Ajker Patrika

অস্ত্রের টাকা জোগাতে বাংলাদেশে ইয়াবা-আইস পাচারে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ১০ মে ২০২৪, ১২: ৪১
অস্ত্রের টাকা জোগাতে বাংলাদেশে ইয়াবা-আইস পাচারে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদী। ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। এই নদী পেরিয়ে আসছে ইয়াবা, আইস, হেরোইন থেকে শুরু করে ভয়ংকর সব মাদক। বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে মাদকের বাহকেরা গ্রেপ্তার হলেও মূল হোতা ও পৃষ্ঠপোষকেরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে থামছে না মাদকের কারবার। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে সরকারি বাহিনীর চলমান সংঘাতের ফলে সীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবাহ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে মাদকের আগ্রাসন রোধকল্পে গঠিত স্ট্রাটেজিক কমিটির তৃতীয় সভা। সেই সভায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৈরি করা একটি প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র কেনার জন্য টাকা দরকার। সেই টাকা জোগাড় করতে এপারে বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা রোহিঙ্গা ও দেশি কারবারিদের কাছে অল্প দামে মাদক বিক্রি করছে তারা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা বাড়ার সঙ্গে দেশে মাদকের প্রবাহও বাড়ছে। পাশাপাশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে টেকনাফ এলাকাকেন্দ্রিক মাদকের শীর্ষ কারবারিরা।

মাদক কারবারিদের নিয়ে গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে তালিকা করেছে, তাতে কক্সবাজার জেলার ১ হাজার ১৫১ জনের নাম আছে। এর মধ্যে ৯১২ জনই টেকনাফের। তালিকার শীর্ষ ৭৩ জন ইয়াবা কারবারির ৬৫ জনই টেকনাফের। এই তালিকার হালনাগাদ করা হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

মাদকের আগ্রাসন রোধে গঠিত স্ট্রাটেজিক কমিটির সভায় আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যত বাড়ছে, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে দেশে মাদকের প্রভাব তত বাড়ছে। মূলত এ সময় রোহিঙ্গাসহ দেশের মাদক কারবারিদের কাছে ইয়াবা আর আইস কম দামে বিক্রি করছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী। কম দামে মাদক পাওয়ায় টেকনাফের কারবারিরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা কারবারিদের পাশাপাশি দেশীয় শীর্ষ মাদক কারবারিরা নিজেদের কাছে মাদক কিনে গচ্ছিত করে রাখছে। ইয়াবা-আইস বিক্রির সেই টাকা দিয়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা নিজেদের খরচ চালাচ্ছে ও অস্ত্র কিনছে।

টেকনাফের মাদক নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে কক্সবাজার জেলা পুলিশের সুপার মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক মোহাম্মদ ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু মাদক নয়, ক্যাম্পে যেকোনো অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান সব সময় শক্তিশালী। তবে মাদকের পুরো সিন্ডিকেট পুলিশের পক্ষে একা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অন্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

মিয়ানমার থেকে কী পরিমাণ মাদক আসছে, তার কিছুটা উঠে এসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে। সংস্থাটির হিসাব বলছে, গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ৪ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ২১৯টি ইয়াবা জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তার আগের বছর ২০২২ সালে ৪ কোটি ৫৮ লাখ এবং ২০২১ সালে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৬৬৫টি ইয়াবা উদ্ধার করে। যদিও জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (ইউএনওডিসি) দাবি, বাংলাদেশে যত মাদক ঢুকছে, এর মাত্র ১০ শতাংশ ধরা পড়ে।

সর্বশেষ গত ২৯ এপ্রিল কক্সবাজারের চকরিয়ায় নদীতে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা জব্দ করেছে চকরিয়া থানার পুলিশ। পুলিশ বলছে, থানার পুলিশ এর আগে ইয়াবার এত বড় চালান জব্দ করতে পারেনি। এটাই সবচেয়ে বড়।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, নদীপথে টেকনাফ থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। পরে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের বহলতলী এলাকায় মহেশখালী চ্যানেলে (নদীতে) অবস্থান নেয় পুলিশের কয়েকটি দল। এ সময় একটি নৌযান থেকে ইয়াবাভর্তি প্লাস্টিকের পাঁচটি ড্রাম জব্দ করা হয়। ড্রামগুলো কেটে একে একে বের করা হয় টেপ মোড়ানো ১২৫টি প্যাকেট। এসব প্যাকেটের প্রতিটিতে ১০ হাজার করে ইয়াবা থাকে।

পুলিশ সূত্র বলছে, চালান জব্দের দুই দিন আগে মিয়ানমারের এক বিদ্রোহী গোষ্ঠী থেকে ইয়াবাগুলো কেনেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করা মাদক কারবারিরা। তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দেশি কারবারিদের তত্ত্বাবধানে চালানটি চট্টগ্রামে পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। পরে অবশ্য এ ঘটনায় পুলিশ শাহজাহান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। যিনি চালানটি চট্টগ্রামে পৌঁছে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন।

মাদকের সরবরাহ হ্রাস করতে মাদক কারবারি তালিকা হালনাগাদ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ টেকনাফে যৌথ অভিযান পরিচালনার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। সঙ্গে জোরদার করতে বলা হয়েছে টাস্কফোর্সের কার্যক্রম।

এ নিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যত দিন পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বন্ধ না হবে, তত দিন পর্যন্ত সীমান্তে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে কড়া নজরদারি বসাতে হবে। তা ছাড়া টেকনাফের শীর্ষ মাদক কারবারিদের গতিবিধি অনুসরণ করতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর ও টেকনাফের কারবারিদের সন্দেহভাজন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করতে হবে। যেকোনো মূল্যে মিয়ানমার থেকে মাদকের সরবরাহ হ্রাস করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

২০১৮ সালে মাদকের দৌরাত্ম্য কমাতে বিশেষ করে ইয়াবা বন্ধে দেশে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়, তখন ক্রসফায়ারে বেশ কয়েকজন মাদক গডফাদারসহ মাঝারি ধরনের কারবারি নিহতও হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কক্সবাজার টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মাদকের প্রবেশ কমেনি। দেশে নিয়মিতই ঢুকছে সর্বনাশা মাদক ইয়াবা।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী বলেন, বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। মাদকের প্রবাহ রোধে বেশ কিছু পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে। সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজগুলো করা হবে। যেকোনো মূল্যে মাদকের প্রবেশ ঠেকাতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত