Ajker Patrika

‘গালাগালি থেকে বুলিং, ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি—কিছুই বাকি নাই’

তুহিন কান্তি দাস, ঢাকা
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ৩৬
‘গালাগালি থেকে বুলিং, ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি—কিছুই বাকি নাই’

পছন্দ অনুযায়ী মানুষ নানা ধরনের পোশাক পরে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থাভেদে এই পছন্দের তারতম্য দেখা যায়। কারও পছন্দ চোখধাঁধানো ঝকঝকে রঙিন পোশাক, আবার কারও পছন্দ সাদামাটা আরামদায়ক পোশাক।

সম্প্রতি নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাকের কারণে এক তরুণীর হেনস্তার ঘটনা গড়াল আদালত পর্যন্ত। এরপর আদালতের মন্তব্য উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারীর পোশাক নির্বাচন বিষয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ালেন একদল শিক্ষার্থী। দেশীয় মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির বদলে বিদেশি ছোট কাপড়ের পোশাকে পুরুষকে প্রলুব্ধ করার (সিডিউস) তথাকথিত আধুনিকতাকে সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসী (কালচারাল টেররিস্ট) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় ওই কর্মসূচিতে। আর এই অবস্থানের পাল্টা হিসেবে কয়েক দিনের মাথায় রাজু ভাস্কর্যেই আবার জড়ো হন আরেক দল ঢাবি শিক্ষার্থী, যাঁরা সব ধরনের পোশাক, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরই বহমানতা চান। নারী স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় দলভুক্ত শিক্ষার্থীরা ‘যেমন খুশি তেমন পরো’ শিরোনামে পোশাকের বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানিয়ে বিভিন্ন রকম পোশাকে সমবেত হয়েছিলেন সেদিন।

এ দুই ঘটনাতেই সমালোচনা হয় ব্যাপকভাবে। তবে প্রথম ঘটনায় সমালোচনা হলেও তা সীমাবদ্ধ ছিল মূলত সোশ্যাল মিডিয়াতেই। কিন্তু দ্বিতীয় ঘটনায় এই সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ছাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সামাজিক-পারিবারিক পরিসরে হেনস্তায় রূপ নিয়েছে। আবার কারও ক্ষেত্রে মৃত্যুর হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে এমনই কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। সেদিনের প্রতিবাদে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থীর বর্ণনায় উঠে এসেছে তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আর সেই আতঙ্কের বিবরণ।

তাবাসসুম নুসরাত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের বক্তব্যকে না বুঝেই বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে আক্রমণ করছে। আমার বাবা শিক্ষক। সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের কর্মীরা যারা আমার বাবার ছাত্র, তারা বাবার কাছে গিয়ে বিচার দিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী থেকে জুনিয়র-সিনিয়র শিক্ষার্থীদের ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন গ্রুপে গালাগালি থেকে পিঞ্চ বুলিং, কিছুই বাকি নাই। এমনকি যে মেয়ে শিক্ষার্থীরা, যারা নিজেরা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরে থাকে, তাঁরাও সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য বুলিং করছে। যে মেয়েটা ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিল, সে তো সবাইকে এভাবে শাড়ি পরার কথা বলে নাই। সে বলতে চেয়েছে, এই রকম পছন্দমতো পোশাকের জন্য যেন কাউকে লাঞ্ছনা করা না হয়।

ফারিয়া ইসলাম, শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফরমেশন স্টাডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আমি ফেসবুক বন্ধ রেখেছি। কারও কমেন্ট-মেসেজের রিপ্লাই দিচ্ছি না। বাসায় খুব চাপ দিচ্ছে মানসিকভাবে। একটা ওয়াজে আমার ছবি ব্যবহার করে বাজে প্রচার হয়েছে। যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, এইটার জন্য খুব বাজে অবস্থা বাসায়। পারিবারিকভাবে যাঁরা মানসিকভাবে সমর্থন দিতেন, তাঁরাও এখন গায়ে হাত তুলতে এগিয়ে আসছে। ফেসবুকে লেখালেখি করে এই রকম এক মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

মোস্তাফিজুর রহমান প্রত্যয়, এসএসসি শিক্ষার্থী
আমি লাইফ রিস্কের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। যেকোনো সময় আমার ওপর আঘাত আসতে পারে। এলাকার লোকজন আমাকে খুঁজছে। বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সবাই বুঝতে পারছে যে, আমার জীবন ঝুঁকিতে আছে। সেদিন আমি আপুদের দেখে আরেকটা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে যাই। একজন সাংবাদিক এসে প্রশ্ন করতে শুরু করল। কী যে উদ্ভট উদ্ভট সব প্রশ্ন, কী বলব! আর সেই বক্তব্যগুলো থেকে কেটে সাংবাদিক ভাইয়েরা কোনো অনুমতি না নিয়ে বিকৃতভাবে ব্যবহার করে ভিডিও ছাইড়া দিসেন। আর ছাড়ার সাথে সাথে সারা বাংলাদেশে ছড়াইয়া গেল, আর আমার এখন জীবন নিয়ে সংশয়। পরিবার আমার সাথে আছে, এটুকুই ভরসা।

অন্তরা শারমিন, সংগঠক, ‘যেমন খুশি তেমন পরো’ ফেসবুক ইভেন্ট
আমার মেসেঞ্জারে প্রতিনিয়ত থ্রেট আসছে। আমাকে নাস্তিক বলে গালাগালি করছে। আমার মনে হয় সমস্যাটা আসলে কে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরছে, কে সালোয়ার-কামিজ পরছে—ওইখানে না। সমস্যাটা আসলে যে মেয়েটা শাড়ি পরে, টিপ পরে, চোখে কাজল দেয়—সেই সব মেয়েই সব সময় এক্সক্লুসিভ টার্গেটে থাকে। দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিসচেতন নারীরা সব সময়ই পুরুষদের আক্রমণের শিকার এখানে।

তাসনিম হালিম মীম, সংগঠক, ‘যেমন খুশি তেমন পরো’ ফেসবুক ইভেন্ট
আমরা শুধু বলেছি, এইখানে যে মেয়েটা জিনস-টপস পরে আসবে, সে-ও হেনস্তা (বুলিড) হতে পারবে না, যে হিজাব পরে আসবে সে-ও হেনস্তার শিকার হতে পারবে না। মেসেজটা কিন্তু খুব পরিষ্কার। আমাদের এই প্রতিবাদটা কিন্তু প্রতিক্রিয়ামূলক। প্রথমে যারা দাঁড়াল তারা বলল—যারা পশ্চিমা সংস্কৃতি নিয়ে আসতে চায়, তারা কালচারাল সন্ত্রাসী। তারা দেশীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পোশাক চাইছে। কিন্তু আমরা যখন দেশীয় সংস্কৃতির পোশাক নিয়ে এলাম, তখন তারা সেখানে হামলে পড়ল।

হুমায়ুন আজম রেওয়াজ, সংস্কৃতিকর্মী
এত জঘন্য লেভেলে যাবে, ভাবি নাই। ধরে ধরে পরিবারের কাছে অভিযোগ যাচ্ছে বিকৃতভাবে। এমনিতে ট্রল হবে, সমালোচনা হবে—সে তো জানতাম। কিন্তু এতটা রেপিস্ট ভাবাপন্ন এবং নোংরা আক্রমণের শিকার হব—কল্পনাই করি নাই। ব্যক্তিগতভাবে গালাগালি তো আছেই, অফিস পর্যন্ত বুলিং পৌঁছেছে। সংস্কৃতিকর্মী হিসেবে খুবই হতাশ, নেওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ নিজেদের নিউজের কাটতির জন্য বিকৃতভাবে সংবাদ প্রচার করেছে, যা খুবই দুঃখজনক।

ফাইজা ফাইরুজ রিমঝিম, শিক্ষার্থী
প্রস্তুত ছিলাম যে, বাজে একটা আক্রমণ আসবে। কিন্তু যেভাবে ছবির সঙ্গে ভিডিওর সঙ্গে অশ্লীল ক্লিপ জুড়ে দিয়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজনের কাছে পাঠানো হচ্ছে, এত বিচ্ছিরিভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে যে, ব্যাপারটা খুব ভয়ংকর হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় চা খাচ্ছিলাম একটা দোকানে, সেখান থেকে চেহারা মিলিয়ে কী যে বাজে বাজে কথা বলছিল! আর ইনবক্সে ধর্ষণ ও হত্যার থ্রেট তো আছেই।

পোশাকের বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানিয়ে সেদিন উপস্থিত সবার এক কথা, তাঁদের বক্তব্য বিকৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পোশাকি বিতর্ক যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সীমানা ছাড়িয়ে জীবনের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন ভাবতে হয়—কে কী পোশাক পরবে তা কে নির্ধারণ করবে—সমাজ, কর্তৃপক্ষ নাকি ব্যক্তি নিজে?

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ওসমান হাদির জানাজা: ১০০০ বডি ওর্ন ক্যামেরা পরবেন পুলিশ সদস্যরা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নামাজে জানাজা আজ শনিবার বেলা ২টায় অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত এই জানাজাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জানাজার সময় আধা ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে। এর আগে বেলা আড়াইটায় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তা আজ দুপুর ২টায় নির্ধারিত হয়েছে।

জানাজা উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে জানাজায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ১ হাজারটি বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার করবেন। পুরো এলাকা সিসিটিভি ও গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।

জানাজায় অংশগ্রহণকারীদের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ কিছু নির্দেশনা জারি করা হয়েছে:

ব্যাগ বহন নিষেধ: জানাজায় আসা মুসল্লিদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারী বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ড্রোন ওড়ানো নিষিদ্ধ: নিরাপত্তাঝুঁকি এড়াতে সংসদ ভবন ও এর সংলগ্ন এলাকায় যেকোনো ধরনের ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

ওসমান হাদির জানাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম হতে পারে বিবেচনা করে ট্রাফিক বিভাগ থেকেও যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে পিটিয়ে হত্যা: র‍্যাবের অভিযানে আটক ৭

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৪
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত
দিপু চন্দ্র দাস। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক হিন্দু ধর্মাবলম্বী যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্তসহ সাতজনকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব-১৪)।

আজ শনিবার ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, আটক ব্যক্তিরা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। আটককৃতরা হলেন: মো. লিমন সরকার (১৯), মো. তারেক হোসেন (১৯), মো. মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯), নিজুম উদ্দিন (২০), আলমগীর হোসেন (৩৮), মো. মিরাজ হোসেন আকন (৪৬)।

জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করেছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাবের একাধিক টিম ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা অভিযান চালায়। অভিযানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে এই সাতজনকে আটক করা সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ওই হিন্দু যুবককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল এবং স্থানীয়রা দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। পুলিশ ও র‍্যাব যৌথভাবে তদন্ত শুরু করার পর আজ কয়েকজন অভিযুক্তকে আটক করা হলো।

র‍্যাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আটককৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আনিসুল ইসলামের গ্রামের বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) সভাপতি ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার গুমানমর্দন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রাত ১২টার দিকে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি দল প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসে করে ঘটনাস্থলে আসে। তারা আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাড়িতে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ঘটনার সময় আনিসুল ইসলাম কিংবা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে ছিলেন না।

হামলাকারীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোঁটা ছিল এবং অধিকাংশের মুখে মাস্ক পরা ছিল। তারা ঘরের আসবাব তছনছ করে একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বাড়ির সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কার পুড়ে যায়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে কাজ চলছে। হামলার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য ও জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্তে সব দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাগুরায় বিটিভির মহাপরিচালক ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জোহার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ

মাগুরা প্রতিনিধি 
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
মাগুরা থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরা থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাগুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মহাপরিচালক মাহবুবুল আলম এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জেলা জজ আদালত-সংলগ্ন ডক্টরস মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের পাশে দোতলা ‘জোহা ভবনে’ এই আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।

জোহার ভবন-সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানের মালিক প্রদীপ মণ্ডল এবং ডেকোরেটর ব্যবসায়ীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর কয়েকজন দুই লিটারের অকটেনের বোতল সিমেন্টের ব্যাগের ভেতর ভরে ভবনের পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ করে। পরে তারা মূল ফটক ও জানালার অংশে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। আগুনের শিখা দেখতে পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ভবনটির সব সময় জানালা-দরজা লাগানো থাকে বলে আগুন বেশি দূর ছড়াতে পারেনি। তাঁরা জানান, এই ভবনে একমাত্র কেয়ারটেকার ইনজার আলী বিশ্বাস থাকেন।

এ বিষয়ে কেয়ারটেকার ইনজার আলী জানান, তিনি ঘটনার সময় বাইরে ওষুধ কিনতে গিয়েছিলেন। বাড়িতে এসে দেখেন প্রতিবেশীরা আগুন নেভাচ্ছেন।

মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তপন কুমার বলেন, এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। তদন্ত চলছে। কারা এই ঘটনায় জড়িত, তা খুঁজে দেখা হবে।

এদিকে আজ শনিবার সকালে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম জানান, পুলিশ ওই রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তেলের বোতল, মশালের টুকরাসহ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। তিনি বলেন, কারা এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত, তা শনাক্তে পুলিশের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত