Ajker Patrika

প্রতিমন্ত্রীর চাচা অবসরে গিয়েও নিয়ন্ত্রণ করতেন অফিস, শত কোটির সম্পত্তি

  • অভিযুক্ত অফিস সহায়ক বারেক সরকার সম্পর্কে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের চাচা
  • তাঁর নামে প্রতি দলিলে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো
ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ  
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ১৬
আব্দুল বারেক সরকার। ছবি: সংগৃহীত
আব্দুল বারেক সরকার। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক ছিলেন আব্দুল বারেক সরকার। ২০১৫ সালে অবসরে গিয়েও ৫ আগস্টের আগপর্যন্ত সাবরেজিস্ট্রি অফিস নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। পটপরিবর্তনের পর ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাঁর নামে প্রতি দলিলে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারত না। কেননা বারেক সরকার সম্পর্কে সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের চাচা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, নকলনবিশ থেকে পদোন্নতি পেয়ে তারাকান্দা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়ক হয়েছিলেন আব্দুল বারেক সরকার।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বারেক সরকারের বাবা এবং ময়মনসিংহ-২ (তারাকান্দা-ফুলপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাবা মামাতো-ফুফাতো ভাই। প্রতিমন্ত্রীর প্রভাবের পাশাপাশি নিজেদের জায়গায় ভাড়ায় সাবরেজিস্ট্রি অফিস পরিচালিত হওয়ায় সেটি এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন বারেক সরকার। অবসরে গেলেও সেই নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল বলে জানিয়েছে দলিল লেখক সমিতি।

বারেক সরকারের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তারাকান্দা শহরে ৬০ শতাংশ জমি; উপজেলায় আড়াই একর কৃষিজমি, দুই একর জমির মধ্যে মৎস্যখামার, গ্রামের বাড়িতে বহুতল ভবন এবং ময়মনসিংহ শহরে শেয়ারে ছয়তলা বাড়ি ও মার্কেট রয়েছে বারেক সরকারের। এসবের বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা।

ময়মনসিংহ নগরীর পাটগুদাম এলাকায় ৬ শতাংশ জায়গার মধ্যে ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন বারেক সরকারসহ তিনজন। বাড়ির কেয়ারটেকার মাঈন উদ্দিন বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর তাঁদের সঙ্গে খুব একটা যোগাযোগ নেই। তবে বাড়িটির কাজ গত বছর সম্পন্ন হয়েছে। বাড়িটি বাবুল মিয়া সরকার তাঁর ভাই বারেক সরকার এবং তাঁদের ভাগনে আব্দুল করিম নির্মাণ করেছেন।

জমির দলিল করতে গিয়ে ঘুষ দিতে হওয়া ঢাকুয়া গ্রামের আমিন উদ্দিন বলেন, ‘২০২৩ সালে ২০ শতাংশ জমির দলিল করতে আমার অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দলিল লেখক আমার কাছ থেকে বারেক সরকারের কথা বলে নিয়েছে। ওনার কথা বলায় আমি কাউকে না জানিয়ে চুপচাপ টাকাটা দিয়ে দিয়েছি। না হয় আমার দলিলটাই হতো না।’

স্থানীয় ফজর আলী বলেন, ‘সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বারেক সরকার যা করেছেন, তা বলার ভাষা রাখে না। আমরা ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি। এখন সরকার পরিবর্তন হয়েছে। তাঁদের খুঁজে বের করে বিচার করা হোক।’

তারাকান্দা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসাইন বলেন, ‘২০১৮ সালে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। তার আগে থেকেই বারেক সরকারকে দেখেছি অফিস নিয়ন্ত্রণ করতে; যা সরকার পরিবর্তনের আগপর্যন্ত ছিল। তিনি অবসরে গেছেন কি না, আমরা তা জানতাম না। আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর নেওয়া আমার পক্ষে শোভা পায় না। তবে অফিশিয়াল সব কাজ বারেক সরকারই করেছেন।’

তবে আব্দুল বারেক সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কারও প্রভাব খাটিয়ে বাড়ি-গাড়ি, জায়গা-জমি করিনি। ১১ বছরে মন্ত্রীর সঙ্গে দুই দিন দেখা হয়েছে, সে আমার দোয়া নিয়েছে। তাহলে তাঁর প্রভাব কেমনে খাটিয়েছি। চাকরির পাশাপাশি মাছ চাষ এবং গরুর খামার করে উপার্জন করেছি। পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলেকে মানুষ করেছি মাত্র। সাবরেজিস্ট্রি অফিস আমাদের জায়গায় হওয়ায় মানুষ মনে করে প্রভাব বিস্তার করছি, আসলে তা কিন্তু না।’

তারাকান্দা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার শেখ নাছিমুল আরিফ বলেন, ‘অফিসটি তাদের (বারেক সরকার) জায়গার মধ্যে। দোতলা ভবনের নিচতলায় আমাদের কার্যক্রম, আর ওপরের তলায় তিনি মাঝেমধ্যে যেতেন। তবে বারেক সরকার অবসরে যাওয়ার পর আমাদের অফিসে তাঁকে খুব একটা পাইনি।’

সাবরেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘দৈনিক ২৫-৩০টি দলিল হয়ে থাকে, যা নিয়ম মেনেই হয়। সেখানে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে ২০২২ সালের আগে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট এম এ হান্নান খান বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিয়ন যখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, তাহলে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের পিয়ন ২০০ কোটি টাকার মালিক হলে বিষয়টি আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চোর সন্দেহে নির্যাতন: মবের ভুক্তভোগীকে জেল, হাসপাতালে মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ওমর ফারুক
ওমর ফারুক

দুই ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চলে ভ্যানচালক ওমর ফারুকের (৩৮) ওপর। পেরেক ঢোকানো হয় হাত-পায়ে। পানি চাইলে শীতের রাতে নগ্ন করে চুবানো হয় নদীতে। তারপর দফায় দফায় নির্যাতন। পায়ুপথে ঢোকানো হয় মরিচের গুঁড়া। এতে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন ফারুক। ওই অবস্থায় তাঁকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাত দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে কারাগার থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ফারুকের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা সদরের চাঁনপাড়া মহল্লায়। বাবার নাম মসলেম সরদার। গত বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা সদরের সিএনজি সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমিতির সদস্যরা তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। স্থানীয়রা জানান, চুরির অভিযোগে নির্যাতন করা হলেও পরে মাদক উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়। এক পুরিয়া গাঁজার জন্য ফারুককে সাত দিনের কারাদণ্ড এবং ১০০ টাকা জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। পরে ওই রাতেই তাঁকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রেখে যায় বাগমারা থানা-পুলিশ। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় পরদিন সকালে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়।

গত বুধবার উপজেলা সদরে গেলে ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে ওমর ফারুককে আটকে রাখেন সিএনজি সমিতির সদস্যরা। সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে সমিতির ২০-২৫ জন সদস্য মব সৃষ্টি করে তাঁকে নির্মম নির্যাতন করেন। চুরির কথা স্বীকার করাতে চার হাত-পায়ে পেরেক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। নগ্ন করে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। পানি খেতে চাইলে পাশের নদীতে চুবানো হয়। পায়ুপথে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় মরিচের গুঁড়া। একপর্যায়ে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে এক পুরিয়া গাঁজা এনে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থা দেখে পুলিশ সদস্যরা আর তাঁকে নিয়ে যেতে চাননি। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা। তিনি নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মুমূর্ষু ভ্যানচালক ফারুককে সাত দিন কারাদণ্ড ও ১০০ টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহ আলম খান জানান, ওই রাতেই পুলিশ ওমর ফারুককে আহত অবস্থায় কারাগারে দিয়ে যায়। তাঁর অবস্থা খারাপ দেখে পরদিন সকালে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ফারুক মারা যান। এরপর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ফারুকের বাবা মসলেম সরদারও ভ্যানচালক। তিনি বলেন, মিথ্যা অভিযোগে ছেলেকে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরি না করলেও স্বীকার করাতে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

ফারুকের মা পারুল বেগম বলেন, ‘গরিব বলে আমার ছেলেকে এভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা না করিয়ে প্রশাসন তাকে কারাগারে পাঠায়। সিএনজির লোকজন দেখায়, তার কাছে গাঁজা পাওয়া গেছে। কিন্তু সে মাদক সেবন করত না। প্রশাসন নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমার মৃতপ্রায় ছেলেকে জেলে দিয়ে খুব খারাপ কাজ করেছে। তখনো সঠিক চিকিৎসা হলে বেঁচে যেত। আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভবানীগঞ্জ সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি রেজাউল করিমের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। সামনাসামনি না গেলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলবেন না বলে জানান।

মুমূর্ষু ব্যক্তিকে কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি না। আদেশ হলে আমাদের কাজ কারাগারে পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করেছি।’ নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। তারপর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুমূর্ষু ব্যক্তির চিকিৎসা না করিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইফুল ইসলাম ভুঞা বলেন, তিনি একটি সভায় ব্যস্ত আছেন। সভা শেষে ফোন করবেন। পরে আর ফোন করেননি। আবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনায় এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তরুণী আটক

খুলনা প্রতিনিধি
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা
তনিমা তন্বী। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক সংগঠনের খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আলোচিত তনিমা তন্বীকে আটক করেছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাতে মহানগরীর টুটপাড়া থেকে তন্বীকে আটক করা হয়। খুলনা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি তৈমুর ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে মহানগরীর সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ রোডে অবস্থিত ১০৯ মুক্তা হাউসের নিচতলার তন্বীর বাসায় মোতালেব গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পর স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি খুলনাসহ দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে।

এ ঘটনায় পুলিশ ওই কক্ষ থেকে মাদক সেবনের বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে।

এর আগে মুক্তা হাউসের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার জানিয়েছিলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী গত ১ ডিসেম্বর নিচতলাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তিনি নিজেকে এনজিও কর্মী হিসেবে দাবি করে প্রায় সময় বাড়ির বাইরে থাকতেন। তাঁর কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তাঁর অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে চলতি মাসেই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলিবিদ্ধের ঘটনাটি ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেইলি স্টারে লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৩৫০-৪০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) তেজগাঁও থানায় মামলাটি করা হয়। দ্য ডেইলি স্টারের হেড অব অপারেশনস মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ২০২৫ সালের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের অধীনে এ মামলা দাখিল করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টা ২৫ মিনিট থেকে ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দ্য ডেইলি স্টার ভবনের সামনে বিপুলসংখ্যক লোক দেশীয় অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে সমবেত হয়। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী স্লোগান দিতে থাকে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে হামলার আহ্বান জানায়।

রাত আনুমানিক ১২টা ৩৫ মিনিটে হামলাকারীরা সাংবাদিক ও কর্মচারীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে ভবনের মূল গেট ও কাচের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। ভবনের বিভিন্ন তলা পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বহু আসবাব নিচে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, হামলায় ভবনের ভেতরে থাকা দুই শতাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, সার্ভার, প্রিন্টার, স্টুডিও সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হয়, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লকারে থাকা প্রায় ৩৫ লাখ টাকা লুট করা হয়। ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, লিফট, সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেম ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশনেও ক্ষতি করা হয়।

আসামিদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ফলে ‘দ্য ডেইলি স্টার ভবনে’ সর্বমোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের আনুমানিক মূল্য ৪০,০০,০০,০০০ (চল্লিশ কোটি টাকা)। যাচাই-বাছাই শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের হিসাব আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

সন্ত্রাসীদের হামলা ও অগ্নিসংযোগে দ্য ডেইলি স্টারের তৃতীয় তলায় স্টোরে সংরক্ষিত হিসাব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি, জাতীয় রাজস্ব বিভাগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর-সম্পর্কিত যাবতীয় নথি এবং নিউজ পেপার আর্কাইভস পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় বলেও এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলার সময় প্রমাণ নষ্টের উদ্দেশ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে বাধা দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ অভিযানে ভবনের ভেতর থেকে অন্তত ৩০ জন কর্মীকে উদ্ধার করা হয়।

সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯ ডিসেম্বর পত্রিকা প্রকাশিত হয়নি। অনলাইন কার্যক্রম ১৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

মামলার এজাহারে ডেইলি স্টার জানিয়েছে, এই হামলার সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে।

তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেডফোন কানে রেললাইনে যুবক, ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত

ফেনী প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে আবদুল্লাহ আল নাহিদ (২২) নামের এক যুবক মারা গেছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের সদর উপজেলার উত্তর শিবপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নাহিদ সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের দেওয়ানগঞ্জ এলাকার দেবীপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে।  

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামগামী সাগরিকা ট্রেনটি উত্তর শিবপুর এলাকা অতিক্রম করার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দীপক দেওয়ান বলেন, নিহত যুবক হেডফোন কানে রেললাইনে হাঁটছিলেন। পরে চট্টগ্রামগামী ট্রেনটি তাঁকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে রেললাইনের এক পাশে ছিটকে পড়েন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত