আলতাফ পারভেজ

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধারার প্রচার মাধ্যমেও মনোযোগ পায়।
তবে ফেসবুকে সচরাচর যা হয়—প্রতিনিয়ত নতুন ইস্যু চলে আসে, পুরোনোর জায়গা নিয়ে নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় এই বিতর্কটাও ইতিমধ্যে আপাতত অতীত হয়ে গেছে। ওই বিতর্কের একটা পার্শ্ব-টীকা হিসেবে এই লেখা।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ লেখার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ওই বিতর্ককালে অনেকের তরফ থেকে এ রকম ইঙ্গিত দেখেছি, বঙ্গের হিন্দুসমাজ বঙ্গভাগের বিরোধী ছিলেন এবং মুসলমানরা পুরোপুরি পক্ষে ছিলেন। একই ফর্মুলা অনুযায়ী অনেকে বলেছেন, প্রথমোক্তরা স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং শেষোক্তরা সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।
আমার বক্তব্য এই শেষের দাবিটা নিয়ে। ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বলছে, এই দাবিটা সত্য নয়। বরং তখনকার মুসলমান সমাজের অনেকেই শুরুতে স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে থাকা বা বিরোধিতার ব্যাপারটা সাম্প্রদায়িক চোখ দিয়ে বোঝা বা বোঝানোর চেষ্টা বিপজ্জনকভাবে একপেশে।
সবাই জানেন, বাংলা ভাগ হয় ১৯০৫-এ এবং আবার সেই ভাগের সিদ্ধান্ত সংশোধন হয় ১৯১১ সালে। এটাই ‘স্বদেশি আন্দোলনে’র সময়। কেন ব্রিটিশ প্রশাসন তখন বাংলা ভাগে আগ্রহী হলো, এর পেছনে তাদের ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতির কোনো ইন্ধন ছিল কি না সেই আলোচনা এখানে তোলা হচ্ছে না। বঙ্গভঙ্গের আরও নানা কারণ ও পটভূমি আছে। সেসবও এখানে করা হচ্ছে না। এখনকার একমাত্র প্রশ্ন হলো, এটা সত্য কি না মুসলমানদের সবাই বঙ্গভঙ্গ চাইছিল? নাকি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমও ছিল?
এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। সেখান থেকে কেবল মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কথা বলছি। বড় এক আলেম তিনি তখন। অনেক জনপ্রিয়, অনেক প্রভাব। ইসলামাবাদী বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন এবং এ ধারায় বিচ্ছিন্ন কেউ ছিলেন না। এ রকম অবস্থানে তখন আরও অনেক প্রভাবশালী মওলানা ছিলেন।
আবার এও সত্য, বঙ্গভঙ্গের বিরোধী মওলানাও তখন অনেক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হাজি শরীয়তুল্লাহর উত্তরসূরি পীর বাদশা মিয়ার মতো মওলানাও ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকার নবাব পরিবার তো ছিলই। বিশেষ করে সদ্য জন্ম নেওয়া ‘মুসলিম লীগ’ তখন বাংলা ভাগকে সমর্থন করছিল। মুসলিম লীগে জমিদার ও ধনীদের জোটবদ্ধতা দেখে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো নেতারা বঙ্গভঙ্গের শুরুর দিকে মনে করতেন এই সংগঠনের দ্বারা বাংলার নিচুতলার মুসলমানদের মুক্তি সম্ভব নয়। মুসলমান সমাজে তখন ‘আশরাফ’, ‘আতরাফ’ একটা বৈষম্য ছিল। অনেক আলেমের কাছে শেষোক্তদের স্বার্থ বাড়তি বিবেচনা পেয়েছিল বলেই মনে হয়।
প্রভাবের দিক থেকে এবং বক্তব্যের যৌক্তিকতায় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরাও তখন বাংলা ছাড়িয়েও বেশ প্রভাবশালী। যদিও ইসলামাবাদী তখনকার বাংলার এক অর্থে প্রান্তিক জনপদ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মানুষ, কিন্তু তাঁর তৎপরতার পরিসর ছিল বহু জনপদজুড়ে। জালালউদ্দীন আফগানির শিষ্য ছিলেন তিনি। প্রথমে কংগ্রেস করলেও পরে ১৯৩৬ সাল নাগাদ তিনি কৃষক প্রজা দলের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হন। ’৩৭-এর নির্বাচনে তিনি প্রজা দল থেকেই জিতেছিলেন। মাঝখানে খেলাফত আন্দোলনের খ্যাতনামা সংগঠক ছিলেন। জমিয়ত-উল-উলেমা-চট্টগ্রামেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আজাদ-হিন্দ-ফৌজেরও চট্টগ্রামের প্রধান এক সংগঠক তিনি।
শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে ‘সোলতান’ নামে বিখ্যাত পত্রিকা ছিল ইসলামাবাদীর। যেখানে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ পেত। ‘সোলতান’ ও ‘দ্য মুসলমান’ (ইংরেজি) বাংলা ভাগ চেতনার বিপক্ষে অনেক কিছু ছেপেছে। ‘দ্য মুসলমান’ ছিল মৌলভি মুজিবর রহমানের কাগজ।
সোলতান ওই দফায় ১৯১০ পর্যন্ত চলেছিল। এই পত্রিকার খরচ জোগাতেন রাজশাহীর ইউসুফ আলী সাহেব। যিনি পাঁচ খণ্ডে ইমাম গাজ্জালির ‘কিমিয়ায়ে সাআদাত’ অনুবাদ করে বিখ্যাত হন। অর্থাৎ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের সাংগঠনিক জোরের পাশাপাশি একাডেমিক সামর্থ্যের পরিসরও বেশ বড় ছিল। এ রকম ভাবার তাই কোনো কারণ নেই, আর্থসামাজিক-ধর্মীয় যৌক্তিকতা ছাড়া এই আলেমরা হিন্দুদের সঙ্গে মিলে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে আজকে স্বদেশি আন্দোলনের পক্ষ নেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মরণোত্তর জেরা করতে গেলে এ প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারতে হবে—মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা কেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন?
প্রসঙ্গক্রমে এও বলা দরকার, হিন্দুসমাজের ভেতর বঙ্গভঙ্গের যে বিরোধিতা ছিল সেটাও সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় ছিল না। হিন্দুসমাজের সবাই এক ধরনের অবস্থান থেকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ছিলেন, বিষয়টা এমন নয়। যদিও একচেটিয়াভাবে সেভাবে ব্যাখ্যাটা দেওয়া হয়।
এটা ঠিক, স্বদেশি আন্দোলনের অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সংগঠক এ রকম বিবেচনা থেকে এই সংগ্রামে নেমেছিলেন যে বাংলা ভাগ হলে তাঁদের পুরোনো আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাবের পরিসর ছোট হয়ে যাবে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ প্রদেশে তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। এই আন্দোলনের ভেতর হিন্দু পুনর্জাগরণবাদেরও অনেক সাংস্কৃতিক উপাদান ছিল। অর্থাৎ আন্দোলনের ভেতর চরমপন্থী এবং মধ্যপন্থী নানা ধারা ছিল। শেষ দিকে এতে চরমপন্থী ধারা প্রভাবশালী হয়ে উঠছিল। যাকে অনেকে ‘বিপ্লববাদী’ ধারা নামেও উল্লেখ করেন। এ পর্যায়ে এসে স্বদেশি আন্দোলন থেকে মুসলমানদের বাড়তি দূরত্ব তৈরি হয়। এসবও মিথ্যা নয়।
কিন্তু একই সঙ্গে এও সত্য, স্বদেশি আন্দোলনে অনেক হিন্দু যুক্ত ছিলেন মুখ্যত বাংলার অখণ্ডতার প্রেম থেকে। তাঁরা চাইছিলেন ভারতীয় পরিসরে ‘বাংলা’ অবিভক্ত থাকুক। প্রায় একই ধরনের বিবেচনা থেকেই মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো অনেকেও শুরুতে বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘নবউদ্দীপনা’র (১৯০৭) মতো কবিতাগ্রন্থও তার বড় এক সাক্ষী হয়ে আছে।
মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা মনে করতেন ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাঙালিত্বের ভেতর দিয়েই মুসলমানের স্বার্থ হাসিল করতে হবে। কৌশল হিসেবে এটা কতটা সঠিক-বেঠিক ছিল সেটা নিয়ে এখন বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তখনকার মুসলমান রাজনীতিতে এ রকম একটা ধারার অস্তিত্ব আমরা নিশ্চয়ই গায়েব করে দিতে পারি না। সিরাজী এ রকম অবস্থানের কারণে ১৯১০-এ গ্রেপ্তারও হলেন।
হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক স্বার্থের জায়গাটা ওনারা বাংলাকে অখণ্ড রেখেই সমাধা করতে চাইছিলেন। এক থাকতে পারলে বাংলার শক্তির জায়গাটা অনেক দৃঢ় থাকবে বলে সাধারণ একটা বিবেচনা কাজ করত তাঁদের মাঝে। এ রকম অনেকের মাঝে তখন ‘স্বরাজ’ ও ‘আত্মনির্ভরতা’র চৈতন্য কাজ করতে শুরু করে। তাঁরা মনে করতেন বাংলার বিভক্তি একটা ‘জাতিগত দুর্যোগ’। এ রকম বিবেচনা থেকেই পরে খোদ বাংলা-মুসলিম লীগের আবুল হাশিম এবং সোহরাওয়ার্দীকেও অখণ্ড বাংলার জন্য লড়তে দেখি আমরা। কিন্তু এও সত্য, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের মতো বড় বড় আলেমের বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের পক্ষেই ছিল বাংলার কৃষি সমাজের দরিদ্র মুসলমানরা। এই ধর্মের মধ্যবিত্তদের বড় অংশও সম্ভাব্য নতুন প্রদেশে নিজেদের অধিকতর অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা দেখছিল।
এভাবে দেখার পেছনে স্থানীয় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের তীব্র প্রচারণাও ছিল। ১৯০৯-এ তারা ভোটব্যবস্থাকে সম্প্রদায়ভিত্তিক (সেপারেট ইলেকটোরেট ব্যবস্থা) করে সেই ‘উদ্যোগ’কে আরও এগিয়ে নেয়। ব্রিটিশদের এ রকম ভূমিকা আবার তখনকার হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করেছিল। এসবের মিলিত ফল হিসেবে আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দীরাও শেষ পর্যন্ত হেরেই গেছেন রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু ইতিহাস বয়ানের সময় আমাদের কেবল মুদ্রার একদিকটা দেখালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুলভাবে ঘটনাবলি জানবে এবং কখনো-না-কখনো কোথাও গিয়ে প্রচণ্ড হোঁচট খাবে।
যেকোনো বড় গণ-আন্দোলনে নানা ধারা থাকে। সময়ের ধারাবাহিকতায় তাকে তুলে ধরার সময় সেভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করাই ইতিহাসচর্চাকারীদের দায়। তা না হলে একধরনের অসততার সংস্কৃতি তৈরি হয়।
লেখক: আলতাফ পারভেজ
গবেষক ও লেখক

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধারার প্রচার মাধ্যমেও মনোযোগ পায়।
তবে ফেসবুকে সচরাচর যা হয়—প্রতিনিয়ত নতুন ইস্যু চলে আসে, পুরোনোর জায়গা নিয়ে নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় এই বিতর্কটাও ইতিমধ্যে আপাতত অতীত হয়ে গেছে। ওই বিতর্কের একটা পার্শ্ব-টীকা হিসেবে এই লেখা।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ লেখার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ওই বিতর্ককালে অনেকের তরফ থেকে এ রকম ইঙ্গিত দেখেছি, বঙ্গের হিন্দুসমাজ বঙ্গভাগের বিরোধী ছিলেন এবং মুসলমানরা পুরোপুরি পক্ষে ছিলেন। একই ফর্মুলা অনুযায়ী অনেকে বলেছেন, প্রথমোক্তরা স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং শেষোক্তরা সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।
আমার বক্তব্য এই শেষের দাবিটা নিয়ে। ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বলছে, এই দাবিটা সত্য নয়। বরং তখনকার মুসলমান সমাজের অনেকেই শুরুতে স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে থাকা বা বিরোধিতার ব্যাপারটা সাম্প্রদায়িক চোখ দিয়ে বোঝা বা বোঝানোর চেষ্টা বিপজ্জনকভাবে একপেশে।
সবাই জানেন, বাংলা ভাগ হয় ১৯০৫-এ এবং আবার সেই ভাগের সিদ্ধান্ত সংশোধন হয় ১৯১১ সালে। এটাই ‘স্বদেশি আন্দোলনে’র সময়। কেন ব্রিটিশ প্রশাসন তখন বাংলা ভাগে আগ্রহী হলো, এর পেছনে তাদের ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতির কোনো ইন্ধন ছিল কি না সেই আলোচনা এখানে তোলা হচ্ছে না। বঙ্গভঙ্গের আরও নানা কারণ ও পটভূমি আছে। সেসবও এখানে করা হচ্ছে না। এখনকার একমাত্র প্রশ্ন হলো, এটা সত্য কি না মুসলমানদের সবাই বঙ্গভঙ্গ চাইছিল? নাকি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমও ছিল?
এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। সেখান থেকে কেবল মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কথা বলছি। বড় এক আলেম তিনি তখন। অনেক জনপ্রিয়, অনেক প্রভাব। ইসলামাবাদী বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন এবং এ ধারায় বিচ্ছিন্ন কেউ ছিলেন না। এ রকম অবস্থানে তখন আরও অনেক প্রভাবশালী মওলানা ছিলেন।
আবার এও সত্য, বঙ্গভঙ্গের বিরোধী মওলানাও তখন অনেক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হাজি শরীয়তুল্লাহর উত্তরসূরি পীর বাদশা মিয়ার মতো মওলানাও ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকার নবাব পরিবার তো ছিলই। বিশেষ করে সদ্য জন্ম নেওয়া ‘মুসলিম লীগ’ তখন বাংলা ভাগকে সমর্থন করছিল। মুসলিম লীগে জমিদার ও ধনীদের জোটবদ্ধতা দেখে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো নেতারা বঙ্গভঙ্গের শুরুর দিকে মনে করতেন এই সংগঠনের দ্বারা বাংলার নিচুতলার মুসলমানদের মুক্তি সম্ভব নয়। মুসলমান সমাজে তখন ‘আশরাফ’, ‘আতরাফ’ একটা বৈষম্য ছিল। অনেক আলেমের কাছে শেষোক্তদের স্বার্থ বাড়তি বিবেচনা পেয়েছিল বলেই মনে হয়।
প্রভাবের দিক থেকে এবং বক্তব্যের যৌক্তিকতায় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরাও তখন বাংলা ছাড়িয়েও বেশ প্রভাবশালী। যদিও ইসলামাবাদী তখনকার বাংলার এক অর্থে প্রান্তিক জনপদ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মানুষ, কিন্তু তাঁর তৎপরতার পরিসর ছিল বহু জনপদজুড়ে। জালালউদ্দীন আফগানির শিষ্য ছিলেন তিনি। প্রথমে কংগ্রেস করলেও পরে ১৯৩৬ সাল নাগাদ তিনি কৃষক প্রজা দলের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হন। ’৩৭-এর নির্বাচনে তিনি প্রজা দল থেকেই জিতেছিলেন। মাঝখানে খেলাফত আন্দোলনের খ্যাতনামা সংগঠক ছিলেন। জমিয়ত-উল-উলেমা-চট্টগ্রামেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আজাদ-হিন্দ-ফৌজেরও চট্টগ্রামের প্রধান এক সংগঠক তিনি।
শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে ‘সোলতান’ নামে বিখ্যাত পত্রিকা ছিল ইসলামাবাদীর। যেখানে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ পেত। ‘সোলতান’ ও ‘দ্য মুসলমান’ (ইংরেজি) বাংলা ভাগ চেতনার বিপক্ষে অনেক কিছু ছেপেছে। ‘দ্য মুসলমান’ ছিল মৌলভি মুজিবর রহমানের কাগজ।
সোলতান ওই দফায় ১৯১০ পর্যন্ত চলেছিল। এই পত্রিকার খরচ জোগাতেন রাজশাহীর ইউসুফ আলী সাহেব। যিনি পাঁচ খণ্ডে ইমাম গাজ্জালির ‘কিমিয়ায়ে সাআদাত’ অনুবাদ করে বিখ্যাত হন। অর্থাৎ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের সাংগঠনিক জোরের পাশাপাশি একাডেমিক সামর্থ্যের পরিসরও বেশ বড় ছিল। এ রকম ভাবার তাই কোনো কারণ নেই, আর্থসামাজিক-ধর্মীয় যৌক্তিকতা ছাড়া এই আলেমরা হিন্দুদের সঙ্গে মিলে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে আজকে স্বদেশি আন্দোলনের পক্ষ নেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মরণোত্তর জেরা করতে গেলে এ প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারতে হবে—মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা কেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন?
প্রসঙ্গক্রমে এও বলা দরকার, হিন্দুসমাজের ভেতর বঙ্গভঙ্গের যে বিরোধিতা ছিল সেটাও সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় ছিল না। হিন্দুসমাজের সবাই এক ধরনের অবস্থান থেকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ছিলেন, বিষয়টা এমন নয়। যদিও একচেটিয়াভাবে সেভাবে ব্যাখ্যাটা দেওয়া হয়।
এটা ঠিক, স্বদেশি আন্দোলনের অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সংগঠক এ রকম বিবেচনা থেকে এই সংগ্রামে নেমেছিলেন যে বাংলা ভাগ হলে তাঁদের পুরোনো আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাবের পরিসর ছোট হয়ে যাবে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ প্রদেশে তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। এই আন্দোলনের ভেতর হিন্দু পুনর্জাগরণবাদেরও অনেক সাংস্কৃতিক উপাদান ছিল। অর্থাৎ আন্দোলনের ভেতর চরমপন্থী এবং মধ্যপন্থী নানা ধারা ছিল। শেষ দিকে এতে চরমপন্থী ধারা প্রভাবশালী হয়ে উঠছিল। যাকে অনেকে ‘বিপ্লববাদী’ ধারা নামেও উল্লেখ করেন। এ পর্যায়ে এসে স্বদেশি আন্দোলন থেকে মুসলমানদের বাড়তি দূরত্ব তৈরি হয়। এসবও মিথ্যা নয়।
কিন্তু একই সঙ্গে এও সত্য, স্বদেশি আন্দোলনে অনেক হিন্দু যুক্ত ছিলেন মুখ্যত বাংলার অখণ্ডতার প্রেম থেকে। তাঁরা চাইছিলেন ভারতীয় পরিসরে ‘বাংলা’ অবিভক্ত থাকুক। প্রায় একই ধরনের বিবেচনা থেকেই মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো অনেকেও শুরুতে বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘নবউদ্দীপনা’র (১৯০৭) মতো কবিতাগ্রন্থও তার বড় এক সাক্ষী হয়ে আছে।
মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা মনে করতেন ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাঙালিত্বের ভেতর দিয়েই মুসলমানের স্বার্থ হাসিল করতে হবে। কৌশল হিসেবে এটা কতটা সঠিক-বেঠিক ছিল সেটা নিয়ে এখন বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তখনকার মুসলমান রাজনীতিতে এ রকম একটা ধারার অস্তিত্ব আমরা নিশ্চয়ই গায়েব করে দিতে পারি না। সিরাজী এ রকম অবস্থানের কারণে ১৯১০-এ গ্রেপ্তারও হলেন।
হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক স্বার্থের জায়গাটা ওনারা বাংলাকে অখণ্ড রেখেই সমাধা করতে চাইছিলেন। এক থাকতে পারলে বাংলার শক্তির জায়গাটা অনেক দৃঢ় থাকবে বলে সাধারণ একটা বিবেচনা কাজ করত তাঁদের মাঝে। এ রকম অনেকের মাঝে তখন ‘স্বরাজ’ ও ‘আত্মনির্ভরতা’র চৈতন্য কাজ করতে শুরু করে। তাঁরা মনে করতেন বাংলার বিভক্তি একটা ‘জাতিগত দুর্যোগ’। এ রকম বিবেচনা থেকেই পরে খোদ বাংলা-মুসলিম লীগের আবুল হাশিম এবং সোহরাওয়ার্দীকেও অখণ্ড বাংলার জন্য লড়তে দেখি আমরা। কিন্তু এও সত্য, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের মতো বড় বড় আলেমের বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের পক্ষেই ছিল বাংলার কৃষি সমাজের দরিদ্র মুসলমানরা। এই ধর্মের মধ্যবিত্তদের বড় অংশও সম্ভাব্য নতুন প্রদেশে নিজেদের অধিকতর অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা দেখছিল।
এভাবে দেখার পেছনে স্থানীয় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের তীব্র প্রচারণাও ছিল। ১৯০৯-এ তারা ভোটব্যবস্থাকে সম্প্রদায়ভিত্তিক (সেপারেট ইলেকটোরেট ব্যবস্থা) করে সেই ‘উদ্যোগ’কে আরও এগিয়ে নেয়। ব্রিটিশদের এ রকম ভূমিকা আবার তখনকার হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করেছিল। এসবের মিলিত ফল হিসেবে আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দীরাও শেষ পর্যন্ত হেরেই গেছেন রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু ইতিহাস বয়ানের সময় আমাদের কেবল মুদ্রার একদিকটা দেখালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুলভাবে ঘটনাবলি জানবে এবং কখনো-না-কখনো কোথাও গিয়ে প্রচণ্ড হোঁচট খাবে।
যেকোনো বড় গণ-আন্দোলনে নানা ধারা থাকে। সময়ের ধারাবাহিকতায় তাকে তুলে ধরার সময় সেভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করাই ইতিহাসচর্চাকারীদের দায়। তা না হলে একধরনের অসততার সংস্কৃতি তৈরি হয়।
লেখক: আলতাফ পারভেজ
গবেষক ও লেখক
আলতাফ পারভেজ

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধারার প্রচার মাধ্যমেও মনোযোগ পায়।
তবে ফেসবুকে সচরাচর যা হয়—প্রতিনিয়ত নতুন ইস্যু চলে আসে, পুরোনোর জায়গা নিয়ে নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় এই বিতর্কটাও ইতিমধ্যে আপাতত অতীত হয়ে গেছে। ওই বিতর্কের একটা পার্শ্ব-টীকা হিসেবে এই লেখা।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ লেখার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ওই বিতর্ককালে অনেকের তরফ থেকে এ রকম ইঙ্গিত দেখেছি, বঙ্গের হিন্দুসমাজ বঙ্গভাগের বিরোধী ছিলেন এবং মুসলমানরা পুরোপুরি পক্ষে ছিলেন। একই ফর্মুলা অনুযায়ী অনেকে বলেছেন, প্রথমোক্তরা স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং শেষোক্তরা সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।
আমার বক্তব্য এই শেষের দাবিটা নিয়ে। ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বলছে, এই দাবিটা সত্য নয়। বরং তখনকার মুসলমান সমাজের অনেকেই শুরুতে স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে থাকা বা বিরোধিতার ব্যাপারটা সাম্প্রদায়িক চোখ দিয়ে বোঝা বা বোঝানোর চেষ্টা বিপজ্জনকভাবে একপেশে।
সবাই জানেন, বাংলা ভাগ হয় ১৯০৫-এ এবং আবার সেই ভাগের সিদ্ধান্ত সংশোধন হয় ১৯১১ সালে। এটাই ‘স্বদেশি আন্দোলনে’র সময়। কেন ব্রিটিশ প্রশাসন তখন বাংলা ভাগে আগ্রহী হলো, এর পেছনে তাদের ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতির কোনো ইন্ধন ছিল কি না সেই আলোচনা এখানে তোলা হচ্ছে না। বঙ্গভঙ্গের আরও নানা কারণ ও পটভূমি আছে। সেসবও এখানে করা হচ্ছে না। এখনকার একমাত্র প্রশ্ন হলো, এটা সত্য কি না মুসলমানদের সবাই বঙ্গভঙ্গ চাইছিল? নাকি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমও ছিল?
এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। সেখান থেকে কেবল মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কথা বলছি। বড় এক আলেম তিনি তখন। অনেক জনপ্রিয়, অনেক প্রভাব। ইসলামাবাদী বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন এবং এ ধারায় বিচ্ছিন্ন কেউ ছিলেন না। এ রকম অবস্থানে তখন আরও অনেক প্রভাবশালী মওলানা ছিলেন।
আবার এও সত্য, বঙ্গভঙ্গের বিরোধী মওলানাও তখন অনেক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হাজি শরীয়তুল্লাহর উত্তরসূরি পীর বাদশা মিয়ার মতো মওলানাও ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকার নবাব পরিবার তো ছিলই। বিশেষ করে সদ্য জন্ম নেওয়া ‘মুসলিম লীগ’ তখন বাংলা ভাগকে সমর্থন করছিল। মুসলিম লীগে জমিদার ও ধনীদের জোটবদ্ধতা দেখে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো নেতারা বঙ্গভঙ্গের শুরুর দিকে মনে করতেন এই সংগঠনের দ্বারা বাংলার নিচুতলার মুসলমানদের মুক্তি সম্ভব নয়। মুসলমান সমাজে তখন ‘আশরাফ’, ‘আতরাফ’ একটা বৈষম্য ছিল। অনেক আলেমের কাছে শেষোক্তদের স্বার্থ বাড়তি বিবেচনা পেয়েছিল বলেই মনে হয়।
প্রভাবের দিক থেকে এবং বক্তব্যের যৌক্তিকতায় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরাও তখন বাংলা ছাড়িয়েও বেশ প্রভাবশালী। যদিও ইসলামাবাদী তখনকার বাংলার এক অর্থে প্রান্তিক জনপদ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মানুষ, কিন্তু তাঁর তৎপরতার পরিসর ছিল বহু জনপদজুড়ে। জালালউদ্দীন আফগানির শিষ্য ছিলেন তিনি। প্রথমে কংগ্রেস করলেও পরে ১৯৩৬ সাল নাগাদ তিনি কৃষক প্রজা দলের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হন। ’৩৭-এর নির্বাচনে তিনি প্রজা দল থেকেই জিতেছিলেন। মাঝখানে খেলাফত আন্দোলনের খ্যাতনামা সংগঠক ছিলেন। জমিয়ত-উল-উলেমা-চট্টগ্রামেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আজাদ-হিন্দ-ফৌজেরও চট্টগ্রামের প্রধান এক সংগঠক তিনি।
শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে ‘সোলতান’ নামে বিখ্যাত পত্রিকা ছিল ইসলামাবাদীর। যেখানে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ পেত। ‘সোলতান’ ও ‘দ্য মুসলমান’ (ইংরেজি) বাংলা ভাগ চেতনার বিপক্ষে অনেক কিছু ছেপেছে। ‘দ্য মুসলমান’ ছিল মৌলভি মুজিবর রহমানের কাগজ।
সোলতান ওই দফায় ১৯১০ পর্যন্ত চলেছিল। এই পত্রিকার খরচ জোগাতেন রাজশাহীর ইউসুফ আলী সাহেব। যিনি পাঁচ খণ্ডে ইমাম গাজ্জালির ‘কিমিয়ায়ে সাআদাত’ অনুবাদ করে বিখ্যাত হন। অর্থাৎ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের সাংগঠনিক জোরের পাশাপাশি একাডেমিক সামর্থ্যের পরিসরও বেশ বড় ছিল। এ রকম ভাবার তাই কোনো কারণ নেই, আর্থসামাজিক-ধর্মীয় যৌক্তিকতা ছাড়া এই আলেমরা হিন্দুদের সঙ্গে মিলে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে আজকে স্বদেশি আন্দোলনের পক্ষ নেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মরণোত্তর জেরা করতে গেলে এ প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারতে হবে—মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা কেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন?
প্রসঙ্গক্রমে এও বলা দরকার, হিন্দুসমাজের ভেতর বঙ্গভঙ্গের যে বিরোধিতা ছিল সেটাও সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় ছিল না। হিন্দুসমাজের সবাই এক ধরনের অবস্থান থেকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ছিলেন, বিষয়টা এমন নয়। যদিও একচেটিয়াভাবে সেভাবে ব্যাখ্যাটা দেওয়া হয়।
এটা ঠিক, স্বদেশি আন্দোলনের অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সংগঠক এ রকম বিবেচনা থেকে এই সংগ্রামে নেমেছিলেন যে বাংলা ভাগ হলে তাঁদের পুরোনো আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাবের পরিসর ছোট হয়ে যাবে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ প্রদেশে তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। এই আন্দোলনের ভেতর হিন্দু পুনর্জাগরণবাদেরও অনেক সাংস্কৃতিক উপাদান ছিল। অর্থাৎ আন্দোলনের ভেতর চরমপন্থী এবং মধ্যপন্থী নানা ধারা ছিল। শেষ দিকে এতে চরমপন্থী ধারা প্রভাবশালী হয়ে উঠছিল। যাকে অনেকে ‘বিপ্লববাদী’ ধারা নামেও উল্লেখ করেন। এ পর্যায়ে এসে স্বদেশি আন্দোলন থেকে মুসলমানদের বাড়তি দূরত্ব তৈরি হয়। এসবও মিথ্যা নয়।
কিন্তু একই সঙ্গে এও সত্য, স্বদেশি আন্দোলনে অনেক হিন্দু যুক্ত ছিলেন মুখ্যত বাংলার অখণ্ডতার প্রেম থেকে। তাঁরা চাইছিলেন ভারতীয় পরিসরে ‘বাংলা’ অবিভক্ত থাকুক। প্রায় একই ধরনের বিবেচনা থেকেই মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো অনেকেও শুরুতে বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘নবউদ্দীপনা’র (১৯০৭) মতো কবিতাগ্রন্থও তার বড় এক সাক্ষী হয়ে আছে।
মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা মনে করতেন ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাঙালিত্বের ভেতর দিয়েই মুসলমানের স্বার্থ হাসিল করতে হবে। কৌশল হিসেবে এটা কতটা সঠিক-বেঠিক ছিল সেটা নিয়ে এখন বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তখনকার মুসলমান রাজনীতিতে এ রকম একটা ধারার অস্তিত্ব আমরা নিশ্চয়ই গায়েব করে দিতে পারি না। সিরাজী এ রকম অবস্থানের কারণে ১৯১০-এ গ্রেপ্তারও হলেন।
হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক স্বার্থের জায়গাটা ওনারা বাংলাকে অখণ্ড রেখেই সমাধা করতে চাইছিলেন। এক থাকতে পারলে বাংলার শক্তির জায়গাটা অনেক দৃঢ় থাকবে বলে সাধারণ একটা বিবেচনা কাজ করত তাঁদের মাঝে। এ রকম অনেকের মাঝে তখন ‘স্বরাজ’ ও ‘আত্মনির্ভরতা’র চৈতন্য কাজ করতে শুরু করে। তাঁরা মনে করতেন বাংলার বিভক্তি একটা ‘জাতিগত দুর্যোগ’। এ রকম বিবেচনা থেকেই পরে খোদ বাংলা-মুসলিম লীগের আবুল হাশিম এবং সোহরাওয়ার্দীকেও অখণ্ড বাংলার জন্য লড়তে দেখি আমরা। কিন্তু এও সত্য, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের মতো বড় বড় আলেমের বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের পক্ষেই ছিল বাংলার কৃষি সমাজের দরিদ্র মুসলমানরা। এই ধর্মের মধ্যবিত্তদের বড় অংশও সম্ভাব্য নতুন প্রদেশে নিজেদের অধিকতর অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা দেখছিল।
এভাবে দেখার পেছনে স্থানীয় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের তীব্র প্রচারণাও ছিল। ১৯০৯-এ তারা ভোটব্যবস্থাকে সম্প্রদায়ভিত্তিক (সেপারেট ইলেকটোরেট ব্যবস্থা) করে সেই ‘উদ্যোগ’কে আরও এগিয়ে নেয়। ব্রিটিশদের এ রকম ভূমিকা আবার তখনকার হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করেছিল। এসবের মিলিত ফল হিসেবে আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দীরাও শেষ পর্যন্ত হেরেই গেছেন রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু ইতিহাস বয়ানের সময় আমাদের কেবল মুদ্রার একদিকটা দেখালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুলভাবে ঘটনাবলি জানবে এবং কখনো-না-কখনো কোথাও গিয়ে প্রচণ্ড হোঁচট খাবে।
যেকোনো বড় গণ-আন্দোলনে নানা ধারা থাকে। সময়ের ধারাবাহিকতায় তাকে তুলে ধরার সময় সেভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করাই ইতিহাসচর্চাকারীদের দায়। তা না হলে একধরনের অসততার সংস্কৃতি তৈরি হয়।
লেখক: আলতাফ পারভেজ
গবেষক ও লেখক

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধারার প্রচার মাধ্যমেও মনোযোগ পায়।
তবে ফেসবুকে সচরাচর যা হয়—প্রতিনিয়ত নতুন ইস্যু চলে আসে, পুরোনোর জায়গা নিয়ে নেয়। সেই ধারাবাহিকতায় এই বিতর্কটাও ইতিমধ্যে আপাতত অতীত হয়ে গেছে। ওই বিতর্কের একটা পার্শ্ব-টীকা হিসেবে এই লেখা।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ লেখার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ওই বিতর্ককালে অনেকের তরফ থেকে এ রকম ইঙ্গিত দেখেছি, বঙ্গের হিন্দুসমাজ বঙ্গভাগের বিরোধী ছিলেন এবং মুসলমানরা পুরোপুরি পক্ষে ছিলেন। একই ফর্মুলা অনুযায়ী অনেকে বলেছেন, প্রথমোক্তরা স্বদেশি আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন এবং শেষোক্তরা সম্পূর্ণ বিরোধী ছিলেন।
আমার বক্তব্য এই শেষের দাবিটা নিয়ে। ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বলছে, এই দাবিটা সত্য নয়। বরং তখনকার মুসলমান সমাজের অনেকেই শুরুতে স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে থাকা বা বিরোধিতার ব্যাপারটা সাম্প্রদায়িক চোখ দিয়ে বোঝা বা বোঝানোর চেষ্টা বিপজ্জনকভাবে একপেশে।
সবাই জানেন, বাংলা ভাগ হয় ১৯০৫-এ এবং আবার সেই ভাগের সিদ্ধান্ত সংশোধন হয় ১৯১১ সালে। এটাই ‘স্বদেশি আন্দোলনে’র সময়। কেন ব্রিটিশ প্রশাসন তখন বাংলা ভাগে আগ্রহী হলো, এর পেছনে তাদের ‘ভাগ করো এবং শাসন করো’ নীতির কোনো ইন্ধন ছিল কি না সেই আলোচনা এখানে তোলা হচ্ছে না। বঙ্গভঙ্গের আরও নানা কারণ ও পটভূমি আছে। সেসবও এখানে করা হচ্ছে না। এখনকার একমাত্র প্রশ্ন হলো, এটা সত্য কি না মুসলমানদের সবাই বঙ্গভঙ্গ চাইছিল? নাকি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রমও ছিল?
এ প্রশ্নের উত্তরে অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। সেখান থেকে কেবল মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কথা বলছি। বড় এক আলেম তিনি তখন। অনেক জনপ্রিয়, অনেক প্রভাব। ইসলামাবাদী বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন এবং এ ধারায় বিচ্ছিন্ন কেউ ছিলেন না। এ রকম অবস্থানে তখন আরও অনেক প্রভাবশালী মওলানা ছিলেন।
আবার এও সত্য, বঙ্গভঙ্গের বিরোধী মওলানাও তখন অনেক ছিলেন। তাঁদের মধ্যে হাজি শরীয়তুল্লাহর উত্তরসূরি পীর বাদশা মিয়ার মতো মওলানাও ছিলেন। এ ছাড়া ঢাকার নবাব পরিবার তো ছিলই। বিশেষ করে সদ্য জন্ম নেওয়া ‘মুসলিম লীগ’ তখন বাংলা ভাগকে সমর্থন করছিল। মুসলিম লীগে জমিদার ও ধনীদের জোটবদ্ধতা দেখে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো নেতারা বঙ্গভঙ্গের শুরুর দিকে মনে করতেন এই সংগঠনের দ্বারা বাংলার নিচুতলার মুসলমানদের মুক্তি সম্ভব নয়। মুসলমান সমাজে তখন ‘আশরাফ’, ‘আতরাফ’ একটা বৈষম্য ছিল। অনেক আলেমের কাছে শেষোক্তদের স্বার্থ বাড়তি বিবেচনা পেয়েছিল বলেই মনে হয়।
প্রভাবের দিক থেকে এবং বক্তব্যের যৌক্তিকতায় মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরাও তখন বাংলা ছাড়িয়েও বেশ প্রভাবশালী। যদিও ইসলামাবাদী তখনকার বাংলার এক অর্থে প্রান্তিক জনপদ চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মানুষ, কিন্তু তাঁর তৎপরতার পরিসর ছিল বহু জনপদজুড়ে। জালালউদ্দীন আফগানির শিষ্য ছিলেন তিনি। প্রথমে কংগ্রেস করলেও পরে ১৯৩৬ সাল নাগাদ তিনি কৃষক প্রজা দলের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হন। ’৩৭-এর নির্বাচনে তিনি প্রজা দল থেকেই জিতেছিলেন। মাঝখানে খেলাফত আন্দোলনের খ্যাতনামা সংগঠক ছিলেন। জমিয়ত-উল-উলেমা-চট্টগ্রামেরও প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ব্রিটিশবিরোধী আজাদ-হিন্দ-ফৌজেরও চট্টগ্রামের প্রধান এক সংগঠক তিনি।
শতাব্দীর একেবারে শুরুর দিকে ‘সোলতান’ নামে বিখ্যাত পত্রিকা ছিল ইসলামাবাদীর। যেখানে তাঁর চিন্তাভাবনা প্রকাশ পেত। ‘সোলতান’ ও ‘দ্য মুসলমান’ (ইংরেজি) বাংলা ভাগ চেতনার বিপক্ষে অনেক কিছু ছেপেছে। ‘দ্য মুসলমান’ ছিল মৌলভি মুজিবর রহমানের কাগজ।
সোলতান ওই দফায় ১৯১০ পর্যন্ত চলেছিল। এই পত্রিকার খরচ জোগাতেন রাজশাহীর ইউসুফ আলী সাহেব। যিনি পাঁচ খণ্ডে ইমাম গাজ্জালির ‘কিমিয়ায়ে সাআদাত’ অনুবাদ করে বিখ্যাত হন। অর্থাৎ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের সাংগঠনিক জোরের পাশাপাশি একাডেমিক সামর্থ্যের পরিসরও বেশ বড় ছিল। এ রকম ভাবার তাই কোনো কারণ নেই, আর্থসামাজিক-ধর্মীয় যৌক্তিকতা ছাড়া এই আলেমরা হিন্দুদের সঙ্গে মিলে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করেছিলেন। ফলে আজকে স্বদেশি আন্দোলনের পক্ষ নেওয়ার জন্য রবীন্দ্রনাথকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মরণোত্তর জেরা করতে গেলে এ প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারতে হবে—মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা কেন বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন?
প্রসঙ্গক্রমে এও বলা দরকার, হিন্দুসমাজের ভেতর বঙ্গভঙ্গের যে বিরোধিতা ছিল সেটাও সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক বিবেচনায় ছিল না। হিন্দুসমাজের সবাই এক ধরনের অবস্থান থেকে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ছিলেন, বিষয়টা এমন নয়। যদিও একচেটিয়াভাবে সেভাবে ব্যাখ্যাটা দেওয়া হয়।
এটা ঠিক, স্বদেশি আন্দোলনের অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু সংগঠক এ রকম বিবেচনা থেকে এই সংগ্রামে নেমেছিলেন যে বাংলা ভাগ হলে তাঁদের পুরোনো আর্থিক-সামাজিক-রাজনৈতিক প্রভাবের পরিসর ছোট হয়ে যাবে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ প্রদেশে তাঁরা সংখ্যালঘু হয়ে যাবে। এই আন্দোলনের ভেতর হিন্দু পুনর্জাগরণবাদেরও অনেক সাংস্কৃতিক উপাদান ছিল। অর্থাৎ আন্দোলনের ভেতর চরমপন্থী এবং মধ্যপন্থী নানা ধারা ছিল। শেষ দিকে এতে চরমপন্থী ধারা প্রভাবশালী হয়ে উঠছিল। যাকে অনেকে ‘বিপ্লববাদী’ ধারা নামেও উল্লেখ করেন। এ পর্যায়ে এসে স্বদেশি আন্দোলন থেকে মুসলমানদের বাড়তি দূরত্ব তৈরি হয়। এসবও মিথ্যা নয়।
কিন্তু একই সঙ্গে এও সত্য, স্বদেশি আন্দোলনে অনেক হিন্দু যুক্ত ছিলেন মুখ্যত বাংলার অখণ্ডতার প্রেম থেকে। তাঁরা চাইছিলেন ভারতীয় পরিসরে ‘বাংলা’ অবিভক্ত থাকুক। প্রায় একই ধরনের বিবেচনা থেকেই মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর মতো অনেকেও শুরুতে বঙ্গভঙ্গের বিরোধী ছিলেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ‘নবউদ্দীপনা’র (১৯০৭) মতো কবিতাগ্রন্থও তার বড় এক সাক্ষী হয়ে আছে।
মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীরা মনে করতেন ব্রিটিশবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাঙালিত্বের ভেতর দিয়েই মুসলমানের স্বার্থ হাসিল করতে হবে। কৌশল হিসেবে এটা কতটা সঠিক-বেঠিক ছিল সেটা নিয়ে এখন বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু তখনকার মুসলমান রাজনীতিতে এ রকম একটা ধারার অস্তিত্ব আমরা নিশ্চয়ই গায়েব করে দিতে পারি না। সিরাজী এ রকম অবস্থানের কারণে ১৯১০-এ গ্রেপ্তারও হলেন।
হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক স্বার্থের জায়গাটা ওনারা বাংলাকে অখণ্ড রেখেই সমাধা করতে চাইছিলেন। এক থাকতে পারলে বাংলার শক্তির জায়গাটা অনেক দৃঢ় থাকবে বলে সাধারণ একটা বিবেচনা কাজ করত তাঁদের মাঝে। এ রকম অনেকের মাঝে তখন ‘স্বরাজ’ ও ‘আত্মনির্ভরতা’র চৈতন্য কাজ করতে শুরু করে। তাঁরা মনে করতেন বাংলার বিভক্তি একটা ‘জাতিগত দুর্যোগ’। এ রকম বিবেচনা থেকেই পরে খোদ বাংলা-মুসলিম লীগের আবুল হাশিম এবং সোহরাওয়ার্দীকেও অখণ্ড বাংলার জন্য লড়তে দেখি আমরা। কিন্তু এও সত্য, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীদের মতো বড় বড় আলেমের বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের পক্ষেই ছিল বাংলার কৃষি সমাজের দরিদ্র মুসলমানরা। এই ধর্মের মধ্যবিত্তদের বড় অংশও সম্ভাব্য নতুন প্রদেশে নিজেদের অধিকতর অর্থনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনা দেখছিল।
এভাবে দেখার পেছনে স্থানীয় ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের তীব্র প্রচারণাও ছিল। ১৯০৯-এ তারা ভোটব্যবস্থাকে সম্প্রদায়ভিত্তিক (সেপারেট ইলেকটোরেট ব্যবস্থা) করে সেই ‘উদ্যোগ’কে আরও এগিয়ে নেয়। ব্রিটিশদের এ রকম ভূমিকা আবার তখনকার হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করেছিল। এসবের মিলিত ফল হিসেবে আবুল হাশিম-সোহরাওয়ার্দীরাও শেষ পর্যন্ত হেরেই গেছেন রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু ইতিহাস বয়ানের সময় আমাদের কেবল মুদ্রার একদিকটা দেখালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভুলভাবে ঘটনাবলি জানবে এবং কখনো-না-কখনো কোথাও গিয়ে প্রচণ্ড হোঁচট খাবে।
যেকোনো বড় গণ-আন্দোলনে নানা ধারা থাকে। সময়ের ধারাবাহিকতায় তাকে তুলে ধরার সময় সেভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করাই ইতিহাসচর্চাকারীদের দায়। তা না হলে একধরনের অসততার সংস্কৃতি তৈরি হয়।
লেখক: আলতাফ পারভেজ
গবেষক ও লেখক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সম্প্রতি দেশে আবার জাতীয় সংগীত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল। বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এ প্রসঙ্গটি জেগে ওঠে বা জাগিয়ে তোলা হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে বাংলা-ফেসবুকে এ রকম বিতর্ক অনেক তারকা ফেসবুকারের ভালো এক ‘পণ্য’। সেই ঢেউ অনেক সময় মূলধা
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫