Ajker Patrika

ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ মে ২০২৩, ১২: ৩২
ডাবের পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

‘ট্রু লাভ ইজ ওয়ান কোকোনাট অ্যান্ড টু স্ট্র।’ মানে একটি ডাব আর দুটি স্ট্র-ই হলো সত্যিকারের ভালোবাসা। কথা মন্দ নয়। সামনে নীল জল রেখে বালুকাবেলায় দুজন মানুষ একটি ডাব খাবে দুটি স্ট্র দিয়ে, তার চেয়ে রোমান্টিক দৃশ্য আর কী হতে পারে? আর এর স্বাদ? ‘ডেফিনেশন অব টেস্টিং প্যারাডাইস’ বলে একটা কথা আছে ইংরেজিতে। সেটা বলা হয় ডাবের পানির স্বাদ বোঝাতে। বুঝতেই পারছেন, শুধু আপনি নন। পৃথিবীর জনসংখ্যার এক বিশাল অংশের মানুষ ডাবের পানির স্বাদে বিমোহিত হয়ে আছে। কিন্তু কারণটা কী?

স্বাদ বা রোমান্টিকতাই শুধু নয়। ডাবের পানির আছে বিশাল স্বাস্থ্যগুণ। নিয়মিত ডাবের পানি খেলে শরীর হবে বিষমুক্ত। আর অনেক রোগ ধীরে ধীরে সরে যাবে শরীর থেকে।

ত্বকের জন্য ডাবের পানির উপকারিতা
হিন্দি ছবির নায়িকা মমতা কুলকার্নিকে নিয়ে সেই নব্বইয়ের দশকে একবার বেশ গুজব রটেছিল। কোনো এক সিনেমার সেট থেকে তিনি নাকি চলে এসেছিলেন। কারণ মমতা প্রতিদিন ডাবের পানির ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন মুখ ধোয়ার জন্য। কিন্তু প্রযোজকের সে ব্যবস্থা ছিল না। বিষয়টি কিন্তু মোটেই বাড়াবাড়ি নয়।

প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর ডাবের পানি খেলে ও তা দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের যে অনেক উপকার হয় সেসব বিষয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এটি ত্বকে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আর্দ্রতা ধরে রাখে। অ্যামিনো অ্যাসিড ও শর্করা থাকে বলে এটি শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি জোগায় ও আর্দ্রতা বজায় রাখে। মাউন্ট সিনা স্কুল অব মেডিসিনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, ডাবের পানিতে ইলেকট্রোলাইট উপাদান থাকে। ফলে এটি দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বক মসৃণ হয়।

প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর ডাবের পানি২০১৭ সালের একটি প্রাথমিক গবেষণা জানাচ্ছে, ডাবের পানিতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে। ফলে এটি ব্রণ হওয়ার হাত থেকে ত্বক রক্ষা করতে পারে। তবে এটিও বলা হয় যে, এর কোনো প্রমাণ নেই। বরং বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডাবের পানি দ্রুত ব্রণ দূর করতে সহায়তা করলেও করতে পারে। ডাবের পানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সিস্টেমকে উন্নত করতে সহায়তা করে। ফলে এটি ফ্রি রেডিকেলের প্রতিক্রিয়া নিরপেক্ষ করে দিয়ে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ দূর করতে সহায়তা করে।

সংক্ষেপে

  • ডাবের পানি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সহায়তা করে।
  • রং স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
  • কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে।
  • ব্ল্যাক হেডস দূর করতে সহায়তা করে।
  • বলি রেখা কমাতে সহায়তা করে।
  • আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • কোলাজেন তৈরি করে।

খেতে হবে কচি ডাবগর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় একজন নারীর অনেক কিছু প্রয়োজন হয় তাঁর নিজের ও সন্তানের জন্য। সে সময় ডাবের পানি সবকিছুর জন্য কাজ না করলেও কিছু কিছু বিষয়ে বেশ উপকারে দেবে।

গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি যা করতে পারে—

  • শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে বলে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে।
  • ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে বলে ডাবের পানি ভ্রূণের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • গ্যাস্ট্রিকের হাত থেকে কোনো কোনো গর্ভবতী নারীকে স্বস্তি দিতে পারে।
  • শর্করার পরিমাণ খুবই কম বলে এটি ওজন বাড়াবে না।

কাটার পর পরই খেয়ে ফেলতে হবে ডাবের পানিগরমে ডাবের পানির উপকারিতা
আমাদের দেশে গরমেই সাধারণত ডাবের পানি খাওয়া হয়। এর অনেক কারণ আছে। তবে বলে রাখা ভালো, ডাবের পানি শীতের দিনেও শরীরের যে উপকার করে গরমের দিনেও সেই একই উপকার করে। ফলে গরমের দিনে খাবেন বলে তুলে না রেখে শীতের দিনেও কচি ডাবের পানি খাওয়া উচিত। 

শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে
পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।

এতে আঁশ থাকে বলে হজমে সহায়তা করে
রোদের কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয় এবং শরীর আর্দ্রতা হারায়। ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আর্দ্রতা বজায় রাখে।

খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া কি উচিত
এর কোনো সঠিক উত্তর নেই। কারণ কোনো গবেষণাই প্রমাণ করতে পারেনি যে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া ক্ষতিকর। আবার খালি পেটে ডাবের পানি খেলে যে উপকারের কথা বলা হয় তারও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডাবের পানি খাওয়া ভালো। 

ঝুনা নারকেলের পানি না খাওয়াই ভালোডাবের পানির উপকারিতা

ডাবের পানির উপকারিতা অনেক। সংক্ষেপে বললে,

  • ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম থাকে। ফলে এটি প্রাকৃতিক ভাবে ক্যালসিয়াম জোগান দেয় শরীরে।
  • ডাবের পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে।
  • এতে থাকা আঁশ শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে।
  • এটিতে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকায় কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
  • চর্বির পরিমাণ খুব কম থাকায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • পানিশূন্যতা দূর করে।
  • যে কোনো কোমল পানীয়ের থেকে এতে অনেক কম ক্যালরি ও চিনি থাকে।
  • পটাশিয়াম, সোডিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের উপস্থিতির কারণে শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে।
  • এতে আঁশ থাকে বলে হজমে সহায়তা করে।
  • রোদের কারণে শরীরে তরলের ঘাটতি হয় এবং শরীর আর্দ্রতা হারায়। ডাবের পানি শরীরের তরল উপাদান ও আর্দ্রতা বজায় রাখে।

ডাবের পানির অপকারিতা

  • প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ দুটি দিকই থাকে। ডাবের পানিরও সেটা আছে। এর কিছু অপকারিতার কথা জেনে নেওয়া যাক
  • নিয়ম করে ডাবের পানি খেতে হবে। উপকার করে বলে অপ্রয়োজনেও এটি খাওয়া যাবে না। তাতে বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • অতিরিক্ত ডাবের পানি খেলে কারও কারও ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এ উপাদানগুলো শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু শরীরে এগুলোর কোনোটার পরিমাণ বেড়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ, ইলেকট্রোলাইট, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ভারসাম্য বজায় নাও থাকতে পারে। আবার এটি রক্তচাপ কমিয়েও দিতে পারে। এ সবকিছুই স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করবে। বলা হয়ে থাকে, কিডনি সুস্থ রাখতে ডাবের পানি পান করা ভালো। কিন্তু কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণও হয়। কাজেই যাদের যেকোনো পর্যায়ের কিডনি রোগ আছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডাবের পানি পান করবেন।
  • কোনো কোনো অ্যালার্জির রোগী ডাবের পানি পানে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। কাজেই যাদের অ্যালার্জি আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শে ডাবের পানি পান করবেন।
  • ঠান্ডার রোগ আছে বা সর্দির রোগীদের বুঝেশুনে ডাবের পানি পান করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম

  • ডাবের পানি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তবে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।
  • খেতে হবে কচি ডাবের পানি। ডাব যত বয়স্ক হবে তত তার পানিতে চিনির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। সেটা আপনার ক্ষতিই করবে।
  • ডাব কাটার সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে নিতে হবে। 
  • যে কোনো সময় ডাবের পানি খাওয়া যায়। তবে খুব রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে ডাবের পানি না খাওয়াই ভালো। রোদ থেকে এসে একটু জিরিয়ে তারপর খাওয়া ভালো।
  • ডাবের পানিতে অন্য কোনো কিছু, যেমন চিনি, লবণ, গুড় ইত্যাদি, মেশানো যাবে না।

সমুদ্র উপকূলে প্রাকৃতিকভাবে নারকেল ভালো জন্মেডাবের পানির উপাদান
পানি—                              ৯৫ শতাংশ
ক্যালসিয়াম—                      ০.৬৯ শতাংশ
পটাশিয়াম—                       ০.২৫ শতাংশ
ফসফরিক অ্যাসিড—             ০.৫৬ শতাংশ
ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড—        ০.৫৯ শতাংশ
নাইট্রোজেন—                      ০.০৫ শতাংশ

গ্রাম/প্রতি ১০০ গ্রামে আছে

লৌহ—                       ০.৫ গ্রাম
চিনি—                        ০.৮০ গ্রাম
আঁশ—                       ০.৬২ গ্রাম
প্রোটিন—                    ০.৭২ গ্রাম
চর্বি—                        ০.২০ গ্রাম

এ ছাড়া আরও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও খনিজ আছে ডাবের পানিতে।

ডাবের পানি পানে সতর্কতা
ডাবের পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যায় না। তবে ডাবের পানিতে পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে। ফলে কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি ক্ষতির কারণ হতে পারে। ঠান্ডা ও সর্দির রোগী, অ্যালার্জির রোগীদেরও ডাবের পানি পানে সতর্ক থাকতে হবে। 

শেষ কথা
কোনো কিছু থেকে প্রাকৃতিকভাবে উপকার পেতে হলে তা দীর্ঘদিন খেতে হয় বা ব্যবহার করতে হয়। হঠাৎ এক–আধদিন ব্যবহার করে ভালো উপকার পাওয়া যায় না। তাই ডাবের পানি পান করে উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত তা পান করতে হবে। খুব বেশি পানের দরকার নেই। পরিমাণ মতো নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে তবেই উপকার পাবেন।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২০০ জন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু নেই, হাসপাতালে ভর্তি ২০০ জন

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। একই সময়ে সারা দেশে ২০০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯২, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৭২, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ছয়, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুজন রয়েছে।

২৪ ঘণ্টায় ২২৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এযাবৎ মোট ৯৪ হাজার ৬২৪ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

চলতি বছরের ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৬ হাজার ৮২৭ জন। এর মধ্যে ৬২ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। চলতি বছরে এযাবৎ ডেঙ্গুতে মোট ৩৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে নভেম্বর মাসে। ওই মাসে ১০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার আগে অক্টোবর মাসে ৮০ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৬ দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
৬ দফা দাবিতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
৬ দফা দাবিতে মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতনবৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানের দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন করছেন স্বাস্থ্য সহকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে দিনভর অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী শনিবার (৬ ডিসেম্বর) থেকে সারা দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা ঢাকায় সমবেত হয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করবেন।

গত শনিবার (২৯ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া কর্মবিরতি প্রথম দুই দিন চলেছিল শহীদ মিনারে। পরে তাঁরা অবস্থান নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে। বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে এ আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন দেশের ৬৪ জেলার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকেরা।

এই কর্মসূচির কারণে কয়েক দিন ধরে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে টিকা নিতে এসে অনেক মা ও শিশু ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের এ কর্মসূচির কারণে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের সেবা কয়েক দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে টিকা নিতে এসে মা ও শিশুরা ফিরে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য সহকারীদের দাবি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করে কর্মবিরতিতে যেতে তাঁরা চাননি। কিন্তু দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাঁরা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে বারবার প্রতিশ্রুতির আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান জানিয়ে নেতারা বলেন, ‘আমাদের ১৬তম গ্রেড থেকে ১৪তম গ্রেডে উন্নীত করার সরকারি আদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব না। এখন শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চলছে, প্রয়োজনে আরও কঠোর হতে বাধ্য হব।’

স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা
স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের নানা বঞ্চনার চিত্রও তুলে ধরে আন্দোলনকারীরা জানান, টিকাদানের আগে মাসজুড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা, জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন, নবজাতক ও গর্ভবতী মায়ের রেজিস্ট্রেশন, যক্ষ্মা রোগী শনাক্তকরণ, ডটস (সরাসরি পর্যবেক্ষণ থেরাপি) পদ্ধতিতে ওষুধ খাওয়ানো, উঠান বৈঠক, মা সমাবেশসহ বিভিন্ন সেবা তাঁরা দিয়ে থাকেন। সপ্তাহে তিন দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত সেবা দেওয়ার পরও তাঁদের মাসিক ভ্রমণভাতা মাত্র ৬০০ টাকা। আর বেতন মোট ৯ হাজার ৭০০ টাকা।

আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে রয়েছে, নিয়োগবিধি সংশোধন করে স্নাতক বা সমমানের যোগ্যতা যুক্ত করে ১৪তম গ্রেড প্রদান, ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমাধারীদের ১১তম গ্রেডসহ টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দেওয়া, ধারাবাহিকভাবে উচ্চতর গ্রেডে পদোন্নতি নিশ্চিত করা, প্রশিক্ষণ ছাড়াই স্নাতক স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করা, বেতনস্কেল পুনর্নির্ধারণের সময় টাইম স্কেল বা উচ্চতর স্কেল সংযুক্ত করা এবং ইন-সার্ভিস ডিপ্লোমা (এসআইটি) সম্পন্নকারীদের সমমান স্বীকৃতি প্রদান।

বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ফজলুল হক চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, আমাদের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে এখনো বিশ্লেষণ শুরু হয়নি।’

তিনি আরও জানান, ৬৪ জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ বি এম আবু হানিফ আজ সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাদের দাবির বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাজ রয়েছে। সেখানে প্রক্রিয়াগতভাবে কিছুটা সময় লাগছে। গত তিন দিন তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান করছে। আমরা কাজ করছি। আমরা আশা করছি, সবকিছু ভালোভাবে সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতিতে দিনভর দুর্ভোগ

  • ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে এ কর্মসূচি।
  • আজ থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা আসতে পারে।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের অর্ধদিবস কর্মবিরতি। গতকাল রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বেতনকাঠামোর দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে হাসপাতালসহ দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তাঁদের এই কর্মসূচির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়ে রোগী এবং তাদের স্বজনেরা। গত ৩০ নভেম্বর থেকে টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

এদিকে দাবি আদায়ে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে যাওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের। তবে কঠোর এই কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে গতকাল রাতে বৈঠকে বসেছেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের কর্মবিরতির কারণে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়লেও দাবি আদায়ে দিনভর কঠোর অবস্থানে ছিলেন তাঁরা। কর্মবিরতির সময় হাসপাতালের জরুরি সেবা চালু থাকলেও অনেককে সেবা না পেয়ে চলে যেতে দেখা গেছে।

আন্দোলনরতরা জানান, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিনেও বিষয়টির সমাধান হয়নি। এর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা নার্স ও ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের ১১তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে এবার কঠোর কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন ১০ হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। এসব সেবাপ্রার্থীর বড় অংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসে। টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের গতকালের কর্মবিরতির কারণে অনেকে চিকিৎসা না পেয়ে চলে যায়।

বিভিন্ন স্থানে দিনভর ভোগান্তি

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সেবা বন্ধ রেখে চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছেন টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

কর্মবিরতি চলাকালে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ফার্মেসিতে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ বিতরণ, রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ রোগনির্ণয়ের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এ সময় হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেবাকেন্দ্রগুলোয় কর্মবিরতির ব্যানার ঝুলছিল। তবে হাসপাতালের অন্যান্য সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। চমেক হাসপাতালে রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের একজন কর্মচারী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কর্মবিরতির ফলে এক্স-রে করা সাময়িক বন্ধ ছিল।

একই দাবিতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা। বুধবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। এ সময় আন্দোলনকারীরা বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও নার্সদের মতো তাঁদেরও চাকরিগত মর্যাদা দশম গ্রেডে উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ সদরে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বিতরণ বন্ধ ছিল।

আবদুল্লাহ নামের এক রোগী বলেন, ‘সিটি স্ক্যান করানোর জন্য এসেছিলাম। এসে শুনি, কর্মবিরতি দিয়েছে। এ জন্য ফিরে যাচ্ছি।’

উল্লাপাড়ার আনিসুর নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘কোমরে ব্যথা। তাই ডাক্তারের কাছে এসেছি। এসে শুনি, দুপুরের আগে চিকিৎসা হবে না।’

একই দাবিতে রাজবাড়ীতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই কর্মবিরতি পালন করেন তাঁরা। কর্মবিরতি কর্মসূচিতে দাবি আদায় না হলে ৪ ডিসেম্বর থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে হাসপাতাল শাটডাউন ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শৌচাগার সুবিধা: হাসপাতালে বিড়ম্বনায় প্রতিবন্ধীরা

  • ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়।
  • শৌচাগারগুলোর দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, প্রবেশে র‍্যাম্প সুবিধা নেই।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা
ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ডিএনসিসি হাসপাতালে। আজকের পত্রিকা

দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে প্রতিবছরই বাড়ছে সেবাগ্রহণকারীর সংখ্যা। কিন্তু অধিকাংশ চিকিৎসাকেন্দ্রেই শৌচাগারগুলো ব্যবহারের অযোগ্য অথবা ন্যূনতম মানের নয়। ফলে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন। আর প্রতিবন্ধী রোগীদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও তীব্র। কারণ হাসপাতালে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগার ১ শতাংশেরও কম।

হাসপাতাল পরিচালনা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগার একটি হাসপাতালের মৌলিক পরিকাঠামোর অংশ হওয়া উচিত। তবে দেশে এ ধরনের সুবিধার মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ঘাটতি বেশি। ফলে রোগীরা শুধু ভোগান্তিতেই পড়ছেন না; বরং গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিরও সম্মুখীন হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় শৌচাগার ব্যবহার করতে না পারার ফলে কিডনি জটিলতা, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (মূত্রনালি সংক্রমণ) ও পানিশূন্যতাসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্সের প্লস ওয়ান সাময়িকীতে বাংলাদেশে হাসপাতালের শৌচাগার নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। গবেষণার শিরোনাম ‘ইনঅ্যাডিক্যুইট স্যানিটেশন ইন হেলথকেয়ার ফ্যাসিলিটিজ: অ্যা কম্প্রিহেনসিভ ইভ্যালুয়েশন অব টয়লেটস ইন মেজর হাসপাতাল ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’। গবেষণাটি করেছেন অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের নয়জন গবেষক।

গবেষণায় রাজধানীর ১০টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪৫৯টি শৌচাগার পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী রোগীদের উপযোগী শৌচাগারের সংখ্যা মাত্র ১০টি, যা ১ শতাংশেরও কম বা শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। প্রায় ৯৯ শতাংশ শৌচাগার হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী বা চলাফেরায় সীমাবদ্ধ রোগীদের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়। অধিকাংশ শৌচাগারে দরজা সংকীর্ণ, কমোডের উচ্চতা অনুপযুক্ত, গ্র্যাব-বার বা হাতল নেই এবং প্রবেশপথে র‍্যাম্পের সুবিধাও নেই। ফলে প্রতিবন্ধী রোগীরা শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে চরম ভোগান্তি এবং নিরাপত্তাহীনতায় পড়েন।

দেশে ক্যানসার রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঘুরে এখানকার দুটি ভবনের কোথাও প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার পাওয়া যায়নি।

একইভাবে হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য সরকারের বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের তিনটি ভবনের কোথাও নেই প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য নির্ধারিত শৌচাগার। তাঁদের জন্য আলাদা শৌচাগার না থাকার কথা স্বীকার করেন এই হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে ভর্তি রোগীরা বেডসাইড টয়লেট ব্যবহার করেন। বিভিন্ন হাসপাতালের জন্য নতুন যেসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানে প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্য শৌচাগার, হুইলচেয়ার বা শয্যাসহ ওঠানামার জন্য প্রয়োজনীয় র‍্যাম্প রাখা প্রয়োজন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার ২-৩ গুণ রোগী ভর্তি থাকেন। দৈনিক বহির্বিভাগে রোগী আসেন সক্ষমতার ৪-৫ গুণ। স্বাভাবিক রোগীদের জন্য উন্নত শৌচাগারের ব্যবস্থাপনা নেই। প্রতিবন্ধী রোগীদের জন্যও আলাদা শৌচাগার রাখা যায়নি। তবে আমরা এ বিষয়ে পরিকল্পনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত