Ajker Patrika

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাতের ছোট্ট কাঁধে সংসারের দায়িত্ব

আব্দুল্লাহ আল মারুফ, কামারখন্দ (সিরাজগঞ্জ)
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৩, ১২: ৩২
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাতের ছোট্ট কাঁধে সংসারের দায়িত্ব

ঘড়ির কাঁটা বলছে সাড়ে ৬টা বাজে। সবে কর্মব্যস্ত হতে শুরু করেছে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের রসুলপুর বাজার। কেউ এসেছেন বাজার করতে, কেউ সকালের নাশতা করতে, কেউ আবার আদরের সন্তানের জন্য নাশতা কিনছেন। তবে এ সময় দম ফেলার ফুরসত নেই চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া সিফাত হোসেনের। ভোর থেকেই কাজে লেগে গেছে সে বাজারের এক চায়ের দোকানে।

সিফাতের বাবা মারা গেছেন। মা অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী। অর্থাভাবে চিকিৎসা করানো যাচ্ছে না। মায়ের ওষুধের টাকা ও সংসারের হাল ধরতেই পড়াশোনার পাশাপাশি ভোরে ঘুম থেকে উঠেই চায়ের দোকানের কাজে লেগে যায় সিফাত। ২ ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পায় ৫০ টাকা। এ টাকা আর অন্যদের সহায়তা মিলিয়ে মায়ের ওষুধ, কাঁচাবাজার ও নিজের পড়াশোনা খরচ চালাতে হয়।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার রসুলপুর গ্রামের দিনমজুর মৃত মাসুদ রানার একমাত্র ছেলে সিফাত হোসেন। রায়দৌলতপুর ইউনিয়নের রসুলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

রসুলপুর বাজারে প্লেট পরিষ্কার করছে সিফাতসিফাতের বয়স যখন ৪ মাস তখন তার বাবা মারা যান। মা শিল্পী খাতুন অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পেতেন তাতে এবং প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনোমতে চলত মা-ছেলের সংসার। কিন্তু শিল্পী খাতুন কয়েক বছর ধরে শয্যাশায়ী হওয়ায় অন্যের বাড়িতে আর কাজ করতে পারেন না। এ জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া সিফাতকে বাধ্য হয়েই চা-পরোটার দোকানে কাজ করতে হয়। 

সিফাত হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলে, মায়ের চিকিৎসা খরচ, কাঁচাবাজার ও নিজের পড়াশোনার খরচের জন্য প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৫০ টাকার বিনিময়ে চায়ের দোকানে কাজ করি। এরপর খাওয়াদাওয়া শেষ করে বিদ্যালয়ে চলে যাই। 

প্রতিবেশীরা জানান, ছেলেটিকে দেখে অনেক মায়া হয় তাঁদের। এ বয়সেই দোকানে কাজ করে। আর তার সে টাকায় চলে সংসার। গ্রামের মানুষ নিজেদের জায়গা থেকে তাদের সাহায্য করে। কিন্তু তাতে আসলে কিছুই হয় না। বিত্তবান ও সরকারের প্রতি ছেলেটির পড়াশোনা ও তাদের সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান এলাকাবাসী। 

নিজ বাড়িতে মায়ের পাশে বসে আছে সিফাতসিফাত যে দোকানে কাজ করে তার মালিক আনোয়ার বলেন, ‘ছেলেটি আমার প্রতিবেশী। ওর বাবা অনেক আগেই মারা গেছে। ছেলেটা সম্পর্কে আমার চাচাতো ভাই। ওকে দিয়ে হালকা ধরনের কাজ করানো হয়। যেমন পানি আনা, প্লেট ধোয়া, চায়ের কাপ আনা-নেওয়া ও টেবিল মোছা। প্রতিদিন সকালে দেড় ঘণ্টা কাজের বিনিময়ে ছেলেটিকে খাওয়ার জন্য পরোটা ও ৫০-৬০ টাকা দেওয়া হয়। ওই টাকা থেকে সিফাত কাঁচাবাজার, নিজের পড়াশোনার খরচ ও মায়ের ওষুধ কেনে। আমরা যারা প্রতিবেশী আছি তারা ওদের সব ধরনের সাহায্য করার চেষ্টা করি।’

সিফাতের মা শিল্পী খাতুন বলেন, ‘স্বামী মারা গেছে ১১ বছর ধরে। আগে শরীর ভালো ছিল। অন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করে চলেছি। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর আর কাজ করতে পারি না। ছেলেটা বাধ্য হয়ে ৫০ টাকার বিনিময়ে কাজ করে। ছেলের টাকা ও দুই ভাইয়ের দেওয়া ২ হাজার টাকায় কোনোমতে সংসার চলে। সরকারের কাছে অনুরোধ, আমার ছেলের পড়াশোনা ও আমাদের পরিবারের দায়িত্ব যেন নেয়।’ 

সিফাতের স্কুলের শিক্ষিকা শান্তি খাতুন বলেন, ‘ছেলেটির পরিবারটিকে শুধু দরিদ্র বললে ভুল হবে। একেবারেই অসহায়। এই অল্প বয়সে সংসারের হাল ধরার জন্য চায়ের দোকানে কাজ করছে সিফাত। তাও ৫০ টাকার বিনিময়ে। সিফাত শিক্ষার্থী হিসেবে ভালো। আমরা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মির্জাপুরে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের চালক নিহত

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেলের চালক নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দেওহাটা ফ্লাইওভারের পশ্চিম পাশে এই দুর্ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ব্যক্তির নাম জানা যায়নি। তবে তিনি গোড়াই সাউথ ইস্ট কারখানার কর্মী বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।

জানা গেছে, সকাল সোয়া ৭টার দিকে সকালে মোটরসাইকেল চালিয়ে মহাসড়কের ধীরগতির লেন দিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন চালক। মহাসড়কের দেওহাটা ফ্লাইওভারের কাছে পৌঁছালে টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা আলোকিত মধুপুর নামে যাত্রীবাহী বাস মহাসড়ক ছেড়ে ধীরগতির লেনে ঢুকে পড়ে মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলের চালক নিহত হন।

দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক গিয়াসউদ্দিন জানান, নিহত ব্যক্তি গোড়াই সাউথ ইস্ট কারখানায় চাকরি করতেন বলে জানতে পেরেছেন। বাসটি জব্দ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভালুকায় সহকর্মীর গুলিতে আনসার সদস্য নিহত, অভিযুক্ত গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বজেন্দ্র দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক বজেন্দ্র দাসকে মৃত ঘোষণা করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাক কারখানায় সহকর্মীর গুলিতে বজেন্দ্র বিশ্বাস (৪০) নামের এক আনসার সদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ৭টায় উপজেলার মেহরাবাড়ি এলাকায় লাবিব গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সুলতানা সোয়েটার্স লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত সহকর্মী আনসার সদস্য নোমান মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত আনসার সদস্য বজেন্দ্র বিশ্বাস সিলেট সদর উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের প্রবিত্র বিশ্বাসের ছেলে। অভিযুক্ত নোমান মিয়া সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর থানার বালুটুরি বাজার এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে। দুজনই সুলতানা সোয়েটার্স লিমিটেড কারখানায় কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কারখানাটিতে ২০ জন আনসার সদস্য কর্মরত ছিলেন। ঘটনার সময় আনসার সদস্য নোমান মিয়া ও বজেন্দ্র দাস একসঙ্গে বসেছিলেন। এ সময় অসাবধানতাবশত নোমান মিয়ার হাতে থাকা শটগান থেকে গুলি বের হলে বজেন্দ্র দাসের বাঁ ঊরুতে গুলি লাগে এবং তিনি গুরুতর আহত হন। পরে সহকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে ভালুকা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর অভিযুক্ত নোমান মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নড়াইলে দুটি আসনে ২৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা

নড়াইল প্রতিনিধি 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৩৪
নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নড়াইলের দুটি সংসদীয় আসনে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় পার্টি, স্বতন্ত্রসহ মোট ২৪ জন প্রার্থী গতকাল সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ডক্টর মোহাম্মদ আবদুল ছালাম জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৪ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে নড়াইল-১ আসনে ১৫ জন প্রার্থী এবং নড়াইল-২ আসনে ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নড়াইল-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মাওলানা মো. ওবায়দুল্লাহ কায়সার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আব্দুল আজিজ, জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে মিলটন মোল্যা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) এস এম সাজ্জাদ হোসেন, সুকেশ সাহা আনন্দসহ ১৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ড. এ জেড এম ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আতাউর রহমান বাচ্চু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা তাজুল ইসলাম, গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থী হিসেবে নূর ইসলাম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মনিরুল ইসলাম, ফরিদা ইয়াসমিনসহ ৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আচরণবিধি মেনে প্রার্থীরা তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের বাইরে দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুলনায় দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ গ্রেপ্তার ৫

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০১
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

খুলনায় দেশীয় অস্ত্র, গুলি ও মাদকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গতকাল সোমবার ভোরে নগরীর লবণচরা থানার মতিয়াখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তাঁরা পুলিশি হেফাজতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন লবণচরা থানার মতিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা আবুল বাশারের ছেলে ইমন শরীফ, একই এলাকার বাসিন্দা আজিজুলের ছেলে সবুজ সাহা, সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার বাসিন্দা হাবিব হাওলাদারের ছেলে ফারুখ হোসেন, পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার কাউখালী এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর ছেলে শাহরিয়ার এবং জয়কুল এলাকার বাসিন্দা হারুনুর রশিদের ছেলে সজল খান।

জানতে চাইলে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিনুজ্জামান বলেন, মেজর মাসুকের নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী শিপইয়ার্ড এলাকার মতিয়াখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে উল্লিখিত আসমিদের আটক করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে শটগানের ৬টি গুলি, ২টি বিদেশি মদের বোতল, ২টি ধারলো ছুরি এবং ১১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাঁদের বিরুদ্ধ মামলা দায়ের করে। আসামিরা শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় তাঁদেরকে পুলিশি হেফাজতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত