Ajker Patrika

পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা

শিপুল ইসলাম, পঞ্চগড় থেকে 
পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ: আতঙ্কে এলাকায় ফিরছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা

পোড়া গন্ধ বাতাসে উড়ছে। পড়ে আছে ছাই আর কাঠ-কয়লা। কোলাহল, পদচারণা নেই সাধারণ মানুষের। যে দিকে চোখ যায় শুধু পুলিশ, বিজিবি আর র‍্যাব সদস্যরা। পঞ্চগড়ের আহমদিয়া জামায়াতের ‘সালানা জলসা’কে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, নিহত, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনার চার দিন পরও এমন অবস্থা দেখা গেছে গ্রামগুলো ঘুরে। তবে রোববার থেকে শহরের সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। এ ঘটনায় বিরোধী দলগুলো প্রশাসনের দুর্বলতার কথা বলছে। আর ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দুষছেন বিএনপি-জামাতকে।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়ন ও বোদা উপজেলার বিংহারী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর দক্ষিণ ধারে ৫ কিলোমিটার জুড়ে আহমদনগর, ফুলতলা, সালসিড়ি, গোয়ালপাড়া, সোনাতলা গ্রামের তিন হাজার আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পরিবারের বসবাস। গত শুক্রবার ‘সালানা জলসা’ বন্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামগুলোর ১৭৯টি পরিবারে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট করেন দুর্বৃত্তরা। এরপর শনিবার ফের গুজব রটিয়ে হামলা চালায়, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনার পর গ্রাম ছেড়েছেন আহমদিয়ারা। ফের হামলার আতঙ্কে গ্রামে ফিরছেন না কেউ। 

ঘটনার চার দিনেও সরকারি কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি। তবে আজ সোমবার সকালে হামলার শিকার এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বাড়ি সংস্কারের আশ্বাস দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি আহমদিয়া নেতাদের হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক লাখ টাকা, শাড়ি ও কম্বল দেন। 

এ সময় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল আলিম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এমএম সিরাজুল হুদা, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বহিঃসম্পর্ক, গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ আহমদিয়া জামায়াতের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

এ সময় মন্ত্রী বলেন, একটি গোষ্ঠী সব সময় ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা ফৌজদারি অপরাধ ঘটাচ্ছে। পঞ্চগড়ে তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিএনপি-জামাত যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা একাত্তরের নৃশংসতাকেও হার মানায়। বিএনপি-জামাত নামে-বেনামে গুপ্ত হামলা করে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। 

গত শুক্রবারের হামলার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছে। পঞ্চগড় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক জানান, প্রতি বছরই আহমদিয়া সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে জলসা করে আসছে। কিন্তু স্থানীয় মুসল্লিরা তা মেনে নিতে চায় না। প্রশাসনের দুর্বলতা রয়েছে, আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে জানমালের ক্ষতি হতো না। তবে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, বিএনপি জামায়াতের লোকজনই এই তাণ্ডব চালিয়েছে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টিসহ লুটপাটের উদ্দেশ্যেই তাঁরা এ ঘটনা ঘটায়।

আজ সোমবার সকালে হামলার শিকার এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর বাড়ি সংস্কারের আশ্বাস দেন রেলপথমন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাড নুরুল ইসলাম সুজনসাবেক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাসদের সেক্রেটারি নাজমুল হক প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর সেখানে এমন ঘটনা ঘটেছিল। প্রশাসন নীরব দর্শক ছিল মাত্র। এবারেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মজাহারুল হক প্রধান বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। হামলাকারীদের হাতে অস্ত্র ও মুখে গামছা প্যাঁচানো ছিল। বহিরাগতরা পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালিয়েছে। তবে প্রশাসন চেষ্টা করলে বিষয়টি এত দূর গড়াতো না।

এদিকে কথা হলে সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আহমদিয়াদের জলসা বন্ধ নিয়ে যে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতি আমরা চাইনি। জলসা বন্ধসহ তাদের অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করেছি মাত্র। 

ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রহমান বলেন, তৃতীয় কোনো শক্তি সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে ফিরে এসেছি। এরপর কি ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে তা আমরা জানি না।

ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতির সভাপতি হাফেজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, হামলার উদ্দেশ্যে আমরা বিক্ষোভ করিনি। আমরা শুধু জলসা বন্ধ করতে চেয়েছি। তবে প্রশাসন বৃহস্পতিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে যদি পদক্ষেপ নিয়ে জলসা বন্ধ করত তাহলে তৃতীয় শক্তি এই হামলার সুযোগ পেত না।
    
আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া ও হামলার শিকার ঘরবাড়িগুলোর ধ্বংসস্তূপ পড়ে আছে। যে বাড়িগুলোতে হামলা চালানো হয়নি তাঁরা বাড়িতে থাকলেও তেমন বাইরে বের হচ্ছে না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গ্রাম পুলিশেরা এলাকাগুলো ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছেন।
    
ফুলতলা গ্রামের স্বামীহারা গৃহবধূ তহুরা বেগম বলেন, ‘স্বামী ছাইড়া গেছে চাইর বছর। দুই ছাওয়াল নিয়া বাবার একটা ভাঙা ঘরে সেলাই করি পেট চালাইতাম। ওরা আগুন দিয়া সব পুড়াই দিছে। চার দিন থাকি একবেলা খিচড়ি খায়া আছি। সরকারি কোনো লোক আইসে নাই। সহযোগিতা করে নাই। আমার বাঁচার সম্বল হারাই গেছে।’

তহুরার বাবা-ভাইসহ পরিবারের ৫টি ঘরের সব পুড়ে গেছে। কিন্তু দুই হাত গাঁ ঘেঁষা রমিছা বেগমের বাড়িতে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। কথা হলে রমিছা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চোখের সামনে দাউ দাউ করি সব পুড়ছে। কিছুই কইরার পাই নাই। মুখে-চোখে কাপড় বান্ধি ডিজেল-পেট্রল, মবিল ছিটিয়া আগুন ধরা দিছে।’

তহুরার পাশেই রওশন আরার বাড়ি। আহমদিয়া সম্প্রদায়ে নয় তাই তাঁর বাড়িও বেঁচে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী এই নারী বলেন, ‘হু হু করে ১৮-৪৫ বছর বয়সী লোকজন গ্রামে ঢুকে পড়ে। আহমদিয়ারা তখন জলসায়। এমন অবস্থা যে, তাঁদের ঘরে কেউ থাকলে তাঁরাসহ পুড়ে যেত। জুস, আরসির বোতলে পেট্রল ছিটিয়ে আগুন লাগায় তাঁরা। ঘরহারা মানুষগুলো এখন গ্রাম ছেড়ে রংপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চলে গেছে। কারেন্ট নাই, অন্ধকারে ফাঁকা গ্রামে রাতের বেলায় খুব ভয় হয়। কেউ যদি ক্ষতি করে।’ 
    
ওই গ্রামের সুজন আলী এনজিও থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ইজিবাইক কিনেছিলেন। আগুনে তাঁর বাড়িঘরসহ ইজিবাইকটি পুড়ে গেছে। এখন পড়নে শার্ট-লুঙ্গি ছাড়া কিছুই নেই। সুজন আলী জানান, সপ্তাহে ৪ হাজার ৬০০ টাকা কিস্তি। আইজ (সোমবার) সকালে ফিল্ডম্যান আসছিল, ঘুরে গেছে। এই ঋণ এখন কীভাবে শোধ করব ভেবে পাচ্ছি না। সরকারের সহযোগিতা দরকার। 
    
ঘটনার চার দিনেও সরকারি কোনো সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্তরা না পেলেও বিকেল ৩টার দিকে ফুলতলা বাজার এলাকা বিংহারী ইউনিয়নের এক গ্রামপুলিশকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে দেখা যায়। এ সময় গ্রাম পুলিশ আজগার আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউএনওর নির্দেশে চেয়ারম্যান আমাদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে পাঠিয়েছে। আমরা গ্রাম ঘুরে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। তবে অধিকাংশ বাড়িতে লোকজন না থাকায় তালিকা করতে সময় লাগছে।’ 
    
আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সালানা জলসার আহ্বায়ক আহমদ তবশির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘থাকার জায়গা ও নিরাপত্তা নেই। তাই লোকজন বাড়ি ফিরছেন না। ১৭৯টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁরা নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন। যে দুই চারজন মসজিদে আছেন তাদের আমরা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াচ্ছি। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরতে চাচ্ছেন না। একটি হত্যা মামলা থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। অন্যান্য মামলাগুলো দায়ের প্রক্রিয়া চলছে।’
    
পুলিশ বলছে, ‘সালানা জলসা’ বন্ধকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাঁধা ও গুজব রটানোসহ পৃথক ৬টি মামলায় নাম ও অজ্ঞাত ৮ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৬টি মামলার মধ্যে পুলিশের পক্ষ থেকে ৪টি, একটি র‍্যাব-১৩ ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে ১টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে শনিবার ৩টি ও রোববার ৩টি মামলা করা হয়।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, ৬টি মামলায় ৮১ জন এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে। নিরপরাধ সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে জন্য ভিডিও ফুটেজ দেখে, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশি নিয়ন্ত্রণে জেলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

উল্লেখ্য, ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পঞ্চগড় শাখা, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, পঞ্চগড় কওমি ওলামা পরিষদ ও জাতীয় ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের নেতা-কর্মীরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

এরপর শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল করেন ইসলামি আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় মিছিলে বাধা দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজন নিহত হয়েছেন। এরপর শনিবার রাতে ফের গুজব রটিয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গতকাল রোববার ৩৬ ঘণ্টা পর ইন্টারনেট সেবা সচল করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুয়ারেই বিষাক্ত ধোঁয়া দম বন্ধ পড়াশোনা

জিল্লুর রহমান, মান্দা (নওগাঁ)
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই ইটভাটা। সম্প্রতি নওগাঁর মান্দা উপজেলার সাবাইহাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিদ্যালয়ের আঙিনায় ভাসছে বিষাক্ত ধোঁয়া। নওগাঁর মান্দা উপজেলায় দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অদূরে দীর্ঘদিন ধরে একটি ইটভাটা পরিচালিত হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে কোমলমতি পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। ইটভাটার লাগাতার কার্যক্রমে প্রতিদিনই স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও অসুস্থতায় ভুগেও ক্লাসে বসতে হচ্ছে শতাধিক শিক্ষার্থীকে। নিরাপদ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের বদলে কালো ধোঁয়ার নিচে বড় হচ্ছে তাদের শৈশব—যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের জন্য এক গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে উপজেলার সাবাইহাট এলাকার ঝাঁঝরের মোড়ে ‘যমুনা ব্রিকস’ নামে ইটভাটাটি স্থাপন করা হয়েছে। ভাটার মাত্র ২৫০ মিটার দূরে রয়েছে একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একরুখী উচ্চবিদ্যালয়। আশপাশে রয়েছে আবাসিক এলাকা ও দুটি আমবাগান। গোসাইপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি ভাটাটি পরিচালনা করেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ফিক্সড চিমনির মাধ্যমে ইট পোড়ানো হচ্ছে। কয়লার পাশাপাশি কাঠের খড়ি ব্যবহার করায় ধোঁয়ার মাত্রা আরও বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাসে বসে পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১৩ সালের সংশোধনী) অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা ও বাগানের ১ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা নিষিদ্ধ। তবে এই আইন অমান্য করেই প্রায় ২০ বছর ভাটাটি পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

একরুখী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, গত বছর ভাটা চালু হওয়ার পর তার এক সহপাঠী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা নিতে হয়। অনেক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টে ভোগে বলেও জানায় সে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন, ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান কামরুল বলেন, ইটভাটাটি নিয়ে তেমন কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কিছুদিন আগে ভাটামালিক ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন।

জানতে চাইলে ভাটামালিক কার্তিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েই ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। আগামী বছর থেকে আর ব্যবসা করব না।’

এ বিষয়ে ইউএনও আখতার জাহান সাথী বলেন, যমুনা ব্রিকসের পরিবেশ ছাড়পত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে লাইসেন্সবিহীন সব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খাগড়াছড়ির ১ আসন

ভোটের মাঠে: জয়ের সমীকরণ পাল্টেদেবে পাহাড়ি ভোটার

  • স্বতন্ত্র ও আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরা হেভিওয়েটদের জয়ে বড় বাধা হতে পারে।
  • পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে: বিএনপির প্রার্থী
নীরব চৌধুরী বিটন, খাগড়াছড়ি
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল পাহাড়ি এলাকার তিনটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি খাগড়াছড়ি। আসনটিতে বিভিন্ন দলের হেভিওয়েট প্রার্থীর পাশাপাশি স্বতন্ত্র ও আঞ্চলিক দলের প্রার্থীরাও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। স্বতন্ত্র ও আঞ্চলিক দলের এসব প্রার্থী হেভিওয়েটদের জয়ে বড় বাধা হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সবুজ পাহাড়ের রাজনীতির হিসাবনিকাশ বুঝতে মূল রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি আঞ্চলিক দলগুলোর ভোটের অঙ্ক কষতে হয় বিশ্লেষকদের। ভোটের সময় সেই অঙ্কে যুক্ত হয় পাহাড়ি-বাঙালি সমীকরণ। এবার জয়ের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে পাহাড়ি ভোটাররা।

২৯৮ নম্বর খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপি, জামায়াত, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৬ জন। তাঁরা হলেন বিএনপির প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, জামায়াতের এয়াকুব আলী, ইসলামী আন্দোলনের মো. কাউসার, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের নুর ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী সমীরণ দেওয়ান, সন্তোষিত চাকমা, লাব্রিচাই মারমা, ধর্ম জ্যোতি চাকমা, সোনা রতন চাকমা, স্বতন্ত্র প্রার্থী জিরুনা ত্রিপুরা, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মিথিলা রোয়াজা, খেলাফতে মজলিস মনোনীত আনোয়ার হোসাইন মিয়াজী, গণঅধিকার পরিষদ মনোনীত দীনময় রোয়াজা, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ মনোনীত মো. মোস্তাফা, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি মনোনীত উশোপ্রু মারমা। এদিকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মনোনীত প্রার্থী মনজিলা সুলতানা ঝুমা।

জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দল প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বেশ কৌশলী এবং শক্তিশালী। কারণ পাহাড়ি ভোটার। স্থানীয় আঞ্চলিক দল ও আঞ্চলিকতার প্রশ্নে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটের বাক্সে বেশ এককাট্টা স্থানীয় ভোটাররা।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) নির্বাচনের ব্যাপারে আগে নীরব থাকলেও এখন তারা অনেকটা সরব। পাহাড়ের আরেক শক্তিশালী রাজনৈতিক সংগঠন জনসংহতি সমিতি জেএসএস (এমএন লারমা) সরাসরি ভোটে না এলেও পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়ার কথা বলছে। ফলে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য জয়ে আশার বাতিঘরে কিছুটা হতাশাও বেশ প্রকাশ্যে। এ ছাড়া প্রার্থীর যোগ্যতা, ভোটারদের বিগত দিনের বিশ্লেষণ এবং হিসাবনিকাশে জয়ে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হতে পারে আশাবাদী দলগুলো।

আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার আগপর্যন্ত পাহাড়ের ভোটের যে সমীকরণ ছিল; এখন সেটা পাল্টে গেছে। কারণ আঞ্চলিক দলগুলো নির্বাচনে না এলে ভোটের মাঠ অনেকটা বিএনপি ও জামায়াতের দখলেই থাকত। কিন্তু ইউপিডিএফ ও জেএসএসের নির্বাচনে থাকার ঘোষণা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মাত্রা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, আগামী নির্বাচন সরল-দ্বিমুখী লড়াইয়ের বদলে কোথাও কোথাও কঠিন-ত্রিমুখী লড়াইয়ে পরিণত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বিএনপি। যদিও আওয়ামী লীগহীন এই নির্বাচনে বিএনপি সারা দেশেই বড় জয়ের আশা করছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ভোট কোন বাক্সে পড়বে, সেটিও দেখার পালা এবার।

পাল্টে যাওয়া সমীকরণ

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য খাগড়াছড়িতে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রার্থী ঘোষণার আগ থেকেই গণসংযোগে রয়েছেন। প্রার্থিতা ও তফসিল ঘোষণার পর প্রচারে আরও সরব হয়ে উঠেছেন তিনি। ইউপিডিএফ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণার আগপর্যন্ত এখানে ওয়াদুদ ভূঁইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত এয়াকুব আলীকে ধরা হলেও এখন সমীকরণ পাল্টে গেছে।

বিএনপির প্রার্থী ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি আগেও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। জনগণ আমাকে চিনে। জেলার বেশির ভাগ সড়ক, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, বিহার আমার সময়ে নির্মিত হয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এরই মধ্যে চাকমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মানুষ স্বতন্ত্রভাবে আমার সমর্থনে সমাবেশও করেছে।’

জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এয়াকুব আলী বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ তৈরি করব, যেখানে নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে, নিরাপত্তা নিয়ে ভয়হীন দেশে ইনসাফের সঙ্গে বসবাস করবে। পাহাড়ি-বাঙালি মিলেমিশে তৈরি হবে এক সম্প্রীতির বাংলাদেশ।’

জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী দল। তবে এই নির্বাচনে আমরা সরাসরি কোনো প্রার্থী না দিলেও কোনো না কোনো প্রার্থীকে সমর্থন দেব। তবে কোনো দলকে নয়। খাগড়াছড়ির এবার পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।’

পাহাড়িদের দীর্ঘদিনের ভূমি, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অধিকারসংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে জাতীয় দলগুলোর আন্তরিকতা নিয়ে অভিযোগও বেশ পুরোনো। এই প্রেক্ষাপটে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী থেকে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিষয়টিকে বেশ গুরুত্বসহকারে দেখছেন স্থানীয় পাহাড়ি ভোটাররা। এখানেই তাঁরা এককাট্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন’

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত
হাসান মামুন। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার রাত ৮টা ৩৪ মিনিটে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে হাসান মামুন বলেন, ‘সবকিছু বুঝলাম, তাই বলে মজলুম নেত্রীর ইন্তেকালের দিনে দলের ও রাজপথের মজলুম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা? ক্ষমতার মোহে আল্লাহর আরশ কাঁপানোর মতো বেপরোয়া হলেন?’

এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ১৪ মিনিটে আরেক পোস্টে হাসান মামুন বলেন, বিএনপি থেকে বহিষ্কারের আগেই তিনি দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। এ-সংক্রান্ত দুটি ছবি তিনি পোস্ট করেন, যেখানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের স্ক্রিনশট সংযুক্ত ছিল। পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ২৮ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

পরে সন্ধ্যা ৭টা ২৬ মিনিটে দেওয়া আরেক পোস্টে হাসান মামুন লেখেন, ‘বিএনপির সিদ্ধান্ত পূর্বনির্ধারিত। আমি আগেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। নেতা-কর্মীদের সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ ও ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

রাত ৮টা ৩৮ মিনিটে দেওয়া পৃথক এক পোস্টে হাসান মামুন প্রশ্ন তোলেন, ‘ময়মনসিংহের ফখরুদ্দিন বাচ্চুকে বহিষ্কার, তার বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে মামলা করার কত দিন পরে ডেকে এনে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও সঙ্গে মনোনয়ন দেওয়া হলো?’

এরপর রাত ৮টা ৪০ মিনিটে আরেক পোস্টে হাসান মামুন লেখেন, ‘বিএনপির সকল সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন হাসান মামুন। তবে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসনটি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। এরপরও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। একই সঙ্গে তিনি নিজ উদ্যোগে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এসব কর্মকাণ্ড বিএনপির গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলার পরিপন্থী হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে হাসান মামুনকে দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শফিকুল মারা গেছেন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শফিকুল ইসলাম (৩৫) মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৭টায় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহত শফিকুল ইসলাম আব্দুল সামেদ ও রোকেয়া বেগম দম্পতির ছেলে। তাঁরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী পূর্ব এলাকায় বসবাস করেন। তিনি গাজীপুরের গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা। হালুয়াঘাট উপজেলার দর্শারপাড় গ্রামের বাসিন্দা।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুরে উত্তরা আজমপুরে ডান পায়ের ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হন শফিকুল। তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে সরকার তাঁকে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য পাঠাতে সব কাগজপত্র ব্যবস্থা করলে তিনি দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি তাঁর জ্বর ও অন্যান্য শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সোমবার গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিকুল ইসলাম মারা যান।

এদিকে তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজন, সহযোদ্ধা ও এলাকাবাসী তাঁকে একজন সাহসী জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করছে।

হালুয়াঘাট জুলাই শহীদ ও আহত সেলের প্রতিনিধি রিদওয়ান সিদ্দিকী জানান, শহীদ শফিকের জানাজা নামাজ বুধবার সকাল ১০টায় হালুয়াঘাট উপজেলার দর্শারপাড় মামা পাগলা মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে তাঁকে হালুয়াঘাটে নিজ এলাকায় দাফন করা হবে।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি নুরুল ইসলাম সাদ্দাম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আজ হলুয়াঘাটের এক আহত জুলাই যোদ্ধা শফিকুল ইন্তেকাল করেছেন। তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রায় দেড় বছর ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন।

নিহত শফিকুলের ছোট বোনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মরদেহ হালুয়াঘাটে নেওয়ার জন্য একটি ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমরা গাজীপুরে শফিকের জানাজা শেষে হালুয়াঘাটের উদ্দেশে রওনা হই। বুধবার জানাজা শেষে তাঁর দাফন করা হবে।’

শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া আরও বলেন, সরকার থেকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তবে জুলাই যোদ্ধা শফিক বিদেশ যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি গুলির স্থানে ইনফেকশন হয়, যে কারণে জ্বর আসে। পরে সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শফিক মারা যান। চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিউমোনিয়া ও গুলির স্থানে ইনফেকশনের কারণে তিনি মারা গেছেন।

হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম বলেন, জুলাই যোদ্ধা শফিক গাজীপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলিনুর খান বলেন, মৃত্যুর খবর পেয়ে মরদেহে হালুয়াঘাটে আনার জন্য ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় তাঁর জানাজা হবে। সেখানে উপস্থিত থেকে যথাযথ মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হবে। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত