Ajker Patrika

নারীর স্তন ক্যানসারে ব্রা কি দায়ী

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৯: ২৫
নারীর স্তন ক্যানসারে ব্রা কি দায়ী

প্রতিবছরের অক্টোবর মাসকে ব্রেস্ট বা স্তন ক্যানসার নিয়ে সচেতনতার মাস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এ কর্মসূচি নিয়ে আজকের পত্রিকায় নিবন্ধ লেখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী। ওই নিবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাতে মারা যান প্রায় ৮ হাজার জন। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক।

স্তন ক্যানসারের এই ভয়াবহ চিত্রের পেছনে সচেতনতার অভাব বড় কারণ। সচেতনতার অভাবে একদিকে যেমন রোগের প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ কঠিন হয়ে পড়ে, অন্যদিকে ক্যানসার নিয়ে নানা ভুল ধারণাও ছড়িয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ব্রা স্তন ক্যানসার সৃষ্টি করে’। আসলেই কি তাই? এ ধারণার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? 

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ব্রেস্ট ক্যানসার ফাউন্ডেশন ব্রায়ের সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ককে প্রচলিত ধারণা হিসেবে উল্লেখ করেছে। ফাউন্ডেশনটি স্তন ক্যানসার নিয়ে প্রচলিত এ ধারণা প্রসঙ্গে জানায়, কোনো ধরনের ব্রা-ই ক্যানসার সৃষ্টির জন্য দায়ী নয়। একসময় মনে করা হতো, আন্ডারওয়্যার ব্রা স্তনের লিম্ফ ফ্লো বা তরল চলাচলে বাধা দেয়, যা ধীরে ধীরে স্তন ক্যানসারের দিকে ধাবিত হয়। এ দাবিকে সমর্থন করার মতো কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অনুরূপভাবে এ দাবির পক্ষেও কোনো প্রমাণ নেই যে ব্রা না পরা স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। সর্বোপরি, শরীরের জন্য উপযুক্ত ব্রা না পরলে তা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে। তাই জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্রা খুঁজে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। 

ক্যানসার প্রতিরোধ ও ক্যানসার রোগীদের সহায়তায় কাজ করা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দাতব্য প্রতিষ্ঠান ক্যানসার কাউন্সিল ব্রায়ের সঙ্গে স্তন ক্যানসারের সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে জানায়, ব্রা পরা বা না পরা এবং স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার মধ্যে কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়—এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা নেই। দাবি করা হয়, আন্ডারওয়্যার ব্রা স্তনের তরল চলাচলে বাধা দিয়ে ব্রেস্ট ক্যানসার সৃষ্টি করে। তবে এ দাবিকে সমর্থনের জন্য কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। ঘুমানোর সময় ব্রা পরা ব্যক্তিগত পছন্দ। ক্যানসারের ঝুঁকির বিষয়ে চিন্তা না করেই কেউ তা বেছে নিতে পারেন।

ক্যানসার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বাধীন ক্যানসার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানসার রিসার্চ ইউকে জানায়, ব্রা পরা বা ব্রাতে মোবাইল ফোন রাখা ক্যানসারের কারণ—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ব্রা ও ক্যানসার কীভাবে যুক্ত, তার কোনো বৈজ্ঞানিক যোগসূত্র না থাকায় এই বিষয়ে খুব বেশি গবেষণা হয়নি। তবে গবেষণা ডেটাবেইস পাবমেডে প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত এক গবেষণার সূত্রে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ব্রা পরা ও স্তন ক্যানসারের মধ্যে কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই নারীদের ব্রা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

একই গবেষণার সূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি জানায়, ২০১৪ সালে দেড় হাজারের বেশি নারীর ওপর করা গবেষণায় ব্রা পরা ও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। এ ধারণার উৎপত্তি মূলত একটি বই থেকে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, ব্রা স্তনের লিম্ফ ফ্লো বা তরল চলাচলে বাধা দেয় এবং এর ফলে স্তন ক্যানসার হয়। 

পাবমেডে প্রকাশিত গবেষণাটি দেখুন এখানে।

ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ রিসার্চের ওয়েবসাইট থেকে এ বই সম্পর্কে জানা যায়। এ থেকে জানা যায়, ব্রা স্তন ক্যানসারের কারণ—এমন ধারণার সম্ভাব্য উৎপত্তি ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত ‘ড্রেসেড টু কিল’ নামের এক বই থেকে। সিডনি রস সিঙ্গার ও সোমা গ্রিসমাইজার নামে দুজন আমেরিকান লেখকের লেখা এ বইয়ে দাবি করা হয়, যে নারীরা দৈনিক ১২ ঘণ্টা আন্ডারওয়্যার ব্রা পরে থাকে, তারা উচ্চমাত্রায় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কারণ, ব্রা লিম্ফ সিস্টেমকে বাধা দেয়। বইয়ে উল্লেখিত এ দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। 

ওয়েবসাইটটিতে আমেরিকান চিকিৎসক ও লেখক ডা. সুসান মার্গারেট লাভের ‘ব্রেস্ট বুক’ বইয়ের বরাত দিয়ে এ ধারণার উৎপত্তির সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে বলা হয়, মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো, মানুষ সব সময় অনিশ্চয়তা এবং ভয়কে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। মানুষ কোনো কিছু থেকে বাঁচতে অন্যের ওপর দায় চাপাতে চায় এবং এ কারণেই স্তন ক্যানসার এড়াতে ব্রা পরা থেকে বিরত থাকার প্রসঙ্গ আসে। বিশ্বব্যাপী অঞ্চলভেদে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির তারতম্য দেখা যায়। আর এ ঝুঁকি খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, চিকিৎসাসেবা প্রাপ্যতার মতো বিষয়গুলো দ্বারা আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, অতিরিক্ত ওজন বা শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে চর্বি থাকা একজন নারীর স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া বয়সের সঙ্গে সঙ্গেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। 

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উটাহর চিকিৎসাবিষয়ক ওয়েবপেজ জানায়, ব্রার সঙ্গে স্তন ক্যানসারের কোনো সম্পর্ক নেই; বরং স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ও অ্যালকোহল পরিহার করা জরুরি। স্থূল নারী বা অ্যালকোহলে আসক্ত নারীরা অতিমাত্রায় স্তন ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। 

স্তন ক্যানসার দ্রুত শনাক্ত করা এবং এটি ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার একটি প্রমাণিত উপায় হলো ম্যামোগ্রাম। ৪৫ বছর বয়সের পরে একজন নারীর প্রতিবছর এটি করা প্রয়োজন। 

প্রসঙ্গত, ম্যামোগ্রাম হলো স্তনের একটি এক্স-রে ছবি। স্তন ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করতে চিকিৎসকেরা ম্যামোগ্রাম ব্যবহার করেন। নিয়মিত ম্যামোগ্রাম স্তন ক্যানসার প্রাথমিক অবস্থাতেই শনাক্ত করতে পারে, কখনো কখনো এটি অনুভব করা যায় তিন বছর আগেই। 

সিদ্ধান্ত 
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাতে মারা যান প্রায় ৮ হাজার জন। আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার বেশি। এ হার মানুষের মধ্যে তৈরি করেছে আতঙ্ক, ভয়। এ আতঙ্ক, ভয় থেকেই স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচতে মানুষ নানা পন্থা অবলম্বন করে। এগুলোর মধ্যে প্রধানতম ব্রা পরা থেকে বিরত থাকা। যদিও গবেষক ও চিকিৎসকেরা ব্রার সঙ্গে স্তন ক্যানসার হওয়ার মধ্যে কোনো বৈজ্ঞানিক যোগসূত্র খুঁজে পাননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত