মামুনুর রশীদ

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষমতাও কম নয়। তারাও পাল্টা আঘাত হানছে। ওদিকে রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ তো চলছেই। আবার অদৃষ্টের কী খেলা! এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রুসহ মোট ২৯৪ জন নিরপরাধ আদম সন্তান কী নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুবরণ করল! মৃত্যু যেন ওত পেতে রয়েছে সব জায়গায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বড় ধরনের দুর্ভাগ্য। কিন্তু মানুষের তৈরি হত্যাকাণ্ডকে মেনে নেওয়া কষ্টকর। দলে দলে, দেশে দেশে, বর্ণে বর্ণে যে ঘৃণা তৈরি হয়, তাতে চিরস্থায়ী একটা প্রতিশোধস্পৃহার জন্ম হয়, যা জন্ম-জন্মান্তরেও কখনো প্রবাহিত হয়ে চলে। বড়ই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক।
রাজনীতি একদা শান্তিপূর্ণ ছিল। অবশ্য নিকট অতীত থেকে যদি দেখি, অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা থেকে, তা যে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিল, তার প্রবাহ কি পরবর্তীকালে থেমেছে? ব্যাপকভাবে হয়তো হয়নি। কিন্তু সুযোগ-সুবিধামতো রাজনীতির সহিংস ক্যাডাররা তার ধারাকে রক্ষা করে চলেছে, খুনোখুনি অব্যাহত রেখেছে। যেহেতু ’৪৬-এর বিষয়টি ছিল ধর্মভিত্তিক, তাই তখন থেকেই রাজনীতিতে ধর্ম একটা বড় জায়গা দখল করে আছে। যেহেতু এতে কাজও হয়, সে জন্য দেখা গেছে অনেক ত্যাগী রাজনীতিককেও এই ওষুধটা গিলে ফেলতে। ফলাফল দাঁড়ায় অত্যন্ত স্থূল উপায়ে—সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।
দেখা গেল বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী ছুটছে রাজনীতিতে জায়গা পাওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে ছুটছে টাকা, ধর্ম ও দুর্নীতি। এই তিনে সয়লাব হয়ে গেল রাজনীতির ময়দান।
ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার অবিনাশী এই নতুন ধারার রাজনীতিতে যাঁরা ত্যাগী, দেশকে নিয়ে যাঁদের স্বপ্ন আছে, তাঁদের কোণঠাসা করে তরতর করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছাকাছি চলে গেছেন অন্যরা। কিন্তু তাতে কী লাভ হলো? কাদের লাভ হলো? অবশ্যই লাভ হয়েছে কিছু দুষ্ট-নষ্ট রাজনীতিক ও ধর্মব্যবসায়ীর। কিন্তু রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার তো অবসান হচ্ছে না। এই অনিশ্চয়তার মূল্যও কি কম? যে পরিমাণ টাকা লগ্নি হয়ে গেছে, তা উঠে আসতে আবারও যে অনেক দিন সময় লাগবে। আর সাধারণ মানুষ বেশ কিছু আগন্তুক-রাজনীতিককেও দেখতে পায়, যাঁরা খুব বেশি দিন তাদের স্মৃতিতে থাকে না।
গত ১০ মাসে যে পরিমাণ অনিশ্চয়তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ দিনযাপন করছে, তা সত্যিই অকল্পনীয়। এর মধ্যে কোনো একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতি কি আমরা দেখতে পেয়েছি? প্রতিদিনই কোনো না কোনো আন্দোলন বা দাবি আদায়ের লড়াই চলছে রাজপথে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসব কি মীমাংসা হওয়ার কথা? কেন এই দায়িত্ব নিতে গেল তারা? সংস্কার শব্দটাই এত ক্লিশে হয়ে গেছে যে এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। প্রতিদিন ইউটিউবাররা এইসব শব্দকে এবং প্রক্রিয়াকে তুলাধোনা করে ছাড়ছে।
কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয়ের যে প্রভূত ক্ষতি হয়ে গেল, সে সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। এক নম্বরেই আসে শিক্ষা। এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি এতই গুরুতর যে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে বসালেও তাদের মনোযোগের জায়গাটি কি আর ফিরে পাওয়া যাবে? শিক্ষার যে সংস্কৃতিটা ছিল, যেমন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, পরীক্ষা, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি—এসবে তো ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। শিক্ষা বিভাগে সারা জীবন চাকরি করেছেন, তেমন আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘বলুন তো, শিক্ষার বিষয়ে সরকার, আমলা, শিক্ষক, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা কারও কি সংঘবদ্ধ কোনো গুরুতর অপরাধের প্রমাণ কি কখনো দেখেছেন?’ তিনি স্মৃতি হাতড়ে কোনো সুখস্মৃতি মনে করতে পারলেন না। ঠিকাদারেরা সেতু বানাতে দুর্নীতি করে কিন্তু তার চেয়েও স্কুলশিক্ষকদের প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোচিং সেন্টারের ভূমিকা কি কম বিধ্বংসী?
শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে দুর্নীতি নিয়ে এই ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের নবীন ক্যাডারদের একটি কথাও বলতে শুনিনি। শিক্ষার অভাবে যা গড়ে উঠবার তা গড়ে উঠেছে খুব ভালোভাবেই, যেমন প্রতিশোধের সংস্কৃতি। রাজনীতিতে তো বটেই কিন্তু জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রতিশোধস্পৃহা একটি জায়গা করে নিয়েছে। কোনো পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ, উদারভাব এখানে কাজ করছে না। শুধু একটাই কথা—সুযোগ পেয়েছি দেখে নেব! এই দেখে নেওয়ার বিষয়টি এত দূরে গড়িয়েছে যে অতি আপনজনের কাছ থেকেও আমরা উদারতা, মহানুভবতা আশা করি না।
এই প্রবণতা থেকে আমাদের সাংস্কৃতিক দলও বাইরে নয়। সুদীর্ঘ দিনের বিপুল অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘উদীচী’। সত্যেন সেনের মতো একজন মহৎ ব্যক্তির চিন্তায় এবং তাঁর হাত
ধরেই নানা সংকটে এই সংগঠনটিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে দেখেছি। যশোরে বোমা হামলায় দেখেছি রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উদীচী আছে। সেই উদীচী দ্বিখণ্ডিত হওয়া মানে একটি হৃদয়কে দুই ভাগে জোর করে ভেঙে দেওয়া। রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতন, ভাঙাগড়া এসব অবিরামই চলছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক দল নানা টানাপোড়েন, সব ধরনের আঘাতকে সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। মানুষের মস্তিষ্ক আর হৃদয়কে একসঙ্গে কাজ
করার ক্ষমতা রাখে সংস্কৃতি। যাঁরা এত বছর কেন্দ্রে এবং তৃণমূলে এই সংগঠনটিকে লালন করে এসেছেন, তাঁরা এগিয়ে আসুন। প্রাণের এই সংগঠনটিকে বাঁচান।
সারা বিশ্বে আর আমাদের দেশে যা ঘটছে, তা কীভাবে অবসান হবে জানি না। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী—কত রক্ত হলে সে থামবে? যারা জানে, তাদের শুভবুদ্ধির কখনো উদয় হবে কি?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষমতাও কম নয়। তারাও পাল্টা আঘাত হানছে। ওদিকে রাশিয়া আর ইউক্রেনের যুদ্ধ তো চলছেই। আবার অদৃষ্টের কী খেলা! এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনায় ২৪১ জন যাত্রী ও ক্রুসহ মোট ২৯৪ জন নিরপরাধ আদম সন্তান কী নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুবরণ করল! মৃত্যু যেন ওত পেতে রয়েছে সব জায়গায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু বড় ধরনের দুর্ভাগ্য। কিন্তু মানুষের তৈরি হত্যাকাণ্ডকে মেনে নেওয়া কষ্টকর। দলে দলে, দেশে দেশে, বর্ণে বর্ণে যে ঘৃণা তৈরি হয়, তাতে চিরস্থায়ী একটা প্রতিশোধস্পৃহার জন্ম হয়, যা জন্ম-জন্মান্তরেও কখনো প্রবাহিত হয়ে চলে। বড়ই মর্মান্তিক ও দুঃখজনক।
রাজনীতি একদা শান্তিপূর্ণ ছিল। অবশ্য নিকট অতীত থেকে যদি দেখি, অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা থেকে, তা যে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিল, তার প্রবাহ কি পরবর্তীকালে থেমেছে? ব্যাপকভাবে হয়তো হয়নি। কিন্তু সুযোগ-সুবিধামতো রাজনীতির সহিংস ক্যাডাররা তার ধারাকে রক্ষা করে চলেছে, খুনোখুনি অব্যাহত রেখেছে। যেহেতু ’৪৬-এর বিষয়টি ছিল ধর্মভিত্তিক, তাই তখন থেকেই রাজনীতিতে ধর্ম একটা বড় জায়গা দখল করে আছে। যেহেতু এতে কাজও হয়, সে জন্য দেখা গেছে অনেক ত্যাগী রাজনীতিককেও এই ওষুধটা গিলে ফেলতে। ফলাফল দাঁড়ায় অত্যন্ত স্থূল উপায়ে—সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা।
দেখা গেল বিপুলসংখ্যক ব্যবসায়ী ছুটছে রাজনীতিতে জায়গা পাওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে ছুটছে টাকা, ধর্ম ও দুর্নীতি। এই তিনে সয়লাব হয়ে গেল রাজনীতির ময়দান।
ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার অবিনাশী এই নতুন ধারার রাজনীতিতে যাঁরা ত্যাগী, দেশকে নিয়ে যাঁদের স্বপ্ন আছে, তাঁদের কোণঠাসা করে তরতর করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছাকাছি চলে গেছেন অন্যরা। কিন্তু তাতে কী লাভ হলো? কাদের লাভ হলো? অবশ্যই লাভ হয়েছে কিছু দুষ্ট-নষ্ট রাজনীতিক ও ধর্মব্যবসায়ীর। কিন্তু রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার তো অবসান হচ্ছে না। এই অনিশ্চয়তার মূল্যও কি কম? যে পরিমাণ টাকা লগ্নি হয়ে গেছে, তা উঠে আসতে আবারও যে অনেক দিন সময় লাগবে। আর সাধারণ মানুষ বেশ কিছু আগন্তুক-রাজনীতিককেও দেখতে পায়, যাঁরা খুব বেশি দিন তাদের স্মৃতিতে থাকে না।
গত ১০ মাসে যে পরিমাণ অনিশ্চয়তা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ দিনযাপন করছে, তা সত্যিই অকল্পনীয়। এর মধ্যে কোনো একটি বিষয়ে কোনো ধরনের অগ্রগতি কি আমরা দেখতে পেয়েছি? প্রতিদিনই কোনো না কোনো আন্দোলন বা দাবি আদায়ের লড়াই চলছে রাজপথে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসব কি মীমাংসা হওয়ার কথা? কেন এই দায়িত্ব নিতে গেল তারা? সংস্কার শব্দটাই এত ক্লিশে হয়ে গেছে যে এ নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। প্রতিদিন ইউটিউবাররা এইসব শব্দকে এবং প্রক্রিয়াকে তুলাধোনা করে ছাড়ছে।
কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয়ের যে প্রভূত ক্ষতি হয়ে গেল, সে সম্পর্কে কিছু বলা প্রয়োজন। এক নম্বরেই আসে শিক্ষা। এ বিষয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সমস্যাটি এতই গুরুতর যে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে বসালেও তাদের মনোযোগের জায়গাটি কি আর ফিরে পাওয়া যাবে? শিক্ষার যে সংস্কৃতিটা ছিল, যেমন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, পরীক্ষা, শিক্ষকদের পাঠদান পদ্ধতি—এসবে তো ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। শিক্ষা বিভাগে সারা জীবন চাকরি করেছেন, তেমন আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘বলুন তো, শিক্ষার বিষয়ে সরকার, আমলা, শিক্ষক, শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা কারও কি সংঘবদ্ধ কোনো গুরুতর অপরাধের প্রমাণ কি কখনো দেখেছেন?’ তিনি স্মৃতি হাতড়ে কোনো সুখস্মৃতি মনে করতে পারলেন না। ঠিকাদারেরা সেতু বানাতে দুর্নীতি করে কিন্তু তার চেয়েও স্কুলশিক্ষকদের প্রশ্নপত্র ফাঁস, কোচিং সেন্টারের ভূমিকা কি কম বিধ্বংসী?
শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে দুর্নীতি নিয়ে এই ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাদের নবীন ক্যাডারদের একটি কথাও বলতে শুনিনি। শিক্ষার অভাবে যা গড়ে উঠবার তা গড়ে উঠেছে খুব ভালোভাবেই, যেমন প্রতিশোধের সংস্কৃতি। রাজনীতিতে তো বটেই কিন্তু জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই প্রতিশোধস্পৃহা একটি জায়গা করে নিয়েছে। কোনো পারস্পরিক বোঝাপড়া, শ্রদ্ধাবোধ, উদারভাব এখানে কাজ করছে না। শুধু একটাই কথা—সুযোগ পেয়েছি দেখে নেব! এই দেখে নেওয়ার বিষয়টি এত দূরে গড়িয়েছে যে অতি আপনজনের কাছ থেকেও আমরা উদারতা, মহানুভবতা আশা করি না।
এই প্রবণতা থেকে আমাদের সাংস্কৃতিক দলও বাইরে নয়। সুদীর্ঘ দিনের বিপুল অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে গড়ে উঠেছিল ‘উদীচী’। সত্যেন সেনের মতো একজন মহৎ ব্যক্তির চিন্তায় এবং তাঁর হাত
ধরেই নানা সংকটে এই সংগঠনটিকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে দেখেছি। যশোরে বোমা হামলায় দেখেছি রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে কিন্তু কাজ বন্ধ হয়নি।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উদীচী আছে। সেই উদীচী দ্বিখণ্ডিত হওয়া মানে একটি হৃদয়কে দুই ভাগে জোর করে ভেঙে দেওয়া। রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতন, ভাঙাগড়া এসব অবিরামই চলছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক দল নানা টানাপোড়েন, সব ধরনের আঘাতকে সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। মানুষের মস্তিষ্ক আর হৃদয়কে একসঙ্গে কাজ
করার ক্ষমতা রাখে সংস্কৃতি। যাঁরা এত বছর কেন্দ্রে এবং তৃণমূলে এই সংগঠনটিকে লালন করে এসেছেন, তাঁরা এগিয়ে আসুন। প্রাণের এই সংগঠনটিকে বাঁচান।
সারা বিশ্বে আর আমাদের দেশে যা ঘটছে, তা কীভাবে অবসান হবে জানি না। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী—কত রক্ত হলে সে থামবে? যারা জানে, তাদের শুভবুদ্ধির কখনো উদয় হবে কি?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরে প্রত্যাশিত ছিল যে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁরা তা হননি। বরং বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একাংশ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জাতীয় বুর্জোয়াদের খুঁজতে চেষ্টা করেছে এবং আশা করেছে তথাকথিত এই বুর্জোয়াদের সাহায্যে বিপ্লব সংঘটিত করবে।
৩০ মিনিট আগে
ফিবছর একই মহিমায় ফিরে আসে আজকের দিনটা—১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।
৩৭ মিনিট আগে
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে
ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটি সিন্ডিকেটের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে—এমন একটি প্রশ্নের মুখে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহ তিনেক আগে।
১ দিন আগেসিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরে প্রত্যাশিত ছিল যে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁরা তা হননি। বরং বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একাংশ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জাতীয় বুর্জোয়াদের খুঁজতে চেষ্টা করেছে এবং আশা করেছে তথাকথিত এই বুর্জোয়াদের সাহায্যে বিপ্লব সংঘটিত করবে। কিন্তু পুঁজিবাদের সর্বাত্মক বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বুর্জোয়া পাওয়া যায়নি, লুণ্ঠনকারী বুর্জোয়ারাই কর্তৃত্ব করেছেন। এরা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত নন, তাই বিশ্ব পুঁজিবাদের আগ্রাসনের মুখে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে বিক্রি করতেও তাঁরা প্রস্তুত থেকেছেন। লুণ্ঠনকারীরা সেটাই করেন; মুফতে-পাওয়া সম্পত্তির প্রতি তাঁদের কোনো মায়া, মমতা থাকে না। বাম উগ্রপন্থীদের কেউ কেউ আবার বলতে চেয়েছেন যে স্বাধীনতা আসেনি, রুশ-ভারত অক্ষশক্তি পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে মাত্র। এসব বিচ্ছেদ ও বিভ্রান্তির কারণে জনগণের পক্ষে দাঁড়াবে—এমন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হতে পারেনি।
একাত্তরের পরে যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়েছিলেন, তাঁদের নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিল। তাঁদের দলীয় তরুণদের একাংশ দেখছিল তারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারছে না, অপরাংশের তুলনায় তারা সুবিচার পাচ্ছে না। হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বের হয়ে এসে নতুন সংগঠন গড়েছে, নাম দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। তাদেরও যেহেতু শক্তি সঞ্চয় করা প্রয়োজন ছিল এবং এই শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতার কাছ থেকে পাবে বলে আশা করা যাচ্ছিল না, তাই তারা জনগণের কাছে গেল। জানত তারা যে জনগণ পুরোনো আওয়াজে আর সাড়া দেবে না। তাই নতুন রণধ্বনি তুলল সমাজতন্ত্রের এবং হাজার হাজার তরুণ, যারা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছিল, যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, কিন্তু মুক্তির পথ দেখতে পায়নি, তারা তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়েছে, যোগ দিয়েছে ওই দলে। ওই দলের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ এখনো সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে চাইছে, কিন্তু মূল দলসহ বাদবাকিরা ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও মাত্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
আলবদর, রাজাকাররা ফিরে এসেছে, অধিক শক্তিমত্তায়। মৌলবাদ শক্তিশালী হয়েছে। এর মূল কারণ ওই একটাই, চব্বিশের রেজিম পরিবর্তনে সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসেনি। সমাজ একটা ধাক্কা খেয়েছে, সে নড়ে উঠেছে, কিন্তু এমনভাবে আধুনিক হয়নি যে রাজাকার ও মৌলবাদ অতীতের প্রাণী বলে চিহ্নিত হবে, পরিণত হবে এক দুঃস্বপ্নের স্মৃতিতে। ক্ষমতায় যারা যাতায়াত করে, রাজাকার ও মৌলবাদ তাদের কাছে যথার্থ অর্থে দূরের নয়। কারও জন্য খুব কাছের, কারও জন্য ততটা কাছের নয়; ব্যবধান এইটুকুই, সেটা মাত্রাগত, গুণগত নয়। সমাজে বৈপ্লবিক রূপান্তরের চেষ্টা যদি চলত তাহলে এরা প্রশ্রয় পেত না। শাসকশ্রেণি ধর্মকে ব্যবহার করে চলেছে দুই কারণে। এক. জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়িত্বের অভিপ্রায়ে। দুই. নিজেরাই যেসব অন্যায় করছে, তার দরুন তৈরি অপরাধবোধ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ভরসায়।
বাংলাদেশের জন্য গ্রামই ছিল ভরসা। আন্দোলনে গ্রাম না এলে জয় আসেনি। বিপদের সময় গ্রাম যদি আশ্রয় না দিত তবে বিপদ ভয়াবহ হতো। গ্রামেই রয়েছে উৎপাদক শক্তি। গ্রামবাসীর শ্রমে তৈরি উদ্বৃত্ত মূল্য লুণ্ঠন করেই ধনীরা ধনী হয়েছেন। এখনো গ্রাম কাজে লাগছে বিদেশ থেকে সাহায্য, ঋণ, দান ইত্যাদি এনে তার সিংহভাগ আত্মসাৎ করার অজুহাত ও অবলম্বন হিসেবে।
একাত্তরে আমরা গ্রামে গেছি। বাড়িঘর, মজা পুকুর, হারিয়ে যাওয়া খেত, মৃতপ্রায় গাছপালা—এসবের খোঁজখবর করেছি। শহর তখন চলে গেছে শত্রুর কবলে, যাকগে, আমরা গ্রামেই থাকব—এই সিদ্ধান্ত ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। শহরের পতন ঘটেছে সর্বাগ্রে, গ্রামের ঘটেনি; যদি ঘটত তাহলে আমাদের পক্ষে অত দ্রুত বিজয় সম্ভব হতো না।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র গ্রামে যারা গিয়েছিল তারা যত দ্রুতগতিতে গেছে তার চেয়ে দ্রুতগতিতে ফেরত চলে এসেছে। পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর, কারখানা, অফিস, পদ, গাড়ি—যে যেটা পেরেছে লুণ্ঠন করেছে। পাকিস্তানিরা অব্যাহতভাবে লুণ্ঠন করেছিল ২৪ বছর, বিশেষ করে ৯ মাসে তাদের তৎপরতা সীমাহীন হয়ে পড়েছিল, তারা ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল সবকিছু। স্বাধীনতার পরে সুবিধাভোগীরা শোধ নিয়েছে। লুটপাট করেছে স্বাধীনভাবে। এখনো করছে।
গ্রাম রইল সেখানেই, যেখানে ছিল। বস্তুত খারাপই হলো তার অবস্থা। পাকিস্তানিরা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন সব করেছে। ঘর পুড়িয়েছে, ফসল জ্বালিয়েছে। স্বাধীনতার পরে গ্রামবাসী পুরোনো জীবন ফিরে পায়নি। অবকাঠামো গিয়েছিল ভেঙে। বন্যা এল। এল দুর্ভিক্ষ। বিপুলসংখ্যক মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ল।
গ্রাম এখন ধেয়ে আসছে শহরের দিকে। আশ্রয়দাতা হিসেবে নয়, আসছে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে। তার হাত দুটি মুক্তিযোদ্ধার নয়, হাত তার ভিখারির। ফলে শহর এখন বিপন্ন মনে করছে নিজেকে। ভাবছে আবার তার পতন ঘটবে—এবার পাকিস্তানিদের হাতে নয়, গরিব বাংলাদেশিদের হাতে। মনে হচ্ছে আবারও একটা মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন হবে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দুটি দাবি এসেছিল মুক্তির জাগ্রত আকাঙ্ক্ষা থেকেই। পাকিস্তান আমলে তৈরি সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণিগত বিভাজনকে নাকচ করে দিতে চেয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মূলনীতি দুটি যে বিদায় করে দেওয়া হলো, সেটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, স্বাভাবিক ঘটনা বটে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ, আমাদের ইতিহাসের একমাত্র জনযুদ্ধ। জনযুদ্ধে জনতার জয় হয়েছিল। কিন্তু বিজয়ী জনতা ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছিল ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে, ক্ষমতা আগের মতোই চলে যাচ্ছিল অল্পকিছু মানুষের হাতে। পঁচাত্তরের নৃশংস পটপরিবর্তনের পর নতুন যাঁরা ক্ষমতায় এলেন, তাঁরা শুধু ক্ষমতাই বুঝেছেন, অন্য কিছু বুঝতে চাননি। তাঁরা জনগণের লোক নন, জনগণের আদর্শ তাঁদের নয়। তাঁদের আদর্শে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের স্থান ছিল না। তাঁরা তাঁদের আদর্শকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন এবং সেটাই ছিল স্বাভাবিক। তারপর ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যাঁরা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দিলেও, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাকে ধারণ করেছেন, সেটা বলা যাবে না। সংগত কারণে তাঁরাও তো সরিয়ে দেওয়া মূলনীতি দুটি ফেরত আনেননি। ফেরত আনা পরের কথা, তাঁরা সাংবিধানিক বৈধতাও দিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে। এই উদাসীনতা তাৎপর্যহীন নয়। বাস্তবতা বদলে গেছে। জনগণ যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এখন অতীতের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হয়তোবা অতীতের স্মৃতিতেই পরিণত হবে, কারও কারও হয়তো মনে এমন আশা রয়েছে।
মূল সত্যটা হচ্ছে এই যে জনগণের কাছে ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা থেকে তারা অনেক দূরে। সামরিক সরকারের আমলে দূরে ছিল, নির্বাচিত সরকারের আমলেও সেই দূরেই রয়ে গেছে। বর্তমান আমলেও তদ্রূপ। এই দূরত্ব আগামী দিনে বাড়বে না, বরং কমে আসবে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি? তা তো বলা যাবে না। জনগণের ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাবার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি কই? কর্মসংস্থানের উদ্যোগ কোথায়?
রাষ্ট্রক্ষমতায় যে বড় পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো এমনি এমনি ঘটেনি, বিত্তবানদের কারণেও ঘটেনি। প্রতিটির পেছনেই জনগণ ছিল। ১৯৪৬-এ সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছে। ১৯৭১-এ সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তাতেই রাষ্ট্র বদলেছে। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা ছিল অপূর্ণ; ওই স্বাধীনতায় মুক্তি এল না। উল্টো মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়ল। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা ভিন্ন প্রকারের, তার সামনে মুক্তির লক্ষ্যটা ছিল আরও স্পষ্ট, আরও প্রত্যক্ষ। কিন্তু এই স্বাধীনতা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে কি? মুক্তি এসেছে কি মানুষের? সে তো মনে হয় অনেক দূরের ব্যাপার।
মুক্তি না আসার কারণটি হচ্ছে এই যে সংগ্রাম জনগণই করেছে এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তাদের হাতে ছিল না। জনগণের হাতে নেতৃত্ব থাকার অর্থ কী? জনগণ তো ব্যক্তি নয়, এক নয়, তারা বহু, অসংখ্য, কে নেতা হবে কাকে ফেলে? জনগণের হাতে নেতৃত্ব থাকার অর্থ হলো জনগণের স্বার্থ দেখবে—এমন সংগঠনের হাতে নেতৃত্ব থাকা। স্বার্থটাই আসল কথা। আওয়াজ উঠতে পারে নানাবিধ, আওয়াজ মানুষকে উদ্বুদ্ধও করে নানাভাবে, কিন্তু ধ্বনি যথেষ্ট নয়, কার স্বার্থে ধ্বনি উঠেছে সেটাই জরুরি।
না, তেমন যুদ্ধ ঘটবে না। কেননা, মুক্তিযুদ্ধ তো চলছেই কোনো না কোনোভাবে। মানুষ যে মুক্ত হয়নি, সেটা কারও কাছেই অস্পষ্ট নয়। ওই যুদ্ধকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেটা শাসকশ্রেণির দল করবে না। তার জন্য বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন হবে। ডান দিকের নয়, বাম দিকের।
বলা হয়, গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে সংখ্যাগুরুর শাসন। কিন্তু আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা, অর্থাৎ ধনীরা শাসন করেন সংখ্যাগুরুকে, অর্থাৎ গরিবকে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই ব্যবস্থা চলা উচিত নয়। এটা চলবেও না। এই জন্য যে সংখ্যাগুরু সচেতন ও বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা মুক্তি চান। পরিবর্তন একটা ঘটবেই। প্রশ্ন হলো, কবে এবং কীভাবে। স্বাধীনতা ওই বড় পরিবর্তনের জন্যই প্রয়োজন ছিল। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নিজেই দুর্বল হয়ে পড়বে যদি জাতীয় মুক্তি না আসে।
মুক্তির প্রশ্নটি এখন আর আঞ্চলিক নয়। দ্বন্দ্ব এখন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নয়, প্রশ্নটি এখন শ্রেণিগত, দ্বন্দ্ব এখন বাঙালি ধনীর সঙ্গে বাঙালি গরিবের। বিষয়টা এমন পরিচ্ছন্নভাবে প্রকাশ পেত না বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো। স্বাধীনতা আমাদের খুবই জরুরি ছিল, সমষ্টিগত অগ্রগতির পথে প্রথম সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরে প্রত্যাশিত ছিল যে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁরা তা হননি। বরং বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একাংশ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জাতীয় বুর্জোয়াদের খুঁজতে চেষ্টা করেছে এবং আশা করেছে তথাকথিত এই বুর্জোয়াদের সাহায্যে বিপ্লব সংঘটিত করবে। কিন্তু পুঁজিবাদের সর্বাত্মক বিস্তারের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বুর্জোয়া পাওয়া যায়নি, লুণ্ঠনকারী বুর্জোয়ারাই কর্তৃত্ব করেছেন। এরা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত নন, তাই বিশ্ব পুঁজিবাদের আগ্রাসনের মুখে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থকে বিক্রি করতেও তাঁরা প্রস্তুত থেকেছেন। লুণ্ঠনকারীরা সেটাই করেন; মুফতে-পাওয়া সম্পত্তির প্রতি তাঁদের কোনো মায়া, মমতা থাকে না। বাম উগ্রপন্থীদের কেউ কেউ আবার বলতে চেয়েছেন যে স্বাধীনতা আসেনি, রুশ-ভারত অক্ষশক্তি পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নিয়েছে মাত্র। এসব বিচ্ছেদ ও বিভ্রান্তির কারণে জনগণের পক্ষে দাঁড়াবে—এমন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত হতে পারেনি।
একাত্তরের পরে যাঁরা রাষ্ট্রক্ষমতা হাতে পেয়েছিলেন, তাঁদের নিজেদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব ছিল। তাঁদের দলীয় তরুণদের একাংশ দেখছিল তারা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পারছে না, অপরাংশের তুলনায় তারা সুবিচার পাচ্ছে না। হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তারা বের হয়ে এসে নতুন সংগঠন গড়েছে, নাম দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। তাদেরও যেহেতু শক্তি সঞ্চয় করা প্রয়োজন ছিল এবং এই শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতার কাছ থেকে পাবে বলে আশা করা যাচ্ছিল না, তাই তারা জনগণের কাছে গেল। জানত তারা যে জনগণ পুরোনো আওয়াজে আর সাড়া দেবে না। তাই নতুন রণধ্বনি তুলল সমাজতন্ত্রের এবং হাজার হাজার তরুণ, যারা সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছিল, যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছে, কিন্তু মুক্তির পথ দেখতে পায়নি, তারা তৎক্ষণাৎ সাড়া দিয়েছে, যোগ দিয়েছে ওই দলে। ওই দলের ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ এখনো সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগোতে চাইছে, কিন্তু মূল দলসহ বাদবাকিরা ভিন্ন ভিন্ন রূপে ও মাত্রায় বিলীন হয়ে গেছে।
আলবদর, রাজাকাররা ফিরে এসেছে, অধিক শক্তিমত্তায়। মৌলবাদ শক্তিশালী হয়েছে। এর মূল কারণ ওই একটাই, চব্বিশের রেজিম পরিবর্তনে সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসেনি। সমাজ একটা ধাক্কা খেয়েছে, সে নড়ে উঠেছে, কিন্তু এমনভাবে আধুনিক হয়নি যে রাজাকার ও মৌলবাদ অতীতের প্রাণী বলে চিহ্নিত হবে, পরিণত হবে এক দুঃস্বপ্নের স্মৃতিতে। ক্ষমতায় যারা যাতায়াত করে, রাজাকার ও মৌলবাদ তাদের কাছে যথার্থ অর্থে দূরের নয়। কারও জন্য খুব কাছের, কারও জন্য ততটা কাছের নয়; ব্যবধান এইটুকুই, সেটা মাত্রাগত, গুণগত নয়। সমাজে বৈপ্লবিক রূপান্তরের চেষ্টা যদি চলত তাহলে এরা প্রশ্রয় পেত না। শাসকশ্রেণি ধর্মকে ব্যবহার করে চলেছে দুই কারণে। এক. জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়িত্বের অভিপ্রায়ে। দুই. নিজেরাই যেসব অন্যায় করছে, তার দরুন তৈরি অপরাধবোধ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ভরসায়।
বাংলাদেশের জন্য গ্রামই ছিল ভরসা। আন্দোলনে গ্রাম না এলে জয় আসেনি। বিপদের সময় গ্রাম যদি আশ্রয় না দিত তবে বিপদ ভয়াবহ হতো। গ্রামেই রয়েছে উৎপাদক শক্তি। গ্রামবাসীর শ্রমে তৈরি উদ্বৃত্ত মূল্য লুণ্ঠন করেই ধনীরা ধনী হয়েছেন। এখনো গ্রাম কাজে লাগছে বিদেশ থেকে সাহায্য, ঋণ, দান ইত্যাদি এনে তার সিংহভাগ আত্মসাৎ করার অজুহাত ও অবলম্বন হিসেবে।
একাত্তরে আমরা গ্রামে গেছি। বাড়িঘর, মজা পুকুর, হারিয়ে যাওয়া খেত, মৃতপ্রায় গাছপালা—এসবের খোঁজখবর করেছি। শহর তখন চলে গেছে শত্রুর কবলে, যাকগে, আমরা গ্রামেই থাকব—এই সিদ্ধান্ত ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। শহরের পতন ঘটেছে সর্বাগ্রে, গ্রামের ঘটেনি; যদি ঘটত তাহলে আমাদের পক্ষে অত দ্রুত বিজয় সম্ভব হতো না।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হওয়া মাত্র গ্রামে যারা গিয়েছিল তারা যত দ্রুতগতিতে গেছে তার চেয়ে দ্রুতগতিতে ফেরত চলে এসেছে। পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া বাড়িঘর, কারখানা, অফিস, পদ, গাড়ি—যে যেটা পেরেছে লুণ্ঠন করেছে। পাকিস্তানিরা অব্যাহতভাবে লুণ্ঠন করেছিল ২৪ বছর, বিশেষ করে ৯ মাসে তাদের তৎপরতা সীমাহীন হয়ে পড়েছিল, তারা ভেঙে দিয়ে গিয়েছিল সবকিছু। স্বাধীনতার পরে সুবিধাভোগীরা শোধ নিয়েছে। লুটপাট করেছে স্বাধীনভাবে। এখনো করছে।
গ্রাম রইল সেখানেই, যেখানে ছিল। বস্তুত খারাপই হলো তার অবস্থা। পাকিস্তানিরা হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন সব করেছে। ঘর পুড়িয়েছে, ফসল জ্বালিয়েছে। স্বাধীনতার পরে গ্রামবাসী পুরোনো জীবন ফিরে পায়নি। অবকাঠামো গিয়েছিল ভেঙে। বন্যা এল। এল দুর্ভিক্ষ। বিপুলসংখ্যক মানুষ একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়ল।
গ্রাম এখন ধেয়ে আসছে শহরের দিকে। আশ্রয়দাতা হিসেবে নয়, আসছে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে। তার হাত দুটি মুক্তিযোদ্ধার নয়, হাত তার ভিখারির। ফলে শহর এখন বিপন্ন মনে করছে নিজেকে। ভাবছে আবার তার পতন ঘটবে—এবার পাকিস্তানিদের হাতে নয়, গরিব বাংলাদেশিদের হাতে। মনে হচ্ছে আবারও একটা মুক্তিযুদ্ধের প্রয়োজন হবে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই দুটি দাবি এসেছিল মুক্তির জাগ্রত আকাঙ্ক্ষা থেকেই। পাকিস্তান আমলে তৈরি সাম্প্রদায়িক ও শ্রেণিগত বিভাজনকে নাকচ করে দিতে চেয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। মূলনীতি দুটি যে বিদায় করে দেওয়া হলো, সেটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, স্বাভাবিক ঘটনা বটে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ, আমাদের ইতিহাসের একমাত্র জনযুদ্ধ। জনযুদ্ধে জনতার জয় হয়েছিল। কিন্তু বিজয়ী জনতা ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছিল ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে, ক্ষমতা আগের মতোই চলে যাচ্ছিল অল্পকিছু মানুষের হাতে। পঁচাত্তরের নৃশংস পটপরিবর্তনের পর নতুন যাঁরা ক্ষমতায় এলেন, তাঁরা শুধু ক্ষমতাই বুঝেছেন, অন্য কিছু বুঝতে চাননি। তাঁরা জনগণের লোক নন, জনগণের আদর্শ তাঁদের নয়। তাঁদের আদর্শে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের স্থান ছিল না। তাঁরা তাঁদের আদর্শকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন এবং সেটাই ছিল স্বাভাবিক। তারপর ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটেছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যাঁরা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দিলেও, মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাকে ধারণ করেছেন, সেটা বলা যাবে না। সংগত কারণে তাঁরাও তো সরিয়ে দেওয়া মূলনীতি দুটি ফেরত আনেননি। ফেরত আনা পরের কথা, তাঁরা সাংবিধানিক বৈধতাও দিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে। এই উদাসীনতা তাৎপর্যহীন নয়। বাস্তবতা বদলে গেছে। জনগণ যে স্বপ্ন দেখেছিল তা এখন অতীতের ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হয়তোবা অতীতের স্মৃতিতেই পরিণত হবে, কারও কারও হয়তো মনে এমন আশা রয়েছে।
মূল সত্যটা হচ্ছে এই যে জনগণের কাছে ক্ষমতা নেই, ক্ষমতা থেকে তারা অনেক দূরে। সামরিক সরকারের আমলে দূরে ছিল, নির্বাচিত সরকারের আমলেও সেই দূরেই রয়ে গেছে। বর্তমান আমলেও তদ্রূপ। এই দূরত্ব আগামী দিনে বাড়বে না, বরং কমে আসবে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি? তা তো বলা যাবে না। জনগণের ন্যূনতম চাহিদাগুলো মেটাবার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি কই? কর্মসংস্থানের উদ্যোগ কোথায়?
রাষ্ট্রক্ষমতায় যে বড় পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো এমনি এমনি ঘটেনি, বিত্তবানদের কারণেও ঘটেনি। প্রতিটির পেছনেই জনগণ ছিল। ১৯৪৬-এ সাধারণ মানুষ ভোট দিয়েছে। ১৯৭১-এ সাধারণ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। তাতেই রাষ্ট্র বদলেছে। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা ছিল অপূর্ণ; ওই স্বাধীনতায় মুক্তি এল না। উল্টো মানুষে মানুষে বৈষম্য বাড়ল। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা ভিন্ন প্রকারের, তার সামনে মুক্তির লক্ষ্যটা ছিল আরও স্পষ্ট, আরও প্রত্যক্ষ। কিন্তু এই স্বাধীনতা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে কি? মুক্তি এসেছে কি মানুষের? সে তো মনে হয় অনেক দূরের ব্যাপার।
মুক্তি না আসার কারণটি হচ্ছে এই যে সংগ্রাম জনগণই করেছে এটা ঠিক, কিন্তু নেতৃত্ব তাদের হাতে ছিল না। জনগণের হাতে নেতৃত্ব থাকার অর্থ কী? জনগণ তো ব্যক্তি নয়, এক নয়, তারা বহু, অসংখ্য, কে নেতা হবে কাকে ফেলে? জনগণের হাতে নেতৃত্ব থাকার অর্থ হলো জনগণের স্বার্থ দেখবে—এমন সংগঠনের হাতে নেতৃত্ব থাকা। স্বার্থটাই আসল কথা। আওয়াজ উঠতে পারে নানাবিধ, আওয়াজ মানুষকে উদ্বুদ্ধও করে নানাভাবে, কিন্তু ধ্বনি যথেষ্ট নয়, কার স্বার্থে ধ্বনি উঠেছে সেটাই জরুরি।
না, তেমন যুদ্ধ ঘটবে না। কেননা, মুক্তিযুদ্ধ তো চলছেই কোনো না কোনোভাবে। মানুষ যে মুক্ত হয়নি, সেটা কারও কাছেই অস্পষ্ট নয়। ওই যুদ্ধকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেটা শাসকশ্রেণির দল করবে না। তার জন্য বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির প্রয়োজন হবে। ডান দিকের নয়, বাম দিকের।
বলা হয়, গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে সংখ্যাগুরুর শাসন। কিন্তু আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা, অর্থাৎ ধনীরা শাসন করেন সংখ্যাগুরুকে, অর্থাৎ গরিবকে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই ব্যবস্থা চলা উচিত নয়। এটা চলবেও না। এই জন্য যে সংখ্যাগুরু সচেতন ও বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। তাঁরা মুক্তি চান। পরিবর্তন একটা ঘটবেই। প্রশ্ন হলো, কবে এবং কীভাবে। স্বাধীনতা ওই বড় পরিবর্তনের জন্যই প্রয়োজন ছিল। রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নিজেই দুর্বল হয়ে পড়বে যদি জাতীয় মুক্তি না আসে।
মুক্তির প্রশ্নটি এখন আর আঞ্চলিক নয়। দ্বন্দ্ব এখন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নয়, প্রশ্নটি এখন শ্রেণিগত, দ্বন্দ্ব এখন বাঙালি ধনীর সঙ্গে বাঙালি গরিবের। বিষয়টা এমন পরিচ্ছন্নভাবে প্রকাশ পেত না বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো। স্বাধীনতা আমাদের খুবই জরুরি ছিল, সমষ্টিগত অগ্রগতির পথে প্রথম সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসেবে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষম
১৯ জুন ২০২৫
ফিবছর একই মহিমায় ফিরে আসে আজকের দিনটা—১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।
৩৭ মিনিট আগে
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে
ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটি সিন্ডিকেটের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে—এমন একটি প্রশ্নের মুখে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহ তিনেক আগে।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

ফিবছর একই মহিমায় ফিরে আসে আজকের দিনটা—১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় আজকের দিনে। ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে; তবু ভুলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই যে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এত বড় অর্জন আর দ্বিতীয়টি হয় না। লাখো প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, তা গৌরবের। আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই সব শহীদের আত্মদানের কথা, যাঁদের রক্ত দিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেশের মানুষ এত বছরেও স্বস্তি পায়নি। যারা যখনই এ দেশকে শাসন করতে চেয়েছে বা করেছে, তাদের অসৎ, অসাধু, দুর্নীতিবাজ আচরণ জনগণকে স্বস্তি দিতে পারেনি। যার যার মতো করে তারা দেশের ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সাজাতে চেয়েছে। ফলে মত-দ্বিমতের জালে বারবার আটকা পড়েছে সেই ইতিহাস। তবে সেই সময়কার পত্রপত্রিকাগুলো যে মুক্তিযুদ্ধের অকাট্য দলিল, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।
এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং চেতনায় ধারণ করতে হবে। অগ্রজদের দায়িত্ব এই চেতনা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া—বিকৃত করে নয় বরং সঠিক ইতিহাস জানানোর মাধ্যমে। এই জানানোটা যেন আবার যান্ত্রিক কিংবা শুধু কেতাবি না হয়। মা-বাবা বা যেকোনো অভিভাবক তাঁদের কথা, কাজ, আচরণে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকাশ করবেন, তখনই একটি পরিবারের নতুন প্রজন্ম সেই চেতনাকে ধারণ করতে শিখবে, স্বাধীনতা ও বিজয়ের সত্যিকারের স্বাদ পাবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে যে দেশটি বাঙালি জাতি গড়েছিল, সেই দেশে কোনো দুর্নীতি, অসততা, অপরাধ, বৈষম্য থাকবে না বলেই তো শপথ নেওয়া হয়েছিল। বিজয়ের ৫৪ বছরেও যাঁরা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাবের খাতা খুলে বসেন, তাঁরা হয়তো দেনার হিসাবটা করেন না। তবে তাঁরাও এ বিষয়ে সহমত হবেন যে ওই সব শপথ পূরণ করতে পারেনি কোনো রাজনৈতিক দলই। বরং সবাই মিলে শপথ ভঙ্গই করেছে। কোন আমলে হয়নি দুর্নীতি, খুনখারাবি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ?
অথচ সবাই মিলেই গড়ে তোলা যেত একটি আদর্শ সমাজ। যে সমাজে কোনো নেতা প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ হতেন না, কোনো শিশু বা বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হতো না, কারও বাড়িতে ঢুকে তাকে খুন করা হতো না। সেই সমাজ শতভাগ গড়া না গেলেও অন্তত অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনা অসম্ভব কিছু নয়।
‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়’—এই সত্য বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়া কি এতটাই কঠিন? জাতিকে বিভাজিত করে ‘আমরা’ আর ‘ওরা’ বানিয়ে শান্তি আনা যায় না, এ কথা সবার মনে রাখা উচিত।
সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

ফিবছর একই মহিমায় ফিরে আসে আজকের দিনটা—১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় আজকের দিনে। ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে; তবু ভুলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই যে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এত বড় অর্জন আর দ্বিতীয়টি হয় না। লাখো প্রাণের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি, তা গৌরবের। আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করছি সেই সব শহীদের আত্মদানের কথা, যাঁদের রক্ত দিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ।
দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু দেশের মানুষ এত বছরেও স্বস্তি পায়নি। যারা যখনই এ দেশকে শাসন করতে চেয়েছে বা করেছে, তাদের অসৎ, অসাধু, দুর্নীতিবাজ আচরণ জনগণকে স্বস্তি দিতে পারেনি। যার যার মতো করে তারা দেশের ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সাজাতে চেয়েছে। ফলে মত-দ্বিমতের জালে বারবার আটকা পড়েছে সেই ইতিহাস। তবে সেই সময়কার পত্রপত্রিকাগুলো যে মুক্তিযুদ্ধের অকাট্য দলিল, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।
এই ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে, বুঝতে হবে এবং চেতনায় ধারণ করতে হবে। অগ্রজদের দায়িত্ব এই চেতনা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া—বিকৃত করে নয় বরং সঠিক ইতিহাস জানানোর মাধ্যমে। এই জানানোটা যেন আবার যান্ত্রিক কিংবা শুধু কেতাবি না হয়। মা-বাবা বা যেকোনো অভিভাবক তাঁদের কথা, কাজ, আচরণে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকাশ করবেন, তখনই একটি পরিবারের নতুন প্রজন্ম সেই চেতনাকে ধারণ করতে শিখবে, স্বাধীনতা ও বিজয়ের সত্যিকারের স্বাদ পাবে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভের মধ্য দিয়ে যে দেশটি বাঙালি জাতি গড়েছিল, সেই দেশে কোনো দুর্নীতি, অসততা, অপরাধ, বৈষম্য থাকবে না বলেই তো শপথ নেওয়া হয়েছিল। বিজয়ের ৫৪ বছরেও যাঁরা প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাবের খাতা খুলে বসেন, তাঁরা হয়তো দেনার হিসাবটা করেন না। তবে তাঁরাও এ বিষয়ে সহমত হবেন যে ওই সব শপথ পূরণ করতে পারেনি কোনো রাজনৈতিক দলই। বরং সবাই মিলে শপথ ভঙ্গই করেছে। কোন আমলে হয়নি দুর্নীতি, খুনখারাবি, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ?
অথচ সবাই মিলেই গড়ে তোলা যেত একটি আদর্শ সমাজ। যে সমাজে কোনো নেতা প্রকাশ্যে গুলিবিদ্ধ হতেন না, কোনো শিশু বা বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করা হতো না, কারও বাড়িতে ঢুকে তাকে খুন করা হতো না। সেই সমাজ শতভাগ গড়া না গেলেও অন্তত অপরাধপ্রবণতা কমিয়ে আনা অসম্ভব কিছু নয়।
‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়’—এই সত্য বুকে ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়া কি এতটাই কঠিন? জাতিকে বিভাজিত করে ‘আমরা’ আর ‘ওরা’ বানিয়ে শান্তি আনা যায় না, এ কথা সবার মনে রাখা উচিত।
সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষম
১৯ জুন ২০২৫
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরে প্রত্যাশিত ছিল যে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁরা তা হননি। বরং বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একাংশ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জাতীয় বুর্জোয়াদের খুঁজতে চেষ্টা করেছে এবং আশা করেছে তথাকথিত এই বুর্জোয়াদের সাহায্যে বিপ্লব সংঘটিত করবে।
৩০ মিনিট আগে
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে
ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটি সিন্ডিকেটের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে—এমন একটি প্রশ্নের মুখে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহ তিনেক আগে।
১ দিন আগে
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গবেষণামূলক বই ‘নারী সত্তার অন্বেষণে’। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে একটি মহলের বিতর্কিত কথাবার্তা এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটাক্ষ করছেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি মূল ধারার গণমাধ্যমেও তাঁদের এই কীর্তি করতে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
প্রথমত, কারা এরা—সেই প্রশ্নটা জরুরি আমাদের জন্য। কারণ আমরা এমন একটা সময় পার করছি, যেখানে আসলে ওই অর্থে অথরিটি বা বুদ্ধিবৃত্তিক ঘরানা নেই, যেখান থেকে ভাবনা উৎপাদন হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দুর্বল হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রটিও দুর্বল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরই সুযোগে কিছু মানুষ তাঁদের নিজস্ব চিন্তা এবং যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ উৎপাদন করতে চান, তাঁরা সেই সুযোগের একধরনের সদ্ব্যবহার করছেন।
দ্বিতীয়ত, সাধারণত কোনো দেশের জন্ম হওয়ার পর সে দেশের নাগরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের লোকজনের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি থাকা লাগে। মানে নিজ দেশের, নিজ স্বাধীনতার এবং যুদ্ধ বা বিদ্রোহকে ধারণ করতে পারা। দুঃখজনক হলো, বিজয়ের এত বছর পার হওয়ার পরেও ব্যক্তি-দল-মত-পথ-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে আমাদের নিজেদের যে বিজয়ের ইতিহাস এবং নিজের অর্জনের ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নানা সময়ে নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কটাক্ষ করার যে স্পর্ধা, সেটাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে অথবা ক্ষমতার অদল-বদলে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশ্রয়েরই একটা দানবীয় রূপ ৫৪ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো দুঃসাহস এবং স্পর্ধা দেখাতে পারছে।
কিছু মীমাংসিত প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক তোলা হচ্ছে। এর পেছনে কোনো গূঢ় রহস্য আছে বলে মনে করেন কি?
এতে কোনো গূঢ় রহস্য নেই। তবে এটা একটা ঐতিহাসিক প্রকল্পের অংশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, তার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ হয়ে ওঠার গল্পটা এ দেশীয় নয়। ১৯৭১ সালের আগে থেকে একটা বিশেষ মহল একটা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানিদের ইতিহাসের বইপত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেখানকার বক্তব্য কিন্তু একই ছিল। এখন তারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, আগেও তারা সেটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে একাত্তরের সময় প্রতিবেশী যে দেশটি আমাদের সহযোগিতা করেছে, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে তাদের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্বকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকে। এই উভয় পক্ষের প্রতি আমাদের দেশের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রভাবিত। আবার ২০২৪-এর এত বড় একটা গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পরেও তাদের অনেকের উদ্দেশ্য কিন্তু এখনো পাকিস্তানপন্থীদের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা।
গত সরকারের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ তোলা যায়, তারা ভারতীয়দের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে, একইভাবে বর্তমান যাদের অধীনে আমরা শাসিত হচ্ছি, তারাও বীরদর্পে তাদের (বিগত সরকারের) অনুসরণে পাকিস্তানিদের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠায় তৎপর।
এই সময়ে যে বা যারা এ ধরনের ন্যারেটিভ উৎপাদন করছে, তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা খুব জরুরি। কারণ, আমাদের দেশটির একটা ইতিহাস আছে, সেটাই আমাদের শিকড়। এখন কেউ যদি শিকড় উৎপাটন করার চেষ্টা করে, সেটা গূঢ় রহস্য না, সেটা হলো একটা ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র। মূলত বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির নিমিত্তে ও অবাধ ক্ষমতাচর্চার লক্ষ্যে মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে তারা বারবার বিতর্ক তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিতর্ক তৈরি করার মধ্য দিয়ে তারা তাদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে, যাতে করে আমরা তাদের নিয়ে কথা বলি এবং আমাদের যা করণীয়, সে বিষয়গুলোতে মনোযোগ না দিই।
মুক্তিযুদ্ধের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস আছে। কিন্তু সেই ইতিহাসকে বিতর্কিত করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে। সরকার এ ব্যাপারে কেন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তো অন্তত একটা সতর্কবার্তা দেওয়ার দরকার ছিল এ সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ, এ মাসটা হলো বিজয়ের। সেটুকুও কিন্তু করা হয়নি। মূল কারণ আমরা মোটামুটি সবাই বুঝতে পারি। কারণ, এই সরকারের সঙ্গে যাঁরা স্বাধীনতাযুদ্ধকে বিশ্বাস করেন—এমন লোকজন যেমন আছেন, তেমনি যাঁরা এ দেশের স্বাধীনতার অর্জনকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দিতে চান না, সে রকম লোকজনও (সম্ভবত) খুব শক্তিশালীভাবে আছেন। সে কারণে সরকার এ ধরনের বিষয়ে একটা শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
তাঁদের এত আস্ফালনের পরেও কি আপনি মনে করেন তাঁরা সফল হতে পারবেন?
একাত্তর সালের আগে থেকেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসীম শক্তি আছে। আসলে একাত্তর সালের যুদ্ধটা ছিল গণমানুষের। এ দেশটা যখনই অন্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে, তখনই কিন্তু গণমানুষ বীরদর্পে প্রাণ দিয়ে দেশকে রক্ষার শপথ নিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। কাজেই এখন আস্ফালনটা দেখা যাচ্ছে এ কারণে যে বর্তমানে এখানে কোনো প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সরকার নেই। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পঙ্গু। আবার আমরা একটা অসময়ের মধ্যে আছি। এই অসময়েই কিন্তু সবচেয়ে বেশি শত্রু-মিত্র, মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতককে চেনা যায়। অন্ধকার সময়ে চেনা যায়, এ দেশকে কারা ধারণ করে এবং কারা এ দেশের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
আমি তো মনে করি, এই আস্ফালন আমাদের একটা যুগান্তকারী সুযোগ করে দিয়েছে। তার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পেরেছি কারা বাংলাদেশের পক্ষে আর কারা বিপক্ষে। এবং কারা আমাদের স্বাধীনতার অর্জনের ইতিহাসকে বিকৃত করার চক্রান্তে শামিল হয়েছে।
এই চেনার সুযোগটা আমাদের জন্য মন্দের ভালো বলা যেতে পারে। তবে আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না, তারা জয়যুক্ত হবে। বাংলাদেশের জন্মের সংগ্রামের ইতিহাস, লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতার অর্জন—সেই আস্থা ও বিশ্বাস যতক্ষণ এ দেশের মানুষের মনে গেঁথে থাকবে, যতক্ষণ এ দেশের মানুষ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে; তার যদি গুটিকয়েকও হয়, তাহলেও আমি মনে করি, এই অপশক্তি অবশ্যই পরাজিত হবে। এই মুক্তিযুদ্ধকে যদি কোনো রাজনৈতিক দল তার নিজের বলে দাবি করে, তাতে বাংলাদেশের মানুষ বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হবে, এটা কোনো একক দলের অর্জন না। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধকে যদি কেউ শুধু প্রতিরোধযুদ্ধ বা যুদ্ধটা সেভাবে আমাদের যুদ্ধ ছিল না—এ রকম বয়ান প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে সে বয়ানের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ কড়ায়-গন্ডায় উপযুক্ত শিক্ষা দিতে প্রস্তুত বলে আমি বিশ্বাস করি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ইনক্লুসিভ এবং ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা করতে পারি কি?
ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। আমরা আর কোনোভাবেই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো অগণতান্ত্রিক কোনো নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা করি না। আমি মনে করি, এ দেশের মানুষের যথেষ্ট পরিমাণ বিবেক-বিবেচনা বোধ আছে। তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন যে কাকে নির্বাচিত করবেন আর কাকে করবেন না।
সে ক্ষেত্রে যদি অযাচিতভাবে আইনের অনুসরণ না করে অথবা ক্ষমতাবলে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব না, সেটা আর যা-ই হোক ইনক্লুসিভ নির্বাচন হবে না। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যিনি বা যাঁরা জুলাই এবং একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বাদ দিয়ে যাঁরা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেন এবং সর্বোপরি অন্য কোনো রাষ্ট্রের চেয়ে শুধু বাংলাদেশের হয়ে কাজ করতে চান, তাঁদের সবাইকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার পরেই ভোল পাল্টে ফেলে। নতুনভাবে নির্বাচিত কোন সরকারের সে রকম হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু?
এটা নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনটা কীভাবে হচ্ছে। কারণ নির্বাচনে যদি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয় অর্থাৎ যেখানে জনগণের মতামতের বহিঃপ্রকাশ না ঘটে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে, তাহলে ভয়াবহতার শঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও রাখার কোনো মানে দাঁড়ায় না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রার্থীরা যেভাবে প্রচার-প্রচারণা করে নানা ধরনের অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া শুরু করেছেন, তাতে যৌক্তিকভাবে সেসব দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে প্রমাণ হয় যে তাঁরা আসলে নির্বাচনের জন্যই প্রতিশ্রুতিগুলো দিচ্ছেন। কোনো প্রার্থী এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন যেমন আমরা সবাই জানি, একটা শিশু জন্ম নিচ্ছে ঋণের বোঝা নিয়ে। সেখানে তাঁরা অপ্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এগুলো সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিমূলক প্রতিশ্রুতি। এভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যদি তাঁরা ক্ষমতায় যান, তাঁরা তো সেসব রাখতে পারবেন না। তাঁরা মূলত প্রতিশ্রুতি ভাঙার জন্য তা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ক্ষমতায় যাওয়াটাই হলো তাঁদের মূল লক্ষ্য।
জুলাই আন্দোলনের পরেও আমরা যদি এসব থেকে বের হতে না পারি, তাহলে তো সমস্যা থেকে যাবে। ক্ষমতার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এ দেশকে সেবামূলক রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমি ক্ষমতায় যাব এ জন্য না যে আমার পেশি বা প্রশাসনিক শক্তি আছে। আমি ক্ষমতায় যাব এ কারণে যে জনগণ যেন বিশ্বাস করেন আমি তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারব।
যখন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এ জায়গায় চিন্তা করতে শুরু করবে, তখন একটা পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না এবং দেখাও যাচ্ছে না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে কটাক্ষ করছেন কেউ কেউ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি মূল ধারার গণমাধ্যমেও তাঁদের এই কীর্তি করতে দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
প্রথমত, কারা এরা—সেই প্রশ্নটা জরুরি আমাদের জন্য। কারণ আমরা এমন একটা সময় পার করছি, যেখানে আসলে ওই অর্থে অথরিটি বা বুদ্ধিবৃত্তিক ঘরানা নেই, যেখান থেকে ভাবনা উৎপাদন হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রের অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো দুর্বল হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রটিও দুর্বল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরই সুযোগে কিছু মানুষ তাঁদের নিজস্ব চিন্তা এবং যেভাবে মুক্তিযুদ্ধের ন্যারেটিভ উৎপাদন করতে চান, তাঁরা সেই সুযোগের একধরনের সদ্ব্যবহার করছেন।
দ্বিতীয়ত, সাধারণত কোনো দেশের জন্ম হওয়ার পর সে দেশের নাগরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের লোকজনের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি থাকা লাগে। মানে নিজ দেশের, নিজ স্বাধীনতার এবং যুদ্ধ বা বিদ্রোহকে ধারণ করতে পারা। দুঃখজনক হলো, বিজয়ের এত বছর পার হওয়ার পরেও ব্যক্তি-দল-মত-পথ-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে আমাদের নিজেদের যে বিজয়ের ইতিহাস এবং নিজের অর্জনের ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে নানা সময়ে নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কটাক্ষ করার যে স্পর্ধা, সেটাকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে অথবা ক্ষমতার অদল-বদলে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। সেই প্রশ্রয়েরই একটা দানবীয় রূপ ৫৪ বছর পর আমরা দেখতে পাচ্ছি এখন, যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো দুঃসাহস এবং স্পর্ধা দেখাতে পারছে।
কিছু মীমাংসিত প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক তোলা হচ্ছে। এর পেছনে কোনো গূঢ় রহস্য আছে বলে মনে করেন কি?
এতে কোনো গূঢ় রহস্য নেই। তবে এটা একটা ঐতিহাসিক প্রকল্পের অংশ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, তার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ হয়ে ওঠার গল্পটা এ দেশীয় নয়। ১৯৭১ সালের আগে থেকে একটা বিশেষ মহল একটা ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানিদের ইতিহাসের বইপত্র ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেখানকার বক্তব্য কিন্তু একই ছিল। এখন তারা যেসব বক্তব্য দিচ্ছে, আগেও তারা সেটা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে একাত্তরের সময় প্রতিবেশী যে দেশটি আমাদের সহযোগিতা করেছে, দুঃখজনক হলেও সত্যি যে তাদের বিভিন্ন চলচ্চিত্রে এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বন্দ্বকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে থাকে। এই উভয় পক্ষের প্রতি আমাদের দেশের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল প্রভাবিত। আবার ২০২৪-এর এত বড় একটা গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার পরেও তাদের অনেকের উদ্দেশ্য কিন্তু এখনো পাকিস্তানপন্থীদের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করা।
গত সরকারের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ তোলা যায়, তারা ভারতীয়দের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছে, একইভাবে বর্তমান যাদের অধীনে আমরা শাসিত হচ্ছি, তারাও বীরদর্পে তাদের (বিগত সরকারের) অনুসরণে পাকিস্তানিদের ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠায় তৎপর।
এই সময়ে যে বা যারা এ ধরনের ন্যারেটিভ উৎপাদন করছে, তাদের বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা খুব জরুরি। কারণ, আমাদের দেশটির একটা ইতিহাস আছে, সেটাই আমাদের শিকড়। এখন কেউ যদি শিকড় উৎপাটন করার চেষ্টা করে, সেটা গূঢ় রহস্য না, সেটা হলো একটা ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র। মূলত বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির নিমিত্তে ও অবাধ ক্ষমতাচর্চার লক্ষ্যে মীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে তারা বারবার বিতর্ক তৈরির চেষ্টায় লিপ্ত হয়। বিতর্ক তৈরি করার মধ্য দিয়ে তারা তাদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করে, যাতে করে আমরা তাদের নিয়ে কথা বলি এবং আমাদের যা করণীয়, সে বিষয়গুলোতে মনোযোগ না দিই।
মুক্তিযুদ্ধের একটি ধারাবাহিক ইতিহাস আছে। কিন্তু সেই ইতিহাসকে বিতর্কিত করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে। সরকার এ ব্যাপারে কেন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
যারা মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে তো অন্তত একটা সতর্কবার্তা দেওয়ার দরকার ছিল এ সরকারের পক্ষ থেকে। কারণ, এ মাসটা হলো বিজয়ের। সেটুকুও কিন্তু করা হয়নি। মূল কারণ আমরা মোটামুটি সবাই বুঝতে পারি। কারণ, এই সরকারের সঙ্গে যাঁরা স্বাধীনতাযুদ্ধকে বিশ্বাস করেন—এমন লোকজন যেমন আছেন, তেমনি যাঁরা এ দেশের স্বাধীনতার অর্জনকে কোনোভাবেই স্বীকৃতি দিতে চান না, সে রকম লোকজনও (সম্ভবত) খুব শক্তিশালীভাবে আছেন। সে কারণে সরকার এ ধরনের বিষয়ে একটা শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।
তাঁদের এত আস্ফালনের পরেও কি আপনি মনে করেন তাঁরা সফল হতে পারবেন?
একাত্তর সালের আগে থেকেই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসীম শক্তি আছে। আসলে একাত্তর সালের যুদ্ধটা ছিল গণমানুষের। এ দেশটা যখনই অন্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে, তখনই কিন্তু গণমানুষ বীরদর্পে প্রাণ দিয়ে দেশকে রক্ষার শপথ নিয়ে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। কাজেই এখন আস্ফালনটা দেখা যাচ্ছে এ কারণে যে বর্তমানে এখানে কোনো প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক সরকার নেই। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পঙ্গু। আবার আমরা একটা অসময়ের মধ্যে আছি। এই অসময়েই কিন্তু সবচেয়ে বেশি শত্রু-মিত্র, মীরজাফর, বিশ্বাসঘাতককে চেনা যায়। অন্ধকার সময়ে চেনা যায়, এ দেশকে কারা ধারণ করে এবং কারা এ দেশের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
আমি তো মনে করি, এই আস্ফালন আমাদের একটা যুগান্তকারী সুযোগ করে দিয়েছে। তার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পেরেছি কারা বাংলাদেশের পক্ষে আর কারা বিপক্ষে। এবং কারা আমাদের স্বাধীনতার অর্জনের ইতিহাসকে বিকৃত করার চক্রান্তে শামিল হয়েছে।
এই চেনার সুযোগটা আমাদের জন্য মন্দের ভালো বলা যেতে পারে। তবে আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করি না, তারা জয়যুক্ত হবে। বাংলাদেশের জন্মের সংগ্রামের ইতিহাস, লাখ লাখ মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতার অর্জন—সেই আস্থা ও বিশ্বাস যতক্ষণ এ দেশের মানুষের মনে গেঁথে থাকবে, যতক্ষণ এ দেশের মানুষ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে; তার যদি গুটিকয়েকও হয়, তাহলেও আমি মনে করি, এই অপশক্তি অবশ্যই পরাজিত হবে। এই মুক্তিযুদ্ধকে যদি কোনো রাজনৈতিক দল তার নিজের বলে দাবি করে, তাতে বাংলাদেশের মানুষ বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হবে, এটা কোনো একক দলের অর্জন না। একইভাবে মুক্তিযুদ্ধকে যদি কেউ শুধু প্রতিরোধযুদ্ধ বা যুদ্ধটা সেভাবে আমাদের যুদ্ধ ছিল না—এ রকম বয়ান প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে সে বয়ানের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ কড়ায়-গন্ডায় উপযুক্ত শিক্ষা দিতে প্রস্তুত বলে আমি বিশ্বাস করি।
আগামী জাতীয় নির্বাচন ইনক্লুসিভ এবং ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা করতে পারি কি?
ইনক্লুসিভ নির্বাচনের জন্য সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হয়। আমরা আর কোনোভাবেই ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো অগণতান্ত্রিক কোনো নির্বাচন দেখার প্রত্যাশা করি না। আমি মনে করি, এ দেশের মানুষের যথেষ্ট পরিমাণ বিবেক-বিবেচনা বোধ আছে। তাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখেন যে কাকে নির্বাচিত করবেন আর কাকে করবেন না।
সে ক্ষেত্রে যদি অযাচিতভাবে আইনের অনুসরণ না করে অথবা ক্ষমতাবলে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব না, সেটা আর যা-ই হোক ইনক্লুসিভ নির্বাচন হবে না। সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, যিনি বা যাঁরা জুলাই এবং একাত্তরের হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের বাদ দিয়ে যাঁরা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে বিশ্বাস করেন এবং সর্বোপরি অন্য কোনো রাষ্ট্রের চেয়ে শুধু বাংলাদেশের হয়ে কাজ করতে চান, তাঁদের সবাইকে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া উচিত।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় যাওয়ার পরেই ভোল পাল্টে ফেলে। নতুনভাবে নির্বাচিত কোন সরকারের সে রকম হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু?
এটা নির্ভর করবে আগামী নির্বাচনটা কীভাবে হচ্ছে। কারণ নির্বাচনে যদি ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয় অর্থাৎ যেখানে জনগণের মতামতের বহিঃপ্রকাশ না ঘটে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকে, তাহলে ভয়াবহতার শঙ্কা আছে। সে ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও রাখার কোনো মানে দাঁড়ায় না।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, প্রার্থীরা যেভাবে প্রচার-প্রচারণা করে নানা ধরনের অযৌক্তিক প্রতিশ্রুতি দেওয়া শুরু করেছেন, তাতে যৌক্তিকভাবে সেসব দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে প্রমাণ হয় যে তাঁরা আসলে নির্বাচনের জন্যই প্রতিশ্রুতিগুলো দিচ্ছেন। কোনো প্রার্থী এমন প্রতিশ্রুতি দিলেন যেমন আমরা সবাই জানি, একটা শিশু জন্ম নিচ্ছে ঋণের বোঝা নিয়ে। সেখানে তাঁরা অপ্রয়োজনীয় খাতে ভর্তুকি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এগুলো সম্পূর্ণভাবে বিভ্রান্তিমূলক প্রতিশ্রুতি। এভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যদি তাঁরা ক্ষমতায় যান, তাঁরা তো সেসব রাখতে পারবেন না। তাঁরা মূলত প্রতিশ্রুতি ভাঙার জন্য তা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ ক্ষমতায় যাওয়াটাই হলো তাঁদের মূল লক্ষ্য।
জুলাই আন্দোলনের পরেও আমরা যদি এসব থেকে বের হতে না পারি, তাহলে তো সমস্যা থেকে যাবে। ক্ষমতার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এ দেশকে সেবামূলক রাষ্ট্রে পরিণত করা। আমি ক্ষমতায় যাব এ জন্য না যে আমার পেশি বা প্রশাসনিক শক্তি আছে। আমি ক্ষমতায় যাব এ কারণে যে জনগণ যেন বিশ্বাস করেন আমি তাঁদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারব।
যখন আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এ জায়গায় চিন্তা করতে শুরু করবে, তখন একটা পরিবর্তন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না এবং দেখাও যাচ্ছে না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষম
১৯ জুন ২০২৫
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরে প্রত্যাশিত ছিল যে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁরা তা হননি। বরং বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একাংশ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জাতীয় বুর্জোয়াদের খুঁজতে চেষ্টা করেছে এবং আশা করেছে তথাকথিত এই বুর্জোয়াদের সাহায্যে বিপ্লব সংঘটিত করবে।
৩০ মিনিট আগে
ফিবছর একই মহিমায় ফিরে আসে আজকের দিনটা—১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।
৩৭ মিনিট আগে
ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটি সিন্ডিকেটের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে—এমন একটি প্রশ্নের মুখে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহ তিনেক আগে।
১ দিন আগেআজাদুর রহমান চন্দন

ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটি সিন্ডিকেটের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে—এমন একটি প্রশ্নের মুখে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহ তিনেক আগে। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডিসি-ইউএনও পাঠিয়ে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সরকার। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এগুলোর সল্যুশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে হয় না। এগুলো করতে পারে একটি রাজনৈতিক সরকার। কারণ তাদের এ মোরাল সল্যুশন করার সক্ষমতা থাকে। তাদের ভয়েসটা দিতে পারে। তাদের কর্মীরা আছে। তাদের সেটআপ আছে। কিন্তু এই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে ডিসিকে পাঠিয়ে, ইউএনওকে পাঠিয়ে এগুলো কন্ট্রোল করা ডিফিকাল্ট।’ উপদেষ্টা ‘রাজনৈতিক সরকার’ শব্দযুগল ব্যবহার করলেও কার্যত নির্বাচিত সরকারকেই বুঝিয়েছিলেন। দশ-বিশ-পঞ্চাশ বছর অনির্বাচিত সরকার রাখার বাসনা যাদের, তারা এ বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকতেও পারেন। তবে অনির্বাচিত সরকারের একটি সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরায় সালেহউদ্দিন আহমেদ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রশংসা কুড়াবেন আরও বহুদিন।
অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাস ছয়েক আগে। কিন্তু ঘোষিত সময়ে নির্বাচন সত্যিই অনুষ্ঠিত হবে কি না, সে নিয়ে শঙ্কা-সংশয়-সন্দেহ পিছু ছাড়েনি এক দিনের জন্যও। দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এমন সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে সম্ভাব্য এক প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনায় পুরোনো শঙ্কা-সংশয় আরও জোরালো হয়েছে। কে না জানে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘ভালোমন্দ’ নির্ধারক প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী। সবশেষ গত শুক্রবার রাজধানীতে দিনদুপুরে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে, যিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। আগের মাসেই চট্টগ্রামে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনাকে ‘সাধারণ অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা কঠিন।
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। কোনো সময়ই না। আমাদের মতাদর্শ যা-ই হোক, যে কেউ ভয়ভীতি বা শক্তির আশ্রয় নিলে তাকে একসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’ গুলিবিদ্ধ হাদিকে দেখতে সেদিন বিকেলেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনে দলটির ঘোষিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস। সে সময় সেখানে উপস্থিত ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীদের এবং মির্জা আব্বাসের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয়। কিছুক্ষণ পর মির্জা আব্বাস তাঁর কর্মীদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। এর আগে এবং বলা চলে হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপর এক ছাত্রনেতা ঘটনার জন্য ইঙ্গিতে বিএনপিকে দায়ী করে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানেরও ডাক দেন। শোনা যাচ্ছে, ওই ছাত্রনেতাও নাকি ঢাকা-৮ আসনে নিজ দলের প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হাদির সঙ্গে তাঁরই মূলত ভোট ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ আপাতদৃষ্টিতে বদনামের ভাগীদার বিএনপি!
হাদির ওপর হামলার মাধ্যমে কেউ এক ঢিলে বহু পাখি মারার চেষ্টা করেছে কি না, সেটি এখনই বলা যাবে না। তদন্তসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোই হয়তো প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করলেও করতে পারে। তবে বিষয়টি যে বিএনপিকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে উদ্বেগ স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হচ্ছে, এভাবেই কি চলতে থাকবে? তাহলে কোনো মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না—এটা আজকে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।’ তিনি বলেন, ‘কেউ আবার ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিচ্ছেন। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দল বিএনপিকে লক্ষ্য করে ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছে। এগুলোতে তো সন্দেহ জাগে। একজন উপদেষ্টা মাত্র চার-পাঁচ দিন আগে বলে দিলেন, জনগণ তো আমাদের ম্যান্ডেট দেয়নি কত দিন থাকব। সবকিছু মিলিয়েই নানা সন্দেহ, নানা সংশয়, নানা ধরনের কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে।’
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের এক সদস্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, যারা ওসমান হাদির ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তাঁর প্রচার টিমে যোগ দিয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা একটি গণমাধ্যমে জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্য থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালায়। এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচার টিমে যোগ দিয়েছিল। মাঝখানে কিছুদিন তাদের দেখা যায়নি। কয়েক দিন আগে তারা আবার এসে প্রচার কাজে যোগ দেয়। কেউ কেউ সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে একজনের অতীত ‘লীগসংশ্লিষ্টতা’ প্রমাণ করতেও বেজায় তৎপর।
এ তৎপরতা দেখে কেবলই মনে পড়ছে, গণ-অভ্যুত্থানের নায়কের আদলে যেসব ‘মুখ’ এখন ঝলসে উঠছে, তাদের বেশির ভাগেরই কিন্তু একই রকম সংশ্লিষ্টতা ছিল। অর্থাৎ তখন তারা ছিল লীগের ‘মুখোশ’। সন্দেহভাজন ব্যক্তিও তেমনই একজন মুখোশধারী কি না, কে বলতে পারে? কারণ এই ব্যক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে ১৭ লাখ টাকা লুটের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিল। আগে লীগসংশ্লিষ্ট হয়েও এখন তাহলে কোন সংশ্লিষ্টতার জাদুবলে এত সহজে জামিন পেয়ে ইনকিলাব মঞ্চে ভিড়ে একেবারে সংগঠনের শীর্ষনেতার গা ঘেঁষে বসার সুযোগ পেয়ে গেল?
এক দলের সদস্য হয়েও অন্য দলে কাজ করার নজির যে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল, তা কিন্তু নয়। স্বাধীনতা-পূর্বকালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকাবস্থায় দলটির অনেক সদস্য আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের মতো বড় দলে কাজ করতেন। তবে তাঁরা ওই দলগুলোর জন্য বদনাম বয়ে আনার মতো কোনো কাজ করেননি। বরং তাঁদের কারণে সংশ্লিষ্ট দলগুলোই উপকৃত হয়েছিল। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদও একসময় গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। প্রয়াত মহিউদ্দীন আহমেদ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েও ন্যাপের নেতা ছিলেন। পরে বাকশাল হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও তাঁর পরিচিতি ছিল ‘আওয়ামী লীগের ন্যাপ নেতা’ হিসেবে। সেই পরিচয় ছিল গৌরবের। তাঁরা কারও সঙ্গে প্রতারণা বা ছলনা করেননি। সে প্রসঙ্গ থাক।
জুলাই আন্দোলনের মাঝামাঝি থেকেই অনেকের মুখের মুখোশ খসে পড়ছিল। ৫ আগস্টের পর তো অনেকের মুখ থেকে মুখোশ পরার মাজেজাও বেরিয়ে আসে অবলীলায়। ইদানীং আবার শুরু হয়েছে মুখ ও মুখোশের খেলা। সামনের দিনগুলোতে নাকি এ খেলা জমজমাট হবে। এক অনুজ সংবাদকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারলাম, মুখোশ পরায় পারদর্শী একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা নাকি কিছুদিন আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপিতে তাঁদের কত লোক আছে, তা জানলে সবার চোখ কপালে উঠবে। নির্বাচন যত কাছে আসবে, ওই ব্যক্তিরাও ততই বেশি সংখ্যায় বেরিয়ে আসবেন মুখোশ ছেড়ে! তথ্যটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল, গত সপ্তাহেই নরসিংদীতে একটি ইউনিয়ন বিএনপির ৭৫ নেতা-কর্মী অন্য একটি দলে যোগ দিয়েছেন।
এমনিতেই গত বছর লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি-বিস্ফোরকের সব এখনো উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার না হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা দেড় হাজারের মতো। গণ-অভ্যুত্থানের সময় এবং তার পরপর বিভিন্ন কারাগার, থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ স্থাপনা থেকে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি-বিস্ফোরক লুট করা হয়েছিল। এসব অস্ত্রশস্ত্র কাদের অবৈধ দখলে থাকতে পারে, তা কি আঁচ করা একেবারেই অসম্ভব? অস্ত্রের রাজনীতিতে কারা সিদ্ধহস্ত, তা কি সবার অজানা? এই অস্ত্রধারীরা যে এক মুখোশ ছেড়ে নতুন কোনো মুখোশ নিয়ে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে তৎপর হবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কী?
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম যে ঊর্ধ্বমুখী, সেটি সিন্ডিকেটের কারণে নাকি অন্য কোনো কারণে—এমন একটি প্রশ্নের মুখে অনেকটা সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সপ্তাহ তিনেক আগে। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডিসি-ইউএনও পাঠিয়ে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সরকার। এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এগুলোর সল্যুশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে হয় না। এগুলো করতে পারে একটি রাজনৈতিক সরকার। কারণ তাদের এ মোরাল সল্যুশন করার সক্ষমতা থাকে। তাদের ভয়েসটা দিতে পারে। তাদের কর্মীরা আছে। তাদের সেটআপ আছে। কিন্তু এই অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে ডিসিকে পাঠিয়ে, ইউএনওকে পাঠিয়ে এগুলো কন্ট্রোল করা ডিফিকাল্ট।’ উপদেষ্টা ‘রাজনৈতিক সরকার’ শব্দযুগল ব্যবহার করলেও কার্যত নির্বাচিত সরকারকেই বুঝিয়েছিলেন। দশ-বিশ-পঞ্চাশ বছর অনির্বাচিত সরকার রাখার বাসনা যাদের, তারা এ বক্তব্যে অসন্তুষ্ট হয়ে থাকতেও পারেন। তবে অনির্বাচিত সরকারের একটি সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে তুলে ধরায় সালেহউদ্দিন আহমেদ শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রশংসা কুড়াবেন আরও বহুদিন।
অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছিলেন মাস ছয়েক আগে। কিন্তু ঘোষিত সময়ে নির্বাচন সত্যিই অনুষ্ঠিত হবে কি না, সে নিয়ে শঙ্কা-সংশয়-সন্দেহ পিছু ছাড়েনি এক দিনের জন্যও। দেশে ক্রিয়াশীল সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও এমন সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। কিন্তু তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই খোদ রাজধানীতে সম্ভাব্য এক প্রার্থীকে গুলি করার ঘটনায় পুরোনো শঙ্কা-সংশয় আরও জোরালো হয়েছে। কে না জানে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকা অন্যতম প্রধান শর্ত। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘ভালোমন্দ’ নির্ধারক প্রায় সব সূচকই নিম্নমুখী। সবশেষ গত শুক্রবার রাজধানীতে দিনদুপুরে গুলি করা হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে, যিনি ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। আগের মাসেই চট্টগ্রামে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এসব ঘটনাকে ‘সাধারণ অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা কঠিন।
হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপরই এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। কোনো সময়ই না। আমাদের মতাদর্শ যা-ই হোক, যে কেউ ভয়ভীতি বা শক্তির আশ্রয় নিলে তাকে একসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’ গুলিবিদ্ধ হাদিকে দেখতে সেদিন বিকেলেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৮ আসনে দলটির ঘোষিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস। সে সময় সেখানে উপস্থিত ইনকিলাব মঞ্চের কর্মীদের এবং মির্জা আব্বাসের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয়। কিছুক্ষণ পর মির্জা আব্বাস তাঁর কর্মীদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। এর আগে এবং বলা চলে হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরপর এক ছাত্রনেতা ঘটনার জন্য ইঙ্গিতে বিএনপিকে দায়ী করে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থানেরও ডাক দেন। শোনা যাচ্ছে, ওই ছাত্রনেতাও নাকি ঢাকা-৮ আসনে নিজ দলের প্রার্থী হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে হাদির সঙ্গে তাঁরই মূলত ভোট ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথচ আপাতদৃষ্টিতে বদনামের ভাগীদার বিএনপি!
হাদির ওপর হামলার মাধ্যমে কেউ এক ঢিলে বহু পাখি মারার চেষ্টা করেছে কি না, সেটি এখনই বলা যাবে না। তদন্তসংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোই হয়তো প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করলেও করতে পারে। তবে বিষয়টি যে বিএনপিকে যথেষ্ট ভাবাচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যে উদ্বেগ স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় আশঙ্কার কথা হচ্ছে, এভাবেই কি চলতে থাকবে? তাহলে কোনো মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না—এটা আজকে সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে।’ তিনি বলেন, ‘কেউ আবার ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিচ্ছেন। ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে একটি রাজনৈতিক দল বিএনপিকে লক্ষ্য করে ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছে। এগুলোতে তো সন্দেহ জাগে। একজন উপদেষ্টা মাত্র চার-পাঁচ দিন আগে বলে দিলেন, জনগণ তো আমাদের ম্যান্ডেট দেয়নি কত দিন থাকব। সবকিছু মিলিয়েই নানা সন্দেহ, নানা সংশয়, নানা ধরনের কৌতূহল সৃষ্টি হচ্ছে।’
এদিকে ইনকিলাব মঞ্চের এক সদস্যের বরাত দিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, যারা ওসমান হাদির ওপর হামলা চালিয়েছে, তারা প্রায় দুই সপ্তাহ আগে তাঁর প্রচার টিমে যোগ দিয়েছিল। ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য মোহাম্মদ ওসামা একটি গণমাধ্যমে জানান, একটি মোটরসাইকেলে করে আসা দুজনের মধ্য থেকে একজন ওসমান হাদির ওপর গুলি চালায়। এই দুজন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ওসমান হাদির প্রচার টিমে যোগ দিয়েছিল। মাঝখানে কিছুদিন তাদের দেখা যায়নি। কয়েক দিন আগে তারা আবার এসে প্রচার কাজে যোগ দেয়। কেউ কেউ সন্দেহভাজন হামলাকারীদের মধ্যে একজনের অতীত ‘লীগসংশ্লিষ্টতা’ প্রমাণ করতেও বেজায় তৎপর।
এ তৎপরতা দেখে কেবলই মনে পড়ছে, গণ-অভ্যুত্থানের নায়কের আদলে যেসব ‘মুখ’ এখন ঝলসে উঠছে, তাদের বেশির ভাগেরই কিন্তু একই রকম সংশ্লিষ্টতা ছিল। অর্থাৎ তখন তারা ছিল লীগের ‘মুখোশ’। সন্দেহভাজন ব্যক্তিও তেমনই একজন মুখোশধারী কি না, কে বলতে পারে? কারণ এই ব্যক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে ১৭ লাখ টাকা লুটের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গিয়েছিল। আগে লীগসংশ্লিষ্ট হয়েও এখন তাহলে কোন সংশ্লিষ্টতার জাদুবলে এত সহজে জামিন পেয়ে ইনকিলাব মঞ্চে ভিড়ে একেবারে সংগঠনের শীর্ষনেতার গা ঘেঁষে বসার সুযোগ পেয়ে গেল?
এক দলের সদস্য হয়েও অন্য দলে কাজ করার নজির যে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল, তা কিন্তু নয়। স্বাধীনতা-পূর্বকালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ থাকাবস্থায় দলটির অনেক সদস্য আওয়ামী লীগ ও ন্যাপের মতো বড় দলে কাজ করতেন। তবে তাঁরা ওই দলগুলোর জন্য বদনাম বয়ে আনার মতো কোনো কাজ করেননি। বরং তাঁদের কারণে সংশ্লিষ্ট দলগুলোই উপকৃত হয়েছিল। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদও একসময় গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। প্রয়াত মহিউদ্দীন আহমেদ কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হয়েও ন্যাপের নেতা ছিলেন। পরে বাকশাল হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও তাঁর পরিচিতি ছিল ‘আওয়ামী লীগের ন্যাপ নেতা’ হিসেবে। সেই পরিচয় ছিল গৌরবের। তাঁরা কারও সঙ্গে প্রতারণা বা ছলনা করেননি। সে প্রসঙ্গ থাক।
জুলাই আন্দোলনের মাঝামাঝি থেকেই অনেকের মুখের মুখোশ খসে পড়ছিল। ৫ আগস্টের পর তো অনেকের মুখ থেকে মুখোশ পরার মাজেজাও বেরিয়ে আসে অবলীলায়। ইদানীং আবার শুরু হয়েছে মুখ ও মুখোশের খেলা। সামনের দিনগুলোতে নাকি এ খেলা জমজমাট হবে। এক অনুজ সংবাদকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারলাম, মুখোশ পরায় পারদর্শী একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা নাকি কিছুদিন আগে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকদের বলেছেন, বিএনপিতে তাঁদের কত লোক আছে, তা জানলে সবার চোখ কপালে উঠবে। নির্বাচন যত কাছে আসবে, ওই ব্যক্তিরাও ততই বেশি সংখ্যায় বেরিয়ে আসবেন মুখোশ ছেড়ে! তথ্যটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে গেল, গত সপ্তাহেই নরসিংদীতে একটি ইউনিয়ন বিএনপির ৭৫ নেতা-কর্মী অন্য একটি দলে যোগ দিয়েছেন।
এমনিতেই গত বছর লুট হওয়া বিপুলসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি-বিস্ফোরকের সব এখনো উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার না হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা দেড় হাজারের মতো। গণ-অভ্যুত্থানের সময় এবং তার পরপর বিভিন্ন কারাগার, থানা, ফাঁড়ি ও পুলিশ স্থাপনা থেকে এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি-বিস্ফোরক লুট করা হয়েছিল। এসব অস্ত্রশস্ত্র কাদের অবৈধ দখলে থাকতে পারে, তা কি আঁচ করা একেবারেই অসম্ভব? অস্ত্রের রাজনীতিতে কারা সিদ্ধহস্ত, তা কি সবার অজানা? এই অস্ত্রধারীরা যে এক মুখোশ ছেড়ে নতুন কোনো মুখোশ নিয়ে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে তৎপর হবে না, তারই বা নিশ্চয়তা কী?
লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

শুধু বাংলাদেশই না, সারা পৃথিবীটাই একটা রণাঙ্গনে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধ বলতে যা বোঝায়, তার একটা চরম প্রদর্শনী হচ্ছে ইসরায়েলে। যুদ্ধবাজ এক জাতি তার নিরপরাধ প্রতিবেশী গাজা উপত্যকায় একটা মৃত্যুফাঁদ রচনা করে রক্তের উন্মুক্ত খেলায় মেতেছে। সেই জায়গা থেকে তারা অস্ত্রের মাধ্যমে অগ্রসর হচ্ছে ইরানে। ইরানের ক্ষম
১৯ জুন ২০২৫
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের পরে প্রত্যাশিত ছিল যে সমাজবিপ্লবের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিকেরা ঐক্যবদ্ধ হবেন। তাঁরা তা হননি। বরং বিভাজন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। একাংশ ক্ষমতাসীনদের মধ্যে জাতীয় বুর্জোয়াদের খুঁজতে চেষ্টা করেছে এবং আশা করেছে তথাকথিত এই বুর্জোয়াদের সাহায্যে বিপ্লব সংঘটিত করবে।
৩০ মিনিট আগে
ফিবছর একই মহিমায় ফিরে আসে আজকের দিনটা—১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধের পর এই দিনেই আমরা চূড়ান্ত বিজয় লাভ করেছি।
৩৭ মিনিট আগে
ড. রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার বিষয় ঢাকা শহরের ‘হিজড়া’ সম্প্রদায়। লিঙ্গবৈচিত্র্যসহ সামাজিক নৃবিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে দেশ-বিদেশের গবেষণা পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
১ দিন আগে