Ajker Patrika

গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ভ্যানেই যৌন নির্যাতন ও হত্যা করা হয় ইরানি কিশোরীকে

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ৪৭
গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ভ্যানেই যৌন নির্যাতন ও হত্যা করা হয় ইরানি কিশোরীকে

২০২২ সালে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা অবস্থায় ইরানি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। এই আন্দোলনেই সক্রিয় ভূমিকায় ছিল ১৬ বছর বয়সী নিকা শাকারামি। ফাঁস হওয়া একটি গোপন নথির বরাতে বেরিয়ে এসেছে আন্দোলনের সময় নিখোঁজ হওয়া ওই কিশোরীকে যৌন নির্যাতন এবং হত্যা করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। 

এ বিষয়ে বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইরানের রাজধানী তেহরানের রাজপথে আন্দোলনরত অবস্থায় মাথার স্কার্ফ পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিল কিশোরী নিকা শাকারামি। দেশটির প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে স্বৈরাচার শাসক আখ্যা দিয়ে তাঁর মৃত্যু দাবি করে সে স্লোগান দিয়েছিল। সেদিনই নিখোঁজ হয় নিকা। 

ফাঁস হওয়া নথিপত্রে জানা গেছে, সেদিন আন্দোলনে সরব ভূমিকার পর থেকেই নিকাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছিলেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। 

নিকার পরিবার জানিয়েছে, ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর থেকেই নিকার কোনো হদিস ছিল না। এর আগে সে তার এক বন্ধুকে জানিয়েছিল যে পুলিশ তাকে অনুসরণ করছে। ৯ দিন পর একটি মর্গে তার মরদেহ খুঁজে পায় পরিবার। কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, আত্মহত্যা করেছে নিকা। তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন নিকার পরিবারের সদস্যরা। 

এ বিষয়ে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের ফাঁস হওয়া ওই নথিটি ‘অত্যন্ত গোপনীয়’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই নথিতেই নিকা এবং তার ওপর নির্যাতকারীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল। নির্যাতনকারীরা ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। 

ফাঁস হওয়া নথিতে ভয়ংকর সব তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তারের পর নিকাকে নিয়ে কী কী ঘটেছে সবকিছুরই উল্লেখ আছে এতে। ‘টিম-টুয়েলভ’ নামে ইরানের একটি নিরাপত্তা ইউনিট ঘটনার দিন তীক্ষ্ণ নজর রাখছিল নিকার ওপর। আন্দোলনে সরব উপস্থিতি এবং বারবার ফোনে কথা বলার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে তারা ভেবেছিল, আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় আছে নিকা। 

নজরদারির বিষয়টি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে নিকাকে গ্রেপ্তার করে নিজেদের ব্যবহৃত একটি ভ্যানের মধ্যে টেনে তোলে ওই নিরাপত্তা ইউনিট। এই ভ্যানেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় নিকা। 

গোপনীয় ওই নথির তথ্য অনুযায়ী, ভ্যানের পেছনের অংশে হ্যান্ডকাফ পরিহিত নিকার সঙ্গে ছিলেন নিরাপত্তা ইউনিটের তিন সদস্য। তাঁদের মধ্যে একজন নিকাকে যৌন নির্যাতন করেন। এ সময় নিকা নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা শুরু করেছিল। সে ওই নির্যাতনকারীকে লাথি এবং চিৎকারের মাধ্যমে দমানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু নিকার প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে তাকে থামানোর জন্য ওই তিন সদস্য পুলিশের ব্যবহৃত ব্যাটন দিয়ে মারাত্মকভাবে পেটাতে শুরু করেন। 

নথিতে নিকার ওপর নির্যাতনকারী নিরাপত্তা সদস্যদের নাম উল্লেখসহ তাঁদের স্বীকারোক্তির কথা বলা হয়েছে। ভ্যানের পেছনে নির্যাতনকারীরা হলেন আরশ কালহোর, সাদেঘ মনজাজি এবং বেহরুজ সাদেঘি। ঘটনার সময় চারজনের ওই দলটির প্রধান মোর্তজা জলিল ছিলেন ভ্যানের সামনের অংশে চালকের পাশের আসনে। 

অভিযুক্তরা স্বীকার করেছেন, ঘটনার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। নিকাকে থামাতে গিয়েই তার মৃত্যু হয়। 

গত বছর নিকার মা জানিয়েছিলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে নিকার মাথায় মারাত্মক আঘাতের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। 

নিকার ঘটনা ফাঁস হওয়ার সূত্র ধরে ইরানে সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের হাতে ভগবদ্গীতা তুলে দিলেন মোদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: এক্স
ছবি: এক্স

ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দিল্লিতে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্মেলন শুরুর আগে পুতিনকে রুশ ভাষায় অনূদিত ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ উপহার দিয়েছেন মোদি।

এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ছবি শেয়ার করে মোদি লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিনকে রুশ ভাষায় অনূদিত এক কপি গীতা উপহার দিলাম। এই গীতার শিক্ষা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগায়।’

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়া বিশ্ব বাণিজ্য এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরোপিত বিভিন্ন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাও বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর এটিই পুতিনের প্রথম ভারত সফর।

এদিকে এই সম্মেলন এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন রুশ তেল কেনার কারণে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান। এ সময় দুই নেতা করমর্দন, আলিঙ্গন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং এরপর তাঁরা একই গাড়িতে বিমানবন্দর ছাড়েন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক জানিয়েছে, পুতিনকে ব্যক্তিগতভাবে স্বাগত জানাতে গিয়ে মোদি কূটনৈতিক প্রটোকল ভেঙে ফেলেন; যা রুশ পক্ষকে বিস্মিত করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অস্ট্রেলিয়ায় ‘এশিয়ান এল চ্যাপোকে’ ১৬ বছরের কারাদণ্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের হেফাজতে তে চি লপ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের হেফাজতে তে চি লপ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

আন্তর্জাতিক মাদক পাচারের অন্যতম প্রধান চক্রের নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে কুখ্যাত অপরাধী তে চি লপকে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার একটি আদালত। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) মেলবোর্নের আদালত তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে রায় ঘোষণা করে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ৬২ বছর বয়সী তে চি লপ একজন কানাডীয় নাগরিক হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেন চীনে। ইন্টারপোল তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যতম বড় মাদক সিন্ডিকেট ‘স্যাম গোর’ বা দ্য কোম্পানি-র মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করে আসছিল। এই সিন্ডিকেট বছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন পাউন্ড আয় করত বলে ধারণা করা হয় এবং জাপান থেকে শুরু করে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত অন্তত ১২টি দেশে মাদক সরবরাহ করত।

২০১৯ সালে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে থমসন রয়টার্স তাঁকে বিশ্বের প্রভাবশালী ও আলোচিত মাদক সম্রাট জোয়াকিন ‘এল চ্যাপো’ গুজম্যান এবং পাবলো এসকোবারের সমতুল্য হিসেবে উল্লেখ করেছিল। এমনকি তাঁর নিরাপত্তায় থাই কিকবক্সার ভাড়া করা হতো বলেও প্রতিবেদনে উঠে আসে।

২০২১ সালে ইন্টারপোলের নোটিশের ভিত্তিতে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধে তাঁকে সেখান থেকে প্রত্যর্পণ করা হয়। আদালতে উপস্থাপিত অভিযোগে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তে চি লপ অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল পরিমাণে মেথঅ্যামফেটামিন পাচারের ষড়যন্ত্র করেন।

রায়ে বিচারক পিটার রোজেন বলেন, মামলাটির সাজা আজীবন কারাদণ্ড হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একটি বিশেষ প্রত্যর্পণ চুক্তির কারণে তুলনামূলক কম সাজা দিতে হয়েছে।

আদালতে দণ্ড ঘোষণার সময় তে চি লপ নীল শার্ট ও কালো চশমা পরে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। তিনি দশ বছর কারাভোগের পর জামিনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশের কমিশনার ক্রিসি ব্যারেট বলেন, ‘এই রায় প্রমাণ করে, অস্ট্রেলিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাত বিশ্বের যে কোনো অপরাধীর কাছে পৌঁছাতে পারে।’

তিন বছর বিচার প্রক্রিয়া চলার পর অবশেষে এই আলোচিত মামলার পরিসমাপ্তি ঘটল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভিত্তিহীন অভিযোগে হার্ভার্ডের অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করল মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক কার্লোস পর্তুগাল গুভেয়া। ছবি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি
হার্ভার্ড ল স্কুলের অধ্যাপক কার্লোস পর্তুগাল গুভেয়া। ছবি: হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ হার্ভার্ড ল স্কুলের একজন অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হার্ভার্ডের অধ্যাপক ও ব্রাজিলের নাগরিক কার্লোস পর্তুগাল গুভেয়াকে বুধবার গ্রেপ্তার করেছে ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, গুভেয়ার অস্থায়ী নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা বাতিল করার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অধ্যাপক গুভেয়া ব্রাজিলের সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি সদ্য সমাপ্ত শরৎকালীন সেমিস্টারে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে হার্ভার্ডে পড়িয়েছেন। ডিএইচএস জানিয়েছে, গুভেয়া যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে সম্মত হয়েছেন। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হার্ভার্ডও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবরে অধ্যাপক গুভেয়ার বিরুদ্ধে ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসবের আগের দিন ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের একটি সিনাগগের (ইহুদি উপাসনালয়) বাইরে পেলেট গান (ছররা গুলি) ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

ম্যাসাচুসেটসের ব্রুকলাইনে টেম্পল বেথ জিয়নের (ইহুদি উপসনালয়) কাছে গত ১ অক্টোবর সন্ধ্যায় অস্ত্র হাতে এক ব্যক্তির উপস্থিতির খবর পায় পুলিশ। পরে সেখানে গিয়ে পুলিশ গুভেয়াকে আটক করে। ওই সময়টা ছিল ইহুদিদের পবিত্র উৎসব ইয়ম কিপুরের আগের দিন। পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুভেয়া দাবি করেছিলেন, তিনি কাছাকাছি ইঁদুর মারতে পেলেট গান ব্যবহার করছিলেন।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ওই ঘটনাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ ঘটনা বলে আখ্যা দেয়। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির বিপরীতে টেম্পল বেথ জিয়ন জানায়, ঘটনাটি ইহুদিবিদ্বেষ থেকে ঘটেছে বলে মনে হয় না। ঘটনাটি তদন্তের পর ব্রুকলাইন পুলিশ বিভাগও একই মত দেয়। উপসনালয়টির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, পুলিশ তাদের জানিয়েছে, গুভেয়া জানতেন না যে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানে একটি উপাসনালয় আছে বা ওই দিন সেখানে কোনো ধর্মীয় উৎসব চলছে।

তবে গত মাসে অবৈধভাবে পেলেট গান ছোড়ার অভিযোগে দোষ স্বীকার করেন গুভোয়া। এরপর তিনি ছয় মাসের প্রিট্রায়াল প্রবেশন (বিচার পূর্ববর্তী বিশেষ ব্যবস্থা) মেনে নেন। তখন তাঁর বিরুদ্ধে আনা শান্তিভঙ্গ, বিশৃঙ্খল আচরণ ও সম্পত্তি নষ্টের অভিযোগগুলো প্লিয়া ডিলের (ফৌজদারি আইনের একটি প্রক্রিয়া) অংশ হিসেবে বাতিল করা হয়।

কিন্তু গত বুধবার ছয় মাসের প্রিট্রায়াল প্রবেশন শেষ হওয়ার আগেই অস্থায়ী নন-ইমিগ্রান্ট ভিসা বাতিল করে অধ্যাপক গুভেয়াকে একটি ভিত্তিহীন অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এদিকে গুভেয়ার গ্রেপ্তারের খবর এমন সময়ে এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়টির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে চাপ দিচ্ছে।

হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে—বিশ্ববিদ্যালয়টি ইহুদিবিদ্বেষ মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে হার্ভার্ড কিছু সরকারি পদক্ষেপের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বরে একজন বিচারক রায় দেন যে ট্রাম্প প্রশাসন বেআইনিভাবে হার্ভার্ডের জন্য বরাদ্দ করা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি গবেষণা অনুদান বাতিল করেছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের দিল্লি সফর: ভারসাম্য রক্ষার কৌশলে ভারত, অস্ত্র–তেল বিক্রি বাড়াতে চায় রাশিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে শীর্ষ সম্মেলন শুরু করেছেন। যেখানে বাণিজ্য ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপানো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর শুক্রবারের এই সম্মেলন পুতিনের ভারতে প্রথম সফর। এই সম্মেলন এমন এক সময় হচ্ছে, যখন ভারত রুশ তেল কেনার কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের মুখোমুখি।

আলোচনা শুরুর সময় মোদি পুতিনকে বলেন, ভারত নিরপেক্ষ নয়—ভারতের একটি অবস্থান আছে আর সেই অবস্থান হলো শান্তির পক্ষে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শান্তির জন্য নেওয়া সমস্ত প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি এবং শান্তির জন্য নেওয়া প্রতিটি উদ্যোগের পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াই।’

জবাবে পুতিন সংঘাত মেটানোর লক্ষ্যে মোদির মনোযোগ ও প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান। পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনে কী ঘটছে এবং এই সংকটের সম্ভাব্য শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে আমরা অন্য কয়েকটি শরিক, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ যৌথভাবে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছি—তা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার সুযোগ আমরা পেয়েছি এবং আপনি আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন।’

পুতিনের এই সফর এমন এক সময়ে এল, যখন মস্কো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। ভারত রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ ৬৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তাঁরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে বাড়াতে চান।

আজ শুক্রবার পুতিনের সফরসূচি শুরু হয় ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাওয়ার মাধ্যমে, যেখানে ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পুতিনকে স্বাগত জানাতে মুর্মুর সঙ্গে মোদিও উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানে পুতিনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর পুতিন রাজঘাটে গিয়ে উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে মাল্যদান করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার মোদি উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ব্যক্তিগতভাবে বিমানবন্দরে হাজির হয়ে পুতিনকে আলিঙ্গন ও হাত মিলিয়ে স্বাগত জানান। পরে তিনি রুশ নেতাকে তাঁর বাসভবনে এক নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন। দিল্লি থেকে আল–জাজিরার সাংবাদিক নেহা পুনিয়া মন্তব্য করেন, অনেক আলিঙ্গন ও হাত মেলানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এখন নজর শুক্রবারের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের দিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই নেতা এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন যে—রুশ নেতা একঘরে নন এবং পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ সত্ত্বেও ভারতের মতো দেশ তাঁকে স্বাগত জানায়।

২০২৩ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের সময় ইউক্রেনীয় শিশুদের বেআইনিভাবে নির্বাসনের অভিযোগে পুতিনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। ভারত আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয় এবং তাঁর চুক্তি বা নিয়মের দ্বারা আবদ্ধও নয়। সেই কারণে পুতিন গ্রেপ্তারের ভয় ছাড়াই ভারতে সফর করতে পেরেছেন।

রুশ নেতা স্থানীয় সময় আজ রাত ৯টায় ভারত ছাড়বেন। রাশিয়া ও ভারতের মধ্যে ২৫ বছর ধরে কৌশলগত শরিকানা রয়েছে, যা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুতিনের প্রথম বছর থেকেই শুরু। তবে রাশিয়ার ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক বজায় রাখার এই ভারসাম্যের কাজটি আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। রুশ কার্যক্রমের কারণে নেতাদের বার্ষিক সফরের বহুদিনের প্রথা ব্যাহত হয়। তবে গত বছর মোদির রাশিয়া সফরের মাধ্যমে তা কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

যুদ্ধের মধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো যখন রুশ অপরিশোধিত তেলের ওপর তাদের নির্ভরতা কমাতে শুরু করে, ভারত তখন তার ক্রয় বাড়ায়। কিন্তু আগস্টে ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধবিরতি মানতে চাপ দেওয়ার জন্য ভারতের রুশ তেল কেনার শাস্তিস্বরূপ ভারতীয় পণ্যের ওপর আগে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ করে দেন। তা সত্ত্বেও ভারত রুশ তেল কেনা চালিয়ে যায়।

তবে এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে—নভেম্বরে রুশ তেল কোম্পানি রোজনেফ্ট ও ল্যুকওয়েলের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়, সঙ্গে এই সংস্থাগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করা অন্য দেশের সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞার হুমকি আসে। ভারতের মোট তেল আমদানির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই দুটি কোম্পানি থেকে।

নয়াদিল্লি জানিয়েছে, তাদের অন্যায়ভাবে নিশানা করা হচ্ছে। তারা উল্লেখ করে যে—পশ্চিমা দেশগুলোও যখন তাদের স্বার্থের প্রয়োজন হয়, তখন মস্কোর সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যায়। নয়াদিল্লি আসার আগে এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে পুতিনও একই রকম যুক্তি দেন। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাই তাদের নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এখনো আমাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে।’ তিনি আরও যোগ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যদি রুশ জ্বালানি কেনার অধিকার থাকে, তবে ভারতেরও ‘একই সুবিধা’ পাওয়া উচিত।

পুতিন ভারতকে আরও রুশ অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও নয়াদিল্লিকে ওয়াশিংটনের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। মস্কো ভারতে আরও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ও এসইউ-৫৭ স্টেল্থ যুদ্ধবিমান বিক্রি করার আশা করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য চাপ দিতে এই শুক্রবারের বৈঠকের মাত্র কয়েক দিন আগেই পুতিন মস্কোয় মার্কিন এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন। সেই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই অগ্রগতির প্রশংসা করে, যদিও কোনো যুগান্তকারী সমাধান হয়নি। গতকাল মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারত যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে এবং আলাপ-আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত