Ajker Patrika

লিবিয়ায় আটক রেখে নির্যাতন, আ.লীগ নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২১: ৪২
লিবিয়ায় আটক রেখে নির্যাতন, আ.লীগ নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বিপ্লব হোসেন নামে এক যুবককে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে নির্যাতন এবং ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার অভিযোগ এনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিরাজগঞ্জ মানব পাচার দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটি দায়ের করেন শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের বেড়াডাঙ্গা গ্রামের মাসুদ রানা। মাসুদ রানা বিপ্লবের ভাই। 

মামলার শুনানি শেষে বিচারক শেখ মো. নাসিরুল হক মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন। এই আদালতের স্টেনোগ্রাফার মাজেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কাশিনাথপুর গ্রামের ছানাউল্লাহ মাস্টারের ছেলে আব্দুল কাদের মিঠু, একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে নাজমুল আশরাফ ও তাঁর মা নাজমা খাতুন এবং একই গ্রামের রহমত আলীর ছেলে বাবু।

মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিরা মানব পাচার দলের সদস্য। আসামি নাজমুল আশরাফ লিবিয়ায় বহু দিন ধরে অবস্থান করছেন। নাজমুল আশরাফের সঙ্গে বাদীর পিতা আব্দুল মান্নানের মোবাইল ফোনে কথা হয়। মামলার দুই আসামি বাবু ও আব্দুল কাদের মিঠু বাদীর পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিপ্লব হোসেনকে ইতালি পাঠানোর জন্য ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে বিদেশে যাওয়ার জন্য ১৪ লাখ টাকা চুক্তি হয়।

চুক্তি অনুযায়ী আসামিরা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট-ভিসা প্রস্তুত করেন। প্রথমে তাঁরা বলে বিপ্লব হোসেনকে দুবাইয়ে নিয়ে যাবেন। সেখান থেকে ইতালিতে পাঠিয়ে দেবেন। দুই দফায় ১৪ লাখ টাকা পরিশোধের পর ২০২২ সালের ৭ জুন আসামি বাবু ও আব্দুল কাদের মিঠু মাইক্রোবাসে করে বিপ্লব হোসেনকে ঢাকা বিমানবন্দরে নিয়ে যান। বিপ্লব হোসেন দুবাইয়ে পৌঁছার পর তাঁকে আসামি নাজমুল আশরাফ ১৪ দিন একটি হোটেলে রাখেন। ১৪ দিন পর আসামি নাজমুল আশরাফ দুবাই থেকে বিপ্লবকে লিবিয়া রাষ্ট্রে নিয়ে যান।

লিবিয়ায় নিয়ে বিপ্লবকে আটক রেখে মারধর করেন নাজমুল। মুক্তিপণ হিসেবে টাকা প্রদানের জন্য বিপ্লবকে দিয়ে বাড়িতে ফোনে কথা বলান। বিপ্লবের জীবন বাঁচাতে নাজমুল আশরাফের নির্দেশে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫৬০ টাকা প্রদান করলেও বিপ্লবকে ছেড়ে দেন না। পরে আসামি নাজমুল আশরাফ মামলার বাদীর পিতাকে বলেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মাদারীপুর জেলার নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দিতে হবে।

বাদী বলেন, ‘পরে আমি এবং আমার পিতা মাদারীপুরে যাই। সেখানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আসামি নাজমুল আশরাফ বলেন বিলের পার্শ্বে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় টাকার ব্যাগ রাখতে। তার নির্দেশ অনুযায়ী টাকার ব্যাগটি রাখ এবং পেছনে তাকাইতে নিষেধ করে। টাকা পাওয়ার পর আমাদের জানানো হয় টাকা তাদের হস্তগত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ নেওয়ার পরও বিপ্লবকে ছেড়ে দেয় না। পরে বাধ্য হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি লিখিতভাবে অবগত করি। বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় একটি বিশেষ এজেন্সির মাধ্যমে বিপ্লব হোসেনকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন।’

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আসামিরা আমার ভাইকে আটক রেখে এবং বিদেশে নেওয়ার কথা বলে সর্বমোট ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ৫৬০ টাকা ক্ষতি সাধন করেছে।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজমুল হোসেনের মা নাজমা বেগম। তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমার ছেলে বিদেশ থাকে ১৭-১৮ বছর ধরে। তাদের সঙ্গে আমার ছেলের কোনো সম্পর্ক নেই। যাদের চিনি না তাদের কাছ থেকে টাকা নেব কী করে। শুনেছি তারা নাকি লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে পুলিশ তাদের আটক করে দেশে পাঠাইছে। এখন দোষ দিচ্ছে আমাদের।’

লিবিয়াফেরত বিপ্লব হোসেন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় বিমানবন্দরে আমাদের রিসিভ করে নাজমুল। বিমানবন্দর থেকে নাজমুল তার বাসায় নিয়ে যায়। বাসায় এনে আমাদের কোনো কাজ না দিয়ে আটকে রাখে। ১৩-১৪ মাস আটক রেখে নির্যাতন করে। লোহার রড ও পাইপ দিয়ে আমাদের নির্যাতন করা হতো। এখনো শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

‘আঘাতের চিহ্নগুলো কালো দাগ হয়ে আছে। নির্যাতনের সময় বাড়িতে ফোন দিত নাজমুল। বাড়ির লোকজনকে চিৎকারের শব্দ শোনাত। পরে বলত টাকা না পাঠালে আরও নির্যাতন করা হবে। এরপর বাড়ি থেকে টাকা পাঠালে কিছুদিনের জন্য নির্যাতন বন্ধ রাখে। পরবর্তী সময় আবারও টাকার জন্য নির্যাতন করত।’

শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল কাদের মিঠু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভিযোগ সত্য না। আমরা শুনেছি বিপ্লব লিবিয়ায় গেছে। সে লিবিয়া থেকে চোরাই পথে ইতালি যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির মাধ্যমে তাকে দেশে আনা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রি, চুয়াডাঙ্গায় ডিলারকে জরিমানা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা সার। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরকারি সার অবৈধভাবে বিক্রির অপরাধে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় এক ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা ও ক্রেতাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিনুল ইসলাম।

জানা গেছে, সদর উপজেলার পাঁচমাইল এলাকার এক বিএডিসির সারের ডিলার অবৈধ উপায়ে আলমডাঙ্গার বলেশ্বরপুর এলাকার তাওহীদ হোসেন নামের এক ব্যক্তির কাছে ডিএপি ১১ বস্তা ও এমওপি ৯ বস্তা সার বিক্রি করেন।

বিষয়টি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের জরিমানা করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিএডিসি সার ডিলার মডার্ন অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইকবাল বিশ্বাসকে নগদ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে অবৈধ উপায়ে সার কেনার অপরাধে ক্রেতা তাওহীদ হোসেনকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে বিএনপির ২ শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিএনপি নেত্রী নাসরিনের ওপর সরোয়ার অনুসারীদের হামলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

বরিশালে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হামলার ঘটনায় ২ শতাধিক বিএনপি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন নগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে তিনি কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দেন। এর আগে দুপুরে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার শিকার হন নাসরিন।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন উল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফুল দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। সেই ইস্যুতে বিএনপির নেত্রী নাসরিন থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

জানা গেছে, অভিযোগে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২০০ জনের কথা বলা হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রদল, যুবদল ও বিএনপির নেতা-কর্মী।

জানতে চাইলে বিএনপির নেত্রী আফরোজা খানম নাসরিন জানান, তাঁর ওপর যারা হামলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে তিনি রোববার রাত ৯টার দিকে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের নাম তিনি প্রকাশও করেছেন।

নাসরিনের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের মনোনীত প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের অনুসারীরা তাঁর ওপর হামলা করেছে।

এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানান, রোববার দুপুরে ফুল দিয়ে তাঁরা যখন যাচ্ছেন, তখন বাইরে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নাসরিনের ঝামেলা হয়েছে। তবে কী হয়েছে জানেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: ফয়সালের স্ত্রীসহ আরও তিনজন গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩২
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খানের শ্যালক শিপু, স্ত্রী সামিয়া ও বান্ধবী মারিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রীসহ আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে এক বার্তায় জানিয়েছে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিট।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফয়সালের স্ত্রী সামিয়া, তাঁর শ্যালক শিপু ও বান্ধবী মারিয়া।

র‍্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সামিয়া ও শিপুকে নারায়ণগঞ্জ থেকে এবং মারিয়াকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত শুক্রবার হাদিকে গুলির ঘটনার আগে ও পরে ফয়সালের সঙ্গে তাঁদের ফোনে ঘন ঘন যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।

এ নিয়ে এ ঘটনায় র‍্যাব মোট চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে। এর আগে গুলির সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তিন দিনের রিমান্ডে নেয়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে করা গুলিতে গুরুতর আহত হন রিকশায় থাকা ওসমান হাদি। তাঁকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে। আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে।

আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ সিদ্ধান্ত নেন। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল ও ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাকসিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসাসংক্রান্ত সব ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তাঁর চিকিৎসাপ্রক্রিয়া সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় বেড়েছে।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ওসমান হাদির চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড আজ রোববার বিকেলে বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ সমন্বয়ক এবং জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. জাফর ইকবাল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে, তাঁর মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল পরিস্থিতি। ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। আজ আবার তাঁর শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করা হলে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত ও বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। এদিন তাঁর হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি লক্ষ করা গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদ্‌যন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিকেল সাপোর্ট অব্যাহত রয়েছে। ফুসফুসের কার্যকারিতা ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে অ্যাসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড ও ইলেকট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর ক্ষেত্রে একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।

মেডিকেল বোর্ড আরও বলেছে, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাঁকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। পরিবার অথবা পরিবারের মাধ্যমে সরকার চাইলে তাঁকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

ওসমান হাদির প্রথম অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া ঢামেক হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আব্দুল আহাদ আজ এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল শনিবারের মতো আজও মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্যের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়েছে। রোগীর কেস সামারি প্রস্তুত করে ইতিমধ্যে বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, হাদিকে আগামীকাল সোমবার দুপুরে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। আজ রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর ও ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গত শুক্রবার বেলা সোয়া ২টার দিকে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত