Ajker Patrika

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিবহনসেবা কমিয়ে ‘শিক্ষার্থীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’

শাপলা খন্দকার, বগুড়া
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৫৯
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে পরিবহনসেবা কমিয়ে ‘শিক্ষার্থীদের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ’

বগুড়ার সুপরিচিত ও বৃহৎ সরকারি কলেজ আজিজুল হক কলেজ। উত্তরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে এখানে আসেন শিক্ষার্থীরা। স্থানীয়দের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী বাড়ি থেকেই যাওয়া-আসা করেন। এক বছর আগে পরিবহনসেবা সীমিত করায় নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা । ফলে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমেছে।

এক বছরের বেশি সময় ধরে কলেজের বাসগুলো শিক্ষার্থীদের শুধু নিয়ে আসছে, কিন্তু ক্লাস শেষে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে না। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রীরাও গণপরিবহনে যাতায়াত করায় অনিরাপদ বোধ করেন। এর ফলে একদিকে পরিবহনে তাঁদের দেওয়া ফি যেমন আত্মসাৎ করা হচ্ছে, তার ওপর বাড়তি গাড়িভাড়াও দিতে হচ্ছে তাঁদের। এমন পরিস্থিতিতে ভাড়ার টাকা জোগানোর সামর্থ্য না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী কলেজেই আসছেন না।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতিবছর পরিবহন ফি বাবদ আদায় করা হয় মাথাপিছু ২৭৫ টাকা। ২৬ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২৭৫ টাকা করে নিলে বছরে কলেজের কোষাগারে জমা হয় ৭১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন পরিবহন সীমিত করে কলেজ থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া বাদ দিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বছরে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। 

কলেজ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি আজিজুল হক কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থী আছেন মোট ২৬ হাজার। এদের মধ্যে একমাত্র ছাত্রী হলে থাকেন ৬০০ জন। ব্যক্তিগত খরচে মেসে থাকেন আনুমানিক ১১ হাজার জন। বাকি প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়া-আসা করেন। 

কলেজের পরিবহন পুলের মোট সাতটি বাসে ৩১০টি আসন আছে। একটি বাস জেলা সদরের শিক্ষার্থীদের আনা-নেওয়ার জন্য বরাদ্দ। বাকি ছয়টি বাস যায় সোনাতলা উপজেলার সদর রেলঘুণ্টি, সারিয়াকান্দির উপজেলা বাজার, নন্দীগ্রামের সদর বাজার, শেরপুর-ধুনট মোড়, দুঁপচাচিয়ার জে কে কলেজের সামনে ও শিবগঞ্জের পীরবে। 

এসব বাসস্টপে সকাল ৮টায় গিয়ে বাস থামে; শিক্ষার্থী নিয়ে কলেজে পৌঁছায়। কিন্তু বিকেলে ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসা হয় না। সকালে কলেজ বাসে এলেও শিক্ষার্থীদের ফিরতে হয় নিজ খরচে, নিজ দায়িত্বে। এই অবস্থা চলছে গত বছরের (২০২১) ১২ সেপ্টেম্বর থেকে। 

এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা; দৈনিক ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচ হচ্ছে তাঁদের। কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। আর পরিবহনসেবা না থাকার কারণে কমেছে ক্লাসে তিন-চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিতি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রতিটি বিভাগের প্রথম বর্ষের ২০০ জনের মতো শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও এ বছর তা কমে ৩০-৫০ জনে ঠেকেছে। 

আজ সোমবার কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসে ৩০ জন উপস্থিত আছেন। এই বিভাগের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০ জন। হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ক্লাসে উপস্থিত আছেন ৬৫ জন শিক্ষার্থী। এই বিভাগের মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩২৫ জন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমার ক্লাসে শুরুর দিকে ১৫০ জনের মতো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল। কিন্তু এখন ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে।’

দুপচাঁচিয়া থেকে কলেজে আসেন হিসাববিজ্ঞান প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী লক্ষ্মণ চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, ‘দুপচাঁচিয়ায় যেতে আমার ৬৫ টাকা ভাড়া লাগে। সপ্তাহে চার দিন কলেজে এলে খরচ দাঁড়ায় ২৮০ টাকা। মাসে খরচ হয় ১ হাজার ১২০ টাকা। আমার কৃষক পরিবার। আমি এত টাকা জোগাতে পারি না। তাই কলেজেই আসা কমিয়ে দিয়েছি।’

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘দূর থেকে কলেজে আসা-যাওয়া করি। কলেজের বাসে নিশ্চিন্তে আসা যায়। কিন্তু অন্যান্য যানবাহনে এলে অনিরাপদ বোধ হয়। মা কলেজে আসতে নিরুৎসাহিত করেন।’

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কলেজ থেকে সোনাতলা বাসস্টপের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার, সারিয়াকান্দির ২২ কিলোমিটার, নন্দীগ্রাম ২০ কিলোমিটার, শেরপুর-ধুনট মোড় ২২ কিলোমিটার এবং শিবগঞ্জ ১৭ কিলোমিটার। দূরত্ব অনুযায়ী ছয়টি উপজেলায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল দুবার যাওয়া-আসা করতে জ্বালানি প্রয়োজন হয় ২০৬ লিটার।

প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ১০৯ টাকা করে হলে দৈনিক ব্যয় ২২ হাজার ৪৫৪ টাকা। সপ্তাহে ৫ দিন কলেজ খোলা থাকে। সে হিসাবে এক বছরে (২৪০ দিন) এই খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯৬০ টাকা। এক বেলা আসা-যাওয়ায় জ্বালানি খরচ হয় এর অর্ধেক অর্থাৎ ২৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪৮০ টাকা। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা বাৎসরিক পরিবহন ফি থেকে এই খরচ বাদ দিলে দেখা যায়, এক বছরে লুট হচ্ছে ৪৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫২০ টাকা।

আজিজুল হক কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জেলা শাখার সভাপতি ধনঞ্জয় বর্মণ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আবাসিক-অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পরিবহন ফি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম পরিবহনসেবা দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে শিক্ষার্থীদের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এই অনিয়ম শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না।

‘এমনিতেই কলেজের ছাত্রসংখ্যার অনুপাতে বাসের সংখ্যা অপ্রতুল। তার পরও শিক্ষার্থীদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া বন্ধ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এ বিষয়ে জানতে আজ সোমবার বিকেলে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে মিটিং করার জন্য ঢাকায় এসেছি। আপনি পরে ফোন করেন।’

উনি সন্ধ্যায় কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় তাঁকে ফোন দেওয়া হলেও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে কলেজের পরিবহন পুলের দায়িত্বে থাকা আরবি শিক্ষা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রশিদের কাছে গত সেপ্টেম্বর থেকে বাস বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আসলে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন জ্বালানির দাম বেশি, আমাদের ওপর ব্যয় সংকোচন এবং অপচয় রোধ করার তাগিদ রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি
হাসন রাজা। ফাইল ছবি

মরমি কবি হাসন রাজার ১৭১তম জন্মদিন আজ। আধ্যাত্মিক এই সাধকের জন্ম ১৮৫৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। তিনি সুনামগঞ্জ শহরের সন্নিকটে সুরমা নদীর তীরবর্তী লক্ষণছিরি (লক্ষণশ্রী) পরগণার তেঘরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রতাপশালী জমিদার দেওয়ান আলী রাজা চৌধুরী ও হুরমত জাহানের দ্বিতীয় ছেলে তিনি। জন্মের পর তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল অহিদুর রাজা। এক ফার্সি ভাষাভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে তার নাম হয় হাসন রাজা। দেখতে সুদর্শন হাসন জমিদার পরিবারের সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সেই জমিদারির দায়িত্ব নেন। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামপাশা, লক্ষণশ্রীসহ সিলেটের একাংশজুড়ে তার জমিদারি ছিল।

হাসন কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ না করলেও তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত। সরল ভাষায় সহস্রাধিক মরমি গান রচনা করেছেন হাসন। তিনি গানের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন।

তাঁর উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে আছে- ‘লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নাই আমার।’ ‘নেশা লাগিলরে, বাঁকা দুই নয়নে নেশা লাগিলরে।’ ‘গুড্ডি উড়াইলো মোরে, মৌলার হাতের ডুরি।’ ‘আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে, আঁখি মুঞ্জিয়া দেখ রূপ রে।’ ‘আমি যাইমুরে যাইমু, আল্লার সঙ্গে।’

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও হাসন রাজা রচিত গানের প্রশংসা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে হাসন রাজার গানের অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে হাসনের দর্শন চিন্তার কথা তুলে ধরেন। হাসন রাজার সৃষ্টিকর্ম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সমাদৃত।

বহু গানের রচয়িতা আধ্যাত্মিক সাধক হাসন রাজা ১৯২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। হাসনের জন্মভিটায় প্রতিষ্ঠিত ‘হাসন রাজা মিউজিয়াম’ একটি পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে রূপান্তরের দাবি জানিয়েছেন তার ভক্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাগেরহাটের চিতলমারী: অবৈধ বালু উত্তোলনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট

  • মধুমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন
  • ঝুঁকিতে চিতলমারীর একাধিক গ্রাম
  • অভিযোগ স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড্রেজার মেশিন দিয়ে মধুমতী নদী থেকে প্রতিদিন উত্তোলন করা হচ্ছে হাজার হাজার ফুট বালু। প্রতিকার চেয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সম্প্রতি তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বিপুল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় পরিবেশবাদীরা। সংশ্লিষ্ট হওয়ায় বাগেরহাট, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

বালুমহাল ইজারায় একটি নির্দিষ্ট সীমানা বা এলাকা নির্ধারণ করা থাকে। নাজিরপুর উপজেলার বালুমহালের বা বালু উত্তোলনের সীমানা ২৪ দশমিক ২১ একর। কিন্তু চিতলমারীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ গ্রামসংলগ্ন মধুমতী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এই কাজে যুক্ত পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার মাটিভাঙ্গা ও বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ এলাকার প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন কলাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. কামাল শেখ ওরফে কামাল মেম্বার। মূল ইজারাদারের কাছ থেকে কয়েকজনকে নিয়ে এই কাজ নিয়েছেন তিনি। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছি।’ যাঁর নামে সরকারি ইজারা আনা হয়েছে, তাঁর নাম অবশ্য জানাতে পারেননি কামাল মেম্বার। তিনি দাবি করেন, ওই ব্যক্তির নাম তাঁর মনে নেই।

চিতলমারীর শৈলদাহ এলাকার মো. ফরিদ শেখ, বিপুল বৈদ্য, আল-আমিন খান ও তুহিন শেখ জানান, কলাতলা ইউনিয়নের মধুমতী নদীর অতুলনগর, কুনিয়া ও শৈলদাহ এলাকায় ৩-৪টি বলগেট ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলি জমি, গাছপালা ও রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে উপজেলার মানচিত্র। হুমকির মুখে পড়েছে কয়েক শ একর জমি ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাটিভাঙ্গা সেতুও এখন ঝুঁকির মুখে।

পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চিতলমারী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট ফজলুল হক বলেন, এভাবে বালু উত্তোলনে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। উপজেলার মানচিত্র ছোট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক সরকারি দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে ওরা বালুমহাল ইজারা নিয়েছে। রাতের আঁধারে এসে চিতলমারীর সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করে। আমরা বেশ কয়েকবার অভিযানে গিয়েছি। কিন্তু অভিযানের খবর শুনে ওরা আগে থেকেই চলে যায়। পিরোজপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে, ওরা যাতে সীমানায় না আসে সে জন্য কাজ করছি। অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন “জিরো টলারেন্স” নীতিতে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পটুয়াখালীর দুমকী: পানির স্তর নেমে গেছে তীব্র সংকটে মানুষ

  • উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা চরম পানিসংকটে ভুগছে
  • প্রায় দুই বছর ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে; গভীর নলকূপে পানি মিলছে না
দুমকী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৫২
পটুয়াখালীর দুমকী: পানির স্তর নেমে গেছে তীব্র সংকটে মানুষ

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটির বাসিন্দারা চরম পানিসংকটে ভুগছে। তারা জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে এ সংকট দেখা দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী।

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের আলগীসহ কয়েকটি গ্রাম, লেবুখালী ইউনিয়নের লেবুখালীসহ উত্তর এলাকা, আংগারিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম আংগারিয়াসহ পশ্চিম এলাকা, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের দুমকী, শ্রীরামপুর, উত্তর দুমকী এলাকায় দুই বছর ধরে শুকনো মৌসুমে হস্তচালিত গভীর নলকূপে পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে।

এসব এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানায়, এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে অভিযোগ জানালে কর্তৃপক্ষের লোকজন গিয়ে দেখে জানিয়েছেন পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে গভীর নলকূপে পানি উঠছে না।

এ বিষয়ে কথা হয় শাহজাহান খান নামের এক ভুক্তভোগীর সঙ্গে। শাহজাহান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুকনো মৌসুমে এলাকার খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পানির সংকট দেখা দেয়। অন্যদিকে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পীরতলা জামলা ও আংগারিয়া খালটিতে ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় পানির প্রবাহ ব্যাহত ও খালের পানি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় লোকজন পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এ অবস্থায় শুকনো মৌসুমে টিউবওয়েলের পানির অভাবে অনেকে ব্যবহার অনুপযোগী পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জামাল হোসেন নামের এক শিক্ষক বলেন, শুকনো মৌসুম এলেই কলেজশিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা পানির সমস্যায় ভোগেন। এ সময় উপায় না পেয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হয়।

পশ্চিম আংগারিয়ার বাসিন্দা রিনা বেগম বলেন, গভীর নলকূপ বসিয়েও পানির সংকটে ভুগতে হচ্ছে। শুকনো মৌসুম শুরু হলেই পানি পাওয়া যায় না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব এলাকায় ৮০০ থেকে ১ হাজার ফুট গভীরে টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

দুমকী উপজেলায় সরকারিভাবে ১ হাজার ৫৩০টি টিউবওয়েল এবং বেসরকারিভাবে ১ হাজার টিউবওয়েল বসানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া এলাকাবাসী ব্যক্তিগত খরচে নিজ নিজ বাসায় টিউবওয়েল বসিয়ে মোটর যুক্ত করেও পানি তুলতে পারছে না।

পানিসংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নিপা আক্তার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইতিমধ্যে হস্তচালিত নলকূপের পরিবর্তে সাবমারসিবল পাম্প বসানোর জন্য এলাকাবাসীর স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: চিকিৎসায় শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা

  • স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ বাজেটের ০.০৮৪ শতাংশ
  • ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসক মাত্র দুজন
  • প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ জন চিকিৎসা নেন
সোহানুর রহমান, জবি
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭: ৪৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার চিত্র উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক বাজেট মাত্র ২৫ লাখ টাকা। এ বছর মাথাপিছু চিকিৎসায় বরাদ্দ মাত্র ১২৫ টাকা; যা অপ্রতুল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় মাত্র সাত একর জায়গায় জবি ক্যাম্পাস। আটটি ভবনে চলছে ৩৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কার্যক্রম। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী প্রায় ২০ হাজার। কিন্তু প্রতিষ্ঠার দুই দশক পরও নানা সংকটে রয়েছে জবি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট বাজেট ধরা হয়েছে ২৯৭ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় বার্ষিক বাজেট মাত্র ২৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় শূন্য দশমিক শূন্য ৮৪ শতাংশ। এ বছর মাথাপিছু চিকিৎসায় বরাদ্দ ১২৫ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসাসেবার বাজেট বাড়ানোর জন্য আমরা ইউজিসির সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেছি, কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে তারা বৃদ্ধি করছে না। তাই একটি বিশেষ ফান্ডের আবেদন করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী বছরে এর ব্যবস্থা হবে।

অব্যবস্থাপনায় মেডিকেল সেন্টার

জবির বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে থাকা মেডিকেল সেন্টারে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও লোকবল নেই। প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিলেও সেখানে কর্মরত আছেন মাত্র দুজন চিকিৎসক, তিনজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, একজন নার্স, দুজন অফিস সহকারী ও একজন ক্লিনার। রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেকোনো অসুখের চিকিৎসায় মেডিকেল সেন্টার থেকে দেওয়া হয় শুধু প্যারাসিটামল। অনেক সময় প্যারাসিটামলও পাওয়া যায় না।

গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীর কথা শুনতে চান না। শুধু নাপা, প্যারাসিটামল বা স্যালাইন দিয়েই দায়িত্ব সারেন।

দর্শন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোছা. রাতিয়া খাতুন বলেন, ‘আমার সমস্যা অনুযায়ী সঠিক ওষুধ দেওয়া হয়নি। শুধু প্যারাসিটামল ও স্যালাইনই মেলে মেডিকেল সেন্টারে।’

ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থী মো. কামরুল হাসান বলেন, রক্তস্বল্পতার ইনজেকশন দেওয়ার সময় নার্সের অদক্ষতার কারণে তা মাংসে প্রবেশ করে। ফলে ক্ষত তৈরি হয়, যা পাঁচ মাসেও সারেনি।

এ বিষয়ে মেডিকেল সেন্টারের উপপ্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, ‘আমরা অল্পসংখ্যক জনবল নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আমাদের মেডিকেল সেন্টারে প্রায় ৪০ ধরনের ওষুধ রয়েছে, যা রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী জ্বর, মাথাব্যথা ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে আসে, তাই সাধারণত প্যারাসিটামল দেওয়া হয়।’

ট্রেজারার অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, ‘চিকিৎসা বাজেট এত কম কেন, এটি আমাদেরও প্রশ্ন। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চলছে। তবে বর্তমান প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে বাজেট বাড়ানোর চেষ্টা করছে এবং কিছুটা বৃদ্ধি এরই মধ্যে হয়েছে। ইউজিসির অনেক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সবই দিতে পারছে না। তবুও আশা করছি, শিগগির এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ইতিমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং দুটি পদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বাজেট অনুমোদন পাওয়া গেছে। আশা রাখছি আগামী অর্থবছরে এ খাতে ভালো বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত