চিররঞ্জন সরকার

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রাপ্য অধিকার তো দেয়ইনি, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকেও কেড়ে নিতে চেয়েছে। চাকরিবাকরি, শিল্পকারখানায় সুযোগ-সুবিধা সব ছিল তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা ছিলাম চরম বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার। তারা যখন আমাদের রাজনৈতিক অধিকারও পুরোপুরি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, বিরোধ তখনই চরম আকার ধারণ করল—যা রূপ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ যার শুরু, ১৬ ডিসেম্বর যার শেষ।
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সম্মুখযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস লড়াই করার পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করি। স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করি না। একটা মামুলি ছুটির দিন হিসেবে কাটিয়ে দিই। যদিও এই দিবসটির মূল্য বাঙালি জাতির কাছে অপরিসীম। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এই স্বাধীনতা। যদিও স্বাধীনতার লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।
আমাদের স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বশাসন; স্বশাসনের মধ্য দিয়ে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠীনির্বিশেষে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কারও প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা হবে না। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের স্বাধীনতার সেই আকাঙ্ক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষমতায় যারাই গেছে, তারা গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষুদ্র দল ও গোষ্ঠী স্বার্থে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। এতে করে দেশের সব মানুষের জন্য অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়নি।
একশ্রেণির মানুষ ফুলেফেঁপে বড়লোক হয়েছে। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মানুষেরা চরম বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। থানা-পুলিশ-আইন-প্রশাসন কোনো কিছুই তাদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেনি।
স্বাধীনতার মানেটাও আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। ‘আমাদের দেশ স্বাধীন, আমরা যা খুশি তা-ই করতে পারি’ এমন মনোভাবের মানুষও সমাজে আছে। যদিও স্বাধীনতা মানে অন্য কিছু। স্বাধীনতা মানে অরাজকতা নয়। স্বাধীনতা মানে শুধু ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ নয়। স্বাধীনতা মানে দেশপ্রেম, দেশকে মারূপে পরিগণিত করা, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার, আমার দেশ।’ স্বাধীনতা মানে এক দিনের ছুটি নয়, নয় পতাকা উত্তোলন, নয় মোড়ে মোড়ে উচ্চ স্বরে মাইক বাজানো। এই মুহূর্তে স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পেরিয়ে আমরা কি স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি?
যৌন হয়রানির প্রতিকার না পেয়ে আত্মমর্যাদার জন্য যদি কাউকে আত্মহত্যা করতে হয়, ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি পাওয়া না যায়, অথবা প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি কারও দয়াদাক্ষিণ্যের ওপরে নির্ভর করতে থাকে, তবে কি আমরা স্বাধীন?
স্বাধীনতার অর্থ দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানো; দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বসবাসযোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সঙ্গে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞানবিষয়ক ধ্যানধারণার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করা, স্বাধীনতার অর্থ দেশের প্রতি আরও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া।
স্বাধীনতার অর্থ এটা নয় যে নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে সিঁড়ি বানিয়ে ক্ষমতা দখল আর সিংহাসনে বসে তার অপব্যবহার করা। স্বাধীনতার মানে এটাও নয় যে বিদেশিশক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ও ক্ষমতায় থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, বাংলাদেশ আজ বৃহত্তর পুঁজিবাদী দেশগুলোর অবাধ বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের দেউলিয়া রাজনৈতিক শক্তিই তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে, নিজের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের আজ বড়ই অভাব।
দেশ উন্নত হচ্ছে—‘আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে’—মেট্রোরেল হয়েছে, নতুন বোয়িং কেনা হয়েছে, মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে—উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমার দেশ। কিন্তু আসল অস্ত্রটি সঠিকভাবে বানানো গেল না। সব জনগণকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া গেল না। দেশের আসল ‘অস্ত্র’ সমৃদ্ধ করায় আমাদের মনোযোগ নেই। শুধু অশিক্ষার আগুনে বাতাস দিলেই দেশ জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে। কোনো অস্ত্রই কাজে আসবে না। অশিক্ষার কারণে আরও বেশি করে জন্ম নেবে দেশের মধ্যে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের চাহিদা, যা মেটাতে প্রচুর দাম দিয়ে কেনা অস্ত্র বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আগেই দেশের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।
স্বাধীনতার সঠিক অর্থ একমাত্র হতে পারে দেশের জনগণের ন্যূনতম সঠিক শিক্ষাদানের অঙ্গীকারে ব্রত হাওয়া। শিক্ষাই পারে সব পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে। অন্ধকারে আলো জ্বালাতে। দেশের জনগণের সুশিক্ষা বিনা সব স্বাধীনতাই পরাধীনতার শিকলে বাঁধা।
বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন সব থেকে বেশি। তাঁদের জানা বা অনুভব করা উচিত যে ‘দেশের ঊর্ধ্বে রাজনীতি নয়, রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশ’। নির্বাচন যায়, আবার ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু যে মানুষটা একবার দেশের সীমা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে, সে আর কোনো দিন ফিরে আসে না। প্রতিনিয়ত মাইগ্রেশন হচ্ছে। ব্রেইনড্রেইন হচ্ছে।
দেশে একধরনের বেপরোয়া জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। এরা বেকার। পেশিশক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের টার্গেট করছে। তাদের সঙ্গে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল আছে। এরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজি করে, বনভূমি উজাড় করে, বালু উত্তোলন করে, হাট-বাজার-রাস্তা-সাঁকো, খেয়াঘাট দখল করে, ইজারা নেয়। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রথম উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি একটা দায়িত্ববোধের কথা সর্বদা মনে করিয়ে দেওয়া।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবা উচিত—দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যদি সঠিক নেতৃত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের সবার উচিত দেশের স্বার্থে ও নিজেদের স্বার্থে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা। সবাই যদি চিন্তা করি রাজনীতি খারাপ, তার ফলস্বরূপ দেশের সব নাগরিকও খারাপ থাকতে বাধ্য। দেশের নাগরিকেরা ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ভালো নেতার দরকার। ভালো ব্যক্তিত্ব বিনা ভালো নেতৃত্বের জন্ম হয় না। পচা পাঁকে বাস করে পঙ্কজ সর্বদা হওয়া যায় না।
তাই প্রথমে উচিত পচা পাঁক সরিয়ে ভালো সরোবর তৈরি করা, তাতে নিশ্চিত পদ্ম ফুটবে। তেমনি দেশের শিক্ষিত নাগরিক সমাজের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণ করা। নচেৎ দেশের ও দশের উন্নতি সম্ভব নয়। কোনো মানুষই রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়, রাজনীতি দেশের ঊর্ধ্বে নয়। দেশ রাজনীতি বিনা নয়। অতএব সব উন্নতির, সব স্বাধীনতার, সব রাজনীতির সঠিক নেতৃত্বের দরকার, সঠিক নাগরিক দরকার, শিক্ষার দরকার, শ্রদ্ধার দরকার, ত্যাগের দরকার, আদর্শের দরকার, দায়িত্ববোধের দরকার।
রাজনীতিতে যে সুবিধাবাদ, দেশপ্রেমবর্জিত আখের গোছানোর যে প্রবণতা আমাদের দেশে চলছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো যে সেই পরিবর্তন করবে না তা আমরা স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে বুঝে ফেলেছি।
অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত জনগণের অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক কুসংস্কারকে মূলধন করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি কখনোই দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারে না—এ সত্য বোঝা এবং বোঝানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
প্রয়োজন নতুন চেতনা, নতুন সংগঠন, নতুন কর্মী বাহিনী। অভ্যস্ত স্লোগান, চেনা রাজনীতিকদের বুলি আমাদের কাছে ক্লিশে হয়ে গেছে। এখন বিকল্পের অন্বেষণ করতে হবে। কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্পের অন্বেষণ ও বিকল্প সৃষ্টিই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অঙ্গীকার।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রাপ্য অধিকার তো দেয়ইনি, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকেও কেড়ে নিতে চেয়েছে। চাকরিবাকরি, শিল্পকারখানায় সুযোগ-সুবিধা সব ছিল তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা ছিলাম চরম বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার। তারা যখন আমাদের রাজনৈতিক অধিকারও পুরোপুরি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, বিরোধ তখনই চরম আকার ধারণ করল—যা রূপ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ যার শুরু, ১৬ ডিসেম্বর যার শেষ।
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সম্মুখযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস লড়াই করার পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করি। স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করি না। একটা মামুলি ছুটির দিন হিসেবে কাটিয়ে দিই। যদিও এই দিবসটির মূল্য বাঙালি জাতির কাছে অপরিসীম। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এই স্বাধীনতা। যদিও স্বাধীনতার লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।
আমাদের স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বশাসন; স্বশাসনের মধ্য দিয়ে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠীনির্বিশেষে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কারও প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা হবে না। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের স্বাধীনতার সেই আকাঙ্ক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষমতায় যারাই গেছে, তারা গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষুদ্র দল ও গোষ্ঠী স্বার্থে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। এতে করে দেশের সব মানুষের জন্য অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়নি।
একশ্রেণির মানুষ ফুলেফেঁপে বড়লোক হয়েছে। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মানুষেরা চরম বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। থানা-পুলিশ-আইন-প্রশাসন কোনো কিছুই তাদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেনি।
স্বাধীনতার মানেটাও আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। ‘আমাদের দেশ স্বাধীন, আমরা যা খুশি তা-ই করতে পারি’ এমন মনোভাবের মানুষও সমাজে আছে। যদিও স্বাধীনতা মানে অন্য কিছু। স্বাধীনতা মানে অরাজকতা নয়। স্বাধীনতা মানে শুধু ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ নয়। স্বাধীনতা মানে দেশপ্রেম, দেশকে মারূপে পরিগণিত করা, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার, আমার দেশ।’ স্বাধীনতা মানে এক দিনের ছুটি নয়, নয় পতাকা উত্তোলন, নয় মোড়ে মোড়ে উচ্চ স্বরে মাইক বাজানো। এই মুহূর্তে স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পেরিয়ে আমরা কি স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি?
যৌন হয়রানির প্রতিকার না পেয়ে আত্মমর্যাদার জন্য যদি কাউকে আত্মহত্যা করতে হয়, ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি পাওয়া না যায়, অথবা প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি কারও দয়াদাক্ষিণ্যের ওপরে নির্ভর করতে থাকে, তবে কি আমরা স্বাধীন?
স্বাধীনতার অর্থ দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানো; দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বসবাসযোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সঙ্গে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞানবিষয়ক ধ্যানধারণার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করা, স্বাধীনতার অর্থ দেশের প্রতি আরও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া।
স্বাধীনতার অর্থ এটা নয় যে নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে সিঁড়ি বানিয়ে ক্ষমতা দখল আর সিংহাসনে বসে তার অপব্যবহার করা। স্বাধীনতার মানে এটাও নয় যে বিদেশিশক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ও ক্ষমতায় থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, বাংলাদেশ আজ বৃহত্তর পুঁজিবাদী দেশগুলোর অবাধ বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের দেউলিয়া রাজনৈতিক শক্তিই তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে, নিজের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের আজ বড়ই অভাব।
দেশ উন্নত হচ্ছে—‘আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে’—মেট্রোরেল হয়েছে, নতুন বোয়িং কেনা হয়েছে, মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে—উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমার দেশ। কিন্তু আসল অস্ত্রটি সঠিকভাবে বানানো গেল না। সব জনগণকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া গেল না। দেশের আসল ‘অস্ত্র’ সমৃদ্ধ করায় আমাদের মনোযোগ নেই। শুধু অশিক্ষার আগুনে বাতাস দিলেই দেশ জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে। কোনো অস্ত্রই কাজে আসবে না। অশিক্ষার কারণে আরও বেশি করে জন্ম নেবে দেশের মধ্যে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের চাহিদা, যা মেটাতে প্রচুর দাম দিয়ে কেনা অস্ত্র বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আগেই দেশের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।
স্বাধীনতার সঠিক অর্থ একমাত্র হতে পারে দেশের জনগণের ন্যূনতম সঠিক শিক্ষাদানের অঙ্গীকারে ব্রত হাওয়া। শিক্ষাই পারে সব পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে। অন্ধকারে আলো জ্বালাতে। দেশের জনগণের সুশিক্ষা বিনা সব স্বাধীনতাই পরাধীনতার শিকলে বাঁধা।
বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন সব থেকে বেশি। তাঁদের জানা বা অনুভব করা উচিত যে ‘দেশের ঊর্ধ্বে রাজনীতি নয়, রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশ’। নির্বাচন যায়, আবার ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু যে মানুষটা একবার দেশের সীমা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে, সে আর কোনো দিন ফিরে আসে না। প্রতিনিয়ত মাইগ্রেশন হচ্ছে। ব্রেইনড্রেইন হচ্ছে।
দেশে একধরনের বেপরোয়া জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। এরা বেকার। পেশিশক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের টার্গেট করছে। তাদের সঙ্গে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল আছে। এরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজি করে, বনভূমি উজাড় করে, বালু উত্তোলন করে, হাট-বাজার-রাস্তা-সাঁকো, খেয়াঘাট দখল করে, ইজারা নেয়। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রথম উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি একটা দায়িত্ববোধের কথা সর্বদা মনে করিয়ে দেওয়া।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবা উচিত—দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যদি সঠিক নেতৃত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের সবার উচিত দেশের স্বার্থে ও নিজেদের স্বার্থে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা। সবাই যদি চিন্তা করি রাজনীতি খারাপ, তার ফলস্বরূপ দেশের সব নাগরিকও খারাপ থাকতে বাধ্য। দেশের নাগরিকেরা ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ভালো নেতার দরকার। ভালো ব্যক্তিত্ব বিনা ভালো নেতৃত্বের জন্ম হয় না। পচা পাঁকে বাস করে পঙ্কজ সর্বদা হওয়া যায় না।
তাই প্রথমে উচিত পচা পাঁক সরিয়ে ভালো সরোবর তৈরি করা, তাতে নিশ্চিত পদ্ম ফুটবে। তেমনি দেশের শিক্ষিত নাগরিক সমাজের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণ করা। নচেৎ দেশের ও দশের উন্নতি সম্ভব নয়। কোনো মানুষই রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়, রাজনীতি দেশের ঊর্ধ্বে নয়। দেশ রাজনীতি বিনা নয়। অতএব সব উন্নতির, সব স্বাধীনতার, সব রাজনীতির সঠিক নেতৃত্বের দরকার, সঠিক নাগরিক দরকার, শিক্ষার দরকার, শ্রদ্ধার দরকার, ত্যাগের দরকার, আদর্শের দরকার, দায়িত্ববোধের দরকার।
রাজনীতিতে যে সুবিধাবাদ, দেশপ্রেমবর্জিত আখের গোছানোর যে প্রবণতা আমাদের দেশে চলছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো যে সেই পরিবর্তন করবে না তা আমরা স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে বুঝে ফেলেছি।
অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত জনগণের অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক কুসংস্কারকে মূলধন করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি কখনোই দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারে না—এ সত্য বোঝা এবং বোঝানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
প্রয়োজন নতুন চেতনা, নতুন সংগঠন, নতুন কর্মী বাহিনী। অভ্যস্ত স্লোগান, চেনা রাজনীতিকদের বুলি আমাদের কাছে ক্লিশে হয়ে গেছে। এখন বিকল্পের অন্বেষণ করতে হবে। কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্পের অন্বেষণ ও বিকল্প সৃষ্টিই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অঙ্গীকার।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
চিররঞ্জন সরকার

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রাপ্য অধিকার তো দেয়ইনি, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকেও কেড়ে নিতে চেয়েছে। চাকরিবাকরি, শিল্পকারখানায় সুযোগ-সুবিধা সব ছিল তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা ছিলাম চরম বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার। তারা যখন আমাদের রাজনৈতিক অধিকারও পুরোপুরি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, বিরোধ তখনই চরম আকার ধারণ করল—যা রূপ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ যার শুরু, ১৬ ডিসেম্বর যার শেষ।
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সম্মুখযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস লড়াই করার পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করি। স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করি না। একটা মামুলি ছুটির দিন হিসেবে কাটিয়ে দিই। যদিও এই দিবসটির মূল্য বাঙালি জাতির কাছে অপরিসীম। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এই স্বাধীনতা। যদিও স্বাধীনতার লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।
আমাদের স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বশাসন; স্বশাসনের মধ্য দিয়ে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠীনির্বিশেষে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কারও প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা হবে না। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের স্বাধীনতার সেই আকাঙ্ক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষমতায় যারাই গেছে, তারা গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষুদ্র দল ও গোষ্ঠী স্বার্থে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। এতে করে দেশের সব মানুষের জন্য অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়নি।
একশ্রেণির মানুষ ফুলেফেঁপে বড়লোক হয়েছে। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মানুষেরা চরম বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। থানা-পুলিশ-আইন-প্রশাসন কোনো কিছুই তাদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেনি।
স্বাধীনতার মানেটাও আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। ‘আমাদের দেশ স্বাধীন, আমরা যা খুশি তা-ই করতে পারি’ এমন মনোভাবের মানুষও সমাজে আছে। যদিও স্বাধীনতা মানে অন্য কিছু। স্বাধীনতা মানে অরাজকতা নয়। স্বাধীনতা মানে শুধু ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ নয়। স্বাধীনতা মানে দেশপ্রেম, দেশকে মারূপে পরিগণিত করা, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার, আমার দেশ।’ স্বাধীনতা মানে এক দিনের ছুটি নয়, নয় পতাকা উত্তোলন, নয় মোড়ে মোড়ে উচ্চ স্বরে মাইক বাজানো। এই মুহূর্তে স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পেরিয়ে আমরা কি স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি?
যৌন হয়রানির প্রতিকার না পেয়ে আত্মমর্যাদার জন্য যদি কাউকে আত্মহত্যা করতে হয়, ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি পাওয়া না যায়, অথবা প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি কারও দয়াদাক্ষিণ্যের ওপরে নির্ভর করতে থাকে, তবে কি আমরা স্বাধীন?
স্বাধীনতার অর্থ দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানো; দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বসবাসযোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সঙ্গে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞানবিষয়ক ধ্যানধারণার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করা, স্বাধীনতার অর্থ দেশের প্রতি আরও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া।
স্বাধীনতার অর্থ এটা নয় যে নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে সিঁড়ি বানিয়ে ক্ষমতা দখল আর সিংহাসনে বসে তার অপব্যবহার করা। স্বাধীনতার মানে এটাও নয় যে বিদেশিশক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ও ক্ষমতায় থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, বাংলাদেশ আজ বৃহত্তর পুঁজিবাদী দেশগুলোর অবাধ বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের দেউলিয়া রাজনৈতিক শক্তিই তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে, নিজের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের আজ বড়ই অভাব।
দেশ উন্নত হচ্ছে—‘আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে’—মেট্রোরেল হয়েছে, নতুন বোয়িং কেনা হয়েছে, মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে—উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমার দেশ। কিন্তু আসল অস্ত্রটি সঠিকভাবে বানানো গেল না। সব জনগণকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া গেল না। দেশের আসল ‘অস্ত্র’ সমৃদ্ধ করায় আমাদের মনোযোগ নেই। শুধু অশিক্ষার আগুনে বাতাস দিলেই দেশ জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে। কোনো অস্ত্রই কাজে আসবে না। অশিক্ষার কারণে আরও বেশি করে জন্ম নেবে দেশের মধ্যে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের চাহিদা, যা মেটাতে প্রচুর দাম দিয়ে কেনা অস্ত্র বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আগেই দেশের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।
স্বাধীনতার সঠিক অর্থ একমাত্র হতে পারে দেশের জনগণের ন্যূনতম সঠিক শিক্ষাদানের অঙ্গীকারে ব্রত হাওয়া। শিক্ষাই পারে সব পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে। অন্ধকারে আলো জ্বালাতে। দেশের জনগণের সুশিক্ষা বিনা সব স্বাধীনতাই পরাধীনতার শিকলে বাঁধা।
বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন সব থেকে বেশি। তাঁদের জানা বা অনুভব করা উচিত যে ‘দেশের ঊর্ধ্বে রাজনীতি নয়, রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশ’। নির্বাচন যায়, আবার ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু যে মানুষটা একবার দেশের সীমা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে, সে আর কোনো দিন ফিরে আসে না। প্রতিনিয়ত মাইগ্রেশন হচ্ছে। ব্রেইনড্রেইন হচ্ছে।
দেশে একধরনের বেপরোয়া জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। এরা বেকার। পেশিশক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের টার্গেট করছে। তাদের সঙ্গে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল আছে। এরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজি করে, বনভূমি উজাড় করে, বালু উত্তোলন করে, হাট-বাজার-রাস্তা-সাঁকো, খেয়াঘাট দখল করে, ইজারা নেয়। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রথম উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি একটা দায়িত্ববোধের কথা সর্বদা মনে করিয়ে দেওয়া।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবা উচিত—দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যদি সঠিক নেতৃত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের সবার উচিত দেশের স্বার্থে ও নিজেদের স্বার্থে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা। সবাই যদি চিন্তা করি রাজনীতি খারাপ, তার ফলস্বরূপ দেশের সব নাগরিকও খারাপ থাকতে বাধ্য। দেশের নাগরিকেরা ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ভালো নেতার দরকার। ভালো ব্যক্তিত্ব বিনা ভালো নেতৃত্বের জন্ম হয় না। পচা পাঁকে বাস করে পঙ্কজ সর্বদা হওয়া যায় না।
তাই প্রথমে উচিত পচা পাঁক সরিয়ে ভালো সরোবর তৈরি করা, তাতে নিশ্চিত পদ্ম ফুটবে। তেমনি দেশের শিক্ষিত নাগরিক সমাজের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণ করা। নচেৎ দেশের ও দশের উন্নতি সম্ভব নয়। কোনো মানুষই রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়, রাজনীতি দেশের ঊর্ধ্বে নয়। দেশ রাজনীতি বিনা নয়। অতএব সব উন্নতির, সব স্বাধীনতার, সব রাজনীতির সঠিক নেতৃত্বের দরকার, সঠিক নাগরিক দরকার, শিক্ষার দরকার, শ্রদ্ধার দরকার, ত্যাগের দরকার, আদর্শের দরকার, দায়িত্ববোধের দরকার।
রাজনীতিতে যে সুবিধাবাদ, দেশপ্রেমবর্জিত আখের গোছানোর যে প্রবণতা আমাদের দেশে চলছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো যে সেই পরিবর্তন করবে না তা আমরা স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে বুঝে ফেলেছি।
অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত জনগণের অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক কুসংস্কারকে মূলধন করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি কখনোই দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারে না—এ সত্য বোঝা এবং বোঝানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
প্রয়োজন নতুন চেতনা, নতুন সংগঠন, নতুন কর্মী বাহিনী। অভ্যস্ত স্লোগান, চেনা রাজনীতিকদের বুলি আমাদের কাছে ক্লিশে হয়ে গেছে। এখন বিকল্পের অন্বেষণ করতে হবে। কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্পের অন্বেষণ ও বিকল্প সৃষ্টিই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অঙ্গীকার।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের প্রাপ্য অধিকার তো দেয়ইনি, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা বাংলাকেও কেড়ে নিতে চেয়েছে। চাকরিবাকরি, শিল্পকারখানায় সুযোগ-সুবিধা সব ছিল তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য। আমরা ছিলাম চরম বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার। তারা যখন আমাদের রাজনৈতিক অধিকারও পুরোপুরি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করল, বিরোধ তখনই চরম আকার ধারণ করল—যা রূপ নিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ যার শুরু, ১৬ ডিসেম্বর যার শেষ।
২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সম্মুখযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাস লড়াই করার পর ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ লাভ করি। স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য আমরা অনেক সময় উপলব্ধি করি না। একটা মামুলি ছুটির দিন হিসেবে কাটিয়ে দিই। যদিও এই দিবসটির মূল্য বাঙালি জাতির কাছে অপরিসীম। বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হচ্ছে এই স্বাধীনতা। যদিও স্বাধীনতার লড়াই শেষ হয়ে যায়নি।
আমাদের স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ছিল অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বশাসন; স্বশাসনের মধ্য দিয়ে একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেখানে ধর্ম-বর্ণ-জাতি-গোষ্ঠীনির্বিশেষে সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে কারও প্রতি কোনো রকম বৈষম্য করা হবে না। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের স্বাধীনতার সেই আকাঙ্ক্ষা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ক্ষমতায় যারাই গেছে, তারা গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে বিসর্জন দিয়ে ক্ষুদ্র দল ও গোষ্ঠী স্বার্থে গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। এতে করে দেশের সব মানুষের জন্য অন্ন-বস্ত্র-শিক্ষা-চিকিৎসা-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যায়নি।
একশ্রেণির মানুষ ফুলেফেঁপে বড়লোক হয়েছে। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু মানুষেরা চরম বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। থানা-পুলিশ-আইন-প্রশাসন কোনো কিছুই তাদের পক্ষে ভূমিকা পালন করেনি।
স্বাধীনতার মানেটাও আমাদের দেশের অনেক মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। ‘আমাদের দেশ স্বাধীন, আমরা যা খুশি তা-ই করতে পারি’ এমন মনোভাবের মানুষও সমাজে আছে। যদিও স্বাধীনতা মানে অন্য কিছু। স্বাধীনতা মানে অরাজকতা নয়। স্বাধীনতা মানে শুধু ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ নয়। স্বাধীনতা মানে দেশপ্রেম, দেশকে মারূপে পরিগণিত করা, ‘বঙ্গ আমার জননী আমার ধাত্রী আমার, আমার দেশ।’ স্বাধীনতা মানে এক দিনের ছুটি নয়, নয় পতাকা উত্তোলন, নয় মোড়ে মোড়ে উচ্চ স্বরে মাইক বাজানো। এই মুহূর্তে স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছর পেরিয়ে আমরা কি স্বাধীনতার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি?
যৌন হয়রানির প্রতিকার না পেয়ে আত্মমর্যাদার জন্য যদি কাউকে আত্মহত্যা করতে হয়, ন্যূনতম বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি পাওয়া না যায়, অথবা প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি কারও দয়াদাক্ষিণ্যের ওপরে নির্ভর করতে থাকে, তবে কি আমরা স্বাধীন?
স্বাধীনতার অর্থ দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানো; দেশের মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বসবাসযোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সঙ্গে কর্মসংস্থান ও বিজ্ঞানবিষয়ক ধ্যানধারণার দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণ করা, স্বাধীনতার অর্থ দেশের প্রতি আরও কর্তব্যপরায়ণ হওয়া।
স্বাধীনতার অর্থ এটা নয় যে নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে সিঁড়ি বানিয়ে ক্ষমতা দখল আর সিংহাসনে বসে তার অপব্যবহার করা। স্বাধীনতার মানে এটাও নয় যে বিদেশিশক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার ও ক্ষমতায় থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, বাংলাদেশ আজ বৃহত্তর পুঁজিবাদী দেশগুলোর অবাধ বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের দেউলিয়া রাজনৈতিক শক্তিই তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। মর্যাদা ও সম্মান নিয়ে, নিজের শক্তি-সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো শক্ত মেরুদণ্ডসম্পন্ন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের আজ বড়ই অভাব।
দেশ উন্নত হচ্ছে—‘আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে’—মেট্রোরেল হয়েছে, নতুন বোয়িং কেনা হয়েছে, মহাশূন্যে স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহু লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে—উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে আমার দেশ। কিন্তু আসল অস্ত্রটি সঠিকভাবে বানানো গেল না। সব জনগণকে সঠিক শিক্ষা দেওয়া গেল না। দেশের আসল ‘অস্ত্র’ সমৃদ্ধ করায় আমাদের মনোযোগ নেই। শুধু অশিক্ষার আগুনে বাতাস দিলেই দেশ জ্বলে ছারখার হয়ে যাবে। কোনো অস্ত্রই কাজে আসবে না। অশিক্ষার কারণে আরও বেশি করে জন্ম নেবে দেশের মধ্যে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের চাহিদা, যা মেটাতে প্রচুর দাম দিয়ে কেনা অস্ত্র বিদেশি শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার আগেই দেশের মধ্যে বিলীন হয়ে যাবে।
স্বাধীনতার সঠিক অর্থ একমাত্র হতে পারে দেশের জনগণের ন্যূনতম সঠিক শিক্ষাদানের অঙ্গীকারে ব্রত হাওয়া। শিক্ষাই পারে সব পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে। অন্ধকারে আলো জ্বালাতে। দেশের জনগণের সুশিক্ষা বিনা সব স্বাধীনতাই পরাধীনতার শিকলে বাঁধা।
বর্তমানে রাজনৈতিক নেতাদের ন্যূনতম শিক্ষার প্রয়োজন সব থেকে বেশি। তাঁদের জানা বা অনুভব করা উচিত যে ‘দেশের ঊর্ধ্বে রাজনীতি নয়, রাজনীতির ঊর্ধ্বে দেশ’। নির্বাচন যায়, আবার ফিরে ফিরে আসে, কিন্তু যে মানুষটা একবার দেশের সীমা ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে, সে আর কোনো দিন ফিরে আসে না। প্রতিনিয়ত মাইগ্রেশন হচ্ছে। ব্রেইনড্রেইন হচ্ছে।
দেশে একধরনের বেপরোয়া জনগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। এরা বেকার। পেশিশক্তি আছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের টার্গেট করছে। তাদের সঙ্গে কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল আছে। এরা রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজি করে, বনভূমি উজাড় করে, বালু উত্তোলন করে, হাট-বাজার-রাস্তা-সাঁকো, খেয়াঘাট দখল করে, ইজারা নেয়। স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রথম উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণের সঙ্গে সঙ্গে দেশের প্রতি একটা দায়িত্ববোধের কথা সর্বদা মনে করিয়ে দেওয়া।
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের ভাবা উচিত—দেশের উন্নতি তখনই সম্ভব যদি সঠিক নেতৃত্বের সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের সবার উচিত দেশের স্বার্থে ও নিজেদের স্বার্থে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা। সবাই যদি চিন্তা করি রাজনীতি খারাপ, তার ফলস্বরূপ দেশের সব নাগরিকও খারাপ থাকতে বাধ্য। দেশের নাগরিকেরা ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। নিজেদের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে ভালো নেতার দরকার। ভালো ব্যক্তিত্ব বিনা ভালো নেতৃত্বের জন্ম হয় না। পচা পাঁকে বাস করে পঙ্কজ সর্বদা হওয়া যায় না।
তাই প্রথমে উচিত পচা পাঁক সরিয়ে ভালো সরোবর তৈরি করা, তাতে নিশ্চিত পদ্ম ফুটবে। তেমনি দেশের শিক্ষিত নাগরিক সমাজের উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিশুদ্ধকরণ করা। নচেৎ দেশের ও দশের উন্নতি সম্ভব নয়। কোনো মানুষই রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়, রাজনীতি দেশের ঊর্ধ্বে নয়। দেশ রাজনীতি বিনা নয়। অতএব সব উন্নতির, সব স্বাধীনতার, সব রাজনীতির সঠিক নেতৃত্বের দরকার, সঠিক নাগরিক দরকার, শিক্ষার দরকার, শ্রদ্ধার দরকার, ত্যাগের দরকার, আদর্শের দরকার, দায়িত্ববোধের দরকার।
রাজনীতিতে যে সুবিধাবাদ, দেশপ্রেমবর্জিত আখের গোছানোর যে প্রবণতা আমাদের দেশে চলছে, এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাইলে অবশ্যই বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো যে সেই পরিবর্তন করবে না তা আমরা স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে বুঝে ফেলেছি।
অশিক্ষিত, কুশিক্ষিত জনগণের অন্ধবিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক কুসংস্কারকে মূলধন করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং ক্ষমতায় টিকে থাকার রাজনীতি কখনোই দেশের কল্যাণ সাধন করতে পারে না—এ সত্য বোঝা এবং বোঝানো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
প্রয়োজন নতুন চেতনা, নতুন সংগঠন, নতুন কর্মী বাহিনী। অভ্যস্ত স্লোগান, চেনা রাজনীতিকদের বুলি আমাদের কাছে ক্লিশে হয়ে গেছে। এখন বিকল্পের অন্বেষণ করতে হবে। কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্পের অন্বেষণ ও বিকল্প সৃষ্টিই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের প্রধান অঙ্গীকার।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
২৬ মার্চ ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
২৬ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
২৬ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

স্বাধীনতার গুরুত্ব কী, সেটা খুব ভালোভাবে জানে ফিলিস্তিনি জনগণ। পরিপূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়ার কারণে তারা যুগের পর যুগ ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকার তো নেই-ই, জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও নেই। ১৯৭১ সালের আগে আমরাও পরাধীন ছিলাম।
২৬ মার্চ ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫