘আমার ভাই বিএ পাস। সে সাধারণ বাটন মোবাইল ব্যবহার করত। ধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। নবীকে নিয়ে কটূক্তি করার মতো মানুষ সে নয়। উৎপাদন বাড়ানো নিয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল—এমন কথা শুনেছি। সেই কারণেই হয়তো তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, কোম্পানির লোকজন চাইলে তাঁকে জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের কাছে দিতে পারতেন। তাহলে এমন নির্মম মৃত্যু হতো না।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকায় একটি অভিযোগে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর মরদেহে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অর্ধদগ্ধ মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

নিহত দিপু চন্দ্র দাস জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়াকান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেডে কাজ করছিলেন।

কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড ফিরোজ মিয়া দাবি করেন, দিপু চন্দ্র দাস ধর্মীয় বিষয়ে কটূক্তি করেছেন—এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তিনি ক্ষমা না চাওয়ায় বিষয়টি কোম্পানির ভেতরে ও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বাইরের লোকজন কারখানার গেটের সামনে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তাঁকে জনতার হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।

এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করে এবং মরদেহ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে এ বিষয়ে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে গেটে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি।

নিহতের বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমার ছেলে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করলে দেশে আইন আছে, আইনের মাধ্যমেই বিচার হতো। আমরা গরিব বলে ছেলের জীবন রক্ষা করতে পারিনি।’

নিহতের স্ত্রী মেঘনা রানী বলেন, ‘আমার একমাত্র সন্তান আজ বাবা-হারা। অভাবের সংসার নিয়ে কোথায় যাব, বুঝতে পারছি না। এই হত্যার বিচার চাই।’

ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির হত্যাকাণ্ডকে ‘ব্যবহার করে’ উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৮
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ৭ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। ফাইল ছবি
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ৭ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। ফাইল ছবি

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে শোক ও তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। একই সঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের নেতার হত্যাকারীদের ও তাদের পেছনের শক্তির বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে ৭ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করা এই জোট।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিয়ে গঠিত জোটটি আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, ওসমান হাদির শোকসন্তপ্ত পরিবার ও সারা দেশে তাঁর সহযোদ্ধাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। একই সঙ্গে ওসমান হাদির ওপর ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনায় এবং সার্বিকভাবে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসন, গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট দেশের বিভিন্ন স্থানে এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করে চলমান উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

জোটের শীর্ষ নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত কাইয়ূম ও মজিবুর রহমান মঞ্জু যৌথ বিবৃতিতে বলেন, পরাজিত ও পলাতক হাসিনার খুনি-সন্ত্রাসী, ভারতীয় আগ্রাসনবাদী ও দেশের মধ্যে লুকিয়ে থাকা দোসরেরা মিলে দেশে চরম অরাজকতা তৈরি করতে চান। দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তারা তৈরি করতে চায়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ বানচাল করে এ দেশে অগণতান্ত্রিক তৃতীয় শক্তির উত্থান তারা করতে চায়।

তাদেরই উসকানিতে গতকাল রাতে একাধিক পত্রিকা অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কূটনীতিকের বাসভবনে হামলা হয়েছে; দেশবরেণ্য সাংবাদিক ও জুলাইয়ের অন্যতম পক্ষশক্তি নূরুল কবীরকে নাজেহাল করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান নেতারা।

বিবৃতিতে জোটের শীর্ষ তিন নেতা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে শোকসন্তপ্ত জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান। খুনি, সন্ত্রাসী ও দেশবিরোধী শক্তির উসকানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অবস্থান করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আহ্বান জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত