Ajker Patrika

পদত্যাগ ভাবনা পাল্টা চাপ

  • এক উপদেষ্টাকে নিয়ে অস্বস্তিতে অনেকে
  • বিএনপি বলছে পদত্যাগ চায় না। তবে প্রয়োজনে বিকল্প খুঁজবে
  • রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও প্রতিক্রিয়া আসছে
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ০৮: ৩৯
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার ৯ মাস পার করল; কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য এবং রাজপথে প্রতিদিনের আন্দোলনে এখনো সুস্থির হতে পারছে না। এর মধ্যেই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের চিন্তা করছেন—এমন খবর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সরকার ও রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থিরতা আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় আলোচনায় উঠে এসেছে জাতীয় সরকার গঠনের বিষয়টি।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ভাবনার খবর এমন এক সময়ে ছড়াল, যখন কয়েকজন উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বিভিন্ন শক্তি। সেই সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের মন্তব্য যেন নতুন মাত্রা যোগ করেছে এতে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে চতুর্মুখী চাপের কারণে বিরক্ত হয়েই পদত্যাগের কথা ভাবছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিষয়টিকে রাজনৈতিক মহলের ওপর পাল্টা চাপ হিসেবেই দেখছেন তাঁরা। ড. ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা সত্যি হলে অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে। এতে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন ও উপদেষ্টাদের নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে জাতীয় সরকারের বিষয়টি আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পরিবর্তে যদি তিনি (ড. ইউনূস) পদত্যাগ করতে চান বা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় হতে পারে। আমরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করিনি। আর একান্তই যদি উনি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তাহলে রাষ্ট্র তো বসে থাকবে না। রাষ্ট্র তো একটা বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে নেবে।’

এদিকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে বাধাগ্রস্ত করে আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল শুক্রবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে এসব কথা বলেছেন তিনি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নাহিদ। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। এ তিনজনই জুলাই অভ্যুত্থানের পরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কুশীলব হিসেবে পরিচিত।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নাহিদ ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি খবর পেয়েছি যে ড. ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্যই আজ সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম।’

নাহিদ এই মন্তব্যের পরপরই নড়েচড়ে বসেছে সব মহল। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তৈরি হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশ সংকটে আছে। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ডাকে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক বসে। এতে অংশ নেয় জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ আরও পাঁচটি রাজনৈতিক দল। বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং একটি সম্মিলিত কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট ও জটিল পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ নয়, বরং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব পক্ষকে সমঝোতামূলক সমাধানে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

আবার একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক আলটিমেটাম না দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহনশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব লেখেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করবেন না। তাঁর ক্ষমতার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের দরকার আছে।’ এরপর বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তিনি পোস্টটি মুছে দিয়ে আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা স্যারের বিষয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসটি আমার ব্যক্তিগত মতামত।’

সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা এবং বাইরের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মন্তব্যের কারণে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতপার্থক্যের সুযোগেই এমন পরিস্থিতি দানা বাঁধছে।

এ অবস্থায় গতকাল পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শুধু নির্বাচন করার জন্যই তাঁরা দায়িত্ব নেননি। তাঁদের তিনটি দায়িত্ব। এর একটি সংস্কার, অন্যটি বিচার, আরেকটি নির্বাচন। রিজওয়ানা হাসানের এই বক্তব্যের পরও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে।

একাধিক সূত্র বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত’—সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের এমন বক্তব্যের পর। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের পরই সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতপার্থক্যের বিষয়টি সামনে চলে আসে, যা সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে দেয়।

এর বাইরে সরকারের একজন উপদেষ্টার নানা কর্মকাণ্ড নিয়েও সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপোড়েন শুরু হয়; যা ধীরে ধীরে জটিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও ড. খলিলুর রহমানের পদত্যাগ এবং নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বেকায়দায় পড়ে সরকার।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, এমন নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের বিষয়টিকে সামনে আনা হয়; যাতে করে বিএনপি পাল্টা চাপে পড়ে। এ নিয়ে অবশ্য পাল্টাপাল্টি বক্তব্যও দিয়েছেন এনসিপি ও বিএনপির নেতারা।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গতকাল বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের চাপে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভাবনা এসেছিল।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিএনপি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায় না। তবে আবেগের বশে থাকতে না চাইলে বিকল্প বেছে নেবে দেশের জনগণ।

দেশের এই জটিল পরিস্থিতির ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ড. ইউনূসের মুখ থেকে না শোনা পর্যন্ত এ ধরনের বক্তব্য বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। বিএনপি কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের কথা কিছুই বলেনি। সরকারের সমস্যা হলো সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে বসছে না, ফলে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে।

সূত্র বলছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ যমুনায় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তিনি এক উপদেষ্টাকে তাঁর বর্তমান কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া অথবা দায়িত্ব পুনর্বণ্টন এবং রাজনৈতিক দলগুলো এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলাদা সভা করার পরামর্শ দেন।

জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি গতকাল আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন আলী রীয়াজ।

আলী রীয়াজ চলে আসার পরই নাহিদ ইসলাম যান প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন নাহিদ ইসলাম, সঙ্গে ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বৈঠকের পর নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, যদি কাজ করতে না পারেন, থাকবেন না, থেকে কী লাভ?’ তিনি বলেন, ‘উনি বলেছেন, উনি এ বিষয়ে ভাবতেছেন। ওনার কাছে মনে হয়েছে পরিস্থিতি এ রকম যে তিনি কাজ করতে পারবেন না। এখন রাজনৈতিক দল তার পদত্যাগ চায়...সে আস্থার জায়গা, আশ্বাসের জায়গা না পেলে উনি থাকবেন কেন?’

এদিকে চলমান এই গুমট রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজধানীর রমনা এলাকার একটি বাসায় গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে ঐকমত্য পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। অবশ্য বৈঠকের বিষয়টি কোনো দলের পক্ষ থেকে কেউই নিশ্চিত করেনি।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, তাঁরা মনে করছেন, মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথের দাবিতে ১৪ থেকে ২২ মে পর্যন্ত ৯ দিন রাজধানীতে কর্মী-সমর্থকদের টানা উপস্থিতির মাধ্যমে মাঠের রাজনীতিতে শক্তি দেখাতে পেরেছে। এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও বেশি চাপে ফেলা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া ইশরাককে মেয়র পদে শপথের পক্ষে উচ্চ আদালতের রায়কেও ‘জয়’ হিসেবে দেখছেন বিএনপির নেতারা। তাঁরা এবার আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে ঈদুল আজহার পর রাজপথে কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তফসিলের পর চার আসনের সীমানা পরিবর্তন করে ইসির গেজেট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ২৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পাবনা ও ফরিদপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই চার সংসদীয় আসন হলো পাবনা-১, পাবনা-২, ফরিদপুর-২ ও ফরিদপুর-৪। হাইকোর্ট কোর্টের আদেশ অনুযায়ী সীমানায় এই পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিলো ইসি।

আজ শুক্রবার ইসির জনসংযোগ পরিচালক মো. রুহুল আমিন মল্লিক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

তফসিল ঘোষণার আগে ইসি গাজীপুরের একটি আসন কমিয়ে এবং বাগেরহাটের একটি আসন ফেরত দিয়ে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছিল কমিশন। এবার তফসিল ঘোষণার পর আরও চারটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনল। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে এমন নজির দেখা যায়নি।

সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার প্রকাশিত গেজেটের তথ্যানুযায়ী, পাবনা-১ আসনের সীমানায় সাঁথিয়া উপজেলা এবং বেড়া উপজেলার বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, চাকলা ইউনিয়ন ও কৈটোলা ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

পাবনা-২ আসনের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সুজানগর উপজেলা এবং উল্লিখিত একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়ন (বেড়া পৌরসভা, হাটুরিয়া নাকালিয়া ইউনিয়ন, নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়ন, চাকলা ইউনিয়ন ও কৈটোলা ইউনিয়ন) ব্যতীত বেড়া উপজেলা।

আর ফরিদপুর-২ আসনের সীমানায় নগরকান্দা উপজেলা ও সালথা উপজেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ফরিদপুর-৪ আসনের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে-ভাঙ্গা উপজেলা, চরভদ্রাসন উপজেলা এবং সদরপুর উপজেলা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত