Ajker Patrika

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট যেভাবে যুদ্ধে গড়াল

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ৩৪
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট যেভাবে যুদ্ধে গড়াল

ইউক্রেন সংকট নিয়ে বহু দিন ধরেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। উভয় পক্ষেই হতাহতের খবর জানানো হচ্ছে। রাজধানী কিয়েভ ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ। পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য আগেই তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার সামরিক অভিযান শুরুর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া তাঁর দেশের ‘সামরিক অবকাঠামো’ এবং সীমান্তরক্ষীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। জাতির উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন ভাষণে তিনি সামরিক আইন জারি করার আহ্বান জানান এবং বিজয়ের অঙ্গীকার করেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক প্রত্যেক নাগরিকের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে কিয়েভ। অপরদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ইউক্রেনের বিজয় সন্নিকটে। রুশ বাহিনী সুবিধা করে উঠতে পারছে না। 

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট নিয়ে উত্তেজনা কয়েক মাস ধরেই চলছে। এখানে সাম্প্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি টাইমলাইন তুলে ধরা হলো: 

নভেম্বর, ২০২১ 
স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার সেনাদের একটি নতুন অবকাঠামো। কিয়েভ জানায়, মস্কো ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামসহ ১ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। 

৭ ডিসেম্বর, ২০২১ 
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষীরা দেশটির খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান সীমান্তে টহল দিচ্ছে১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ 
রাশিয়া পশ্চিমের কাছে ব্যাপকভিত্তিক নিরাপত্তার দাবি পেশ করে। এর মধ্যে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে সব সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে এবং সামরিক জোটটি কখনই ইউক্রেন বা অন্য সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করবে না-এমন দাবি রাখা হয়। 

৩ জানুয়ারি, ২০২২ 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র ‘চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে’। সংকট মোকাবিলায় আসন্ন কূটনৈতিক বৈঠকের একটি সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে দুজন ফোনে কথা বলেন। 

১০ জানুয়ারি, ২০২২ 
মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা কূটনৈতিক আলোচনার জন্য জেনেভায় মিলিত হন। কিন্তু বিরোধ অমীমাংসিত রেখেই বৈঠক শেষ হয়। কারণ মস্কো নিরাপত্তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে। জবাবে ওয়াশিংটন বলে, এটি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। 

২৪ জানুয়ারি, ২০২২ 
ন্যাটো জোট তার বাহিনীকে স্ট্যান্ডবাই রেখে আরও জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে। কিছু পশ্চিমা দেশ কিয়েভ থেকে দূতাবাসের ‘অপরিহার্য’ কর্মীদের রেখে বাকিদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ৮ হাজার ৫০০ সেনা প্রস্তুত রাখার ঘোষণা দেয়। 

ইউক্রেনের সেনাসদস্যরা একটি অজানা স্থানে প্রশিক্ষণ গ্রাউন্ডে কৌশলগত মহড়ায় অংশ নিয়েছে২৬ জানুয়ারি, ২০২২ 
ওয়াশিংটন রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবির একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া জানায় করে। মস্কোর উদ্বেগের একটি ‘নীতিগত এবং বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন’ করার বিষয়ে ন্যাটোর ‘খোলা দরজা’ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করা হয়। 

২৭ জানুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেন। চীন তার রাজনৈতিক সমর্থনের পাল্লা রাশিয়ার দিকেই হেলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে বলে, মস্কোর ‘বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’ ‘গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত’। 

USSR-republics২৮ জানুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধান দাবিগুলোর কোনো সুরাহা করা হয়নি। তবে মস্কো আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। জেলেনস্কি পশ্চিমাদের সতর্ক করেন যাতে ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি না হয় যা তাঁর দেশের অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। 

৩১ জানুয়ারি, ২০২২ 
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে ইউক্রেন সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড কাউন্সিলকে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। 

জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররা বারবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে যে, মস্কো আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। মস্কো এটি অস্বীকার করা সত্ত্বেও পশ্চিমারা যুদ্ধের হুমকির ঢাক বাজাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাঁর দেশের নিরাপত্তা দাবি উপেক্ষা করার অভিযোগ করেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি এরই মধ্যে স্পষ্ট যে, রাশিয়ার মৌলিক উদ্বেগগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।’ 

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালানোর জন্য রাশিয়ার ৭০ শতাংশ সামরিক শক্তি প্রস্তুত করা হয়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করে। 

 ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। ম্যারাথন বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া আর ইউক্রেন সংকটকে না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তবে মাখোঁ এবং পুতিন সংকট কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন এ ধরনের খবর পরবর্তীতে অস্বীকার করে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মস্কো এবং প্যারিস কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে না। 

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৈঠক করেন। বৈঠকের ফল শূন্য। একটি উত্তাপহীন সুনসান সংবাদ সম্মেলনে লাভরভ বৈঠকটিকে ‘একজন বোবা এবং বধির ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে মস্কো কঠোর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে বলে সতর্ক করেন ট্রাস। এ প্রসঙ্গে লাভরভ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রাশিয়ার সৈন্য ও অস্ত্র কারও জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। 

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি বেইজিং অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগের কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। 

পেন্টাগন মিত্রদের আশ্বস্ত করতে পোল্যান্ডে অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগেই বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ দেয়। 

 ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন এবং পুতিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ‘বিস্তৃত মানবিক দুর্ভোগের’ কারণ হবে এবং পশ্চিমারা এই সংকটের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অন্য পরিস্থিতির জন্যও তাঁরা সমানভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। 

পুতিন এই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার দাবির প্রতি সন্তোষজনকভাবে সাড়া দেয়নি। ইউক্রেনকে সামরিক জোটে যোগ দিতে দেওয়া হবে না এবং ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে—রাশিয়ার এ দাবির প্রতি পশ্চিমারা উদাসীন। 

পুতিনের শীর্ষ পররাষ্ট্র নীতি সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ‘পরিস্থিতিকে কেবল অযৌক্তিক সাড়া প্রদানের’ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বাইডেন রাশিয়ার ওপর আরোপিত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছেন। পুতিনের সঙ্গে মোটামুটি দীর্ঘ কথোপকথনের সময় এ বিষয়টি ফোকাসে ছিল না। 

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সতর্ক করেন যে, পুতিন প্রতিদিনই ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কিরবি বলেন, ‘সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। দিনে দিনে আরও প্রস্তুত হচ্ছে। তারা সেখানে মহড়া দিচ্ছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, পুতিন সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের কাছে প্রচুর সক্ষমতা এবং বিকল্প পথ রয়েছে।’ 

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেন উত্তেজনা কমাতে নিরাপত্তা ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘আরও কাজ করতে প্রস্তুত’। কিন্তু রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো মেনে নেওয়া পশ্চিমের জন্যই প্রয়োজন বলেও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন তিনি। 

মস্কোতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ একটি ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি রাশিয়ার মূল্যায়নের সঙ্গে একমত যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এড়ানোর একটি সুযোগ এখনো রয়েছে। ‘কূটনৈতিক বিকল্পগুলো এখনো শেষ হয়ে যায়নি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

 ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ন্যাটো বলে, রাশিয়ার পিছু হটার কোনো লক্ষণ নেই। জোটের দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রন্টকে মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে কমান্ডারদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া। 

ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘মন্ত্রীরা মধ্য ও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে নতুন ন্যাটো সম্মুখ সমর দল গঠনের বিবেচনাসহ ন্যাটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করার বিকল্পগুলো আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেন সীমান্তের কাছ থেকে রুশ সেনা সরিয়ে নেওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি। যদিও মস্কো দাবি করছে, সেনা প্রত্যাহার চলছে। 

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন এবং ব্লিঙ্কেন সতর্ক করেন, সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারে স্পষ্ট ব্যর্থতার মধ্যে ইউক্রেন আক্রমণের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে রাশিয়া। এর মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া একটি প্রক্সি সামরিক অভিযান চালাতে পারে। 

ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইউক্রেনের সংঘাতময় পূর্বাঞ্চলের গোলাবর্ষণের প্রতিবেদনের পরে এটিকেই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারে।

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন বলেন, তিনি নিশ্চিত পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মস্কোকে সতর্ক করেন যে, এটি হবে বিপর্যয়কর। এরপরও কূটনীতির দরজা খোলা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। যুদ্ধ শুরু না হওয়া পর্যন্ত ‘কূটনীতি সর্বদাই একটি সম্ভাবনা’, সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বাইডেন। 

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী নেতারা সাধারণ সংহতি ঘোষণা করেন। উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা জোরালো হয়। 

রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহী এবং ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের খবর আসার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। কিয়েভ বলে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলিতে দুইজন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। 

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল, দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর সেখানে ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য রুশ সেনাদের নির্দেশ দেন। পুতিনের ঘোষণা মস্কো-সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পথ প্রশস্ত করে। 

 ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ‘প্রথম ধাপ’ ঘোষণা করেন। বাইডেন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সার্বভৌম ঋণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছি। তার মানে আমরা পশ্চিমা অর্থায়ন থেকে রাশিয়ার সরকারকে বিচ্ছিন্ন করছি। এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রুশ ‘অভিজাতদের’ লক্ষ্য করেই ঘোষণা করেন বাইডেন। 

এর আগে পূর্ব ইউক্রেনে দুটি মস্কো-সমর্থিত স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনকে ‘আক্রমণের সূচনা’ বলে বর্ণনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। 

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ইউক্রেনের পার্লামেন্ট রাশিয়ার আগ্রাসনের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় জরুরি অবস্থা অনুমোদনের জন্য ভোটাভুটি হয়। যেদিন মস্কো কিয়েভ দূতাবাস খালি করতে শুরু করে এবং ওয়াশিংটন রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্কতা জারি করে সেই দিনই এ উদ্যোগ ব্যাপকভাবে অনুমোদিত হয়। 

এর মধ্যে বাইডেন রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন। 

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালায়। এর আগে প্রতিবেশী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানান পুতিন। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পরই রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘আমরা আপনাদের অবিলম্বে অস্ত্রসমর্পণ করে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি বলব: ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সমস্ত সামরিক কর্তারা যারা এই প্রয়োজনীয়তাকে মেনে চলবেন, তাঁরা অবাধে নিশ্চিন্তে এলাকা ছেড়ে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।’ 

পুতিন অন্যান্য দেশকেও হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানান। পুতিন বলেন, ‘যে কেউ আমাদের থামানোর চেষ্টা করবে এবং আমাদের দেশের জন্য, আমাদের জনগণের জন্য আরও হুমকি সৃষ্টি করবে, তাদের জানা উচিত যে, রাশিয়া অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তা আপনাকে এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে যা আপনি ইতিহাসে কখনো সম্মুখীন হননি। আমরা যেকোনো ফলাফলের জন্য প্রস্তুত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দক্ষিণ কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্প: এশিয়ায় উসকে দেবে সমুদ্রতলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার এ উদ্যোগ পানির নিচে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণুচালিত সাবমেরিন প্রকল্প নতুন গতি পেয়েছে। দীর্ঘদিনের মার্কিন আপত্তি দূর হওয়ায় এই উদ্যোগ এখন এশিয়ার নিরাপত্তাকাঠামো পাল্টে দিতে পারে এবং পানির নিচে নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দিতে পারে।

উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলায় বহুদিন ধরে পরমাণুচালিত সাবমেরিনের অভিজাত ক্লাবে যোগ দিতে চেয়েছে সিউল। ট্রাম্পের সম্মতি পাওয়ায় দুই দেশের পারমাণবিক চুক্তির আওতায় জ্বালানির প্রবেশাধিকার মিলেছে, যা এত দিন ছিল বড় বাধা।

তবে বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার দ্রুত অগ্রসরমাণ এই কর্মসূচি চীনকে বিরক্ত করতে পারে এবং জাপানকেও একই ধরনের সক্ষমতা অর্জনের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সাবমেরিন ক্যাপ্টেন চোই ইল বলেন, সাবমেরিন অত্যন্ত কার্যকর আক্রমণাত্মক অস্ত্র। তাই এই অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অনিবার্য।

সিউলের যুক্তি, উত্তর কোরিয়ার পানির নিচে থাকা হুমকি, বিশেষ করে সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পরমাণুচালিত সাবমেরিন অপরিহার্য।

দক্ষিণ কোরিয়া অবশ্য বারবার বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করবে না তারা।

গত বুধবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক থেকে পাওয়া এই চুক্তিকে ‘বড় ধরনের সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এটি দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নমনীয়তা বাড়াবে।

এদিকে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, তারাও একই ধরনের সক্ষমতা বিকাশে মনোনিবেশ করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গত মার্চে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখায়, কিম জং-উন একটি তথাকথিত পরমাণুচালিত সাবমেরিন পরিদর্শন করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার কর্মসূচি কতটা এগিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে কিছু বিশ্লেষকের সন্দেহ, পিয়ংইয়ং হয়তো রাশিয়ার সহায়তা পাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বিষয়টি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করছে, তবে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০ বছর অন্ধকারে বন্দী, মৃত্যুর হুমকিতে থেমে যাওয়া শৈশব-কৈশোর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এনডিটিভি
ছবি: এনডিটিভি

পৃথিবী যখন খেলায় মত্ত, তখন তিনি বন্দী ছিলেন অন্ধকারে। ছয় বছর বয়সে ঘরবন্দী হওয়া লিসা ২০ বছর পর সেই দরজা পেরিয়ে বাইরে এলেও আলো দেখার ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন।

কিছু গল্প ক্ষতের মতো করে উন্মোচিত হয়। কিছু শৈশব যেন কোনোদিনই শুরু হয় না। লিসার জীবন তেমনই এক গল্প। নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক শৈশবের, পরিস্থিতিতে মুছে যাওয়া এক শিশুর এবং এক নারীর।

যে বয়সে শিশুরা বর্ণমালা শেখে, ছত্তিশগড়ের বাস্তার জেলার বাকাওয়ান্দ গ্রামের বাসিন্দা লিসা তখন ভয়কে জানছিলেন। ছয় বছর বয়সেই তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় বাইরের জগতের সব শব্দ। বাড়ির দরজা শুধু খাবারের জন্য খুলত, জীবনের জন্য নয়। ২০ বছর পর কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে খুঁজে পায়, তখন তাঁর চোখে নয়, স্মৃতিতেও ছিল শুধু অন্ধকার।

ছায়াই ছিল তাঁর পরিচয়। কথোপকথন বলতে ছিল শুধু দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দেওয়া থালাবাটির শব্দ। দুই দশক ধরে বন্দিদশার পর এখন তিনি নিজের নামে সাড়া দিতেও হিমশিম খান।

লিসার বন্দিত্ব শুরু হয়েছিল না লোহার শিক দিয়ে, না শিকল দিয়ে—শুরু হয়েছিল আতঙ্ক দিয়ে।

২০০০ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় গ্রামের এক ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দেন। সেই কথায় আতঙ্ক এত গভীর হয়, তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন নীরবতায়। এরই মধ্যে মারা যান তাঁর মা। কৃষক বাবা হয়ে পড়েন দুর্বল ও আতঙ্কিত। কোনো সহায়তা নেই, নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই, কারও কাছে ভরসা চাওয়ার নেই। তাই তিনি এমন এক সিদ্ধান্ত নেন, যা মেয়ের জীবনের পরবর্তী ২০ বছর নির্ধারণ করে দেয়।

তিনি মেয়েকে মাটির ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। বলেন, অন্ধকারই তাঁকে বিপদ থেকে রক্ষা করবে। জানালাবিহীন একটি ঘরই হয়ে ওঠে তাঁর পৃথিবী। না সূর্যের আলো। না কোনো কথা। না কোনো মানুষের স্পর্শ।

শুধু দরজায় রেখে যাওয়া এক প্লেট খাবার আর প্রতিদিন একটু একটু করে সংকুচিত হয়ে যাওয়া জীবনের প্রতিধ্বনি।

যে ব্যবস্থা তাঁকে রক্ষা করবে ভাবা হয়েছিল, তা-ই শেষমেশ তাঁকে সম্পূর্ণ গ্রাস করে নেয়।

সমাজকল্যাণ দপ্তরের দল যখন কুঁড়েঘরে প্রবেশ করে, তারা দেখতে পায় এক নারীকে, যাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব।

চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন প্রাকৃতিক আলো থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে লিসার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাঁর মানসিক বিকাশও গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়েছে। আচরণ বয়সের তুলনায় অনেক কম বয়সী শিশুর মতো। প্রতিটি শব্দে ভয় পান। যেকোনো স্পর্শে চমকে ওঠেন।

উদ্ধারের পর লিসাকে নিয়ে যাওয়া হয় জগদলপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যেখানে তাঁর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার বিস্তারিত পরীক্ষা শুরু হয়। প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, লিসার শৈশব থেমে যায় প্রবল ট্রমায় আর প্রাপ্তবয়স্ক জীবন গঠিত হয়েছে ইন্দ্রিয়ের বঞ্চনায়।

সমাজকল্যাণ দপ্তর পুরো ঘটনায় এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

কর্তৃপক্ষ লিসার পরিবার ও প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে—কেন তিনি ২০ বছর ধরে বন্দী ছিলেন এবং এই বন্দিত্ব আইনবহির্ভূত আটক হিসেবে বিবেচিত হবে কি না।

জেলার প্রশাসন কর্মকর্তারা বলেন, ‘তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়লে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

এ ছাড়া কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখছে, লিসার বাবা কি ভয়ে ও অজ্ঞতার কারণে স্কুল, পঞ্চায়েত বা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য চাননি?

লিসা বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের এক আশ্রমে আছেন, যেখানে সেবাকর্মী ও কাউন্সেলররা তাঁকে নতুন করে জীবন খুঁজে পেতে সহায়তা করছেন।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: পানি–খাবারহীন অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা হাজারো যাত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
ইন্ডিগো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির শিকার হন হাজারো যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় বারো ঘণ্টা ধরে যাত্রীরা নিজেদের মালপত্র হাতে পেতে রীতিমতো সংগ্রাম করছেন। খাবার–পানির কোনো ব্যবস্থা নেই, আর ইন্ডিগোর কাউন্টারগুলি ফাঁকা। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বিমান সংস্থা সংস্থা ইন্ডিগোর পরিচালনগত ত্রুটির কারণে পাঁচ শতাধিক ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে এমন বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা গেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে, দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাজার হাজার স্যুটকেস পড়ে আছে। বহু যাত্রী মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়েছেন, আর কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

এক যাত্রী ইন্ডিগোর এই ব্যর্থতাকে ‘মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে এনডিটিভিকে জানান, বারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তিনি বিমান সংস্থাটির কাছ থেকে কোনো স্পষ্ট জবাব পাচ্ছেন না। তাঁর কথায়, ‘আমি বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এখানে। প্রতিবার তারা বলছেন এক ঘণ্টা দেরি, দু–ঘণ্টা দেরি। আমরা একটা বিয়েতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমাদের মালপত্র পর্যন্ত হাতে নেই। ইন্ডিগোর কর্মীরা আমাদের কিছু বলছেন না। এই মুহূর্তে এটি সবচেয়ে খারাপ বিমান সংস্থা। আমি বুঝি না কেন তারা নতুন যাত্রী নিচ্ছে আর মালপত্র জমিয়ে রাখছেন।’

আরেক যাত্রী জানালেন যে তিনি গতকাল দুপুর থেকে বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, ‘তারা বারবার ফ্লাইট পিছিয়ে দিচ্ছে। ইন্ডিগোর তরফ থেকে আমরা কোনো স্পষ্ট খবর পাচ্ছি না।’ আরেক যাত্রী বলেন, ‘খুবই মানসিক চাপের বিষয় এটা। চৌদ্দ ঘণ্টা ধরে আমি বিমানবন্দরে বসে আছি। খাবার বা অন্য কিছুর জন্য কোনো কুপন নেই। আমার কানেকটিং ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করছেন, কিন্তু কর্মীরা কোনো স্পষ্ট জবাব দিচ্ছেন না। এমন জরুরি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য কর্মীদের বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষণ নেই।’

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরেও একই ধরনের দৃশ্য দেখা গেছে। আটকা পড়া যাত্রীরা ক্ষোভে ফেটে পড়ছিলেন। কারণ তাদের কোনো খাবার বা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়নি। একদল যাত্রী প্রতিবাদস্বরূপ একটি এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট পর্যন্ত আটকে দিয়েছিলেন।

হায়দরাবাদ বিমানবন্দরের এক যাত্রী বলেন, ‘আমার ফ্লাইট গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা ছিল। আমি আমার সহকর্মীকে নিয়ে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বিমানবন্দরে পৌঁছাই। আমাদের বলা হয়েছিল যে ফ্লাইট সময়মতো চলবে। এখন আমরা এখানে বারো ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আছি। ইন্ডিগো আমাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়নি। তারা শুধু বলে চলেছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য দেরি হচ্ছে। আমাদের কোনো স্পষ্ট খবর, খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। ইন্ডিগোর সাড়া একেবারেই যাচ্ছেতাই। এখানে বয়স্ক মানুষ আছেন, যাদের বিশেষ দায়বদ্ধতা আছে, তাদের জন্য কোনো সমাধান নেই। এটা খুবই হাস্যকর।’

গোয়া বিমানবন্দরে একদল যাত্রী হতাশায় ভেঙে পড়েন। এক ভিডিওতে দেখা যায় তারা ইন্ডিগোর কর্মীদের লক্ষ্য করে চিৎকার করছেন। পরিস্থিতি সামলাতে বহু পুলিশ কর্মীকেও সেখানে দেখা যায়। চেন্নাই বিমানবন্দরে শত শত যাত্রী আটকা পড়েছেন। সেখানে সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স (সিআইএসএফ) ইন্ডিগোর যাত্রীদের প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছে। বিশাখাপত্তম বিমানবন্দরে কমপক্ষে ঊনপঞ্চাশটি বহির্গমন ও তেতাল্লিশটি ইনকামিং ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগোর এই পরিচালনগত ত্রুটি আজ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। কুড়ি বছরের পুরোনো এই বিমান সংস্থাটি ক্রু-সংকট ও প্রযুক্তিগত সমস্যাসহ একাধিক কারণে পাঁচ শ পঞ্চাশটিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করার রেকর্ড তৈরি করেছে। এর মধ্যে মুম্বাই বিমানবন্দরে এক শ চারটি, দিল্লি বিমানবন্দরে দু শ পঁচিশটি, বেঙ্গালুরুতে এক শ দু'টি এবং হায়দরাবাদে বিরানব্বইটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ভূপাল বিমানবন্দরেও কমপক্ষে পাঁচটি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে।

ইন্ডিগো স্বীকার করেছে যে তারা নতুন নিয়ম অনুযায়ী ক্রু-এর প্রয়োজনীয়তা ভুলভাবে আন্দাজ করেছিল এবং পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, যার ফলস্বরূপ শীতকালীন আবহাওয়া ও যানজটের সময়ে পর্যাপ্ত ক্রু-এর অভাব দেখা দিয়েছে। বিমান সংস্থাটি সতর্ক করেছে, সময়সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টার অংশ হিসেবে আগামী দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত ফ্লাইট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা জানিয়েছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর থেকে তারা আরও বিঘ্ন এড়াতে ফ্লাইট পরিচালন কমিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স কর্মীদের বলেছেন যে পরিচালন স্বাভাবিক করা এবং সময়ানুবর্তিতা ফিরিয়ে আনা ‘সহজ লক্ষ্য হবে না।’ বিমান সংস্থাটি গত রাতে তাদের গ্রাহক ও স্টেকহোল্ডারদের কাছে নতুন করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘গত দুই দিন ধরে ইন্ডিগোর নেটওয়ার্ক এবং পরিচালন ব্যবস্থায় ব্যাপক বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমাদের সব গ্রাহক এবং শিল্প স্টেকহোল্ডারদের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’ তারা আরও যোগ করেছে, ‘ইন্ডিগো এই বিলম্বের প্রভাব কমাতে এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে ও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার পক্ষে খেলবেন ইউক্রেনীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া, বাতিল হচ্ছে সব পুরস্কার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।
২০২০ টোকিও এবং ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকসে ইউক্রেনের হয়ে খেলেন সোফিয়া লাইসকুন।

গত বছর রোমে অনুষ্ঠিত ইউরোপীয় অ্যাকুয়াটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০ মিটার সিঙ্ক্রো ইভেন্টে সোনা জেতেন ইউক্রেনীয় ডাইভার সোফিয়া লাইসকুন (২৩)। তবে সম্প্রতি আকস্মিকভাবে রাশিয়ার প্রতি আনুগত্য দেখানোর পর তাঁকে চরম শাস্তির মুখে পড়তে হলো। ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশন (ইউডিএফ) ফেডারেশনের অধীনে পাওয়া তাঁর সমস্ত খেতাব, পদক ও পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ইউডিএফ জানিয়েছে, লাইসকুন দেশের ক্রীড়া মহলের কোনো পক্ষকেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ দলবদলের বিষয়ে ফেডারেশন, কোচিং স্টাফ এমনকি ইউক্রেনের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কেও অবগত করেননি। তাঁর এই অপ্রত্যাশিত দলবদলের ঘটনায় ফেডারেশন ‘তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা’ জানিয়েছে।

ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় বলা হয়েছে: ‘এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু চূড়ান্তভাবে অগ্রহণযোগ্যই নয়, এগুলো জাতীয় দল এবং ইউক্রেনের মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যে মুহূর্তে পুরো ইউক্রেনীয় দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমাদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে লড়াই করছে, ঠিক তখনই একজন চ্যাম্পিয়নের এমন পদক্ষেপ পুরো প্রচেষ্টাকেই হেয় করে।’

ইউক্রেনীয় ফেডারেশনের এই সমালোচনার বিপরীতে লাইসকুন তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। রাশিয়ার সংবাদপত্র ইজভেস্তিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেনে তিনি তাঁর কোচদের অধীনে আর পেশাদারভাবে ‘উন্নতি’ করতে পারছিলেন না।

লাইসকুন অভিযোগ করেন, তাঁর ইউক্রেনীয় কোচিং স্টাফে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ‘সবাই জিমন্যাস্ট বা ট্রাম্পোলিন ক্রীড়াবিদ ছিলেন’, এটি আন্তর্জাতিক ডাইভিং-এর মতো বিশেষায়িত খেলার জন্য অনুকূল ছিল না। তাঁর মতে, উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের অভাবই তাঁকে দলবদলে উৎসাহিত করেছে।

লাইসকুনের দলবদলের পর ইউক্রেনীয় ডাইভিং ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ইউক্রেন জাতীয় দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি, ফেডারেশনের অধীনে সোফিয়া লাইসকুনের অর্জিত সমস্ত খেতাব ও পুরস্কার বাতিল করার মতো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানাবে, যাতে বর্তমান আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই ক্রীড়াবিদের ওপর ‘স্পোর্টস কোয়ারেন্টাইন’ আরোপ করা হয়। এর অর্থ হলো, ইউক্রেন চাচ্ছে, লাইসকুন যেন কিছু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর রাশিয়া এবং বেলারুশের ক্রীড়াবিদদের ওয়ার্ল্ড অ্যাকুয়াটিক্স ইভেন্টগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিষিদ্ধ ছিল। তবে সেই বিধিনিষেধগুলো সম্প্রতি শিথিল করা হয়েছে। বর্তমানে রুশ এবং বেলারুশীয় ক্রীড়াবিদদের তাঁদের জাতীয় পতাকা বা প্রতীক ছাড়াই নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে ব্যক্তিগত ইভেন্টগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকে তাঁরা দলগত ইভেন্টেও নিরপেক্ষ ক্রীড়াবিদ হিসেবে অংশ নিতে পারবেন। লাইসকুন-এর এই দলবদল এমন এক সময়ে ঘটল, যখন রাশিয়ার ক্রীড়াবিদেরা ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া মঞ্চে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত