Ajker Patrika

প্রাথমিকে পাঠদান: বাইরের ২০ কাজের চাপে শিক্ষক

রাহুল শর্মা, ঢাকা 
আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩: ৩০
প্রাথমিকে পাঠদান: বাইরের ২০ কাজের চাপে শিক্ষক
ছবি: সংগৃহীত

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস।

শিক্ষকেরা বলছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে পাঠদানের বাইরে এসব কাজ তাঁরা করছেন। এসব কাজের চাপে সিলেবাস শেষ করা যায় না। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যায় শিক্ষার্থীদের। এর প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানবহির্ভূত এই ব্যস্ততার চিত্র উঠে এসেছে একটি জরিপে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরকারি দায়িত্ব পালন’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন একটি দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদেরা।

জরিপে বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অসন্তুষ্টিও উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফল দেখে শিক্ষাবিদেরা সরকারি এসব কাজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অথবা বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) দিয়ে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

পাঠদানের বাইরে বারোয়ারি কাজ করানোর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জরিপের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বহুমুখী কাজ করানোর কারণে সার্বিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষায় সংকট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুগল ফরমে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন দেশের আট বিভাগের ৪৭ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯৬ শিক্ষক। এর মধ্যে ৫৩৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ১৬১ জন প্রধান শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১ থেকে ৫ বছর, ২৪ শতাংশের ৫ থেকে ১০ বছর, ১৬ শতাংশের ১০ থেকে ১৫ বছর, ১৫ শতাংশের ১৫ থেকে ২০ বছর এবং ১১ শতাংশের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের বেশি। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ও এনভিভো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক (২০২২-২৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ও মহিলা শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।

শিক্ষকেরা ব্যস্ত বারোয়ারি সরকারি কাজে

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকেরা অন্তত ২০ ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটারের ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, শিক্ষার্থীদের ওজন ও চোখ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের এইচপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষার্থীদের জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন, ফাইলেরিয়া নির্মূল ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম, টিসিবির চাল বিতরণ, আদমশুমারি, ভূমি জরিপ, খানা জরিপ, ক্যাচমেন্ট ম্যাপ তৈরি, স্যানিটেশন জরিপ ও মৌসুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।

এগুলোর বাইরে শিক্ষকদের নিজ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি, বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজন (মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ), রেজিস্ট্রার হালনাগাদ, উপবৃত্তি রেজিস্ট্রেশন, উপজেলা-জেলা অফিসে বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে। বাধ্য হয়ে এসব পদের কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে অফিস সহায়ক ও দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই। তাই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বও শিক্ষকদেরই পালন করতে হয়।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পাঠদানের বাইরের কাজে যায় ৬০ কর্মদিবস

জরিপের তথ্য বলছে, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা বছরে অন্তত ৬০ দিন ব্যয় করেন। অর্থাৎ ওসব কাজের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকেরা এসব দিনে পাঠদান করাতে পারেন না। বদলি শিক্ষকের ব্যবস্থা করা না গেলে ওই শিক্ষকের ক্লাসগুলো হয় না। এতে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) বিভিন্ন নথিপত্র ও বিভিন্ন সময়ে জারি করা অফিস আদেশ ঘেঁটে সরকারি কাজে নির্বাচিত শিক্ষকদের ৬০ দিন পাঠদানবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকার তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

একাধিক অফিস আদেশের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ১৫ থেকে ৩০ দিন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ১৮ দিন, টিসিবির চাল বিতরণ কার্যক্রমে ৭ দিন, মৌসুমি প্রতিযোগিতায় ২ দিন, অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তত ৩ দিন সময় দিতে হয়।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবস ছিল ১৮৬ দিন। চলতি শিক্ষাবর্ষেও কর্মদিবসের সংখ্যা প্রায় একই।

প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটিও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাজের চাপ কমানোর সুপারিশ করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের শিক্ষণ-শিখনবহির্ভূত কাজের চাপ যুক্তিসংগতভাবে কমিয়ে আনতে হবে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানী নেই, ইচ্ছার বাইরে বাড়তি কাজ

জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, পাঠদানবহির্ভূত সরকারি বিভিন্ন কাজ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষক এ জন্য কোনো সম্মানী পান না। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক পাঠদানবহির্ভূত সরকারি কাজের জন্য সম্মানী না পাওয়ার কথা জানান। ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, কিছু কাজের জন্য সম্মানী দেওয়া হলেও তা পরিশ্রমের তুলনায় অপ্রতুল। বাকি ৮ শতাংশ সম্মানী পান বলে জানিয়েছেন।

জরিপের তথ্য বলছে, বেশির ভাগ শিক্ষক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা ইচ্ছার বাইরে বাধ্য হয়ে এসব কাজে অংশ নেন। বাকি ১৬ শতাংশ জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকেরা জানান, এসব দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ভোগেন তাঁরা।

শিক্ষকেরা মনে করেন, পাঠের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁদের মানসিক ও পেশাগত স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে। এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।

কারা দেন অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পাঠদানবহির্ভূত কার্যক্রমের বেশির ভাগই শিক্ষকেরা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায়।

শিক্ষকেরা জানান, ৫৩ শতাংশ সরকারি কাজ করার সরাসরি নির্দেশ আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। ২৫ শতাংশ কাজের নির্দেশনা দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বাকি কাজগুলো বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা করেন।

যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ জুলাইয়ের একটি অফিস আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ১৬ জেলার শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করানো হয়। এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য নির্ধারিত জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে।

আদেশে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, মূলত অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শিক্ষক-কর্মকর্তারা এসব কাজে (পাঠদানবহির্ভূত) অংশ নেন।

কারা করতে পারেন এসব কাজ

জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, ঢালাওভাবে শিক্ষকদের দিয়ে সব কাজ না করিয়ে যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই করানো উচিত। বেকার তরুণ-তরুণীদের দিয়ে এসব কাজ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ শতাংশ শিক্ষক। এ ছাড়া অফিস সহকারী নিয়োগ করে এসব কাজ করানোর পরামর্শ ১৯ শতাংশ শিক্ষকদের। বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষক জানান, এনজিও, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে এসব কাজ করানো উচিত।

জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পাঠদানবহির্ভূত বহু কাজের সঙ্গে জড়িত। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা-ই বাস্তব চিত্র। এসব কাজের জন্য পঠন-পাঠনে তাঁদের মন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সারাক্ষণই শিক্ষা প্রশাসনেই ব্যস্ত সময় পার করেন।’

ভূমি জরিপ কি শিক্ষার কাজ?—এমন প্রশ্ন করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ। টিকার কাজ কি শিক্ষার কাজ? দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের প্রচুর জনবল আছে। তাদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায়। শিক্ষকদের কোনোভাবেই শ্রেণিকক্ষের বাইরে অতি জরুরি প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের সময় ছাড়া আর কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না। পঠন-পাঠনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।

বাইরের অতিরিক্ত কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়

জরিপে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পাঠদানবহির্ভূত অতিরিক্ত কাজের ফলে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিকল্প শিক্ষকের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে। এতে শিখন ঘাটতি হয়, যা শিক্ষার্থীদের ফলাফলসহ সার্বিক পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।

জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ শিক্ষক জানান, বাইরের কাজের চাপে ওই সময় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। ৩৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, মাঝে মাঝে অন্য শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। ১৫ শতাংশ শিক্ষক জানান, অন্য শিক্ষক ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কাজে লাগে না।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষকেরা প্রায়ই ক্লাস নিতে পারেন না। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, যা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকলে পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এতে শিশুরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।

বেতনভাতা, মর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট অধিকাংশ শিক্ষক

জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষক অসন্তুষ্ট। ৮৭ শতাংশ শিক্ষক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতনভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর বাইরে তাঁরা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, মিড ডে মিল চালু, মনিটরিং কার্যক্রম চালু, বিদ্যালয় সময়সূচি পুনর্বিবেচনা, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান।

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বেতন গ্রেড উন্নতির দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা বলছেন, এই গ্রেড তাঁদের পেশার মর্যাদার জন্য সংগতিপূর্ণ নয়।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার রাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

যা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

জরিপের সার্বিক ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা অবগত। কীভাবে শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। আমরাও মনে করি, শিক্ষকদের শিক্ষকতার কাজেই থাকা দরকার। আমাদের দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এটি (পাঠদানবহির্ভূত কাজ) থেকে সরে আসা প্রয়োজন।’

বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত। এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে। বিষয়টির বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণভোটের প্রচার: পরিবর্তনের চাবি আপনারই হাতে

  • ১১টি সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে লিফলেটে।
  • বলা হয়েছে, ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে সব পাবেন। ‘না’ ভোট দিলে কিছুই পাবেন না।
  • গণভোটের বিষয়ে সরকার, ইসি, মন্ত্রণালয় প্রচার চালাবে।
তানিম আহমেদ, ঢাকা 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের বিষয়ে ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে ১০টি ভোটের গাড়ি চালু করা হয়েছে। ভোটারদের সচেতন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে ভোট পর্যন্ত দেশের সব জেলা-উপজেলায় ঘুরবে এসব গাড়ি। এ ছাড়া ভোটের গান প্রচারের পাশাপাশি উঠান বৈঠকও শুরু হয়েছে দেশব্যাপী। এর ধারাবাহিকতায় ‘দেশের চাবি আপনার হাতে’ স্লোগান নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

লিফলেটে ‘আপনি কি এমন বাংলাদেশ চান, যেখানে...’—এই জিজ্ঞাসার বিপরীতে ১১টি সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, সরকারি দল ইচ্ছেমতো সংবিধান সংশোধন করতে পারবে না; সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান চালু হবে; বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার এবং গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটিসমূহের সভাপতি নির্বাচিত হবে; কেউ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না; সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়বে; ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য পার্লামেন্টে একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে; দেশের বিচারব্যবস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে; আপনার মৌলিক অধিকারের সংখ্যা (যেমন অবাধে ইন্টারনেট সেবাপ্রাপ্তির অধিকার) বাড়বে; দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছেমতো ক্ষমা করতে পারবেন না; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য থাকবে।

লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে ওপরের সবকিছু পাবেন। ‘না’ ভোট দিলে কিছুই পাবেন না। মনে রাখবেন, পরিবর্তনের চাবি এবার আপনারই হাতে।

এ ছাড়া গণভোটের বিষয়ে প্রচারের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের উদ্যোগে ‘গণভোট বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম’ সেল খোলা হয়েছে। প্রচার কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (উপদেষ্টা পদমর্যাদা) অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। সেলের উদ্যোগে লোগো ও লিফলেট তৈরি করা হয়েছে, যা এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

জানা গেছে, লিফলেট দু-এক দিনের মধ্যে বিলি শুরু করবে সরকার। তারা পর্যায়ক্রমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার শুরু করবে। গণভোট নিয়ে দুটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। যেখানে গণভোটের বিষয়ে সব ধরনের তথ্য দেওয়া থাকবে।

প্রচারের মাধ্যমে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে পৌঁছানো সরকারের লক্ষ্য বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গণভোট একটি ঐতিহাসিক সুযোগ দেশের মানুষের জন্য। অতীতে যেভাবে গণভোট হয়েছে, তা থেকে এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ অতীতের গণভোটের ক্ষেত্রে দেখা গেছে গৃহীত সিদ্ধান্ত। যেমন দ্বাদশ সংশোধনীর ক্ষেত্রে। কিংবা এমন পরিস্থিতিতে হয়েছে, মানুষের পছন্দের জায়গা ছিল না। এই গণভোট হচ্ছে মানুষের পছন্দের সুযোগ। আশা করি, মানুষ সে সুযোগ ব্যবহার করবে।’

সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদের বিষয়ে গণভোটের বিষয়ে সারা দেশে প্রচারের লক্ষ্যে ২২ ডিসেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করেছে ১০টি ভোটের গাড়ি—সুপার ক্যারাভান। এসব গাড়ি দেশের ৬৪ জেলা ও ৩০০টি উপজেলায় ঘুরে বেড়াবে। তারা মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে নির্বাচন ও গণভোট সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দেবে, ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করবে এবং গণতন্ত্রের বার্তা ছড়িয়ে দেবে। সেখানে বিভিন্ন ভিডিও চিত্র দেখানো হবে।

নির্বাচন এবং গণভোট উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ৩০টি ভিডিও তৈরি করা হবে। যেখানে আটটি বিভাগের জন্য আটটি গান তৈরি করা হয়েছে। গত বুধবার ঢাকা বিভাগের জন‍্য নির্মিত গান রিলিজ করা হয়। গেয়েছেন স্টোইক ব্লিসখ‍্যাত কাজী। পর্যায়ক্রমে বাকি সাতটি বিভাগের জন্য নির্মিত গানও রিলিজ করা হবে। গানের কথায় এক দিন দুই ভোট, সংসদ-গণভোট আওয়াজ ওঠায়, জবাবদিহি, সংস্কার, পরিবর্তন চাইলে গণভোট দেওয়ার কথা বলা আছে। গত সরকারের আমলের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড গানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গানের কথায় সব জেলার নাম বলা হয়েছে। যেখানে দেশের মালিক জনগণকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সর্বশেষ মানুষের উদ্দেশে বলা হয়, ‘আসুন দেশের মালিকানা বুঝে নিন।’

গণভোট নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি, ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ ১৯ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রচার কার্যক্রম করবে সরকার। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সরকার বৈঠক করেছে। এ ছাড়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তথ্যচিত্র, শর্ট ভিডিও। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জারি-সারি গান, অঞ্চলভিত্তিক গান তৈরি করা হয়েছে—যা হাট-বাজারে প্রচার করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে ফোকাল ব্যক্তি নির্ধারণের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের জন্য একটি টিম তৈরি করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে প্রচার হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এনজিও ব্যুরোর উদ্যোগেও প্রচার করা হবে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিতসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে ধর্মগুরুদের নিজ নিজ ধর্মীয় স্থানের গণভোটের বিষয়ে মানুষকে বার্তা দিতে বলা হবে। সেখানে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে কী সংস্কার হবে, ‘না’ ভোট দিলে কী হবে—তা বলতে বলা হবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগেও গণভোটে নিয়ে প্রচার করা হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘গণভোটের প্রচার করার জন্য আমাদের অফিসগুলোকে ফেস্টুন দেব। এ ছাড়া লিফলেট বিলি করব। তবে মূল কাজ করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। আমরা আমাদের ভোট ব্যবস্থাপনায় যেটুকু দরকার, সেটুকু করব।’

গণভোট ও জুলাই সনদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোও প্রচার করবে বলে আশা সরকারের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্র নিলেন ৩১৪৪ জন, আগামীকালই দাখিলের শেষ সময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ১৫
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে। আগামীকাল সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। আজ রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৩০০ আসন থেকে ৩ হাজার ১৪৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আর জমা দিয়েছেন ১৬৬ জন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচনী কার্যক্রমের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোটের কাজে কর্মকর্তা নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে ইসি।

এর আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের তাগিদ দিয়ে গতকাল শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠি দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে পাঠানো চিঠিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের লক্ষ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা ও এ জন্য বাজেট প্রণয়ন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করা, ভুল তথ্য ও অপতথ্যের বিস্তার রোধ এবং বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের অনুমোদন ও নিরাপত্তা দেওয়াসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়।

এদিকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন-সংক্রান্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত অফিস, প্রতিষ্ঠান এবং প্রয়োজনে বেসরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং গণমাধ্যমের বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক আসবেন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকের বাংলাদেশে আগমন উপলক্ষে ভিসা প্রসেসিংসহ সব বিষয়ে সচিবের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগকে দেওয়া চিঠিতে বিগত সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য যেভাবে নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছিল, এবারও তা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবদের কাছে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রচারণা চালানো ও জনসচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে পোস্টাল ভোটের বিষয়ে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ডাক বিভাগকে সমন্বয় ও গোপনীয়তা বজায় রেখে পোস্টাল ব্যালট দ্রুত ও নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া এবং ফেরত আনার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে হবে।

এ ছাড়া আজ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে দেওয়া চিঠিতে ইসি জানায়, ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার, কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সংস্কার এবং কেন্দ্রে যাতায়াতের ভাঙা ও সংকীর্ণ রাস্তা মেরামতের প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে ইসির সম্মতির প্রয়োজন হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগামী মঙ্গলবার অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে কর্মরত জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী।

আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে এই অভিভাষণ দেবেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোছাইন আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয়ের এক স্মারকে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আয়োজিত প্রধান বিচারপতির অভিভাষণ দেওয়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য দেশের সব জেলার জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

এর আগে আজ সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁকে শপথবাক্য পড়ান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ২৩
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। ছবি: প্রেস উইং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার। ছবি: প্রেস উইং

বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার জানান, গত বছরের তুলনায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই দেশের ব্যবসায়ী সমাজ নতুন নতুন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই ঢাকা-করাচি সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হতে পারে।

পাকিস্তানি হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে চিকিৎসাবিজ্ঞান, ন্যানো টেকনোলজি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে পড়ার বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

লিভার ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য বাংলাদেশি রোগীদের পাকিস্তানে যাওয়ার হার বাড়ছে উল্লেখ করে ইমরান হায়দার বলেন, পাকিস্তান এ-সংক্রান্ত বিশেষায়িত চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা প্রদানের সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান যোগাযোগকে স্বাগত জানান। তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক, শিক্ষামূলক এবং সরাসরি জনযোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করার পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

হাইকমিশনার ইমরান হায়দারের দায়িত্ব পালনকালে দুই দেশের মধ্যে যৌথ বিনিয়োগের নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-বিষয়ক (এসডিজি) সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত