Ajker Patrika

নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা: চাল-চুলাহীন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৩, ১০: ৩২
নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা: চাল-চুলাহীন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি

দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকার পর হঠাৎ খোলা হলো একটি কার্যালয়। সেখানে ধোয়ামোছার কাজ চলছিল জোরেশোরে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ডেভেলপমেন্ট পার্টনার (ডিপি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে কাজ করতে আবেদন করেছে। সাংবাদিকেরা দেখতে যাওয়ায় তড়িঘড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছিল কার্যালয়। যশোরের মনিরামপুর পোস্ট অফিস পাড়ার এই অফিস শেষ কবে খোলা হয়েছিল, তা বলতে পারেন না কেউ। সেখানে কাউকে যাতায়াত করতেও দেখা যায় না।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৬৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। এগুলোর মধ্যে ৩৯টি সংস্থার কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন আজকের পত্রিকার সংবাদকর্মীরা। তাতে দেখা গেছে, ইসির তালিকায় ঠাঁই পাওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই নামসর্বস্ব। সেগুলোর এমনই চাল-চুলোহীন অবস্থা যে অনেক প্রতিষ্ঠানের অফিসও নেই। যে কয়েকটির অফিস আছে সেগুলোও জরাজীর্ণ, এমনকি অফিস পাওয়া গেছে কৃষিজমিতেও।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালায় পর্যবেক্ষকের যোগ্যতা সম্পর্কে বলা আছে, ‘পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োজিত ব্যক্তির কোনো রাজনৈতিক দল বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীর সাথে ব্যক্তিগত স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা থাকিতে পারিবে না; কোন রাজনৈতিক দল বা এর কোন অঙ্গ-সংগঠনের সাথে কোনভাবে যুক্ত কেহ নির্বাচন পর্যবেক্ষক হইতে পারিবেন না।’

পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ইসির তালিকায় থাকা অনেক সংস্থার প্রধানেরাই রাজনৈতিক দলের পদবিধারী।

শুধু যশোরেই ডিপিসহ আটটি প্রতিষ্ঠান আছে পর্যবেক্ষকের তালিকায়। একটির নাম হিউম্যান রাইটস ভয়েস। যশোরের কারবালা রোডে অফিস থাকলেও সংগঠনটির প্রধান এ কে এম নুরুল আমিন জেলা জাতীয় পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। তালিকায় থাকা সার্ভিসেস ফর ইক্যুইটি অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (সিড) সাইনবোর্ডসর্বস্ব। ১৫-১৬ বছর ধরে কার্যক্রম না চলায় মনিরামপুরে সিডের ঝোপঝাড়ঘেরা কার্যালয়টি এখন জরাজীর্ণ। এই সংস্থার সভাপতিকে কেউ চেনেন না। সিডের নির্বাহী পরিচালক রেবেকা সুলতানাও বলেছেন, ‘এখন এনজিওর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। এবার আমরা নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাচ্ছি।’ যশোরে আরেক সংস্থা ‘সমাজ উন্নয়ন প্রয়াস’-এর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বঞ্চিতা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, বাঁচতে শেখা, এসো বাঁচতে শিখি ও প্রকাশ গণ কেন্দ্র—এই চারটি সংগঠন নারী ও শিশু অধিকার ও সমাজ উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসছে।

রাজশাহীর স্বাস্থ্য শিক্ষা সেবা ফাউন্ডেশনের (সেফ) নাম আছে তালিকায়। জানা যায়, এর প্রধান রুপন কুমার দত্ত রাজশাহী মহানগর তাঁতী লীগের সিনিয়র সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে জাল সনদে কলেজে চাকরি নিয়ে ধরা পড়ে চাকরি খোয়ানোর অভিযোগও আছে। রাজশাহী বা অন্য কোথাও সেফের অফিসও নেই, নেই কোনো সাইনবোর্ডও। রুপনের বাড়ির দরজায় সেফের নাম দিয়ে একটি কাগজের পোস্টার লাগানো আছে। নগরীর শাহ মখদুম কলেজের সামনে রুপনের ওষুধের দোকান। সেখানেই তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাঁচ বছরে আমরা কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগে জানতাম না যে দলের পদে থাকলে পর্যবেক্ষক হওয়া যাবে না। পরে জেনেছি।’

তালিকাভুক্ত মুভ ফাউন্ডেশন ইসিতে ঠিকানা ১২৪/১ আহম্মদবাগ, সবুজবাগ, ঢাকা। কিন্তু ওই ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে সংগঠনটির সন্ধান পাওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজনও প্রতিষ্ঠানটির নাম শোনেননি বলে জানান। ওয়েবসাইটে দেওয়া ফোন নম্বরে কল করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। ফেসবুক পেজেও কোনো সাড়া মেলেনি। এসকে কল্যাণী ফাউন্ডেশনের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়ায় গিয়েও এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজও নেই।

তালিকায় থাকা শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্রের অফিস রাজধানীর বিজয় সরণিতে। যদিও সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঠিকানা দেওয়া আছে পূর্ব তেজতুরী বাজার। কয়েক বছর আগে স্থানান্তর করা হলেও তা ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয়নি। অফিস থাকলেও নেই কোনো ব্যানার বা সাইনবোর্ড। 
মিরপুরের রূপনগর শিক্ষা সহায়তা ফাউন্ডেশন তালিকাভুক্ত হলেও এর কোনো অফিস নেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান এইচ এম আব্দুর রাজ্জাক নিজের বাসাকেই অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন।

ডেভেলপমেন্ট অব বাংলাদেশের অফিস মিরপুরের টোলারবাগে। সংস্থাটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্চিতা তালুকদারের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তথ্য জানা যায়নি। তবে তাঁর বড় ছেলে কল্যাণপুর ও মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় যুবলীগের সর্বোচ্চ পদধারী নেতা।

তালিকার ৮ নম্বরে আছে জানিপপ (জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ)। সংস্থাটির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া আছে সায়েন্স ল্যাবের লিলি অর্কেডের চারতলায়। তবে সেই ঠিকানায় গিয়ে কার্যালয় বন্ধ পাওয়া গেছে, তালায় জমেছে ধুলোর আস্তরণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানি জানান, এই কার্যালয় বছরখানেক খোলা হয় না। আরেকজন জানান, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে এখানে কাজ হতে দেখেছেন তিনি। কয়েক মাস আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে কার্যালয়টি পরিদর্শন করে গেছেন।

সংস্থার প্রধান অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভবনটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। ওখানেই জানিপপের কার্যালয়। সেখানে স্থায়ী কোনো কর্মী নেই। নির্বাচন এলে আমরা একসঙ্গে সেখানে বসি।’ লালমাটিয়ায় কোনো কার্যালয় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। ২০১৮-এর জাতীয় নির্বাচনের সময় আমরা সেখানে কার্যক্রম চালিয়েছিলাম।’

তালিকাভুক্ত বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশনের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে পুরানা পল্টনের বায়তুল খায়ের টাওয়ার। তবে ১২ তলা ভবনটিতে এই সংস্থার কোনো কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তালিকায় থাকা হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী রাজধানীর মোহাম্মদী হাউজিং এলাকায় গেলে সেখানে ‘যানজাবিল ফুড’ নামের একটি দোকান পাওয়া যায়। ইন্টিগ্রেটেড সোসাইটি ফর রেইজ অব হোপ (রিশ)-এর অফিস দূরে থাক, কোনো সাইনবোর্ডও নেই। ইসিতে দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী আদাবরের শেখেরটেক গিয়ে ক্রিয়েটিভ সার্ভিসেস লিমিটেড নামে অন্য একটি অফিস পাওয়া গেছে। সেখানে রিশের কোনো নামগন্ধও পাওয়া যায়নি। রিশের সভাপতি রিয়াদ সরকার ময়মনসিংহে থাকেন।

ময়মনসিংহের তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা ও হিউম্যান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (হিড্স) নাম তালিকায় থাকায় চলছে ব্যাপক সমালোচনা। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার তারাটী ইউনিয়নের মৈশাদিয়া গ্রামে হিডসের প্রধান কার্যালয় দেখানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, এই এনজিওর প্রধান রুহুল আমীনের গ্রামের বাড়ির একটি কৃষিজমিতে ছোট একটি আধা পাকা ঘরের বারান্দায় চালার সঙ্গে এনজিওটির একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো। ঘরের দুটি দরজায়ই তালা লাগানো। স্থানীয় রহমত আলী ও ফারুক হোসেন জানান, রুহুল আমীন ঢাকায় থাকেন, বছরে দু-একবার আসেন। এটা যে কোন অফিস, সেটা তাঁরা জানেন না। তাঁরা জানেন, এটা সেচের পাম্পের অফিস।

সেতু রুরাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (এসআরডিএস) ইসিতে ঠিকানা দিয়েছে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান এলাকার। সেই ঠিকানায় কিছু নেই। বড়াইবাড়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, একটি ভাড়া বাসায় ছোট একটি সাইনবোর্ড ঝুলছে সংগঠনটির। ২০০৮ সাল থেকে সংগঠনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করলেও এলাকার লোকজন কিছুই জানেন না। কার্যালয়ের পাশের বাড়ির মালিক লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমার ভাতিজার বাড়ি ভাড়া নিয়ে এসআরডিএস নামে সংগঠন খুলেছে। এখানে কোনো কাজ-কাম নেই, সব ভণ্ডামি।’ গ্রাম্য চিকিৎসক জগদীশ চন্দ্র বলেন, ছয়-সাত মাস ধরে কার্যালয়টি বন্ধ। এসআরডিএসের পরিচালক মোতাব্বর হোসেন বলেন, ‘চৌধুরী বাড়ি বড়াইবাড়ীতে আমাদের কার্যালয়টি রেজিস্ট্রার কার্যালয়। মেইন অফিস হচ্ছে রংপুরের পাকার মাথায়। এখানেই সব কার্যক্রম চলে।’

এ বিষয়ে কথা হলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের বিতর্কের আর অবসান হচ্ছে না। এই কাজটিতে (পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন) তাদের বিতর্ক সৃষ্টি করার দরকার ছিল না। আমি তো শুনেছি, যে পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নাম প্রকাশ করা হয়েছে, তাদের অনেকেরই লোকবল নেই, অনেকের অফিস নেই। শুধু তা-ই নয়, অনেকের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত। এ রকম করলে তো নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবে না। প্রশ্ন জাগে, এদের দিয়ে কীভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত