Ajker Patrika

রাজশাহীর রাজবাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ করল প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ১২
রাজশাহী নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজবংশের রাজা হেমেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজবংশের রাজা হেমেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজবংশের রাজা হেমেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাড়িটি আর না ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার দুপুরে বোয়ালিয়া থানা ভূমি কার্যালয়ের কর্মচারীরা গিয়ে ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

যদিও পাশাপাশি দোতলা দুটি বাড়ির প্রায় সবই ভেঙে ফেলা হয়েছে। শুধু মেঝের নিচে থাকা সুড়ঙ্গের ইটগুলো তোলা বাকি আছে।

আজ দুপুরে বাড়িটি পরিদর্শনে গিয়ে হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, এ বাড়ির বয়স আনুমানিক ১২০ বছর। এখন যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখানে থাকা নাগলিঙ্গমের গাছটি যেন কাটা না হয়, এটি খুবই বিরল।

রাজশাহী নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজবংশের রাজা হেমেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী নগরের সিপাইপাড়া এলাকায় অবস্থিত দিঘাপতিয়ার রাজবংশের রাজা হেমেন্দ্র নারায়ণ রায়ের ছেলে সন্দীপ কুমার রায়ের বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাহবুব সিদ্দিকী আরও বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা হয়তো এখানে আসেননি। তাঁরা না দেখেই এটা নিলাম দিয়েছেন। তাঁরা এখানে এলে হয়তো এর প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বুঝতে পারতেন।

মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, বাড়ির নিচে সুড়ঙ্গের মতো থাকলেও এটি মূলত সুড়ঙ্গ নয়, এটি প্রাচীন নির্মাণশৈলীর ছাপ। বাড়ির নিচ দিয়ে বাতাস চলাচলের জন্য এটি করা হতো।

তবে বাড়িটিতে নিয়মিত যাতায়াত করা কলেজশিক্ষক আকতার বানুর দাবি, পেছনের দোতলা বাড়ি থেকে সামনের একতলা বাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ওই সুড়ঙ্গ। নিরাপত্তার কারণে এটি করা হতে পারে।

রাজবংশের জায়গাটি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের বিপরীত পাশে, প্রধান সড়ক ঘেঁষে। জনশ্রুতি আছে, পুঠিয়ার মহারানি হেমন্ত কুমারী রাজশাহী এলে এই দোতলা বাড়িতে থাকতেন।

রাজপরিবার চলে যাওয়ার পর বাড়িটি পরিত্যক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর বাড়িটি ভাষাসৈনিক মনোয়ারা রহমানের নামে ইজারা দেয় সরকার। মনোয়ারা রহমান রাজশাহীর প্রথম নারী উদ্যোক্তা। তিনি এ বাড়িতে মহিলা কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠান নামের একটি সংগঠন চালাতেন। এর মাধ্যমে তিনি হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রায় ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছিলেন।

মনোয়ারা রহমান ২০০৯ সালে মারা গেলে বাড়িটি আবারও পরিত্যক্ত হয়ে যায়। সম্প্রতি এ বাড়ির ইজারা বাতিল করে বোয়ালিয়া থানা ভূমি কার্যালয়। এরপর পরিত্যক্ত বাড়িটি নিলামে বিক্রি করা হয় ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায়। নিলামের ক্রেতা শ্রমিকদের দিয়ে দুই সপ্তাহ ধরে বাড়িটি ভেঙেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার এ নিয়ে আজকের পত্রিকার অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। সমালোচনার মুখে জেলা প্রশাসন বাড়িটি ভাঙার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

বোয়ালিয়া থানা ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসন বাড়িটি এখন যেভাবে আছে, সেভাবেই আপাতত রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ দুপুরেই আমাদের অফিস থেকে লোকজন গিয়ে সেখানে লালসালু টাঙিয়ে দিয়ে এসেছেন। শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’

আরিফ হোসেন আরও বলেন, ‘জায়গাটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত ছিল। আপাতত সবকিছুই স্থগিত করা হয়েছে। এর মধ্যে দেয়ালের যেসব ইট ভাঙা হয়ে গেছে, সেগুলো নিলামে নেওয়া ব্যক্তি সরিয়ে নেবেন। তারপর আর একটি ইটও তুলতে পারবেন না। যেভাবে যা আছে, সেভাবেই থাকবে। কর্তৃপক্ষ আগে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেখবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ