Ajker Patrika

সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারবিরোধী অভিযান, ১০০ কোটি ডলারসহ ১০ বিদেশি গ্রেপ্তার

আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ১১: ২৪
সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারবিরোধী অভিযান, ১০০ কোটি ডলারসহ ১০ বিদেশি গ্রেপ্তার

অর্থপাচারের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে সিঙ্গাপুরের পুলিশ। নগদ অর্থসহ বিদেশিদের ১০০ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করেছে পুলিশের বিশেষ বাহিনী। এই ঘটনায় এক নারীসহ ১০ বিদেশিকে গ্রেপ্তার করে বুধবার রাতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইটস টাইমস এক প্রতিবেদনে এসব জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই বিদেশিদের সবার বয়স ৩১ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। তাঁদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, অর্থপাচার ও গ্রেপ্তার প্রতিহত করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে। বিদেশিদের এই দলটি ভালো মানের বাংলো (জিসিবি) ও উন্নত কনডোমিনিয়ামে থাকতেন। সবারই বিলাসবহুল গাড়ি আছে।

পুলিশ বলছে, গতকাল মঙ্গলবার সন্দেহভাজন মুদ্রা পাচারকারীদের ধরতে সিঙ্গাপুরজুড়ে অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোতে একসঙ্গে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে ট্যাংলিন, বুকিত তিমাহ, অর্চার্ড রোপ, সেনটোসা ও রিভার ভ্যালি রয়েছে।

Untitled-1সিঙ্গাপুরের ব্যাংকের জমা অর্থের উৎস প্রমাণের জন্য নথি জালের অভিযোগসহ সম্ভাব্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত আরও ৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। ১২ জন তদন্ত কর্মকর্তা এ নিয়ে কাজ করছেন।

আজ বুধবার এক বিবৃতিতে পুলিশ বলেছে, অভিযানে ৪০০টিরও বেশি কর্মকর্তা ছিলেন। এর মধ্যে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ, বাণিজ্যিক বিষয়ক বিভাগ (সিএডি), স্পেশাল অপারেশন কমান্ড বা দাঙ্গা পুলিশ, এবং পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা ছিলেন। 

Untitled-2বিদেশি নাগরিকদের এই চক্রটি অর্থ পাচার, কেলেঙ্কারি এবং অনলাইন জুয়াসহ নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে। সিঙ্গাপুরের পুলিশ সূক্ষ্ম তদন্তের মাধ্যমে তাঁদের শনাক্ত করেছে।

পুলিশ বলেছে, ৯৪টি সম্পত্তি এবং ৫০টি গাড়ির মালিকানা বাতিল করা হয়েছে। যার মোট আনুমানিক মূল্য ৮১৫ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। একাধিক অলংকার এবং মদ ও মদের বোতলও জব্দ করা হয়েছে।

তদন্তের জন্য এবং অর্থপাচার রোধে পুলিশ ৩৫টিরও বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

এ ছাড়া জব্দ করা হয়েছে ২৩ মিলিয়নের বেশি নগদ টাকা, ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল ব্যাগ এবং ঘড়ি, ১২০টিরও বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোন, ২৭০টিরও বেশি গয়না, দুটি সোনার বার এবং ভার্চুয়াল সম্পদের তথ্যসহ ১১টি নথি।

সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের দায়ে গত পাঁচ বছরে ১৭টি সংস্থাকে জরিমানা করা হয়েছে। এসব অপরাধ দমনে বিভিন্ন ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কথা ভাবছে দেশটি। 

সোনা-(2)গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪০ বছর বয়সী একজন সাইপ্রাসের নাগরিক রয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুরের বুকিত তিমাহের ইওয়ার্ট পার্কের জিসিবিতে বসবাস করতেন। পুলিশ অফিসারেরা তাকে দরজা খুলতে বললে তিনি দ্বিতীয় তলার বারান্দা থেকে নিচে লাফ দেন এবং আহত অবস্থায় একটি ড্রেনের মধ্য লুকিয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

তার কাছে চীন এবং কম্বোডিয়া থেকে জারি করা অন্যান্য বিদেশি পাসপোর্ট ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ লোকটির কাছ থেকে ২ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলারের বেশি নগদ অর্থ জব্দ করেছে এবং ১১৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ১৩টি সম্পত্তি এবং পাঁচটি গাড়ির জন্য নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেছে।

পুলিশ সেখান থেকে একাধিক অলংকার এবং মদ ও মদের বোতলও জব্দ করেছে এবং ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের বেশিসহ চারটি সম্পর্কিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে।

এই অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন, ৪২ বছর বয়সী এক তুর্কি নাগরিক, ৪৪ ও ৪৩ বছর বয়সী দুই চীনা নাগরিক, ৪১ বছর বয়সী কম্বোডিয়ার নাগরিক, ৩৫ বছর বয়সী নি-ভানুয়াতুর নাগরিক, ৩৩ বছর বয়সী আরেক কম্বোডিয়ার নাগরিক, ৩৪ বছর বয়সী সাইপ্রাসের আরেক নাগরিক, ৩১ বছর বয়সী আরেক চীনা নাগরিক এবং ৩১ বছর বছর বয়সী আরেক কম্বোডিয়ার নাগরিক।  

সোনা-(3)এসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, মদসহ মূল্যবান সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারে খবর পাওয়া যায়নি। কবে এখনো ৮ জনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।   

সিঙ্গাপুরের কমার্শিয়াল অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের (সিএডি) ডিরেক্টর ডেভিড চিউ বলেছেন, সিঙ্গাপুরকে এই ধরনের অপরাধের কেন্দ্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে পুলিশ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে কাজ করবে।

ডেভিড চিউ বলেন, ‘সিঙ্গাপুরকে অপরাধীরা আশ্রয়স্থল বানাতে পারবে না। আমাদের ব্যাংকিং খাত অপব্যবহারের ব্যাপারেও আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এই অপরাধীদের প্রতি আমাদের বার্তা সহজ— আমরা আপনার অপরাধ জানতে পারলে গ্রেপ্তার করবই। পাচার বা দুর্নীতি করে গড়া সম্পদ বাজেয়াপ্ত করব। আমরা আমাদের আইন অনুযায়ী আপনাদের মোকাবিলা করব।’

মনিটারি অথোরিটি অব সিঙ্গাপুরের (এমএএস) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (আর্থিক তত্ত্বাবধান) মিসেস হো হার্ন শিন বলেছেন, সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত। ফলে দেশটি অর্থপাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তড়িঘড়ি করে করা ট্রানজ্যাকশন তদন্তে পুলিশকে সাহায্য এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সাহায্য করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত