
আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলল। এই নির্বাচনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হারুন-অর-রশিদ: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের যে নির্বাচন হয়েছে, এই নির্বাচন তার চেয়ে অনেক বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। কিছু যে বিচ্যুতি ছিল না, তা কিন্তু নয়। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের নির্বাচন করা ছিল সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটো পরস্পরবিরোধী আদর্শিক ধারায় বিভক্ত। কাজেই সব দলের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপার ছিল। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বলব, অপেক্ষাকৃত ভালো নির্বাচন হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, একজনের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন। এবার এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচনটা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ ছিল না, নির্বাচনের আগে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতিবেশ, পরিবেশ যা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি, কড়া নজর, নানা ধরনের হুমকি ছিল। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা হবে হযবরল ধরনের। কিন্তু সে ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও অংশগ্রহণমূলক হতো। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জোট নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিএনপি কিছুটা চেষ্টাও করেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।
এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই পরাজিত হয়েছেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এটা যদি সাজানো-পাতানো নির্বাচন হতো, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না। সেই সঙ্গে তিনজন প্রতিমন্ত্রীও ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তবে পশ্চিমা ধাঁচে নির্বাচন করতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনসহ অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে এই বিভক্তি কি কোনো প্রভাব ফেলবে?
হারুন-অর-রশিদ: আওয়ামী লীগ হলো প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের ধারণক্ষমতাও অধিক। এবারের নির্বাচনে দলের নীতিনির্ধারকেরা একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসেন। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে তো ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন না।
এবার যে ৪১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয়েছিল, এর মূলে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি ছিল। দল থেকে বিভিন্ন আসনে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করার কারণে কিন্তু এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। যদিও দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে টানাপোড়েন, বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।এখন দল এসব বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এই বিরূপ উদ্ভূত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কাঠামো ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য নিঃসন্দেহে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।
তবে আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংকট—একটা গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাবিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক, দায়িত্বশীল বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। আমাদের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হলো এটি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরির ক্ষেত্রে যাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা স্পিকারের অনুমতিক্রমে একটা গ্রুপ গঠন করতে পারতেন। তাঁরা যদি বলতেন, আমরা এখন এ দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব।
স্পিকার অনুমতি দিলে তাঁরা এটা করতে পারতেন। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হচ্ছে। কিন্তু তাদের কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তাই বাংলাদেশের দূরবর্তী ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি নিয়ে যদি বিষয়টিকে বিবেচনা করা হতো, স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ীরা যদি দাঁড়াতে পারতেন, তাহলে আমাদের দেশের, আওয়ামী লীগের জন্য এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধারার পক্ষে যেত। এর অর্থ দাঁড়ায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেতৃত্ব তাঁদেরই একটা বিরোধী দল তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
আর বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির আদর্শিক, কাঠামোগত, কর্মসূচি ও পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে এই দল যত দিন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় আছে, তারা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে না। কাজেই বিএনপিকে ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগকে ফেস করতেই হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনি যেসব কথা বললেন, তার সূত্র ধরে বলি, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের শাসনে অনেক ক্ষেত্রে বিচ্যুত হয়েছে। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। আপনি কী বলবেন?
হারুন-অর-রশিদ: কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, তা আমার জানা নেই। তাঁরা বিশেষজ্ঞ না বিশেষভাবে অজ্ঞ, এটাও আমার বিশেষভাবে জানার ইচ্ছা। আওয়ামী লীগ মানেই হলো জনগণের দল এবং তাদের ইতিহাস হলো দীর্ঘ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করেছিলেন। এটা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। সেই সময়ের উদ্ভূত চরম অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সদ্য প্রস্ফুটিত একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিছু দল ও ব্যক্তি। যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল, গোপন পার্টিগুলো, চরম চীনপন্থী বাম দল, মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন পার্টি, জাসদ, হক-তোয়াহা, মতিন ও সিরাজ শিকদারের পার্টি ইত্যাদি। এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা বাধ্য করেছিল সদ্য শিশু একটি রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ওই পদক্ষেপ নিতে। অন্যভাবে বঙ্গবন্ধু তো বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তাই আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনের দিকে চলে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে কেন এটাকে একদলীয় শাসন মনে হবে? তার কারণ এখানে এখন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি নেই। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে কি গণতন্ত্রচর্চা বন্ধ থাকবে এবং সংবিধান স্থগিত থাকবে? অর্থাৎ পুরো জাতি কি জিম্মি হয়ে থাকবে? এটা তো হতে পারে না। সামনে তো পথ চলতে হবে। এ জন্য উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামনে আগাতে হবে।
বিএনপি আসুক, তারা দায়িত্বশীল পার্টি হিসেবে আচরণ করুক, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করুক—এভাবে তারা যদি আদর্শগত বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে এবং দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলে তারা একসময় জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাবে। যেহেতু তারা আগেও ক্ষমতায় ছিল। এর আগে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকার কি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচারসহ অর্থনীতির দুর্বিষহ অবস্থা স্বাভাবিক করতে পারবে?
হারুন-অর-রশিদ: বর্তমান নতুন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ কী, সে-সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল আছে। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি সেক্টরকে তারা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাইলাইট করেছে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ—যেটাকে তারা স্মার্ট বাংলাদেশ বলেছে ইত্যাদি।
তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আড়তদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মুনাফাখোরদের প্রয়োজনে জেলে বন্দী করার কথা বলেছেন। কিন্তু শুধু বার্তা দিলে তো হবে না। ধীরস্থিরভাবে বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য পলিসি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, এসব বিষয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তবে সেই সবের সাফল্যের মাত্রা কতটুকু সফল হবে, তা নির্ভর করবে ব্যবস্থা গ্রহণের মাত্রার ওপর।
আজকের পত্রিকা: কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে একটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটতে পারে?
হারুন-অর-রশিদ: প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শকে ধারণ করা, বাংলাদেশকে ধারণ করা, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ সৃষ্টি হয়েছে, এই ভাবনার একটা বিরোধী দল বাংলাদেশে থাকা দরকার। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল হলো বিকল্প সরকার। সেই দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং জনগণের পক্ষে দাবি-দাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা—এ রকম একটা দায়িত্বশীল দল আওয়ামী লীগের বিপরীতে যতক্ষণ পর্যন্ত গড়ে না উঠবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের যে টানাপোড়েন ও সংকট, তা থেকে কোনো মুক্তির পথ দেখছি না। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংকট, গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে যে সংকট, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে সংকট, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্যদের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারগুলো কেন তাদের করতে হয়েছে? তার কারণ একটা দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক, শান্তিকামী, দেশের উন্নয়নপ্রত্যাশী কোনো বিরোধী আমাদের দেশে বর্তমানে নেই।
বিএনপি যে পথে হাঁটছে, সেটা তো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অনুকূল নয়; বরং এর বিপরীত। যে কারণে আজকের সমাজটাও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভাজনের কাঠামো যত দিন থাকবে, তত দিন আসলে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আওয়ামী লীগ ও দেশের স্বার্থে তাদের একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে।
সে জন্য সরকারকে বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি দিয়ে এবং কৌশল অবলম্বন করে একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে। শুধু একক ব্যক্তির জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই হয় না। কাজেই আমাদের জাতিগতভাবে অর্জনকে টেকসই করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদি সফলভাবে না করতে পারি, তাহলে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না।

আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলল। এই নির্বাচনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হারুন-অর-রশিদ: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের যে নির্বাচন হয়েছে, এই নির্বাচন তার চেয়ে অনেক বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। কিছু যে বিচ্যুতি ছিল না, তা কিন্তু নয়। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের নির্বাচন করা ছিল সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটো পরস্পরবিরোধী আদর্শিক ধারায় বিভক্ত। কাজেই সব দলের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপার ছিল। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বলব, অপেক্ষাকৃত ভালো নির্বাচন হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, একজনের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন। এবার এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচনটা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ ছিল না, নির্বাচনের আগে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতিবেশ, পরিবেশ যা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি, কড়া নজর, নানা ধরনের হুমকি ছিল। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা হবে হযবরল ধরনের। কিন্তু সে ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও অংশগ্রহণমূলক হতো। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জোট নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিএনপি কিছুটা চেষ্টাও করেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।
এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই পরাজিত হয়েছেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এটা যদি সাজানো-পাতানো নির্বাচন হতো, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না। সেই সঙ্গে তিনজন প্রতিমন্ত্রীও ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তবে পশ্চিমা ধাঁচে নির্বাচন করতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনসহ অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে এই বিভক্তি কি কোনো প্রভাব ফেলবে?
হারুন-অর-রশিদ: আওয়ামী লীগ হলো প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের ধারণক্ষমতাও অধিক। এবারের নির্বাচনে দলের নীতিনির্ধারকেরা একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসেন। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে তো ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন না।
এবার যে ৪১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয়েছিল, এর মূলে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি ছিল। দল থেকে বিভিন্ন আসনে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করার কারণে কিন্তু এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। যদিও দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে টানাপোড়েন, বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।এখন দল এসব বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এই বিরূপ উদ্ভূত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কাঠামো ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য নিঃসন্দেহে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।
তবে আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংকট—একটা গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাবিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক, দায়িত্বশীল বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। আমাদের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হলো এটি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরির ক্ষেত্রে যাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা স্পিকারের অনুমতিক্রমে একটা গ্রুপ গঠন করতে পারতেন। তাঁরা যদি বলতেন, আমরা এখন এ দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব।
স্পিকার অনুমতি দিলে তাঁরা এটা করতে পারতেন। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হচ্ছে। কিন্তু তাদের কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তাই বাংলাদেশের দূরবর্তী ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি নিয়ে যদি বিষয়টিকে বিবেচনা করা হতো, স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ীরা যদি দাঁড়াতে পারতেন, তাহলে আমাদের দেশের, আওয়ামী লীগের জন্য এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধারার পক্ষে যেত। এর অর্থ দাঁড়ায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেতৃত্ব তাঁদেরই একটা বিরোধী দল তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
আর বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির আদর্শিক, কাঠামোগত, কর্মসূচি ও পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে এই দল যত দিন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় আছে, তারা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে না। কাজেই বিএনপিকে ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগকে ফেস করতেই হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনি যেসব কথা বললেন, তার সূত্র ধরে বলি, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের শাসনে অনেক ক্ষেত্রে বিচ্যুত হয়েছে। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। আপনি কী বলবেন?
হারুন-অর-রশিদ: কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, তা আমার জানা নেই। তাঁরা বিশেষজ্ঞ না বিশেষভাবে অজ্ঞ, এটাও আমার বিশেষভাবে জানার ইচ্ছা। আওয়ামী লীগ মানেই হলো জনগণের দল এবং তাদের ইতিহাস হলো দীর্ঘ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করেছিলেন। এটা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। সেই সময়ের উদ্ভূত চরম অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সদ্য প্রস্ফুটিত একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিছু দল ও ব্যক্তি। যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল, গোপন পার্টিগুলো, চরম চীনপন্থী বাম দল, মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন পার্টি, জাসদ, হক-তোয়াহা, মতিন ও সিরাজ শিকদারের পার্টি ইত্যাদি। এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা বাধ্য করেছিল সদ্য শিশু একটি রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ওই পদক্ষেপ নিতে। অন্যভাবে বঙ্গবন্ধু তো বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তাই আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনের দিকে চলে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে কেন এটাকে একদলীয় শাসন মনে হবে? তার কারণ এখানে এখন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি নেই। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে কি গণতন্ত্রচর্চা বন্ধ থাকবে এবং সংবিধান স্থগিত থাকবে? অর্থাৎ পুরো জাতি কি জিম্মি হয়ে থাকবে? এটা তো হতে পারে না। সামনে তো পথ চলতে হবে। এ জন্য উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামনে আগাতে হবে।
বিএনপি আসুক, তারা দায়িত্বশীল পার্টি হিসেবে আচরণ করুক, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করুক—এভাবে তারা যদি আদর্শগত বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে এবং দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলে তারা একসময় জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাবে। যেহেতু তারা আগেও ক্ষমতায় ছিল। এর আগে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকার কি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচারসহ অর্থনীতির দুর্বিষহ অবস্থা স্বাভাবিক করতে পারবে?
হারুন-অর-রশিদ: বর্তমান নতুন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ কী, সে-সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল আছে। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি সেক্টরকে তারা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাইলাইট করেছে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ—যেটাকে তারা স্মার্ট বাংলাদেশ বলেছে ইত্যাদি।
তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আড়তদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মুনাফাখোরদের প্রয়োজনে জেলে বন্দী করার কথা বলেছেন। কিন্তু শুধু বার্তা দিলে তো হবে না। ধীরস্থিরভাবে বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য পলিসি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, এসব বিষয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তবে সেই সবের সাফল্যের মাত্রা কতটুকু সফল হবে, তা নির্ভর করবে ব্যবস্থা গ্রহণের মাত্রার ওপর।
আজকের পত্রিকা: কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে একটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটতে পারে?
হারুন-অর-রশিদ: প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শকে ধারণ করা, বাংলাদেশকে ধারণ করা, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ সৃষ্টি হয়েছে, এই ভাবনার একটা বিরোধী দল বাংলাদেশে থাকা দরকার। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল হলো বিকল্প সরকার। সেই দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং জনগণের পক্ষে দাবি-দাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা—এ রকম একটা দায়িত্বশীল দল আওয়ামী লীগের বিপরীতে যতক্ষণ পর্যন্ত গড়ে না উঠবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের যে টানাপোড়েন ও সংকট, তা থেকে কোনো মুক্তির পথ দেখছি না। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংকট, গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে যে সংকট, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে সংকট, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্যদের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারগুলো কেন তাদের করতে হয়েছে? তার কারণ একটা দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক, শান্তিকামী, দেশের উন্নয়নপ্রত্যাশী কোনো বিরোধী আমাদের দেশে বর্তমানে নেই।
বিএনপি যে পথে হাঁটছে, সেটা তো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অনুকূল নয়; বরং এর বিপরীত। যে কারণে আজকের সমাজটাও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভাজনের কাঠামো যত দিন থাকবে, তত দিন আসলে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আওয়ামী লীগ ও দেশের স্বার্থে তাদের একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে।
সে জন্য সরকারকে বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি দিয়ে এবং কৌশল অবলম্বন করে একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে। শুধু একক ব্যক্তির জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই হয় না। কাজেই আমাদের জাতিগতভাবে অর্জনকে টেকসই করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদি সফলভাবে না করতে পারি, তাহলে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না।

আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলল। এই নির্বাচনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হারুন-অর-রশিদ: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের যে নির্বাচন হয়েছে, এই নির্বাচন তার চেয়ে অনেক বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। কিছু যে বিচ্যুতি ছিল না, তা কিন্তু নয়। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের নির্বাচন করা ছিল সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটো পরস্পরবিরোধী আদর্শিক ধারায় বিভক্ত। কাজেই সব দলের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপার ছিল। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বলব, অপেক্ষাকৃত ভালো নির্বাচন হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, একজনের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন। এবার এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচনটা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ ছিল না, নির্বাচনের আগে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতিবেশ, পরিবেশ যা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি, কড়া নজর, নানা ধরনের হুমকি ছিল। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা হবে হযবরল ধরনের। কিন্তু সে ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও অংশগ্রহণমূলক হতো। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জোট নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিএনপি কিছুটা চেষ্টাও করেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।
এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই পরাজিত হয়েছেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এটা যদি সাজানো-পাতানো নির্বাচন হতো, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না। সেই সঙ্গে তিনজন প্রতিমন্ত্রীও ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তবে পশ্চিমা ধাঁচে নির্বাচন করতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনসহ অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে এই বিভক্তি কি কোনো প্রভাব ফেলবে?
হারুন-অর-রশিদ: আওয়ামী লীগ হলো প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের ধারণক্ষমতাও অধিক। এবারের নির্বাচনে দলের নীতিনির্ধারকেরা একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসেন। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে তো ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন না।
এবার যে ৪১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয়েছিল, এর মূলে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি ছিল। দল থেকে বিভিন্ন আসনে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করার কারণে কিন্তু এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। যদিও দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে টানাপোড়েন, বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।এখন দল এসব বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এই বিরূপ উদ্ভূত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কাঠামো ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য নিঃসন্দেহে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।
তবে আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংকট—একটা গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাবিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক, দায়িত্বশীল বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। আমাদের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হলো এটি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরির ক্ষেত্রে যাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা স্পিকারের অনুমতিক্রমে একটা গ্রুপ গঠন করতে পারতেন। তাঁরা যদি বলতেন, আমরা এখন এ দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব।
স্পিকার অনুমতি দিলে তাঁরা এটা করতে পারতেন। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হচ্ছে। কিন্তু তাদের কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তাই বাংলাদেশের দূরবর্তী ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি নিয়ে যদি বিষয়টিকে বিবেচনা করা হতো, স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ীরা যদি দাঁড়াতে পারতেন, তাহলে আমাদের দেশের, আওয়ামী লীগের জন্য এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধারার পক্ষে যেত। এর অর্থ দাঁড়ায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেতৃত্ব তাঁদেরই একটা বিরোধী দল তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
আর বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির আদর্শিক, কাঠামোগত, কর্মসূচি ও পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে এই দল যত দিন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় আছে, তারা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে না। কাজেই বিএনপিকে ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগকে ফেস করতেই হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনি যেসব কথা বললেন, তার সূত্র ধরে বলি, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের শাসনে অনেক ক্ষেত্রে বিচ্যুত হয়েছে। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। আপনি কী বলবেন?
হারুন-অর-রশিদ: কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, তা আমার জানা নেই। তাঁরা বিশেষজ্ঞ না বিশেষভাবে অজ্ঞ, এটাও আমার বিশেষভাবে জানার ইচ্ছা। আওয়ামী লীগ মানেই হলো জনগণের দল এবং তাদের ইতিহাস হলো দীর্ঘ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করেছিলেন। এটা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। সেই সময়ের উদ্ভূত চরম অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সদ্য প্রস্ফুটিত একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিছু দল ও ব্যক্তি। যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল, গোপন পার্টিগুলো, চরম চীনপন্থী বাম দল, মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন পার্টি, জাসদ, হক-তোয়াহা, মতিন ও সিরাজ শিকদারের পার্টি ইত্যাদি। এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা বাধ্য করেছিল সদ্য শিশু একটি রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ওই পদক্ষেপ নিতে। অন্যভাবে বঙ্গবন্ধু তো বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তাই আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনের দিকে চলে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে কেন এটাকে একদলীয় শাসন মনে হবে? তার কারণ এখানে এখন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি নেই। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে কি গণতন্ত্রচর্চা বন্ধ থাকবে এবং সংবিধান স্থগিত থাকবে? অর্থাৎ পুরো জাতি কি জিম্মি হয়ে থাকবে? এটা তো হতে পারে না। সামনে তো পথ চলতে হবে। এ জন্য উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামনে আগাতে হবে।
বিএনপি আসুক, তারা দায়িত্বশীল পার্টি হিসেবে আচরণ করুক, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করুক—এভাবে তারা যদি আদর্শগত বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে এবং দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলে তারা একসময় জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাবে। যেহেতু তারা আগেও ক্ষমতায় ছিল। এর আগে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকার কি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচারসহ অর্থনীতির দুর্বিষহ অবস্থা স্বাভাবিক করতে পারবে?
হারুন-অর-রশিদ: বর্তমান নতুন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ কী, সে-সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল আছে। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি সেক্টরকে তারা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাইলাইট করেছে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ—যেটাকে তারা স্মার্ট বাংলাদেশ বলেছে ইত্যাদি।
তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আড়তদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মুনাফাখোরদের প্রয়োজনে জেলে বন্দী করার কথা বলেছেন। কিন্তু শুধু বার্তা দিলে তো হবে না। ধীরস্থিরভাবে বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য পলিসি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, এসব বিষয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তবে সেই সবের সাফল্যের মাত্রা কতটুকু সফল হবে, তা নির্ভর করবে ব্যবস্থা গ্রহণের মাত্রার ওপর।
আজকের পত্রিকা: কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে একটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটতে পারে?
হারুন-অর-রশিদ: প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শকে ধারণ করা, বাংলাদেশকে ধারণ করা, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ সৃষ্টি হয়েছে, এই ভাবনার একটা বিরোধী দল বাংলাদেশে থাকা দরকার। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল হলো বিকল্প সরকার। সেই দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং জনগণের পক্ষে দাবি-দাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা—এ রকম একটা দায়িত্বশীল দল আওয়ামী লীগের বিপরীতে যতক্ষণ পর্যন্ত গড়ে না উঠবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের যে টানাপোড়েন ও সংকট, তা থেকে কোনো মুক্তির পথ দেখছি না। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংকট, গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে যে সংকট, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে সংকট, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্যদের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারগুলো কেন তাদের করতে হয়েছে? তার কারণ একটা দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক, শান্তিকামী, দেশের উন্নয়নপ্রত্যাশী কোনো বিরোধী আমাদের দেশে বর্তমানে নেই।
বিএনপি যে পথে হাঁটছে, সেটা তো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অনুকূল নয়; বরং এর বিপরীত। যে কারণে আজকের সমাজটাও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভাজনের কাঠামো যত দিন থাকবে, তত দিন আসলে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আওয়ামী লীগ ও দেশের স্বার্থে তাদের একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে।
সে জন্য সরকারকে বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি দিয়ে এবং কৌশল অবলম্বন করে একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে। শুধু একক ব্যক্তির জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই হয় না। কাজেই আমাদের জাতিগতভাবে অর্জনকে টেকসই করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদি সফলভাবে না করতে পারি, তাহলে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না।

আজকের পত্রিকা: আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলল। এই নির্বাচনকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
হারুন-অর-রশিদ: জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের যে নির্বাচন হয়েছে, এই নির্বাচন তার চেয়ে অনেক বেশি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। কিছু যে বিচ্যুতি ছিল না, তা কিন্তু নয়। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের নির্বাচন করা ছিল সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এর মূল কারণ হলো, বাংলাদেশের রাজনীতি দুটো পরস্পরবিরোধী আদর্শিক ধারায় বিভক্ত। কাজেই সব দলের অংশগ্রহণ এই নির্বাচনে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার ব্যাপার ছিল। সার্বিক দিক বিবেচনা করলে বলব, অপেক্ষাকৃত ভালো নির্বাচন হয়েছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি, একজনের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন। এবার এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
দলীয় সরকারের অধীনে এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জের প্রাথমিক পরীক্ষায় বাংলাদেশ উত্তীর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচনটা শুধু ক্ষমতাসীন দলের জন্যই চ্যালেঞ্জ ছিল না, নির্বাচনের আগে বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতিবেশ, পরিবেশ যা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি, কড়া নজর, নানা ধরনের হুমকি ছিল। কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন শেষ পর্যন্ত সরকার নির্বাচন করতে পারবে না। যদিও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা হবে হযবরল ধরনের। কিন্তু সে ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিলে আরও অংশগ্রহণমূলক হতো। বিএনপি এবং তাদের মিত্র জোট নির্বাচন বর্জন করা সত্ত্বেও নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। বিএনপি কিছুটা চেষ্টাও করেছে নির্বাচন প্রতিহত করতে। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি।
এই নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই পরাজিত হয়েছেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এটা যদি সাজানো-পাতানো নির্বাচন হতো, তাহলে এ ঘটনা ঘটত না। সেই সঙ্গে তিনজন প্রতিমন্ত্রীও ভোটে পরাজিত হয়েছেন। তবে পশ্চিমা ধাঁচে নির্বাচন করতে হলে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনসহ অন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী করতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোর জন্য আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র ও ডামি প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। দলের মধ্যে এই বিভক্তি কি কোনো প্রভাব ফেলবে?
হারুন-অর-রশিদ: আওয়ামী লীগ হলো প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। ১৯৪৯ সালে এই দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দলের ধারণক্ষমতাও অধিক। এবারের নির্বাচনে দলের নীতিনির্ধারকেরা একটা কৌশল অবলম্বন করেছিলেন, নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক হয়, ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে আসেন। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে তো ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন না।
এবার যে ৪১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ভোটার উপস্থিত হয়েছিল, এর মূলে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতার ব্যাপারটি ছিল। দল থেকে বিভিন্ন আসনে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী উন্মুক্ত করার কারণে কিন্তু এ ঘটনাগুলো ঘটেছে। যদিও দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে টানাপোড়েন, বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।এখন দল এসব বিষয় নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। এই বিরূপ উদ্ভূত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় কাঠামো ও শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য নিঃসন্দেহে তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।
তবে আমি যেটা মনে করি, বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংকট—একটা গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক চেতনাবিশ্বাসী, অসাম্প্রদায়িক, দায়িত্বশীল বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। আমাদের রাজনৈতিক সংকটের অন্যতম কারণ হলো এটি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরির ক্ষেত্রে যাঁরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা স্পিকারের অনুমতিক্রমে একটা গ্রুপ গঠন করতে পারতেন। তাঁরা যদি বলতেন, আমরা এখন এ দেশে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করব।
স্পিকার অনুমতি দিলে তাঁরা এটা করতে পারতেন। কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হচ্ছে। কিন্তু তাদের কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা নেই। তাই বাংলাদেশের দূরবর্তী ও সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি নিয়ে যদি বিষয়টিকে বিবেচনা করা হতো, স্বতন্ত্রভাবে বিজয়ীরা যদি দাঁড়াতে পারতেন, তাহলে আমাদের দেশের, আওয়ামী লীগের জন্য এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধারার পক্ষে যেত। এর অর্থ দাঁড়ায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেতৃত্ব তাঁদেরই একটা বিরোধী দল তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
আর বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির আদর্শিক, কাঠামোগত, কর্মসূচি ও পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে এই দল যত দিন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় আছে, তারা কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারবে না। কাজেই বিএনপিকে ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগকে ফেস করতেই হবে।
আজকের পত্রিকা: আপনি যেসব কথা বললেন, তার সূত্র ধরে বলি, আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের শাসনে অনেক ক্ষেত্রে বিচ্যুত হয়েছে। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে কেউ কেউ বাংলাদেশ একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। আপনি কী বলবেন?
হারুন-অর-রশিদ: কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, তা আমার জানা নেই। তাঁরা বিশেষজ্ঞ না বিশেষভাবে অজ্ঞ, এটাও আমার বিশেষভাবে জানার ইচ্ছা। আওয়ামী লীগ মানেই হলো জনগণের দল এবং তাদের ইতিহাস হলো দীর্ঘ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের ইতিহাস। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বল্প সময়ের জন্য জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে বাকশাল গঠন করেছিলেন। এটা কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না। সেই সময়ের উদ্ভূত চরম অসহিষ্ণু রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সদ্য প্রস্ফুটিত একটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল কিছু দল ও ব্যক্তি। যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বিরোধী দল, গোপন পার্টিগুলো, চরম চীনপন্থী বাম দল, মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বাধীন পার্টি, জাসদ, হক-তোয়াহা, মতিন ও সিরাজ শিকদারের পার্টি ইত্যাদি। এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধুকে তাঁরা বাধ্য করেছিল সদ্য শিশু একটি রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ওই পদক্ষেপ নিতে। অন্যভাবে বঙ্গবন্ধু তো বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তাই আওয়ামী লীগ একদলীয় শাসনের দিকে চলে যাবে, এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে কেন এটাকে একদলীয় শাসন মনে হবে? তার কারণ এখানে এখন প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি নেই। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে কি গণতন্ত্রচর্চা বন্ধ থাকবে এবং সংবিধান স্থগিত থাকবে? অর্থাৎ পুরো জাতি কি জিম্মি হয়ে থাকবে? এটা তো হতে পারে না। সামনে তো পথ চলতে হবে। এ জন্য উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামনে আগাতে হবে।
বিএনপি আসুক, তারা দায়িত্বশীল পার্টি হিসেবে আচরণ করুক, বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনা ধারণ করুক—এভাবে তারা যদি আদর্শগত বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে এবং দায়িত্বশীল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করলে তারা একসময় জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় যাবে। যেহেতু তারা আগেও ক্ষমতায় ছিল। এর আগে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতি থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে।
আজকের পত্রিকা: নতুন সরকার কি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ, অর্থ পাচারসহ অর্থনীতির দুর্বিষহ অবস্থা স্বাভাবিক করতে পারবে?
হারুন-অর-রশিদ: বর্তমান নতুন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ কী, সে-সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণভাবে ওয়াকিবহাল আছে। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে ১১টি সেক্টরকে তারা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হাইলাইট করেছে। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ—যেটাকে তারা স্মার্ট বাংলাদেশ বলেছে ইত্যাদি।
তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আড়তদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মুনাফাখোরদের প্রয়োজনে জেলে বন্দী করার কথা বলেছেন। কিন্তু শুধু বার্তা দিলে তো হবে না। ধীরস্থিরভাবে বিষয়টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য পলিসি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, এসব বিষয়ে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। তবে সেই সবের সাফল্যের মাত্রা কতটুকু সফল হবে, তা নির্ভর করবে ব্যবস্থা গ্রহণের মাত্রার ওপর।
আজকের পত্রিকা: কার্যকর বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে একটা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে কীভাবে উত্তরণ ঘটতে পারে?
হারুন-অর-রশিদ: প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শকে ধারণ করা, বাংলাদেশকে ধারণ করা, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ দেশ সৃষ্টি হয়েছে, এই ভাবনার একটা বিরোধী দল বাংলাদেশে থাকা দরকার। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিরোধী দল হলো বিকল্প সরকার। সেই দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরা এবং জনগণের পক্ষে দাবি-দাওয়া, আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরা—এ রকম একটা দায়িত্বশীল দল আওয়ামী লীগের বিপরীতে যতক্ষণ পর্যন্ত গড়ে না উঠবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের যে টানাপোড়েন ও সংকট, তা থেকে কোনো মুক্তির পথ দেখছি না। আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে সংকট, গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে যে সংকট, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে যে সংকট, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে অন্যদের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারগুলো কেন তাদের করতে হয়েছে? তার কারণ একটা দায়িত্বশীল, গণতান্ত্রিক, শান্তিকামী, দেশের উন্নয়নপ্রত্যাশী কোনো বিরোধী আমাদের দেশে বর্তমানে নেই।
বিএনপি যে পথে হাঁটছে, সেটা তো একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার অনুকূল নয়; বরং এর বিপরীত। যে কারণে আজকের সমাজটাও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই বিভাজনের কাঠামো যত দিন থাকবে, তত দিন আসলে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই আওয়ামী লীগ ও দেশের স্বার্থে তাদের একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে।
সে জন্য সরকারকে বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি দিয়ে এবং কৌশল অবলম্বন করে একটা কার্যকর বিরোধী দল তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শক্তিশালী করতে হবে। শুধু একক ব্যক্তির জনপ্রিয়তার ওপর ভিত্তি কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টেকসই হয় না। কাজেই আমাদের জাতিগতভাবে অর্জনকে টেকসই করার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, আইনের শাসন, সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি যদি সফলভাবে না করতে পারি, তাহলে বেশি দূর অগ্রসর হওয়া যাবে না।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে
২৮ জানুয়ারি ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে
২৮ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে
২৮ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বঙ্গবন্ধু চেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে
২৮ জানুয়ারি ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫