Ajker Patrika

রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট যেভাবে যুদ্ধে গড়াল

আপডেট : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯: ৩৪
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট যেভাবে যুদ্ধে গড়াল

ইউক্রেন সংকট নিয়ে বহু দিন ধরেই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কূটনৈতিকভাবে সংকট সমাধানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ইউক্রেনে সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরু করেছে রাশিয়া। উভয় পক্ষেই হতাহতের খবর জানানো হচ্ছে। রাজধানী কিয়েভ ছাড়ছে আতঙ্কিত মানুষ। পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য আগেই তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার সামরিক অভিযান শুরুর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া তাঁর দেশের ‘সামরিক অবকাঠামো’ এবং সীমান্তরক্ষীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। জাতির উদ্দেশে একটি সংক্ষিপ্ত টেলিভিশন ভাষণে তিনি সামরিক আইন জারি করার আহ্বান জানান এবং বিজয়ের অঙ্গীকার করেন। আজ বৃহস্পতিবার তিনি নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে ইচ্ছুক প্রত্যেক নাগরিকের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে কিয়েভ। অপরদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ইউক্রেনের বিজয় সন্নিকটে। রুশ বাহিনী সুবিধা করে উঠতে পারছে না। 

ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট নিয়ে উত্তেজনা কয়েক মাস ধরেই চলছে। এখানে সাম্প্রতিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার একটি টাইমলাইন তুলে ধরা হলো: 

নভেম্বর, ২০২১ 
স্যাটেলাইট চিত্রগুলোতে দেখা যায়, ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ার সেনাদের একটি নতুন অবকাঠামো। কিয়েভ জানায়, মস্কো ট্যাংক এবং অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামসহ ১ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। 

৭ ডিসেম্বর, ২০২১ 
ইউক্রেনে আগ্রাসন চালালে রাশিয়াকে পশ্চিমা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। 

ইউক্রেনের সীমান্তরক্ষীরা দেশটির খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনীয়-রাশিয়ান সীমান্তে টহল দিচ্ছে১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ 
রাশিয়া পশ্চিমের কাছে ব্যাপকভিত্তিক নিরাপত্তার দাবি পেশ করে। এর মধ্যে ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ এবং ইউক্রেনে সব সামরিক কার্যক্রম বন্ধ করবে এবং সামরিক জোটটি কখনই ইউক্রেন বা অন্য সাবেক সোভিয়েত দেশগুলোকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করবে না-এমন দাবি রাখা হয়। 

৩ জানুয়ারি, ২০২২ 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে আশ্বস্ত করেন, রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র ‘চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানাবে’। সংকট মোকাবিলায় আসন্ন কূটনৈতিক বৈঠকের একটি সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করতে দুজন ফোনে কথা বলেন। 

১০ জানুয়ারি, ২০২২ 
মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা কূটনৈতিক আলোচনার জন্য জেনেভায় মিলিত হন। কিন্তু বিরোধ অমীমাংসিত রেখেই বৈঠক শেষ হয়। কারণ মস্কো নিরাপত্তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে। জবাবে ওয়াশিংটন বলে, এটি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। 

২৪ জানুয়ারি, ২০২২ 
ন্যাটো জোট তার বাহিনীকে স্ট্যান্ডবাই রেখে আরও জাহাজ ও যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে পূর্ব ইউরোপে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করে। কিছু পশ্চিমা দেশ কিয়েভ থেকে দূতাবাসের ‘অপরিহার্য’ কর্মীদের রেখে বাকিদের সরিয়ে নেওয়া শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্র ৮ হাজার ৫০০ সেনা প্রস্তুত রাখার ঘোষণা দেয়। 

ইউক্রেনের সেনাসদস্যরা একটি অজানা স্থানে প্রশিক্ষণ গ্রাউন্ডে কৌশলগত মহড়ায় অংশ নিয়েছে২৬ জানুয়ারি, ২০২২ 
ওয়াশিংটন রাশিয়ার নিরাপত্তা দাবির একটি লিখিত প্রতিক্রিয়া জানায় করে। মস্কোর উদ্বেগের একটি ‘নীতিগত এবং বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন’ করার বিষয়ে ন্যাটোর ‘খোলা দরজা’ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতির পুনরাবৃত্তি করা হয়। 

২৭ জানুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে সতর্ক করেন। চীন তার রাজনৈতিক সমর্থনের পাল্লা রাশিয়ার দিকেই হেলে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে বলে, মস্কোর ‘বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগ’ ‘গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত’। 

USSR-republics২৮ জানুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন বলেন, রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়ে প্রধান দাবিগুলোর কোনো সুরাহা করা হয়নি। তবে মস্কো আলোচনা চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। জেলেনস্কি পশ্চিমাদের সতর্ক করেন যাতে ‘আতঙ্ক’ সৃষ্টি না হয় যা তাঁর দেশের অর্থনীতিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে। 

৩১ জানুয়ারি, ২০২২ 
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে ইউক্রেন সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড কাউন্সিলকে বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্ব নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলবে। 

জাতিসংঘে রাশিয়ার দূত ভাসিলি নেবেনজিয়া অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন এবং তার মিত্ররা বারবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে যে, মস্কো আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। মস্কো এটি অস্বীকার করা সত্ত্বেও পশ্চিমারা যুদ্ধের হুমকির ঢাক বাজাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাঁর দেশের নিরাপত্তা দাবি উপেক্ষা করার অভিযোগ করেন পুতিন। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটি এরই মধ্যে স্পষ্ট যে, রাশিয়ার মৌলিক উদ্বেগগুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।’ 

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসন চালানোর জন্য রাশিয়ার ৭০ শতাংশ সামরিক শক্তি প্রস্তুত করা হয়। মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করে। 

 ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন। ম্যারাথন বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া আর ইউক্রেন সংকটকে না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তবে মাখোঁ এবং পুতিন সংকট কমানোর বিষয়ে সম্মত হয়ে একটি চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন এ ধরনের খবর পরবর্তীতে অস্বীকার করে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মস্কো এবং প্যারিস কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে পারে না। 

১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বৈঠক করেন। বৈঠকের ফল শূন্য। একটি উত্তাপহীন সুনসান সংবাদ সম্মেলনে লাভরভ বৈঠকটিকে ‘একজন বোবা এবং বধির ব্যক্তির মধ্যে কথোপকথন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। 

রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে মস্কো কঠোর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়বে বলে সতর্ক করেন ট্রাস। এ প্রসঙ্গে লাভরভ ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, রাশিয়ার সৈন্য ও অস্ত্র কারও জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। 

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান বলেন, মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে, ২০ ফেব্রুয়ারি বেইজিং অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগের কয়েক দিনের মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে। 

পেন্টাগন মিত্রদের আশ্বস্ত করতে পোল্যান্ডে অতিরিক্ত ৩ হাজার সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেয়। এর আগেই বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ইউক্রেন ছাড়ার পরামর্শ দেয়। 

 ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন এবং পুতিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ‘বিস্তৃত মানবিক দুর্ভোগের’ কারণ হবে এবং পশ্চিমারা এই সংকটের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু অন্য পরিস্থিতির জন্যও তাঁরা সমানভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। 

পুতিন এই আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার দাবির প্রতি সন্তোষজনকভাবে সাড়া দেয়নি। ইউক্রেনকে সামরিক জোটে যোগ দিতে দেওয়া হবে না এবং ন্যাটো পূর্ব ইউরোপ থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে—রাশিয়ার এ দাবির প্রতি পশ্চিমারা উদাসীন। 

পুতিনের শীর্ষ পররাষ্ট্র নীতি সহকারী ইউরি উশাকভ বলেন, কয়েক মাস ধরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ‘পরিস্থিতিকে কেবল অযৌক্তিক সাড়া প্রদানের’ পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বাইডেন রাশিয়ার ওপর আরোপিত সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা উল্লেখ করেছেন। পুতিনের সঙ্গে মোটামুটি দীর্ঘ কথোপকথনের সময় এ বিষয়টি ফোকাসে ছিল না। 

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি সতর্ক করেন যে, পুতিন প্রতিদিনই ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। এমএসএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কিরবি বলেন, ‘সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। দিনে দিনে আরও প্রস্তুত হচ্ছে। তারা সেখানে মহড়া দিচ্ছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, পুতিন সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের কাছে প্রচুর সক্ষমতা এবং বিকল্প পথ রয়েছে।’ 

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন বলেন, তিনি ইউক্রেন উত্তেজনা কমাতে নিরাপত্তা ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে ‘আরও কাজ করতে প্রস্তুত’। কিন্তু রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো মেনে নেওয়া পশ্চিমের জন্যই প্রয়োজন বলেও জোর দিয়ে উল্লেখ করেন তিনি। 

মস্কোতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ একটি ব্রিফিংয়ে বলেন, তিনি রাশিয়ার মূল্যায়নের সঙ্গে একমত যে, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এড়ানোর একটি সুযোগ এখনো রয়েছে। ‘কূটনৈতিক বিকল্পগুলো এখনো শেষ হয়ে যায়নি’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

 ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ন্যাটো বলে, রাশিয়ার পিছু হটার কোনো লক্ষণ নেই। জোটের দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রন্টকে মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে কমান্ডারদের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়া। 

ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘মন্ত্রীরা মধ্য ও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে নতুন ন্যাটো সম্মুখ সমর দল গঠনের বিবেচনাসহ ন্যাটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করার বিকল্পগুলো আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইউক্রেন সীমান্তের কাছ থেকে রুশ সেনা সরিয়ে নেওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি। যদিও মস্কো দাবি করছে, সেনা প্রত্যাহার চলছে। 

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন এবং ব্লিঙ্কেন সতর্ক করেন, সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারে স্পষ্ট ব্যর্থতার মধ্যে ইউক্রেন আক্রমণের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে রাশিয়া। এর মধ্যে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া একটি প্রক্সি সামরিক অভিযান চালাতে পারে। 

ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ইউক্রেনের সংঘাতময় পূর্বাঞ্চলের গোলাবর্ষণের প্রতিবেদনের পরে এটিকেই রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারে।

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন বলেন, তিনি নিশ্চিত পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি মস্কোকে সতর্ক করেন যে, এটি হবে বিপর্যয়কর। এরপরও কূটনীতির দরজা খোলা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। যুদ্ধ শুরু না হওয়া পর্যন্ত ‘কূটনীতি সর্বদাই একটি সম্ভাবনা’, সাংবাদিকদের এ কথা বলেন বাইডেন। 

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের রুশ-সমর্থিত বিদ্রোহী নেতারা সাধারণ সংহতি ঘোষণা করেন। উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা জোরালো হয়। 

রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহী এবং ইউক্রেন সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের খবর আসার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। কিয়েভ বলে যে, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গোলাগুলিতে দুইজন ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। 

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের দুটি বিচ্ছিন্ন অঞ্চল, দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেন। এরপর সেখানে ‘শান্তি বজায় রাখার’ জন্য রুশ সেনাদের নির্দেশ দেন। পুতিনের ঘোষণা মস্কো-সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পথ প্রশস্ত করে। 

 ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
বাইডেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার ‘প্রথম ধাপ’ ঘোষণা করেন। বাইডেন বলেন, ‘আমরা রাশিয়ার সার্বভৌম ঋণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করছি। তার মানে আমরা পশ্চিমা অর্থায়ন থেকে রাশিয়ার সরকারকে বিচ্ছিন্ন করছি। এই পদক্ষেপগুলো রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রুশ ‘অভিজাতদের’ লক্ষ্য করেই ঘোষণা করেন বাইডেন। 

এর আগে পূর্ব ইউক্রেনে দুটি মস্কো-সমর্থিত স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনকে ‘আক্রমণের সূচনা’ বলে বর্ণনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। 

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
ইউক্রেনের পার্লামেন্ট রাশিয়ার আগ্রাসনের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় জরুরি অবস্থা অনুমোদনের জন্য ভোটাভুটি হয়। যেদিন মস্কো কিয়েভ দূতাবাস খালি করতে শুরু করে এবং ওয়াশিংটন রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্কতা জারি করে সেই দিনই এ উদ্যোগ ব্যাপকভাবে অনুমোদিত হয়। 

এর মধ্যে বাইডেন রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণকারী কোম্পানির বিরুদ্ধে এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেন। 

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 
রুশ বাহিনী ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালায়। এর আগে প্রতিবেশী ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসমর্পণের আহ্বান জানান পুতিন। সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করার পরই রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন বলেন, ‘আমরা আপনাদের অবিলম্বে অস্ত্রসমর্পণ করে বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। আমি বলব: ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সমস্ত সামরিক কর্তারা যারা এই প্রয়োজনীয়তাকে মেনে চলবেন, তাঁরা অবাধে নিশ্চিন্তে এলাকা ছেড়ে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন।’ 

পুতিন অন্যান্য দেশকেও হস্তক্ষেপ না করার আহ্বান জানান। পুতিন বলেন, ‘যে কেউ আমাদের থামানোর চেষ্টা করবে এবং আমাদের দেশের জন্য, আমাদের জনগণের জন্য আরও হুমকি সৃষ্টি করবে, তাদের জানা উচিত যে, রাশিয়া অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তা আপনাকে এমন পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে যা আপনি ইতিহাসে কখনো সম্মুখীন হননি। আমরা যেকোনো ফলাফলের জন্য প্রস্তুত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশের টাকমাথার লোকদের বাঁচানোর লড়াইয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউংয়ের সুবিন্যস্ত চুলের বাহার নজর কাড়ার মতো। তবে তিনি এখন এক অন্য অভিযানে নেমেছেন—দেশের টাকমাথা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ব্রত। তাঁর মূল লক্ষ্য—দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা। তিনি প্রস্তাব করেছেন, চুল পড়ার চিকিৎসার যাবতীয় খরচ এখন থেকে এই বিমা থেকেই মেটানো হোক।

প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং গত মঙ্গলবার এক সরকারি ব্রিফিংয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে এই সাহসী প্রস্তাব দেন। তিনি যুক্তি দেখান, একসময় চুল পড়ার চিকিৎসাকে স্রেফ ‘প্রসাধন’ বা সাজসজ্জা হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু আধুনিক সময়ে এটি মানুষের কাছে রীতিমতো ‘টিকে থাকার লড়াই’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিমা কেবল অসুস্থতাজনিত কারণে চুল পড়লে তার খরচ বহন করে। কিন্তু বংশগত কারণে টাক পড়লে বিমার টাকা পাওয়া যায় না। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জং ইউন-কিয়ং স্পষ্ট জানিয়েছেন, যেহেতু এটি জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি হুমকি নয়, তাই একে বিমার আওতাভুক্ত করা হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট লি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বংশগত সমস্যাকে কেন রোগ হিসেবে দেখা হবে না?’

দক্ষিণ কোরিয়া কঠোর সৌন্দর্যের মানদণ্ডের জন্য পরিচিত। সেখানে টাক পড়া এক ধরনের সামাজিক কলঙ্ক, যা বিশেষ করে তরুণদের খুব কষ্ট দেয়। সরকারি তথ্য বলছে—গত বছর চুল পড়ার সমস্যায় হাসপাতালে যাওয়া ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিল ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী।

৩৩ বছর বয়সী লি ওন-উ নামে এক যুবক জানান, সামনের দিকে চুল কমে যাওয়ায় তিনি কোনো হেয়ার স্টাইল করতে পারেন না। তাঁর ভাষায়, ‘নিজেকে অগোছালো আর কুৎসিত মনে হয়, যা আমার আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে।’

প্রেসিডেন্টের এই প্রস্তাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে তাঁকে ‘ইতিহাসের সেরা প্রেসিডেন্ট’ বলে আকাশচুম্বী প্রশংসা করছেন। তবে সবাই কিন্তু উচ্ছ্বসিত নন। খোদ ভুক্তভোগীদের মধ্যেও কেউ কেউ একে দেখছেন ‘ভোট পাওয়ার সস্তা কৌশল’ হিসেবে।

সমালোচকদের ভাষ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিমা ব্যবস্থা গত বছর বড় ধরনের লোকসানের (প্রায় ৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার) মুখে পড়েছে। প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই চাপ আরও বাড়বে। কোরিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, টাকের চেয়েও মারাত্মক অনেক রোগ আছে যেগুলোতে আগে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত।

নেটিজেনদের একাংশ বলছেন, যেখানে স্যানিটারি প্যাড বা স্তন ক্যানসারের ওষুধের খরচ দিতেই সরকারি তহবিলের টান পড়ে, সেখানে টাকের চিকিৎসায় বিমা সুবিধা দেওয়াটা এক ধরনের ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’।

২০২২ সালের নির্বাচনে হেরে গেলেও এবার প্রেসিডেন্ট লি জয়ী হয়েছেন। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০২৬-এর স্থানীয় নির্বাচন সামনে রেখে তরুণ পুরুষ ভোটারদের তুষ্ট করতেই তিনি এই ‘কৌশলী আচরণ’ করছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার তীব্র প্রতিযোগিতামূলক সমাজে তরুণেরা এমনিতেই কোণঠাসা। তাদের মনে এই বিশ্বাস জন্মানো যে রাষ্ট্র তাদের ছোটখাটো সমস্যা নিয়েও ভাবছে—এটিই হতে পারে লির রাজনৈতিক লক্ষ্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মান বাঁচাতে’ ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে ইইউ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার জব্দ করা অর্থ ব্যবহার না করে ইউক্রেনকে ১০৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে আগামী ২ বছরের জন্য বড় অঙ্কের সুদহীন ঋণ দিতে রাজি হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা। ইইউ কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা আজ শুক্রবার ভোরের দিকে এই ঘোষণা দেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলা বৈঠকে নেতারা সিদ্ধান্ত নেন, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ আপাতত ব্যবহার না করে বরং পুঁজিবাজার থেকে অর্থ ধার করে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা তহবিলের জোগান দেওয়া হবে। কূটনীতিকদের ভাষ্যমতে, বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নানা আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতা কাটানোর চেষ্টা চলেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তোনিও কস্তা লিখেছেন, ‘চুক্তি হয়ে গেছে। ২০২৬-২৭ সালের জন্য ইউক্রেনকে প্রায় ১০৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হলো। আমরা কথা দিয়েছিলাম, আমরা তা রেখেছি।’

তহবিলের উৎস নিয়ে কস্তা বিস্তারিত কিছু না জানালেও রয়টার্সের কাছে আসা এক খসড়া নথি বলছে, এই অর্থ আসবে সরাসরি পুঁজিবাজার থেকে এবং এর নিশ্চয়তা থাকবে ইইউ বাজেটের ওপর। রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহারের যে বিতর্কিত পরিকল্পনা নিয়ে আগে আলোচনা হচ্ছিল, তা থেকে আপাতত সরে আসা হয়েছে। তবে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদকে ভিত্তি করে কোনো ঋণ দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সরকারগুলোর মধ্যে আলোচনা চলবে।

এই চুক্তিতে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের ওপর কোনো আর্থিক দায় চাপানো হয়নি। কারণ দেশগুলো এই অর্থায়নে অংশ নিতে রাজি ছিল না। শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেন এই ঋণ তখনই শোধ করবে যখন তারা মস্কোর কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বা ‘ওয়ার রিপারেশন’ পাবে। ততক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়ার সম্পদগুলো অচল অবস্থায় পড়ে থাকবে। তবে প্রয়োজনে সেই সম্পদ থেকে ঋণ শোধ করার অধিকারও ইইউ নিজের হাতে রেখেছে।

এক ইইউ কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেন, ‘ইউক্রেনের জন্য অন্তত আগামী দুই বছরের অর্থের সংস্থান নিশ্চিত হওয়াটা একটা ইতিবাচক দিক।’ তবে অন্য একজন কূটনীতিকের মন্তব্য ছিল খানিকটা তির্যক। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইউক্রেনকে বাঁচানোর চেয়ে বরং নিজেদের মান বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’

রাশিয়ার টাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বেলজিয়াম। রাশিয়ার জব্দ করা ২১০ বিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ১৮৫ বিলিয়ন ইউরোই আছে বেলজিয়ামের ইউরোক্লিয়ার নামক প্রতিষ্ঠানে। মস্কোর আইনি ও আর্থিক পাল্টা আঘাতের ভয়ে বেলজিয়াম সরকার বেশ আতঙ্কিত ছিল। ক্রেমলিন আগেই জানিয়ে রেখেছে, তাদের সম্পদ ধরা হলে তারা আদালতে যাবে এবং রাশিয়ায় থাকা বিদেশি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করবে।

এই বৈঠকের আগে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যার্ৎস সতর্ক করে বলেছিলেন, চুক্তির সম্ভাবনা ছিল ‘ফিফটি-ফিফটি।’ বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী বার্ট ডি ওয়েভারও আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্য ইইউ দেশগুলো যেন সম্ভাব্য সব ক্ষতির দায়ভার নিতে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়।

শুক্রবার সকালে অবশ্য ডি ওয়েভার বেশ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার থেকে ঋণ নেওয়ার এই সিদ্ধান্তের ফলে ইইউ দেশগুলোর মধ্যে অন্তত বড় কোনো ‘বিশৃঙ্খলা বা বিভাজন’ তৈরি হয়নি।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই সম্পদ ব্যবহারের যেকোনো চেষ্টা হলে তারা ইউরোপীয় ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করবে। বিশ্লেষক ক্রিস উইফার মনে করেন, মস্কো বিষয়টিকে একটি ‘আর্থিক যুদ্ধ’ হিসেবে দেখবে এবং কড়া প্রতিশোধ নেবে। তিনি বলেন, অনেক ইইউ রাষ্ট্রই এখন সরাসরি ইউক্রেনকে অর্থ দিতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই তারা মরিয়া হয়ে বিকল্প কোনো উৎসের সন্ধান করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নিতে বলছে তুরস্ক, কিন্তু কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এফ–৩৫ ক্রয় নিষ্কণ্টক করতেই রাশিয়াকে এস–৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফেরত নিতে অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্ক। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পথ সুগম করতে তুরস্ক রাশিয়ার কাছে তাদের সরবরাহ করা এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ফেরত নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই।

গত বুধবার ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গত সপ্তাহে তুর্কমেনিস্তান এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এই অনুরোধ করেন। রুশ ও তুর্কি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার পর এই শীর্ষ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিষয়টি এমন এক সময়ে প্রকাশ্যে এল, যার কয়েক দিন আগে তুরস্কে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক জানান, আঙ্কারা এবং ওয়াশিংটন পুনরায় এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান উৎপাদন ব্যবস্থায় তুরস্কের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা করছে। বারাক এক পোস্টে লেখেন, ‘তুরস্কের এফ-৩৫ প্রোগ্রামে পুনরায় যোগদানের ইচ্ছা এবং তাদের কাছে থাকা রুশ নির্মিত এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’

তুরস্ক কখনোই এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান নিজ বিমানবহরে যুক্ত করেনি, তবে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার পর এই যুদ্ধবিমানের যৌথ উৎপাদন কর্মসূচি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল দেশটিকে। সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযান এবং গ্রিসের আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে মার্কিন কংগ্রেস আগে থেকেই তুরস্কের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল এবং এই ক্রয়ের ফলে আঙ্কারার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

২০২০ সালে এক প্রতিরক্ষা বিলে সংশোধনীর মাধ্যমে তুরস্ককে এফ-৩৫ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। সে সময় শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট যদি নিশ্চিত করেন যে তুরস্কের কাছে এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নেই, তাহলে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে মার্কিন ও তুর্কি প্রতিরক্ষা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতাও স্থবির হয়ে পড়ে।

রাশিয়ার কাছে এস-৪০০ ফেরত নেওয়ার অনুরোধ এরদোয়ানের আগের অবস্থান থেকে এক বড় ধরনের প্যারাডাইম শিফট। আগে তুরস্ক চেয়েছিল এস-৪০০ নিজের কাছেই রাখতে (হয়তো অকেজো অবস্থায়) এবং সেই সঙ্গে এফ-৩৫ ক্রয় করতে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে তুরস্ক এস-৪০০ কোনো গুদামে রাখবে এবং এটি ব্যবহার করবে না, যা ন্যাটো পরিদর্শকেরা নিয়মিত যাচাই করবেন। এর আগে তুরস্ক এই ব্যবস্থা অন্য কোনো দেশে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্প সিরিয়ার ইস্যুতে এবং গাজায় হামাসকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রভাবের ওপর নির্ভর করছেন। মার্কিন থিংকট্যাংক ফরেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট অ্যারন স্টেইন এর আগে বলেছিলেন, ট্রাম্প তুরস্কের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী। তিনি বলেন, ‘এফ-৩৫-এর প্রধান গ্রাহক হলো তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরব। ট্রাম্প তুরস্কের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করতে অত্যন্ত আগ্রহী। আমার ধারণা, তিনি প্রয়োজনে ইসরায়েলিদের আপত্তির বিরুদ্ধেও যেতে পারেন। ৪০টি জেটের অর্ডার অনেক বড় একটি বিষয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খান ইউনিস অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল। ছবি: এএফপি

গাজার সমুদ্রতীরবর্তী গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ব্যবহার করে ধ্বংসপ্রাপ্ত এই উপত্যকার পুনর্গঠন কাজে ব্যয় করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আলোচনা করেছে। সাবেক এক পশ্চিমা কর্মকর্তা এবং বর্তমানে কর্মরত এক পশ্চিমা ও এক আরব কর্মকর্তা লন্ডন থেকে প্রকাশিত মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই আলোচনা বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রস্তাব হলো—আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (এডনক) গাজার এখনো ব্যবহৃত হয়নি এমন গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিকানায় অংশ নেবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ গাজার পুনর্গঠনে ব্যয় করা হবে।

আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের আগেই যুক্তরাষ্ট্র গাজার যুদ্ধোত্তর যে পরিকল্পনা শুরু করেছিল, তার অধিকাংশের মতোই এখানেও কোনো চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে সাবেক ওই পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, ডিসেম্বরে গাজার গ্যাস থেকে অর্থ উপার্জনের ধারণাটি পুনরায় আলোচনায় আসে।

২০০০ সালে গাজার সামুদ্রিক এলাকায় গ্যাস আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের অধিকার দুটি প্রতিষ্ঠানের হাতে রয়েছে: ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সার্বভৌম তহবিল প্যালেস্টাইন ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এবং কনসোলিডেটেড কন্ট্রাক্টরস কোম্পানি। এটি একটি নির্মাণ ও জ্বালানি গোষ্ঠী, যার মালিক গ্রিসভিত্তিক এক প্রবাসী ফিলিস্তিনি পরিবার।

এই প্রকল্পের প্রায় ৪৫ শতাংশ মালিকানা একজন আন্তর্জাতিক অংশীদারের জন্য সংরক্ষিত। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা এবং পরবর্তী যুদ্ধের আগে মিসর এই মালিকানায় অংশ নিতে আগ্রহী ছিল। জাতিসংঘ বর্তমান এই যুদ্ধকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস বিশেষজ্ঞ এবং দ্য গাজা মেরিন স্টোরি বইয়ের লেখক মাইকেল ব্যারন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত লাভজনক।’

ব্যারন যখন ১৫ বছর আগে এই প্রকল্পে কাজ করেছিলেন, তখন গ্যাসক্ষেত্রটি উন্নয়নের খরচ ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ডলার। এটি থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আয় হওয়ার কথা ছিল, যার মধ্যে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ১৫ বছর ধরে বছরে ১০ কোটি ডলার করে লভ্যাংশ পেত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এটি ফিলিস্তিনিদের সবচেয়ে মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উন্নয়ন পুনর্গঠন কাজে বড় অবদান রাখতে পারে।’

জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী, গাজার পূর্ণ পুনর্গঠন খরচ অনেক বেশি—প্রায় ৭ হাজার কোটি ডলার। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল এই উপত্যকাকে সম্পূর্ণরূপে পুনর্নির্মাণের ধারেকাছেও নেই। বরং ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের ঘনিষ্ঠ একদল মার্কিন প্রতিনিধি ইসরায়েল-অধিকৃত গাজার অর্ধাংশে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের একটি ছোট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

সাবেক পশ্চিমা কর্মকর্তা জানান, তিনি মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ উপসাগরীয় দেশগুলোর উচ্চপদস্থ কূটনীতিকদের সাথে কথা বলেছেন। তারা সবাই গাজাকে বিভক্ত রাখার এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছেন। ট্রাম্পের আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনাটিও থমকে আছে, কারণ আরব ও মুসলিম দেশগুলো হামাস এবং ইসরায়েলি সেনাদের মাঝখানে পড়ে যাওয়ার ভয়ে সেনা পাঠাতে ইচ্ছুক নয়।

কাতার এবং সৌদি আরব গাজার পুনর্গঠনে অর্থায়ন করার ব্যাপারে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-থানি জানিয়েছেন, অন্যরা যা ধ্বংস করেছে তা পুনর্নির্মাণের জন্য তারা চেক লিখবেন না। অন্যদিকে, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে কোনো তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেননি।

এই পরিস্থিতিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত গাজায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের প্রধান উপসাগরীয় অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আবুধাবি বর্তমানে গাজায় বৃহত্তম মানবিক ত্রাণ দাতা।

ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো শান্তি চুক্তিকে যেভাবে ব্যবসায়িক লেনদেনের সাথে যুক্ত করেছে, গাজার ক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক সম্পদ (গ্যাস) ব্যবহারের মাধ্যমে তারা একই পথে হাঁটতে চাইছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত