কামরুল হাসান

আজ একটি খুনের গল্প বলব। রোজ ঢাকায় যেভাবে মানুষ খুন হয়, সে রকম। পুলিশের একটি কেতাবি হিসাব আছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে একজন খুন হন, মাসে ৩০ জন। আজকের গল্পের খুনের ঘটনাটিও তেমন, জমা-খরচের খাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার মতো।
২০০১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। অনেক রাতে মালিবাগ মোড়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ খবর এল, উত্তরায় খুন হয়েছে। ব্রাশফায়ারে একজনকে খুন করা হয়েছে, আর দুজন আহত হয়েছে। অত রাতে পত্রিকায় নিউজ ধরানো যাবে না। পরদিন শুক্রবার সকাল সকাল গেলাম ঘটনাস্থলে। দেখি, উত্তরায় নয়, খুন হয়েছে দক্ষিণখান এলাকায়।
যিনি খুন হয়েছেন, তাঁর নাম তারাজ উদ্দিন। আর আহত হয়েছেন নজরুল ইসলাম ও লিটন। তারাজ উদ্দিন এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ও ধনী। তাঁর জমিজমার কারবার। এলাকার নবজাগরণ বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রধান তিনি। পিতার নাম আবদুল গফুর। বসবাস করতেন দক্ষিণখানের দক্ষিণ পাড়ায়। আমি এলাকায় পৌঁছে শুনি, রাতের মধ্যে আসামির নাম উল্লেখ করে মামলাও হয়ে গেছে। মামলা করেছেন তারাজের ভাই নুরুল ইসলাম।
এলাকার লোকজন আমাকে বললেন, দক্ষিণপাড়ায় ৪৭ কাঠা জমি নিয়ে বিরোধেই তারাজ খুন হয়েছেন। কার সঙ্গে বিরোধ? সবাই বললেন, বিরোধ তাঁর আপন চাচাতো বোন আলেয়া বেগমের সঙ্গে। দুজনই মহামূল্যবান এই জমির মালিকানা দাবি করেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ জন্য দুজনে নাকি আলাদা করে সন্ত্রাসীও ভাড়া করেন।
এলাকাবাসী বললেন, জমির দখল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারাজ উদ্দিন নবজাগরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি বানিয়েছেন। সেই সমিতির অফিসও জমির ওপর। দিনরাত একদল যুবক সেখানে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে আর তাস খেলে সময় কাটায়। তারা সেখানে অবস্থান করে জমি পাহারা দিচ্ছে, যাতে আলেয়ার লোকজন আসতে না পারে।
সেই সমিতির অফিসে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তারাজ উদ্দিন বসে ছিলেন। তখন পাহারাদারের সংখ্যা কমে গেছে। হঠাৎ হলুদ রঙের তিনটি ট্যাক্সি ক্যাব সেখানে এসে থামে। ট্যাক্সি থেকে ৮-১০ জন যুবক অস্ত্র হাতে নেমে শুরু করেন ব্রাশফায়ার। এতে তারাজ নিহত এবং দুজন আহত হন।
গুলির শব্দে লোকজন ছুটে আসে। তারা ট্যাক্সি ক্যাবকে ধাওয়া দেয়। তারাজের লোকজন চালকসহ একটি ট্যাক্সি ক্যাব ধরে ফেলে। সেই ক্যাবের ভেতরে পাওয়া যায় বোরহান নামের এক সন্ত্রাসীকে, যার হাতে অস্ত্র ছিল। ক্যাবের চালক আমিনুলকেও আটক করা হয়। পরে দুজনকেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে উত্তরা থানায় গিয়ে দেখি, এই মামলা নিয়ে একটি লম্বা এজাহার হয়েছে। তাতে ২১ জনের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা রয়েছে। থানার ডিউটি অফিসার এজাহারের একটি কপি আমার সামনে ধরে বললেন, কপি দেওয়া বারণ, পড়ে নোট করে নেন। আমার চোখ আটকে যায় আসামির তালিকা দেখে। তিন নম্বর আসামির নাম দীপু চৌধুরী।
পিতার নাম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি তখন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিপুত্রের নাম মামলার এজাহারে। স্বাভাবিকভাবেই বড় খবর। এতক্ষণ যেটি ছিল সাধারণ খুনের মামলা, মন্ত্রিপুত্রের বদৌলতে সেটা হয়ে গেল গুরুত্বপূর্ণ মামলা। পরদিন সব কাগজে লিড নিউজ।
জমি নিয়ে বিরোধ তো আর দীপু চৌধুরীর সঙ্গে হয়নি। তাহলে খুনের মামলায় কেন তাঁর নাম এল? ধীরে ধীরে সবই পরিষ্কার হয়ে গেল। তার আগে আরেকজন সন্ত্রাসীর কথা বলি। তাঁর নাম মুকুল। বাড্ডার বাসিন্দা মুকুল অনেক দিন ধরে ভারতে আত্মগোপন করে আছেন। সেই মুকুল একসময় ছিলেন বিমানবন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রক ও শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই সাগরের ঘনিষ্ঠ। টোকাই সাগর আমেরিকায় পাড়ি জমানোর পর বিমানবন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন মুকুল। এর মধ্যে মায়ার পুত্র দীপু চৌধুরী তখনকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনকর্স হল ও গাড়ি পার্কিং এলাকা ইজারা নেন। সেই ইজারা পাওয়ার পর তিনি বিমানবন্দর থেকে মুকুলকে সরিয়ে দিয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এতে মুকুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চরমে পৌঁছায়। এর মধ্যে বাড্ডা ক্লাবে ছাত্রলীগ নেতা আঁখি খুন হন। সেই খুনের মামলার পুলিশ মুকুলকে গ্রেপ্তার করে। কিছুদিন পর মুকুল জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর পরিস্থিতি এমন হয় যে দীপু ও মুকুল রীতিমতো ৮-১০ জন করে দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করতে শুরু করেন। সেই বিরোধে ঘি ঢালেন আলেয়া বেগম ও তারাজ উদ্দিন।
৪৭ কাঠা জমি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারাজ একদিন দীপু চৌধুরীর প্রতিপক্ষ মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের কথা হয়, জমির দখল রাখতে পারলে তাঁদেরও জমি দেওয়া হবে। এটা শুনে আলেয়া বেগম বাদ যাবেন কেন, তিনি যোগাযোগ করেন দীপু চৌধুরীর লোকজনের সঙ্গে। খুনের ঘটনা নিয়ে উত্তরা থানায় যে মামলা হয়, তাতে বলা হয়, আলেয়া বেগমের ভাড়াটে হয়ে দীপু চৌধুরী ও তাঁর দলবল এই খুন করে। খুনের সময় হলুদ ট্যাক্সি ক্যাবে দীপু চৌধুরী বসে ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ ওঠে, জমিটি দখল করতে দীপুর বন্ধু রানাকে জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে। দীপুর সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধু শিহাব, সৌরভ ও সাগর।
এই খুনের চার দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ আলেয়া বেগম ও তাঁর স্বামী জহির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া বোরহান ও আমিনুলকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশ আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ।
তারাজ খুনের কয়েক দিন পর প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও তাঁর স্ত্রী নিহত তারাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাসায় যান। তাঁরা ফিরে আসার পর খবর রটে যায়, নিহতের পরিবারকে তাঁরা ভয় দেখাতে গিয়েছিলেন। তারাজের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি দাবি করা হয়। এমনকি এ নিয়ে থানায় জিডিও করা হয়। খুন নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। তবে মায়া তাঁর ছেলের পক্ষ নিয়ে কোনো দিন একটি কথা বলেননি। তিনি সব সময় নীরব থেকেছেন। গণমাধ্যমে বড় বড় করে খবর প্রকাশিত হয়, মন্ত্রীর খুনি ছেলেকে পুলিশ ধরছে না। চারদিকে হইচই পড়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ও দলকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কুমিল্লায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জের উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, ‘খুনে জড়িত মন্ত্রিপুত্রকে সারেন্ডার করতে বলেছি।’
অবশেষে ১৮ ফেব্রুয়ারি দীপু চৌধুরী, তাঁর বন্ধু রানা ও সৌরভ ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মহানগর হাকিম শৈলেন্দ্র কুমার অধিকারী তাঁদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দীপুর পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান দাঁড়িয়েছিলেন।
দীপু চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর এই আলোচনা থেমে যায়। আরও নতুন ঘটনার ভিড়ে আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিছুদিন পর দীপুও জামিনে বেরিয়ে আসেন। একদিন তিনি সাংবাদিকদের ডেকে বলেন, ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
এভাবে মাস দুয়েক যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন শুনি, তারাজ খুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসামি বোরহান রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে সবাই সন্দেহ করেন। বোরহানকে ঘটনার সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। তারাজ খুনের সবকিছুই ছিল তাঁর নখদর্পণে। সেই বোরহানের মৃত্যুর পর তদন্তকারীরাও বিপাকে পড়েন।
তখন অভিযোগ ওঠে, বোরহানকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠলেই তো আর হলো না, সেটা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করা আর সম্ভব হয়নি। যেভাবে প্রমাণ করা যায়নি দীপু চৌধুরীর খুনে জড়িত থাকার বিষয়টি। একপর্যায়ে এটাও প্রমাণিত হয়, তারাজকে আসলে কেউই খুন করেনি।
এই গল্পের শুরুতেই বলেছিলাম, রাজধানীতে খুন একটি সংখ্যামাত্র। একদিন সেই তালিকায় যোগ হলো আরেকটি নাম—তারাজ উদ্দিন।
আরও পড়ুন:

আজ একটি খুনের গল্প বলব। রোজ ঢাকায় যেভাবে মানুষ খুন হয়, সে রকম। পুলিশের একটি কেতাবি হিসাব আছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে একজন খুন হন, মাসে ৩০ জন। আজকের গল্পের খুনের ঘটনাটিও তেমন, জমা-খরচের খাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার মতো।
২০০১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার। অনেক রাতে মালিবাগ মোড়ে আড্ডা দিচ্ছি। হঠাৎ খবর এল, উত্তরায় খুন হয়েছে। ব্রাশফায়ারে একজনকে খুন করা হয়েছে, আর দুজন আহত হয়েছে। অত রাতে পত্রিকায় নিউজ ধরানো যাবে না। পরদিন শুক্রবার সকাল সকাল গেলাম ঘটনাস্থলে। দেখি, উত্তরায় নয়, খুন হয়েছে দক্ষিণখান এলাকায়।
যিনি খুন হয়েছেন, তাঁর নাম তারাজ উদ্দিন। আর আহত হয়েছেন নজরুল ইসলাম ও লিটন। তারাজ উদ্দিন এলাকায় বেশ প্রভাবশালী ও ধনী। তাঁর জমিজমার কারবার। এলাকার নবজাগরণ বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রধান তিনি। পিতার নাম আবদুল গফুর। বসবাস করতেন দক্ষিণখানের দক্ষিণ পাড়ায়। আমি এলাকায় পৌঁছে শুনি, রাতের মধ্যে আসামির নাম উল্লেখ করে মামলাও হয়ে গেছে। মামলা করেছেন তারাজের ভাই নুরুল ইসলাম।
এলাকার লোকজন আমাকে বললেন, দক্ষিণপাড়ায় ৪৭ কাঠা জমি নিয়ে বিরোধেই তারাজ খুন হয়েছেন। কার সঙ্গে বিরোধ? সবাই বললেন, বিরোধ তাঁর আপন চাচাতো বোন আলেয়া বেগমের সঙ্গে। দুজনই মহামূল্যবান এই জমির মালিকানা দাবি করেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ জন্য দুজনে নাকি আলাদা করে সন্ত্রাসীও ভাড়া করেন।
এলাকাবাসী বললেন, জমির দখল নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারাজ উদ্দিন নবজাগরণ বহুমুখী সমবায় সমিতি বানিয়েছেন। সেই সমিতির অফিসও জমির ওপর। দিনরাত একদল যুবক সেখানে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে আর তাস খেলে সময় কাটায়। তারা সেখানে অবস্থান করে জমি পাহারা দিচ্ছে, যাতে আলেয়ার লোকজন আসতে না পারে।
সেই সমিতির অফিসে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তারাজ উদ্দিন বসে ছিলেন। তখন পাহারাদারের সংখ্যা কমে গেছে। হঠাৎ হলুদ রঙের তিনটি ট্যাক্সি ক্যাব সেখানে এসে থামে। ট্যাক্সি থেকে ৮-১০ জন যুবক অস্ত্র হাতে নেমে শুরু করেন ব্রাশফায়ার। এতে তারাজ নিহত এবং দুজন আহত হন।
গুলির শব্দে লোকজন ছুটে আসে। তারা ট্যাক্সি ক্যাবকে ধাওয়া দেয়। তারাজের লোকজন চালকসহ একটি ট্যাক্সি ক্যাব ধরে ফেলে। সেই ক্যাবের ভেতরে পাওয়া যায় বোরহান নামের এক সন্ত্রাসীকে, যার হাতে অস্ত্র ছিল। ক্যাবের চালক আমিনুলকেও আটক করা হয়। পরে দুজনকেই পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থল থেকে উত্তরা থানায় গিয়ে দেখি, এই মামলা নিয়ে একটি লম্বা এজাহার হয়েছে। তাতে ২১ জনের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা রয়েছে। থানার ডিউটি অফিসার এজাহারের একটি কপি আমার সামনে ধরে বললেন, কপি দেওয়া বারণ, পড়ে নোট করে নেন। আমার চোখ আটকে যায় আসামির তালিকা দেখে। তিন নম্বর আসামির নাম দীপু চৌধুরী।
পিতার নাম মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি তখন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। মন্ত্রিপুত্রের নাম মামলার এজাহারে। স্বাভাবিকভাবেই বড় খবর। এতক্ষণ যেটি ছিল সাধারণ খুনের মামলা, মন্ত্রিপুত্রের বদৌলতে সেটা হয়ে গেল গুরুত্বপূর্ণ মামলা। পরদিন সব কাগজে লিড নিউজ।
জমি নিয়ে বিরোধ তো আর দীপু চৌধুরীর সঙ্গে হয়নি। তাহলে খুনের মামলায় কেন তাঁর নাম এল? ধীরে ধীরে সবই পরিষ্কার হয়ে গেল। তার আগে আরেকজন সন্ত্রাসীর কথা বলি। তাঁর নাম মুকুল। বাড্ডার বাসিন্দা মুকুল অনেক দিন ধরে ভারতে আত্মগোপন করে আছেন। সেই মুকুল একসময় ছিলেন বিমানবন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রক ও শীর্ষ সন্ত্রাসী টোকাই সাগরের ঘনিষ্ঠ। টোকাই সাগর আমেরিকায় পাড়ি জমানোর পর বিমানবন্দর এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেন মুকুল। এর মধ্যে মায়ার পুত্র দীপু চৌধুরী তখনকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনকর্স হল ও গাড়ি পার্কিং এলাকা ইজারা নেন। সেই ইজারা পাওয়ার পর তিনি বিমানবন্দর থেকে মুকুলকে সরিয়ে দিয়ে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এতে মুকুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চরমে পৌঁছায়। এর মধ্যে বাড্ডা ক্লাবে ছাত্রলীগ নেতা আঁখি খুন হন। সেই খুনের মামলার পুলিশ মুকুলকে গ্রেপ্তার করে। কিছুদিন পর মুকুল জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর পরিস্থিতি এমন হয় যে দীপু ও মুকুল রীতিমতো ৮-১০ জন করে দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা করতে শুরু করেন। সেই বিরোধে ঘি ঢালেন আলেয়া বেগম ও তারাজ উদ্দিন।
৪৭ কাঠা জমি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তারাজ একদিন দীপু চৌধুরীর প্রতিপক্ষ মুকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের কথা হয়, জমির দখল রাখতে পারলে তাঁদেরও জমি দেওয়া হবে। এটা শুনে আলেয়া বেগম বাদ যাবেন কেন, তিনি যোগাযোগ করেন দীপু চৌধুরীর লোকজনের সঙ্গে। খুনের ঘটনা নিয়ে উত্তরা থানায় যে মামলা হয়, তাতে বলা হয়, আলেয়া বেগমের ভাড়াটে হয়ে দীপু চৌধুরী ও তাঁর দলবল এই খুন করে। খুনের সময় হলুদ ট্যাক্সি ক্যাবে দীপু চৌধুরী বসে ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ ওঠে, জমিটি দখল করতে দীপুর বন্ধু রানাকে জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেওয়া হয়েছে। দীপুর সঙ্গে ছিল তাঁর বন্ধু শিহাব, সৌরভ ও সাগর।
এই খুনের চার দিন পর ১২ ফেব্রুয়ারি পুলিশ আলেয়া বেগম ও তাঁর স্বামী জহির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া বোরহান ও আমিনুলকেও রিমান্ডে নেওয়া হয়। পুলিশ আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করে। শুরু হয় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ।
তারাজ খুনের কয়েক দিন পর প্রতিমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও তাঁর স্ত্রী নিহত তারাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে তাঁদের বাসায় যান। তাঁরা ফিরে আসার পর খবর রটে যায়, নিহতের পরিবারকে তাঁরা ভয় দেখাতে গিয়েছিলেন। তারাজের পরিবারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি দাবি করা হয়। এমনকি এ নিয়ে থানায় জিডিও করা হয়। খুন নিয়ে শুরু হয় রাজনীতি। তবে মায়া তাঁর ছেলের পক্ষ নিয়ে কোনো দিন একটি কথা বলেননি। তিনি সব সময় নীরব থেকেছেন। গণমাধ্যমে বড় বড় করে খবর প্রকাশিত হয়, মন্ত্রীর খুনি ছেলেকে পুলিশ ধরছে না। চারদিকে হইচই পড়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার ও দলকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম কুমিল্লায় টেলিফোন এক্সচেঞ্জের উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, ‘খুনে জড়িত মন্ত্রিপুত্রকে সারেন্ডার করতে বলেছি।’
অবশেষে ১৮ ফেব্রুয়ারি দীপু চৌধুরী, তাঁর বন্ধু রানা ও সৌরভ ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। মহানগর হাকিম শৈলেন্দ্র কুমার অধিকারী তাঁদের জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। দীপুর পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান দাঁড়িয়েছিলেন।
দীপু চৌধুরী গ্রেপ্তারের পর এই আলোচনা থেমে যায়। আরও নতুন ঘটনার ভিড়ে আমরাও ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিছুদিন পর দীপুও জামিনে বেরিয়ে আসেন। একদিন তিনি সাংবাদিকদের ডেকে বলেন, ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন না।
এভাবে মাস দুয়েক যাওয়ার পর হঠাৎ একদিন শুনি, তারাজ খুনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসামি বোরহান রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে সবাই সন্দেহ করেন। বোরহানকে ঘটনার সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছিল। তারাজ খুনের সবকিছুই ছিল তাঁর নখদর্পণে। সেই বোরহানের মৃত্যুর পর তদন্তকারীরাও বিপাকে পড়েন।
তখন অভিযোগ ওঠে, বোরহানকে মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠলেই তো আর হলো না, সেটা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করা আর সম্ভব হয়নি। যেভাবে প্রমাণ করা যায়নি দীপু চৌধুরীর খুনে জড়িত থাকার বিষয়টি। একপর্যায়ে এটাও প্রমাণিত হয়, তারাজকে আসলে কেউই খুন করেনি।
এই গল্পের শুরুতেই বলেছিলাম, রাজধানীতে খুন একটি সংখ্যামাত্র। একদিন সেই তালিকায় যোগ হলো আরেকটি নাম—তারাজ উদ্দিন।
আরও পড়ুন:

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। পুলিশ বলছে, ভবনটি বিস্ফোরক তৈরিতে ব্যবহৃত হতো।
আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসনাবাদ বাজারের ফলপট্টি গলিতে উম্মাল কুরা ইন্টারন্যাশনাল মাদ্রাসা। মাদ্রাসায় শিশুদের পাঠদান করা হয়। বিস্ফোরণে চার কক্ষের একতলা ভবনটির পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষ সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে, সিঁড়ির পাশের ছাদের একাংশ উড়ে গেছে এবং সব কটি কক্ষের পিলার ও দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ঘটনাস্থলে ককটেল, রাসায়নিক দ্রব্য ও বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক বিভাগের ক্রাইম সিন ইউনিটের কর্মীরা আলামত সংগ্রহ করছেন। তাঁরা পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছেন। ভবনের পাশের একটি ভবনের দোতলার দেয়ালে বিস্ফোরণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিস্ফোরণে পাশের একটি অটোরিকশার গ্যারেজের টিনের ছাউনি উড়ে গেছে। টিনের নিচে চাপা পড়েছিলেন গ্যারেজের ম্যানেজার আবুল কালাম।
আবুল কালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত বিকট শব্দ হয়েছে যে আমার কানে তব্দা লেগে যায়। আমি টিনের নিচে চাপা পড়ি। পরে হামাগুড়ি দিয়ে বের হই। এরপর দেখি মাদ্রাসার মধ্যে আগুন জ্বলছে। যারা ভেতরে ছিল, তারা দ্রুত বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়ে চলে যায়।’
গ্যারেজের মালিক মোশাররফ হোসেন ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বিস্ফোরণের পর পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। আমিও বাসা থেকে দৌড়ে আসি। আমার গ্যারেজের দুজন অটোচালক দুই শিশুকে ওই ভবন থেকে বের করেন। এক নারী আর এক শিশুকে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আল আমিনও দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের লোকজন এসে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়।’
মাদ্রাসার পাশের ৫ তলা বাড়ির বাসিন্দা মনোয়ার বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাই। মনে হয়েছিল ভূমিকম্প। কারণ, বিস্ফোরণে সব ভবনে কাঁপুনি লাগে। সবাই চিৎকার করেছিল।’
ওই বাসিন্দা আরও বলেন, ‘মাদ্রাসাটিতে ৩০-৩৫ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করত। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এ কারণে বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।’
ভবনটির পশ্চিম পাশের এক পাশে তিনটি কক্ষে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হতো। অপর পাশের একটি কক্ষে পরিচালক শেখ আল আমিন (৩২), তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম (২৮) এবং তাঁদের তিন সন্তান নিয়ে সেখানেই থাকতেন। বিস্ফোরণে দুই ছেলে উমায়েত (১০) ও আবদুল্লাহ (৭) আহত হয়। এর মধ্যে আছিয়া ও তাঁর দুই সন্তানকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
পাশের ভবনের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিস্ফোরণে আমাদের ভবনের কিছু অংশ ফেটে গেছে। ঘরের ভেতরের আসবাবও ভেঙে পড়েছে।’
ঘটনাস্থলেই পুলিশ হেফাজতে বসে ছিলেন ভবনমালিক পারভীন বেগম। ভবনের জমি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। সেখানে লিবিয়ায় থাকা তাঁর দুই ছেলে এই ভবন ২০২২ সালে তৈরি করেন। এরপর হারুন অর রশীদ নামের এক ব্যক্তি এটি মাদ্রাসা করবেন বলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে মুফতি হারুন অর রশীদ মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন। হারুন তাঁর শ্যালক আল আমিন ও শ্যালকের স্ত্রী আছিয়াকে মাদ্রাসা পরিচালনার দায়িত্ব দেন। তিনি মাঝেমধ্যে মাদ্রাসায় আসতেন। আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিতাম। কিন্তু মাদ্রাসার আড়ালে কী কার্যক্রম চলছিল, তা বুঝতে পারিনি। আজ এসে দেখি, ভবনের চারপাশ উড়ে গেছে।’
পারভীন বেগমের পাশেই ছিলেন তাঁর ছোট মেয়ে সোহানা। তিনি বলেন, ‘ভাড়া নেওয়ার সময় শুধু হারুন অর রশীদ একাই এসেছিলেন। এরপর তাঁরা মাদ্রাসা পরিচালনা শুরু করেন। তবে তাঁরা আশপাশের কারও সঙ্গে তেমন মিশতেন না।’
পুলিশ ভবনের ভেতর থেকে কেমিক্যাল, ককটেল, ভেস্ট ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোনো বিস্ফোরক তৈরি করতে গিয়ে বিস্ফোরিত হয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে গতকাল বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট শেখ আল আমিন পলাতক রয়েছেন। তবে কেরানীগঞ্জ থেকে তাঁর স্ত্রী আছিয়া বেগম, আছিয়ার ভাই হারুনের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার এবং ঢাকার বাসাবো থেকে আসমানী খাতুন নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, আল আমিনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে ২০১৭ ও ২০২০ সালে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকা এবং আশপাশের বিভিন্ন থানায় অন্তত সাতটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার আসমানী খাতুনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

আজ একটি খুনের গল্প বলব। রোজ ঢাকায় যেভাবে মানুষ খুন হয়, সে রকম। পুলিশের একটি কেতাবি হিসাব আছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে একজন খুন হন, মাসে ৩০ জন। আজকের গল্পের খুনের ঘটনাটিও তেমন, জমা-খরচের খাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার
০৩ ডিসেম্বর ২০২২
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এ সারা দেশে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৮টি মোটরসাইকেল ও ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪১১টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ৩ হাজার ৩৯৪টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

আজ একটি খুনের গল্প বলব। রোজ ঢাকায় যেভাবে মানুষ খুন হয়, সে রকম। পুলিশের একটি কেতাবি হিসাব আছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে একজন খুন হন, মাসে ৩০ জন। আজকের গল্পের খুনের ঘটনাটিও তেমন, জমা-খরচের খাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার
০৩ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২৮ হাজার ৭৬৬টি মোটরসাইকেল ও ৪৩ হাজার ৩৫২টি গাড়ি তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিকালে ২৯১টি অবৈধ মোটরসাইকেল আটক করা হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী।

আজ একটি খুনের গল্প বলব। রোজ ঢাকায় যেভাবে মানুষ খুন হয়, সে রকম। পুলিশের একটি কেতাবি হিসাব আছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে একজন খুন হন, মাসে ৩০ জন। আজকের গল্পের খুনের ঘটনাটিও তেমন, জমা-খরচের খাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার
০৩ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
১৭ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।
হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।
দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’
পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।
মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

আজ একটি খুনের গল্প বলব। রোজ ঢাকায় যেভাবে মানুষ খুন হয়, সে রকম। পুলিশের একটি কেতাবি হিসাব আছে, রাজধানীতে দিনে গড়ে একজন খুন হন, মাসে ৩০ জন। আজকের গল্পের খুনের ঘটনাটিও তেমন, জমা-খরচের খাতায় বৃদ্ধি পাওয়া সংখ্যার
০৩ ডিসেম্বর ২০২২
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় গত শুক্রবার সকালে একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছে। মাদ্রাসাটি শেখ আল আমিন নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করতেন। যিনি এর আগে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায়
৩ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৯৭ জনকে। গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ৮৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৬ দিন আগে
অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-এর বিশেষ অভিযানে গত রোববার বিকেল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৯৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
৮ দিন আগে