Ajker Patrika

শেখ হাসিনার বক্তৃতায় ক্ষোভ, ভাঙচুর-আগুন

  • আবদুল হামিদ, কাদের, আমু, তোফায়েল, শাহরিয়ারের বাড়িতে আগুন-ভাঙচুর।
  • বঙ্গবন্ধুর অর্ধশতাধিক ম্যুরাল ভাঙা হয়েছে।
  • আ.লীগের অন্তত ১৫টি কার্যালয় ভাঙচুর।
  • অভিনেত্রী শাওনের গ্রামের বাড়িতে আগুন।
শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ করে ছাত্র-জনতা। রাতেই রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ি ভাঙা হয়। ছবি: মেহেদী হাসান
শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ করে ছাত্র-জনতা। রাতেই রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ি ভাঙা হয়। ছবি: মেহেদী হাসান

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণকে ঘিরে গত বুধবার রাতে হঠাৎ উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। ওই রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর ও স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২-এ বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। আগুন দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার বাসভবন ‘সুধা সদনে’।

এ ছাড়া খুলনা নগরীর ‘শেখ বাড়ি’সহ সাবেক কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের (এমপি) বাড়িও বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ তালিকায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাড়িও রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে ভাঙা হয়েছে শেখ মুজিবের অর্ধশতাধিক ম্যুরাল। ভাঙচুর করা হয়েছে আওয়ামী লীগের অন্তত ১৫টি কার্যালয়।

কাদের-সাধনের বাড়ি ভাঙচুর-আগুন

কিশোরগঞ্জ শহরে গতকাল রাত ৯টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন জ্বলছিল। এর আগে বেলা ১টার দিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় ওবায়দুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। পরে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এ দিন বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানীতে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বাসভবনে ভাঙচুর করে আগুন দিয়েছে স্থানীয় জনতা। আগুনে চারতলা বাসার অধিকাংশ কক্ষ পুড়ে গেছে। এর আগে বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ভোলা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের বাসভবন ‘প্রিয় কুটির’ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গতকাল সকালে ঝালকাঠিতে আমির হোসেন আমুর বাসভবনসহ তাঁর স্ত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত বেগম ফিরোজা আমির হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সীমানাপ্রাচীর ভাঙচুর করা হয়েছে।

বুধবার রাত ১০টার দিকে কুষ্টিয়ায় এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের বাড়ির একটি অংশ। গতকাল সন্ধ্যায় নওগাঁ শহরের কেডির মোড় এলাকায় সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদারের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পিরোজপুরে সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়ালের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে নাটোরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের (শিমুল) ‘জান্নাতি প্যালেস’।

কুমিল্লায় সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মাদবরের বাড়িতে বুধবার গভীর রাতে হামলা চালিয়েছে মুখোশধারীরা। এ সময় অর্ধশতাধিক হামলাকারী বাড়িতে প্রবেশ করে চারটি প্রাইভেট কার, একটি মোটরসাইকেলসহ বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।

বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সাবেক চিফ হুইপ এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর বাড়ি। লক্ষ্মীপুর জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাউদ্দিন টিপুর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় পিংকি প্লাজায় অবস্থান নিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালায় ছাত্র-জনতা। পরে বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে তিতাখাঁ মসজিদসংলগ্ন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন লোটাসের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজর সামনে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক এমপি নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

এর আগে খুলনার আলোচিত ‘শেখবাড়িসহ’ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো পাঁচ ভাইয়ের বাড়ি এটি। এই বাড়ি থেকেই শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল ও শেখ রুবেল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

অভিনেত্রী শাওনের বাড়িতে আগুন

জামালপুরের নরুন্দিতে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার নরুন্দি রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

বঙ্গবন্ধুর অর্ধশতাধিক ম্যুরাল ভাঙচুর

বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে শেখ মুজিবের অর্ধশতাধিক ম্যুরাল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ঝিনাইদহে দুটি ম্যুরাল ভাঙচুরের পর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদ চত্বর, সদর উপজেলা পরিষদ চত্বর এবং সদরের ত্রিমোহনী বাজার এলাকায় জেলা শহরের প্রবেশদ্বারের ম্যুরাল হাতুড়ি ও এক্সকাভেটর দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

নরসিংদীতে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণেও দুপুরে ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এর আগে সকালে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসসংলগ্ন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দেয় ছাত্র-জনতা।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে বঙ্গবন্ধুর তিনটি প্রতিকৃতি ভাঙচুর করা হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা শহরের তিন স্থানে ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। বুধবার রাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে শেখ মুজিব ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের চারটি ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

যশোরে সাতটি ও পটুয়াখালীতে দুটি ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থী ও জনতা। বুধবার মধ্যরাত থেকে গতকাল দিনব্যাপী এসব ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

নেমপ্লেট গুঁড়িয়ে দিতে গিয়ে আহত এক

বুধবার রাতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের সামনে ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামফলক গুঁড়িয়ে দিতে চাইলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বঙ্গমাতা হল প্রভোস্ট ড. হাবিবা সুলতানার বাধার মুখে পড়েন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রভোস্টের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা চলে যান। এর আগে লম্বা মই দিয়ে উঠে নামফলক ভাঙতে গিয়ে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু থেকে পড়ে আহত হন চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাহজালাল আহমেদ জনি। পরে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের কার্যালয়েও ভাঙচুর

নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ভাঙচুর চালানো হয়। পাবনার ঈশ্বরদীতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় বুলডোজার গুঁড়িয়ে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। এ ছাড়া মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় দ্বিতীয়বারের মতো ভাঙচুর করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়। গতকাল বেলা ৩টার দিকে মিছিল নিয়ে ছাত্ররা এসে বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর শুরু করে।

আ.লীগ কার্যালয়কে পাবলিক টয়লেট ঘোষণা

বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের স্টেশন রোড এলাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। পরে কার্যালয়ের ভাঙা দেয়ালের সামনের অংশে লাল রং দিয়ে বড় করে লেখা হয় ‘পাবলিক টয়লেট’। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি যেখানে অবস্থিত, সেই স্থানটিকে ‘পাবলিক টয়লেটের মোড়’ নাম দেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফায়ার সার্ভিসে ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করবে সরকার, বাড়বে সুযোগ-সুবিধা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৪
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিসের আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের মান ও সংখ্যা বৃদ্ধির চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এই লক্ষ্যে একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা দ্রুত প্রণয়ন করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর পূর্বাচলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে ‘ইন্টারন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স ডে’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়াররা নিজেদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সমর্থ হয়েছেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ের ভূমিকম্প, বড় বড় অগ্নিদুর্ঘটনা এবং অন্যান্য দুর্যোগে ফায়ার ফাইটারদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভলান্টিয়াররাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করেছেন।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ভলান্টিয়ারদের আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, ‘কোনো রকম সুবিধা না নিয়ে নিজের ইচ্ছায় নিঃস্বার্থভাবে স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য আপনারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। আপনারা এ কাজের প্রতিদান শুধু ইহকালে নয়, পরকালেও পাবেন।’

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সারা দেশে ৬২ হাজার ভলান্টিয়ার তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৫৫ হাজারেরও অধিক ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকেরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স পরিবারের গর্বিত সদস্য হিসেবে আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছেন। এর ফলে একদিকে যেমন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের জনবল সংকট দূর হচ্ছে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারি বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে এককভাবে ভূমিকম্প, বড় অগ্নিদুর্ঘটনা বা বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলা করা দুরূহ। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকেরা পেশাদার বাহিনীর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে দুর্যোগ প্রশমনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল স্তরে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ রাজনীতিমুক্ত হবে কিনা—এ সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘আইন প্রণয়ন করা হয় জনগণকে সেবা দেওয়ার জন্য। এই আইনটিও করা হয়েছে জনগণ যেন প্রকৃত সেবা পায়, তা নিশ্চিত করতে।’ তিনি আশ্বস্ত করেন, পুলিশ কমিশন জনগণ ও পুলিশের প্রকৃত কল্যাণে কিছু সুপারিশ করবে, যা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করবে।

এর আগে উপদেষ্টা পূর্বাচল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর ট্রেনিং গ্রাউন্ডে স্বেচ্ছাসেবকদের প্রদর্শিত মহড়া দেখেন এবং তাঁদের ভূমিকার প্রশংসা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনাকে ফেরতের ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ভারত: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রংপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুরে সার্কিট হাউসে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ভারত এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। ট্রাইব্যুনালের রায় নিয়ে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে, আমরাও তাদের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছি।’

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। রংপুর অঞ্চলে চার দিনের সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা তো চেয়েছি যে তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) ফেরত পাঠানো হোক। যেহেতু উনি একজন কনভিক্টেড, যেহেতু সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা তাঁকে একটি শাস্তি দিয়েছে। কিন্তু আমরা ইতিবাচক কোনো সাড়া এখন পর্যন্ত পাইনি। এটা নিয়ে আমার মনে হয় স্পেকুলেট না করাই ভালো। দেখা যাক কী হয়। আমরা তো চেয়েছি খুব, এ ধরনের ঘটনায় তো ঝট করে এক দিনে, সাত দিনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না। আমরা অপেক্ষা করব, দেখি, ভারতের পক্ষ থেকে কী আসছে রিঅ্যাকশন।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, একটা রিঅ্যাকশন আমরা দেখেছি যেটা, সেটা হলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে, এ রকম একটা কথা আসছে আমাদের। দেখুক তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরে কোনো তথ্য নেই বলে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারেক সাহেব কখন আসবেন, এই সম্বন্ধে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। উনার স্ত্রী সম্ভবত আসছেন বা পৌঁছে গেছেন হয়তো ইতিমধ্যে। আজকে সকালে পৌঁছার কথা ছিল। বেগম জিয়াকে আজকে নেওয়া হচ্ছে না, আমি ঢাকা থেকে আজকে সকালে জানলাম যে আজকে নেওয়া হচ্ছে না। একটু টেকনিক্যাল প্রবলেম দেখা দিয়েছে ওই এয়ারক্র্যাফট নিয়ে। সে ক্ষেত্রে হয়তো এক-আধ দিন দেরি হতে পারে।’

আরাকান আর্মি বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আরাকান আর্মির সাথে আমাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা সম্ভব নয়। তারা একটা নন-স্টেট অ্যাক্টর। আমরা স্টেট হিসেবে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা যেমন মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ, থাইল্যান্ড বা ভারতের সাথে করতে পারি, সেটা তাদের সাথে করতে পারি না। তবে আমাদের স্বার্থ যেহেতু আছে, আমাদের দেখতে হবে। এই ঘটনা যাতে কমে বা আদৌ না ঘটে, এটার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

এ ছাড়াও নীলফামারীতে প্রস্তাবিত চীনা হাসপাতালের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত শুরু করে যেতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার এলে এই কাজ সমাপ্ত করবে বলেও আশা তার। এ সময় পিছিয়ে পড়া রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিকসহ সব ক্ষেত্রে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সরকারের সদিচ্ছার কথা জানান তৌহিদ হোসেন।

এরপর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সপরিবার রংপুর জমিদার বাড়ি তাজহাটে পরিদর্শনে যান। এ ছাড়াও বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে চা-চক্রের কথা রয়েছে তৌহিদ হোসেনের। আগামীকাল রংপুরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জিলা স্কুল পরিদর্শন করার কথাও রয়েছে তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করে শুরু হওয়া সহকারী শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষকেরা রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর দু’টি মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ ও ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের’ নেতারা এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন।

কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতা এবং সন্তানতুল্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে’ রোববার (৭ ডিসেম্বর) থেকে পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি স্থগিত করা হলো। রোববার থেকে সব শ্রেণির তৃতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) চলবে।

এদিকে আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের ‘হয়রানিমূলক’ বদলি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার তিনজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে নিজ জেলার বাইরে অন্য জেলায় বদলি করা হয়েছে। এসব বদলিকে তাঁরা ‘হয়রানিমূলক বদলি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

শিক্ষক নেতারা দাবি করেছেন, ‘রেওয়াজ না থাকলেও নিজ জেলার বাইরে হয়রানি করতে প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করা হয়েছে।’

যদিও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব বদলির আদেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দিন মাসুদ জানিয়েছেন, তাঁকে নোয়াখালী সদর উপজেলার কৃপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরলক্ষ্মী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের আরেক আহ্বায়ক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, তিনিসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অন্তত ৪৪ জন সহকারী শিক্ষককে অন্য জেলায় প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে বদলি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রথমে শোকজ ও পরে বদলি করা হলো। এটি হয়রানিমূলক বদলি, আমাদের শাস্তি দিয়েছে কারণ আমরা শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির পক্ষে লড়াই করেছি। কিন্তু অনেক শিক্ষক যাঁরা আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না তবুও তাঁরা বদলি হয়েছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ অনুসারীরা সরকারের দেওয়া আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করেছেন। সোমবার থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ কিছু স্কুলে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা তা বর্জন করে কর্মবিরতি চালিয়ে যান।

কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। পরে ১১ তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

গত ৮ নভেম্বর শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ ব্যানারে সেদিন বিকেলে তাঁরা ‘কলম বিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। সেসময় বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষকেরা পরদিন থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন।

পরে ১০ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন আন্দোলনরত শিক্ষকেরা, যেখানে একাদশ গ্রেডে বেতন নির্ধারণ এবং উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির জটিলতা নিরসনে সরকারে আশ্বাস দিয়েছে জানিয়ে ওই দিন রাতে তাঁরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যালটের নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন এসপিরা

  • দেশের নবজন্মে ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন এসপিরা: প্রধান উপদেষ্টা
  • সবাইকে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহিত করতে আইজিপির পরামর্শ।
শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১: ০৫
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তৃতা করেন। ছবি: পিআইডি

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের নিরাপত্তাকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপাররা (এসপি)। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মনে করেন, ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে সব প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নির্বাচন আয়োজন করা গেলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।

রাজধানীর রাজারবাগে আজ বৃহস্পতিবার সদ্য পদায়ন পাওয়া ৬৪ জেলার এসপি, কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজিদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সব নতুন এসপির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনকালীন দায়িত্ব ও মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দিকনির্দেশনা দেন।

আইজিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বক্তব্য দেওয়া এসপিদের সবার আলোচনাতেই কমবেশি ভোটকেন্দ্রে ব্যালটের নিরাপত্তার বিষয়টি উঠে আসে। আইজিপি বাহারুল আলম বৈঠকে তাঁর বক্তব্যে বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষ থাকবে। জেলায় জেলায় এসপিরা সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে এবং সবাইকে সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহিত করবে। আইজি এসপিদের বলেছেন, যার যার জেলা ও আসন ধরে ধরে নির্বাচনের সকল প্রার্থীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। এতে কাজটা সহজ হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলার এসপি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রশিক্ষণ ঠিকভাবে সম্পন্ন করার ওপর জোর দিয়েছেন আইজিপি। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাত বা উত্তেজনার তথ্য আগে থেকেই সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলো বিবেচনায় নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা রেঞ্জের এক এসপি জানান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান জোরদার করার নির্দেশও দেওয়া হয়। তাঁর মতে, এসব অস্ত্র উদ্ধার করা গেলে সহিংসতার ঝুঁকিও কমে আসবে বলে মনে করে পুলিশ সদর দপ্তর।

বৈঠকের আলোচনা নিয়ে জানতে চাইলে হবিগঞ্জের এসপি ইয়াসমিন খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কিছু সমস্যার কথা বলা হয়েছে। ভোটার, ভোট, ভোটের কেন্দ্র নিয়ে আইজি স্যার আমাদের বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’

এর আগে সকালে এসপিদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে।’ তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হবে। এই জন্ম দিতে আপনারা (এসপি) ধাত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করাই আপনাদের দায়িত্ব।’

অতীতের বিতর্কিত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার সেই ইতিহাস বদলানোর সুযোগ এসেছে। যেন দেশে-বিদেশে সবাই বলতে পারে, বাংলাদেশে এক নজিরবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, এ নির্বাচন কেবল রুটিন নির্বাচন নয়; এটি গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী নির্বাচন। যে স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আত্মত্যাগ করেছে, সেই স্বপ্নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরির সুযোগ এই নির্বাচন।

গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেই চিঠি দায়িত্ববোধের বার্তা দিয়ে গেছে। এসপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কর্মস্থলে যাওয়ার আগে আনাসের চিঠিটা কাছে রাখবেন। সেটাই আপনাদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দেবে।’

পুলিশ সুপারদের পদায়নে লটারির কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এর লক্ষ্য ছিল পক্ষপাতহীনতা নিশ্চিত করা। এতে ব্যক্তিগত অসুবিধা হলেও দায়িত্ব পালনে মনোযোগ বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত