Ajker Patrika

ইসরায়েলের দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান অগ্রহণযোগ্য: জাতিসংঘ মহাসচিব 

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১৮: ৫৫
ইসরায়েলের দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান অগ্রহণযোগ্য: জাতিসংঘ মহাসচিব 

মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ভিত্তিতে ‘দ্বিরাষ্ট্র সমাধান’ ইসরায়েলের দিক থেকে প্রত্যাখ্যান করাকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর ফলে গাজায় সংঘাত দীর্ঘায়িত হবে বলে মন্তব্য করেছেন। গত সোমবার গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বৈঠকে গুতেরেস বলেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা কেবল উগ্রপন্থীদের উৎসাহিত করবে এবং সংঘাতকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রসারিত করবে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গত সপ্তাহে দ্বিরাষ্ট্র সমাধান যেভাবে স্পষ্ট করে বারবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’ 

তিনি বলেন, ‘এই প্রত্যাখ্যান এবং ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্রের অধিকার অস্বীকার করা অনির্দিষ্টকালের জন্য একটি সংঘাতকে দীর্ঘায়িত করবে। এ সংঘাত বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ 

গুতেরেস আরও বলেন, ভয়, ঘৃণা ও সহিংসতার অন্তহীন চক্র থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় হচ্ছে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান। এটিকে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের বৈধ আকাঙ্ক্ষা পূরণের একমাত্র উপায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

গুতেরেসকে উদ্ধৃত করে দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গাজার সমগ্র জনগোষ্ঠী এমনভাবে এবং গতিতে ধ্বংসের শিকার হচ্ছে, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। কোনো কিছুই গাজার জনগণের সম্মিলিত শাস্তিকে ন্যায্যতা দিতে পারে না।’ 

এ ছাড়া তিনি হামাস যোদ্ধাদের ইচ্ছাকৃত হত্যা, আঘাত করা, বেসামরিক নাগরিকদের অপহরণ, তাদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ব্যবহারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘গাজায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ খাবারের অভাবে ভুগছে। ২২ লাখ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।’ হাসপাতালগুলোর সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধসে পড়ায় রোগ ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিরা শুধু বোমা হামলায় নয়, কলেরা, আমাশয় ও হেপাটাইটিসেও মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। 

জাতিসংঘের কর্মী ও সহযোগীদের সব প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, ‘গাজার ফিলিস্তিনি এবং যাঁরা তাদের সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন, তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া পরিস্থিতিতে কোনো কার্যকর মানবিক সহায়তা কার্যক্রম কাজ করতে পারে না।’

ছয় হাজার ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান গুতেরেস। তিনি আরও বলেন, বন্দীদের প্রতি অমানবিক আচরণের খবরে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জিম্মিদের মুক্তি সহজতর করতে এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনা কমাতে, যেখানে ত্রাণ প্রয়োজন সেখানে পৌঁছানো নিশ্চিত করতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান তিনি।

লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাকে চলমান সহিংসতার দিকে ইঙ্গিত করে গুতেরেস হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বৃহত্তর আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ার ঝুঁকি এখন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর বলেন, কাম্পালায় জি-৭৭ বৈঠক থেকে শুরু করে ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নিউইয়র্কে জাতিসংঘ পর্যন্ত বিশ্ব অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছে। 

নেতানিয়াহু স্বার্থপরভাবে কেবল এক লক্ষ্যাভিমুখী রয়েছেন বলে দোষারোপ করেন তিনি বলেন, ‘যারা শান্তি চায় এবং যারা শান্তি অস্বীকার করতে চায়, তাদের মধ্যে বিভাজন রেখা টানতে হবে।’

বৈঠকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের বক্তারা অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি এবং দ্রুত দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান জানান।

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেন, ‘এই গণহত্যা বন্ধ হোক। এখন অন্তত এই দুর্দশার অবসান ঘটাতে বাধ্য করে একটি বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত। আপনারা সবাই দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে সমর্থন করেন, যা ইসরায়েল সরকার প্রত্যাখ্যান করছে।’

তিনি বলেন, ইসরায়েলি চরমপন্থীদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ও চরমপন্থী অ্যাজেন্ডার কাছে এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ জিম্মি হতে পারে না। 

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বউ হাবিব তাঁর দেশে (লেবাননে) যুদ্ধ সম্প্রসারণে ইসরায়েলি ফাঁদে না পড়ার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। ‘আমরা কি আমাদের অতীতের ভুল থেকে কিছু শিখিনি; এটা কি আমাদের স্বীকার করার সময় নয় যে আমরা একে অপরকে অস্বীকার করতে পারি না?’

সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি লানা জাকি নুসেইবেহ বলেন, ‘আমরা ব্যর্থ স্থিতাবস্থায় ফিরে যাওয়াকে সমর্থন করব না। এর আগে, আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা নিয়ে সব পরিকল্পনা দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে শেষ করেছিলাম। এখন দ্বিরাষ্ট্র সমাধান থেকে আমাদের সব আলোচনা শুরু করতে হবে।’

সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ এল-খেরেইজি ইসরায়েলের যুদ্ধাস্ত্রের নিন্দা জানিয়েছেন। 

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বৈঠকে বলেন, ‘অন্যদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই ইসরায়েলি সরকারকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করতে হবে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি সংঘাতে টেনে আনতে ইসরায়েলি সরকার যে ফাঁদ তৈরি করেছে, তা থেকে নিজেকে বের করে আনতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গাজায় শক্তি প্রয়োগ ও গণহত্যার অপরাধ করে নিরাপত্তা অর্জন করা যাবে না। হামাস তথাকথিত সম্পূর্ণ ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত গাজা ও পশ্চিম তীরে বেসামরিক নাগরিক হত্যা চলতে পারে না। কারণ, সেই সময় কখনই আসবে না।’

জাতিসংঘের ইসরায়েলি প্রতিনিধি গিলাদ এরদান যখন বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন তখন অনেক আরব প্রতিনিধি বৈঠক থেকে ওয়াকআউট করেন। এরদান বলেন, ‘বিশ্ব অ্যাসপিরিন দিয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা করার চেষ্টা করছে। যুদ্ধবিরতির পক্ষে যারা সমর্থন করছে তাদের বুঝতে হবে, এর অর্থ হলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ক্ষমতায় থাকবে, তারা পুনরায় সংগঠিত হবে এবং পুনরায় সশস্ত্র হবে এবং শিগগিরই ইসরায়েল আরেকটি হলোকাস্ট চেষ্টার মুখোমুখি হবে। আপনারা কি এই পরিণতি চান?’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ যুদ্ধ ইসরায়েল বেছে নেয়নি। কিন্তু আমরা আমাদের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করব, ঠিক যেমন আপনারা প্রত্যেকে আপনার দেশের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করবেন।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে উপস্থিত থাকায় এরদান ইরানের হুমকির প্রতি জোর দেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে সংঘাত ছড়িয়ে পড়া জাদুকরীভাবে হচ্ছে না। এটি পরিকল্পিত এবং নির্দেশিত।’

এরদান বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েমেনগামী অস্ত্রভর্তি নৌকা জব্দ করার ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয়, কারা এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। ইরান সব সময় পর্দার আড়ালে থেকে কলকাঠি নাড়ে। এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশই ইরানের সন্ত্রাসের আতঙ্কে প্রভাবিত হয়েছে। শিয়া আধিপত্য বিস্তারে এ দেশ কোনো কিছুতেই আটকাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত