মহিউদ্দিন খান মোহন
সম্প্রতি দেশে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিশেষত চিন্ময় ইস্যুতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, কলকাতায় উপহাইকমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে প্রধান আলোচ্য ছিল জাতীয় ঐক্য। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডত্ব রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের প্রশ্নে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সব দলই জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে একমত পোষণ করেছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে সে জাতীয় ঐক্য কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? তা কি কেবল সরকার তথা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাঝেমধ্যে বৈঠক বা চা-চক্রে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তা কোনো সাংগঠনিক রূপ পাবে?
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় উল্লিখিত বৈঠকে দু-একটি দল বর্তমান সরকারকাঠামো পরিবর্তন করে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের বিরোধিতা করেছে। তার পরিবর্তে তারা পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী সময়ে দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা জাতীয় সরকার সম্পর্কে তাঁদের অনীহা ও অনাগ্রহের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আহূত জাতীয় ঐক্য আদৌ বাস্তব রূপলাভ করবে কি না।
এটা ঠিক যে একটি দেশে রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবে—এমনটি আশা করা যায় না। সমাজে ‘নানা মুনির নানা মত’ বলে যে প্রবচনটি চালু রয়েছে, এ ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে সেটাই উল্লেখ করা যায়। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় নিজেদের দলীয় স্বার্থকে প্রধান বিবেচনায় রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক। যদিও ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ আপ্তবাক্যটি তারা সর্বদাই আওড়ে থাকে। তবে কার্যক্ষেত্রে তারা এর প্রমাণ দিতে পারে না। সে সময় তারা দেশের চেয়ে দলের স্বার্থকেই ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন সময়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৫ সালে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণকল্পে আলোচনার জন্য। প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনায় যোগ দিলেও জাতীয় সংসদে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তাতে যোগ দেয়নি। যার ফলে সন্ত্রাসবাদ দমন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সফল হতে পারেনি।
২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা, পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জের সোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে জঙ্গি হামলার পরে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলেও জাতীয় নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সবাই যখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে সংলাপের প্রত্যাশার বেলুনে ফুঁ দিচ্ছিলেন, তখনই অপ্রত্যাশিতভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে বেলুন এক ‘বাক্যসুচ’ দিয়ে ফুটো করে দিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৬ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নতুন কোনো ঐক্যের প্রয়োজন নেই’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘যাদের ঐক্য হলে সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস দূর করা যাবে, তাদের ঐক্য ঠিকই গড়ে উঠেছে এবং এ ঐক্য থাকবে। তবে যারা এই সমস্ত সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ, পুড়িয়ে মানুষ মারা, যুদ্ধাপরাধ এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের কথা আলাদা।’ অর্থাৎ তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও অনুগামী ১৪ দলীয় জোটের ঐক্যকেই তিনি জাতীয় ঐক্য হিসেবে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম ট্র্যাজেডি হলো, জাতির সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর প্রত্যাশিত জাতীয় ঐক্যের বাস্তব রূপ দিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার দায় কার বা কার বেশি, কার কম, সে বিবেচনা এখানে অবান্তর। তবে একটি কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার উদারতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
৫ আগস্টের পর একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষত হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করেছেন সবাই। আর সে আলোচনায় সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় ঐক্যের রূপ কী হবে? যাঁরা সে জাতীয় ঐক্য গড়তে এ মুহূর্তে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছেন, তাঁরা খুব অসংগত কথা বলেছেন, তা বলা যাবে না। কেননা, জাতীয় ঐক্যের একটি ভিত্তি অবশ্যই থাকা দরকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলে সরকার ও বিরোধী দল থাকত। তাদের মধ্যে ঐক্য হলে সেটাকে জাতীয় ঐক্য হিসেবে গণ্য করা যেত। যেহেতু এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়, তাই সরকার ও অন্য দলসমূহের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব অযৌক্তিক নয়। শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর কেউ কেউ জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তা না করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের ভেতরে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি না থাকায় উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল বলছে, গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং আগামী দিনে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে যে জাতীয় ঐক্য দরকার, তার ভিত্তি হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সরকার গঠন। কিন্তু বিএনপির অনীহা ও অনাগ্রহ সে পথে অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে আসছেন যে নির্বাচনে জয়লাভ করলে তাঁরা জাতীয় সরকার গঠন করবেন। ৮ ডিসেম্বরও তিনি দেশে অনুষ্ঠিত তাঁর দলের কয়েকটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেছেন, ‘দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে বিএনপি একা পারবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। সে জন্য আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলছি।’ এ কথার মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাঁর দলের নেতারা কেন এ মুহূর্তে জাতীয় সরকারের বিষয়ে একেবারে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন তা বোধগম্য নয়। নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার হতে পারলে এখন কেন হতে পারবে না? সম্ভবত নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকারের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে থাকবে, এখন হলে থাকবে না—এই চিন্তাভাবনা থেকেই তাঁদের এমন অবস্থান। তা ছাড়া, জাতীয় সরকার হলে যদি জাতীয় নির্বাচন অধিক বিলম্বিত হয়—এ শঙ্কাও তাঁদের মধ্যে কাজ করে থাকতে পারে। তবে রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল মনে করছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার দ্বার উন্মুক্ত করতে জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। সে জন্য দরকার হলে গ্রহণযোগ্য দলগুলোর প্রতিনিধিত্বে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এগিয়ে আসবে বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা।
সম্প্রতি দেশে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সংগঠন ইসকনের বহিষ্কৃত নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সে সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিশেষত চিন্ময় ইস্যুতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, কলকাতায় উপহাইকমিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা ও ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার সহকারী হাইকমিশনে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে প্রধান আলোচ্য ছিল জাতীয় ঐক্য। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডত্ব রক্ষার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের প্রশ্নে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে সব দলই জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে একমত পোষণ করেছেন। তবে প্রশ্ন উঠেছে সে জাতীয় ঐক্য কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? তা কি কেবল সরকার তথা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মাঝেমধ্যে বৈঠক বা চা-চক্রে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তা কোনো সাংগঠনিক রূপ পাবে?
সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দেশে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় উল্লিখিত বৈঠকে দু-একটি দল বর্তমান সরকারকাঠামো পরিবর্তন করে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বর্তমানে দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি জাতীয় সরকার গঠনের বিরোধিতা করেছে। তার পরিবর্তে তারা পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পরবর্তী সময়ে দলটির বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা জাতীয় সরকার সম্পর্কে তাঁদের অনীহা ও অনাগ্রহের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। ফলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আহূত জাতীয় ঐক্য আদৌ বাস্তব রূপলাভ করবে কি না।
এটা ঠিক যে একটি দেশে রাজনৈতিক কোনো ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবে—এমনটি আশা করা যায় না। সমাজে ‘নানা মুনির নানা মত’ বলে যে প্রবচনটি চালু রয়েছে, এ ক্ষেত্রে উপমা হিসেবে সেটাই উল্লেখ করা যায়। কারণ, রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় নিজেদের দলীয় স্বার্থকে প্রধান বিবেচনায় রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক। যদিও ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়’ আপ্তবাক্যটি তারা সর্বদাই আওড়ে থাকে। তবে কার্যক্ষেত্রে তারা এর প্রমাণ দিতে পারে না। সে সময় তারা দেশের চেয়ে দলের স্বার্থকেই ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে থাকে।
বিভিন্ন সময়ে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। ২০০৫ সালে দেশের ৬৩টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল সন্ত্রাসবাদীরা। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণকল্পে আলোচনার জন্য। প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠন সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে আলোচনায় যোগ দিলেও জাতীয় সংসদে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তাতে যোগ দেয়নি। যার ফলে সন্ত্রাসবাদ দমন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা সফল হতে পারেনি।
২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলা, পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জের সোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে জঙ্গি হামলার পরে সন্ত্রাসবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন বিশিষ্টজনেরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ইস্যুতে দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকলেও জাতীয় নিরাপত্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দলমত-নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। সবাই যখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে সংলাপের প্রত্যাশার বেলুনে ফুঁ দিচ্ছিলেন, তখনই অপ্রত্যাশিতভাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে বেলুন এক ‘বাক্যসুচ’ দিয়ে ফুটো করে দিয়েছিলেন। ওই বছরের ১৬ জুলাই এক সংবাদ সম্মেলনে ‘নতুন কোনো ঐক্যের প্রয়োজন নেই’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেছিলেন, ‘যাদের ঐক্য হলে সত্যিকারভাবে সন্ত্রাস দূর করা যাবে, তাদের ঐক্য ঠিকই গড়ে উঠেছে এবং এ ঐক্য থাকবে। তবে যারা এই সমস্ত সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদ, পুড়িয়ে মানুষ মারা, যুদ্ধাপরাধ এসবের সঙ্গে জড়িত, তাদের কথা আলাদা।’ অর্থাৎ তাঁর দল আওয়ামী লীগ ও অনুগামী ১৪ দলীয় জোটের ঐক্যকেই তিনি জাতীয় ঐক্য হিসেবে চালিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। আমাদের জাতীয় জীবনের অন্যতম ট্র্যাজেডি হলো, জাতির সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর প্রত্যাশিত জাতীয় ঐক্যের বাস্তব রূপ দিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা। সেই ব্যর্থতার দায় কার বা কার বেশি, কার কম, সে বিবেচনা এখানে অবান্তর। তবে একটি কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে দলীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার উদারতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে।
৫ আগস্টের পর একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, বিশেষত হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করেছেন সবাই। আর সে আলোচনায় সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় ঐক্যের রূপ কী হবে? যাঁরা সে জাতীয় ঐক্য গড়তে এ মুহূর্তে জাতীয় সরকার গঠনের কথা বলছেন, তাঁরা খুব অসংগত কথা বলেছেন, তা বলা যাবে না। কেননা, জাতীয় ঐক্যের একটি ভিত্তি অবশ্যই থাকা দরকার। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু থাকলে সরকার ও বিরোধী দল থাকত। তাদের মধ্যে ঐক্য হলে সেটাকে জাতীয় ঐক্য হিসেবে গণ্য করা যেত। যেহেতু এখন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়, তাই সরকার ও অন্য দলসমূহের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব অযৌক্তিক নয়। শেখ হাসিনার পতন ও পলায়নের পর কেউ কেউ জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু তা না করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারের ভেতরে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি না থাকায় উদ্ভূত রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান অনেক সময় দুরূহ হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল বলছে, গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং আগামী দিনে বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে যে জাতীয় ঐক্য দরকার, তার ভিত্তি হতে পারে বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সরকার গঠন। কিন্তু বিএনপির অনীহা ও অনাগ্রহ সে পথে অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলে আসছেন যে নির্বাচনে জয়লাভ করলে তাঁরা জাতীয় সরকার গঠন করবেন। ৮ ডিসেম্বরও তিনি দেশে অনুষ্ঠিত তাঁর দলের কয়েকটি অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেছেন, ‘দেশকে পুনর্গঠন করতে হলে বিএনপি একা পারবে না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। সে জন্য আমরা জাতীয় সরকারের কথা বলছি।’ এ কথার মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমানের আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাঁর দলের নেতারা কেন এ মুহূর্তে জাতীয় সরকারের বিষয়ে একেবারে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছেন তা বোধগম্য নয়। নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার হতে পারলে এখন কেন হতে পারবে না? সম্ভবত নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকারের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে থাকবে, এখন হলে থাকবে না—এই চিন্তাভাবনা থেকেই তাঁদের এমন অবস্থান। তা ছাড়া, জাতীয় সরকার হলে যদি জাতীয় নির্বাচন অধিক বিলম্বিত হয়—এ শঙ্কাও তাঁদের মধ্যে কাজ করে থাকতে পারে। তবে রাজনৈতিক বোদ্ধা মহল মনে করছে, ৫ আগস্ট-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসার দ্বার উন্মুক্ত করতে জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। সে জন্য দরকার হলে গ্রহণযোগ্য দলগুলোর প্রতিনিধিত্বে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে এগিয়ে আসবে বলে দেশবাসীর প্রত্যাশা।
‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে!’ এটি একটি প্রবাদ বাক্য। আমরা অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝাতে গিয়ে প্রবাদ বাক্য ব্যবহার করে থাকি। যে বাক্য বা উক্তি সংক্ষিপ্ত আকারে এবং রূপক আকারে বিশেষ অর্থ বহন করে, যার মাঝে কোনো বাস্তব সত্য নিহিত রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে লোকের মুখে মুখে চলে আসছে, তাকেই আমরা প্রবাদ...
৩২ মিনিট আগেটানাপোড়েন যে একটা সৃষ্টি হবে, সে ইঙ্গিত শুরু থেকেই ছিল। সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিকতায় এখন তা স্পষ্টতর হয়েছে। মূল প্রতিপাদ্য একটাই। সংস্কার করে জাতীয় নির্বাচন, নাকি জাতীয় নির্বাচনের পরে সংস্কার? যদি সংস্কার করে নির্বাচন হয়, তাহলে সব দলের কাছে গ্রহণযোগ্য সব সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার পরে নির্বাচন...
৩৭ মিনিট আগেবার্ধক্য হলো ষাটোর্ধ্ব জীবন। সারকোপেনিয়া হলো একধরনের পেশি ক্ষয় যা সাধারণত বার্ধক্যে ঘটে। সারকোপেনিয়া সাধারণত বয়স্ক বা পরিশ্রম না করে বসে থাকা জনগণ এবং রোগীদের প্রভাবিত করে, যাদের অন্যান্য অসুস্থতা রয়েছে। এটা মানব দেহের পেশির সিস্টেমকে প্রভাবিত করে বা শারীরিক কার্যকলাপকে ব্যাহত করে।
৪১ মিনিট আগেদেশজুড়ে এখন সবচেয়ে মুখরোচক আলোচনা হচ্ছে নির্বাচন ঘিরে। কেউ চাইছে নির্বাচন হোক সংস্কারের পর, কেউ চাইছে এ বছরের মাঝামাঝি। কেউ বলছে আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ নির্বাচন হবে। অভিজ্ঞ মহল বলছে, সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, নির্বাচন হওয়ার পরও তা চলতে থাকবে। সুতরাং সংস্কারের কথা বলে নির্বাচন আটকে রাখা...
১ ঘণ্টা আগে