Ajker Patrika

খুলনায় ভাড়াটে খুনি-আতঙ্ক

  • ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর হয়ে টার্গেট কিলিংয়ে জড়াচ্ছে তারা।
  • আ.লীগ সরকারের পতনের পর এসব বাহিনীর উত্থান।
  • বিভিন্ন সময়ে অপরাধীরা জায়গা বদল করে, ধরা কঠিন হয়ে পড়ে: পুলিশ
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ১০
রনি চৌধুরী বাবু, আশিক, নূর আজিম ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: সংগৃহীত
রনি চৌধুরী বাবু, আশিক, নূর আজিম ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: সংগৃহীত

খুলনার ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর হয়ে টার্গেট কিলিংয়ে জড়াচ্ছে ভাড়াটে খুনিরা। তাদের অবস্থান শনাক্তে পুলিশ বেশ তৎপর। তবে এই মুহূর্তে পুলিশের হাতে কোনো তালিকা নেই। তারা বলছে, ভাড়াটে খুনির সংখ্যা ২০ থেকে ২৫। মাদক কারবার, ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি, অস্ত্র বিক্রি ও ভাড়াটে খুনে জড়াচ্ছে তারা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, পেশাদার খুনিদের টার্গেট কিলিংয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। শীর্ষ ছয়টি বাহিনীর প্রধানদের বিরুদ্ধে খুন, মাদকসংক্রান্ত ৬৭টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। গতকালও দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব বাহিনীর উত্থান। এ প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) ত ম রোকনুজ্জামান বলেন, ‘এই মুহূর্তে ভাড়াটে খুনিদের তালিকা আমাদের কাছে নেই। তবে গত অক্টোবর মাসের অপরাধ সভার পর খুনিদের চিহ্নিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আসলে খুনিরা সব সময় শহরে চলাফেরা করে না। তাদের টার্গেট কিলিংয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।’

জানা গেছে, খুলনা নগরীতে এই মুহূর্তে ছয়টি সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানেরা ৬৭ মামলা মাথায় নিয়ে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিতে লিপ্ত রয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসে কেএমপির কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার খুলনার শীর্ষ ১২ সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করার পর কিছু সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সক্রিয় সন্ত্রাসীরা

বর্তমানে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে রনি চৌধুরী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবুর নাম। নগরীর শামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা গ্রেনেড বাবুর বিরুদ্ধে কেএমপির বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ২০০১ সালে বোমা তৈরি করে চরমপন্থীদের কাছে সাপ্লাই দিয়ে এবং বোমা নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকায় পুলিশ-র‍্যাবের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় উঠে আসেন গ্রেনেড বাবু। এরপর মাদক বিক্রি, চাঁদাবাজি, জুয়ার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ন্ত্রণ করতে গ্রেনেড বাবু নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন।

সক্রিয় আছে নূর আজিম গ্রুপ। নগরীর টুটপাড়া ইস্ট সার্কুলার রোডের বাসিন্দা শানু মুহুরীর ছেলে নূর আজিমের বিরুদ্ধে কেএমপির বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। কিশোর গ্যাং সৃষ্টির মাধ্যমে ২০১৬ সালে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন। গত ১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী নূর আজিমসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে সন্ত্রাসী নূর আজিমের সহযোগীরা এখন এলাকায়। তাঁরা রূপসা স্ট্যান্ড রোড, চাঁনমারী, রূপসা মাছবাজার, শেখপাড়া বাজার, গোবরচাকা, টুটপাড়া, জিন্নাহপাড়া, লবণচরা, চাঁনমারী বাজার, বানিয়াখামারসহ আশপাশ এলাকায় প্রতিদিনই সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছেন।

নগরীর চানমারি দ্বিতীয় লেনের আশিকের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। খুলনা শহরের বর্তমানে সব থেকে বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে আশিক গ্রুপ। ২০১৮ সালে ৬ সেপ্টেম্বর প্রথম হত্যা মামলায় জড়িয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি পলাতক। তাঁর দলে সদস্য রয়েছেন ২৩ জন। তাঁদের নামে মোট মামলা রয়েছে ১১০টি।

নগরীর মিস্ত্রিপাড়া বাজারের বাসিন্দা পলাশ শেখের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৯টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। গত আওয়ামী লীগ আমলে দাপুটে ছিল পলাশ চক্র। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ফের সক্রিয় হয়েছেন পলাশ। সর্বশেষ ১৮ অক্টোবর কারাগারে গ্রেনেড বাবুর সহযোগী কালা তুহিন ও পলাশ চক্রের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার হুমায়ুন কবীর ওরফে হুমার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৪টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। হুমা ছিলেন বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান গাজী কামরুলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের উপস্থিতি জানান দেয়। নগরীর দৌলতপুর দেয়ানা বাউন্ডারি রোডের বাসিন্দা কবির হোসেনের ছেলে আরমিন ওরফে আলামিনের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। তিনিও বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য।

সার্বিক বিষয়ে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিভিন্ন পয়েন্টে চেক পোস্ট বসানোসহ অপরাধীদের তথ্য জানতে তথ্য বাক্স বসানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অপরাধীরা জায়গা বদল করে। ফলে অনেক সময় তাদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...