Ajker Patrika

যেসব গুণের কারণে হামিদুল ও শাহজাহান আদর্শ শিক্ষক

জাহিদ হাসান, যশোর
যেসব গুণের কারণে হামিদুল ও শাহজাহান আদর্শ শিক্ষক

দেশের অন্যতম বড় বিদ্যাপীঠ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজে শিক্ষকতা করছেন হামিদুল হক শাহীন ও শাহজাহান কবীর। হামিদুল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আর শাহজাহান ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকতার গণ্ডির বাইরে তরুণ এই দুই শিক্ষক নিজ গুণে হাজারো শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ হয়ে উঠেছেন।

হামিদুল হক শাহীন ১৯৯৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে যশোর জিলা স্কুল থেকে এসএসসি, ২০০১ সালে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণি ও সম্মিলিত মেধাতালিকায় নবম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান স্নাতক (প্রথম শ্রেণি) ও স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) সম্পন্ন করেন। এমএ ইন এডুকেশন উইথ মেরিট (ইউনিভার্সিটি অন নটিংহ্যাম, মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস); বাংলাদেশ ডিজাস্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টারে (বিডিপিসি) ট্রেনিং অফিসার হিসেবে যোগদান; এরপর গ্রিন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতার পর ৩১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

তরুণ এই শিক্ষক ২০১৩ সালে যশোর এমএম কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। যে সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসবিমুখ হয়ে যাচ্ছেন, হামিদুল হক শাহীনের সৃজনশীল পাঠদান প্রক্রিয়ার কারণে আবারও ক্লাসমুখী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এই শিক্ষকের ভাষ্য, ‘একজন শিক্ষকের কাজ যতটুকু না পড়ানো, তার চেয়ে বেশি হলো কীভাবে পড়তে হয় তা শেখানো। যতটা না পিটিয়ে মানুষ করা, তার চেয়ে মানুষ কীভাবে হতে হয় সেই মূল্যবোধ জাগ্রত করা। পাঠদান প্রক্রিয়াকে আনন্দদান করে তুলতে পারা। পাঠদানকে গল্পের ভেতরে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ানো। আর এই তিনটা শিখন প্রক্রিয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হন বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।

শ্রেণিকক্ষে একাডেমিক পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মতো কিছু করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগান হামিদুল হক শাহীন। শুধু শ্রেণিকক্ষে অনুপ্রেরণা নয়, তাঁর কল্যাণে তরুণেরা গড়ে তুলেছেন ‘আইডিয়া সমাজকল্যাণ সংস্থা’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এই সংস্থার মাধ্যমে উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন তাঁরা। তাতে নিজেদের উপার্জনের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নেও তাঁরা ভূমিকা রাখছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, হামিদুল হক শাহীন শিক্ষকতা জীবনের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নিয়ে নতুন কিছু করার চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কিছু করার অনুমতি পাননি। পরে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে ২০১৩ সালে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইডিয়া নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গত এক দশকে শত শত সুবিধাবঞ্চিত শিশুর মধ্যে খাবার ও পোশাক বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া রোজার মাসে তাঁরা শীতল পানি সরবরাহ, মসজিদে অজুখানা বানিয়ে দেওয়াসহ নানারকম সমাজসেবামূলক কাজ করেন।

হামিদুল হক শাহিনের বিনামূল্যে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস। ছবি: সংগৃহীতএ ছাড়া প্রতি শুক্রবার অসহায় ভবঘুরেদের জন্য মিডডে মিলের ব্যবস্থা করছেন। প্রকল্পটি সম্প্রতি এই কাজের শততম পর্ব পার করেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে তৈরি আইডিয়া পিঠা পার্কের পণ্য এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। পিঠার কারখানা স্থাপন ও কাজের জন্য শিক্ষক শাহীন যশোর শহরের খড়কী শাহ আব্দুল করিম রোডে নিজের একটি জায়গা (৫ দশমিক ৮ শতাংশ) ছেলেমেয়েদের দিয়ে দিয়েছেন। ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর ওই বাড়িতেই পিঠা পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। পিঠা পার্কে পাটিসাপটা, পাকান, পুলি, ভাপা, চিতইসহ দেশীয় দেড় শতাধিক রকমের পিঠা তৈরি করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, পিঠা পার্ক থেকে অর্জিত লভ্যাংশ শুধু সদস্যরাই নেন না, এর একটা অংশ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য ব্যয় করা হয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শিক্ষা, বিসিএস শিক্ষা দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নামমাত্র টাকা নেওয়া হয়, সেটাও নেন না হামিদুল। এসব টাকা ব্যয় করা হয় শিক্ষার্থীদের কল্যাণে।

মল্লিকা আফরোজ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার শিক্ষার্থীদের শুধু একাডেমিক শিক্ষাই দেন না, কর্মমুখী শিক্ষাও দেন।’

হামিদুল হক বলেন, ‘আমার শিক্ষক হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার শিক্ষকেরাই জুগিয়েছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এমন কয়েকজন শিক্ষককে আমি পেয়েছি, যাঁরা আমাকে সব সময় সমৃদ্ধির পথে, ভালো একজন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহী করেছেন। সেসব শিক্ষকের অনুপ্রেরণাতেই আমি আজ শিক্ষক। কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে বিশ্বাস করি বলেই পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পর চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেদের মতো কিছু করার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিই।’

অপর শিক্ষক শাহজাহান কবীর ২০০৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক ও ২০০৯ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। ২০১৯ সালে নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া ক্যাম্পাস থেকে মাস্টার্স ইন এডুকেশন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ইতিহাস বিভাগে যোগদান করেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের তিনি আনন্দ দেন সৃজনশীল পাঠদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পাঠদানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি করতে তিনি বিভিন্ন কুইজ ও পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। ইতিহাস বিষয়টি সবার কাছে পৌঁছে দিতে কলেজে গড়ে তুলেছেন ‘ইতিহাস ক্লাব’। গ্রুপভিত্তিক গল্পের মধ্য দিয়ে পাঠদানকে শিক্ষার্থীদের উপভোগ করান তিনি।

শাহজাহান কবীরের পাঠচক্র। ছবি: সংগৃহীততথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশমান এই যুগে বই পড়ার প্রবণতা আমাদের সমাজে কমে আসছে। কিশোর ও তরুণেরা ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পরীক্ষা ও পাসনির্ভর হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবইয়ের বাইরে তেমন কোনো বই পড়ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে শাহজাহান শিক্ষকতার পাশাপাশি বই পড়ার আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ নামে সংগঠন গড়ে তুলেছেন। নিজ কলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও শহরের বিভিন্ন কলেজ, স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই সংগঠনের সদস্য।

‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’ কার্যক্রমের সদস্যরা নিজেরা বই পড়ার পাশাপাশি মূলত এখানে নিখাদ বন্ধুত্ব, নির্মল আনন্দ, সৌন্দর্য সৃজনের চর্চা করে থাকেন। এ ছাড়া নিজেদের পাশাপাশি অন্যকে বই পড়ানোর জন্য ‘বইয়ের বন্ধু’ নামে ‘ফ্রি বুক হোম ডেলিভারি সার্ভিস’ চালু করেছেন শাহজাহান। নিয়মিত পাঠচক্রে বই আলোচনার পাশাপাশি থাকে গান, কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উপস্থিত সবাই পাঠচক্রে পূর্বনির্ধারিত বইয়ের ওপর পাঠ প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ পান। কোনো কোনো বইয়ের জন্য প্রধান আলোচকও রাখা হয়। বইটির ওপর বিশদ আলোচনার পাশাপাশি প্রধান আলোচক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

পাঠচক্রের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন, জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন, রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তী উদ্‌যাপনের মতো নানা আয়োজন করে ‘সপ্তাহে একটি বই পড়ি’। প্রতি আসরে চা-নাশতার ব্যবস্থা রাখা হয়। সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না। চাকরির বেতনের টাকা বাঁচিয়েই বই কেনা ও নাশতার খরচ জোগান শাহজাহান কবীর। সদস্যরা এক বছরে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ বই থেকে নির্বাচিত ৪৮ থেকে ৫২টি বই পড়ার সুযোগ পান। শুরু থেকেই পাঠচক্রের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন শাহজাহান কবীর।

পারিবারিকভাবে শিক্ষক পরিবারে বেড়ে ওঠার অনুপ্রেরণাতেই তিনি শিক্ষক পেশায় এসেছেন। ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। পাঠচক্রটি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে শাহজাহান কবীর বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার একটি সুস্থ-সুন্দর পাঠকসমাজ গড়ে তোলা। একটা সুস্থ, মানবিক ও মননশীল সমাজ গঠনের জন্য বই পড়ার অভ্যাস অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি সামাজিক অঙ্গনেও সমান পরিচিত এই দুই শিক্ষক। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ জোগানোর সব শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হন তাঁরা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাঁদের কথা শোনেন।

এই দুই গুণী শিক্ষকের বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি হামিদুল হক শাহীন ও শাহজাহান কবীরের কার্যক্রম বেশ প্রশংসিত। তাঁরা দুজনই শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয় তাদের কর্মপরিধির কারণে। তাঁরা দুজনই শিক্ষকদের মডেল।

এ বিষয়ে যশোরের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পাঠক কমে গেছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষের বাইরে শাহজাহান কবীর মানুষকে বই পড়ানোর চেষ্টা করছেন। ক্লাসেও পড়ার বাইরে নতুন নতুন বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করছেন। অন্যদিকে হামিদুল হক ছেলেমেয়েদের আত্মনির্ভর করতে নানামুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন। তাঁরা আধুনিক শিক্ষকদের মডেল। তাঁরা কোচিংয়ের দিকে অগ্রসর হননি। তাঁরা মানুষকে আলোকিত করা, ভালো পথের দিশা দেওয়ার ব্রত নিয়েছেন। তাঁরা অর্থের পেছনে ঘোরেন না। তাঁদের কারণে শিক্ষার্থীরা আলোকিত হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে তিন চোখ ও দুই মুখের বাছুরের জন্ম, এলাকায় চাঞ্চল্য

নরসিংদী প্রতিনিধি
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুবেরগাঁও গ্রামের একটি খামারে বাছুরটির জন্ম। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীতে অদ্ভুত আকৃতির বাছুরের জন্ম হয়েছে। বাছুরটির রয়েছে দুটি মুখ, দুটি জিহ্বা, দুটি কান ও তিনটি চোখ। এর মধ্যে একটি চোখ বাছুরের কপালের মাঝখানে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

২৩ ডিসেম্বর রাতে শিবপুর উপজেলার চক্রধা ইউনিয়নের পুবেরগাঁও গ্রামে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাশেম খানের খামারে বাছুরটির জন্ম।

খামারমালিক কাশেম খান বলেন, বাছুরটি জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। স্বাভাবিকভাবে দুধ পান করতে না পারায় ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়াতে হচ্ছে।

তিনি জানান, তাঁর খামারের একটি গাভি বাছুরটির জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগেও গাভিটির বাছুর হয়েছে। কিন্তু এবারের মতো এমন অদ্ভুদ বাছুর আগে কখনো হয়নি।

ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই বাছুরটিকে একনজর দেখতে আশপাশের কৌতূহলী মানুষ খামারে আসছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে গরু-ছাগল দেখছি। কিন্তু তিন চোখ আর দুই মুখের বাছুর এই প্রথম দেখলাম। খবর পেয়ে দূর থেকে এসেছি।’

আরেক স্থানীয় নারী জরিনা বেগম বলেন, ‘বাছুরটা দেখতে অদ্ভুত লাগলেও মায়া হচ্ছে। বাছুরটির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই দ্রুত প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন।’

এর আগে এ ধরনের বাছুর জন্মের বিষয়ে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণত জেনেটিকস ডিফেক্টের কারণে গাভির এমন ত্রুটিপূর্ণ বাচ্চার জন্ম হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ নিহত ৩

গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালীগঞ্জে রেললাইন দিয়ে হাঁটার সময় ট্রেনে কাটা পড়ে নানি-নাতনিসহ তিন নারী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে টঙ্গী-ভৈরব রেলপথের আড়িখোলা রেলস্টেশনসংলগ্ন টেকপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত নারীরা হলেন কালীগঞ্জ পৌরসভার দেওয়ালেরটেক গ্রামের মোবারক হোসেনের স্ত্রী সাদিয়া বেগম (২৪), একই এলাকার বাবু মিয়ার মেয়ে অনাদি আক্তার (১৩) এবং নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মরজাল এলাকার বাসিন্দা কমলা বেগম (৫৫)। নিহত কমলা বেগম ও অনাদি আক্তার সম্পর্কে নানি-নাতনি এবং সাদিয়া বেগম তাঁদের প্রতিবেশী ছিলেন।

স্থানীয়রা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আড়িখোলা রেলব্রিজ এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে তিনজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা নোয়াখালীগামী ‘উপকূল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি চলে আসে। এ সময় তাঁরা রেলব্রিজের ওপর থাকায় সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পরে ট্রেনটি তাঁদের ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই কমলা বেগম ও সাদিয়া বেগমের মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় অনাদি আক্তারকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জিয়াউর রহমান জানান, অনাদি আক্তারকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল হক জানান, এটি রেলওয়ের আওতাধীন দুর্ঘটনা হওয়ায় রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

রেলওয়ে নরসিংদী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন করেছি। নিহত নারীদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিনা ময়নাতদন্তে লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আরাকান আর্মিদের জন্য নেওয়া হচ্ছিল ১৫০০ মশারি, আটক ৫

থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধি  
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
মশারিসহ জব্দ করা মালপত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি নৌকার ইঞ্জিনের পাখা উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় নৌকাগুলো তল্লাশি করে এসব জিনিস জব্দ করে বিজিবি। এসব মশারি ও ইঞ্জিনের পাখা বান্দরবানের থানচির বড় মদক সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বিজিবি। এ ঘটনায় নৌকা দুটি থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাঁদের থানচি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় আটক ব্যক্তিরা হলেন থোয়াই হ্লা চিং মারমা, উমং সাইং মারমা, হ্লাচিংথোয়াই মারমা, উক্যছাইন মারমা ও মো. ইউনুস।

এসব তথ্য নিশ্চিত করে বিজিবি বলিপাড়া ৩৮ ব্যাটালিয়ানের সহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেনের জানান, নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রে তাঁরা জেনেছেন, দীর্ঘদিন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ওষুধ, কাপড়, জুতা, মোজা, মশারি, নৌকা ইঞ্জিনের পাখা ও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মিয়ানমারের আরাকান আর্মির কাছে সরবরাহ করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। পাচারকারীদের ধরতে সীমান্তের বিজিবি চৌকিগুলোতে বিজিবি সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন।

জাকির হোসেন বলেন, গতকাল বুধবার তিন্দুমুখ বিজিবি চেকপোস্ট অতিক্রম করার সময় মালবাহী তিনটি ইঞ্জিন নৌকা দেখে বিজিবির সদস্যদের সন্দেহ হয়। এ সময় নৌকা থামাতে বললে একটি নৌকা দ্রুত চলে যায়। বাকি দুটি নৌকা তল্লাশি করে ১ হাজার ৫০০টি মশারি, ১২০টি ইঞ্জিন বোটসহ অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নলছিটি লঞ্চঘাট ওসমান হাদির নামে নামকরণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
নলছিটি লঞ্চঘাট ।  ছবি: আজকের পত্রিকা
নলছিটি লঞ্চঘাট । ছবি: আজকের পত্রিকা

নলছিটি উপজেলার লঞ্চঘাট এখন থেকে শহীদ শরিফ ওসমান হাদির নামে পরিচিত হবে। জন্মস্থান ও শৈশবের স্মৃতিতে গাথা এই লঞ্চঘাট তাঁর নামের সঙ্গে চিরস্থায়ীভাবে যুক্ত হলো।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় (২৫ ডিসেম্বর) জানান, শহীদ ওসমান হাদির জন্মস্থান নলছিটি। শৈশব, বেড়ে ওঠা এবং জীবনসংগ্রামের সঙ্গে লঞ্চঘাট এলাকার নিবিড় সম্পর্ক থাকার কারণে এটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে টার্মিনালের সংস্কার ও রঙের কাজ চলমান রয়েছে।

আগামী শনিবার নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ঘাটটি পরিদর্শন করবেন বলেও জানান তিনি।

নলছিটি লঞ্চঘাট শহীদ ওসমান হাদির জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ঘাট থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে তার পৈতৃক বাড়ি। নদীর ধারে দাঁড়িয়ে মানুষের আসা-যাওয়া দেখা এবং লঞ্চের ভিড়ে সময় কাটানো—এই ঘাট ছিল তার বেড়ে ওঠার নীরব সাক্ষী।

ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রব হাওলাদার বলেন, ‘আমরা চাইছিলাম হাদির স্মরণে এমন কিছু হোক, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া নিঃসন্দেহে স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।’

ব্যবসায়ী শাহাদত আলম ফকির যোগ করেন, ‘এই ঘাটে আমরা হাদিকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। সে এখানকারই ছেলে ছিল। আজ তার নামে ঘাটের নামকরণ হওয়ায় আমরা গর্বিত।’

ওসমান হাদির প্রতিবেশী বেলায়েত হোসেন নান্নু বলেন, ‘হাদি এই এলাকার সন্তান। এই ঘাট, এই নদী, এই মানুষ—সবকিছুতেই তার স্মৃতি ছড়িয়ে আছে। লঞ্চঘাটের নাম তার নামে হওয়া মানে, সে এখানেই চিরদিন বেঁচে থাকবে।’

উল্লেখ্য, ১২ ডিসেম্বর হত্যার উদ্দেশ্যে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। তাঁকে প্রথমে ঢাকায় ভর্তি করা হয় এবং পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান ওসমান হাদি। পরবর্তীকালে তাঁর মরদেহ দেশে আনা হয় এবং সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে) সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত