ড. মইনুল ইসলাম

সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরকা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপির গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছেন। ওই চেলা-চামুণ্ডাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিসহকারে অশ্রাব্য গালিগালাজে অতিষ্ঠ হয়ে ওই তরুণীর উপর্যুপরি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে সোচ্চার প্রতিবাদের ভিডিওটি শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে কয়েকজন শিক্ষকের হস্তক্ষেপে ওই তরুণী ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সরে যেতে পারার দৃশ্যটি দেখা গেলেও এ ঘটনাটি ভারতের সাম্প্রতিককালের ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও সংঘাতকে বিশ্বের সামনে নগ্নভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছে। ‘হিজাব আমার অধিকার’ ব্যানার নিয়ে ভারতের নানা স্থানে মুসলিম নারী ও তাঁদের সমর্থকেরা মিছিল করে চলেছেন। তাঁদের সমর্থনে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মিছিল-মিটিং হচ্ছে। খোদ মার্কিন প্রশাসন এই ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক মিত্র ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে হিজাব পরিধানের অধিকার মুসলিম নারীদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। (ভারত সরকার অবশ্য তুড়ি মেরে মার্কিন প্রতিবাদকে উড়িয়ে দিয়েছে)। ভারতের খ্যাতিমান কয়েকজন ব্যক্তিত্ব হিজাব পরিধান করা না-করার ব্যক্তিগত অধিকারকে সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন। ধর্মকে অন্ধভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার একটি সমাজকে কতখানি গোমরাহির অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে, তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ হয়ে উঠেছে ভারত।
২০১৪ সালে ‘গুজরাট দাঙ্গার মহারথী’ বিজেপির নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তাঁর উগ্র মুসলিমবিরোধী অপরাজনীতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় জনগণ ক্রমেই সাম্প্রদায়িকতার মহাগহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। এখন হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন যে প্রায় এক দশক আগে ভারতের গোধারা নামক স্থানে একটি ট্রেনের যাত্রীরা একদল আততায়ীর অগ্নি-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর বিনা তদন্তে ওই ঘটনার জন্য গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলিম সম্প্রদায়কে সরাসরি দায়ী করে টেলিভিশন-ক্যামেরার সামনে চরম উসকানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। ওই উসকানির সঙ্গে সঙ্গে গুজরাটে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে গিয়েছিল, যে দাঙ্গায় আনুমানিক দুই হাজার মুসলিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে মোদি চোখ রাঙিয়ে বলেছিলেন, ‘এই আক্রমণের জন্য তাদের চরম মূল্য দিতেই হবে।’ এভাবে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দাঙ্গা উসকে দেওয়ায় কংগ্রেস আমলে মোদির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলেও ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিজেপি-নিয়োজিত বিচারপতিদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বপূর্ণ রায়ে মোদিকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে প্রধানত ওই উসকানিদাতার ভূমিকার জন্যই ভারতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদি একজন সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে অন্যান্য নেতাকে পেছনে ফেলে দলটির প্রধান নেতার আসনে উঠে আসেন। তিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদকে বিজেপির রাজনীতির মূল আদর্শে পরিণত করে দুই বছরের মধ্যেই লোকসভার নির্বাচনে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন জোটকে হারিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদটি দখল করে নেন। ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ যে কত ঠুনকো, সেটা বিজেপির এহেন নাটকীয় উত্থান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বলতে গেলে ২০০২ সালের ওই দাঙ্গার পর থেকে দুই দশক ধরে ভারতীয় রাজনীতি মোদি এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদের আফিমের মৌতাতে মশগুল রয়েছে। বিজেপির আদর্শিক মূল সংগঠন আরএসএসের গেরুয়া-উত্তরীয়ধারী গুন্ডারা ‘সিভিল আর্মি’র ঢংয়ে লাঠিমিছিল করে ভারতের বেশির ভাগ শহরে এখন মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করছে এবং স্লোগান দিতে অস্বীকার করলে লাঠিপেটা করে চলেছে। কর্ণাটকের এহেন একটি মিছিলের সামনে পড়ে যাওয়ায় ওই তরুণীকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল।
পাঠকদের হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনে জিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, কিন্তু ২০১৪-১৯ সালের পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁর জনপ্রিয়তায় মোটেও ভাটার টান পরিলক্ষিত হয়নি; বরং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি আরও বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বিজেপি তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডাকে কোনো রাখঢাক ছাড়াই সামনে নিয়ে এসেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদি সরকার একের পর এক এই হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করে চলেছে; যার মধ্যে ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনশিপ (এনআরসি) আইন পাস এবং সর্বশেষ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) পাস গোটা ভারতে এবং বিশ্বেও প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারতে ওই সময় বড় বড় নগরীর রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে সিএএ পাসের বিরুদ্ধে লাখ লাখ প্রতিবাদকারীর মিছিলে-স্লোগানে, যাতে নিহত হয়েছে প্রায় ২০ জন মানুষ।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে যেভাবে মুসলিমদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অন্য সব ধর্মের অনুসারীদের ভারতীয় নাগরিক হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা যে চরম বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য সাম্প্রদায়িকতা, সেটা খোদ জাতিসংঘকেও ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু মোদি পুরোপুরি নির্বিকার। কারণ, মোদি বুঝতে পেরেছেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী চরম-দক্ষিণপন্থী রাজনীতির আফিম এখন ভারতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। অতএব আগামী কয়েক বছরের নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ের সম্ভাবনা এই আফিমের মৌতাতে বাড়বে বৈ কমবে না। ভারতে সাধারণ হিন্দু জনগণের মুসলিমবিদ্বেষকে সুপরিকল্পিতভাবে উসকে দিয়ে নরেন্দ্র মোদি ভারতের নব্য জনগণমন অধিনায়ক বনে গেছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের বেলাগাম গলাবাজি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর কথিত অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের অর্থনীতি ও সমাজকে ‘উইপোকার’ মতো কুরে কুরে খাচ্ছে বলে যত্রতত্র গালমন্দ করে বেড়াচ্ছেন। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যুটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে অত্যন্ত খারাপভাবে ধরা খেয়ে গেছেন নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি নির্বাচনে গোহারা হেরে গেছে। কিন্তু এর আগে আসামে অবৈধ বাংলাদেশিদের লাথি মেরে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার প্রোপাগান্ডা ঠিকই বিজেপিকে নির্বাচনী বিজয় এনে দিয়েছিল। ত্রিপুরায়ও সিপিএমকে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়েছে। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর জন্য মোদি এবং তাঁর চেলা-চামুণ্ডারা ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাস পর্যন্ত বদলে দিচ্ছেন, যেখানে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু এবং কংগ্রেসের পরিবর্তে সাভারকার এবং বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘প্রকৃত হিরো’ বানানোর প্রয়াস সামনে চলে এসেছে।
মোদির কট্টর মুসলিম-বিরোধিতা ক্রমেই সারা বিশ্বে মুসলিম সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলোকে চাঙা করে তুলছে; বিশেষ করে ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব বাড়ার প্রবল প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেহেতু পারতপক্ষে ভারতবিরোধী অবস্থান নেয় না, তাই জনগণের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ আওয়ামীবিরোধী, ভারতবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থী বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসাকে উপলক্ষ করে হেফাজতে ইসলামের লেবাসধারী সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস আক্রমণ চালিয়ে বেধড়ক ভাঙচুর চালায় এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর প্রয়াস পায়।
পুলিশ ও র্যাব তাদের দমনে বেশ কয়েক স্থানে গুলি চালালে ১২ জন দাঙ্গাকারীর প্রাণহানি ঘটে। এর কিছুদিন পর কুমিল্লায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে রাতের আঁধারে হনুমানের মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে আসার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ওই মণ্ডপে ভাঙচুর হয়। একে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ভাঙচুর এবং হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চলে। অতএব স্বীকার করতেই হবে, ২০১৪ সাল থেকে মোদি এবং বিজেপি ভারতে তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল দলগুলোর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, যা দেশের রাজনীতিতে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
ড. মইনুল ইসলাম: অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরকা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপির গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছেন। ওই চেলা-চামুণ্ডাদের ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিসহকারে অশ্রাব্য গালিগালাজে অতিষ্ঠ হয়ে ওই তরুণীর উপর্যুপরি ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনিতে সোচ্চার প্রতিবাদের ভিডিওটি শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভিডিওতে কয়েকজন শিক্ষকের হস্তক্ষেপে ওই তরুণী ঘটনাস্থল থেকে নিরাপদে সরে যেতে পারার দৃশ্যটি দেখা গেলেও এ ঘটনাটি ভারতের সাম্প্রতিককালের ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও সংঘাতকে বিশ্বের সামনে নগ্নভাবে উন্মোচিত করে দিয়েছে। ‘হিজাব আমার অধিকার’ ব্যানার নিয়ে ভারতের নানা স্থানে মুসলিম নারী ও তাঁদের সমর্থকেরা মিছিল করে চলেছেন। তাঁদের সমর্থনে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মিছিল-মিটিং হচ্ছে। খোদ মার্কিন প্রশাসন এই ইস্যুতে তাদের রাজনৈতিক মিত্র ভারতকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে হিজাব পরিধানের অধিকার মুসলিম নারীদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। (ভারত সরকার অবশ্য তুড়ি মেরে মার্কিন প্রতিবাদকে উড়িয়ে দিয়েছে)। ভারতের খ্যাতিমান কয়েকজন ব্যক্তিত্ব হিজাব পরিধান করা না-করার ব্যক্তিগত অধিকারকে সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছেন। ধর্মকে অন্ধভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহার একটি সমাজকে কতখানি গোমরাহির অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে, তারই প্রত্যক্ষ উদাহরণ হয়ে উঠেছে ভারত।
২০১৪ সালে ‘গুজরাট দাঙ্গার মহারথী’ বিজেপির নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তাঁর উগ্র মুসলিমবিরোধী অপরাজনীতির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ভারতীয় জনগণ ক্রমেই সাম্প্রদায়িকতার মহাগহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে। এখন হয়তো অনেকেই ভুলে গেছেন যে প্রায় এক দশক আগে ভারতের গোধারা নামক স্থানে একটি ট্রেনের যাত্রীরা একদল আততায়ীর অগ্নি-সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করার পর বিনা তদন্তে ওই ঘটনার জন্য গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলিম সম্প্রদায়কে সরাসরি দায়ী করে টেলিভিশন-ক্যামেরার সামনে চরম উসকানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। ওই উসকানির সঙ্গে সঙ্গে গুজরাটে মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা শুরু হয়ে গিয়েছিল, যে দাঙ্গায় আনুমানিক দুই হাজার মুসলিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে মোদি চোখ রাঙিয়ে বলেছিলেন, ‘এই আক্রমণের জন্য তাদের চরম মূল্য দিতেই হবে।’ এভাবে একজন মুখ্যমন্ত্রীর দাঙ্গা উসকে দেওয়ায় কংগ্রেস আমলে মোদির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হলেও ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের বিজেপি-নিয়োজিত বিচারপতিদের নির্লজ্জ পক্ষপাতিত্বপূর্ণ রায়ে মোদিকে অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছিল। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে প্রধানত ওই উসকানিদাতার ভূমিকার জন্যই ভারতীয় রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদি একজন সর্বভারতীয় রাজনৈতিক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে অন্যান্য নেতাকে পেছনে ফেলে দলটির প্রধান নেতার আসনে উঠে আসেন। তিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদকে বিজেপির রাজনীতির মূল আদর্শে পরিণত করে দুই বছরের মধ্যেই লোকসভার নির্বাচনে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন জোটকে হারিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদটি দখল করে নেন। ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ যে কত ঠুনকো, সেটা বিজেপির এহেন নাটকীয় উত্থান চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বলতে গেলে ২০০২ সালের ওই দাঙ্গার পর থেকে দুই দশক ধরে ভারতীয় রাজনীতি মোদি এবং বিজেপির হিন্দুত্ববাদের আফিমের মৌতাতে মশগুল রয়েছে। বিজেপির আদর্শিক মূল সংগঠন আরএসএসের গেরুয়া-উত্তরীয়ধারী গুন্ডারা ‘সিভিল আর্মি’র ঢংয়ে লাঠিমিছিল করে ভারতের বেশির ভাগ শহরে এখন মুসলিম সম্প্রদায়কে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে বাধ্য করছে এবং স্লোগান দিতে অস্বীকার করলে লাঠিপেটা করে চলেছে। কর্ণাটকের এহেন একটি মিছিলের সামনে পড়ে যাওয়ায় ওই তরুণীকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছিল।
পাঠকদের হয়তো মনে আছে, ২০১৪ সালে যখন নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনে জিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়ে বক্তব্য দিয়েছিলেন, কিন্তু ২০১৪-১৯ সালের পাঁচ বছরের মেয়াদে তাঁর জনপ্রিয়তায় মোটেও ভাটার টান পরিলক্ষিত হয়নি; বরং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি আরও বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুনর্নির্বাচিত হয়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে বিজেপি তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডাকে কোনো রাখঢাক ছাড়াই সামনে নিয়ে এসেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে মোদি সরকার একের পর এক এই হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়িত করে চলেছে; যার মধ্যে ভারতীয় সংবিধানে প্রদত্ত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিলোপ, ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনশিপ (এনআরসি) আইন পাস এবং সর্বশেষ সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) পাস গোটা ভারতে এবং বিশ্বেও প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারতে ওই সময় বড় বড় নগরীর রাজপথ প্রকম্পিত হয়েছে সিএএ পাসের বিরুদ্ধে লাখ লাখ প্রতিবাদকারীর মিছিলে-স্লোগানে, যাতে নিহত হয়েছে প্রায় ২০ জন মানুষ।
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টে যেভাবে মুসলিমদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশকারী অন্য সব ধর্মের অনুসারীদের ভারতীয় নাগরিক হওয়ার বিশেষ সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা যে চরম বৈষম্যমূলক ও অগ্রহণযোগ্য সাম্প্রদায়িকতা, সেটা খোদ জাতিসংঘকেও ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু মোদি পুরোপুরি নির্বিকার। কারণ, মোদি বুঝতে পেরেছেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী চরম-দক্ষিণপন্থী রাজনীতির আফিম এখন ভারতীয়দের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। অতএব আগামী কয়েক বছরের নির্বাচনে বিজেপির বিজয়ের সম্ভাবনা এই আফিমের মৌতাতে বাড়বে বৈ কমবে না। ভারতে সাধারণ হিন্দু জনগণের মুসলিমবিদ্বেষকে সুপরিকল্পিতভাবে উসকে দিয়ে নরেন্দ্র মোদি ভারতের নব্য জনগণমন অধিনায়ক বনে গেছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতাদের বেলাগাম গলাবাজি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর কথিত অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা ভারতের অর্থনীতি ও সমাজকে ‘উইপোকার’ মতো কুরে কুরে খাচ্ছে বলে যত্রতত্র গালমন্দ করে বেড়াচ্ছেন। অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ইস্যুটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে গিয়ে অত্যন্ত খারাপভাবে ধরা খেয়ে গেছেন নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি নির্বাচনে গোহারা হেরে গেছে। কিন্তু এর আগে আসামে অবৈধ বাংলাদেশিদের লাথি মেরে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার প্রোপাগান্ডা ঠিকই বিজেপিকে নির্বাচনী বিজয় এনে দিয়েছিল। ত্রিপুরায়ও সিপিএমকে হারিয়ে বিজেপি ক্ষমতাসীন হয়েছে। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানানোর জন্য মোদি এবং তাঁর চেলা-চামুণ্ডারা ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাস পর্যন্ত বদলে দিচ্ছেন, যেখানে মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু এবং কংগ্রেসের পরিবর্তে সাভারকার এবং বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘প্রকৃত হিরো’ বানানোর প্রয়াস সামনে চলে এসেছে।
মোদির কট্টর মুসলিম-বিরোধিতা ক্রমেই সারা বিশ্বে মুসলিম সাম্প্রদায়িক অপশক্তিগুলোকে চাঙা করে তুলছে; বিশেষ করে ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের তাণ্ডব বাড়ার প্রবল প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যেহেতু পারতপক্ষে ভারতবিরোধী অবস্থান নেয় না, তাই জনগণের একটি ক্রমবর্ধমান অংশ আওয়ামীবিরোধী, ভারতবিরোধী ও পাকিস্তানপন্থী বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগ দিতে বাংলাদেশ সফরে আসাকে উপলক্ষ করে হেফাজতে ইসলামের লেবাসধারী সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস আক্রমণ চালিয়ে বেধড়ক ভাঙচুর চালায় এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর প্রয়াস পায়।
পুলিশ ও র্যাব তাদের দমনে বেশ কয়েক স্থানে গুলি চালালে ১২ জন দাঙ্গাকারীর প্রাণহানি ঘটে। এর কিছুদিন পর কুমিল্লায় দুর্গাপূজার মণ্ডপে রাতের আঁধারে হনুমানের মূর্তির কোলে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে আসার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ওই মণ্ডপে ভাঙচুর হয়। একে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির ভাঙচুর এবং হিন্দুদের বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট চলে। অতএব স্বীকার করতেই হবে, ২০১৪ সাল থেকে মোদি এবং বিজেপি ভারতে তাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের কারণে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল দলগুলোর পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে, যা দেশের রাজনীতিতে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
ড. মইনুল ইসলাম: অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরকা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপির গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরকা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপির গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরকা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপির গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সম্প্রতি ভারতের কর্ণাটকে একজন মুসলিম কলেজ-শিক্ষার্থী তরুণী বোরকা ও হিজাব পরিধানের কারণে বিজেপির গেরুয়াধারী আক্রমণ-উদ্যত সমর্থকদের সামনে পড়ে নাকাল হয়েছেন।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫