Ajker Patrika

বছরের প্রথম পাঁচ মাস: ঢাকায় খুন বেড়েছে প্রায় তিন গুণ

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা 
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২: ৩৮
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত
মিটফোর্ড এলাকায় নিহত মো. সোহাগের ওপর হামলার ঘটনার চিত্র। তিনি এলাকায় ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে মে—এই পাঁচ মাসে রাজধানী ঢাকায় খুন, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি ও চুরির মতো অপরাধ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। গত বছরের (২০২৪) একই সময়ের তুলনায় মোট অপরাধ বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে হত্যাকাণ্ড, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৮২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান থেকেই এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পরিসরে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। বিশেষ করে সোহাগকে হত্যা করার নির্মম ধরনের কারণে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

পুলিশ কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ঢাকায় খুনসহ কোনো কোনো অপরাধ তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। সহিংস ও প্রাণঘাতী অপরাধ যেমন—হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির হার বেড়েছে গড়পড়তা ১৭৮ শতাংশ। বিষয়টি জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। চুরির মতো অপরাধ কিছুটা কমেছে। তবে হত্যা, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলেও আশঙ্কা সমাজবিজ্ঞানীর।

সহিংস অপরাধের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি

ঢাকায় হত্যাকাণ্ড বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। রাজধানীতে গত বছর যেখানে গড়ে প্রতি মাসে ১২টি হত্যাকাণ্ড ঘটত, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৬টিতে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢাকায় ৬৩ জন খুন হয়। এ বছর একই সময়ে খুন হয়েছে ১৭৮ জন।

৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যুক্ত) সামনে মো. সোহাগকে (৪০) নির্মমভাবে পিটিয়ে ও ইট-পাথরের আঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত সোহাগ পুরোনো অ্যালুমিনিয়াম, বিদ্যুতের ক্যাবলসহ ভাঙারিসামগ্রীর ব্যবসা করতেন। সোহাগ নিজে ও তাঁর হত্যাকারীদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে নিহত সোহাগের পরিবার ও এলাকার মানুষ জানিয়েছে।

Untitled-5

খুনের পাশাপাশি ঢাকায় অপহরণ বেড়েছে ২২০ শতাংশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও অর্থসংক্রান্ত জটিলতা এসব ঘটনার পেছনের অন্যতম কারণ। গত বছর প্রথম পাঁচ মাসে মাত্র ৩৫টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছিল। এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ১১২টি।

ছিনতাই ও ডাকাতি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বিশেষ করে নগরীর ব্যস্ত সড়ক, গলি ও পরিবহন ঘন এলাকাগুলোতে ছিনতাই বেড়েছে বলে অভিযোগ।

চুরি কমলেও এখনো উদ্বেগজনক

পুলিশের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী চুরির পরিসংখ্যানে কিছুটা কমতির ইঙ্গিত মিলেছে। বাসাবাড়িতে চুরি কমেছে ২১ শতাংশ ও সাধারণ চুরি কমেছে ১৬ শতাংশ। এরপরও এই দুই ধরন মিলিয়ে মোট ৮৮৩টি চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা মোট অপরাধের ৬২ শতাংশ।

ঢাকায় অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির চেয়ে ছিনতাই ও চুরির ঘটনা বর্তমানে কম। আরও কমে আসবে।’

এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে জোর দিচ্ছি। বিশেষ অভিযান চলছে। কিছু সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় হয়েছে, যাদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে নাগরিকদের সচেতন থাকাও জরুরি।’

রাজধানীতে অপরাধ বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিক্ষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান শুধু পুলিশের নথিভুক্ত ঘটনা। বাস্তবে অপরাধের সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বেকারত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির অভাব অপরাধ বৃদ্ধির পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গফরগাঁওয়ে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে নাশকতা, সোয়া ৩০০ জনকে আসামি করে দুই মামলা

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনে মনোনয়ন দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় আলাদাভাবে দুটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা প্রায় সোয়া ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) হাবিলদার আরিফ রব্বানী বাদী হয়ে ২০ থেকে ২৫ জন অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীকে আসামি করে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় মামলা করেন।

এর আগে রোববার রাতে পৌর শ্রমিক দলের সাবেক আহ্বায়ক আল আমিন জনি বাদী হয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গফরগাঁও থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, গফরগাঁওয়ে নাশকতার উদ্দেশ্যে রেললাইনের সংযোগস্থলের নাট-বল্টু খুলে প্রায় ২০ ফুট রেলপাত সরিয়ে ফেলা হয়। এতে ‘অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস’ ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি কোচ লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে।

তিনি জানান, রোববার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৫টার মধ্যে গফরগাঁও রেলস্টেশন থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে সালটিয়া ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এলাকায় এ নাশকতার ঘটনা ঘটে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ময়মনসিংহ-১০ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা ২৭ ডিসেম্বর থেকে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে আসছিলেন। এর আগেও রেললাইনে মাটি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে ট্রেন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হয়।

অন্যদিকে গফরগাঁও থানায় করা মামলার বাদী পৌর শ্রমিক দলের সাবেক আহ্বায়ক আল আমিন জনি বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সিদ্ধান্তে গত শনিবার ময়মনসিংহ-১০ গফরগাঁও আসনে আক্তারুজ্জামান বাচ্চুকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। নাম ঘোষণার পর ওই দিন আমি মিষ্টি বিতরণ করি। মিষ্টি বিতরণের একপর্যায়ে এক সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার অফিসে হামলা করে এবং কয়েকজন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে আহত করে।’

তিনি আরও বলেন, কার্যালয়ের সামনে থাকা আটটি মোটরসাইকেলের একটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বাকি সাতটি লুট করে নিয়ে যায়। এরপর গফরগাঁও রেলস্টেশনে ভাঙচুর, ট্রেন অবরোধ এবং পৌর শহর ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ৩০ থেকে ৪০ স্থানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হন ব্যবসায়ীরা।

গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতিকুর রহমান বলেন, মামলার পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে কৃষক লীগ নেত্রী ও আ.লীগ সমর্থক আইনজীবীর মনোনয়নপত্র দাখিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
হাবিবা বেগম ও রায়হান কাওসার। ছবি: সংগৃহীত
হাবিবা বেগম ও রায়হান কাওসার। ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে আওয়ামীমনা নারীসহ দুজন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এঁদের মধ্যে একজন মোহনপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগের নেত্রী। অন্যজনের কোনো পদ-পদবি না থাকলেও তিনি গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

তাঁরা হলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে হাবিবা বেগম ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আইনজীবী রায়হান কাওসার। এর মধ্যে হাবিবা বেগমের বাড়ি মোহনপুর উপজেলার সিংহমারা গ্রামে। তিনি উপজেলা কৃষক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। তাঁর স্বামীর নাম মাসুদ রানা। তিনি চা-দোকান চালিয়ে সংসার চালাতেন। গত বছরের জুলাইয়ে তাঁর চায়ের দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়।

হাবিবা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ছিলেন। তখন এলাকার সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আয়েন উদ্দিন। তবে হাবিবা জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের অনুসারী ছিলেন। এ নিয়ে আয়েনের সঙ্গে তাঁর বিরোধ ছিল। ওই সময় আয়েন অনুসারীরা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেন।

হাবিবার দাবি, ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সাতটি মামলায় সাতবার কারাগারে যান তিনি। মামলাগুলো মিথ্যা ছিল বলে তখন তিনি দাবি করতেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসাদুজ্জামান আসাদ এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে রাজনীতিতে অবস্থান শক্ত হয় হাবিবা বেগমের। গত বছরের ২৯ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।

দায়িত্ব গ্রহণের পর (২২ জুলাই) তাঁর বিরুদ্ধে মোহনপুর থানার দুই নারী কনস্টেবলের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ বাদী মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

৫ আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতন হলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকে অপসারিত হন হাবিবা। পরে আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ২২ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন করে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সম্মানী ভাতা চালু রাখার দাবি জানান।

মনোনয়ন দাখিলের বিষয়ে জানতে চাইলে হাবিবা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের আমলেই নির্যাতিত হয়েছি। এটা সবাই জানে। তাই ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়েও আমার নামে কেউ কোনো মামলা দেয়নি। আমি এলাকাতেই আছি। এলাকার সব মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সে জন্যই ভোটে দাঁড়িয়েছি। একটা উপজেলায় ভোট করার অভিজ্ঞতা আছে, এবার এর সঙ্গে আরেকটা উপজেলা যুক্ত হলো। ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলে ভালো ফল হবে আশা করি।’

অপর দিকে রায়হান কাওসারের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার হরিয়াপাড়া গ্রামে। তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন তিনি।

এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ এলাকায় নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর বুলেট আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে রায়হানের ছবি নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘একে (রায়হানকে) যেখানেই পাবেন প্রশাসনের হাতে তুলে দিন।’

পুঠিয়া উপজেলা যুবদলের নেতা দেলোয়ার সরকার আল আমীন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের দোসর ও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অ্যাডভোকেট রায়হান কাওসার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। সে ভোট করার মতো এত সাহস কোথায় থেকে পেল? একে প্রতিহত করতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রায়হান কাওসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে কেউ যে কোনো দলের মনোনয়ন চাইতেই পারে। অন্য দল থেকেও যে কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারে। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলাম, এটা সত্যি। আমি পছন্দ করতেই পারি, কিন্তু আমি তো এখন আওয়ামী লীগের পরিচয় দিচ্ছি না। কেউ কেউ এখন আমাকে ট্যাগ দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের পরিচয় দিচ্ছি না। আমি এলাকার মানুষের কাছে পরিচিত। আমার জীবনে আমি কোনো দিন পড়াশোনায় প্রথম ছাড়া অন্য কিছু হইনি। সবাই আমাকে জানে। আমি পরিবর্তনের জন্য কাজ করছি। আমি যে জিতেই যাব, তা বলছি না। তবে একটা সুন্দর রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য মানুষ আমাকে ভোট দেবে বলে আশা করি।’

উল্লেখ্য, রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে মোট ৩৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। প্রত্যেক আসনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী রয়েছে। এ ছাড়া পাঁচটি আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও দুটি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়েছে। আছেন বিএনপির চারজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গ্রেপ্তার ৫

নরসিংদী প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা। ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রাখা বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) দুপুরে পুলিশ বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে ডাকাত সদস্যদের জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এর আগে গতকাল সোমবার রাতের দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পলাশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার বালুচরপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়া (২২), রেফায়েত উল্লাহর ছেলে বোরহান মিয়া (৩৫), কাশেম মিয়ার ছেলে সোহেল ভূঁইয়া (২৪), ঘোড়াশাল খালিসারটেক গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে বাবুল মিয়া (৪৫) এবং গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার একডালা গ্রামের লিটন মিয়ার ছেলে বাসির মিয়া (২৫)।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল-মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে পলাশসহ আশপাশের এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাঁদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় পলাশ থানায় ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার ডাকাতদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুরে হেফাজতে নির্যাতন, ৪ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানায় পুলিশি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ও ডাকাতি মামলার আসামি মো. খোকন (৩৯)। গত শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) তিনি ফরিদগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

এর আগে ফরিদগঞ্জ থানায় গত ২৮ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় আসামির দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ফরিদগঞ্জ আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাতুল হাসান আল মুরাদ নির্যাতনের ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।

আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির ফখরুদ্দিন আহমেদ স্বপন।

মামলার কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অধীন ফরিদগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট একটি ডাকাতি মামলায় (জি আর নং-৩১৫/২৫) ১৬ ডিসেম্বর তিনজন অজ্ঞাতনামা আসামিকে হাজির করা হয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এজাহারে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে উল্লেখিত খোকনের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডের সময় আসামি পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

আসামির গ্রেপ্তারের সময় গ্রেপ্তারের স্মারকপত্রে আসামি সুস্থ ও পুলিশ ফরওয়ার্ডিংয়ে কোনো জখমের উল্লেখ না থাকায় ম্যাজিস্ট্রেট আসামিকে পরীক্ষা করে নির্যাতনের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করেন। একই সঙ্গে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন অনুযায়ী সাত কার্যদিবসের মধ্যে চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন।

যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর হাসপাতাল থেকে আসামিকে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেন চিকিৎসক রানা সাহা ও আসিবুল হাসান চৌধুরী। হাসপাতালের মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যায়, আসামির উভয় পায়ের ঊরুর ওপর একাধিক নীলাফুলা জখম রয়েছে। যদিও চিকিৎসা সনদে উল্লেখ করা হয়, আসামির বর্ণনামতে এই জখম প্রায় চার দিন আগের।

এদিকে আদালতের মামলা করার নির্দেশের পর ২৩ ডিসেম্বর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা ঘটনার গুরুত্ব ও স্পর্শকাতরতার কথা উল্লেখ করে ১৫ দিনের তদন্তের সময় প্রার্থনা করেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সময় বিবেচনা না করে তাৎক্ষণিকভাবে মামলা করার আগের আদেশ বহাল রাখেন।

আদালতের আদেশ পর্যালোচনায় দেখা যায়, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের অধীন সংঘটিত অপরাধসমূহ আমলযোগ্য। ফলে আইনানুযায়ী এ ধরনের অপরাধে মামলা করা ছাড়া তদন্ত পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।

সর্বশেষ ২৭ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন। ওই মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফ ইফতেখারকে।

মামলার বাদী মো. খোকন ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি সরদার বাড়ির শাহজাহানের ছেলে। বিভিন্ন অপরাধে ফরিদগঞ্জ থানায় চার মামলার আসামি খোকন। সর্বশেষ গত রোববার (২৮ নভেম্বর) ডাকাতির ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন উপজেলার গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের সাইসাঙ্গা গ্রামের মিজি বাড়ির রহিম বাদশার স্ত্রী পেয়ারা বেগম। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হন আসামি খোকন।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. রবিউল হাসান বলেন, আদালতের আদেশের পর ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত