Ajker Patrika

অফিস খরচের নামে ২০ শতাংশ বরাদ্দ কর্তন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১১: ৫০
অফিস খরচের নামে ২০ শতাংশ বরাদ্দ কর্তন

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের টিআর-কাবিখা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মির্জা হাকিমুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ২০ শতাংশ অর্থ অফিস খরচের নাম করে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্দুলবাড়িয়া ইউপির টিআর ও কাবিখা বাবদ ৫০ লাখ ২০ হাজার, উন্নয়ন সহায়তায় ১৫ লাখ ৯ হাজার ৬০০, বিশেষ বরাদ্দে ১০ লাখ ও এডিপি থেকে ৬ লাখসহ মোট ৮১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা বরাদ্দ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, ইউপি চেয়ারম্যান হাকিমুর ভ্যাট-আয়কর বা অফিস খরচের নাম করে ইউপি সদস্যদের চাপ দিয়ে অর্থ আদায় করেছেন। বিশেষ করে টিআর ও কাবিখা প্রকল্প থেকে ২০ শতাংশ টাকা কেটে নিয়েছেন তিনি।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে মেম্বার। আগেও টিআর-কাবিখার কাজ করেছি। অফিস কোনো টাকা নেয়নি। এবার চেয়ারম্যান হাকিমুর রহমান লিটন অফিস খরচের নাম করে প্রত্যেক মেম্বারের কাজ থেকে ২০ শতাংশ করে টাকা নিয়েছেন। এটা সব মেম্বারই জানেন। হয়তো কেউ স্বীকার করবেন, কেউ করবেন না।’

মাফিজুর আরও বলেন, ‘চেয়ারম্যান তাঁর আস্থাভাজন দু-তিনজন মেম্বারকে বেশি টাকার প্রকল্প দিয়েছেনএবং সেখান থেকেও মোটা টাকা সরাচ্ছেন ইট, বালু, সিমেন্ট সব চেয়ারম্যান দিচ্ছেন মেম্বারদের কোনো কাজই করতে দেওয়া হচ্ছে না। মানে কাজ হচ্ছে মেম্বারের নামে, আর চেয়ারম্যান নিয়ে নিচ্ছেনসব টাকা। মেম্বার শুধু টাকা তুলে চেয়ারম্যানের হাতে দিয়ে আসছেন কোনো কাজের মান ভালো হচ্ছে না।’

আরেক ইউপি সদস্য মো. মিন্টু মিয়া বলেন, ‘দুই বছর হয় মেম্বার হয়েছি। এর মধ্যে পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) কী জিনিস, চোখে দেখিনি। মাসদুয়েক আগে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ দিয়েছে। এর মধ্যে অফিস খরচের কথা বলে ২৫ হাজার টাকা আগেই নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এখন এই অফিস খরচটা কোথায় করবেন, সেটা আমি জানি না। সব মেম্বারের কাছ থেকে উনি লাখে ২০ হাজার করে টাকা নিয়েছেন।’

মহিলা ইউপি সদস্য কাজল রেখা জানান, দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম তাঁকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়। সেখানে অফিশিয়াল খরচের কথা বলে চেয়ারম্যান নিয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। তাঁর বাড়ি এসে ওই টাকা নিয়ে গেছেন।

আরেক ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর ইউনিয়নে কিছু কাজ এসেছিল। চেয়ারম্যান আমাকে ডেকেছিলেন। বললেন, “কিছু কাজ এসেছে। প্রকল্প তোমাদের নামে দেব, কাজ আমি নিজে করব।” আমার নামে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়। চেয়ারম্যান জানান, ২৫ হাজার টাকা অফিস খরচ আছে। আমি তিনবারের মেম্বার। আমি জানি, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে কোনো অফিস খরচ বা ভ্যাট নেই। চেয়ারম্যান বলছেন, উপজেলা অফিসে দিতে হবে।’

একই তথ্য জানান ইউপি সদস্য মহাসিন আলী। তিনি বলেন, ‘আমাকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কাজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ হাজার টাকা অফিস খরচের নাম করে কেটে নিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। আরেকটা কাজে নাকি আমাকে পিআইসি সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু কাজটি কোথায় হচ্ছে, আমি জানি না। চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করে দিতে বলছেন, আমি করে দিয়েছি। টাকা তো আর আমাকে দেয়নি, আমার শুধু স্বাক্ষর নিয়েছে। স্বাক্ষর করা ছাড়া উপায়ও ছিল না।’

জানতে চাইলে এসব বিষয় সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাকিমুর। তিনি বলেন, ‘আমি কোনো টাকাপয়সা নিইনি।’

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অঞ্জন কুণ্ড বলেন, ‘কাজগুলো পিআইসির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। তাদের মাধ্যমেই বুঝে নেওয়া হবে। কে কাজ করল বা করল না, সেটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা টিআর বা কাবিখা প্রকল্পে কোনো ভ্যাট বা আয়করের অর্থ নিইনি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চায়ের দোকানে চলে একটি বাতি-ফ্যান, বিদ্যুৎ বিল এল সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা

টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি 
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিদ্যুৎ বিলের কাগজ হাতে লিটুখান বাজারের দুই দোকানদার। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান চালান বাদশা ব্যাপারী। দোকানে কেবল একটি বাতি ও একটি ফ্যান চালানো হয়। সাধারণত তাঁর মাসিক বিল ২০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে আসে। কিন্তু চলতি মাসে তাঁর হাতে এসেছে ৫৫ হাজার ৫৫০ টাকার বিদ্যুৎ বিল। বিল হাতে পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের লিটুখান বাজারের দোকানদার বাদশা ব্যাপারী। বিদ্যুৎ বিলের ব্যাপারে বাদশা বলেন, ‘এটা অসম্ভব। আমার দোকানে এত বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগই নেই। বিলের নম্বরে ফোন করলে শুধু অফিসে যেতে বলে।’

এমন ‘ভুতুড়ে’ বিদ্যুৎ বিল পেয়েছেন লিটুখান বাজারের আরেক দোকানদার শহীদ খান। বাজারে খাবারের দোকান রয়েছে তাঁর। দোকানে দুটি বাতি, একটি ফ্যান ও একটি ছোট ফ্রিজ ব্যবহার করা হয়। প্রতি মাসে যেখানে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা বিল দিতেন, সেখানে এবার বিল এসেছে ২৪ হাজার ২১৬ টাকা। শহীদ বলেন, ‘বিলটা দেখে দাঁড়াতেই পারছিলাম না। এমন বিল হলে দোকান চালানোই কঠিন হয়ে যাবে।’

বাজারের অন্য ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, কয়েক মাস ধরে এলাকায় এমন অস্বাভাবিক বিল আসছে। তাঁদের ধারণা, মিটার রিডিং অথবা বিলিং পদ্ধতিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। দ্রুত তদন্ত করে সঠিক হিসাব ঠিক করার পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিল প্রস্তুতকারী কর্মী সুমি রানী দাস বলেন, সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের অফিসে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘তারা অফিসে এলে আমরা সরেজমিন যাচাই করে বিল পুনরায় বিবেচনা করব।’

টঙ্গিবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. আব্দুস ছালাম বলেন, ‘মিটার রিডিং বা বিলিং সিস্টেমে ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সরেজমিন যাচাই করে দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ নেব। ভোক্তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসার বাথরুমে পড়ে ছিল নারী প্রভাষকের লাশ, মাথায় আঘাতের চিহ্ন

বগুড়া প্রতিনিধি
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত
ফাবিয়া তাসনিম সিধি। ছবি: সংগৃহীত

বগুড়ার এক বাসা থেকে ফাবিয়া তাসনিম সিধি (২৯) নামের এক প্রভাষকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ভাড়া বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ।

মৃত ফাবিয়া বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক। বছর দেড়েক আগে তিনি কলেজটিতে যোগদান করেন।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান জানান, ফাবিয়া অবিবাহিত। তিনি বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ডা. রাশেদুল হাসানের বাড়ির তিনতলায় ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কয়েক দিন আগে তাঁর মা গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যান। গতকাল দুপুরের পর থেকে মেয়েকে ফোনে না পাওয়ায় তাঁর মা রাত ১০টার দিকে বগুড়া আসেন। অনেক ডাকাডাকি করে দরজা না খোলায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাসার বাথরুমে ফাবিয়ার লাশ দেখতে পায়।

পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল এবং মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন ছাড়াও জিবে দাঁত দিয়ে কামড় দেওয়া ছিল। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজার রহমান বলেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অটোরিকশাকে চাপা দিল বাস, প্রাণ গেল তিনজনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাসচাপায় অটোরিকশাটি ভেঙেচুরে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাসের চাপায় একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় শিশুসহ আরও চারজন আহত হয়। আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল মহাসড়কের কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহেল মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান চালান। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।  

হাইওয়ে থানার এসআই সোহেল মিয়া বলেন, অটোরিকশাটি ভাঙ্গা থেকে টেকেরহাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। কৈডুবী সদরদি রেলক্রসিং এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নিউ মডার্ন পরিবহনের একটি বাস অটোরিকশাটিকে চাপা দেয়। এই ঘটনায় বাসটি আটক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাতিয়ায় ৫৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ, এতিমখানায় বিতরণ

­হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কোস্ট গার্ডের অভিযানে জব্দ জাটকা ইলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর হাতিয়ার জাগলার চর এলাকার মেঘনা নদীতে অভিযান চালিয়েছে কোস্ট গার্ড। এ সময় একটি নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় আটক কয়েকজন মাঝিমাল্লার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কোস্ট গার্ড হাতিয়ার একটি দল এই অভিযান চালায়। জব্দ করা জাটকাগুলোর মূল্য প্রায় ২৮ লাখ টাকা।

কোস্ট গার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মো. আবুল কাশেম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কোস্ট গার্ড। অভিযানে মেঘনা নদীর জাগলার চর এলাকায় একটি কাঠের নৌকায় তল্লাশি করা হয়। ওই নৌকা থেকে ৫ হাজার ৬০০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। এ সময় মাঝিদের মুচলেকা নিয়ে নৌকা ছেড়ে দেওয়া হয়। জব্দ মাছগুলো মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এতিমখানা ও দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সম্পদ রক্ষায় কোস্ট গার্ডের এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত