আব্দুর রাজ্জাক

সাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। দুই পক্ষ মুখোমুখি বসে অনেক কথা হয়েছিল, সবাই আশায় বুক বেঁধেছিল, হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই এই যুদ্ধ বন্ধ হবে।
কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তারপর মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছিল ট্রাম্পের কথা শুনে। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ হতো না।’ এ রকম একটা আভাস ট্রাম্প দিয়েছিলেন বিশ্ববাসীসহ আমেরিকার জনগণকে যে—ডেমোক্রেটিক পার্টি যুদ্ধবাজ, তারা সারা বিশ্বে যুদ্ধ লাগায়। ট্রাম্পের সেই যুদ্ধ বন্ধ করতে হয়। আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। ডেমোক্র্যাটদের মানুষ কুনজরে দেখতে শুরু করল। ট্রাম্পের বিখ্যাত উক্তি, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ও যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতির কারণে ভূমিধস বিজয় পেলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হলেন রেকর্ডসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে। কংগ্রেসে ও সিনেটে রিপাবলিকানদের বিজয়। এত ক্ষমতা এর আগে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন বলে মনে হয় না। সবাই একবাক্যে বলেছিল, এবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ হবেই হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে যথারীতি ওয়াশিংটনে ডেকে পাঠালেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি তাঁর স্বভাবসুলভ যুদ্ধকালীন পোশাক পরে ওয়াশিংটনে হাজির হলেন। ট্রাম্প তাঁর বেশভূষা-কথাবার্তা শুনে ধমকের ওপর ধমক দিলেন। এমনকি সৌজন্যমূলকভাবে যে চা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই আপ্যায়ন পর্যন্ত করলেন না। সম্পূর্ণ নিয়মনীতি ভেঙে অতিথি প্রেসিডেন্টকে মোটামুটি ছোটখাটো অপমান করার মতো করেই বিদায় করলেন। তখন সবাই মনে করতে লাগল, এবার ইউক্রেনের বারোটা বেজে গেছে—জেলেনস্কি এবার ফাঁদে পড়েছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হবেন! কিসের কী! যুদ্ধ চলতে থাকল আগের মতোই, বা তার চেয়ে একটু জোরেশোরেই।
এদিকে ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের কথায় আশ্বস্ত হওয়ার অভিনয় করলেন। ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। রুশ ভূখণ্ডের কুরস্ক অঞ্চলের যে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল, তা অল্প দিনের মধ্যেই উদ্ধার করল রাশিয়া। শুধু উদ্ধার নয়, সেখানে ইউক্রেন ৩৭ হাজার সেনা হারাল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলো দেশটি। রাশিয়ার মধ্যেই ইউক্রেন গুপ্তচরের মাধ্যমে অস্ত্র মজুত করে রাশিয়ার মুরমানস্ক অঞ্চলে হঠাৎ হামলা
করে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বিমান ধ্বংস করে দিল। সঙ্গে ধ্বংস করল দুটি বিমানঘাঁটি। রাশিয়া অবশ্য বলেছে, সোভিয়েত আমলের যেসব বিমান ধ্বংস করেছে, বর্তমানে এইসব বিমান তারা খুব একটা ব্যবহার করে না। ব্যাপারটা তারা আমলেই নিতে চাইল না!
সবচেয়ে মজার বিষয়—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাসখানেক আগে ঘোষণা করলেন, রুশ সেনারা যেখানে তাদের বুটের জুতা দিয়ে অতিক্রম করবে, সেইসব জায়গা রাশিয়ার। এই কথা অনুসরণ করে রুশ সেনাদল পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রেখেছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। দোনেৎস্ক এখন পুরাপুরি রাশিয়ার দখলে। লুহানস্কের কিছু অঞ্চল দখল করা বাকি। গত ১০ দিনে ইউক্রেনের পাঁচটি ছোট ছোট শহর দখল করেছে রাশিয়া। তার মধ্যে দুটি বেশ উল্লেখযোগ্য এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শহর দুটি হলো পোকরোভ্স্ক ও কনস্তান্তিনোভা।
গত এক সপ্তাহে রাশিয়া কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে ৮২৬টি ড্রোন ও মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনায় ও অস্ত্র মজুতের ডিপোতে প্রধানত হামলাগুলো চালিয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা ও গোলাবারুদ মজুতের গোডাউন রাশিয়ার নখদর্পণে। এইসব ড্রোন ও মিসাইল আক্রমণে হতাহত কম হয়। ধ্বংস হয় সামরিক স্থাপনা ও সামরিক সরঞ্জাম।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে যে কথাটা বলা হচ্ছে, সেটা হলো, তারা ইউক্রেনের কোনো জায়গা দখল করে না। ওই অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার পক্ষে থাকতে চায়, ইউক্রেনের হাতে বন্দী থাকতে চায় না, তাই রাশিয়া তাদের স্বাধীনতা দিচ্ছে। অর্থাৎ রাশিয়া দখলদার না, তারা দখলদারের হাত থেকে মুক্ত করছে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল। খোঁজখবর নিয়ে এটা অবশ্য অনেকেই নিশ্চিত করেছে, রাশিয়া যেসব শহর-গ্রাম দখল করছে, সেই সব অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার সেনাদের স্বাগত জানিয়েছে, তারা এটাকে ভালোভাবেই মেনে নিয়েছে। এর একটা কারণ হলো অর্থনৈতিক। ইউক্রেনে থাকা অবস্থায় তারা যে অঙ্কের পারিশ্রমিকে কাজ করত, রাশিয়া সেই অঞ্চল ‘মুক্ত’ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে, তাই ওইসব মুক্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এটাকে স্বাগত জানিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প অল্প কিছুদিন আগে ঘোষণা করলেন, আমেরিকার যে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমানবিধ্বংসী মিসাইল আছে ইসরায়েলে, সেগুলো অচিরেই ইউক্রেনে স্থানান্তর করবে, ইসরায়েলকে নতুন করে তারা আবার প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দেবে। এই কথায় সবাই বুঝে নিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক, তা ট্রাম্পও চান না। ট্রাম্প যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে, বিশ্ববাসীর বিরাট আস্থা অর্জন করেছিলেন, পর্যায়ক্রমে দেখা গেল সেইসব প্রতিশ্রুতির কোনো কিছুই এখন আর মানছেন না। শান্তিকামী নিরীহ মানুষ ধীরে ধীরে হতাশ হয়ে পড়ছেন।
দুই সপ্তাহ আগে শোনা গিয়েছিল, ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, যুদ্ধের ইতি ঘটবে। আপাতত কোনো আশার বাণী নেই, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, বৈঠকের কোনো লক্ষণ নেই। প্রতিনিয়ত ভূখণ্ড হারাচ্ছে ইউক্রেন। দুর্বল হয়ে যাচ্ছে সবদিক থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশ্বাস দিচ্ছে ইউক্রেনকে, ন্যাটো সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অবিরাম দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউই। সবকিছু বিবেচনা করলে মনে হয় আমেরিকা, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। রাশিয়ার যে নীতি—রুশ সেনারা যে ভূখণ্ড অতিক্রম করবে সেই ভূখণ্ড রাশিয়ার—এই নীতি আপাতত বলবৎ আছে। দেখার বিষয়, অদূর ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হয় আর কত দূর গড়ায়।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী

সাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। দুই পক্ষ মুখোমুখি বসে অনেক কথা হয়েছিল, সবাই আশায় বুক বেঁধেছিল, হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই এই যুদ্ধ বন্ধ হবে।
কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তারপর মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছিল ট্রাম্পের কথা শুনে। ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি ক্ষমতায় থাকলে এই যুদ্ধ হতো না।’ এ রকম একটা আভাস ট্রাম্প দিয়েছিলেন বিশ্ববাসীসহ আমেরিকার জনগণকে যে—ডেমোক্রেটিক পার্টি যুদ্ধবাজ, তারা সারা বিশ্বে যুদ্ধ লাগায়। ট্রাম্পের সেই যুদ্ধ বন্ধ করতে হয়। আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ধন্য ধন্য পড়ে গেল। ডেমোক্র্যাটদের মানুষ কুনজরে দেখতে শুরু করল। ট্রাম্পের বিখ্যাত উক্তি, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ও যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতির কারণে ভূমিধস বিজয় পেলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হলেন রেকর্ডসংখ্যক ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে। কংগ্রেসে ও সিনেটে রিপাবলিকানদের বিজয়। এত ক্ষমতা এর আগে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পেয়েছেন বলে মনে হয় না। সবাই একবাক্যে বলেছিল, এবার ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ হবেই হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে যথারীতি ওয়াশিংটনে ডেকে পাঠালেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি তাঁর স্বভাবসুলভ যুদ্ধকালীন পোশাক পরে ওয়াশিংটনে হাজির হলেন। ট্রাম্প তাঁর বেশভূষা-কথাবার্তা শুনে ধমকের ওপর ধমক দিলেন। এমনকি সৌজন্যমূলকভাবে যে চা চক্রের আয়োজন করা হয়েছিল, সেই আপ্যায়ন পর্যন্ত করলেন না। সম্পূর্ণ নিয়মনীতি ভেঙে অতিথি প্রেসিডেন্টকে মোটামুটি ছোটখাটো অপমান করার মতো করেই বিদায় করলেন। তখন সবাই মনে করতে লাগল, এবার ইউক্রেনের বারোটা বেজে গেছে—জেলেনস্কি এবার ফাঁদে পড়েছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হবেন! কিসের কী! যুদ্ধ চলতে থাকল আগের মতোই, বা তার চেয়ে একটু জোরেশোরেই।
এদিকে ভ্লাদিমির পুতিন ট্রাম্পের কথায় আশ্বস্ত হওয়ার অভিনয় করলেন। ভ্লাদিমির পুতিন তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। রুশ ভূখণ্ডের কুরস্ক অঞ্চলের যে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা ইউক্রেন দখল করে নিয়েছিল, তা অল্প দিনের মধ্যেই উদ্ধার করল রাশিয়া। শুধু উদ্ধার নয়, সেখানে ইউক্রেন ৩৭ হাজার সেনা হারাল। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলো দেশটি। রাশিয়ার মধ্যেই ইউক্রেন গুপ্তচরের মাধ্যমে অস্ত্র মজুত করে রাশিয়ার মুরমানস্ক অঞ্চলে হঠাৎ হামলা
করে রাশিয়ার বেশ কয়েকটি বিমান ধ্বংস করে দিল। সঙ্গে ধ্বংস করল দুটি বিমানঘাঁটি। রাশিয়া অবশ্য বলেছে, সোভিয়েত আমলের যেসব বিমান ধ্বংস করেছে, বর্তমানে এইসব বিমান তারা খুব একটা ব্যবহার করে না। ব্যাপারটা তারা আমলেই নিতে চাইল না!
সবচেয়ে মজার বিষয়—রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাসখানেক আগে ঘোষণা করলেন, রুশ সেনারা যেখানে তাদের বুটের জুতা দিয়ে অতিক্রম করবে, সেইসব জায়গা রাশিয়ার। এই কথা অনুসরণ করে রুশ সেনাদল পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়া অব্যাহত রেখেছে। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে দনবাস অঞ্চল গঠিত। দোনেৎস্ক এখন পুরাপুরি রাশিয়ার দখলে। লুহানস্কের কিছু অঞ্চল দখল করা বাকি। গত ১০ দিনে ইউক্রেনের পাঁচটি ছোট ছোট শহর দখল করেছে রাশিয়া। তার মধ্যে দুটি বেশ উল্লেখযোগ্য এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শহর দুটি হলো পোকরোভ্স্ক ও কনস্তান্তিনোভা।
গত এক সপ্তাহে রাশিয়া কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে ৮২৬টি ড্রোন ও মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনায় ও অস্ত্র মজুতের ডিপোতে প্রধানত হামলাগুলো চালিয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা ও গোলাবারুদ মজুতের গোডাউন রাশিয়ার নখদর্পণে। এইসব ড্রোন ও মিসাইল আক্রমণে হতাহত কম হয়। ধ্বংস হয় সামরিক স্থাপনা ও সামরিক সরঞ্জাম।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে যে কথাটা বলা হচ্ছে, সেটা হলো, তারা ইউক্রেনের কোনো জায়গা দখল করে না। ওই অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার পক্ষে থাকতে চায়, ইউক্রেনের হাতে বন্দী থাকতে চায় না, তাই রাশিয়া তাদের স্বাধীনতা দিচ্ছে। অর্থাৎ রাশিয়া দখলদার না, তারা দখলদারের হাত থেকে মুক্ত করছে ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল। খোঁজখবর নিয়ে এটা অবশ্য অনেকেই নিশ্চিত করেছে, রাশিয়া যেসব শহর-গ্রাম দখল করছে, সেই সব অঞ্চলের মানুষ রাশিয়ার সেনাদের স্বাগত জানিয়েছে, তারা এটাকে ভালোভাবেই মেনে নিয়েছে। এর একটা কারণ হলো অর্থনৈতিক। ইউক্রেনে থাকা অবস্থায় তারা যে অঙ্কের পারিশ্রমিকে কাজ করত, রাশিয়া সেই অঞ্চল ‘মুক্ত’ করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। জীবনযাত্রার মান সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে, তাই ওইসব মুক্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এটাকে স্বাগত জানিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
ট্রাম্প অল্প কিছুদিন আগে ঘোষণা করলেন, আমেরিকার যে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমানবিধ্বংসী মিসাইল আছে ইসরায়েলে, সেগুলো অচিরেই ইউক্রেনে স্থানান্তর করবে, ইসরায়েলকে নতুন করে তারা আবার প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দেবে। এই কথায় সবাই বুঝে নিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক, তা ট্রাম্পও চান না। ট্রাম্প যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে, বিশ্ববাসীর বিরাট আস্থা অর্জন করেছিলেন, পর্যায়ক্রমে দেখা গেল সেইসব প্রতিশ্রুতির কোনো কিছুই এখন আর মানছেন না। শান্তিকামী নিরীহ মানুষ ধীরে ধীরে হতাশ হয়ে পড়ছেন।
দুই সপ্তাহ আগে শোনা গিয়েছিল, ভ্লাদিমির পুতিন ও জেলেনস্কি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন, যুদ্ধের ইতি ঘটবে। আপাতত কোনো আশার বাণী নেই, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, বৈঠকের কোনো লক্ষণ নেই। প্রতিনিয়ত ভূখণ্ড হারাচ্ছে ইউক্রেন। দুর্বল হয়ে যাচ্ছে সবদিক থেকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আশ্বাস দিচ্ছে ইউক্রেনকে, ন্যাটো সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে, সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অবিরাম দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউই। সবকিছু বিবেচনা করলে মনে হয় আমেরিকা, ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে আন্তরিক নয়। রাশিয়ার যে নীতি—রুশ সেনারা যে ভূখণ্ড অতিক্রম করবে সেই ভূখণ্ড রাশিয়ার—এই নীতি আপাতত বলবৎ আছে। দেখার বিষয়, অদূর ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হয় আর কত দূর গড়ায়।
লেখক: আব্দুর রাজ্জাক, প্রকৌশলী

ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৮ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৯ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগে
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন। শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু এবং রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিকার নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা

অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।
অনেকে আশঙ্কা করেছিলেন, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার পর দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে। এই আশঙ্কা কতটা বাস্তবসম্মত ছিল?
আশঙ্কা বাস্তবতাবিবর্জিত ছিল না। প্রাথমিকভাবে, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর পৌঁছামাত্রই সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া তা-ই প্রমাণ করে। গণ-অভ্যুত্থানের পর সংঘটিত পূর্ববর্তী (অ)রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড, হত্যাচেষ্টার ধারাবাহিকতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অস্থিরতা মোকাবিলায় ব্যর্থতাই হাদির ওপর গুলিবর্ষণে সাহস জুগিয়েছে স্বার্থান্বেষী মহলকে। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচনী
আবহ শুরু হওয়ামাত্রই প্রকাশ্যে এই আলোচিত স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর ওপর গুলি এবং হামলাকারীদের নির্বিঘ্নে পালিয়ে যাওয়া রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্য অশনিসংকেত। এই ঘটনা জনমনে ভয় সৃষ্টি করবে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা, চোরাগোপ্তা হামলা, মব ভায়োলেন্সের মাত্রাসহ হত্যাচেষ্টার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে। বিশেষ করে, যদি দ্রুত ও অর্থবহ তদন্ত না হয় এবং অভিযুক্ত সন্ত্রাসীরা সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তাহলে তা ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিযোগকেও আরও দৃঢ় করবে।
নির্বাচনের আগে এ ধরনের সহিংস ঘটনা কি নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে? আপনি কী বলবেন?
নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকাই অন্যতম প্রধান সম্ভাব্য কারণ। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনের ব্যাপারে ‘যদি, কিন্তু, তবে’ ইত্যাদি যোগ করা; কারও পক্ষ থেকে প্রতিরোধ কিংবা বর্জনের হুমকি এই আশঙ্কাকে ভিত্তি দিচ্ছে। তবে বিস্তর বিশ্লেষণের স্বার্থে এই হত্যা অন্যান্য সম্ভাব্য উদ্দেশ্য ও কারণ কর্তৃপক্ষের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। এ ক্ষেত্রে ঘটনার সময়কাল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তফসিল ঘোষণার ঠিক পরদিনই হাদির ওপর হামলা হওয়ার ক্ষেত্রে, ঘটনার পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাঁর পদত্যাগ দাবি, ওসমান হাদির নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, ‘বিচার না হলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না’ এমন হুমকি, মৃত্যুসংবাদের পর প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া এবং নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরকে শারীরিক লাঞ্ছনা—সব মিলিয়ে নির্বাচন বানচালের শঙ্কা থেকে যায়।
গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজনদের পারস্পরিক চূড়ান্ত দোষারোপের পেছনের রাজনীতি, অভিযুক্ত গুলিবর্ষণকারীর পূর্ববর্তী রাজনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি হুমকি, এমনকি কার সঙ্গে কখন, কোথায় অভিযুক্ত হত্যাকারী সময় কাটিয়েছে, তার ছবি বিশ্লেষণ—এসবই ইঙ্গিত করে নির্বাচনকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি ‘নির্বাচনভীতি’ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। এ ধরনের ঘটনার বিচার না হওয়া অথবা লাশকে সুবিধা আদায়ের রাজনীতিতে পরিণত করার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তদলীয় সহিংসতা বৃদ্ধি করে তৃতীয় পক্ষ সার্বিক পরিস্থিতিকে সাংঘর্ষিক করে তুলতে পারে, যা নির্বাচন ব্যাহত করার রাজনীতিই বটে।
আগামী নির্বাচনে এই রাজনৈতিক সহিংসতা কী প্রভাব ফেলতে পারে?
নির্বাচন নানাভাবে প্রভাবিত করা হতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের সমর্থক ও ক্ষুব্ধ গোষ্ঠীগুলো দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহিংস চক্রের সঙ্গে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসবই সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে। অন্তত তিনটি সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়নের দাবি রাখে—৫ আগস্ট ২০২৪-এ লুণ্ঠন হওয়া অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভোটযাত্রায় ভয় ও নিষ্ক্রিয়তা এবং উসকানিমূলক বক্তব্য ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির মেরুকরণ বৃদ্ধি। ভয় ও অনিশ্চয়তার কারণে ভোটারদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ কমতে পারে। আবার, সরকারের দায়সারা মনোভাব এই হামলাকে ভিকটিমহুড (সিম্বলিক মার্টায়ারডম) বা শক্তি প্রদর্শনের উপকরণ হিসেবেও ব্যবহার করতে পারে কোনো কোনো পক্ষ। অন্যদিকে, রাষ্ট্র
যদি লোকদেখানো মাত্রাতিরিক্ত কঠোর নিরাপত্তা আরোপ করে, নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে সংকুচিত করতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সক্ষমতা ও পেশাদারত্বের ওপর।
এই হামলার পর ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে যে ধরনের আলটিমেটাম কিংবা প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, সেটি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
দুইভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। একদিকে আবেগ তথা বৈধ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, যা স্বাভাবিক। অন্যদিকে, অদূরদর্শী ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে। বিশেষত, শহুরে রাজনীতিতে আন্দোলন ও আলটিমেটাম একটি পরিচিত রাজনৈতিক কৌশল। কিন্তু এগুলো যখন মুহূর্তের উত্তেজনায় জ্বালাও-পোড়াও রূপে রূপান্তর হয় বা সহিংস চরিত্র ধারণ করে, তখন মূল ইস্যু চাপা পড়ে, সাধারণ জনগণ বিরক্ত হয়, আপাতদৃষ্টে তা-ই মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা ও সামাজিক মূল্যবোধ মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে। শান্তিপূর্ণ ও আইনি চ্যানেলের মাধ্যমে দাবি উত্থাপনই দীর্ঘ মেয়াদে ফলপ্রসূ হয়, যা স্থায়িত্ব দেয়। তাত্ত্বিক দিক বিবেচনায়, সহিংস ঘটনার জবাব সহিংসতা, ঘৃণা কিংবা মব ভায়োলেন্স নয়, বরং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সহিষ্ণু, সৃজনশীল এবং জনমুখী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে মোকাবিলা দীর্ঘ মেয়াদে অনেক ফলপ্রসূ হয়।
এই ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছাড়তে পারল? এখানে কি গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?
আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয়, সীমান্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি এবং দ্রুত গ্রেপ্তার বাস্তবায়নে গুরুতর গ্যাপ ছিল। সন্দেহভাজনেরা মোটরসাইকেলে ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার, মোবাইল সিম ও ফোন ফেলে দেওয়া, একাধিক যানবাহন বদল করে সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা, যা পূর্বপরিকল্পিত সমন্বয়ভিত্তিক আঁতাতনির্ভর পলায়নের ইঙ্গিত। সীমান্ত নিরাপত্তা রক্ষা, আন্তরাষ্ট্রীয় অপরাধ প্রতিরোধ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যারা নিয়োজিত রয়েছে, তাদের সহায়তা থাকতে পারে। কোনো একক সংস্থার ব্যর্থতা নয় এটি।
হাদির মৃত্যুসংবাদের পর যেসব সহিংস ঘটনা ঘটল, সেগুলো কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
অবস্থাদৃষ্টে, কেবল ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে নয়, বরং শাসনব্যবস্থার চরম শৈথিল্য ও প্রতিশোধপরায়ণ সুসংগঠিত উসকানির সম্মিলিত ফল হিসেবে দেখা যেতে পারে। ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশব্যাপী সহিংসতার খবরগুলো ছড়িয়ে পড়ে। ‘লড়াকু যোদ্ধা’ হিসেবে অনেকের কাছে ওসমান হাদির যে পরিচিতি তৈরি হয়েছিল, তা অনেকাংশে ম্লান করেছে বলেই অনুমান।
দেশের যে দুটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা অফিস পোড়ানো হয়েছে, সেখানে জুলাইয়ের অনেক স্মৃতি-স্মারকও ছিল। ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়ে বাঁচতে হয়েছে ২৮ জন পেশাজীবীকে। অথচ এই দুটি পত্রিকা পতিত সরকারের সময় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। ছায়ানটের ওপর কিসের রাগ? সাংস্কৃতিক দর্শনের সঙ্গে মতবিরোধ নতুন কিছু নয়। মানুষকে আকৃষ্ট করবে এমন পাল্টা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেষ্টা
না করে, এ রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রমে কারা উৎসাহ দিচ্ছে?
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর আক্রমণ আরও স্পষ্ট করে ঘটনার পেছনের অশুভ শক্তির সংযোগ।
ওসমান হাদির নিজের বক্তব্য এবং অবস্থানের সঙ্গেও এই জঘন্য সহিংস ঘটনাগুলো সাংঘর্ষিক। কেননা, এই বিষয়ে তাঁর বক্তব্যও ছিল স্পষ্ট: ‘পারলে আরও দশটা প্রথম আলো তৈরি করে দেখান। প্রথম আলো অফিসের সামনে আপনার কাজ কী?’ সবকিছু বিবেচনায়, এই সহিংসতা তরুণদের নিজস্ব বিবেচনায় সংঘটিত হয়েছে—এমনটা মনে হওয়ার কারণ সীমিত। ‘বিশেষ’ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও দলগত আদর্শিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধমূলক রাজনীতি তরুণদের আবেগকে পুঁজি করছে বলেই অনুমান (ইনস্ট্রুমেন্টালাইজেশন অব ইয়ুথ)। বিনা উসকানিতে দুঃশাসন পতনোত্তর (রেজিম ফল) বাস্তবতায় এ রকম সংঘবদ্ধ সহিংসতা গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং সর্বোপরি শান্তি বিনির্মাণের পথে প্রধান অন্তরায়। বিশ্ব পরিমণ্ডলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে, যার দায় সরকারের ওপর চাপবে।
সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আপনার পরামর্শ কী?
এই বিষয়ে মোটাদাগে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমটি আইনের শাসন তথা কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অপরাধের বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি সমাজকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে। ব্যক্তি, দল, গোষ্ঠীবিশেষে আইনের কঠোরতা, নমনীয়তা এমনকি বিচারিক দীর্ঘসূত্রতা আইনের শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরিপন্থী। দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের পাশাপাশি প্রতিটি তদন্তের অগ্রগতি ও চূড়ান্ত ফল জনসমক্ষে নিয়মিত প্রকাশ জরুরি। সীমান্ত নজরদারি
এবং ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং জোরদার করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত তথ্যপ্রবাহের ব্যবস্থা করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরামর্শ। দীর্ঘ মেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রয়োজন। সঙ্গে বিদ্যমান ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন, যার ওপর টেকসই স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে। ভিন্নমতের কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারও সহিংস মৃত্যুর ঘটনায় আজকাল উল্লাস—এসবই সুস্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিলুপ্তির পূর্বাভাস।
এর অন্যতম প্রধান কারণ হলো জাতীয় ইস্যুতে ঐকমত্য ও সুশিক্ষার অভাব। মুক্তিযুদ্ধ ও ধর্মের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান বিষয়ক বিভাজনগুলো এখন শত্রু-মিত্রের বাইনারিতে পরিণত হয়েছে। ফলে সামষ্টিক জাতীয় স্বার্থ কিংবা জাতীয়তাবোধ তৈরি হচ্ছে না। রাজনীতিতে ধর্মের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, মুক্তিযুদ্ধকে কুক্ষিগতকরণের বিপরীতে বিতর্কিতকরণের হীন প্রয়াস, যাকে-তাকে যখন-তখন ভারত-পাকিস্তানপন্থী ট্যাগিং—এসবই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভয়ানক ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধি বা দেশের বিদ্যমান আইনবিধির আওতায় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা এবং প্রথম পরামর্শ অনুযায়ী অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তত মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম ও ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করে একটি বৃহৎ পরিসরের জাতীয় রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততাও রাখা যেতে পারে এই কমিশনে, যাতে কমিশন মান বজায় রেখে নিরপেক্ষ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে।
অধিকন্তু, সীমিত সম্পদের বিপরীতে দেশে বিপুলসংখ্যক অদক্ষ বেকার জনগোষ্ঠী রয়েছে, যার বড় একটি অংশের কাছে রাজনৈতিক দলগুলো হয়ে উঠেছে বিনা বেতনে তাদের ‘নিয়োগকারী কর্ম সংস্থা’। বিনা বেতনে তথাকথিত এই ‘কর্মসংস্থানের সুযোগ’ দিয়ে তাদের অনেককে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে যুক্ত করছেন দলের এলিট নেতারা। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই মূলত এদের বেশির ভাগ জড়াচ্ছে অন্যায় ও সহিংস কর্মকাণ্ডে, নিয়োজিত হচ্ছে বিরোধীমত নিয়ন্ত্রণের
মতো অপরাধমূলক কাজে। ফলে রাজনৈতিক সচেতনতা বাদ দিয়ে রাজনীতিপ্রবণ হয়ে উঠছে সমাজের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী। তৈরি হচ্ছে অপরাধের এক ভিশাস সাইকেল (পরিবর্তনের নেতিবাচক চক্র)। ফলে রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ছে এবং স্থিতিশীলতা পড়ে যাচ্ছে হুমকির মুখে।

সাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
২৯ জুলাই ২০২৫
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৯ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেরুশো তাহের

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো এমন একটি কোম্পানি বা সংস্থা, যা অন্য একটি কোম্পানি বা সংস্থার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক স্থাপন করে, যাতে তারা সম্পদ ভাগ করে নিতে পারে, সাধারণ লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে এবং পারস্পরিক সুবিধা পেতে পারে, যা একা অর্জন করা কঠিন হবে। এই অংশীদারত্বে অর্থ, দক্ষতা বা তথ্য ভাগ করে নেওয়া অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে এবং এগুলো প্রায়ই পরিপূরক পণ্য বা পরিষেবার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়। এগুলো আইনি অংশীদারত্ব (লিগ্যাল পার্টনারশিপ), এজেন্সি বা করপোরেট সহযোগী (করপোরেট অ্যাফিলিয়েট) থেকে আলাদা, যেখানে অংশীদারেরা স্বতন্ত্র থাকলেও যৌথ উদ্যোগে সহযোগিতা করে।
এদিকে পৃথিবীর দেশে দেশে রুশ ফেডারেশন তার স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার দেশগুলোয় রাশিয়ান স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন ‘রোসাটম’-এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে যাচ্ছে। যার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নিউক্লিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে রুশ ফেডারেশনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট আজ যে রুশ নিউক্লিয়ার টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ (থ্রি প্লাস) রি-অ্যাক্টর স্থাপনে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বারতা নিয়ে কমিশনিংয়ের দ্বারপ্রান্তে, তা-ও রাশিয়া ও বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্বের অনিবার্য ফল।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং পৃথিবীর অন্য যেসব দেশের সঙ্গে রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ রয়েছে, সেসব দেশেও রুশ ফেডারেশন নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনে আর্থিক ও কারিগরি এমনকি বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছে। সেই ইতিহাস খানিকটা আলোকপাত করছি। বস্তুত নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর স্থাপন ও পরিচালনায় বিশ্বের বৃহৎ কোম্পানিগুলোর একটি হচ্ছে রোসাটম। এটি শুধু দেশে নয়, বরং পৃথিবীর নানা দেশে নিউক্লিয়ার রি-অ্যাক্টর তথা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা, সারা বিশ্বে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি সম্প্রসারণে রোসাটম গুরুত্বপূর্ণ ও অনন্য প্রতিষ্ঠান। আগামী দিনেও পৃথিবীর অনেক দেশে রোসাটম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনায় অংশ নিতে যাচ্ছে। যেমন তুরস্কে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের চারটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনের চুক্তি রোসাটম ও তুরস্ক সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১০ সালে, যা তুরস্কের পার্লামেন্টেও অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালে নির্মাণের কথা ছিল। কিন্তু তুর্কি সেনাবাহিনী কর্তৃক ২০১৫ সালে ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার রুশ বিমান ভূপাতিত এবং সে কারণে আইএস কর্তৃক রুশ স্পেশাল ফোর্সের প্রাণহানিতে সেই চুক্তি পিছিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে মস্কো ও আঙ্কারা সেই ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর মাধ্যমে তুরস্কে রোসাটম কর্তৃক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।
রুশ ফেডারেশনের আরেক স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হচ্ছে বেলারুশ। বেলারুশে রোসাটম ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ শুরু করে ২০১০ সালে। যেগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় যথাক্রমে ২০১৮ সালে ও ২০২০ সালে। এদিকে ইরানে ভিভিইআর-১০০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপন চুক্তি রোসাটম ও ইরান সরকারের মধ্যে সই হয় ২০১৪ সালে। উল্লেখ্য, ইরান জার্মানির সহযোগিতায় নির্মিত
ও পরিচালিত রি-অ্যাক্টর থেকে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে। রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে জার্মানির জায়গায় রুশ ফেডারেশনকে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে গ্রহণ করল ইরান। উল্লেখ্য, ইরানের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম বুশের-১। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পের দায়িত্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে বুশের-২ নামে আরেকটি প্রকল্পে আরও ছয়টি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে ইরান ও রুশ ফেডারেশন চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, যা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৯৮৮ সালে ভারতের কুদানকুলামে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত হয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কারণে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নির্মাণ শুরুর ১১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অপারেশনে আসে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৬ সালের অক্টোবরে রুশ ফেডারেশন ও ভারত ঘোষণা করে যে কুদানকুলাম-২-এর পরিকল্পনা প্রস্তুত এবং সেই অনুযায়ী ২০১৭ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। উল্লেখ্য, কুদানকুলাম-২ থ্রি প্লাস রি-অ্যাক্টর উন্নয়নের কাজও চলছে রোসাটমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট কর্তৃক।
এশিয়ার আরেক উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনামে নিন তুয়ান নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ এখন পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে। যেখানে রুশ টেকনোলজির ভিভিইআর-১২০০ মডেলের থ্রি-প্লাস প্রজন্মের রি-অ্যাক্টর স্থাপনের কথা ছিল।
এটি হতো ভিয়েতনামের প্রথম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৪ সালে শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং সেই অনুযায়ী সাইট উন্নয়নও শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু ভিয়েতনাম সরকার নিরাপত্তার ইস্যুগুলো নিশ্চিতকল্পের লক্ষ্যে নিন তুয়ান প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনামের ওই প্রকল্প রুশ ফেডারেশনের ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তায় নির্মিত হতে যাচ্ছিল।
‘পাকস-২ প্রকল্প’ নামে হাঙ্গেরিতে ২০১৮ সালে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে হাঙ্গেরিয়ান কোম্পানি এমজিএম এবং রোসাটমের মধ্যে ২০১৪ সালের শেষের দিকে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উল্লেখ্য, প্রাথমিক পাকস-নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। ফিনল্যান্ডে ভিভিইআর-১২০০ মডেলের একটি রি-অ্যাক্টরের নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে শুরু করে রোসাটম। যেটির কারিগরি সহায়তা ও অর্থায়নও করে রোসাটম। কিন্তু সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদান নিয়ে স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের সম্পর্কটি দোটানায় পড়ে যায়।
উল্লেখ্য, রুশ ফেডারেশনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারের অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গভীর সম্পর্ক ছিল। ওই সম্পর্কের প্রতিফলনই রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, যার অনিবার্য ফল বাংলাদেশের রূপপুরে থ্রি-প্লাস প্রজন্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের দুটি রি-অ্যাক্টর স্থাপনে রাশিয়ার স্টেট নিউক্লিয়ার এনার্জি করপোরেশন অ্যাটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের অনন্য অবদান।
রুশো তাহের, বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক ও যোগাযোগ পরামর্শক

সাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
২৯ জুলাই ২০২৫
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৯ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
এই বার্তা দেওয়া না হলে দেশ পড়ে যায় বিপদে। এরই মধ্যে বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র। দুটি পত্রিকা অফিস এবং ছায়ানট ও উদীচীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতার আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে দলটি। এনসিপিসহ আরও কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে এই নৈরাজ্যের নিন্দা জানানো হয়েছে। মুশকিল হলো, নিন্দা জানালে জনগণ সংকটগুলো বুঝতে পারে বটে, কিন্তু শৈশবে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করতে দেওয়া একটি বাক্যের কথা তখন তাদের মনে পড়ে যায়। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মরিয়া গেল’—এই বাক্যের ইংরেজি অনুবাদ করেননি, এমন পড়ুয়া খুব কম আছেন।
এবারও দেখা গেল, শাহবাগ থেকে কিছু মানুষ এসে প্রতিষ্ঠানগুলোয় ভাঙচুর চালাচ্ছে। সংখ্যায় এরা বেশি নয়, কিন্তু যে রকম মারমুখী, তাতে সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। মূলত এই আক্রমণ ঠেকানোর দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। পত্রিকা অফিস কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনের ওপর যখন হামলে পড়ল কিছু মানুষ, তখন তাদের থামানোর মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য সেখানে মোতায়েন ছিল না। ভাঙচুর শেষে আগুন দেওয়ার পর এসে হাজির হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার পর হাজির হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাজনৈতিক অঙ্গনে এই ভাঙচুরের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে, নিন্দা জানানো হয়েছে। ঘাপটি মেরে বসে থাকা অরাজক বাহিনী যে সুযোগ নিয়েছে, তা বন্ধ করার জন্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নেয়, সেটা এখন দেখার বিষয়। যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করে যে কেউ অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারাকে স্বাধীনতা বলে না, তাকে বলা হয় অরাজকতা। এই কথা সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বুঝতে হবে। উত্তেজিত জনতা যুক্তি বোঝে না।
তাদের উত্তেজিত করছে কে, সেটাই আসলে খুঁজে বের করা দরকার।
জাতীয় নির্বাচনের কাছাকাছি সময় এসে গেছে। এ সময় নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হলে তা শক্ত হাতে দমন করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারি মহল থেকে যে ধরনের কথা শোনা যায়, তাতে মনে হয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে সরকার। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই এখন সবার চাওয়া। সে রকম পরিবেশ তৈরির করার জন্য নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে সরকারকে। যারা ঝোপ বুঝে কোপ মারে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক না হলে বিপদ বাড়তেই থাকবে।
দেশে বহুমত, বাক্স্বাধীনতা, সংস্কৃতির প্রবহমানতার ওপর আঘাত এলে তা রাষ্ট্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। দেশের মানুষের শান্তি এখন খুব প্রয়োজন।

সাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
২৯ জুলাই ২০২৫
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৮ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সহিংসতা, আতঙ্ক, গুজব ও অনিশ্চয়তা জনজীবনে গভীর অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। এই সংকটময় সময়ে রাষ্ট্র ও সমাজ—উভয়ের জন্যই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো শান্ত থাকা, সংযম বজায় রাখা এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা। ইতিহাস বলে, উত্তেজনার মুহূর্তে ভুল সিদ্ধান্তই সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির নির্মম হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। এ ধরনের নৃশংস ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন নাগরিকের প্রাণহানি মানেই রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত। এই হত্যাকাণ্ডের দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অবশ্যকর্তব্য।
তবে এই হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের পাশাপাশি যে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। ইতিমধ্যে দুটি গণমাধ্যম ও একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। মতবিরোধ, ক্ষোভ কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান—যা-ই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং সমাজের শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার পরিসরকে আঘাত করা। এসব কর্মকাণ্ড কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করতে হবে। নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর আওয়ামী লীগ শাসনামলে অপশাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। কেন তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ আখ্যা দিয়ে নাজেহাল করা হলো, তা বোধগম্য নয়।
এই পরিস্থিতিতে গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাচাই ছাড়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে, যা জনমনে বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ বাড়াচ্ছে। এই সময়ে দায়িত্বশীল নাগরিকের পরিচয় হলো—সংযত ভাষা ব্যবহার করা, তথ্য যাচাই করা এবং উসকানিমূলক পোস্ট বা মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি জনগণের আস্থা অর্জন করাও জরুরি। স্বচ্ছতা, নিয়মিত তথ্য প্রদান এবং ন্যায়সংগত পদক্ষেপই পারে পরিস্থিতি শান্ত করতে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও প্রভাবশালী নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে—উসকানি নয়, সংলাপ ও সহনশীলতার পথ বেছে নিতে হবে।
দেশ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। এ সময় প্রতিটি দলকেই ধৈর্য ধরতে হবে। শান্ত থাকতে হবে। শান্ত রাখতে হবে দলের কর্মীদের। নেতারা যদি এ সময় দায়িত্বশীল আচরণ না করেন, তাহলে দেশের পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। এমনকি বহু কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটি রাজনৈতিক দল যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে অরাজকতার মোকাবিলা করতে পারে, তাহলেই কেবল সামনে আশার আলো দেখা যাবে। বিশেষ করে তরুণসমাজকে মনে রাখতে হবে—দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই। ধ্বংস নয়, গঠন; ঘৃণা নয়, যুক্তি—এই পথেই দেশকে অস্থিরতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব। শান্ত থাকা কোনো দুর্বলতা নয়। বরং সংকটের মুহূর্তে শান্ত থাকতে পারাই সবচেয়ে বড় শক্তি। আজ সেই শক্তিরই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

সাড়ে তিন বছর হতে চলল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের। শুরু হওয়ার এক বছর পর থেকেই বিভিন্ন মহল বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধে কয়েক মাসের মাথায় ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
২৯ জুলাই ২০২৫
ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করে নরওয়ের বারগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ার নিউ ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ের ওপর পিএইচড...
৮ ঘণ্টা আগে
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন আজকের রুশ ফেডারেশন ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কৌশলগত অংশীদারত্ব দীর্ঘদিনের। সেই অর্থে বাংলাদেশ রুশ ফেডারেশনের কৌশলগত অংশীদার বা স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার। এখন আমরা জানার চেষ্টা করব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার কী। বস্তুত স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত অংশীদার হলো...
৮ ঘণ্টা আগে
নৈরাজ্যে লাভ কার? এতে লাভ হয় অন্ধকার শক্তির। যেকোনো ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে তারা ফায়দা লুটতে তৎপর হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যকারীরা তখনই নিরস্ত হয়, যখন সরকারের পক্ষ থেকে জিরো টলারেন্সের বার্তা দেওয়া হয়। যেকোনো নৈরাজ্য ঠেকিয়ে দিয়ে সরকার জানাতে পারে, গণতান্ত্রিক দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের কোনো স্থান নেই।
৯ ঘণ্টা আগে