Ajker Patrika

ফারজানা যুব মহিলা লীগের পদে নেই, জিয়ার আমলে বাবা ছিলেন থানা ছাত্রদলের সেক্রেটারি

নাটোর প্রতিনিধি 
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ৪৪
সিংড়ায় বিএনপির জনসভা মঞ্চে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমানের বসা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ছবি: সংগৃহীত
সিংড়ায় বিএনপির জনসভা মঞ্চে সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমানের বসা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের সিংড়ায় বিএনপির জনসভা মঞ্চে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমানের বসা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ফারজানাকে যুব মহিলা লীগের নেত্রী দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী। তবে এ দাবির পক্ষে তাঁরা কোনো প্রমাণ বা কমিটির তালিকা দেখাতে পারেননি। এদিকে ১৯৭৯ সালে ফারজানা রহমানের বাবা আনিছুর রহমান ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক।

জন্মসূত্রে বিএনপির পরিবারের সদস্য হলেও ফারজানা সম্প্রতি আলোচিত হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা হিসেবে। ডা. ফারজানা রহমান যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি বা আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগী সংগঠনের সদস্য কি না, তার অনুসন্ধান করেছে আজকের পত্রিকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডা. ফারজানা রহমানের বাবা আনিসুর রহমান। বর্তমানে তিনি সিংড়া দমদমা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। আনিসুর রহমানরা ছয় ভাই। ভাইদের কেউই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। আনিসুর রহমান ১৯৭৯ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে তৎকালীন সিংড়া ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তবে আনিসুর রহমানের ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন আনু বিএনপির রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি এখন পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। তিনি বর্তমানে সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক।

ডা. ফারজানার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী বিরোধী ঘরানার হলেও তাঁর চাচাতো বোন বিয়ে করেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। পলক ছিলেন সিংড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। পলকের বাবা প্রয়াত ফয়েজ আহমেদ ছিলেন সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কলেজে পড়া অবস্থায় প্রেমের সম্পর্ক থেকে ২০০২ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জুনাইদ আহমেদ পলক ও আরিফা জেসমিন কণিকা। কণিকার বাবা আবুল কাশেম (প্রয়াত) মেয়ের ইচ্ছে পূরণে আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হন। পড়াশোনা শেষ করে পলক রাজনীতিতে সক্রিয় হন ও কণিকা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।

আরও জানা যায়, ২০০৭ সালে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসন থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হানিফ আলী শেখকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু ওই নির্বাচন বাতিল হয় এবং ড. ফখরুদ্দিনের নেতৃত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হানিফ আলী শেখ নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) বাসিন্দা হওয়ায় সিংড়ার আওয়ামী লীগ নেতারা প্রতিবাদ জানায়। তখন সিংড়ায় আওয়ামী লীগে যোগ্য নেতৃত্ব না থাকায় উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক পলককে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানালে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পলককে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারপর থেকে পলক এ আসন থেকে এমপি ও প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পলক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার শ্যালক লুৎফুল হাবিব রুবেল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনিই এই পরিবারের প্রথম আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া কোনো সদস্য।

অপরদিকে, পলকের চাচাশ্বশুর আনিসুর রহমানের মেয়ে ফারজানা ২০১২ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ২০১৪ সঙ্গে ঢাকা থেকে সিংড়ায় ফিরে এসে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে চিকিৎসাসেবা শুরু করেন। পাশাপাশি নিজের প্রতিষ্ঠিত দীপাশা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে মেডিকেল ক্যাম্প ও বিনা মূল্যে ওষুধ-উপকরণ বিতরণ এবং চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর মানুষদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি সমাবেশের মঞ্চে পলকের শ্যালিকা ফারজানা রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি সমাবেশের মঞ্চে পলকের শ্যালিকা ফারজানা রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ফারজানাকে যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি দাবি করা হলেও অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের ৪ জুলাই যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উপজেলা কমিটির সম্মেলনে খাদিজা খাতুন সভাপতি, নীলাবতী হালদার ও ফাইমা খাতুনকে যথাক্রমে সহসভাপতি, জ্যোতি সরকারকে সাধারণ সম্পাদক, হাওয়া খাতুনকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং শাপলা খাতুন ও শারমিন আক্তারকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে অনুমোদনের জন্য জমা দিতে বলা হলেও তা হয়ে ওঠেনি।

সিংড়া উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি খাদিজা পারভীন বলেন, ‘ডা. ফারজানা যুব মহিলা লীগের কোনো সদস্য বা নেত্রী নন। যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁদের নাম ওই দিনই (৪ঠা জুলাই ২০২২) ঘোষণা করা হয়েছে। পরে আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি।’

সিংড়ার সাংবাদিক আকতার হোসেন অপূর্ব বলেন, গত এক দশকে এক দিনের জন্যও ডা. ফারজানাকে আওয়ামী লীগ বা এর কোনো সংগঠনের অনুষ্ঠানে দেখিনি। রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও তিনি কোনো দলেরই রাজনীতি করতেন না। তাকে সিংড়ার মানুষ চিকিৎসক হিসেবেই চেনে। তাকে কেবল মেডিকেল ক্যাম্প বা স্বাস্থ্যর সেমিনারেই দেখা যায়।

নাটোর জজকোর্টের প্রবীণ আইনজীবী আলী আজগর বলেন, আনিসের (ডা. ফারজানার বাবা) পরিবারের সবাই বিএনপির রাজনীতি করে। আনিস সিংড়া ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি ছিলেন আর সভাপতি ছিলেন বিএনপির সাবেক এমপি প্রয়াত আবুল কালাম আজাদ। ফারজানাকে বিএনপি বললে ভুল হবে না বরং তাকে আওয়ামী লীগ হিসেবে চিহ্নিত করলে কেউ বিশ্বাস করবে না।

ফারজানা যুব মহিলা লীগ নেত্রী মর্মে কোনো প্রমাণ দেখাতে না পারলেও সিংড়া পৌর বিএনপির সভাপতি তায়েজুল ইসলাম বলেন, ‘পলক, দীপু মনি, আব্দুল মোমেনদের সঙ্গে তোলা ছবি তো মিথ্যা না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি না করলে ফারজানা এত দূর যেতে পারতেন না।’

ফারজানা রহমান বলেন, ‘যেখানে আমার বাবা বেঁচে আছেন, চাচা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক, আমি নিজে একজন চিকিৎসক, সেখানে আওয়ামী লীগ কেন, কোনো দলীয় পরিচয়ই আমার প্রয়োজন নেই। সেদিন ব্যক্তিগত কাজে চেম্বারে যাওয়ার সময় ওই জনসভাস্থল অতিক্রম করার সময় এলাকার একজন চিকিৎসক এবং সমাজকর্মী হিসেবে অনেকেই আমার সঙ্গে কথা বলছিল। একপর্যায়ে মহিলা চিকিৎসক হিসেবে আমাকে বসতে বলায় কিছু সময়ের জন্য প্রথমে মঞ্চের নিচে অবস্থান করি। আমাকে সম্মান জানিয়ে মঞ্চে ডেকে নেয়। একটু পর সেখান থেকে চলে আসি। এর বেশি কিছুই না। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের সঙ্গে তোলা ছবি দেখিয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ বানানো হচ্ছে। আমি রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণকালে এসব ছবি ওঠানো যা বিভিন্ন পত্রিকাতেও এসেছিল। এসব প্রচার করে আমার সম্মান নষ্ট করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত