Ajker Patrika

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত ও অবসায়ন

উৎকণ্ঠায় শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা

  • আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা স্পষ্ট হলেও শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
  • ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী, শেয়ারহোল্ডার কোনো ক্ষতিপূরণ বা নতুন শেয়ার পাবেন না।
  • নতুন ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে সেখানেও পুরোনো বিনিয়োগকারীরা কোনো মালিকানা পাবেন না।
  • আইনি কাঠামো অনুযায়ী খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই: আরিফ হোসেন খান, মুখপাত্র, বাংলাদেশ ব্যাংক
  • স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসির চিঠিতে চার সুপারিশ।
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ৪৮
উৎকণ্ঠায় শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা

অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়া সরকারের এক বড় সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারের হাজারো সাধারণ বিনিয়োগকারী এখন অনিশ্চয়তার ছায়ায়। লুটপাট ও অনিয়মে জর্জরিত পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংককে একীভূত করে নতুন ব্যাংক গঠন এবং ৯টি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার এই উদ্যোগকে আর্থিক খাতের সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখলেও এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের পুঁজি কীভাবে সুরক্ষিত থাকবে, তা এখনো কেউ স্পষ্ট করে বলেনি।

সরকারের পরিকল্পনায় আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এতে বাজারে ব্যাপক হতাশা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, যাঁরা বছরের পর বছর ধরে এই ব্যাংকগুলোর শেয়ার কিনে রেখেছেন, তাঁদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রাখা হয়েছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে আজকের পত্রিকাকে বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ঘোষণা নেই। এই অস্পষ্টতার কারণেই ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর এখন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে এখনই একটা পরিষ্কার সিদ্ধান্ত দরকার।

তথ্য অনুযায়ী, একীভূত বা বন্ধ হতে যাওয়া ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩টি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এই ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলোয় গত কয়েক বছরে লুটপাট, অনিয়ম ও অপব্যবস্থাপনার কারণে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য নেতিবাচক হয়ে গেছে। কিছু ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৭৫ টাকা থেকে শুরু করে ৪৩৮ টাকা পর্যন্ত নেমে গেছে। অর্থাৎ এদের সম্পদের চেয়ে দায় অনেক বেশি। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় একীভূত হলে শেয়ারহোল্ডাররা কোনো ক্ষতিপূরণ পাবেন না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, নতুন ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী, একীভূতকরণের ক্ষেত্রে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা নতুন শেয়ার পাবেন না। নতুন ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে, কিন্তু পুরোনো ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগকারীরা সেখানে কোনো মালিকানা পাবেন না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, শেয়ারহোল্ডারদের বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, তবে আইনি কাঠামো অনুযায়ী খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।

ব্যাংক একীভূতকরণ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় অভিযোগ, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে কোনো পরামর্শ করা হয়নি। এমনকি তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোও তাদের শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে পারেনি যে তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে। স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশের সুযোগও দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে ব্যাংক একীভূতকরণ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। সেখানেও বিএসইসির কোনো প্রতিনিধি রাখা হয়নি।

সম্প্রতি বিএসইসি এই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সাধারণ বিনিয়োগকারীরা দায়ী নন, তাই তাঁদের স্বার্থ সংরক্ষণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

বিএসইসি চারটি সুপারিশ করেছে—প্রথমত, ব্যাংকের সম্পদমূল্য নির্ধারণের সময় শুধু হিসাবের ব্যালান্স নয়, তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু, শাখা নেটওয়ার্ক, ক্লায়েন্ট বেস ও সার্ভিস সক্ষমতাও বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, দায়ী ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যা আদায় করা সম্ভব, তা বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের অংশে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তৃতীয়ত, দায়ী ব্যক্তিদের শেয়ার বাদ দিয়ে অন্য সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের ন্যূনতম স্বার্থমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। চতুর্থত, এই মূল্যায়নের ভিত্তিতে একীভূতকরণের অনুপাত নির্ধারণ এবং নতুন ব্যাংকের শেয়ার ইস্যু বা ডিলিস্টিংয়ের আগে বিনিয়োগকারীদের অধিকার স্পষ্ট করতে হবে।

বিএসইসির মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, ‘একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী আইনে যতটা সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে আমরা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলেছি।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া অবস্থায় ফেলে রাখার দায় বিনিয়োগকারীদের নয়। এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান ও পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো লুট করেছে, তারা দায়ী। সরকার চাইলে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কিছুটা ক্ষতিপূরণ দিতে পারে। কারণ, আমানতকারী আর শেয়ারহোল্ডারই শেষ পর্যন্ত একই আর্থিক ব্যবস্থার অংশ।

অন্যদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, সব চিন্তা আমানতকারীদের ঘিরে, কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের নিয়ে কেউ ভাবছে না। তাঁদের যেন বঞ্চিত না করা হয়, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংককে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই অনিশ্চয়তা এখন বাস্তব আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক মাসে বাজারে এই ব্যাংকগুলোর শেয়ারদর একবার হঠাৎ অর্ধেকে নেমেছে, আবার কিছুদিন পর অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে; যেখানে কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। অনেকেই না বুঝে এই অস্থিরতার সময় শেয়ার কিনে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’ বিএনপি প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করতে ব্যাংকের চিঠি

রুমিন ফারহানাসহ আরও যাঁদের বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা

খালেদা জিয়ার জানাজা: যেসব পথে নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

এলাকার খবর
Loading...