Ajker Patrika

বিধির বাইরে টাকা তুললেন ডিসি

  • গঠনতন্ত্র উপেক্ষা; নিজেকে আহ্বায়ক করে অ্যাডহক কমিটি গঠন
  • দুই সদস্যের স্বাক্ষরে পাঠানোর নিয়ম থাকলেও একক স্বাক্ষরে তিনটি চেক পাঠান ডিসি
ইয়াহ্ইয়া মারুফ, সিলেট 
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১৬: ৩০
মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। ছবি: সংগৃহীত

‘জালালাবাদ অন্ধ কল্যাণ সমিতি, সিলেট’র গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ক্ষমতার জোরে অ্যাডহক কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের বিরুদ্ধে। সদস্যরা বলছেন, সমিতির বাইরের লোকজন দিয়ে আট সদস্যের ‘মনগড়া’ এই কমিটির আহ্বায়ক ডিসি নিজেই। তা ছাড়া, সমিতির অ্যাকাউন্ট নিজের স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে দাবি করে ব্যাংককে চিঠি দেন। সেই সঙ্গে টাকা উত্তোলনের জন্য চেকও পাঠান। প্রথমে চেক আটকালেও পরে ব্যাংক টাকা ছাড় করেছে বলে জানা গেছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমিতির সদস্যরা সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত একটি আবেদনে বিভাগীয় কমিশনারের উদ্যোগে বিষয়টির নিষ্পত্তির দাবি জানানো হয়।

বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘আমি ঢাকায় মিটিংয়ে আছি। ফোন করে বিষয়টি দেখার জন্য বলব। সিলেটে ফিরেও খোঁজ করব।’

সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব জীবন, দাতা ও করপোরেট সদস্যের সমন্বয়ে ‘সাধারণ পরিষদ’ গঠিত হবে। সর্ব ক্ষমতার অধিকারী সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘কার্যকরী পরিষদ’ গঠন করা হবে। ২১ সদস্যের কার্যকরী পরিষদের কমিটিতে পদাধিকার বলে সিলেটের জেলা প্রশাসক সভাপতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) অন্যতম সহসভাপতি হবেন।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগ দেন ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তা মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সমিতির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সভাপতিত্বে সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী জানান, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর তৎকালীন কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ শেষ। নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু সাধারণ সভায় কোরাম পূর্ণ না হওয়ায় সভাপতি একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনসহ চারটি সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই সভার কার্যক্রম শেষ করেন।

গঠনতন্ত্রের ধারা ১৭ এর (গ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোরাম পূর্ণ না হলে মুলতবি হওয়া সভা পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে একই আলোচ্য বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত হবে। সেটা না করেই অ্যাডহক কমিটি গঠন করেন। সভায় উপস্থিত সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ২৬ জানুয়ারি এ নিয়ে সভাপতিকে একটি চিঠি দেন।

গঠনতন্ত্রের ধারা ১৬-এ বলা আছে, কোনো কারণে কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন/মনোনয়ন যথাসময়ে সম্ভব না হলে এবং চলমান কার্যকরী পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন/মনোনয়ন পর্যন্ত চলমান কমিটি দৈনন্দিন কাজকর্ম পরিচালনা করবে তবে কোনো গুরুত্ববহ বা নীতিনির্ধারণী-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না।

সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা জানাইছি, এটা আমাদের সংবিধানে নাই। সংবিধানে যেহেতু বলে না, সেহেতু এটা বৈধ না। সংবিধানে অ্যাডহক কমিটির কোনো অপশন নাই।’

গঠনতন্ত্রের ধারা ১৯ অনুযায়ী সমিতির সভাপতিকে আর্থিক কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি এবং একক স্বাক্ষরে কোনো চেক পাস করানোর বিধান নাই। আর জেলা প্রশাসক নিজে অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক হলেও চিঠিপত্রে ‘সভাপতি’ পদ ব্যবহার করছেন।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও শাখাপ্রধান গোবিন্দ কুমার পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি সমাধান হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার চেকগুলো ছাড় দেওয়া হয়েছে।’

একক স্বাক্ষরে চেক পাঠানোর বিষয়টি অস্বীকার করে মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, ‘এটা যৌথ স্বাক্ষরে পাঠানো হয়েছে। আর এখানে কোনো সংবিধান নাই। উনারা যে গঠনতন্ত্র বলতেছে, ওই গঠনতন্ত্র সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত হইতে হবে। অনুমোদিত কোনো গঠনতন্ত্র এখানে নাই। আমরা গঠনতন্ত্র সঠিকভাবে করার জন্য একটা কমিটি গঠন করছি আর একটা অ্যাডহক কমিটি করছি যাতে এটি ঠিকমতো চলে।’

তবে সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সংশোধিত গঠনতন্ত্র সমাজসেবায় অনুমোদন করানো হয়নি ঠিক। কিন্তু এটা আমরা সাধারণ সভায় অনুমোদন করে এত দিন ধরে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এখন হঠাৎ করে কেন এটা বাতিল করা হবে? এটা কারোর করার অধিকার নাই; শুধু সাধারণ পরিষদ ছাড়া।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনা-৩ আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল, বৈধ ৯টি

খুলনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনা-৩ (খালিশপুর-দৌলতপুর-খানজাহান আলী-আড়ংঘাটা) আসনে তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এই আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে ৯ জনের মনোনয়ন বৈধ এবং ৩ জনের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সাল কাদের এই তথ্য জানান।

ফয়সাল কাদের জানান, ঋণখেলাপিসহ বিভিন্ন কারণে যাঁদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তাঁরা হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ মোল্যা, আবুল হাসান সিদ্দিক ও আরিফুর রহমান মিঠু। তবে তাঁরা চাইলে বিধি অনুযায়ী আপিল করতে পারবেন।

এই আসনে যাঁদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরা হলেন ইসলামী আন্দোলনের মো. আউয়াল, বিএনপির রকিবুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর মাহফুজুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ খান লিটন ও মইন মোহাম্মদ মায়াজ, বাসদের জনার্দন দত্ত, খেলাফত মজলিসের এফ এম হারুন অর রশিদ, এনডিএমের শেখ আরমান হোসেন এবং জাতীয় পার্টির আব্দুল্লাহ আল মামুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়, থার্টি ফার্স্ট নাইটে ৭ দফা বিধিনিষেধ পুলিশের

মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
আপডেট : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৩
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রতিবছর থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে। এ বছরও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা কক্সবাজারে এসেছেন। তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের আবহ বিরাজ করায় অনেকেই ভ্রমণ বাতিল করেছেন বলে জানিয়েছেন পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামীকাল ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতসহ উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান ও জনসমাগম না করতে ৭ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার জেলা পুলিশের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব, অপপ্রচার ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানো, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট, নাশকতা কিংবা সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে সবাইকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া উচ্চ শব্দে হর্ন বাজানো, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি ও মোটরসাইকেল চালানো নিষিদ্ধ থাকবে।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস বলেন, থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার শহর ও সমুদ্রসৈকতে আতশবাজি ও পটকা বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকবে। একই সময়ে উন্মুক্ত স্থান ও রাস্তায় কোনো কনসার্ট কিংবা নাচগানের আয়োজন করা যাবে না। পাশাপাশি ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বার ও মদের দোকানে বেচাকেনা বন্ধ থাকবে।

অলক বিশ্বাস জানান, বিধিনিষেধ কার্যকরের পাশাপাশি শহরের প্রবেশমুখসহ গুরুত্বপূর্ণ ১০টি স্থানে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নজরদারি জোরদার করা হবে।

পর্যটকের উপস্থিতি

বছরের শেষ দিন ও নতুন বছরের শুরুতে কক্সবাজারে সাধারণত পর্যটকের ঢল নামে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারাও সৈকতে ভিড় জমান। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে ৮-৯ বছর ধরে সৈকতে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের উন্মুক্ত কোনো আয়োজন হচ্ছে না। শহরের কয়েকটি মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্টে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান হলেও এবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সেসব আয়োজনও বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হোটেলের মালিকেরা।

হোটেল ও রিসোর্টের মালিকেরা বলেন, ‘শোকাবহ পরিস্থিতির কারণে অনেক পর্যটক বুধবারের কক্ষ বুকিং বাতিল করেছেন। আবার যাঁরা মঙ্গল বা বুধবার কক্সবাজারে আসার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁদের বড় অংশই সফর স্থগিত করেছেন।’

কক্সবাজার শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্টহাউস ও কটেজে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পর্যটকের রাতযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খানসামায় গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার ২ নম্বর ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া চেয়ারম্যানপাড়া গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে গ্রাম সমিতির অফিসের বারান্দায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে ভ্যানযোগে খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

খানসামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাছেত সরদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, লাশটির পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। মৃত্যুর কারণ ও পরিচয় উদ্‌ঘাটনে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বগুড়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক নিয়ে আত্মগোপনে স্বামী

বগুড়া প্রতিনিধি
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রিফাত জাহান রিংকি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ায় রিফাত জাহান রিংকি (১৯) নামের এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার দিকে সদর উপজেলার নুনগোলা দক্ষিণ পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মৃত্যুর পরপরই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বাড়ির সিসিটিভির হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় এই ঘটনায় সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত রিংকি শাজাহানপুর উপজেলার নন্দকুল উত্তর পাড়া গ্রামের রাশেদুল ইসলামের মেয়ে। পাঁচ বছর আগে নুনগোলা এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে নুরুন্নবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের চার বছর বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে প্রতিবেশীরা রিংকিকে বাড়ির উঠানে স্বাভাবিকভাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে দেখেন। যদিও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মাঝেমধ্যে পারিবারিক কলহের কথা শোনা যেত। রাতের দিকে হঠাৎ তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

নিহত রিংকির বোন আশা খাতুন জানান, বিকেলে রিংকির মোবাইল থেকে তাঁর ফোনে একটি মিসকল আসে। পরে একাধিকবার ফোন করলেও রিংকি ফোন ধরেননি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতে নুরুন্নবী ফোন করে জানায়, রিংকির ওপর জিনের আছর পড়েছে। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রিংকির নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তখন তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন লক্ষ করা যায়।

রিংকির মামি আয়না খাতুন বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে রিংকিকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই আলামত নষ্ট করতে বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। আমরা এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত স্বামী নুরুন্নবী ও তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য বাড়িতে নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু রায়হান বলেন, ‘এর আগে তাঁদের মধ্যে কোনো ঝগড়াবিবাদের কথা আমার জানা ছিল না। হঠাৎ রাতে মৃত্যুর খবর পাই। ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে আত্মহত্যার কোনো সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত