Ajker Patrika

গাজা গণহত্যায় ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে উৎপাদিত অস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করছে ইসরায়েল। আর এই অস্ত্রগুলো যৌথভাবে তৈরি করেছে ইসরায়েলের ইসরায়েল ওয়েপনস ইন্ডাস্ট্রিজ ও ভারতের আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস। মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের এক বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর।

ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চালানো ভয়াবহ অভিযানে ইসরায়েলি সেনারা ব্যবহার করছে আরবেল নামের নতুন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চালিত অস্ত্র ব্যবস্থা। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বলছে, এই অস্ত্রকে বলা হচ্ছে ‘অপারেটরের প্রাণঘাতী ক্ষমতা ব্যবহারের পরও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বহুগুণ বাড়ায় এমন বিপ্লবী প্রযুক্তি।’

এই প্রযুক্তি এটি টাভোর, কারমেল ও নেগেভের মতো স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্রকে এমন এক সিস্টেমে রূপ দেয়, যেখানে অ্যালগরিদমের সাহায্যে লক্ষ্যভেদ আরও নির্ভুল ও কার্যকর হয়।

গত ১৩ মাসে গাজায় স্কুল, শরণার্থীশিবির ও হাসপাতাল বোমা হামলা থেকে শুরু করে রাস্তায় সরাসরি ফাঁসি পর্যন্ত নানা ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রাণ গেছে নারী ও শিশুদের। বিভিন্ন হিসাবে দেখা যাচ্ছে, নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা অন্তত ৬৬ হাজার।

তবে প্রায় ১০০ মার্কিন চিকিৎসকের এক চিঠিতে গত বছর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জানানো হয়েছিল, মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে। আর ব্রিটিশ জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এ প্রকাশিত আরেকটি চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজারের বেশি হতে পারে। জাতিসংঘও জানিয়েছে, গাজায় অভূতপূর্ব ধ্বংসযজ্ঞ ও মৃত্যুর সংখ্যা ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এআই ব্যবহারের কারণে হতে পারে।

আরবেল নামটি বাইবেল থেকে নেওয়া হলেও এটি সেই শহরের নামও, যা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনি গ্রাম হিত্তিন দখল করে গড়ে তোলা হয়েছিল। এই অস্ত্রের প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয় ২০২২ সালের অক্টোবরে গুজরাটের গান্ধীনগরের এক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে। সেখানে এটিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল ইসরায়েল ওয়েপনস ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ভারতের আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেসের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম তখন একে বলেছিল ভারতের প্রথম এআই-ভিত্তিক ফায়ারিং সিস্টেম। কিন্তু ২০২৪ সালের এপ্রিলে গাজার যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল আবার অস্ত্রটি প্রদর্শন করে এবং তখন একে বলা হয় প্রথম কম্পিউটারাইজড অস্ত্র ব্যবস্থা। সেখানে আর আদানির নাম উল্লেখ করা হয়নি। ধারণা করা হয়, যন্ত্রাংশ উভয় পক্ষ মিলেই তৈরি করেছে, তবে সংযোজন হয়েছে ইসরায়েলে। আদানির নাম বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে যুদ্ধকালীন জনরোষ এড়ানো বা ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞা এলে দায় এড়ানো।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গিরিশ লিঙ্গান্না বলেছেন, আরবেল আধুনিক যুদ্ধে এআই-এর ক্রমবর্ধমান ভূমিকা দেখায়, তবে এর প্রাণঘাতী ক্ষমতা ও অপব্যবহারের ঝুঁকি নৈতিক দিক থেকে ভয়াবহ। ফিলিস্তিনকে কীভাবে ইসরায়েল প্রকৃত অস্ত্র পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করছেন তা নিয়ে ‘দ্য প্যালেস্টাইন ল্যাবরেটরি’ বই লেখা সাংবাদিক অ্যান্টনি লোয়েনস্টাইন বলেন, গাজায় সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করাই ছিল উদ্দেশ্য, হামাসকে নয়। তিনি বলেন, “আমি সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি ভয়াবহ।’

লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (রুসি) গবেষক নোয়া সিলভিয়া মনে করেন, দক্ষতার নামে এসব অস্ত্র আসলে ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়ায়। তাঁর মতে, ইসরায়েলি সেনারা যেভাবে শিশুদের টার্গেট করছে, তাতে আর্বেল শিশু হত্যার প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করছে।

ভারত-ইসরায়েল অস্ত্র বাণিজ্য এর আগেও আলোচনায় এসেছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের তৈরি ২০টি হার্মিস–৯০০ ড্রোন ইসরায়েলে পাঠানো হয়। এগুলো আদানি ও ইসরায়েলি অস্ত্র উৎপাদক প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমের যৌথ উদ্যোগে তৈরি। গত বছরের এপ্রিলে ভারত থেকে রকেট ইঞ্জিন, বিস্ফোরক ও কামানের প্রপেল্যান্ট ইসরায়েলে পাঠানো হয়। মে মাসে আরেকটি ভারতীয় অস্ত্রবাহী জাহাজ স্পেনে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সামরিক রপ্তানি বন্ধের আবেদন খারিজ করে দেয়।

আরবেলের বিষয়টি প্রথম ঘোষণা করার সময় আদানি ডিফেন্সের সিইও আশীষ রাজবংশী বলেছিলেন, এটি সেনাদের চাপ ও ক্লান্তির মুহূর্তেও টিকে থাকতে সাহায্য করে। ২০২৪ সালের জুনে ইসরায়েল ওয়েপন ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা রোনেন হামুদত বলেন, এতে ইলেকট্রনিক ট্রিগার ও নতুন ফায়ারিং মোড আছে, যা চাপের মুহূর্তে নির্ভুলতা বাড়ায়।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যাকসেস নাও সংস্থার মারওয়া ফাতাফতা বলেছেন, গাজাকে ইসরায়েল পরিণত করেছে নতুন এআই যুদ্ধ প্রযুক্তির পরীক্ষাগারে এবং এবার তা ভারত-ইসরায়েল প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব হয়েছে। এই বিষয়ে মিডল ইস্ট আই জানতে চাইলে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য না তারা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। কিন্তু তারাও কোনো জবাব দেয়নি। ইসরায়েল ওয়েপন ইন্ডাস্ট্রিজের ও আদানিও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

ভারতের এআই খাতে বিনিয়োগ ২০১৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। ২০২৭ সালের মধ্যে বাজার দাঁড়াতে পারে ১৭ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারে। দেশটিতে দ্রুত তৈরি হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এআই-দক্ষ কর্মীশক্তি। গাজার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভারত-ইসরায়েলের মধ্যে রোবোটিকস, এআই ও প্রতিরক্ষা গবেষণায় অন্তত ২৪টি চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রেউভেন আজার বলেছেন, ভারত তাদের জন্য দেশীয় বাজার, পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে পৌঁছানোর পথ।

ভারতের শান্তিকামী সংগঠনগুলো বলছে, গণহত্যা চলার মাঝেই ভারত-ইসরায়েল অস্ত্র সহযোগিতা লজ্জাজনক। এবার তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে এআই অস্ত্র ব্যবহারে। সাংবাদিক লোয়েনস্টাইন সতর্ক করে বলেছেন, যত দিন পর্যন্ত গণহত্যার জন্য আইনি শাস্তি না আসবে, এসব এআই অস্ত্র আরও ছড়িয়ে পড়বে।

তিনি বলেন, ‘ভারত যেহেতু ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা, এ ধরনের অস্ত্র ভারত নিজ দেশে বা বিশ্বে অন্যত্রও ব্যবহার করতে পারে। তার মতে, গণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী যেকোনো সরকারই এমন প্রযুক্তি নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইয়েমেন সংঘাতে মুখোমুখি অবস্থানে সৌদি ও আরব আমিরাত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস
আমিরাত সমর্থিত ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’-এর সৈন্যরা। ছবি: দ্য টাইমস

ইয়েমেনের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে এবার নতুন মাত্রার উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় একই জোটে থাকা সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) এখন কার্যত বিপরীত অবস্থানে। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও কূটনৈতিক বক্তব্যে এই বিভাজন প্রকাশ্যে এসেছে, যা ওই অঞ্চলের যুদ্ধকে আরও জটিল করে তুলছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে সৌদি আরব ইয়েমেনের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান হামলা চালায়। এই হামলার লক্ষ্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী ‘সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল’ (এসটিসি)।

সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দাবি—হাদরামাউতের বন্দরনগরী মুকাল্লায় এসটিসির জন্য অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান নামানো হচ্ছিল, যা তাদের ‘সীমারেখা’ অতিক্রমের সমান। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, জাহাজগুলোর ট্র্যাকিং সিস্টেম বন্ধ ছিল এবং এসব অস্ত্র তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছিল।

অন্যদিকে, এসটিসি এই হামলা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হামলায় হাদরামাউতে মোতায়েন এসটিসির অভিজাত ইউনিটগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছে। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ বলছে, রাতের আঁধারে হামলা চালানো হয়েছে যাতে বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

এই সংঘর্ষ সৌদি আরব ও ইউএইর মধ্যে বাড়তে থাকা মতবিরোধকে প্রকাশ্যে এনেছে। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন একসঙ্গে লড়াই করলেও, ইয়েমেনের ভেতরে দুই দেশ ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়ে আসছে। সৌদি আরবের অভিযোগ, এসটিসিকে আমিরাতের সমর্থন ইয়েমেন ও পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। রিয়াদ একে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি হিসেবেও উল্লেখ করেছে।

এই উত্তেজনার মধ্যেই ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের প্রেসিডেনশিয়াল লিডারশিপ কাউন্সিলের প্রধান রাশাদ আল-আলিমি আরব আমিরাতের সঙ্গে যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেন এবং দেশটি থেকে আমিরাতের সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনি সাময়িক সময়ের জন্য আকাশ ও নৌ অবরোধও ঘোষণা করেন।

বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ ইয়েমেনে এসটিসির দ্রুত সম্প্রসারণ দেশটিকে কার্যত বিভক্ত করার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দক্ষিণে গুরুত্বপূর্ণ তেলসমৃদ্ধ অঞ্চল ও বন্দর, আর উত্তরে রাজধানী সানাসহ হুতিদের শক্ত ঘাঁটি—এই বাস্তবতায় ইয়েমেন আবারও এক গভীর ও বহুমাত্রিক সংকটের দিকে এগোচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৭
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার সঙ্গে শৈশবের স্মৃতি জানালেন সংগীতশিল্পী পুতুল

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত