সম্পাদকীয়

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে—পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে ‘অতিরঞ্জন’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার কথা জানানো হয়।
খবর থেকে আরও জানা যাচ্ছে, মাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা, কবিতা অথবা কার্টুন। প্রতিটি বইয়ের পেছনের কভারে থাকছে গ্রাফিতি। এর বাইরে ইতিহাসনির্ভর অনেক বিষয়েও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ‘অতিরঞ্জিত’ চিত্র।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে। আর বাদ যাচ্ছে বইয়ের শেষ কভারে লেখা শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত বাণী। একই সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখাও বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে।
পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানের নাম যুক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতার অবদান। আর বাদ যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত কবিতাসহ কিছু ‘অতিরঞ্জিত’ ইতিহাস ও তথ্যগত ভুল। এ ছাড়া অনেক বইয়ের ছবিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অতিরঞ্জন ও তথ্যগত ভুল সংশোধন করায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু এসব পরিবর্তনের পেছনে যদি কোনো ‘রাজনীতি’ থাকে তাহলে এসব পরিবর্তনে শিক্ষার মান উন্নত না হয়ে দেশে রাজনৈতিক বিতর্ক বাড়তে পারে। শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়ের অতিরিক্ত উপস্থিতি কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রের ওপর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করলে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ে বৈ কমে না।
বইয়ের কভার পৃষ্ঠায় ‘গ্রাফিতি’ যুক্ত করা এবং ‘উক্তি’র ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মাঝে সমাজ পরিবর্তনের জন্য উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে ভালো। জ্ঞান অর্জন ও সৃজনশীলতা বাড়ানোই পরিবর্তনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা মতাদর্শ চাপিয়ে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতায় সংকীর্ণতার বদলে উদারতা সৃষ্টির পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তন কোনো একচোখা রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার অংশ হবে না বলেই আমরা আশা করতে চাই। পরিবর্তন হোক, তবে তা যেন বিভেদের পথ প্রশস্ত না করে। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু পরিবর্তন নতুন বিতর্কের সৃষ্টি না করুক, সেটাই দেশের মানুষের চাওয়া।
খবরে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলা হয়েছে। আমরা চাইব, শিক্ষাবছরের শুরুতেই যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করতে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হবে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে—পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে ‘অতিরঞ্জন’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার কথা জানানো হয়।
খবর থেকে আরও জানা যাচ্ছে, মাধ্যমিকের প্রতি শ্রেণির বাংলা বইয়ে যুক্ত হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা, কবিতা অথবা কার্টুন। প্রতিটি বইয়ের পেছনের কভারে থাকছে গ্রাফিতি। এর বাইরে ইতিহাসনির্ভর অনেক বিষয়েও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পাঠ্যবই থেকে বাদ যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ‘অতিরঞ্জিত’ চিত্র।
বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন ইতিহাসনির্ভর বিষয়েও কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে। আর বাদ যাচ্ছে বইয়ের শেষ কভারে লেখা শেখ হাসিনার ছবিসংবলিত বাণী। একই সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লেখাও বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে।
পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে মেজর জিয়াউর রহমানের নাম যুক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে মওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতার অবদান। আর বাদ যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে রচিত কবিতাসহ কিছু ‘অতিরঞ্জিত’ ইতিহাস ও তথ্যগত ভুল। এ ছাড়া অনেক বইয়ের ছবিতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
অতিরঞ্জন ও তথ্যগত ভুল সংশোধন করায় দোষের কিছু নেই। কিন্তু এসব পরিবর্তনের পেছনে যদি কোনো ‘রাজনীতি’ থাকে তাহলে এসব পরিবর্তনে শিক্ষার মান উন্নত না হয়ে দেশে রাজনৈতিক বিতর্ক বাড়তে পারে। শিক্ষাব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়ের অতিরিক্ত উপস্থিতি কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। ঐতিহাসিক ঘটনা ও চরিত্রের ওপর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি আরোপ করলে সমাজে বিভাজন সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ে বৈ কমে না।
বইয়ের কভার পৃষ্ঠায় ‘গ্রাফিতি’ যুক্ত করা এবং ‘উক্তি’র ব্যবহার শিক্ষার্থীদের মাঝে সমাজ পরিবর্তনের জন্য উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হলে ভালো। জ্ঞান অর্জন ও সৃজনশীলতা বাড়ানোই পরিবর্তনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা মতাদর্শ চাপিয়ে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মন-মানসিকতায় সংকীর্ণতার বদলে উদারতা সৃষ্টির পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তন কোনো একচোখা রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডার অংশ হবে না বলেই আমরা আশা করতে চাই। পরিবর্তন হোক, তবে তা যেন বিভেদের পথ প্রশস্ত না করে। পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু পরিবর্তন নতুন বিতর্কের সৃষ্টি না করুক, সেটাই দেশের মানুষের চাওয়া।
খবরে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর বই পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলা হয়েছে। আমরা চাইব, শিক্ষাবছরের শুরুতেই যাতে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করতে বাড়তি উদ্যোগ নেওয়া হবে।

১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
১ মিনিট আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১ দিন আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১ দিন আগেআসিফ

১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ। সংবাদপত্রের ভাষায় এটি একটি ‘কালো অধ্যায়’, যা জাতিকেই স্তব্ধ ও মর্মাহত করে দিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বিশাল আর্কাইভ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দগ্ধ হয়েছে সাত দশকের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচী।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ইমারত নয়, এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। ছায়ানটের প্রাচীন বই, সংগীতচর্চার দলিল, সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ—সবই ছাই হয়ে গেছে। উদীচীর সংগ্রহে থাকা গণসংগীত, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দলিল, নাট্যচর্চার নথি ও আর্কাইভও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সংরক্ষিত ফাইলগুলো ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। এসব নথির অনেকগুলোই হয়তো কখনো ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে যে ক্ষতির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, তা শুধু বস্তুগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডারের অপূরণীয় ক্ষতি।
এই ঘটনাকে যদি বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তাহলে আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংসের স্মৃতি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ছিল হারানো জ্ঞানের প্রতীক। প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ছিল আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগারে কয়েক লাখ পাণ্ডুলিপি ও গ্রন্থ সংরক্ষিত ছিল বলা হয়। গ্রিক, মিসরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয়, চীনা—বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞান সেখানে একত্র হয়েছিল। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে মানবসভ্যতা কয়েক হাজার বছরের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, চিকিৎসা—অসংখ্য ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। ইতিহাসবিদেরা বলেন, যদি আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার টিকে থাকত, তবে মানবসভ্যতা হয়তো আরও কয়েক শতাব্দী আগে আধুনিকতায় পৌঁছাত। আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে, তার মাত্রাগত হেরফের থাকতে পারে, তবে স্বরূপ সেই একই—জ্ঞান ও সংস্কৃতির ওপর কুঠারাঘাত।
এই উদাহরণ আমাদের শেখায় যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির ভান্ডার শুধু কাগজে বা বস্তুতে সীমাবদ্ধ থাকলে তা বিপদের মুখে পড়ে। অগ্নিকাণ্ড, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সবই মুহূর্তে সেই ভান্ডারকে ধ্বংস করতে পারে। ফলে বাংলাদেশে আরও কতগুলো গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু রয়েছে। সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের নথি শুধু সংবাদপত্রের ইতিহাস নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের দলিল। এগুলোতে রয়েছে মানুষের সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সাহিত্য ও শিল্পের খবর। ছায়ানটের বই ও নথি আমাদের সংগীতচর্চার ধারাবাহিকতা, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলসংগীত সংরক্ষণের ইতিহাস বহন করত। উদীচী; যা গণসংগীত, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারক, তার নথিপত্র হারানো মানে আমাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতির এক বড় অংশ মুছে যাওয়া।
উদীচীর আর্কাইভে ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন গণসংগীতের দলিল, গণ-আন্দোলনের গান, নাট্যচর্চার স্ক্রিপ্ট এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস। এগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের গণসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ক্ষতি। ছায়ানট যেমন রবীন্দ্রসংগীতের ধারক, উদীচী তেমনি গণসংগীত ও নাট্যচর্চার ধারক। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নথি ধ্বংস হওয়া মানে আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়া।
এই ক্ষতি শুধু বর্তমান প্রজন্মের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও। তারা হয়তো আর জানতে পারবে না, কীভাবে একটি সমাজ তার সাংস্কৃতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। যেমন আলেক্সান্দ্রিয়ার ধ্বংসের পরবর্তী প্রজন্মরা আর জানতে পারেনি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পূর্ণ জ্ঞান। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নথি হারানো মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের শূন্যতা তৈরি হওয়া। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের সেই সুরক্ষা দিতে পারে, যা আলেক্সান্দ্রিয়ার সময়ে অসম্ভব ছিল। আজকের পৃথিবীতে ‘তথ্য’ শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকা মানেই তাকে ঝুঁকির মুখে রাখা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা এই ধরনের মানবসৃষ্ট নাশকতার হাত থেকে মূল্যবান সম্পদ রক্ষার একমাত্র পথ হলো ডিজিটাল রূপান্তর (ডিজিটাইজেশন)। যেমন—
ক্লাউড স্টোরেজ ও ডেটাবেইস: প্রতিটি বই, সংবাদপত্র ও পাণ্ডুলিপি ডিজিটাল স্ক্যান করে ক্লাউড সার্ভারে রাখা জরুরি।
আন্তর্জাতিক সংযোগ: আমাদের আর্কাইভগুলোকে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত করলে তা সারা বিশ্বের গবেষকদের কাছে যেমন পৌঁছাবে, তেমনি ভৌগোলিকভাবে কোনো এক জায়গায় ধ্বংস হলেও তার প্রতিলিপি অন্য কোথাও নিরাপদ থাকবে।
বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো কাগজে নির্ভরশীল। ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরির উদ্যোগ সীমিত। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় আমরা অমূল্য সম্পদ হারাই। এই ক্ষতি পূরণ করা যায় না। তাই এখনই আমাদের জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত ডিজিটাল সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র—সবাইকে এতে যুক্ত করতে হবে।
আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংস আমাদের শেখায়, জ্ঞান সংরক্ষণে অবহেলা মানে সভ্যতার পশ্চাৎপদতা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডও একই সতর্কবার্তা বহন করছে। যদি আমরা এখনই ডিজিটাল সংরক্ষণে মনোযোগ না দিই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মতোই ইতিহাসের শূন্যতায় দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা হয়তো জানবে না আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সংগীতচর্চা, সংবাদপত্রের সংগ্রাম—সবই কেমন ছিল।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর নথি হারানো শুধু একটি অশুভ শক্তির আস্ফালন প্রদর্শন করা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়। প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের নথিপত্র শুধু কিছু কাগজের স্তূপ নয়; এতে ধরা আছে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস। ছায়ানট ও উদীচীর আর্কাইভ শুধু গানের সংকলন নয়; তা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তি। এই নথিগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করা। যেমনটা আলেক্সান্দ্রিয়ার পতনের পর পরবর্তী প্রজন্মগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও হয়তো জানবে না কীভাবে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর সুরের সাধনায় একটি জাতি তার পরিচয় গড়ে তুলেছিল। এই সংরক্ষণ পদ্ধতি শুধু নথি এবং গ্রন্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে না। এভাবেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডার উপহার দিতে পারব।

১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ। সংবাদপত্রের ভাষায় এটি একটি ‘কালো অধ্যায়’, যা জাতিকেই স্তব্ধ ও মর্মাহত করে দিয়েছে। এই অগ্নিকাণ্ডে দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের বিশাল আর্কাইভ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি দগ্ধ হয়েছে সাত দশকের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ও উদীচী।
এই প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু ইমারত নয়, এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষী। ছায়ানটের প্রাচীন বই, সংগীতচর্চার দলিল, সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ—সবই ছাই হয়ে গেছে। উদীচীর সংগ্রহে থাকা গণসংগীত, মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের দলিল, নাট্যচর্চার নথি ও আর্কাইভও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সংরক্ষিত ফাইলগুলো ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিবর্তনের এক পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস। এসব নথির অনেকগুলোই হয়তো কখনো ডিজিটাল ফরম্যাটে সংরক্ষিত হয়নি। ফলে যে ক্ষতির মুখোমুখি আমরা হয়েছি, তা শুধু বস্তুগত নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডারের অপূরণীয় ক্ষতি।
এই ঘটনাকে যদি বৃহত্তর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, তাহলে আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংসের স্মৃতি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ছিল হারানো জ্ঞানের প্রতীক। প্রাচীন বিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ছিল আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে প্রতিষ্ঠিত এই গ্রন্থাগারে কয়েক লাখ পাণ্ডুলিপি ও গ্রন্থ সংরক্ষিত ছিল বলা হয়। গ্রিক, মিসরীয়, ভারতীয়, ব্যাবিলনীয়, চীনা—বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞান সেখানে একত্র হয়েছিল। কিন্তু অগ্নিকাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেই গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে মানবসভ্যতা কয়েক হাজার বছরের জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য, চিকিৎসা—অসংখ্য ক্ষেত্রেই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। ইতিহাসবিদেরা বলেন, যদি আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার টিকে থাকত, তবে মানবসভ্যতা হয়তো আরও কয়েক শতাব্দী আগে আধুনিকতায় পৌঁছাত। আজ বাংলাদেশে যা ঘটছে, তার মাত্রাগত হেরফের থাকতে পারে, তবে স্বরূপ সেই একই—জ্ঞান ও সংস্কৃতির ওপর কুঠারাঘাত।
এই উদাহরণ আমাদের শেখায় যে জ্ঞান ও সংস্কৃতির ভান্ডার শুধু কাগজে বা বস্তুতে সীমাবদ্ধ থাকলে তা বিপদের মুখে পড়ে। অগ্নিকাণ্ড, যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ—সবই মুহূর্তে সেই ভান্ডারকে ধ্বংস করতে পারে। ফলে বাংলাদেশে আরও কতগুলো গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু রয়েছে। সে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়।
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের নথি শুধু সংবাদপত্রের ইতিহাস নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের দলিল। এগুলোতে রয়েছে মানুষের সংগ্রাম, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সাহিত্য ও শিল্পের খবর। ছায়ানটের বই ও নথি আমাদের সংগীতচর্চার ধারাবাহিকতা, রবীন্দ্রসংগীত ও নজরুলসংগীত সংরক্ষণের ইতিহাস বহন করত। উদীচী; যা গণসংগীত, নাটক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারক, তার নথিপত্র হারানো মানে আমাদের সাংস্কৃতিক স্মৃতির এক বড় অংশ মুছে যাওয়া।
উদীচীর আর্কাইভে ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন গণসংগীতের দলিল, গণ-আন্দোলনের গান, নাট্যচর্চার স্ক্রিপ্ট এবং প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাস। এগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি নয়, বরং বাংলাদেশের গণসংস্কৃতির ধারাবাহিকতার ক্ষতি। ছায়ানট যেমন রবীন্দ্রসংগীতের ধারক, উদীচী তেমনি গণসংগীত ও নাট্যচর্চার ধারক। এই দুই প্রতিষ্ঠানের নথি ধ্বংস হওয়া মানে আমাদের সাংস্কৃতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়া।
এই ক্ষতি শুধু বর্তমান প্রজন্মের নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও। তারা হয়তো আর জানতে পারবে না, কীভাবে একটি সমাজ তার সাংস্কৃতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। যেমন আলেক্সান্দ্রিয়ার ধ্বংসের পরবর্তী প্রজন্মরা আর জানতে পারেনি প্রাচীন সভ্যতাগুলোর পূর্ণ জ্ঞান। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নথি হারানো মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের শূন্যতা তৈরি হওয়া। আমরা এমন এক যুগে বাস করছি, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের সেই সুরক্ষা দিতে পারে, যা আলেক্সান্দ্রিয়ার সময়ে অসম্ভব ছিল। আজকের পৃথিবীতে ‘তথ্য’ শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ থাকা মানেই তাকে ঝুঁকির মুখে রাখা। যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা এই ধরনের মানবসৃষ্ট নাশকতার হাত থেকে মূল্যবান সম্পদ রক্ষার একমাত্র পথ হলো ডিজিটাল রূপান্তর (ডিজিটাইজেশন)। যেমন—
ক্লাউড স্টোরেজ ও ডেটাবেইস: প্রতিটি বই, সংবাদপত্র ও পাণ্ডুলিপি ডিজিটাল স্ক্যান করে ক্লাউড সার্ভারে রাখা জরুরি।
আন্তর্জাতিক সংযোগ: আমাদের আর্কাইভগুলোকে আন্তর্জাতিক ডিজিটাল লাইব্রেরির সঙ্গে যুক্ত করলে তা সারা বিশ্বের গবেষকদের কাছে যেমন পৌঁছাবে, তেমনি ভৌগোলিকভাবে কোনো এক জায়গায় ধ্বংস হলেও তার প্রতিলিপি অন্য কোথাও নিরাপদ থাকবে।
বাংলাদেশে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো কাগজে নির্ভরশীল। ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরির উদ্যোগ সীমিত। ফলে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় আমরা অমূল্য সম্পদ হারাই। এই ক্ষতি পূরণ করা যায় না। তাই এখনই আমাদের জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত ডিজিটাল সংরক্ষণ প্রকল্প শুরু করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাগার, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংবাদপত্র—সবাইকে এতে যুক্ত করতে হবে।
আলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগার ধ্বংস আমাদের শেখায়, জ্ঞান সংরক্ষণে অবহেলা মানে সভ্যতার পশ্চাৎপদতা। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডও একই সতর্কবার্তা বহন করছে। যদি আমরা এখনই ডিজিটাল সংরক্ষণে মনোযোগ না দিই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের মতোই ইতিহাসের শূন্যতায় দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা হয়তো জানবে না আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন, সংগীতচর্চা, সংবাদপত্রের সংগ্রাম—সবই কেমন ছিল।
প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট ও উদীচীর নথি হারানো শুধু একটি অশুভ শক্তির আস্ফালন প্রদর্শন করা নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপর্যয়। প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের নথিপত্র শুধু কিছু কাগজের স্তূপ নয়; এতে ধরা আছে আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাস। ছায়ানট ও উদীচীর আর্কাইভ শুধু গানের সংকলন নয়; তা আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তি। এই নথিগুলো হারিয়ে যাওয়া মানে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে ইতিহাসের এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করা। যেমনটা আলেক্সান্দ্রিয়ার পতনের পর পরবর্তী প্রজন্মগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও হয়তো জানবে না কীভাবে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর সুরের সাধনায় একটি জাতি তার পরিচয় গড়ে তুলেছিল। এই সংরক্ষণ পদ্ধতি শুধু নথি এবং গ্রন্থ সংরক্ষণে সহায়তা করবে না। এভাবেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানভান্ডার উপহার দিতে পারব।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে—পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে ‘অতিরঞ্জন’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১ দিন আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১ দিন আগেদীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য।
আবু তাহের খান

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভার বিষয়বস্তু এবং এ বিষয়ে তাঁর দেওয়া বক্তব্যের ধরন থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে যে এ ধরনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্যই বস্তুত পরিকল্পিত শিরোনামের আওতায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মুক্তচিন্তা’র নামে যে চিন্তার প্রকাশ তিনি আলোচনা সভায় ঘটালেন, তা কি মুক্তচিন্তা নাকি বিকৃত মিথ্যাচার? একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষক হয়ে, তা তিনি যে রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকই হোন না কেন, এ ধরনের বিকৃত মিথ্যাচারের আশ্রয় নেওয়া কি সঠিক হয়েছে?
একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড আজ বিশ্বস্বীকৃত ইতিহাসের অংশ। ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত ও সুনির্দিষ্ট উল্লেখ রয়েছে। প্রায় একই সময়ে বিবিসি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ‘পাকিস্তানিদের দৃষ্টিতে একাত্তর’ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত তৎকালীন পাকিস্তান পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি জেনারেল এ এ খান নিয়াজি এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর বক্তব্য থেকেও এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বস্তুত রাও ফরমান আলীই ছিলেন এ পরিকল্পনার মূল হোতা, যার বাস্তবায়নের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল এ এ খান নিয়াজির সেনাসদস্য এবং আলবদর ও আলশামসের সদস্যরা। উল্লেখ্য, সে সময় রাও ফরমান আলীর কাছ থেকে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি তালিকাও পাওয়া গিয়েছিল। উল্লিখিত বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার লক্ষ্যে রাও ফরমান আলী অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধীরস্থিরভাবে ওই তালিকা প্রণয়ন করেছিলেন। আর ওই তালিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে এসে হত্যা করার ব্যাপারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন ইসলামি ছাত্রসংঘের কর্মীদের নিয়ে গঠিত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও সে সময় সবিস্তারে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদ ছিল ‘সোনার বাংলায় মানবেতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড’। আর ১৯ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায়ও এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘রক্তস্নাত বাংলাদেশ কাঁদো’। উল্লেখ্য, সে সময় দেশের সব পত্রিকাই সাদাকালো রঙে ছাপা হলেও দৈনিক পূর্বদেশ সেদিন বড় অঙ্কের আর্থিক ত্যাগ স্বীকার করে প্রথম পৃষ্ঠায় ৮ কলামে রঙিন শিরোনাম করেছিল রক্তের রঙে—লাল কালিতে। অন্যদিকে এ বিষয়ে বেতার সম্প্রচার তো ছিলই। বাংলাদেশ বেতারের ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রচারিত প্রায় প্রতিটি সংবাদে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল, সে-সংক্রান্ত কিছু কিছু রেকর্ড এখনো বাংলাদেশ বেতারের আর্কাইভে পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যায়। ভয় হয়, এ প্রবন্ধে উল্লিখিত তথ্যসূত্রের কথা শুনে হত্যাকারীদের অনুগামীরা না আবার এসব রেকর্ডপত্র বিনষ্ট করার উদ্যোগ নিয়ে নেয়, যেমনটি সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা স্থানে নানা ক্ষেত্রে ঘটতে দেখা গেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে দালিলিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং বিশেষত এর উপ-উপাচার্য ইতিহাসকে পাল্টে ফেলার ব্যাপারে এতটা লজ্জাবর্জিত ও বিবেকহীন হয়ে উঠলেন কেমন করে? চিন্তা ও মননে তিনি যত পশ্চাদমুখীই হোন না কেন, পেশাগত পরিচয়ে এখনো তো তিনি একজন শিক্ষক। আর একাত্তরের ওই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের বড় অংশই তো শিক্ষক ছিলেন। তো সেই সুবাদেও কি এ রকম বিকৃত মিথ্যাচারের সঙ্গে যুক্ত হতে আপনার বিবেক আপনাকে এতটুকু বাধা দেয়নি! এ ক্ষেত্রে কষ্ট পাচ্ছি এই ভেবে যে একজন শিক্ষক যদি বিকৃতি ও অসত্যাচারে যুক্ত হন, তাহলে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় এ জাতির ভবিষ্যৎই-বা কী? প্রায় একই সময়ে (৯ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান ইতিহাসের অন্যতম মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে বললেন ‘মুরতাদ কাফির’। আর তাঁর ওই বক্তব্যের মাত্র পাঁচ দিন পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে ইতিহাস থেকেই নিশ্চিহ্ন করে দিতে উদ্যোগী হলেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও খন্দকার মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের রাজনৈতিক অভিভাবকেরা অবশ্য বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা এটিকে বলেছেন ‘দিল্লির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র’ বলে (প্রাগুক্ত)। ওবায়দুল কাদেরের নির্লজ্জ ভারত তোষণমূলক বক্তব্যের যেমন নিন্দা করেছি ও করছি, তেমনি প্রত্যাখ্যান করছি তাঁদের এ তথাকথিত দিল্লি ষড়যন্ত্রের স্লোগানকেও। উল্লেখ্য, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে মিলে একই দিনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এ মন্তব্য করেন। আয়োজন ও মন্তব্যের ধরন থেকে মনে হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও অবলোপনের এ উদ্যোগটি তাঁরা পরিকল্পিতভাবেই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু কেন? জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কাছে বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন রাখি, এ দেশকে কি আর কোনো দিন পাকিস্তানের অংশ করা সম্ভব? যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অতীতের ভুলত্রুটি স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে কেন আপনারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে নিতে পারছেন না? এ দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করলে তা থেকে শুধু আপনাদের কেন, কারও পক্ষেই কি লাভবান হওয়ার কিছু আছে? অথচ দেখুন তো, নানা দল, মত ও পথের রাজনীতিকদের সৃষ্ট নানাবিধ অস্থিরতার কারণে এ দেশের সাধারণ মানুষ আজ কত কষ্ট পাচ্ছে। তাদের জীবন আজ নানা দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের এসব কষ্ট কি আপনাদের এতটুকুও স্পর্শ করে না? যদি করে, তাহলে অতীতের সব রাগ, ক্ষোভ ও জিঘাংসার কথা ভুলে গিয়ে সব ধরনের ধর্মীয় উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতাকে বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশের মূলধারার অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যান। দেখবেন আপনারা সবাই ভালো আছেন।
পরিশেষে বলি, দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণভিত্তিক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে দেশের জন্ম, সে দেশের ইতিহাসকে তথ্যবিকৃতি ও অসত্যাচার দিয়ে মুছে ফেলা কখনোই এবং কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তার চেয়ে বরং সেটিকে মেনে নিয়ে পারস্পরিক মমতা, সৌহার্দ্য ও সমন্বয়ের ভিত্তিতে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবাটাই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য এই মুহূর্তের উত্তম কর্তব্য। আর আশা করছি, বিবেকের তাড়নায় তৈরি এ লেখার জন্য মব বা অন্য কোনোরূপ পীড়নের শিকার হব না।
লেখক: সাবেক পরিচালক, বিসিক, শিল্প মন্ত্রণালয়

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে—পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে ‘অতিরঞ্জন’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
১ মিনিট আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১ দিন আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১ দিন আগেশাইখ সিরাজ

বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়। নগরায়ণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা কৃষিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি খাত ধীরে ধীরে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানবিদ্যা, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জলজ চাষ এবং ব্লু ইকোনমির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ, জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবন এবং উন্নত কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিকে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন সিদ্ধান্ত, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতের কৃষি কল্পনা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলা করেই কৃষির পূর্ণ সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা সীমাহীন হলেও এর জন্য প্রয়োজন সৎ প্রচেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষি খাত একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের জীবনযাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা কৃষিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত কমে হচ্ছে নগরায়ণ। শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপের ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বাড়ছে চাপ। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ভোগাচ্ছে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের উচ্চমূল্য, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। ফসল কাটার পর পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার, হিমাগার ও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কারণ কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কৃষিবিমা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষককে আরও অসহায় করে তোলে।
অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার সীমাবদ্ধতা, আধুনিক প্রযুক্তির ধীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের ঘাটতি কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব সংকট সম্মিলিতভাবে কৃষিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে টেকসই নীতি, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও সমন্বিত বাজার সংস্কার ছাড়া কৃষক ও কৃষি উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, ফসল কাটার পর সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ব্যবস্থার মতো সমস্যাগুলো কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি হতে পারে এক অনস্বীকার্য হাতিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আমি নিজ চোখে দেখেছি, কীভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কৃষি আরও লাভজনক, টেকসই এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ বদ্বীপ। বিস্তৃত নদীব্যবস্থা এই ভূখণ্ডকে করেছে উর্বর ও প্রাণবন্ত। নদীর জালের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহজ সেচসুবিধা নিশ্চিত করে এবং ফলায় সোনার ফসল। কিন্তু এই নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি ঝুঁকিরও কারণ। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা পুরো কৃষি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই শিল্প মূলত দেশীয় কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত দেশের মোট প্রক্রিয়াজাত উৎপাদনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষায়িত।
এই খাতের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন বড়, তেমনি রপ্তানি বাজারেও ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কৃষিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে তুলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কৃষি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে শ্রম খরচ কমবে, উৎপাদনের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং কৃষক সরাসরি বাজার ও তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, আবহাওয়া হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
এই সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও কৌশলে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফসল সংরক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উৎপাদক হিসেবে তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। শস্যবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশনব্যবস্থার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উন্নত কৃষি গবেষণা, বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষিজমি সুরক্ষা এবং কর প্রণোদনার মতো বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ষাটের দশকের সবুজবিপ্লব যেমন কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, আজ তেমনি আরেকটি বিপ্লবের জন্য সময় এসেছে। এই বিপ্লব হবে স্মার্ট, দক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও সহজ ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
স্মার্ট কৃষি শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। কৃষক, সরকার, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং উন্নয়ন অংশীদার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তন আসে দূরদৃষ্টি থেকে, আর ভবিষ্যতের কৃষি গড়ে ওঠে আজকের সিদ্ধান্তে। হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়। নগরায়ণ, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা কৃষিকে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের কৃষি খাত ধীরে ধীরে রূপান্তরের পথে এগোচ্ছে। শস্য উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানবিদ্যা, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য, জলজ চাষ এবং ব্লু ইকোনমির মতো ক্ষেত্রগুলোতে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের মানসম্মত প্রক্রিয়াজাতকরণ, জলবায়ু সহনশীল ফসল উদ্ভাবন এবং উন্নত কৃষি অনুশীলনের গুরুত্ব আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে হলে কৃষিকে অবশ্যই তথ্যনির্ভর ও প্রযুক্তিনির্ভর হতে হবে। ডেটা-ড্রিভেন সিদ্ধান্ত, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতা ছাড়া ভবিষ্যতের কৃষি কল্পনা করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তা মোকাবিলা করেই কৃষির পূর্ণ সক্ষমতাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। কৃষিবৈচিত্র্যের সম্ভাবনা সীমাহীন হলেও এর জন্য প্রয়োজন সৎ প্রচেষ্টা, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং দারিদ্র্য হ্রাসে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও বাণিজ্যিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের কৃষি খাত একাধিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কৃষকের জীবনযাত্রা পর্যন্ত বিস্তৃত। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনিয়মিত বৃষ্টি, দীর্ঘ খরা, আকস্মিক বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলের ক্ষতি বাড়িয়ে দিচ্ছে, বিশেষ করে উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও জলাবদ্ধতা কৃষিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে আবাদযোগ্য জমি দ্রুত কমে হচ্ছে নগরায়ণ। শিল্পায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চাপের ফলে খাদ্য উৎপাদনের ওপর বাড়ছে চাপ। উৎপাদন পর্যায়ে কৃষককে ভোগাচ্ছে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের উচ্চমূল্য, যেখানে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। ফসল কাটার পর পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার, হিমাগার ও আধুনিক পরিবহনব্যবস্থার অভাবে বিপুল পরিমাণ পণ্য নষ্ট হচ্ছে, যা কৃষকের ক্ষতির পাশাপাশি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য কৃষক ও ভোক্তা উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কারণ কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হলেও ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। কৃষিবিমা, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কৃষককে আরও অসহায় করে তোলে।
অন্যদিকে, গবেষণা ও সম্প্রসারণ সেবার সীমাবদ্ধতা, আধুনিক প্রযুক্তির ধীর গ্রহণযোগ্যতা এবং তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তের ঘাটতি কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পাশাপাশি, রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে কাঠামোগত দুর্বলতা থাকায় বৈশ্বিক বাজারে সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এসব সংকট সম্মিলিতভাবে কৃষিকে এক জটিল সন্ধিক্ষণে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে টেকসই নীতি, প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান ও সমন্বিত বাজার সংস্কার ছাড়া কৃষক ও কৃষি উভয়ের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আমরা খুব ভালোভাবেই জানি, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি কৃষিতে উৎপাদনশীলতা কমে যাওয়া, ফসল কাটার পর সংরক্ষণের অভাবে ক্ষতি, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া এবং অপর্যাপ্ত খাদ্যগুদাম ব্যবস্থার মতো সমস্যাগুলো কৃষকের জীবনকে প্রতিনিয়ত কঠিন করে তুলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি হতে পারে এক অনস্বীকার্য হাতিয়ার। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে আমি নিজ চোখে দেখেছি, কীভাবে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে কৃষি আরও লাভজনক, টেকসই এবং নিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশ একটি বৃহৎ বদ্বীপ। বিস্তৃত নদীব্যবস্থা এই ভূখণ্ডকে করেছে উর্বর ও প্রাণবন্ত। নদীর জালের মতো বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সহজ সেচসুবিধা নিশ্চিত করে এবং ফলায় সোনার ফসল। কিন্তু এই নদীমাতৃক ভূপ্রকৃতি যেমন আশীর্বাদ, তেমনি ঝুঁকিরও কারণ। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় ৫৫-৬০ শতাংশ জমি পানিতে তলিয়ে যায়, আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকিতে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা পুরো কৃষি ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, সেচব্যবস্থা, নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ধীরে হলেও ধারাবাহিকভাবে বিকশিত হয়েছে। এই শিল্প মূলত দেশীয় কৃষিপণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত দেশের মোট প্রক্রিয়াজাত উৎপাদনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০০টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ছোট, মাঝারি ও বড় ইউনিট অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে অন্তত ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল ও সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণে বিশেষায়িত।
এই খাতের জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার যেমন বড়, তেমনি রপ্তানি বাজারেও ক্রমেই সম্ভাবনা বাড়ছে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কৃষি শিল্পজাত পণ্যের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মাছ, কৃষিপণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব কৃষিকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছে। ইন্টারনেট অব থিংস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিকস এবং আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে আরও দক্ষ করে তুলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতিকে রূপান্তরের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো। এই প্রক্রিয়ায় স্মার্ট কৃষি একটি প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে শ্রম খরচ কমবে, উৎপাদনের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং কৃষক সরাসরি বাজার ও তথ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাটি, পানি ও বনভূমির অবক্ষয় টেকসই কৃষির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। আবাদি জমি কমে যাচ্ছে, আবহাওয়া হয়ে উঠছে অনিশ্চিত। এই অবস্থায় প্রান্তিক ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ জন্য টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ, গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী নীতি বাস্তবায়ন অপরিহার্য। নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য কৃষি উৎপাদনশীলতা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
এই সময় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। কৃষককে আধুনিক কৃষিযন্ত্র ও কৌশলে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফসল সংরক্ষণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ ব্যবস্থায় কাঠামোগত সংস্কার আনতে হবে। কৃষকের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে এবং উৎপাদক হিসেবে তাঁদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। শস্যবিমা, স্বাস্থ্যবিমা ও পেনশনব্যবস্থার মতো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। উন্নত কৃষি গবেষণা, বেসরকারি বিনিয়োগ, কৃষিজমি সুরক্ষা এবং কর প্রণোদনার মতো বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
ষাটের দশকের সবুজবিপ্লব যেমন কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছিল, আজ তেমনি আরেকটি বিপ্লবের জন্য সময় এসেছে। এই বিপ্লব হবে স্মার্ট, দক্ষ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। কৃষকের জন্য বাস্তবসম্মত ও সহজ ডিজিটাল প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে কৃষি খাত আরও শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
স্মার্ট কৃষি শুধু উৎপাদন বাড়াবে না, এটি আমাদের জীবনযাত্রার ধরন বদলে দেবে। এটি দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে সহায়তা করবে। কৃষক, সরকার, নীতিনির্ধারক, গবেষক এবং উন্নয়ন অংশীদার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, পরিবর্তন আসে দূরদৃষ্টি থেকে, আর ভবিষ্যতের কৃষি গড়ে ওঠে আজকের সিদ্ধান্তে। হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে—পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে ‘অতিরঞ্জন’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
১ মিনিট আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগে
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কথাগুলো তিনি বলেছেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে।
যে জায়গাগুলোয় হামলা হয়েছে, যেখানে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সে জায়গাগুলোর অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন, এমন যে কেউ সেই ফুটেজগুলোতে এই দুর্বৃত্তদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই হামলাবাজদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ফুটেজ দেখে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে হামলার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, যার সঙ্গে হাদি হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আঘাত করার রীতি চালু হয়ে গেলে কেউই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন আইনকানুন বলে কিছু থাকবে না। সে সময় উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের আক্রমণ থেকে জনগণকে বা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় জনগণকে তাঁর নিজ সম্পত্তি পাহারা দিতে হবে। সে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য এক ব্যবস্থা। মতাদর্শগত পার্থক্য তখন পরিণত হবে সংঘাতে। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ বদলে গিয়ে তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাই চোখে পড়বে। আদালতের বিচারকেরা চাকরি হারাবেন, আইনজীবীদের পেশা বদলাতে হবে, পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না। নিজের মতের সঙ্গে না মিললে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সংবাদই হয়ে উঠবে পত্রিকার মূল সংবাদ।
ওসমান হাদির হন্তারককে গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করাও জরুরি। সিসি ক্যামেরায় হামলাকারীদের প্রত্যেকের চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হলে এত দিনে তাদের খোঁজে লেগে পড়তে পারত।
এ কথা সবাই বোঝে, পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু হত্যাকাণ্ডও কারও নজর এড়ায়নি। এই হামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আসা দরকার, যেকোনো আইনবিরোধী আচরণের জন্য সরকারের থাকবে জিরো টলারেন্স। পুলিশ বাহিনীর মনে সেই সাহস ফিরিয়ে আনতে হবে, যে সাহসের বলে আইনের শাসনের প্রতি তারা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকার যদি চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। জনগণকেও এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করার কাজটি সরকারের, সেটা যেন সরকার মনে রাখে।

ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোয় যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর লাশ পুড়িয়ে দেওয়া এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। কথাগুলো তিনি বলেছেন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে।
যে জায়গাগুলোয় হামলা হয়েছে, যেখানে একজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, সে জায়গাগুলোর অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। ইন্টারনেটে যুক্ত হতে পারেন, এমন যে কেউ সেই ফুটেজগুলোতে এই দুর্বৃত্তদের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পাবেন। এই হামলাবাজদের শনাক্ত করা মোটেই কঠিন কাজ নয়। ফুটেজ দেখে কাউকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বটে, কিন্তু তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে হামলার ঘটনাগুলো ঘটতেই থাকবে। মনে রাখতে হবে, ওসমান হাদির মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে, যার সঙ্গে হাদি হত্যার কোনো সম্পর্ক নেই।
কোনো সন্দেহ হলেই ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আঘাত করার রীতি চালু হয়ে গেলে কেউই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। তখন আইনকানুন বলে কিছু থাকবে না। সে সময় উচ্ছৃঙ্খল একদল মানুষের আক্রমণ থেকে জনগণকে বা জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করতে হলে পাড়ায় পাড়ায় স্থানীয় জনগণকে তাঁর নিজ সম্পত্তি পাহারা দিতে হবে। সে হবে সামগ্রিকভাবে অন্য এক ব্যবস্থা। মতাদর্শগত পার্থক্য তখন পরিণত হবে সংঘাতে। প্রচলিত রাজনৈতিক আচরণ বদলে গিয়ে তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রবণতাই চোখে পড়বে। আদালতের বিচারকেরা চাকরি হারাবেন, আইনজীবীদের পেশা বদলাতে হবে, পুলিশ বিভাগে কাজ করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে না। নিজের মতের সঙ্গে না মিললে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালানোর সংবাদই হয়ে উঠবে পত্রিকার মূল সংবাদ।
ওসমান হাদির হন্তারককে গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনি তাঁর মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ীদের গ্রেপ্তার করাও জরুরি। সিসি ক্যামেরায় হামলাকারীদের প্রত্যেকের চেহারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয় হলে এত দিনে তাদের খোঁজে লেগে পড়তে পারত।
এ কথা সবাই বোঝে, পত্রিকা অফিস, সাংস্কৃতিক সংগঠনে হামলার ঘটনার আন্তর্জাতিক প্রভাব রয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় দীপু হত্যাকাণ্ডও কারও নজর এড়ায়নি। এই হামলাগুলোর সুষ্ঠু বিচার না হলে আন্তর্জাতিকভাবে বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো বার্তা আসা দরকার, যেকোনো আইনবিরোধী আচরণের জন্য সরকারের থাকবে জিরো টলারেন্স। পুলিশ বাহিনীর মনে সেই সাহস ফিরিয়ে আনতে হবে, যে সাহসের বলে আইনের শাসনের প্রতি তারা জনগণকে ফিরিয়ে আনতে পারে। সরকার যদি চায়, তাহলে সেটা সম্ভব। জনগণকেও এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে সচেতন করে তুলতে হবে। মানুষের জানমাল রক্ষা করার কাজটি সরকারের, সেটা যেন সরকার মনে রাখে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শনিবার আজকের পত্রিকায় এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে—পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন, বাদ পড়ছে ‘অতিরঞ্জন’। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার।
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন এক গভীর ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। সংবাদপত্র বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে একদল অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ কেবল গুটিকয়েক দালান কিংবা আসবাবের ওপর আঘাত নয়, বরং এটি আমাদের জাতীয় স্মৃতিশক্তির ওপর এক পরিকল্পিত আক্রমণ।
১ মিনিট আগে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেছেন, ‘পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে—এ দাবি অবান্তর’ (সমকাল, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫)। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের...
১ দিন আগে
বাংলাদেশের কৃষি খাতে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অর্জন। লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক, কৃষি উদ্ভাবন এবং সরকারের ধারাবাহিক সহায়তায় বাংলাদেশ আজ খাদ্য উৎপাদনে একটি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। তবে কৃষি আজ আর কেবল খাদ্য উৎপাদনের বিষয় নয়।
১ দিন আগে